রাজাবলির প্রথম খণ্ড
১৬ তারপর, হনানির ছেলে যেহূর কাছে বাশার বিরুদ্ধে যিহোবার এই বার্তা এল: ২ “আমি তোমাকে ধুলো থেকে তুলে এনেছিলাম আর তোমাকে আমার প্রজা ইজরায়েলের নেতা করেছিলাম। কিন্তু, তুমি যারবিয়ামের পথে চলতে থাকলে এবং আমার প্রজা ইজরায়েলকে দিয়েও পাপ করালে আর তারা তাদের পাপের মাধ্যমে আমাকে রাগিয়ে তুলল। ৩ এইজন্য হে বাশা, আমি তোমাকে এবং তোমার পরিবারকে পুরোপুরিভাবে নিশ্চিহ্ন করে দেব। আমি নবাটের ছেলে যারবিয়ামের পরিবারের প্রতি যা করেছিলাম, তোমার পরিবারের প্রতিও তা-ই করব। ৪ তোমার বংশধরদের মধ্যে যে-কেউ নগরে মারা যাবে, তাকে কুকুর খেয়ে নেবে আর যে-কেউ মাঠে মারা যাবে, তাকে আকাশের পাখিরা খেয়ে নেবে।”
৫ বাশার জীবনের বাকি কাহিনি এবং তার বড়ো বড়ো কাজের ও সেইসঙ্গে অন্যান্য কাজের বিবরণ ইজরায়েলের রাজাদের ইতিহাস বইয়ে লেখা আছে। ৬ তারপর, বাশা মারা গেলেন* আর তাকে তির্সায় কবর দেওয়া হল। তার জায়গায় তার ছেলে এলা রাজা হলেন। ৭ যিহোবার দৃষ্টিতে মন্দ এমন অনেক কাজ করে বাশা তাঁকে রাগিয়ে তুলেছিলেন আর এভাবে তিনি যারবিয়ামের পরিবারের মতোই হয়ে গিয়েছিলেন। এ ছাড়া, বাশা তাকে* মেরে ফেলেছিলেন। এই দুটো কারণে হনানির ছেলে ভাববাদী যেহূর কাছে বাশা এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে যিহোবার এই বার্তা এল।
৮ যিহূদার রাজা আসার রাজত্বের ২৬তম বছরে বাশার ছেলে এলা ইজরায়েলের রাজা হলেন। এলা তির্সা থেকে দু-বছর রাজত্ব করলেন। ৯ সিম্রি নামে তার একজন সেবক ছিলেন। এলার যে-সৈন্যেরা রথে চড়ে যুদ্ধ করত, তাদের অর্ধেক সৈন্যদলের সেনাপতি ছিলেন সিম্রি। তিনি এলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করলেন। এলা যখন তির্সায় তার রাজপ্রাসাদের অধ্যক্ষ অর্সার বাড়িতে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে ছিলেন, ১০ তখন সিম্রি এসে তাকে মেরে ফেললেন আর তার জায়গায় নিজে রাজা হলেন। যিহূদার রাজা আসার রাজত্বের ২৭তম বছরে সিম্রি রাজা হলেন। ১১ যেই-না সিম্রি রাজা হলেন, অমনি তিনি বাশার পুরো পরিবারকে হত্যা করলেন। তিনি বাশার আত্মীয়দের* ও বন্ধুদের মধ্যে এক জন পুরুষ কিংবা ছেলেকেও বাঁচিয়ে রাখলেন না। ১২ এভাবে সিম্রি বাশার পুরো পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করে দিলেন আর যিহোবা তাঁর ভাববাদী যেহূর মাধ্যমে বাশার বিরুদ্ধে যে-বার্তা শুনিয়েছিলেন, তা পূর্ণ হল। ১৩ বাশার পরিবারের এই পরিণতি হল কারণ বাশা এবং তার ছেলে এলা অনেক পাপ করেছিলেন এবং তারা ইজরায়েলীয়দের দিয়ে পাপ করিয়েছিলেন আর ইজরায়েলীয়েরা অপদার্থ মূর্তিগুলোর উপাসনা করে ইজরায়েলের ঈশ্বর যিহোবাকে রাগিয়ে তুলেছিল। ১৪ এলার জীবনের বাকি কাহিনি এবং তার সমস্ত কাজের বিবরণ ইজরায়েলের রাজাদের ইতিহাস বইয়ে লেখা আছে।
