মুক্তির মূল্য—পিতার কাছ থেকে এক “সিদ্ধ বর”
“সমস্ত উত্তম দান এবং সমস্ত সিদ্ধ বর . . . পিতা হইতে নামিয়া আইসে।”—যাকোব ১:১৭.
১. মুক্তির মূল্য আমাদের জন্য কোন উত্তম বিষয়গুলো সম্পাদন করেছে?
যিশু খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের কারণে মানুষের পক্ষে অনেক আশীর্বাদ লাভ করা সম্ভব হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, মুক্তির মূল্যের ব্যবস্থা, আদমের সেই সমস্ত সন্তানের জন্য একদিন ঈশ্বরের পরিবারের অংশ হওয়ার দ্বার খুলে দিয়েছে, যারা ধার্মিকতা ভালোবাসে। আরেকটা আশীর্বাদ হল, আমরা চিরকাল সুখেশান্তিতে বেঁচে থাকতে পারব। এর চেয়েও বড়ো বিষয় হল, মুক্তির মূল্য এমন বিষয়গুলোর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, যেগুলো স্বর্গ ও পৃথিবীর প্রত্যেকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।—ইব্রীয় ১:৮, ৯.
২. (ক) যিশু তাঁর প্রার্থনায় কোন বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন, যেগুলো স্বর্গ ও পৃথিবীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।) (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী আলোচনা করব?
২ মারা যাওয়ার প্রায় দু-বছর আগে যিশু তাঁর শিষ্যদের এই প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন: “হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ, তোমার নাম পবিত্র বলিয়া মান্য হউক, তোমার রাজ্য আইসুক, তোমার ইচ্ছা সিদ্ধ হউক, যেমন স্বর্গে তেমনি পৃথিবীতেও হউক।” (মথি ৬:৯, ১০) আসুন আমরা পরীক্ষা করে দেখি, কীভাবে মুক্তির মূল্য যিহোবার নাম পবিত্রীকরণ, ঈশ্বরের রাজ্যের শাসন ও ঈশ্বরের ইচ্ছা পরিপূর্ণ হওয়ার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
“তোমার নাম পবিত্র বলিয়া মান্য হউক”
৩. যিহোবার নাম কোন বিষয়টাকে প্রতিনিধিত্ব করে আর কীভাবে শয়তান যিহোবার নামের উপর অপবাদ নিয়ে এসেছিল?
৩ যিশু প্রার্থনার মধ্যে প্রথমে যিহোবার নামের পবিত্রীকরণের বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন। যিহোবার নাম স্বয়ং যিহোবাকে অর্থাৎ তিনি কে, সেই বিষয়টাকে প্রতিনিধিত্ব করে। তিনি হলেন পুরো নিখিলবিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি। যিশু তাঁকে “পবিত্র পিতঃ” বলে উল্লেখ করেছিলেন। (যোহন ১৭:১১) যেহেতু যিহোবা হলেন পবিত্র, তাই তিনি যা-কিছু করেন ও যেকোনো আইন তৈরি করেন, সেগুলো পবিত্র। কিন্তু এদন উদ্যানে, মানুষের জন্য মানস্থাপন করার ব্যাপারে ঈশ্বরের অধিকার নিয়ে শয়তান ধূর্ততার সঙ্গে প্রশ্ন তুলেছিল। সে যিহোবা সম্বন্ধে মিথ্যা কথা বলেছিল এবং ঈশ্বরের নাম বা সুনামের উপর অপবাদ নিয়ে এসেছিল।—আদি. ৩:১-৫.
৪. কীভাবে যিশু ঈশ্বরের নামকে পবিত্র বলে মান্য করেছিলেন?
