দ্বিতীয় বিবরণ
১ ইজরায়েলীয়েরা যখন জর্ডনের পাশের প্রান্তরে ছিল, তখন মোশি তাদের সবার সঙ্গে কথা বললেন। এটা সেই প্রান্তর, যেটা সূফের সামনে এবং পারণ, তোফল, লাবন, হৎসেরোৎ ও দীষাহবের মাঝখানে অবস্থিত ছিল। ২ হোরেব থেকে সেয়ীর পর্বতের পথ ধরে কাদেশ-বর্ণেয় পর্যন্ত যেতে ১১ দিন লাগে। ৩ ইজরায়েলীয়েরা মিশর থেকে বের হয়ে আসার ৪০তম বছরের একাদশতম মাসের প্রথম দিনে মোশি ইজরায়েলীয়দের* সেই সমস্ত কথা বললেন, যেগুলো যিহোবা তাকে বলার জন্য নির্দেশনা দিয়েছিলেন। ৪ এটা সেই সময়ের কথা, যখন মোশি হিষ্বোনে বসবাসরত ইমোরীয়দের রাজা সীহোনকে এবং অষ্টারোতে বসবাসরত বাশনের রাজা ওগকে ইদ্রিয়ীতে পরাজিত করেছিলেন। ৫ তারা যখন মোয়াব দেশে জর্ডনের এলাকায় ছিল, তখন মোশি ঈশ্বরের ব্যবস্থা তাদের কাছে ব্যাখ্যা করে বললেন:
৬ “আমরা যখন হোরেবে ছিলাম, তখন আমাদের ঈশ্বর যিহোবা আমাদের বললেন, ‘তোমরা অনেক দিন ধরে এই পার্বত্য এলাকায় বাস করছ। ৭ এখন তোমরা এখান থেকে যাত্রা শুরু করো আর ইমোরীয়দের পার্বত্য এলাকায় যাও। এরপর, তোমরা তাদের পার্শ্ববর্তী কনানীয়দের এই সমস্ত এলাকায় যাও: অরাবা, পার্বত্য এলাকা, শফেলা,* নেগেব এবং সমুদ্রতীরের এলাকা। আর তোমরা দূরে লেবানন* এবং মহানদী ইউফ্রেটিস* পর্যন্ত যাও। ৮ দেখো, পুরো দেশ তোমাদের সামনে রয়েছে। তোমরা যাও আর এই দেশ দখল করে নাও, যেটার বিষয়ে যিহোবা তোমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে দিব্য করেছিলেন। হ্যাঁ, তিনি অব্রাহাম, ইস্হাক ও যাকোবকে বলেছিলেন যে, তিনি তাদের এবং তাদের পরে তাদের বংশধরদের এই দেশ দেবেন।’
৯ “সেই সময় আমি তোমাদের বললাম, ‘আমার একার পক্ষে আর তোমাদের ভার বহন করা সম্ভব নয়। ১০ তোমাদের ঈশ্বর যিহোবা তোমাদের জনসংখ্যা এতটা বৃদ্ধি করেছেন যে, আজ তোমরা আকাশের তারাদের মতো অসংখ্য হয়ে গিয়েছ। ১১ আর তোমাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর যিহোবা যেন তোমাদের জনসংখ্যা আরও হাজার গুণ বৃদ্ধি করেন এবং তোমাদের আশীর্বাদ করেন, ঠিক যেমনটা তিনি তোমাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছেন। ১২ কিন্তু, আমি একা এত বড়ো জনতার ভার বহন করতে পারছি না, সকলের সমস্যা সমাধান করতে পারছি না এবং তোমাদের ঝগড়াঝাঁটি সহ্য করতে পারছি না। ১৩ তাই, তোমরা নিজেদের বংশ থেকে বিজ্ঞ, বিচক্ষণ ও অভিজ্ঞ পুরুষদের বেছে নাও। আমি তাদের তোমাদের অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত করব। ১৪ আর তোমরা বললে, ‘হ্যাঁ, ঠিক আছে।’ ১৫ তখন আমি তোমাদের বংশ থেকে এমন প্রধান ব্যক্তিদের বেছে নিলাম, যারা বিজ্ঞ ও অভিজ্ঞ আর তাদের তোমাদের উপরে অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত করলাম। আমি তাদের হাজার জনের দলের উপর, এক-শো জনের দলের উপর, পঞ্চাশ জনের দলের উপর এবং দশ জনের দলের উপর অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত করলাম আর তাদের তোমাদের বংশের জন্য আধিকারিক* হিসেবে নিযুক্ত করলাম।
