আপনার প্রেমকে শীতল হয়ে যেতে দেবেন না
“অধর্ম্মের বৃদ্ধি হওয়াতে অধিকাংশ লোকের প্রেম শীতল হইয়া যাইবে।”—মথি ২৪:১২.
১, ২. (ক) মথি ২৪:১২ পদে বলা যিশুর কথাগুলো প্রাথমিকভাবে কাদের প্রতি প্রযোজ্য ছিল? (খ) প্রেরিত বইটা কীভাবে দেখায় যে, প্রথম শতাব্দীর অধিকাংশ খ্রিস্টান তাদের প্রেমকে দৃঢ় রেখেছিল? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)
যিশু পৃথিবীতে থাকাকালীন, কীভাবে লোকেরা “যুগান্তের” সময়কে শনাক্ত করবে, সেই সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করেছিলেন। অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি, যিশু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, “অধিকাংশ লোকের প্রেম শীতল হইয়া যাইবে।” (মথি ২৪:৩, ১২) এই কথাগুলো প্রাথমিকভাবে প্রথম শতাব্দীর যিহুদিদের প্রতি প্রযোজ্য ছিল, যারা নিজেদের ঈশ্বরের লোক বলে দাবি করত কিন্তু ঈশ্বরের প্রতি তাদের প্রেমকে শীতল হয়ে যেতে দিয়েছিল।
২ তবে, সেই সময় অধিকাংশ খ্রিস্টানের এক ভিন্ন মনোভাব ছিল। তারা উদ্যোগের সঙ্গে “খ্রীষ্ট” বিষয়ক “সুসমাচার” প্রচার কাজে রত ছিল এবং ঈশ্বর, তাদের সহবিশ্বাসী আর এমনকী যারা সত্য জানত না, তাদের প্রতিও প্রেম দেখিয়ে চলেছিল। এই খ্রিস্টানরা ঈশ্বরের প্রতি তাদের প্রেমকে দৃঢ় রেখেছিল। (প্রেরিত ২:৪৪-৪৭; ৫:৪২) কিন্তু, দুঃখের বিষয় হল, প্রথম শতাব্দীতে এমন খ্রিস্টানও ছিল, যাদের প্রেম শীতল হয়ে গিয়েছিল। কীভাবে আমরা তা জানতে পারি?
৩. কোন কারণগুলোর জন্য কোনো কোনো খ্রিস্টানের প্রেম শীতল হয়ে গিয়েছিল?
৩ প্রথম শতাব্দীতে, ইফিষে বসবাসরত খ্রিস্টানদের উদ্দেশে যিশু এই কথাগুলো বলেছিলেন: “তুমি আপন প্রথম প্রেম পরিত্যাগ করিয়াছ।” (প্রকা. ২:৪) এর কারণ হতে পারে, ইফিষের খ্রিস্টানরা তাদের চারপাশের সেই লোকেদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল, যারা মূলত নিজেদের সন্তুষ্ট করতে চাইত। (ইফি. ২:২, ৩) ইফিষ খুবই সমৃদ্ধশালী এক শহর ছিল, যেখানকার লোকেরা অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে বরং আরাম-আয়েশ ও বিলাসী জীবনযাপনের ব্যাপারে বেশি আগ্রহী ছিল। এ ছাড়া, ইফিষের অনেকে খুবই অনৈতিক ছিল এবং ঈশ্বরের আইনগুলোর প্রতি তাদের কোনো সম্মানই ছিল না। তারা ঈশ্বর ও অন্যদের প্রতি নিঃস্বার্থ প্রেম দেখানোর চেয়ে নিজেদের আমোদপ্রমোদের ব্যাপারে বেশি আগ্রহী ছিল।
৪. (ক) কীভাবে আমাদের দিনে প্রেম শীতল হয়ে গিয়েছে? (খ) কোন তিনটে ক্ষেত্রে আমাদের প্রেমকে অবশ্যই দৃঢ় রাখতে হবে?
