অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৪৯
যিহোবা কি আমার প্রার্থনার উত্তর দেবেন?
“তোমরা আমাকে আহ্বান করিবে, এবং গিয়া আমার কাছে প্রার্থনা করিবে, আর আমি তোমাদের কথায় কর্ণপাত করিব।”—যির. ২৯:১২.
গান ৪১ শোনো যিহোবা এই প্রার্থনা
সারাংশa
১-২. কেন আমরা হয়তো মনে করি যে, যিহোবা আমাদের প্রার্থনার উত্তর দিচ্ছেন না?
“সদাপ্রভুতে আমোদ কর, তিনি তোমার মনোবাঞ্ছা সকল পূর্ণ করিবেন।” (গীত. ৩৭:৪) যিহোবা আমাদের কাছে কতই-না সুন্দর এক প্রতিজ্ঞা করেছেন! কিন্তু, আমাদের কি এইরকমটা চিন্তা করা উচিত যে, আমরা যিহোবার কাছে যা চাইব, তিনি তা সঙ্গেসঙ্গে আমাদের দেবেন? আসলে, এইরকমটা সবসময় ঘটে না। এই উদাহরণগুলোর উপর মনোযোগ দিন। একজন অবিবাহিত বোন রাজ্যের প্রচারকদের জন্য স্কুলে যোগ দিতে চান। তিনি এই বিষয় নিয়ে প্রার্থনা করেন, কিন্তু অনেক বছর কেটে যাওয়ার পরও তাকে ডাকা হয়নি। একজন যুবক ভাই মণ্ডলীতে আরও বেশি করে কাজ করতে চান। কিন্তু, তার একটা কঠিন রোগ আছে আর তাই, তিনি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেন যেন তিনি সুস্থ হয়ে যান। তবে, তিনি সুস্থ হননি। এক বাবা-মা যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেন যেন তাদের সন্তান যিহোবার সেবা করে চলে। কিন্তু, সেই সন্তান যিহোবার কাছ থেকে দূরে চলে যায়।
২ আপনিও কি যিহোবার কাছে এমন কিছু নিয়ে প্রার্থনা করেছেন, যেটার উত্তর আপনি এখনও পাননি? যদি এমনটা হয়, তা হলে আপনি হয়তো চিন্তা করছেন, যিহোবা অন্যদের প্রার্থনার উত্তর দিচ্ছেন, কিন্তু আপনার প্রার্থনার উত্তর দিচ্ছেন না। অথবা আপনি হয়তো চিন্তা করছেন যে, ‘নিশ্চয়ই আমি কোনো ভুল করেছি, তাই যিহোবা আমার প্রার্থনার উত্তর দিচ্ছেন না।’ বোন জ্যানিসের এমনটাই মনে হয়েছিল।b তিনি এবং তার স্বামী বেথেলে সেবা করতে চেয়েছিলেন এবং তারা এই বিষয় নিয়ে যিহোবার কাছে প্রার্থনাও করেছিলেন। বোন বলেন, “আমি নিশ্চিত ছিলাম, আমরা কিছু দিনের মধ্যেই বেথেলে গিয়ে সেবা করব।” কিন্তু, মাসের পর মাস কেটে যায়, বছর গড়িয়ে যায়, তা-ও তাদের ডাকা হয়নি। বোন বলেন, “আমি খুব দুঃখ পেয়েছিলাম কারণ আমি বেথেলে যাওয়ার জন্য যিহোবার কাছে অনেক প্রার্থনা করেছিলাম। আমি বুঝতে পারছিলাম না, কেন তিনি আমার প্রার্থনার উত্তর দিচ্ছেন না। আমি এমন কী করেছি যে, যিহোবা আমার উপর রেগে আছেন?”
৩. এই প্রবন্ধে আমরা কোন বিষয়গুলোর উপর মনোযোগ দেব?
৩ অনেকসময় আমরা হয়তো চিন্তা করি, ‘কী জানি, যিহোবা আমাদের প্রার্থনা শুনছেন কি না?’ অতীতে ঈশ্বরের কিছু দাসের এমনটাই মনে হয়েছিল। (ইয়োব ৩০:২০; গীত. ২২:২; হবক্. ১:২) তাহলে, আপনি কোন বিষয় থেকে নিশ্চিত হতে পারেন যে, যিহোবা আপনার প্রার্থনা শুনবেন এবং সেটার উত্তর অবশ্যই দেবেন? (গীত. ৬৫:২) এটা জানার জন্য আসুন প্রথমে এই বিষয়গুলোর উপর মনোযোগ দিই: (১) যিহোবার কাছ থেকে আমরা কী আশা করতে পারি? (২) যিহোবা আমাদের কাছ থেকে কী আশা করেন? (৩) কখনো কখনো কেন আমাদের হয়তো অন্য কোনো বিষয় নিয়ে প্রার্থনা করা উচিত?
