অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৫০
“তুমি আমার সঙ্গে পরমদেশে থাকবে”
“আমি আজ তোমার কাছে প্রতিজ্ঞা করছি, তুমি আমার সঙ্গে পরমদেশে থাকবে।”—লূক ২৩:৪৩.
গান ১৯ পরমদেশ সম্বন্ধে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা
সারাংশa
১. যিশু মারা যাওয়ার আগে একজন অপরাধীকে কী বলেছিলেন? (লূক ২৩:৩৯-৪৩)
যিশু খ্রিস্ট এবং দু-জন অপরাধীকে যাতনাদণ্ডে বিদ্ধ করা হয়েছে। তারা খুবই কষ্ট পাচ্ছে এবং নিশ্বাস নেওয়াও তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ছে। (লূক ২৩:৩২, ৩৩) কিছুসময় আগে এই অপরাধীরা যিশুকে নিয়ে ঠাট্টা করছিল, তাই তারা যিশুর শিষ্য হতে পারে না। (মথি ২৭:৪৪; মার্ক ১৫:৩২) কিন্তু পরে, তাদের মধ্যে একজন যিশুর উপর বিশ্বাস করতে শুরু করে এবং তাঁকে বলে: “যিশু, যখন আপনার রাজ্যে আসবেন, তখন আমাকে স্মরণ করবেন।” তখন যিশু তাকে বলেন: “আমি আজ তোমার কাছে প্রতিজ্ঞা করছি, তুমি আমার সঙ্গে পরমদেশে থাকবে।” (পড়ুন, লূক ২৩:৩৯-৪৩, পাদটীকা) যিশু তাকে এটা বলেননি, সে স্বর্গে যাবে। আর বাইবেলে এমনটা কোথাও লেখা নেই, যিশু ‘যে-স্বর্গরাজ্যের’ বিষয়ে শেখাতেন, সেই ব্যক্তি তা বিশ্বাস করত। (মথি ৪:১৭) যিশু আসলে তাকে পরমদেশের বিষয়ে বলছিলেন, যেটা ভবিষ্যতে পৃথিবীতে আসবে। কেন আমরা তা বলতে পারি?
যে-অপরাধী যিশুর সঙ্গে কথা বলেছিল, তার বিষয়ে আমরা কী বলতে পারি আর সে হয়তো কী জানত? (২-৩ অনুচ্ছেদ দেখুন)
২. কেন আমরা বলতে পারি, যে-অপরাধী যিশুর উপর বিশ্বাস করেছিল, সে একজন যিহুদি ছিল?
২ যে-অপরাধী যিশুর উপর বিশ্বাস করেছিল, সে হয়তো একজন যিহুদি ছিল। কেন আমরা তা বলতে পারি? লক্ষ করুন, সে অন্য অপরাধীকে কী বলেছিল, “তুমি কি ঈশ্বরকে ভয় কর না?” (লূক ২৩:৪০) যিহুদিরা বিশ্বাস করত, কেবল একজনই সত্য ঈশ্বর রয়েছেন, কিন্তু ন-যিহুদিরা অনেক ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস করত। (যাত্রা. ২০:২, ৩; ১ করি. ৮:৫, ৬) সেই অপরাধী যদি একজন ন-যিহুদি হত, তা