৪ প্রেম শীতল হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে যিশুর কথাগুলো আমাদের দিনের প্রতিও প্রযোজ্য। বর্তমানে, ঈশ্বরের প্রতি লোকেদের প্রেম দিন দিন কমে যাচ্ছে। জগতের সমস্যাগুলো সমাধান করার জন্য ঈশ্বরের উপর নির্ভর করার পরিবর্তে, লক্ষ লক্ষ লোক মানব সংগঠনগুলোর উপর নির্ভর করে থাকে। তাদের প্রেম ক্রমাগত শীতল হয়ে যাচ্ছে। এমনকী যিহোবার দাসদের প্রেমও শীতল হয়ে যেতে পারে, যেমনটা প্রাচীন ইফিষীয় মণ্ডলীর দাসদের ক্ষেত্রে হয়েছিল। তাই, আসুন আমরা তিনটে ক্ষেত্র বিবেচনা করি, যে-ক্ষেত্রগুলোতে আমাদের প্রেমকে অবশ্যই দৃঢ় রাখতে হবে: (১) যিহোবার প্রতি প্রেম, (২) বাইবেলের সত্যের প্রতি প্রেম এবং (৩) আমাদের ভাই-বোনদের প্রতি প্রেম।
যিহোবার প্রতি প্রেম
৫. কেন আমাদের অবশ্যই ঈশ্বরকে প্রেম করতে হবে?
৫ কাকে আমাদের সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতে হবে? যিশু বলেছিলেন: “‘তোমার সমস্ত অন্তঃকরণ, তোমার সমস্ত প্রাণ ও তোমার সমস্ত মন দিয়া তোমার ঈশ্বর প্রভুকে প্রেম করিবে,’ এইটী মহৎ ও প্রথম আজ্ঞা।” (মথি ২২:৩৭, ৩৮) ঈশ্বরের প্রতি প্রেম আমাদের তাঁর আজ্ঞাগুলো পালন করতে, ধৈর্য ধরতে এবং দুষ্টতাকে ঘৃণা করতে সাহায্য করে। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৯৭:১০.) কিন্তু, শয়তান ও তার জগৎ ঈশ্বরের প্রতি আমাদের প্রেমকে দুর্বল ও নষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টা করে।
৬. লোকেরা যখন ঈশ্বরের প্রতি প্রেম হারিয়ে ফেলে, তখন কী হয়?
৬ প্রেম সম্বন্ধে জগতের লোকেদের এক বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। ঈশ্বরকে প্রেম করার পরিবর্তে অনেকে “আত্মপ্রিয়” মনোভাব দেখায়। (২ তীম. ৩:২) তারা ‘মাংসের অভিলাষ, চক্ষুর অভিলাষ, ও জীবিকার দর্পের’ প্রতি বেশি মনোযোগ দেয়। (১ যোহন ২:১৬) আমরা যদি প্রথমে নিজেদের সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করি, তা হলে কী হতে পারে, সেই সম্বন্ধে প্রেরিত পৌল আমাদের সাবধান করে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “মাংসের ভাব মৃত্যু।” কেন? কারণ যাদের এইরকম মনোভাব রয়েছে, তারা আসলে ঈশ্বরের শত্রু হয়ে ওঠে। (রোমীয় ৮:৬, ৭) যে-লোকেরা টাকাপয়সা অর্জন করার অথবা যৌন আকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করার উপর বেশি মনোযোগ দেয়, তারা পরিশেষে খুবই হতাশ হয়ে পড়ে।—১ করি. ৬:১৮; ১ তীম. ৬:৯, ১০.
৭. কোন বিপদজনক ধারণাগুলো বর্তমানে খ্রিস্টানদের প্রভাবিত করতে পারে?
৭ নাস্তিক, অজ্ঞেয়বাদী (যারা মনে করেন, ঈশ্বর আছেন কি না, তা জানা সম্ভব নয়) এবং বিবর্তনবাদী ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকে ঈশ্বরকে প্রেম না করার অথবা এমনকী তাঁর অস্তিত্বে বিশ্বাস না করার জন্য অন্যদের প্ররোচিত করেন। তারা লোকেদের এইরকম মনে করতে পরিচালিত করেন যে, কেবল মূর্খ অথবা অশিক্ষিত লোকেরা সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করে। এ ছাড়া, অনেক লোক সৃষ্টিকর্তার চেয়ে বরং মানববিজ্ঞানীদের প্রতি বেশি সম্মান দেখিয়ে থাকে। (রোমীয় ১:২৫) এমনকী একজন খ্রিস্টানও এই ধারণাগুলোর দ্বারা প্রভাবিত হতে পারেন। এর ফলে, যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক দুর্বল হয়ে যেতে এবং আমাদের প্রেম শীতল হয়ে যেতে পারে।—ইব্রীয় ৩:১২.