৪ অন্যদিকে, যিহোবার নামের প্রতি যিশুর প্রকৃত ভালোবাসা ছিল আর এই নামের পবিত্রীকরণের জন্য তিনি যা-কিছু করতে পারতেন, সেইসমস্ত কিছুই করেছিলেন। (যোহন ১৭:২৫, ২৬) কীভাবে? যিশু তাঁর নিজের আচরণ ও শিক্ষার মাধ্যমে অন্যদের বুঝতে সাহায্য করেছিলেন, যিহোবার মান হল সঠিক আর যিহোবা আমাদের কাছ থেকে যা-কিছু চান, সেগুলো আমাদের মঙ্গলের জন্যই। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৪০:৮-১০.) এমনকী শয়তানের কারণে তাঁকে যখন কষ্টভোগ ও এক যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল, তখনও তিনি যিহোবার প্রতি অনুগত ছিলেন। তিনি প্রমাণ করেছিলেন, একজন সিদ্ধ ব্যক্তির পক্ষে সম্পূর্ণরূপে যিহোবার বাধ্য থাকা সম্ভব।
৫. কীভাবে আমরা ঈশ্বরের নামকে পবিত্র বলে মান্য করতে পারি?
৫ কীভাবে আমরা যিহোবার নামের প্রতি ভালোবাসা দেখাতে পারি? আমাদের আচরণের মাধ্যমে। যিহোবা চান যেন আমরা পবিত্র হই। (পড়ুন, ১ পিতর ১:১৫, ১৬.) এর অর্থ হচ্ছে, আমরা শুধুমাত্র তাঁকে উপাসনা করি এবং সর্বান্তঃকরণে তাঁর বাধ্য হই। এমনকী তাড়নার শিকার হলেও আমরা যিহোবার শিক্ষা অনুযায়ী জীবনযাপন করার জন্য যথাসাধ্য করি। যিহোবার মান অনুযায়ী জীবনযাপন করার মাধ্যমে আমরা তাঁর নামের গৌরব নিয়ে আসি। (মথি ৫:১৪-১৬) আমরা প্রমাণ করি, তাঁর আইন মঙ্গলজনক এবং শয়তান হল মিথ্যাবাদী। আমরা যেহেতু অসিদ্ধ, তাই আমরা পাপ করে ফেলি। কিন্তু পাপ করে ফেললে, আমরা অনুতপ্ত হই এবং যিহোবার নামের অসম্মান নিয়ে আসে এমন বিষয়গুলো না করার জন্য যথাসাধ্য করি।—গীত. ৭৯:৯.
৬. আমরা অসিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও কেন যিহোবা আমাদের ধার্মিক বলে গণ্য করতে পারেন?
৬ আমরা অভিষিক্ত কিংবা “আরও মেষ,” যে-দলেরই হই না কেন, আমরা যদি মুক্তির মূল্যে বিশ্বাস করি, তা হলে যিহোবা আমাদের পাপ ক্ষমা করেন। যারা তাঁর কাছে নিজেদের উৎসর্গ করে, তিনি তাদের তাঁর উপাসক হিসেবে গ্রহণ করে নেন। তিনি অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের তাঁর সন্তান হিসেবে ধার্মিক বলে গণ্য করেন এবং ‘আরও মেষকে’ তাঁর বন্ধু হিসেবে ধার্মিক বলে গণ্য করেন। (যোহন ১০:১৬; রোমীয় ৫:১, ২; যাকোব ২:২১-২৫) তাই, মুক্তির মূল্যের কারণে এখনই আমাদের পিতার সঙ্গে উত্তম সম্পর্কস্থাপন করা ও তাঁর নামের পবিত্রীকরণ করা সম্ভব হয়।
“তোমার রাজ্য আইসুক”
৭. মুক্তির মূল্যের কারণে কোন কোন আশীর্বাদ সম্ভবপর হয়েছে?