হলে সে হয়তো অন্য অপরাধীকে এইরকম কিছু বলত, “তুমি কি ঈশ্বরদের ভয় কর না?” কিন্তু, সে এইরকম কথা বলেনি। আরেকটা বিষয়ের উপর মনোযোগ দিন। যিশু সাধারণত ন-যিহুদিদের কাছে প্রচার করতেন না কারণ তাঁকে “ইজরায়েল জাতির হারানো মেষদের কাছেই পাঠানো” হয়েছিল। (মথি ১৫:২৪) এ ছাড়া, যিহোবা ইজরায়েলীয়দেরই বলেছিলেন, তিনি মৃত ব্যক্তিদের পুনরুত্থিত করবেন। সেই অপরাধী হয়তো এই বিষয়টা জানত। আর সে যা বলেছিল, তা থেকে বোঝা যায় যে, তার মনে হচ্ছিল, যিহোবা যিশুকেও পুনরুত্থিত করবেন এবং তাঁর রাজ্যের রাজা করবেন। তার এও আশা ছিল, যিহোবা তাকেও পুনরুত্থিত করবেন।
৩. যিশু যখন সেই অপরাধীকে পরমদেশের বিষয়ে বলেছিলেন, তখন সে হয়তো কোন বিষয়ে চিন্তা করেছিল? ব্যাখ্যা করুন। (আদিপুস্তক ২:১৫)
৩ সেই অপরাধী একজন যিহুদি ছিল, তাই সে আদম ও হবার বিষয়ে জানত। সে এও জানত, যিহোবা আদম ও হবার জন্য এই পৃথিবীতে পরমদেশ তৈরি করেছিলেন। সেইজন্য আমরা বলতে পারি, যিশু যখন তাকে পরমদেশের বিষয়ে বলেছিলেন, তখন সে হয়তো এক অপূর্ব পৃথিবীর বিষয়ে চিন্তা করেছিল।—পড়ুন, আদিপুস্তক ২:১৫.
৪. আমাদের কোন বিষয়ে চিন্তা করা উচিত?
৪ এই ঘটনার বিষয়ে পড়ে আমরাও হয়তো চিন্তা করতে পারি, পরমদেশে আমাদের জীবন কেমন হবে। আর আমাদের এই বিষয়ে চিন্তা করাও উচিত। পরমদেশ কেমন হবে, এর একটা পূর্বাভাস আমরা রাজা শলোমনের শাসনের সময় দেখতে পাই। তার রাজ্যে প্রচুর শান্তি ছিল। আর যিশু শলোমনের চেয়ে অনেক মহান। তাই, আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, যিশু ১,৪৪,০০০ জন ব্যক্তির সঙ্গে মিলে এই পৃথিবীকে এক অপূর্ব পরমদেশে পরিণত করবেন, যেখানে প্রচুর শান্তি থাকবে। (মথি ১২:৪২) তাই, ‘আরও মেষের’ ব্যক্তিরা যদি পরমদেশে চিরকাল বেঁচে থাকতে চায়, তা হলে তাদের এই বিষয়েও চিন্তা করা উচিত, সেখানে থাকার জন্য তাদের আজ কী করতে হবে।—যোহন ১০:১৬
পরমদেশে জীবন কেমন হবে?
৫. আপনি যখন পরমদেশের বিষয়ে চিন্তা করেন, তখন আপনার মনে কোন ছবি ভেসে ওঠে?