৮. (ক) কোন পরিস্থিতিগুলো যিহোবার লোকেদের নিরুৎসাহিত করে দিতে পারে? (খ) কীভাবে গীতসংহিতার ১৩৬ গীত আমাদের সান্ত্বনা দেয়?
৮ যেহেতু আমরা শয়তানের দুষ্ট বিধিব্যবস্থার মধ্যে বাস করছি, তাই মাঝে মাঝে আমরা বিভিন্ন কারণে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়তে পারি। (১ যোহন ৫:১৯) কিন্তু, আমরা যদি নিজেদের খুব বেশি নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ার সুযোগ দিই, তা হলে আমাদের বিশ্বাস দুর্বল হয়ে যেতে এবং ঈশ্বরের প্রতি আমাদের প্রেম শীতল হয়ে যেতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ, ধীরে ধীরে বার্ধক্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার, অসুস্থ হওয়ার বা আর্থিক সমস্যা ভোগ করার কারণে আমরা বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে পারি। অথবা আমরা কিছু কাজ যেভাবে চাই, সেভাবে করতে না পারার কারণে দুঃখিত হয়ে পড়তে পারি। কিংবা আমাদের জীবনে বিভিন্ন বিষয় আমরা যেভাবে আশা করি, সেভাবে না হওয়ার কারণে হতাশ হয়ে পড়তে পারি। আমরা যে-প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মুখোমুখিই হই না কেন, আমাদের কখনো এইরকমটা মনে করা উচিত নয় যে, যিহোবা আমাদের পরিত্যাগ করেছেন। গীতসংহিতা ১৩৬:২৩ পদে বলা এই সান্ত্বনাদায়ক কথাগুলো নিয়ে চিন্তা করে দেখুন: “তিনি আমাদের হীনাবস্থায় আমাদিগকে স্মরণ করিলেন; —তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী।” আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, যিহোবা আমাদের “বিনতি” শোনেন এবং তিনি সেই বিনতির উত্তর দেবেন।—গীত. ১১৬:১; ১৩৬:২৪-২৬.
৯. কী পৌলকে ঈশ্বরের প্রতি তার প্রেমকে দৃঢ় রাখার জন্য শক্তি জুগিয়েছিল?
৯ ঈশ্বরের একজন দাস প্রেরিত পৌল, যিহোবা তাকে কীভাবে সাহায্য করেছেন, সেই বিষয় নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেছিলেন আর এটা তাকে দৃঢ় থাকতে সাহায্য করেছিল। তিনি লিখেছিলেন: “প্রভু [ঈশ্বর] আমার সহায়, আমি ভয় করিব না; মনুষ্য আমার কি করিবে?” (ইব্রীয় ১৩:৬) যিহোবার প্রতি পৌলের আস্থা তাকে জীবনের প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করতে সাহায্য করেছিল। পৌল যখন কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন, তখন তিনি যিহোবার প্রতি তার আস্থা হারিয়ে ফেলেননি। এমনকী কারাগারে থাকার সময়ও তিনি বিভিন্ন মণ্ডলীর উদ্দেশে উৎসাহজনক চিঠি লেখার মাধ্যমে সহখ্রিস্টানদের সাহায্য করেছিলেন। (ইফি. ৪:১; ফিলি. ১:৭; ফিলী. ১) পৌল যে-সমস্যারই মুখোমুখি হয়ে থাকুন না কেন, তিনি যিহোবার প্রতি তার প্রেমকে দৃঢ় রেখেছিলেন। তিনি “সমস্ত সান্ত্বনার ঈশ্বর” যিহোবার উপর নির্ভর করেছিলেন, যিনি “আমাদের সমস্ত ক্লেশের মধ্যে আমাদিগকে সান্ত্বনা করেন।” (২ করি. ১:৩, ৪) কীভাবে আমরা পৌলকে অনুকরণ করতে পারি?
যিহোবার প্রতি প্রেম দেখান (১০ অনুচ্ছেদ দেখুন)
১০. কীভাবে আমরা যিহোবার প্রতি আমাদের প্রেমকে দৃঢ় রাখতে পারি?
