অধ্যয়ন প্রবন্ধ ২৬
গান ১২৩ আমরা যিহোবার ও তাঁর সংগঠনের বশীভূত থাকি
নম্র হোন এবং মেনে নিন যে, আপনি কিছু বিষয় জানেন না
“সর্বশক্তিমানকে বোঝা আমাদের সাধ্যের বাইরে।”—ইয়োব ৩৭:২৩, NW.
আমরা কী শিখব?
আমরা কখনো কখনো এটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করি যে, ভবিষ্যতে কী ঘটবে। এমন পরিস্থিতিতে আমরা যদি যিহোবার উপর আস্থা রাখি এবং সেই বিষয়গুলোর উপর মনোযোগ দিই, যেগুলো আমরা জানি আর নম্রভাবে এটা স্বীকার করি যে, কিছু বিষয় আমরা জানি না, তা হলে আমরা দুশ্চিন্তার সঙ্গে লড়াই করতে পারব।
১. যিহোবা আমাদের কোন কোন দক্ষতা দিয়েছেন এবং কেন?
যিহোবা আমাদের চমৎকার উপায়ে সৃষ্টি করেছেন। যেমন, আমরা চিন্তাভাবনা করতে পারি, নতুন নতুন বিষয় শিখতে পারি এবং সেই অনুযায়ী কাজ করতে পারি। কেন যিহোবা আমাদের এই দক্ষতাগুলো দিয়েছেন? কারণ তিনি চান আমরা যেন “ঈশ্বর সম্বন্ধে জ্ঞান খুঁজে” পাই এবং যুক্তি করার ক্ষমতাকে ব্যবহার করে তাঁর সেবা করি।—হিতো. ২:১-৫, NW; রোমীয় ১২:১.
২. (ক) আমাদের কোন সীমাবদ্ধতা রয়েছে? (ইয়োব ৩৭:২৩, ২৪) (ছবিও দেখুন।) (খ) আমরা যদি নম্রভাবে এটা স্বীকার করি যে, আমরা সমস্ত কিছু জানি না, তা হলে আমরা কোন উপকার পাব?
২ এটা সত্যি যে, যিহোবা আমাদের এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন, যেন আমরা নতুন নতুন বিষয় শিখতে পারি। কিন্তু, আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আর তা হল, এমন অনেক বিষয় রয়েছে, যেগুলো আমরা জানি না। (পড়ুন, ইয়োব ৩৭:২৩, ২৪.) ইয়োবের কথা চিন্তা করুন। ইয়োবকে যখন একের-পর-এক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তখন তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, এমন অনেক বিষয় রয়েছে যেগুলো তিনি জানেন না। এরপর, তিনি নম্র হয়ে স্বীকার করেছিলেন যে, তিনি ভুল ছিলেন এবং তিনি নিজের চিন্তাভাবনা সংশোধন করেছিলেন। (ইয়োব ৪২:৩-৬) ইয়োবের মতো আমরাও যদি নম্রভাবে এটা স্বীকার করি যে, আমরা সমস্ত কিছু জানি না, তা হলে আমাদের উপকার হবে। এর ফলে আমরা যিহোবার উপর নির্ভর করতে শিখব এবং নিশ্চিত থাকব যে, সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি আমাদের এমন সমস্ত বিষয় জানাবেন, যেগুলো আমাদের জানা প্রয়োজন।—হিতো. ২:৬.
ইয়োবের মতো আমরা যদি এটা স্বীকার করি যে, এমন কিছু বিষয় রয়েছে, যেগুলো আমরা জানি না, তা হলে এটা আমাদের জন্যই ভালো (২ অনুচ্ছেদ দেখুন)
৩. এই প্রবন্ধে আমরা কোন বিষয়ে আলোচনা করব?