৫ আপনি যখন পরমদেশের বিষয়ে চিন্তা করেন, তখন আপনার মনে কোন ছবি ভেসে ওঠে? আপনার মনে হয়তো একটা সুন্দর পার্কের ছবি ভেসে ওঠে, যেটা দেখতে এদন উদ্যানের মতো। আপনি দেখতে পান, চারিদিকে গাছপালা এবং রং-বেরঙের ফুল রয়েছে আর বাতাসে ফুলের সুন্দর গন্ধ ছড়িয়ে রয়েছে। (আদি. ২:৭-৯) হতে পারে, আপনার মীখার ভবিষ্যদ্বাণী মনে পড়ে যায়, “প্রত্যেকে আপন আপন দ্রাক্ষালতার ও আপন আপন ডুমুরবৃক্ষের তলে বসিবে।” (মীখা ৪:৩, ৪) হয়তো আপনার এও মনে পড়ে যায়, নতুন জগতে খাবারের কোনো অভাব হবে না। (গীত. ৭২:১৬; যিশা. ৬৫:২১, ২২) আপনি হয়তো কল্পনা করেন, সেই পার্কের মাঝখানে একটা টেবিল রয়েছে, যেটার উপর বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু খাবার আছে আর আপনি, আপনার বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সদস্যেরা তা উপভোগ করছেন। তাদের মধ্যে এমনও কেউ কেউ রয়েছে, যাদের যিহোবা পুনরুত্থিত করেছেন। তাদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে, তাদের কথা এবং হাসি শুনে আপনার খুব ভালো লাগছে। এগুলো নিছক কোনো স্বপ্ন নয়। একদিন সত্যিই পুরো পৃথিবী পরমদেশে পরিণত হবে। নতুন জগতে এই সমস্ত কিছু উপভোগ করার পাশাপাশি আমাদের কাছে এমন অনেক কাজও থাকবে, যেগুলো করে আমরা আনন্দ লাভ করব।
নতুন জগতে যে-ব্যক্তিদের পুনরুত্থিত করা হবে, তাদের আমাদের শেখাতে হবে (৬ অনুচ্ছেদ দেখুন)
৬. পরমদেশে আমাদের জন্য কোন কোন কাজ থাকবে? (ছবি দেখুন।)
৬ আমরা যখন কোনো কাজ করি এবং পরিশ্রম করি, তখন আমরা আনন্দ লাভ করি। কেন? কারণ যিহোবা আমাদের এভাবেই সৃষ্টি করেছেন। (উপ. ২:২৪) আর খ্রিস্টের হাজার বছরের রাজত্বের সময় আমাদের কাছে করার মতো অনেক কাজ থাকবে। যারা মহাক্লেশ থেকে রক্ষা পাবে এবং যে-লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিকে পুনরুত্থিত করা হবে, তাদের কাপড় ও খাবার লাগবে আর সেইসঙ্গে থাকার জন্য জায়গার প্রয়োজন হবে। এই সমস্ত কিছুর ব্যবস্থা করে আমরা অনেক আনন্দিত হব। আর যেমনটা আদম ও হবাকে পুরো পৃথিবীকে এদন উদ্যানের মতো সুন্দর করে তুলতে হত, একইভাবে আমাদেরও পুরো পৃথিবীকে পরমদেশে পরিণত করতে হবে। এ ছাড়া, যে-ব্যক্তিদের নতুন জগতে পুনরুত্থিত করা হবে, তাদের শেখানোর মাধ্যমেও আমরা অনেক আনন্দিত হব। এই ব্যক্তিদের মধ্যে এমন অনেকে থাকবে, যারা যিহোবাকে ভালোভাবে জানত না। আমরা তাদের যিহোবা এবং তাঁর উদ্দেশ্যের বিষয়ে শেখাব। যিহোবা অতীতের সেই বিশ্বস্ত ব্যক্তিদেরও পুনরুত্থিত করবেন, যারা যিশু সম্বন্ধে জানত না। আমাদের সেই ব্যক্তিদের জানাতে হবে, তারা মারা যাওয়ার পর কী কী ঘটেছিল।
৭. কোন বিষয়ে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি আর কেন?