১০ একটা যে-উপায়ে আমরা যিহোবার প্রতি আমাদের প্রেমকে দৃঢ় রাখতে পারি, সেই সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পৌল লিখেছিলেন: “অবিরত প্রার্থনা কর।” পরে তিনি আরও লিখেছিলেন: “প্রার্থনায় নিবিষ্ট থাক।” (১ থিষল. ৫:১৭; রোমীয় ১২:১২) কেন প্রার্থনা আমাদের ঈশ্বরের আরও নিকটবর্তী করে? আমরা যখন প্রার্থনা করি, তখন আমরা যিহোবার সঙ্গে ভাববিনিময় করি। এর ফলে আমরা তাঁর সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক বজায় রাখতে পারি। (গীত. ৮৬:৩) আমরা যখন আমাদের স্বর্গীয় পিতাকে আমাদের গভীর চিন্তার বিষয় এবং অনুভূতিগুলো জানাই, তখন আমরা তাঁর আরও নিকটবর্তী হই। (গীত. ৬৫:২) এ ছাড়া, আমরা যখন যিহোবার কাছ থেকে আমাদের প্রার্থনার উত্তর পাই, তখন তাঁর প্রতি আমাদের প্রেম আরও বৃদ্ধি পায়। আমরা এই ব্যাপারে নিশ্চিত, “সদাপ্রভু সেই সকলেরই নিকটবর্ত্তী, যাহারা তাঁহাকে ডাকে।” (গীত. ১৪৫:১৮) যিহোবার প্রেম ও সাহায্যের প্রতি আমাদের আস্থা, আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যতের যেকোনো সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে।
বাইবেলের সত্যের প্রতি প্রেম
১১, ১২. কীভাবে আমরা বাইবেলের সত্যের প্রতি আমাদের প্রেম বৃদ্ধি করতে পারি?
১১ খ্রিস্টান হিসেবে আমরা সত্যকে ভালোবাসি। আর ঈশ্বরের বাক্য থেকে আমরা সেই সত্য জানতে পারি। যিশু তাঁর পিতাকে বলেছিলেন: “তোমার বাক্যই সত্যস্বরূপ।” (যোহন ১৭:১৭) বাইবেলের সত্যকে ভালোবাসতে হলে আমাদের জানতে হবে, বাইবেলের মধ্যে কী রয়েছে। (কল. ১:১০) কিন্তু, আরও কিছু করতে হবে। লক্ষ করুন, আমাদের কী করতে হবে, তা বোঝার জন্য গীতসংহিতার ১১৯ গীতের রচয়িতা কীভাবে আমাদের সাহায্য করেছেন। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১১৯:৯৭-১০০.) বাইবেল থেকে আমরা যা পড়ি, সেটাকে আমাদের প্রতিদিনের ধ্যানের বিষয় করতে হবে অর্থাৎ সেটা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। বাইবেলের সত্য আমাদের জীবনে কাজে লাগানোর মাধ্যমে আমরা কীভাবে উপকার লাভ করি, তা নিয়ে আমরা যখন ধ্যান করব, তখন সেই সত্যের প্রতি আমাদের প্রেম দিন দিন আরও বৃদ্ধি পাবে।
১২ গীতরচক এও বলেছিলেন: “তোমার বচন সকল আমার তালুতে কেমন মিষ্ট লাগে! তাহা আমার মুখে মধু হইতেও মধুর!” (গীত. ১১৯:১০৩) ঈশ্বরের সংগঠন বাইবেলভিত্তিক যে-প্রকাশনাগুলো জুগিয়ে থাকে, সেগুলোকে সুস্বাদু খাবারের সঙ্গে তুলনা করা যায়। আমরা যখন আমাদের পছন্দের খাবার খাই, তখন আমরা সময় নিয়ে সেই খাবার উপভোগ করতে চাই। একইভাবে, অধ্যয়ন করার জন্যও আমরা সময় করে নিতে চাই। যদি আমরা তা করি, তা হলে আমরা সত্যের “মনোহর বাক্য” প্রকৃতই উপভোগ করতে পারব আর এর ফলে আমরা যা পড়ি, তা মনে রাখা এবং অন্যদের সাহায্য করার জন্য তা ব্যবহার করা আমাদের পক্ষে আরও সহজ হয়ে উঠবে।—উপ. ১২:১০.