৩ এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব, এমন কিছু বিষয় কী, যেগুলো আমরা জানি না এবং এই কারণে আমাদের কোন কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আমরা এও দেখব যে, কিছু বিষয় কেন আমাদের না জানাই ভালো। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা যিহোবার প্রতি আমাদের আস্থাকে আরও বৃদ্ধি করবে, “যাঁর কাছে সমস্ত বিষয়ে সম্পূর্ণ জ্ঞান রয়েছে।” এর ফলে, আমরা নিশ্চিত হব যে, তিনি আমাদের সেই বিষয়গুলো অবশ্যই জানাবেন, যেগুলো আমাদের জানা প্রয়োজন।—ইয়োব ৩৭:১৬, NW.
আমরা জানি না যে, শেষ কখন আসবে
৪. মথি ২৪:৩৬ পদ অনুযায়ী আমরা কী জানি না?
৪ মথি ২৪:৩৬ পদ পড়ুন। আমরা জানি না এই বিধিব্যবস্থার শেষ কখন আসবে। যখন যিশু এই পৃথিবীতে ছিলেন, তখন তিনিও “সেই দিন এবং সেই সময়ের” কথা জানতেন না।a পরে তিনি তাঁর প্রেরিতদের বলেছিলেন, কিছু ঘটনা কখন ঘটবে, তা নির্ধারণ করার বিষয়টা যিহোবা নিজের “অধীনে” রেখেছেন। আর আমরা জানি যে, যিহোবা সমস্ত কাজ সঠিক সময়ে করেন। (প্রেরিত ১:৬, ৭) যিহোবা আগে থেকেই নির্ধারণ করে রেখেছেন, কোন দিন ও কোন সময়ে তিনি এই জগতের শেষ নিয়ে আসবেন। কিন্তু, আমরা এটা জানতে পারি না যে, কখন তিনি এমনটা করবেন।
৫. আমরা যেহেতু জানি না, শেষ কখন আসবে, তাই কী হতে পারে?
৫ আমরা জানি না, শেষ আসতে আর কত সময় বাকি রয়েছে। তাই, যিহোবার দিনের জন্য অপেক্ষা করা আমাদের পক্ষে কঠিন হতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ, আমরা যদি দীর্ঘসময় ধরে যিহোবার সেবা করে আসছি, তা হলে আমরা নিরুৎসাহিত কিংবা অধৈর্য হয়ে পড়তে পারি। অথবা আমাদের পরিবারের সদস্যেরা এবং অন্যেরা যখন আমাদের নিয়ে ঠাট্টা করে, তখন তা সহ্য করা আমাদের জন্য কঠিন হতে পারে। (২ পিতর ৩:৩, ৪) এইরকম পরিস্থিতিতে আমরা হয়তো চিন্তা করতে পারি, ‘আমি যদি জানতে পারতাম, শেষ কখন আসবে, তা হলে আমার জন্য ধৈর্য ধরা কিছুটা সহজ হয়ে যেত এবং আমি সব কিছু সহ্য করে নিতাম।’
৬. শেষ কখন আসবে, তা না জানা কেন আমাদের জন্য ভালো?
৬ শেষ কখন আসবে, সেই তারিখ যিহোবা আমাদের জানাননি। তাই, আমাদের কাছে এটা দেখানোর সুযোগ রয়েছে যে, আমরা তাঁকে কতটা ভালোবাসি এবং তাঁর উপর কতটা আস্থা রাখি। আমরা একটা তারিখ ধরে নিয়ে যিহোবার সেবা করি না আর এইরকম চিন্তা করি না যে, সেই তারিখের মধ্যে যদি শেষ না আসে, তা হলে আমরা যিহোবার উপর বিশ্বাস করা ছেড়ে দেব। তাই, “যিহোবার দিন” কখন আসবে শুধু সেটা নিয়ে চিন্তা করার পরিবর্তে আমাদের চিন্তা করা উচিত যে, যখন সেই দিন আসবে, তখন আমরা কোন কোন আশীর্বাদ লাভ করব। এমনটা করলে যিহোবার উপর আমাদের আস্থা বৃদ্ধি পাবে আর আমরা সেই কাজগুলো ক্রমাগত করে চলব, যেগুলো যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করবে।—২ পিতর ৩:১১, ১২.
৭. আমরা কী জানি?