৭ আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, পরমদেশে প্রচুর শান্তি থাকবে, আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো পূরণ হবে এবং সমস্ত কিছু সুশৃঙ্খলভাবে হবে। কেন আমরা তা বলতে পারি? কারণ যিহোবা আগে থেকেই এর এক পূর্বাভাস দেখিয়েছেন। যিশু যখন শাসন করবেন, তখন পৃথিবীর পরিস্থিতি সেইরকম হবে, যেরকম রাজা শলোমনের শাসনের সময়ে ছিল।
শলোমনের শাসন—পরমদেশের এক পূর্বাভাস
৮. গীতসংহিতা ৩৭:১০, ১১, ২৯ পদে লেখা কথাগুলো কীভাবে অতীতে পরিপূর্ণ হয়েছিল? (এই সংখ্যায় দেওয়া “পাঠকদের কাছ থেকে প্রশ্ন” দেখুন।)
৮ রাজা দায়ূদ ঈশ্বরের প্রেরণায় বলেছিলেন, এমন একজন রাজা যখন শাসন করবেন, যিনি প্রজ্ঞাবান এবং যিহোবার প্রতি অনুগত থাকবেন, তখন পরিস্থিতি কেমন হবে। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৩৭:১০, ১১, ২৯.) সাধারণত আমরা গীতসংহিতা ৩৭:১১ পদ সেইসময় পড়ি, যখন আমরা লোকদের পরমদেশের বিষয়ে বলতে চাই। আর তা পড়া উপযুক্ত। পর্বতের উপরে দেওয়া উপদেশে যিশু যখন লোকদের বলছিলেন, নতুন জগতে কেমন লোকেরা থাকবে, তখন তিনি দায়ূদের কথাগুলো উদ্ধৃতি করেছিলেন। এটা থেকে বোঝা যায়, গীতসংহিতা ৩৭:১১ পদে লেখা কথাগুলো ভবিষ্যতেও পরিপূর্ণ হবে। (মথি ৫:৫) কিন্তু, এই কথাগুলো শলোমনের শাসনের সময়ও পরিপূর্ণ হয়েছিল। শলোমন যখন শাসন করছিলেন, তখন ইজরায়েলে শান্তি ছিল এবং লোকদের কোনো কিছুরই অভাব ছিল না। যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, ইজরায়েল দেশে দুধ ও মধু বয়ে যাবে আর তিনি তাঁর লোকদের এও বলেছিলেন, “যদি তোমরা আমার বিধিপথে চল,” তবে “আমি [সেই] দেশে শান্তি প্রদান করিব; তোমরা শয়ন করিলে কেহ তোমাদিগকে ভয় দেখাইবে না।” (লেবীয়. ২০:২৪; ২৬:৩, ৬) শলোমনের শাসনের সময় যিহোবার এই সমস্ত প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ হয়েছিল। (১ বংশা. ২২:৯; ২৯:২৬-২৮) আর যদি শলোমনের শাসনের সময় প্রত্যেকে যিহোবার আজ্ঞা পালন করত, তা হলে কিছুসময় পর দুষ্ট লোকেরা শেষ হয়ে যেত। (গীত. ৩৭:১০) তাহলে আমরা বলতে পারি, গীতসংহিতা ৩৭:১০, ১১, ২৯ পদে লেখা কথাগুলো অতীতেও পরিপূর্ণ হয়েছিল এবং ভবিষ্যতেও পরিপূর্ণ হবে।
৯. শলোমনের রাজ্যের চাকচিক্য দেখে শিবার রানি কী বলেছিলেন?
৯ শলোমনের শাসনের সময় লোকদের কোনো কিছুরই অভাব ছিল না। পুরো দেশে প্রচুর শান্তি ও সমৃদ্ধি ছিল। আর শলোমনের খ্যাতি দূরদূরান্তে ছড়িয়ে পড়েছিল। (১ রাজা. ১০:১) শিবার রানিও এই বিষয়ে শুনেছিলেন এবং সমস্ত কিছু নিজের চোখে দেখার জন্য অনেক দূর থেকে জেরুসালেমে এসেছিলেন। শলোমনের রাজ্যের চাকচিক্য দেখে তিনি বলেছিলেন: “এখন তো মনে হচ্ছে, আমাকে এগুলোর অর্ধেক বিষয়ও জানানো হয়নি! আপনার এই লোকেরা ও সেবকেরা কতই-না বড়ো এক সুযোগ পেয়েছে যে, এরা সবসময় আপনার সামনে দাঁড়িয়ে আপনার মুখ থেকে প্রজ্ঞার কথা শুনতে পায়!” (১ রাজা. ১০:৬-৮, NW) কিন্তু, শলোমনের শাসন শুধু এই বিষয়ের এক পূর্বাভাস ছিল যে, যিশুর শাসনের সময় আমাদের জীবন কেমন হবে।
১০. কেন আমরা বলতে পারি, যিশু শলোমনের চেয়ে শ্রেষ্ঠ?