১৩. কী যিরমিয়কে ঈশ্বরের বাক্যকে ভালোবাসতে সাহায্য করেছিল আর সেই বাক্য তার উপর কেমন প্রভাব ফেলেছিল?
১৩ ভাববাদী যিরমিয় ঈশ্বরের বাক্যকে ভালোবাসতেন। তিনি বলেছিলেন: “তোমার বাক্য সকল পাওয়া গেল, আর আমি সেগুলি ভক্ষণ করিলাম, তোমার বাক্য সকল আমার আমোদ ও চিত্তের হর্ষজনক ছিল; কেননা হে সদাপ্রভু, বাহিনীগণের ঈশ্বর, আমার উপরে তোমার নাম কীর্ত্তিত।” (যির. ১৫:১৬) যিরমিয় ঈশ্বরের মূল্যবান বাক্য নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতেন এবং সেগুলোকে ভালোবাসতেন। যিহোবাকে প্রতিনিধিত্ব করার এবং তাঁর বার্তা সম্বন্ধে ঘোষণা করার বিষয়টাকে যিরমিয় মূল্যবান বলে গণ্য করেছিলেন। আমরা যদি বাইবেলের সত্যকে ভালোবাসি, তা হলে যিহোবার সাক্ষি হওয়া এবং এই শেষকালে ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে প্রচার করা যে কী এক বিশেষ সুযোগ, তা আমরা উপলব্ধি করব।
বাইবেলের সত্যের প্রতি প্রেম দেখান (১৪ অনুচ্ছেদ দেখুন)
১৪. বাইবেলের সত্যের প্রতি আমাদের ভালোবাসাকে বৃদ্ধি করার জন্য আমরা আর কী করতে পারি?
১৪ বাইবেলের সত্যের প্রতি আমাদের ভালোবাসাকে গভীর করার জন্য আমরা আর কী করতে পারি? আমাদের নিয়মিতভাবে মণ্ডলীর সভাগুলোতে যোগ দিতে হবে, যেখানে আমরা যিহোবার কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করি। প্রহরীদুর্গ পত্রিকা ব্যবহার করে সাপ্তাহিক যে-বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করা হয়, সেটা হল আমাদের শিক্ষা লাভ করার এক প্রধান উপায়। আমরা যদি এই সভা থেকে পূর্ণরূপে উপকার লাভ করতে চাই, তা হলে আমাদের আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ, উল্লেখিত প্রতিটা শাস্ত্রপদ আমরা বাইবেল থেকে দেখতে পারি। বর্তমানে, অনেকে তাদের ইলেকট্রনিক ডিভাইসে প্রহরীদুর্গ পত্রিকা সহজেই পড়তে ও ডাউনলোড করতে পারে কারণ এই পত্রিকা jw.org ওয়েবসাইটে এবং JW লাইব্রেরি অ্যাপে বিভিন্ন ভাষায় পাওয়া যায়। কিছু কিছু ভাষায় কোনো কোনো ইলেকট্রনিক ফরম্যাটে উল্লেখিত শাস্ত্রপদগুলো সহজেই দেখা যায়। কিন্তু, আমরা যে-পদ্ধতিই ব্যবহার করি না কেন, উল্লেখিত শাস্ত্রপদগুলো মনোযোগের সঙ্গে পড়া এবং সেগুলো নিয়ে ধ্যান করা বাইবেলের সত্যের প্রতি আমাদের ভালোবাসাকে গভীর করবে।—পড়ুন, গীতসংহিতা ১:২.
আমাদের ভাই-বোনদের প্রতি প্রেম
১৫, ১৬. (ক) যোহন ১৩:৩৪, ৩৫ পদ অনুসারে, যিশু আমাদের কোন আজ্ঞা দিয়েছেন? (খ) ঈশ্বর ও বাইবেলের প্রতি আমাদের প্রেম কীভাবে ভাই-বোনদের প্রতি আমাদের প্রেমের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত?
১৫ পৃথিবীতে তাঁর জীবনের শেষ রাতে, যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “এক নূতন আজ্ঞা আমি তোমাদিগকে দিতেছি, তোমরা পরস্পর প্রেম কর; আমি যেমন তোমাদিগকে প্রেম করিয়াছি, তোমরাও তেমনি পরস্পর প্রেম কর। তোমরা যদি আপনাদের মধ্যে পরস্পর প্রেম রাখ, তবে তাহাতেই সকলে জানিবে যে, তোমরা আমার শিষ্য।”—যোহন ১৩:৩৪, ৩৫.