৭ আদর্শ প্রার্থনায় যিশু বলেছিলেন: “তোমার রাজ্য আইসুক।” কীভাবে মুক্তির মূল্য ঈশ্বরের রাজ্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত? ঈশ্বরের রাজ্য বা সরকার, যিশু এবং মানবজাতির মধ্য থেকে মনোনীত ১,৪৪,০০০ ব্যক্তিকে নিয়ে গঠিত। মুক্তির মূল্যের কারণে এই ব্যক্তিদের পক্ষে স্বর্গে পুনরুত্থিত হওয়া সম্ভবপর হয়েছে। (প্রকা. ৫:৯, ১০; ১৪:১) তারা যিশুর সঙ্গে রাজা ও যাজক হবেন এবং এক হাজার বছর ধরে এই পৃথিবীর উপর শাসন করবেন। সেই সময়ে, যিহোবা এই রাজ্যের মাধ্যমে পৃথিবীকে পরমদেশে পরিণত করবেন ও সমস্ত মানুষকে সিদ্ধতায় পৌঁছাতে সাহায্য করবেন। স্বর্গে ও পৃথিবীতে যিহোবার দাসেরা অবশেষে এক পরিবার হয়ে উঠবে। (প্রকা. ৫:১৩; ২০:৬) যিশু শয়তানকে ধ্বংস করবেন ও তার কারণে সৃষ্ট সমস্ত সমস্যা দূর করে দেবেন।—আদি. ৩:১৫.
৮. (ক) কীভাবে যিশু তাঁর শিষ্যদের ঈশ্বরের রাজ্যের গুরুত্ব বুঝতে সাহায্য করেছিলেন? (খ) কীভাবে বর্তমানে আমরা রাজ্যকে সমর্থন করতে পারি?
৮ যিশু তাঁর শিষ্যদের ঈশ্বরের রাজ্যের গুরুত্ব বুঝতে সাহায্য করেছিলেন। কীভাবে? বাপ্তিস্ম নেওয়ার পর পরই, তিনি যেখানে গিয়েছিলেন, সেখানেই “ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার” প্রচার করতে শুরু করেছিলেন। (লূক ৪:৪৩) এ ছাড়া, তিনি বলেছিলেন, তাঁর শিষ্যরা “পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত” তাঁর সাক্ষি হবেন। (প্রেরিত ১:৬-৮) বর্তমানে, রাজ্যের প্রচার কাজের মাধ্যমে লোকেরা মুক্তির মূল্য সম্বন্ধে শেখার এবং ঈশ্বরের রাজ্যের প্রজা হওয়ার সুযোগ লাভ করছে। বিশ্বব্যাপী সুসমাচার প্রচার করার জন্য অভিষিক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে সহযোগিতা করার মাধ্যমে আমরা প্রকাশ করি যে, আমরা হলাম সেই রাজ্যের অনুগত প্রজা।—মথি ২৪:১৪; ২৫:৪০.
“তোমার ইচ্ছা সিদ্ধ হউক”
৯. মানুষের জন্য যিহোবার উদ্দেশ্য যে পরিপূর্ণ হবে, সেই বিষয়ে কেন আমরা আস্থা রাখতে পারি?
৯ এরপর যিশু যখন বলেছিলেন “তোমার ইচ্ছা সিদ্ধ হউক,” তখন তিনি কী বুঝিয়েছিলেন? যিহোবা যদি কোনো কিছু ঘটবে বলে উল্লেখ করেন, তা হলে সেটা ঘটবেই। (যিশা. ৫৫:১১) শয়তানের বিদ্রোহ যিহোবাকে থামাতে পারেনি। পৃথিবীর জন্য যিহোবার ইচ্ছা কী ছিল? তিনি চেয়েছিলেন যেন এই পৃথিবী আদম ও হবার সিদ্ধ সন্তান দ্বারা পরিপূর্ণ হয়। (আদি. ১:২৮) যদি আদম ও হবা কোনো সন্তান না রেখেই মারা যেতেন, তা হলে তাদের সন্তান দ্বারা এই পৃথিবী পরিপূর্ণ করার ব্যাপারে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হতো। তাই, যিহোবা তাদের সন্তান জন্ম দেওয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন। যারা বিশ্বাস দেখিয়ে চলে, তারা সকলে মুক্তির মূল্যের কারণে সিদ্ধতায় পৌঁছানোর ও চিরকাল বেঁচে থাকার সুযোগ লাভ করে। যিহোবা লোকেদের ভালোবাসেন আর তিনি চান যেন আমরা তাঁর উদ্দেশ্য অনুযায়ী এক চমৎকার জীবন লাভ করি।
১০. যারা মারা গিয়েছে, তারা মুক্তির মূল্য থেকে কীভাবে উপকার লাভ করতে পারবে?
