-
‘অধিক আগ্রহের সহিত মনোযোগ করুন’২০০২ প্রহরীদুর্গ | সেপ্টেম্বর ১৫
-
-
‘অধিক আগ্রহের সহিত মনোযোগ করুন’
“যাহা যাহা শুনিয়াছি, তাহাতে অধিক আগ্রহের সহিত মনোযোগ করা আমাদের উচিত, পাছে কোন ক্রমে ভাসিয়া চলিয়া যাই।”—ইব্রীয় ২:১.
১. ব্যাখ্যা করুন যে, কীভাবে অন্যমনস্ক হয়ে পড়া দুর্দশার দিকে পরিচালিত করতে পারে।
প্রতি বছর শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই মোটরগাড়ি দুর্ঘটনা প্রায় ৩৭,০০০ লোকের জীবন কেড়ে নেয়। বিশেষজ্ঞরা বলে যে, এইরকম অনেক মৃত্যু এড়ানো যেত যদি চালকরা রাস্তার প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দিত। কোন কোন মোটর-চালক বিভিন্ন সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ড অথবা তাদের সেলুলার ফোনের কারণে অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে। এ ছাড়া, এমন ব্যক্তিরাও রয়েছে, যারা চালানোর সময় খাওয়া-দাওয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এই পরিস্থিতিগুলোতে অন্যমনস্ক হয়ে পড়া দুর্দশার দিকে পরিচালিত করতে পারে।
২, ৩. ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের পৌল কোন্ সতর্কবাণী দিয়েছিলেন এবং তার পরামর্শ কেন উপযুক্ত ছিল?
২ মোটরগাড়ি উদ্ভাবনের প্রায় ২,০০০ বছর আগে প্রেরিত পৌল একধরনের অন্যমনস্কতার কথা বলেছিলেন, যা কিছু ইব্রীয় খ্রীষ্টানের জন্য দুর্দশা ডেকে এনেছিল। পৌল জোর দিয়েছিলেন যে, পুনরুত্থিত যীশু খ্রীষ্টকে সমস্ত দূতেদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ স্থান দেওয়া হয়েছে, কারণ তিনি ঈশ্বরের দক্ষিণে উপবিষ্ট হয়েছেন। এরপর প্রেরিত বলেছিলেন: “এই জন্য যাহা যাহা শুনিয়াছি, তাহাতে অধিক আগ্রহের সহিত মনোযোগ করা আমাদের উচিত, পাছে কোন ক্রমে ভাসিয়া চলিয়া যাই।”—ইব্রীয় ২:১.
৩ কেন ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের যীশুর বিষয়ে ‘যাহা যাহা শুনিয়াছিল, তাহাতে অধিক আগ্রহের সহিত মনোযোগ করিবার’ দরকার ছিল? কারণ যীশু পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার পর প্রায় ৩০ বছর কেটে গিয়েছিল। তাদের প্রভুর এই অনুপস্থিতিতে কিছু ইব্রীয় খ্রীষ্টান প্রকৃত বিশ্বাস থেকে সরে পড়তে শুরু করেছিল। তারা যিহুদিধর্ম অর্থাৎ তাদের পূর্বের উপাসনা পদ্ধতির দ্বারা অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল।
তাদের আরও বেশি মনোযোগ দেওয়ার দরকার ছিল
৪. কেন কিছু খ্রীষ্টান হয়তো যিহুদিধর্মে ফিরে যাওয়ার জন্য প্রলোভিত হয়েছিল?