৭ এমন অনেক বিষয় রয়েছে, যেগুলো আমরা জানি আর আমাদের সেগুলো নিয়ে চিন্তা করা উচিত। যেমন, ১৯১৪ সালে এই বিধিব্যবস্থার শেষ কাল শুরু হয়েছে। যিহোবা বাইবেলে এমন অনেক ভবিষ্যদ্বাণী লিখিয়েছেন, যা থেকে বোঝা যায় যে, ১৯১৪ সালে এই বিধিব্যবস্থার শেষ কাল শুরু হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এই ভবিষ্যদ্বাণীও করা হয়েছিল, শেষ কালে এই জগতের পরিস্থিতি কেমন হবে। বর্তমানে, আমরা সেই বিষয়গুলো পরিপূর্ণ হতে দেখছি। তাই আমরা নিশ্চিত যে, “সদাপ্রভুর মহাদিন নিকটবর্ত্তী।” (সফ. ১:১৪) আমরা এটাও জানি, যিহোবা আমাদের কাছ থেকে কী চান। তিনি চান আমরা যেন যত বেশি সম্ভব লোককে “রাজ্যের সুসমাচার” জানাই। (মথি ২৪:১৪) বর্তমানে, এই সুসমাচার দেশ ও দ্বীপ মিলিয়ে প্রায় ২৪০টারও বেশি জায়গায় ১,০০০-রেরও বেশি ভাষায় প্রচার করা হচ্ছে। উদ্যোগের সঙ্গে প্রচার করার জন্য আমাদের এটা জানার প্রয়োজন নেই যে, কোন “দিন” এবং কোন ‘সময়’ শেষ আসবে।
আমরা জানি না যে, যিহোবা কীভাবে আমাদের হয়ে পদক্ষেপ নেবেন
৮. “সত্য ঈশ্বরের কাজ,” এর মানে কী?
৮ আমরা “সত্য ঈশ্বরের কাজ” পুরোপুরিভাবে জানি না। (পড়ুন, উপদেশক ১১:৫, NW.) “সত্য ঈশ্বরের কাজ,” এর মানে কী? যিহোবা তাঁর ইচ্ছা পূরণ করার জন্য যা-কিছু করেন এবং যে-বিষয়গুলো ঘটার অনুমতি দেন, সেগুলো হল তাঁর কাজ। আমরা জানতে পারি না যে, অনেকসময় যিহোবা কেন কিছু বিষয় ঘটতে দেন আর কিছু ক্ষেত্রে তিনি কীভাবে আমাদের হয়ে পদক্ষেপ নেবেন অর্থাৎ তিনি আমাদের সাহায্য করার জন্য কী করবেন। (গীত. ৩৭:৫) ঠিক যেমন, বড়ো বড়ো বিজ্ঞানী এটা এখনও পর্যন্ত বুঝতে পারেনি যে, একজন গর্ভবতী মহিলার গর্ভে শিশু কীভাবে বেড়ে ওঠে। ঠিক তেমনই, আমরা সত্য ঈশ্বরের কাজগুলো পুরোপুরিভাবে জানতে পারি না।
৯. আমরা যেহেতু জানি না যে, যিহোবা কীভাবে আমাদের হয়ে পদক্ষেপ নেবেন, তাই কী হতে পারে?
৯ আমরা জানি না যে, যিহোবা কীভাবে আমাদের হয়ে পদক্ষেপ নেবেন, এই কারণে আমরা হয়তো কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ইতস্তত বোধ করি। যেমন, আমাদের পরিচর্যাকে বৃদ্ধি করার জন্য আমরা আমাদের জীবনকে সাদাসিধে করার ক্ষেত্রে ইতস্তত বোধ করতে পারি। অথবা এমন জায়গায় গিয়ে সেবা করার জন্য ইতস্তত বোধ করতে পারি, যেখানে প্রকাশকদের বেশি প্রয়োজন। আবার এটাও হতে পারে, আমরা যিহোবার সেবায় কোনো লক্ষ্য স্থাপন করেছি, কিন্তু সেটা অর্জন করতে পারছি না। অথবা অনেক পরিশ্রম করার পরও আমরা হয়তো প্রচারে ভালো ফলাফল পাচ্ছি না কিংবা সংগঠনের কোনো কাজ সম্পন্ন করতে আমাদের কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এইরকম পরিস্থিতিতে আমাদের মনে হতে পারে, যিহোবা আমাদের উপর খুশি নন।
১০. যিহোবা কীভাবে আমাদের হয়ে পদক্ষেপ নেবেন, তা না জানার ফলে আমরা কোন উপকার পাই?