১০ সেইসমস্ত কোটি কোটি মানুষের বিষয়ে কী বলা যায়, যারা যিহোবা সম্বন্ধে জানার কোনো সুযোগ না পেয়েই মারা গিয়েছে? যিহোবা চান লোকেরা বেঁচে থাকুক। তাই, যারা মারা গিয়েছে, তাদের তিনি জীবন ফিরিয়ে দেবেন। মুক্তির মূল্যের কারণে তাদের জীবন ফিরে পাওয়া সম্ভব হবে। তারপর, তারা যিহোবা সম্বন্ধে শিখতে পারবে ও চিরকাল বেঁচে থাকতে পারবে। (প্রেরিত ২৪:১৫) যিহোবা হলেন জীবনের উৎস। যারা মারা গিয়েছে, যিহোবা যখন তাদের জীবন ফিরিয়ে দেবেন, তখন তিনি তাদের পিতা হয়ে উঠবেন। (গীত. ৩৬:৯) আদর্শ প্রার্থনায় যিশু বলেছিলেন, যিহোবা হলেন “আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ।” (মথি ৬:৯) যিহোবা মৃত ব্যক্তিদের পুনরুত্থিত করার জন্য যিশুকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক ভূমিকা দান করেছেন। যিশু বলেছিলেন: “আমিই পুনরুত্থান ও জীবন।”—যোহন ৬:৪০, ৪৪; ১১:২৫.
১১. ‘বিস্তর লোকের’ জন্য ঈশ্বরের ইচ্ছা কী?
১১ যিশু আরও বলেছিলেন: “কেননা যে কেহ ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, সেই আমার ভ্রাতা ও ভগিনী ও মাতা।” (মার্ক ৩:৩৫) ঈশ্বরের ইচ্ছা হল, সমস্ত জাতি, বংশ ও ভাষার লোক তাঁর উপাসক হবে। তাদের “বিস্তর লোক” বলে বর্ণনা করা হয়েছে, যাদের “গণনা করিতে সমর্থ কেহ ছিল না।” তারা মুক্তির মূল্যের প্রতি বিশ্বাস দেখায় ও ঈশ্বরের বাধ্য হতে চায়। তাঁর প্রশংসা করে তারা এই কথা বলে: “পরিত্রাণ আমাদের ঈশ্বরের, যিনি সিংহাসনে বসিয়া আছেন, এবং মেষশাবকের দান।”—প্রকা. ৭:৯, ১০.
১২. যিশুর প্রার্থনা থেকে মানুষের জন্য যিহোবার উদ্দেশ্য সম্বন্ধে আমরা কী শিখতে পারি?
১২ যিশুর আদর্শ প্রার্থনা থেকে আমরা যিহোবা ও তাঁর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে অনেক কিছু শিখেছি। প্রথমত, যিহোবার নামের পবিত্রীকরণ ও তাঁর গৌরব করার জন্য আমাদের যথাসাধ্য করতে হবে। (যিশা. ৮:১৩) যিশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদান, যার ফলে আমাদের পরিত্রাণ সম্ভবপর হয়েছে, সেটার মাধ্যমেও ঈশ্বরের নাম গৌরবান্বিত হয়। আসলে, যিশু নামের অর্থ হল “যিহোবা হলেন পরিত্রাণ।” দ্বিতীয়ত, বাধ্য মানুষেরা যাতে মুক্তির মূল্যের সমস্ত উপকার লাভ করতে পারে, সেইজন্য যিহোবা তাঁর রাজ্যকে ব্যবহার করবেন। তৃতীয়ত, আমাদের এই আস্থা রয়েছে, যিহোবার ইচ্ছা পরিপূর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো কিছুই বাধা দিতে পারে না।—গীত. ১৩৫:৬; যিশা. ৪৬:৯, ১০.