১০ যিশু সব দিক দিয়ে শলোমনের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। শলোমন অসিদ্ধ ছিলেন এবং অনেকসময় এমন ভুলগুলো করেছিলেন, যেগুলোর কারণে ঈশ্বরের লোকদের কষ্ট ভোগ করতে হয়েছিল। কিন্তু, যিশু হলেন সিদ্ধ এবং তিনি কখনো কোনো ভুল করেন না। (লূক ১:৩২; ইব্রীয় ৪:১৪, ১৫) শয়তান যখন যিশুর উপর বড়ো বড়ো পরীক্ষা নিয়ে এসেছিল, তখনও তিনি যিহোবার প্রতি অনুগত ছিলেন। এভাবে যিশু প্রমাণ করেছিলেন, তিনি কখনো পাপ করবেন না আর সেইসঙ্গে এমন কিছুও করবেন না, যেটার কারণে তাঁর প্রজাদের ক্ষতি হতে পারে। সত্যিই, যিশুর মতো ভালো রাজা আর কেউ হতেই পারে না!
১১. কারা যিশুর সঙ্গে মিলে শাসন করবে?
১১ যিশুর সঙ্গে শাসন করার জন্য পৃথিবী থেকে ১,৪৪,০০০ জন পুরুষ ও নারীকে একত্রিত করা হচ্ছে। (প্রকা. ১৪:১-৩) এই ব্যক্তিরা যিশুর সঙ্গে মিলে মানুষের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো পূরণ করবে এবং তাদের সাহায্য করবে। এই পৃথিবীর জন্য যিহোবার যে-উদ্দেশ্য রয়েছে, তারা সেটাকেও পূরণ করবে। এই ব্যক্তিরা পৃথিবীতে অনেক পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছে এবং দুঃখকষ্ট ভোগ করেছে। সেইজন্য, তারা আমাদের কষ্ট ভালোভাবে বুঝতে পারবে। কিন্তু, এই ব্যক্তিরা ১,০০০ বছর চলাকালীন কোন কোন কাজ করবে? আসুন, তা লক্ষ করি।
অভিষিক্ত ব্যক্তিরা কোন কাজ করবে?
১২. যিহোবা ১,৪৪,০০০ জনকে কোন দায়িত্ব দেবেন?
১২ শলোমনকে যত লোকের উপর শাসন করার অধিকার দেওয়া হয়েছিল, যিশু এবং ১,৪৪,০০০ জনকে সেটার চেয়েও বেশি লোকের উপর শাসন করার অধিকার দেওয়া হয়েছে। শলোমন ইজরায়েলের রাজা ছিলেন এবং তাকে কেবল কয়েক লক্ষ ব্যক্তিরই যত্ন নিতে হত। কিন্তু, যিশু এবং ১,৪৪,০০০ জন পুরো পৃথিবীর উপর শাসন করবেন এবং কোটি কোটি ব্যক্তির যত্ন নেবেন। যিহোবা এই ব্যক্তিদের কতই-না বড়ো দায়িত্ব দেবেন!
১৩. যিশুর সহ-শাসকেরা কোন বিশেষ কাজ করবে?