১৬ ভাই-বোনদের প্রতি আমাদের প্রেম, যিহোবার প্রতি আমাদের প্রেমের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। আমরা যদি ঈশ্বরকে প্রেম না করি, তা হলে আমরা আমাদের ভাই-বোনদের প্রেম করতে পারি না। আর আমরা যদি আমাদের ভাই-বোনদের প্রেম না করি, তা হলে আমরা ঈশ্বরকে প্রেম করতে পারি না। প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন: “যাহাকে দেখিয়াছে, আপনার সেই ভ্রাতাকে যে প্রেম না করে, সে যাঁহাকে দেখে নাই, সেই ঈশ্বরকে প্রেম করিতে পারে না।” (১ যোহন ৪:২০) এ ছাড়া, যিহোবার প্রতি এবং ভাই-বোনদের প্রতি প্রেম, বাইবেলের প্রতি আমাদের প্রেমের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। কেন তা বলা যায়? কারণ বাইবেল থেকে আমরা যা শিখি, তা যদি আমরা ভালোবাসি, তা হলে ঈশ্বরকে ও আমাদের ভাই-বোনদের প্রেম করার বিষয়ে বাইবেলে যে-আজ্ঞাগুলো পাওয়া যায়, সেগুলোর প্রতি আমরা বাধ্য হতে চাইব।—১ পিতর ১:২২; ১ যোহন ৪:২১.
আমাদের ভাই-বোনদের প্রতি প্রেম দেখান (১৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)
১৭. কিছু উপায় কী, যেগুলোর মাধ্যমে আমরা প্রেম দেখাতে পারি?
১৭ প্রথম থিষলনীকীয় ৪:৯-১১ পদ পড়ুন। কিছু ব্যাবহারিক উপায় কী, যেগুলোর মাধ্যমে আমরা আমাদের মণ্ডলীর ভাই-বোনদের প্রতি প্রেম দেখাতে পারি? একজন বয়স্ক ভাই অথবা বোনের হয়তো মণ্ডলীর সভাতে আসা-যাওয়ার জন্য সাহায্যের প্রয়োজন। একজন বিধবা বোনের হয়তো তার বাড়িতে কোনো কিছু মেরামত করার জন্য সাহায্যের প্রয়োজন। (যাকোব ১:২৭) নিরুৎসাহিতা, হতাশা অথবা বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হয়ে থাকে এমন ভাই ও বোনদের প্রতি আমাদের মনোযোগ দেওয়া, তাদের উৎসাহিত করা এবং সান্ত্বনা প্রদান করা প্রয়োজন। (হিতো. ১২:২৫; কল. ৪:১১) আমরা আমাদের কথা ও কাজের মাধ্যমে দেখাতে পারি যে, আমরা আমাদের ‘বিশ্বাস-বাটীর পরিজনদের’ প্রেম করি।—গালা. ৬:১০.
১৮. কী ভাই-বোনদের সঙ্গে আমাদের মতবিরোধ সমাধান করতে সাহায্য করবে?
১৮ বাইবেল বলে যে, এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার “শেষ কালে” অনেকে স্বার্থপর ও লোভী মনোভাব দেখাবে। (২ তীম. ৩:১, ২) খ্রিস্টান হিসেবে যিহোবার প্রতি, তাঁর বাক্যের প্রতি এবং একে অন্যের প্রতি আমাদের প্রেমকে বৃদ্ধি করে চলার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করতে হবে। যেহেতু আমরা অসিদ্ধ, তাই কখনো কখনো আমাদের ভাই-বোনদের সঙ্গে হয়তো ছোটোখাটো মতবিরোধ দেখা দিতে পারে। কিন্তু, পরস্পরকে ভালোবাসি বলে আমরা যেকোনো মতপার্থক্য যতটা সম্ভব মধুর বা সদয়ভাব দেখিয়ে এবং দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা করব। (ইফি. ৪:৩২; কল. ৩:১৪) আসুন, আমরা যেন কখনো আমাদের প্রেমকে শীতল হয়ে যেতে না দিই! এর পরিবর্তে, আসুন আমরা যিহোবা, তাঁর বাক্য এবং ভাই-বোনদের প্রতি আমাদের প্রেমকে ক্রমাগত গভীর করি।