৪ কেন একজন খ্রীষ্টান যিহুদি ধর্মে ফিরে যাওয়ার জন্য হয়তো প্রলোভিত হয়েছিল? আসলে, ব্যবস্থার অধীনে উপাসনা পদ্ধতির সঙ্গে দৃশ্যত বিষয়বস্তু জড়িত ছিল। লোকেরা যাজকদের দেখতে পেত এবং উৎসর্গীকৃত বলির ঘ্রাণ নিতে পারত। কিন্তু, কিছু কিছু ক্ষেত্রে খ্রীষ্টধর্ম পুরোপুরি আলাদা ছিল। খ্রীষ্টানদের একজন মহাযাজক ছিলেন, যিনি হলেন যীশু খ্রীষ্ট কিন্তু গত তিন দশক ধরে তাঁকে পৃথিবীতে দেখা যায়নি। (ইব্রীয় ৪:১৪) তাদের একটা মন্দির ছিল কিন্তু এর পবিত্র স্থান ছিল স্বর্গ। (ইব্রীয় ৯:২৪) ব্যবস্থার অধীনে মাংসিক ত্বক্চ্ছেদের বিপরীতে খ্রীষ্টীয় ত্বক্চ্ছেদ ছিল ‘হৃদয়ের ত্বক্চ্ছেদ, যাহা আত্মায় হয়।’ (রোমীয় ২:২৯) তাই, ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের কাছে হয়তো খ্রীষ্টধর্ম অলীক প্রকৃতির বলে মনে হয়েছিল।
৫. কীভাবে পৌল দেখিয়েছিলেন যে, যীশুর দ্বারা স্থাপিত উপাসনা পদ্ধতি, ব্যবস্থার অধীনে পদ্ধতির চেয়ে শ্রেষ্ঠ ছিল?
৫ ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের খ্রীষ্টের দ্বারা স্থাপিত উপাসনা পদ্ধতি সম্বন্ধে আরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু বোঝার দরকার ছিল। এটা দেখার চেয়ে বরং বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে ছিল, এমনকি ভাববাদী মোশির মাধ্যমে দেওয়া ব্যবস্থার চেয়ে আরও শ্রেষ্ঠ ছিল। পৌল লিখেছিলেন, “ছাগদের ও বৃষদের রক্ত এবং অশুচিদের উপরে প্রোক্ষিত গাভীভস্ম যদি মাংসের শুচিতার জন্য পবিত্র করে, তবে, যিনি অনন্তজীবী আত্মা দ্বারা নির্দ্দোষ বলিরূপে আপনাকেই ঈশ্বরের উদ্দেশে উৎসর্গ করিয়াছেন, সেই খ্রীষ্টের রক্ত তোমাদের সংবেদকে মৃত ক্রিয়াকলাপ হইতে কত অধিক নিশ্চয় শুচি না করিবে, যেন তোমরা জীবন্ত ঈশ্বরের আরাধনা করিতে পার!” (ইব্রীয় ৯:১৩, ১৪) হ্যাঁ, যীশু খ্রীষ্টের মুক্তির মূল্যে বিশ্বাসের মাধ্যমে যে পাপের ক্ষমা পাওয়া যায়, তা অনেক দিক দিয়ে ব্যবস্থার অধীনে উৎসর্গীকৃত বলির মাধ্যমে পাওয়া ক্ষমার চেয়ে অধিক শ্রেষ্ঠ ছিল।—ইব্রীয় ৭:২৬-২৮.
৬, ৭. (ক) কোন্ পরিস্থিতি ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের ‘যাহা যাহা শুনিয়াছিল, তাহাতে অধিক আগ্রহের সহিত মনোযোগ করার’ গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছিল? (খ) পৌল যখন ইব্রীয়দের কাছে তার চিঠি লিখেছিলেন তখন যিরূশালেমের জন্য আর কত সময় বাকি ছিল? (পাদটীকা দেখুন।)
৬ আরেকটা কারণে ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের যীশুর বিষয়ে তারা যা শুনেছিল, তাতে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়ার দরকার ছিল। তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, যিরূশালেম ধ্বংস হবে। যীশু বলেছিলেন: “তোমার উপরে এমন সময় উপস্থিত হইবে, যে সময়ে তোমার শত্রুগণ তোমার চারিদিকে জাঙ্গাল বাঁধিবে, তোমাকে বেষ্টন করিবে, তোমাকে সর্ব্বদিকে অবরোধ করিবে, এবং তোমাকে ও তোমার মধ্যবর্ত্তী তোমার বৎসগণকে ভূমিসাৎ করিবে, তোমার মধ্যে প্রস্তরের উপরে প্রস্তর থাকিতে দিবে না; কারণ তোমার তত্ত্বাবধানের সময় তুমি বুঝ নাই।”—লূক ১৯:৪৩, ৪৪.