১৬ “আর আমি সেই সময় তোমাদের বিচারকদের এই নির্দেশনা দিলাম, ‘তোমাদের সামনে যখন কোনো মামলা পেশ করা হবে, তখন তোমরা ন্যায়বিচার কোরো, তা সেটা দু-জন ইজরায়েলীয়ের মধ্যে হোক অথবা কোনো ইজরায়েলীয় এবং তোমাদের মাঝে বসবাসকারী কোনো বিদেশির মধ্যে হোক। ১৭ তোমরা বিচার করার সময়ে পক্ষপাতিত্ব কোরো না। ঠিক যেভাবে তোমরা একজন বিশিষ্ট ব্যক্তির কথা শোন, একইভাবে তোমরা যেন একজন সাধারণ ব্যক্তির কথাও শোন। তোমরা মানুষকে ভয় কোরো না কারণ তোমরা ঈশ্বরের হয়ে বিচার করছ। কোনো মামলা যদি তোমাদের কাছে খুব জটিল বলে মনে হয়, তা হলে সেটা আমার কাছে পেশ কোরো, আমি সেটা শুনব।’ ১৮ আর তোমাদের যা যা করা উচিত, আমি তখনই তোমাদের বুঝিয়ে দিয়েছিলাম।
১৯ “এরপর, আমরা যিহোবার আজ্ঞা অনুযায়ী হোরেব থেকে রওনা হলাম আর সেখান থেকে ইমোরীয়দের পার্বত্য এলাকায় যাওয়ার জন্য আমরা সেই বিশাল ও ভয়ংকর প্রান্তর পার হলাম, যেটা তোমরাও দেখেছিলে। আর আমরা যাত্রা করতে করতে কাদেশ-বর্ণেয়তে গিয়ে পৌঁছালাম। ২০ সেখানে পৌঁছে আমি তোমাদের বললাম, ‘তোমরা ইমোরীয়দের পার্বত্য এলাকায় এসে গিয়েছ, যেটা আমাদের ঈশ্বর যিহোবা আমাদের দিতে চলেছেন। ২১ দেখো, তোমাদের ঈশ্বর যিহোবা এই দেশ তোমাদের হাতে সমর্পণ করেছেন। এখন তোমরা যাও আর এই দেশ দখল করে নাও, ঠিক যেমন তোমাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর যিহোবা তোমাদের বলেছেন। তোমরা কাউকে দেখে ভয় পেয়ো না কিংবা আতঙ্কিত হোয়ো না।’
২২ “তখন তোমরা সবাই আমার কাছে এসে বললে, ‘সেই দেশে যাওয়ার আগে আমাদের কয়েক জন লোককে সেখানে পাঠালে কেমন হয়, যাতে তারা গিয়ে সেই দেশের খোঁজখবর নিতে পারে এবং ফিরে এসে আমাদের বলতে পারে, কোন কোন রাস্তা দিয়ে আমাদের যেতে হবে আর কোন কোন নগরে আমরা যাব?’ ২৩ তোমাদের এই প্রস্তাব আমার ভালো বলে মনে হল আর তাই আমি তোমাদের মধ্য থেকে ১২ জন পুরুষকে, প্রত্যেক বংশ থেকে এক জন পুরুষকে বেছে নিলাম। ২৪ সেই লোকেরা পার্বত্য এলাকার দিকে গেল এবং ইষ্কোল উপত্যকা পৌঁছে সেই দেশের খোঁজখবর নিল। ২৫ তারা সেই দেশ থেকে কিছু ফল নিয়ে আমাদের কাছে ফিরে এল। তারা সেই দেশ সম্বন্ধে আমাদের এই সংবাদ দিল, ‘আমাদের ঈশ্বর যিহোবা আমাদের যে-দেশ দিতে চলেছেন, সেটা এক উত্তম দেশ।’ ২৬ কিন্তু, তোমরা সেই দেশে যেতে চাইলে না আর তোমরা তোমাদের ঈশ্বর যিহোবার আদেশের বিরুদ্ধে গিয়ে বিদ্রোহ করলে। ২৭ তোমরা নিজের নিজের তাঁবুতে বচসা করতে থাকলে আর বললে, ‘যিহোবা আমাদের ঘৃণা করেন বলে মিশর থেকে বের করে এখানে এনেছেন, যাতে তিনি আমাদের ইমোরীয়দের হাতে তুলে দেন এবং তারা আমাদের হত্যা করে। ২৮ হায় হায়! আমরা কীরকম দেশে যাচ্ছি? আমাদের যে-ভাইয়েরা সেই দেশ দেখে এসেছে, তারা বলছে, “সেই দেশের লোকেরা আমাদের থেকে অনেক শক্তিশালী আর খুব লম্বা-চওড়া। তাদের নগরগুলো অনেক বড়ো বড়ো আর তাদের নগরের প্রাচীর এত উঁচু যেন আকাশে গিয়ে ঠেকেছে। আমরা সেখানে অনাকীয়দের দেখেছি।” এই সমস্ত কিছু শুনে আমরা খুবই ভয় পেয়ে গিয়েছি।’
