কীভাবে আপনি প্রার্থনা করতে পারেন, যাতে ঈশ্বর আপনার প্রার্থনা শোনেন?
যিহোবা ঈশ্বর হলেন “প্রার্থনা-শ্রবণকারী।” (গীতসংহিতা ৬৫:২) আমরা তাঁর সঙ্গে যে-কোনো জায়গায়, যে-কোনো সময়ে, জোরে জোরে কিংবা মনে মনে কথা বলতে পারি। যিহোবা চান যেন আমরা তাঁকে “পিতা” বলে ডাকি আর সত্যিই তিনি হলেন আমাদের সবচেয়ে ভালো পিতা। (মথি ৬:৯) যিহোবা প্রেমের সঙ্গে আমাদের শেখান, কীভাবে প্রার্থনা করতে হয় আর কীভাবে প্রার্থনা করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে।
যিশুর নামে যিহোবা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করুন
“তোমরা যদি পিতার কাছে কিছু চাও, তা হলে তিনি আমার নামে তোমাদের তা দেবেন।”—যোহন ১৬:২৩.
যিশুর কথাগুলো স্পষ্টভাবে দেখায় যে, যিহোবা চান যেন আমরা কোনো ছবি, সাধু, স্বর্গদূত কিংবা মৃত পূর্বপুরুষদের মাধ্যমে নয় বরং যিশুর নামে অর্থাৎ যিশু খ্রিস্টের মাধ্যমে তাঁর কাছে প্রার্থনা করি। আমরা যখন ঈশ্বরের কাছে যিশুর নামে প্রার্থনা করি, তখন আমরা দেখাই যে, আমরা যিশুর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে স্বীকার করি। যিশু বলেছিলেন,“আমার মধ্য দিয়ে না এলে, কেউ পিতার কাছে আসতে পারে না।”—যোহন ১৪:৬.
হৃদয় থেকে কথা বলুন
“তাঁহারই সম্মুখে তোমাদের মনের কথা ভাঙ্গিয়া বল।”—গীতসংহিতা ৬২:৮.
আমরা যখন যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি, তখন তা এমনভাবে করা উচিত যেন একজন প্রেমময় পিতার সঙ্গে কথা বলছি। একটা বই থেকে দেখে দেখে পড়া কিংবা মুখস্থ করা কোনো বিষয় বার বার বলার চেয়ে আমাদের উচিত সম্মানের সঙ্গে হৃদয় থেকে কথা বলা।
ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে প্রার্থনা করুন
“ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে প্রার্থনায় আমরা যা-কিছুই চাই না কেন, তিনি আমাদের প্রার্থনা শোনেন।”—১ যোহন ৫:১৪.
বাইবেলে যিহোবা ঈশ্বর আমাদের বলেছেন, তিনি আমাদের জন্য কী করবেন এবং তিনি আমাদের কাছ থেকে কী চান। আমরা যদি চাই আমাদের প্রার্থনা ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য হোক, তা হলে “ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে” আমাদের প্রার্থনা করতে হবে। এটা করার জন্য আমাদের বাইবেল অধ্যয়ন করতে হবে, যাতে আমরা তাঁকে ভালোভাবে জানতে পারি। আমরা যদি তা করি, তা হলে তিনি আমাদের প্রার্থনায় খুশি হবেন।
কোন বিষয়গুলোর জন্য প্রার্থনা করতে পারি?
নিজের প্রয়োজনগুলোর জন্য প্রার্থনা করুন। আমরা আমাদের প্রতিদিনের প্রয়োজনগুলো যেমন, খাবার, জামাকাপড় ও থাকার জায়গার জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে পারি। এ ছাড়া, আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য প্রজ্ঞা চেয়ে এবং পরীক্ষার মধ্যে ধৈর্য ধরার জন্য শক্তি চেয়ে প্রার্থনা করতে পারি। আর আমরা বিশ্বাস, ক্ষমা এবং ঈশ্বরের সাহায্য লাভ করার জন্য প্রার্থনা করতে পারি।—লূক ১১:৩, ৪, ১৩; যাকোব ১:৫, ১৭.
অন্যদের জন্য প্রার্থনা করুন। যত্নশীল বাবা-মায়েরা, তাদের সন্তানদের একে অন্যকে ভালোবাসতে দেখে খুশি হন। আমরা যিহোবার সন্তান আর তিনি চান যেন আমরা অন্যদের প্রতি আগ্রহ দেখাই এবং একে অন্যের যত্ন নিই। তাই এটা যুক্তিযুক্ত যে, নিজের সাথির জন্য, নিজের পরিবারের জন্য, নিজের সন্তানের জন্য ও নিজের বন্ধুদের জন্য প্রার্থনা করতে হবে। শিষ্য যাকোব লিখেছিলেন, “একে অন্যের জন্য প্রার্থনা করো।”—যাকোব ৫:১৬.
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। আমাদের সৃষ্টিকর্তা সম্বন্ধে বাইবেল বলে: “তিনি ভালো বিষয়গুলোর মাধ্যমে নিজের সম্বন্ধে স্পষ্টভাবে সাক্ষ্য দিয়েছেন, আপনাদের জন্য আকাশ থেকে বৃষ্টি এবং বিভিন্ন ঋতুতে প্রচুর শস্য জুগিয়েছেন আর খাদ্য দিয়ে আপনাদের পরিতৃপ্ত করেছেন এবং আপনাদের হৃদয় আনন্দে পূর্ণ করেছেন।” (প্রেরিত ১৪:১৭) আমরা যখন ঈশ্বরের সমস্ত কাজগুলো নিয়ে চিন্তা করি, তখন কৃতজ্ঞতা স্বরূপ, প্রার্থনায় তাঁকে ধন্যবাদ জানাতে অনুপ্রাণিত হই। এ ছাড়া, ঈশ্বরের বাধ্য হওয়ার মাধ্যমে আমাদের তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখানো উচিত।—কলসীয় ৩:১৫.