৭ এটা কখন ঘটবে? যীশু সেই দিন বা সময়ের কথা প্রকাশ করেননি। বরং, তিনি এই নির্দেশনা দিয়েছিলেন: “যখন তোমরা যিরূশালেমকে সৈন্যসামন্ত দ্বারা বেষ্টিত দেখিবে, তখন জানিবে যে, তাহার ধ্বংস সন্নিকট। তখন যাহারা যিহূদিয়ায় থাকে, তাহারা পাহাড় অঞ্চলে পলায়ন করুক, এবং যাহারা নগরের মধ্যে থাকে, তাহারা বাহিরে যাউক; আর যাহারা পল্লীগ্রামে থাকে, তাহারা নগরে প্রবেশ না করুক।” (লূক ২১:২০, ২১) যীশু ওই কথাগুলো বলার পর ৩০ বছরের মধ্যে যিরূশালেমের কিছু খ্রীষ্টান তাদের তৎপরতার মনোভাব হারিয়ে ফেলেছিল এবং অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল। তারাও যেন রাস্তা থেকে তাদের চোখ সরিয়ে নিয়েছিল। তারা যদি তাদের চিন্তাভাবনায় রদবদল না করত, তা হলে দুর্দশা অনিবার্য ছিল। তারা মনে করুক বা না-ই করুক, যিরূশালেমের ধ্বংস সন্নিকট ছিল।a আশা করা যায় যে, পৌলের পরামর্শ যিরূশালেমের যে-খ্রীষ্টানরা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে ঘুমন্ত ছিল, তাদের জন্য এক বিপদসংকেত ছিল।
আজকে “অধিক আগ্রহের সহিত মনোযোগ” করা
৮. কেন আমাদের ঈশ্বরের বাক্যের সত্যের প্রতি “অধিক আগ্রহের সহিত মনোযোগ করা” দরকার?
৮ প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানদের মতো আমাদেরও ঈশ্বরের বাক্যের সত্যের প্রতি “অধিক আগ্রহের সহিত মনোযোগ করা” দরকার। কেন? কারণ আমরাও আসন্ন ধ্বংসের দোরগোঁড়ায় রয়েছি আর সেই ধ্বংস শুধু একটা জাতিরই নয় কিন্তু পুরো বিধিব্যবস্থার। (প্রকাশিত বাক্য ১১:১৮; ১৬:১৪, ১৬) এটা ঠিক যে, যিহোবা কখন সেই পদক্ষেপ নেবেন, সেটার সঠিক দিন এবং সময় সম্বন্ধে আমরা জানি না। (মথি ২৪:৩৬) কিন্তু, আমরা বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপূর্ণতা দেখতে পাচ্ছি, যা স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে আমরা “শেষ কালে” বাস করছি। (২ তীমথিয় ৩:১-৫) তাই, আমাদের এমন যেকোন কিছুর থেকে সাবধান থাকতে হবে, যা আমাদের অন্যমনস্ক করে তুলতে পারে। ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি আমাদের মনোযোগ দিতে হবে এবং অধিক তৎপরতার মনোভাব বজায় রাখতে হবে। একমাত্র তা করার মাধ্যমেই আমরা “এই যে সকল ঘটনা হইবে, তাহা এড়াইতে” পারব।—লূক ২১:৩৬.
-
-
‘অধিক আগ্রহের সহিত মনোযোগ করুন’২০০২ প্রহরীদুর্গ | সেপ্টেম্বর ১৫
-
-
a সম্ভবত সা.কা. ৬১ সালে ইব্রীয়দের কাছে চিঠি লেখা হয়েছিল। যদি তাই হয়, তা হলে এর মাত্র প্রায় পাঁচ বছর পর সেসটিয়াস গ্যালাসের সেনাবাহিনী যিরূশালেম ঘেরাও করেছিল। খুব শীঘ্রই সেই সেনাবাহিনী ফিরে যায় আর এটা সতর্ক খ্রীষ্টানদের পালানোর সুযোগ করে দেয়। এর চার বছর পর জেনারেল টাইটাসের নেতৃত্বে রোমীয় সেনাবাহিনী শহরকে ধ্বংস করে দেয়।
-