১০ আমরা জানি না যে, যিহোবা কীভাবে আমাদের হয়ে পদক্ষেপ নেবেন। আর এটা না জানার ফলে আমরা কিছু উপকারও পাই। যেমন, আমরা নম্র হতে শিখি। আমরা বুঝতে পারি যে, যিহোবার পথ এবং তাঁর চিন্তাভাবনা আমাদের চেয়ে অনেক উঁচু। (যিশা. ৫৫:৮, ৯) এ ছাড়া, আমরা যিহোবার উপর নির্ভর করতেও শিখি এবং নিশ্চিত থাকি, তিনি আমাদের সাহায্য করবেন। আমরা যখন প্রচারে কোনো ভালো ফলাফল পাই অথবা সংগঠনের কোনো কাজ ভালোভাবে সম্পন্ন করি, তখন আমরা সেটার সমস্ত প্রশংসা যিহোবাকে দিই। (গীত. ১২৭:১; ১ করি. ৩:৭) আর আমরা যেরকম আশা করেছিলাম, সেইরকম যদি না-ও হয়, তারপরও আমরা আস্থা রাখতে পারি যে, যিহোবা সমস্ত কিছু দেখছেন এবং তিনি সমস্ত কিছু ঠিক করে দেবেন। (যিশা. ২৬:৩) কিন্তু, আমরা আমাদের দিক থেকে যতটা করা সম্ভব, ততটা করে চলব এবং নিশ্চিত থাকব যে, যিহোবা সবসময় আমাদের সাহায্য করবেন। তিনি হয়তো অতীতের মতো কোনো অলৌকিক কাজ করবেন না, তবে তিনি নিশ্চয়ই আমাদের সঠিক পথ দেখাবেন।—প্রেরিত ১৬:৬-১০.
১১. আমরা যিহোবা সম্বন্ধে কী জানি?
১১ এখন চিন্তা করুন, আমরা যিহোবা সম্বন্ধে কী জানি। আমরা জানি, যিহোবা একজন প্রেমময় ঈশ্বর, তিনি সবসময় ন্যায়বিচার করেন এবং তিনি প্রজ্ঞাবান। আমরা এও জানি যে, আমরা তাঁর জন্য এবং ভাই-বোনদের জন্য যা-কিছু করি, সেটার প্রতি তিনি উপলব্ধি দেখান। আর আমরা এটাও জানি, যারা যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকে, তিনি তাদের পুরস্কার দেন।—ইব্রীয় ১১:৬.
আমরা জানি না যে, আগামীকাল কী ঘটবে
১২. যাকোব ৪:১৩, ১৪ পদ অনুযায়ী আমরা কী জানি না?
১২ যাকোব ৪:১৩, ১৪ পদ পড়ুন। আমাদের জীবনের একটা চিরন্তন সত্য হল, আমরা জানি না যে, আগামীকাল আমাদের প্রতি কী ঘটবে। এই জগতে আমাদের সামনে যেকোনো সময় ‘বিপদ’ আসতে পারে এবং আমাদের প্রতি ‘দুর্ঘটনা ঘটতে’ পারে। (উপ. ৯:১১, NW) তাই, আমরা জানি না, আমরা যে-পরিকল্পনা করি, সেটা পূরণ হবে কি না আর তা দেখার জন্য আমরা বেঁচে থাকব কি না।
১৩. আমরা জানি না আগামীকাল কী ঘটবে, এই কারণে আমাদের জীবনে কোন সমস্যা আসতে পারে?