ধৈর্য ধরুন এবং প্রার্থনা করে চলুন
কখনো কখনো আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করা সত্ত্বেও, দ্রুত তার উত্তর না পাওয়ায় আমরা হয়তো দুঃখিত হতে পারি। তার মানে কি এই যে, ঈশ্বর আমাদের প্রতি আগ্রহী নন? কখনোই না! পরবর্তী অভিজ্ঞতাগুলো বিবেচনা করুন। যে-অভিজ্ঞতাগুলো দেখাবে, আমাদের প্রার্থনা করে চলা প্রয়োজন।
শুরুর প্রবন্ধে উল্লেখিত স্টিভ স্বীকার করেছেন, “আমি যদি প্রার্থনা করা বন্ধ করে দিতাম, তা হলে আমি আমার সব আশা হারিয়ে ফেলতাম আর কখনো সুখী হতে পারতাম না।” কোন বিষয়টা তাকে সাহায্য করেছিল? তিনি বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করেছিলেন এবং প্রার্থনা করার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে শিখেছিলেন আর তা করে চলেছিলেন। স্টিভ বলেন, ‘প্রিয় বন্ধুদের কাছ থেকে আমি যে-প্রেমময় সাহায্য লাভ করেছি, তার জন্য আমি প্রার্থনায় ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। আমি এখন আগের থেকে অনেক সুখী।’
জেনি সম্বন্ধে কী বলা যায়, যিনি মনে করতেন, ঈশ্বর তার প্রার্থনা শুনবেন না কারণ তিনি মূল্যহীন? তিনি বলেন, “আমি যখন নিজেকে খুবই মূল্যহীন বলে মনে করি, তখন আমি ঈশ্বরের কাছে এটা বোঝার জন্য সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করি যে, কেন আমি নিজেকে এতটা মূল্যহীন বলে মনে করি।” এটা কীভাবে তাকে সাহায্য করেছিল? “ঈশ্বরের সঙ্গে কথা বলা আমাকে সাহায্য করেছে, নিজেকে ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখতে আর আমি এটা বুঝেছি যে, আমার হৃদয় যদি আমাকে দোষীও করে কিন্তু ঈশ্বর তা করেন না। এ ছাড়া, এটা আমাকে হাল ছেড়ে না দিতে সাহায্য করেছে।” এর ফল কী হয়েছিল? “প্রার্থনা আমাকে সাহায্য করেছে, যিহোবাকে একজন বাস্তব, প্রেমময়, যত্নশীল ঈশ্বর, পিতা ও বন্ধু হিসেবে দেখতে, যিনি সবসময় আমার পাশে থাকবেন এবং আমি যদি তাঁর ইচ্ছা পালন করে চলি, তা হলে তিনি আমাকে সবসময় সাহায্য করবেন।”
ইসাবেল যখন তার ছেলে জেরার্ডকে প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও জীবন উপভোগ করতে দেখেন, তখন বলেন, “আমি বুঝতে পারি যে, ঈশ্বর আমার প্রার্থনার সবচেয়ে ভালো উত্তর দিয়েছেন”
ইসাবেলের অভিজ্ঞতাটিও বিবেচনা করুন। তিনি যখন সন্তানসম্ভবা ছিলেন, তখন তার ডাক্তার তাকে বলেন, তার সন্তান প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মাবে। তিনি খুবই ভেঙে পড়েছিলেন। আর এমনকী কেউ কেউ তাকে গর্ভপাত করার পরামর্শ দিয়েছিল। “আমার মনে হয়েছিল, মরে গেলেই আমি আমার কষ্ট থেকে মুক্তি পাব।” তিনি কী করেছিলেন? তিনি বলেন, “আমি ঈশ্বরের কাছে সাহায্য চেয়ে বার বার প্রার্থনা করেছিলাম।” পরে, তিনি জেরার্ড নামে এক ছেলের জন্ম দিয়েছিলেন আর সে প্রতিবন্ধী হয়েই জন্মেছিল। তার মানে কি এই যে, ঈশ্বর তার প্রার্থনার উত্তর দেননি? না! দিয়েছিলেন। কীভাবে? ইসাবেল বলেন,“এখন আমার ছেলের বয়স ১৪ বছর আর আমি যখন দেখি সে প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও তার জীবন উপভোগ করছে, তখন আমি বুঝতে পারি যে, ঈশ্বর আমার প্রার্থনার সবচেয়ে ভালো উত্তর দিয়েছেন আর এটা যিহোবা ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া আমার জন্য এক সর্বোত্তম আশীর্বাদ।”
এই হৃদয়গ্রাহী অভিজ্ঞতাগুলো আমাদের গীতরচকের কথাগুলো মনে করিয়ে দেয়: “তুমি নম্রদের আকাঙ্ক্ষা শুনিয়াছ; তুমি তাহাদের চিত্ত সুস্থির করিবে, তুমি কর্ণপাত করিবে।” (গীতসংহিতা ১০:১৭) প্রার্থনা করে চলার জন্য কতই-না চমৎকার এক কারণ!
বাইবেলে যিশুর অনেক প্রার্থনা লিপিবদ্ধ রয়েছে। তার মধ্যে একটা প্রার্থনা সবচেয়ে পরিচিত, যা তিনি তাঁর শিষ্যদের শিখিয়েছিলেন। এটা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?