১৩ যিশুর মতো তাঁর সহ-শাসকেরা অর্থাৎ ১,৪৪,০০০ জনও রাজা ও যাজক হিসেবে সেবা করবে। (প্রকা. ৫:১০) অতীতে ইজরায়েলীয়দের যখন মোশির ব্যবস্থা দেওয়া হয়েছিল, তখন সেখানে যাজকদের এই বিষয়ে খেয়াল রাখতে বলা হয়েছিল, সবার স্বাস্থ্য যেন ভালো থাকে এবং প্রত্যেকে যিহোবার নিকটবর্তী হয়। আর আমরা জানি, মোশির ব্যবস্থা “আসন্ন ভালো বিষয়গুলোর ছায়া মাত্র” ছিল। তাই, আমরা বলতে পারি, ১,৪৪,০০০ জন যাজক হিসেবে এই বিষয়ে খেয়াল রাখবে যেন সমস্ত মানুষের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং তারা যিহোবার নিকটবর্তী হয়। (ইব্রীয় ১০:১) আমরা এটা জানি না, এই রাজা ও যাজকেরা পরমদেশে কীভাবে ঈশ্বরের রাজ্যের প্রজাদের সঙ্গে কথা বলবে কিংবা নির্দেশনা দেবে। কিন্তু, যিহোবা যা-ই ব্যবস্থা করুন না কেন, আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, তিনি তাঁর লোকদের ক্রমাগত সঠিক পথ দেখাবেন।—প্রকা. ২১:৩, ৪.
পরমদেশে থাকার জন্য ‘আরও মেষকে’ কী করতে হবে?
১৪. বাইবেলে “ছোটো মেষপাল” এবং ‘আরও মেষের’ বিষয়ে কী লেখা আছে আর এই কথাগুলো কীভাবে আজ পরিপূর্ণ হচ্ছে?
১৪ যারা যিশুর সঙ্গে স্বর্গে শাসন করবে, তিনি তাদের “ছোটো মেষপাল” বলেছেন। (লূক ১২:৩২) যিশু আরেকটা দলের বিষয়েও উল্লেখ করেছিলেন, যাদের তিনি “আরও মেষ” বলেছেন। বাইবেলে লেখা আছে, এই দুটো দল মিলে একটা পাল গঠিত হয়। (যোহন ১০:১৬) আজ এই দুটো দলের লোক একসঙ্গে মিলে কাজ করছে এবং তারা পরমদেশেও তা ক্রমাগত করবে। সেই সময় পর্যন্ত ‘ছোটো মেষপালের’ সমস্ত ব্যক্তি ইতিমধ্যে স্বর্গে থাকবে এবং ‘আরও মেষের’ কাছে এই পৃথিবীতে চিরকাল ধরে বেঁচে থাকার সুযোগ থাকবে। তবে, পরমদেশে চিরকাল বেঁচে থাকার জন্য ‘আরও মেষকে’ আজ কী করতে হবে?
পরমদেশে থাকার জন্য আমরা এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে পারি! (১৫ অনুচ্ছেদ দেখুন)b
১৫. (ক) কীভাবে ‘আরও মেষের’ ব্যক্তিরা খ্রিস্টের ভাইদের সমর্থন করে? (খ) ছবিতে যেমনটা দেখানো হয়েছে, আপনি এই ভাইয়ের মতো কী করতে পারেন?
১৫ যিশুর সঙ্গে যে-অপরাধীকে যাতনাদণ্ডে বিদ্ধ করা হয়েছিল, সে তাঁর উপর বিশ্বাস করেছিল। তবে, সে যিশুর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার সুযোগ পায়নি। কিন্তু, ‘আরও মেষের’ ব্যক্তিদের কাছে আজ বিভিন্ন উপায়ে যিশুর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার সুযোগ রয়েছে। যেমন, তারা অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের সমর্থন করার মাধ্যমে এটা দেখাতে পারে যে, তারা যিশুকে কতটা ভালোবাসে। আর যিশুও বলেছিলেন, আমরা যেভাবে তাঁর ভাইদের প্রতি অর্থাৎ অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের প্রতি আচরণ করব, সেটার উপর ভিত্তি করে তিনি আমাদের বিচার করবেন। (মথি ২৫:৩১-৪০) আমরা প্রচার ও শিষ্য তৈরির কাজে উদ্যোগের সঙ্গে অংশ নেওয়ার মাধ্যমেও অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের সমর্থন করতে পারি। (মথি ২৮:১৮-২০) আর লোকদের শেখানোর জন্য আজ আমাদের কাছে বিভিন্ন প্রকাশনা রয়েছে, যেমন আমাদের নতুন বই চিরকাল জীবন উপভোগ করুন! তাই, এগুলো ভালোভাবে ব্যবহার করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করুন। আপনি যদি কাউকে বাইবেল অধ্যয়ন না করান, তা হলে আপনি যাদের কাছে সুসমাচার জানিয়ে থাকেন, তাদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করার লক্ষ্য রাখতে পারেন।
১৬. পরমদেশে থাকার জন্য আমরা এখন থেকেই কী করতে পারি?