মুক্তির মূল্যের জন্য যিহোবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন
১৩. কেন আমরা বাপ্তিস্ম নিই?
১৩ একটা গুরুত্বপূর্ণ উপায়ে আমরা দেখাতে পারি, আমরা মুক্তির মূল্যের জন্য কৃতজ্ঞ আর তা হল যিহোবার কাছে আমাদের জীবন উৎসর্গ করার ও বাপ্তিস্ম নেওয়ার মাধ্যমে। এভাবে আমরা প্রকাশ করি, মুক্তির মূল্যের প্রতি আমাদের বিশ্বাস রয়েছে আর “আমরা প্রভুরই [ঈশ্বরেরই]।” (রোমীয় ১৪:৮) আমরা যখন বাপ্তিস্ম নিই, তখন আমরা যিহোবার কাছে ‘সৎসংবেদ’ বা উত্তম বিবেক চাই। (১ পিতর ৩:২১) যিহোবা আমাদের প্রতি মুক্তির মূল্যের উপকার প্রয়োগ করার মাধ্যমে আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেন। আর আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত, তিনি যা-কিছু প্রতিজ্ঞা করেছেন, সেইসমস্ত কিছু তিনি আমাদের দেবেন।—রোমীয় ৮:৩২.
কীভাবে আমরা মুক্তির মূল্যের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি? (১৩, ১৪ অনুচ্ছেদ দেখুন)
১৪. যিহোবা কেন অন্যদের প্রতি ভালোবাসা দেখাতে বলেছেন?
১৪ যিহোবা মহান প্রেমের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে সমস্ত কিছু করেন। তাঁর ইচ্ছা হল, তাঁর উপাসকরা যেন তাঁকে অনুকরণ করে ও একে অন্যকে ভালোবাসে। (১ যোহন ৪:৮-১১) আমরা যখন লোকেদের প্রতি ভালোবাসা দেখাই, তখন আমরা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করি, আমরা “[আমাদের] স্বর্গস্থ পিতার সন্তান” হতে চাই। (মথি ৫:৪৩-৪৮) সর্বমহৎ দুটো আজ্ঞার মধ্যে প্রথমটা হল, যিহোবার প্রতি ভালোবাসা দেখানো এবং দ্বিতীয়টা হল, অন্যদের প্রতি ভালোবাসা দেখানো। (মথি ২২:৩৭-৪০) একটা যে-উপায়ে আমরা লোকেদের প্রতি ভালোবাসা দেখাতে পারি তা হল, ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার সম্বন্ধে তাদের শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে। আমরা যদি অন্যদের প্রতি, বিশেষভাবে আমাদের ভাই-বোনদের প্রতি ভালোবাসা দেখানোর বিষয়ে যিহোবার আজ্ঞার বাধ্য হই, তা হলে তাঁর প্রতি আমাদের ভালোবাসা “সিদ্ধ হয়” বা পূর্ণতা লাভ করে।—১ যোহন ৪:১২, ২০.
মুক্তির মূল্য যিহোবার আশীর্বাদ নিয়ে আসে
১৫. (ক) যিহোবার কাছ থেকে আমরা এখন কোন কোন আশীর্বাদ লাভ করি? (খ) ভবিষ্যতে আমরা কোন কোন আশীর্বাদ লাভ করব?