১৩ আমাদের জীবনে আগামীকাল কী ঘটবে, তা আমরা জানি না। এই কারণে আমরা হয়তো কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে পারি। আগামীকাল কী ঘটবে, তা নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করে আমরা হয়তো উদ্বিগ্ন হয়ে যেতে পারি এবং এর ফলে আমাদের আনন্দ হারিয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া, হঠাৎ করে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে আমরা হয়তো খুব দুঃখ পেতে পারি এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে পারি। আর যখন আমাদের আশা পূরণ হয় না, তখন আমরা খুবই হতাশ ও নিরুৎসাহিত হয়ে পড়তে পারি।—হিতো. ১৩:১২.
১৪. আমাদের আনন্দ কোন বিষয়টার উপর নির্ভর করে? (ছবিগুলোও দেখুন।)
১৪ আমরা যখন সমস্যার সময়ে ধৈর্য ধরি, তখন আমরা এটা প্রমাণ করি, আমরা নিজেদের স্বার্থে নয় বরং যিহোবাকে ভালোবাসি বলে তাঁর সেবা করি। বাইবেল থেকে আমরা জেনেছি, আমাদের এইরকমটা আশা করা উচিত নয় যে, যিহোবা আমাদের প্রতিটা সমস্যা থেকে উদ্ধার করবেন। আমরা এটাও জেনেছি, তিনি আগে থেকে লিখে রাখেননি, আমাদের প্রতি কী ঘটবে। যিহোবা জানেন, ভবিষ্যতের বিষয়ে সমস্ত কিছু জানার উপর আমাদের আনন্দ নির্ভর করে না। এর পরিবর্তে, এটা তাঁর দেখানো পথে চলা এবং তাঁর সমস্ত আজ্ঞা পালন করার উপর নির্ভর করে। (যির. ১০:২৩) তাই, যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে যিহোবার উপর আস্থা রাখুন এবং যাকোবের মতো হোন, যিনি লিখেছিলেন, “যদি যিহোবার ইচ্ছা হয়, তা হলে আমরা বেঁচে থাকব এবং এটা করব কিংবা ওটা করব।”—যাকোব ৪:১৫.
যিহোবার আজ্ঞা পালন করলে এবং তাঁর দেখানো পথে চললে আমরা সুরক্ষিত থাকব (১৪-১৫ অনুচ্ছেদ দেখুন)b
১৫. আমরা ভবিষ্যতের বিষয়ে কী জানি?
১৫ এটা ঠিক যে আমরা এটা জানি না, আগামীকাল কী ঘটবে। তবে, আমরা যিহোবার প্রতিজ্ঞা সম্বন্ধে জানি। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন যে, তিনি আমাদের অনন্তজীবন দেবেন, কিছু ব্যক্তিকে স্বর্গে এবং কিছু ব্যক্তিকে এই পৃথিবীতে। আমরা এটাও জানি, যিহোবা মিথ্যা কথা বলতে পারেন না এবং কেউই তাকে তাঁর প্রতিজ্ঞা পূরণ করতে বাধা দিতে পারে না। (তীত ১:২) একমাত্র যিহোবাই এমন ঈশ্বর, যিনি আগে থেকেই আমাদের সেই বিষয়গুলোর পরিণতি সম্বন্ধে বলতে পারেন, “যেগুলো এখনও হয়নি।” প্রাচীনকালে তিনি যা-কিছু বলেছিলেন, সেগুলোর সমস্তই সত্যি হয়েছে আর ভবিষ্যতের বিষয়ে তিনি যা-কিছু বলেছেন, সেগুলোও সত্যি হবে। (যিশা. ৪৬:১০, NW) আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত, কোনো কিছুই যিহোবাকে আমাদের প্রতি তাঁর প্রেম দেখানোর ক্ষেত্রে বাধা দিতে পারবে না। (রোমীয় ৮:৩৫-৩৯) শুধু তা-ই নয়, তিনি আমাদের প্রজ্ঞা দেবেন, সান্ত্বনা দেবেন এবং শক্তি দেবেন যেন আমরা প্রতিটা সমস্যা সহ্য করতে পারি। আমরা নিশ্চিত যে, যিহোবা আমাদের সাহায্য করবেন এবং আশীর্বাদ দেবেন।—যির. ১৭:৭, ৮.