২৯ “তখন আমি তোমাদের বললাম, ‘তোমরা সেই দেশের লোকদের ভয় পেয়ো না কিংবা তাদের বিষয়ে আতঙ্কিত হোয়ো না। ৩০ তোমাদের ঈশ্বর যিহোবা তোমাদের আগে আগে যাবেন আর তিনি তোমাদের হয়ে যুদ্ধ করবেন, ঠিক যেভাবে তিনি মিশরে তোমাদের চোখের সামনে তোমাদের হয়ে যুদ্ধ করেছিলেন। ৩১ আর প্রান্তরেও তোমরা দেখেছ, তোমাদের ঈশ্বর যিহোবা কীভাবে তোমাদের যত্ন নিয়েছেন। বাবা যেমন তার ছেলেকে কোলে নিয়ে হাঁটে, তেমনই পুরো যাত্রায় তোমরা যেখানে যেখানে গিয়েছিলে, সেখানে সেখানে ঈশ্বর তোমাদের বহন করেছেন আর তোমাদের এই পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন।’ ৩২ তবুও, তোমরা তোমাদের ঈশ্বর যিহোবার উপর বিশ্বাস রাখলে না, ৩৩ যিনি তোমাদের আগে আগে যেতেন আর তোমাদের জন্য শিবির স্থাপন করার জায়গা খুঁজতেন। তিনি রাতের বেলায় অগ্নির মাধ্যমে এবং দিনের বেলায় মেঘের মাধ্যমে তোমাদের দেখিয়ে দিতেন যে, কোন পথে তোমাদের যেতে হবে।
৩৪ “সেইসময় তোমরা যা যা বলছিলে, যিহোবা সবই শুনছিলেন। তিনি প্রচণ্ড রেগে গেলেন আর দিব্য করে বললেন, ৩৫ ‘এই দুষ্ট প্রজন্মের এক জন পুরুষও সেই উত্তম দেশ দেখতে পাবে না, যেটা দেওয়ার বিষয়ে আমি তোমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে দিব্য করেছিলাম। ৩৬ একমাত্র যিফুন্নির ছেলে কালেব সেই দেশে যেতে পারবে, যে-দেশ সে দেখে এসেছে। আমি তাকে এবং তার সন্তানদের সেই দেশের একটা অংশ দেব কারণ সে একাগ্র হৃদয়ে* যিহোবাকে অনুসরণ করেছে। ৩৭ (তোমাদের কারণে যিহোবা আমার উপরও রেগে গেলেন আর আমাকে বললেন, “তুমিও সেই দেশে যাবে না। ৩৮ নূনের ছেলে যিহোশূয়, যে তোমার দাস, সেই দেশে প্রবেশ করবে। তাকে সাহসী করে তোলো* কারণ সে-ই ইজরায়েলীয়দের নেতৃত্ব দিয়ে সেই দেশ দখল করতে তাদের সাহায্য করবে।”) ৩৯ এ ছাড়া, তোমাদের সন্তানেরা, যাদের বিষয়ে তোমরা বলেছিলে যে, তাদের বন্দি করা হবে আর তোমাদের ছেলেরা, যারা আজকে কোনটা ভালো এবং কোনটা মন্দ, তা বোঝে না, তারা সবাই সেই দেশে যাবে। আমি সেই দেশ তাদের দেব আর তারা সেটা দখল করবে। ৪০ এখন তোমরা ফেরো আর লোহিত সাগরের* দিকে যাওয়ার রাস্তা ধরে প্রান্তরের দিকে এগিয়ে যাও।’
৪১ “তখন তোমরা আমাকে বললে, ‘আমরা যিহোবার বিরুদ্ধে পাপ করেছি। এখন আমরা আমাদের ঈশ্বর যিহোবার আদেশ পালন করব আর গিয়ে শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব!’ তখন তোমরা সবাই যুদ্ধের জন্য নিজেদের অস্ত্র নিলে। তোমরা ভাবলে, পর্বতে উঠে শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা খুব সহজ। ৪২ কিন্তু যিহোবা আমাকে বললেন, ‘তাদের বলো: “তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যেয়ো না কারণ আমি তোমাদের সঙ্গে থাকব না। তোমরা যদি যাও, তা হলে শত্রুদের হাতে পরাজিত হবে।”’ ৪৩ আমি ঈশ্বরের এই কথা তোমাদের বললাম, কিন্তু তোমরা আমার কোনো কথাই শুনলে না। তোমরা যিহোবার আদেশের বিরুদ্ধে গিয়ে সেই পর্বতে ওঠার দুঃসাহস দেখালে। ৪৪ তখন পর্বতে বসবাসরত ইমোরীয়েরা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য বেরিয়ে এল। তারা মৌমাছিদের মতো তোমাদের আক্রমণ করল আর সেয়ীর এলাকার হর্মা পর্যন্ত তোমাদের তাড়া করল। ৪৫ তখন তোমরা ফিরে এলে আর যিহোবার সামনে কাঁদতে লাগলে, কিন্তু যিহোবা তোমাদের কান্না শুনলেন না আর তোমাদের প্রতি একটুও মনোযোগ দিলেন না। ৪৬ এইজন্য তোমরা অনেক দিন পর্যন্ত কাদেশেই থাকলে।