১৬ একজন ভালো ব্যক্তি হওয়ার জন্য আমাদের নতুন জগতের অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। আমরা এখন থেকেই এরজন্য প্রস্তুতি নিতে পারি। আমরা এখন থেকেই নিজেদের মধ্যে ভালো গুণ গড়ে তুলতে পারি। আমরা সৎ হতে পারি, সবসময় সত্য কথা বলার চেষ্টা করতে পারি আর খেয়াল রাখতে পারি যেন আমাদের কাজ ও আচরণ দেখে যিহোবা খুশি হন। আমরা যিহোবার প্রতি, নিজ নিজ জীবনসাথির প্রতি এবং ভাই-বোনদের প্রতি অনুগত থাকতে পারি। আজ এই জগতে যিহোবার মান অনুযায়ী জীবনযাপন করা সহজ নয়, কিন্তু আমরা যদি এখন থেকেই তাঁর মান অনুযায়ী জীবনযাপন করে চলি, তা হলে পরমদেশেও তা করা আমাদের জন্য সহজ হবে। এ ছাড়া, এখন থেকেই আমরা কিছু দক্ষতা বাড়াতে পারি, যেগুলো নতুন জগতে কাজে আসবে আর সেইসঙ্গে ভালো অভ্যাসগুলো গড়ে তুলতে পারি।—এই সংখ্যায় দেওয়া “আপনি কি ‘পৃথিবীর উত্তরাধিকারী’ হওয়ার জন্য প্রস্তুত?” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন।
১৭. আমরা যদি আগে কোনো পাপ করে থাকি, তা হলে আমাদের কি সেই বিষয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করে দুঃখ পাওয়া উচিত? ব্যাখ্যা করুন।
১৭ আমরা যদি আগে কখনো কোনো গুরুতর পাপ করে থাকি, তা হলে সেই বিষয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করে আমাদের দুঃখ পাওয়া উচিত নয়। মনে রাখুন, যিশু ফরীশীদের কী বলেছিলেন, “আমি ধার্মিকদের নয়, কিন্তু পাপীদেরই ডাকতে এসেছি।” (মথি ৯:১৩) যিশুর মুক্তির মূল্যের উপর ভিত্তি করে আমরা আমাদের পাপের ক্ষমা পেতে পারি, তা সেটা যত বড়োই হোক না কেন। তবে, এর মানে এই নয়, আমরা ‘ইচ্ছাকৃতভাবে পাপ করে চলব’ আর চিন্তা করব যে, যিহোবা তো মুক্তির মূল্যের উপর ভিত্তি করে আমাদের ক্ষমা করে দেবেনই। (ইব্রীয় ১০:২৬-৩১) কিন্তু, আমরা যদি অনুতপ্ত হই, যিহোবার কাছে ক্ষমা চাই, প্রাচীনদের কাছ থেকে সাহায্য নিই এবং নিজেদের আচার-আচরণ পরিবর্তন করি, তা হলে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, যিহোবা আমাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন।—যিশা. ৫৫:৭; প্রেরিত ৩:১৯.
আপনি পরমদেশে চিরকাল বেঁচে থাকতে পারেন!