১৫ যিহূদার রাজা আসার রাজত্বের ২৭তম বছরে সিম্রি তির্সায় রাজা হলেন আর তিনি সাত দিন রাজত্ব করলেন। সেই সময় সৈন্যদলগুলো পলেষ্টীয়দের নগর গিব্বথোনের উপর আক্রমণ করার জন্য শিবির স্থাপন করে ছিল। ১৬ পরে, সেই শিবিরে এই খবর পৌঁছোল: “সিম্রি রাজার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তাকে মেরে ফেলেছে।” তখন পুরো ইজরায়েল সেই দিনই সেই শিবিরে সেনাপতি অম্রিকে ইজরায়েলের রাজা করল। ১৭ অম্রি এবং তার সঙ্গে পুরো ইজরায়েল গিব্বথোন থেকে বের হয়ে উপরে গেলেন এবং তির্সা অবরোধ করলেন। ১৮ সিম্রি যখন দেখলেন, নগরটা দখল করে নেওয়া হয়েছে, তখন তিনি রাজপ্রাসাদের দুর্গে চলে গেলেন এবং রাজপ্রাসাদে আগুন লাগিয়ে দিলেন আর তিনি সেই আগুনে পুড়ে মারা গেলেন। ১৯ সিম্রির এই পরিণতি হল কারণ তিনি যারবিয়ামের পথে চলে যিহোবার দৃষ্টিতে যা মন্দ, তা করেছিলেন এবং ইজরায়েলকে দিয়েও পাপ করিয়েছিলেন। ২০ সিম্রির জীবনের বাকি কাহিনি এবং তিনি যে-ষড়যন্ত্র করেছিলেন, সেটার বিবরণ ইজরায়েলের রাজাদের ইতিহাস বইয়ে লেখা আছে।
২১ এই ঘটনার পর ইজরায়েলের লোকেরা দুটো দলে ভাগ হয়ে গেল। একটা দল গীনতের ছেলে তিব্নির পক্ষ নিল এবং তাকে রাজা করতে চাইল আর অন্য দল অম্রির পক্ষ নিল। ২২ অম্রির দলের লোকেরা গীনতের ছেলে তিব্নির দলের লোকদের পরাজিত করল। তিব্নি মারা গেলেন আর অম্রি রাজা হলেন।
২৩ যিহূদার রাজা আসার রাজত্বের ৩১তম বছরে অম্রি ইজরায়েলের রাজা হলেন। অম্রি ১২ বছর ধরে রাজত্ব করলেন। তিনি ছ-বছর তির্সা থেকে রাজত্ব করেছিলেন। ২৪ তিনি দুই তালন্ত* রুপো দিয়ে শেমরের কাছ থেকে শমরিয়া পর্বত কিনলেন আর সেটার উপর একটা নগর নির্মাণ করলেন। তিনি পর্বতের পুরোনো মালিক শেমরের নাম অনুযায়ী নগরটার নাম রাখলেন শমরিয়া।* ২৫ অম্রি যিহোবার দৃষ্টিতে যা মন্দ, তা করে চললেন। তার আগে যত রাজা ছিলেন, তাদের সবার চেয়ে তিনি আরও বেশি মন্দ ছিলেন। ২৬ তিনি নবাটের ছেলে যারবিয়ামের সমস্ত পথে চললেন এবং ইজরায়েলকে দিয়েও পাপ করালেন আর ইজরায়েলীয়েরা অপদার্থ মূর্তিগুলোর উপাসনা করে ইজরায়েলের ঈশ্বর যিহোবাকে রাগিয়ে তুলেছিল। ২৭ অম্রির জীবনের বাকি কাহিনি, তিনি যে-বড়ো বড়ো সাফল্য অর্জন করেছিলেন এবং অন্যান্য কাজ করেছিলেন, সেগুলোর বিবরণ ইজরায়েলের রাজাদের ইতিহাস বইয়ে লেখা আছে। ২৮ পরে, অম্রি মারা গেলেন* আর তাকে শমরিয়াতে কবর দেওয়া হল। তার জায়গায় তার ছেলে আহাব রাজা হলেন।
২৯ যিহূদার রাজা আসার রাজত্বের ৩৮তম বছরে অম্রির ছেলে আহাব ইজরায়েলের রাজা হলেন। অম্রির ছেলে আহাব ২২ বছর ধরে শমরিয়া থেকে ইজরায়েলের উপর রাজত্ব করলেন। ৩০ অম্রির ছেলে আহাবের আগে যে-সমস্ত রাজা ছিলেন, তাদের সবার চেয়ে তিনি যিহোবার দৃষ্টিতে আরও বেশি মন্দ ছিলেন। ৩১ তিনিও নবাটের ছেলে যারবিয়ামের মতো একই পাপ করলেন। তিনি এখানেই থেমে থাকেননি। তিনি সীদোনীয়দের রাজা ইৎবালের মেয়ে ঈষেবলকে বিয়ে করলেন আর তিনি বাল দেবতার সেবা করতে এবং তার সামনে মাথা নত করতে লাগলেন। ৩২ শুধু তা-ই নয়, তিনি শমরিয়াতে বাল দেবতার যে-মন্দিরটা নির্মাণ করেছিলেন, সেখানে সেই দেবতার জন্য একটা বেদি স্থাপন করলেন। ৩৩ তিনি উপাসনার খুঁটিও* তৈরি করলেন। আহাবের আগে ইজরায়েলে যত রাজা ছিলেন, তাদের সবার চেয়ে তিনি যিহোবাকে আরও বেশি রাগিয়ে তুললেন।
৩৪ আহাবের দিনে বৈথেলের বাসিন্দা হীয়েল যিরীহো নগর পুনর্নির্মাণ করল। কিন্তু, তাকে এরজন্য চরম মূল্য দিতে হল। সে যখন যিরীহো নগরের ভিত্তি স্থাপন করল, তখন তার প্রথমজাত ছেলে অবীরাম মারা গেল আর সে যখন সেই নগরের দরজা লাগাল, তখন তার সবচেয়ে ছোটো ছেলে সগূব মারা গেল। এভাবে যিহোবার সেই কথা পূর্ণ হল, যেটা তিনি নূনের ছেলে যিহোশূয়ের মাধ্যমে বলেছিলেন।