আমরা বুঝতে পারি না যে, যিহোবা আমাদের কতটা ভালোভাবে জানেন
১৬. যিহোবা আমাদের বিষয়ে কী জানেন আর এই বিষয়ে চিন্তা করে আপনি কেমন অনুভব করেন? (গীতসংহিতা ১৩৯:১-৬)
১৬ গীতসংহিতা ১৩৯:১-৬ পদ পড়ুন। আমাদের সৃষ্টিকর্তা আমাদের গঠন জানেন। তিনি জানেন, আমরা আসলে কেমন। আমরা কী চিন্তা করি এবং কেমন অনুভব করি, সেটা তিনি বোঝেন। তিনি জানেন আমরা যা বলি, তা কেন বলি। দায়ূদ বলেছিলেন যে, তিনি আমাদের ঘিরে রাখেন অর্থাৎ আমাদের প্রতি মনোযোগ দেন এবং আমাদের সাহায্য করার জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকেন। একটু কল্পনা করুন, এটা কতই-না বড়ো বিষয় যে, স্বর্গ ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা সর্বশক্তিমান ঈশ্বর যিহোবা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের প্রতি মনোযোগ দেন! এই বিষয়ে দায়ুদ বলেছিলেন, “তুমি আমাকে এতটা ভালোভাবে জান যে, সেটা বোঝা আমার সাধ্যের বাইরে। সেটা আমার নাগালের বাইরে।”—গীত. ১৩৯:৬, NW, পাদটীকা।
১৭. কেন আমাদের এটা মেনে নেওয়া কঠিন বলে মনে হতে পারে যে, যিহোবা আমাদের ভালোভাবে জানেন?
১৭ আমরা যেখানে বড়ো হয়ে উঠেছি অথবা আমাদের সংস্কৃতি কিংবা আমাদের অতীতের বিশ্বাসের কারণে হয়তো এটা মেনে নেওয়া কঠিন হতে পারে যে, যিহোবা হলেন একজন প্রেমময় ঈশ্বর এবং তিনি আমাদের জন্য চিন্তা করেন। অথবা হতে পারে, আমরা অতীতে কোনো ভুল করেছি, যার ফলে দায়ূদের মতো আমরাও এইরকম মনে করতে পারি যে, যিহোবা আমাদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখতে চান না এবং তিনি আমাদের কাছ থেকে অনেক দূরে। (গীত. ৩৮:১৮, ২১) এমনটাও হতে পারে, একজন ব্যক্তি ঈশ্বরকে খুশি করার জন্য অনৈতিক জীবনযাপন করা বন্ধ করেছে। কিন্তু, তার মনে হয়তো এই প্রশ্ন আসতে পারে, ‘যিহোবা যদি আমাকে এত ভালোভাবে জানেন, তা হলে তিনি কেন চান যে, আমি আমার জীবনধারা পরিবর্তন করি? তিনি কেন আমাকে আমার পছন্দের বিষয়গুলো ছেড়ে দিতে বলেন?’
১৮. কেন এই বিষয়টা বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, যিহোবা আমাদের যতটা ভালোভাবে জানেন, ততটা আমরা নিজেরাও জানি না? (ছবিগুলোও দেখুন।)
১৮ আমাদের এটা বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, যিহোবা আমাদের যতটা ভালোভাবে জানেন, ততটা আমরা নিজেরাও জানি না। আর তিনি আমাদের মধ্যে সেই ভালো বিষয়গুলো দেখেন, যা আমরা নিজেরা দেখতে পাই না। এটা ঠিক যে, তিনি আমাদের দুর্বলতাগুলো জানেন। কিন্তু, তিনি এটাও জানেন, কেন আমাদের মধ্যে সেই দুর্বলতাগুলো রয়েছে। তিনি জানেন যে, আমরা নিজেদের পরিবর্তন করতে পারি এবং এমনটা করতে তিনি প্রেমের সঙ্গে আমাদের সাহায্য করেন। (রোমীয় ৭:১৫) আমরা যখন এই বিষয়টা বুঝতে পারি, যিহোবা এটা দেখেন না, আমরা কেমন ব্যক্তি বরং এটা দেখেন যে, আমরা কেমন ব্যক্তি হতে পারি, তখন আমাদের তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে এবং আনন্দের সঙ্গে তাঁর সেবা করতে ইচ্ছা করে।
যিহোবা এক সুন্দর জীবন দেওয়ার যে-প্রতিজ্ঞা করেছেন, সেটা তাঁর উপর আমাদের আস্থাকে বৃদ্ধি করে। এই কারণে আমরা জীবনে আসা যেকোনো সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারি (১৮-১৯ অনুচ্ছেদ দেখুন)c
১৯. যিহোবার বিষয়ে আমরা কী জানি?