১৫ যিহোবা আমাদের আশ্বস্ত করেন, মুক্তির মূল্যের প্রতি আমাদের বিশ্বাসের কারণে আমাদের পাপ “মুছিয়া ফেলা হয়।” তিনি আমাদের পাপ পুরোপুরি ক্ষমা করতে পারেন। (পড়ুন, প্রেরিত ৩:১৯-২১.) আগে যেমন আমরা আলোচনা করেছি, মুক্তির মূল্যের মাধ্যমে যিহোবা মানুষের মধ্য থেকে অল্পসংখ্যক ব্যক্তিকে স্বর্গে তাঁর পুত্র হিসেবে গ্রহণ করতে পেরেছেন। এই ব্যক্তিরা হলেন অভিষিক্ত ব্যক্তি। (রোমীয় ৮:১৫-১৭) তিনি ‘আরও মেষের’ অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের পৃথিবীতে তাঁর পরিবারের অংশ হওয়ার আমন্ত্রণ জানান। তারা সিদ্ধতায় পৌঁছানোর পর, একটা চূড়ান্ত পরীক্ষা হবে। তারা যদি যিহোবার প্রতি অনুগত থাকে, তা হলে তিনি তাঁর সন্তান হিসেবে তাদের গ্রহণ করবেন। (রোমীয় ৮:২০, ২১; প্রকা. ২০:৭-৯) যিহোবা সবসময় তাঁর সমস্ত সন্তানের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করবেন। মুক্তির মূল্যের মাধ্যমে চিরকাল আশীর্বাদ লাভ করা যাবে। (ইব্রীয় ৯:১২) যিহোবা আমাদের এই মূল্যবান উপহার দিয়েছেন আর আমাদের কাছ থেকে কেউ তা কেড়ে নিতে পারে না।
১৬. কীভাবে মুক্তির মূল্য আমাদের স্বাধীন হতে সাহায্য করে?
১৬ আমরা যদি আমাদের পাপের জন্য অনুতপ্ত হই, তা হলে অবশেষে যিহোবার পরিবারের অংশ হতে আমাদের বাধা দেওয়ার ব্যাপারে দিয়াবল কিছুই করতে পারবে না। যিশু “এক বার” মৃত্যুবরণ করেছেন আর এভাবে মুক্তির মূল্য স্থায়ীভাবে পরিশোধ করা হয়েছে। (ইব্রীয় ৯:২৪-২৬) আদম আমাদের জন্য মৃত্যু নিয়ে এসেছেন, কিন্তু যিশুর বলিদান আমাদের জন্য অনন্তজীবন নিয়ে আসবে। মুক্তির মূল্য শয়তানের জগৎ ও মৃত্যুর ভয় থেকে আমাদের স্বাধীন করতে পারে।—ইব্রীয় ২:১৪, ১৫.
১৭. যিহোবার প্রেম থেকে আপনি ব্যক্তিগতভাবে কীভাবে উপকার লাভ করেন?
১৭ ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলো সবসময় পরিপূর্ণ হবে। যিহোবার তৈরি প্রাকৃতিক নিয়মগুলো যেমন কখনো পরিবর্তন হয় না, তেমনই যিহোবাও কখনো পরিবর্তন হবেন না। তিনি কখনোই আমাদের হতাশ করবেন না। (মালাখি ৩:৬) যিহোবা শুধু আমাদের এই জীবনই উপহার দেননি, তিনি তার চেয়ে বেশি কিছু দিয়েছেন। তিনি আমাদের মধ্যে তাঁর প্রেম গুণটা দিয়েছেন। “ঈশ্বরের যে প্রেম আমাদিগেতে আছে, তাহা আমরা জানি, ও বিশ্বাস করিয়াছি। ঈশ্বর প্রেম।” (১ যোহন ৪:১৬) তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো সবসময় পরিপূর্ণ হয়। শীঘ্রই এই পৃথিবী অপূর্ব এক পরমদেশে পরিণত হবে। জীবিত সকল মানুষ যিহোবাকে অনুকরণ করবে ও একে অন্যের প্রতি ভালোবাসা দেখাবে। তারপর, স্বর্গ ও পৃথিবীতে তাঁর সকল দাস এই কথা বলবে: “ধন্যবাদ ও গৌরব ও জ্ঞান ও প্রশংসা ও সমাদর ও পরাক্রম ও শক্তি যুগপর্য্যায়ের যুগে যুগে আমাদের ঈশ্বরের প্রতি বর্ত্তুক। আমেন।”—প্রকা. ৭:১২.