১৮. আপনি যখন নতুন জগতে সেই অপরাধীর সঙ্গে দেখা করবেন, যে যিশুর উপর বিশ্বাস করেছিল, তখন আপনি তার সঙ্গে কোন বিষয়ে কথা বলবেন?
১৮ কল্পনা করুন, আপনি পরমদেশে আছেন এবং সেই অপরাধীর সঙ্গে কথা বলছেন, যে যিশুর উপর বিশ্বাস করেছিল। সবচেয়ে প্রথমে আপনারা হয়তো একে অন্যকে বলবেন, যিশু আপনাদের জন্য যা-কিছু করেছেন, সেগুলোর কারণে আপনারা তাঁর প্রতি কতটা কৃতজ্ঞ। এরপর, আপনি হয়তো সেই অপরাধীকে জিজ্ঞেস করবেন, যখন তাকে যিশুর সঙ্গে যাতনাদণ্ডে বিদ্ধ করা হয়েছিল, তারপর কী হয়েছিল। আর যিশু যখন তাকে বলেছিলেন, তিনি তার সঙ্গে পরমদেশে থাকবেন, তখন তার কেমন লেগেছিল। পরে, সে হয়তো আপনাকে জিজ্ঞেস করবে, শেষকালে আপনার জীবন কেমন ছিল। চিন্তা করুন, এটা কত বড়ো বিষয় হবে যে, আমরা এইরকম ব্যক্তিদের ঈশ্বরের বাক্য থেকে শেখাতে পারব!—ইফি. ৪:২২-২৪.
খ্রিস্টের হাজার বছরের রাজত্ব চলাকালীন একজন ভাই ছবি আঁকা শিখছেন, যেটা তিনি বহু বছর ধরে শিখতে চেয়েছিলেন (১৯ অনুচ্ছেদ দেখুন)
১৯. কেন পরমদেশে আমাদের জীবন কখনো একঘেয়ে হবে না? (প্রচ্ছদে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)
১৯ পরমদেশে আমরা যখন চিরকাল বেঁচে থাকব, তখন আমাদের জীবন একঘেয়ে হবে না। আমরা নতুন নতুন ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করব এবং আমাদের কাছে করার মতো অনেক কাজ থাকবে। সবচেয়ে বড়ো বিষয় হবে, আমরা প্রতিদিন যিহোবাকে আরও ভালোভাবে জানতে পারব। আমাদের কাছে সবসময় তাঁর সম্বন্ধে শেখার জন্য কিছু-না-কিছু থাকবে। আর সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যিহোবার প্রতি আমাদের ভালোবাসা আরও বেড়ে যাবে। এ ছাড়া, যিহোবা যা-কিছু সৃষ্টি করেছেন, আমরা সেগুলোর বিষয়েও ক্রমাগত শিখব এবং সেগুলো উপভোগ করব। আমরা কতই-না আনন্দিত যে, যিহোবা ও যিশু আমাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছেন, আমরা পরমদেশে চিরকাল বেঁচে থাকতে পারব!
গান ১৬ ঈশ্বরের রাজ্যের দিকে গমন!
a আপনি কি প্রায়ই চিন্তা করেন, পরমদেশে আপনার জীবন কেমন হবে? আমরা যখন এই বিষয়ে চিন্তা করব, যিহোবা পরমদেশে আমাদের জন্য কী কী করবেন, তখন আমরা উৎসাহিত হব এবং আরও উদ্যোগের সঙ্গে লোকদের কাছে নতুন জগতের বিষয়ে বলব। এই প্রবন্ধ পড়ার ফলে আমাদের এই বিশ্বাস বেড়ে যাবে, যিশু যে-পরমদেশের বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন, সেটা নিশ্চয়ই আসবে।
b ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: একজন ভাই এখন থেকেই লোকদের যিহোবা সম্বন্ধে শেখাচ্ছেন এবং তা করার মাধ্যমে সেই সময়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যখন তিনি নতুন জগতে পুনরুত্থিত ব্যক্তিদের শেখাবেন।