১৯ আমরা জানি যে, যিহোবা প্রেম আর এই বিষয়ে আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত। (১ যোহন ৪:৮) আমরা জানি, তিনি যে-মানগুলো দিয়েছেন, তা প্রেমের কারণেই দিয়েছেন আর তিনি আমাদের ভালো চান। আমরা জানি যে, যিহোবা আমাদের অনন্তজীবন দিতে চান আর এর জন্য তিনি নিজের পুত্রকে মুক্তির মূল্য হিসেবে দিয়েছেন। মুক্তির মূল্য থেকে আমরা এই বিষয়ে নিশ্চিত হই, নিখুঁত না হওয়া সত্ত্বেও আমরা যিহোবাকে খুশি করতে পারি। (রোমীয় ৭:২৪, ২৫) আর আমরা এটাও জানি যে, “ঈশ্বর আমাদের হৃদয়ের চেয়ে মহান এবং তিনি সমস্ত কিছু জানেন।” (১ যোহন ৩:১৯, ২০) যিহোবা আমাদের ভালোভাবে জানেন এবং তিনি নিশ্চিত যে, আমরা তাঁর ইচ্ছা পূরণ করতে পারি।
২০. কোন বিষয়টা মনে রাখলে আমরা উদ্বিগ্ন হব না?
২০ যিহোবা আমাদের কাছ থেকে এমন কোনো বিষয় গোপন করেননি, যেটা জানা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি এই বিষয়টা বুঝতে পারি এবং নম্র হই, তা হলে আমরা উদ্বিগ্ন হব না এবং বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর উপর মনোযোগ দিতে পারব। এভাবে আমরা দেখাব, যিহোবার উপর আমাদের আস্থা রয়েছে, “যাঁর কাছে সম্পূর্ণ জ্ঞান রয়েছে।” (ইয়োব ৩৬:৪, NW) এটা ঠিক যে, এমন অনেক বিষয় রয়েছে, যেগুলো আমরা পুরোপুরি জানি না। কিন্তু, আমরা নতুন জগতের জন্য অপেক্ষা করে রয়েছি, যখন আমরা নতুন নতুন বিষয় শিখব এবং আমাদের মহান ঈশ্বর যিহোবাকে আরও ভালোভাবে জানতে পারব।—উপ. ৩:১১.
গান ১০৪ পবিত্র শক্তি, ঈশ্বরের উপহার
a যিশু তাঁর স্বর্গীয় বাহিনীর সঙ্গে মিলে শয়তানের মন্দ জগৎকে ধ্বংস করবেন। তাই এটা বলা সঠিক হবে যে, এখন যিশু জানেন, আরমাগিদোন কখন আসবে এবং কখন তিনি “তাঁর জয় সম্পন্ন” করবেন।—প্রকা. ৬:২; ১৯:১১-১৬.
b ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: একজন বাবা তার ছেলের সঙ্গে আপৎকালীন ব্যাগ প্রস্তুত করছেন, যাতে বিপর্যয়ের সময় তাদের কাছে প্রয়োজনীয় জিনিস থাকে।
c ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: একজন ভাই নিজের সমস্যার কারণে অনেক চিন্তিত রয়েছেন, কিন্তু তিনি নতুন জগতের বিষয়ে কল্পনা করছেন, যখন সবাই আনন্দে থাকবে।