যিহোবার কাছ থেকে আমরা কী আশা করতে পারি?
৪. যিরমিয় ২৯:১২ পদ অনুযায়ী যিহোবা আমাদের কাছে কোন প্রতিজ্ঞা করেছেন?
৪ যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছেন, তিনি আমাদের প্রার্থনা শুনবেন। (পড়ুন, যিরমিয় ২৯:১২.) আমরা বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করি, তাই তিনি আমাদের খুব ভালোবাসেন এবং সবসময় আমাদের প্রার্থনা শোনেন। (গীত. ১০:১৭; ৩৭:২৮) তবে, এর মানে এটা নয় যে, আমরা যিহোবার কাছে যা চাইব, তা-ই পাব। আমরা যে-বিষয়গুলো নিয়ে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি, হতে পারে সেগুলোর মধ্যে কিছু আমরা নতুন জগতে গিয়েই পাব।
৫. আমরা যখন কোনো বিষয়ে নিয়ে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি, তখন তিনি কী দেখেন? বুঝিয়ে বলুন।
৫ আমরা যখন কোনো বিষয় নিয়ে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি, তখন তিনি দেখেন যে, সেই প্রার্থনা তাঁর উদ্দেশ্যের সঙ্গে মেলে কি না। (যিশা. ৫৫:৮, ৯) যিহোবার উদ্দেশ্য হল, পৃথিবীতে মানুষ যেন তাঁকে শাসক হিসেবে মেনে নেয় এবং খুশিমনে তাঁর সেবা করে। কিন্তু শয়তান দাবি করেছিল, মানুষ নিজে নিজের উপর শাসন করলে বেশি খুশি থাকবে। (আদি. ৩:১-৫) শয়তানের এই দাবিকে মিথ্যে প্রমাণ করার জন্য যিহোবা মানুষকে নিজেদের উপর শাসন করার অধিকার দিয়েছেন। আর মানুষের শাসনের ফলে আজ আমরা বিভিন্ন সমস্যা ভোগ করছি। (উপ. ৮:৯) কিন্তু আমরা জানি যে, যিহোবা এখনই সমস্ত সমস্যা দূর করবেন না। কেন? কারণ তিনি যদি তা করেন, তা হলে লোকেরা এটা ভাবতে পারে যে, মানুষ ভালোভাবে শাসন করছে বলে কোনো সমস্যা নেই।
৬. আমরা যদি মনে রাখি, যিহোবা যা-কিছু করেন প্রেমের কারণে করেন এবং কখনো অন্যায় করেন না, তা হলে আমরা কোন বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারব?
৬ হতে পারে, যিহোবা একই ধরনের প্রার্থনার উত্তর আলাদা আলাদাভাবে দেন। একটা উদাহরণ লক্ষ করুন। একবার রাজা হিষ্কিয় খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন আর তিনি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন, যাতে তিনি তাকে সুস্থ করে দেন। আর যিহোবা তাকে সুস্থ করে দিয়েছিলেন। (২ রাজা. ২০:১-৬) এর অনেক বছর পর প্রেরিত পৌলও যিহোবার কাছে এমনই কোনো বিষয় নিয়ে প্রার্থনা করেছিলেন। সম্ভবত, তারও কোনো গুরুতর অসুস্থতা ছিল, যেটাকে তিনি ‘মাংসের কাঁটা’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি যিহোবার কাছে বিনতি করেছিলেন যেন তিনি এই কাঁটা বের করে দেন। কিন্তু, যিহোবা তা করেননি। (২ করি. ১২:৭-৯) এখন প্রেরিত পিতর ও যাকোবের প্রতি কী ঘটেছিল, তা লক্ষ করুন। রাজা হেরোদ তাদের দু-জনকেই মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন। সেইসময় মণ্ডলীর ভাই-বোনেরা পিতরের জন্য প্রার্থনা করেছিল আর হয়তো তারা যাকোবের জন্যও প্রার্থনা করেছিল। তা সত্ত্বেও, যাকোবকে মেরে ফেলা হয়েছিল আর পিতরকে অলৌকিকভাবে রক্ষা করা হয়েছিল। (প্রেরিত ১২:১-১১) আমরা হয়তো চিন্তা করতে পারি, ‘কেন যিহোবা এমনটা করলেন? যাকোবকে মরতে দিলেন আর পিতরকে অলৌকিকভাবে রক্ষা করলেন?’ বাইবেলে এই বিষয়ে কিছুই বলা নেই।c কিন্তু আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, যিহোবা “কখনো অন্যায় করেন না।” (দ্বিতীয়. ৩২:৪, NW) আর আমরা জানি, যিহোবা যাকোব ও পিতরের উপর সন্তুষ্ট ছিলেন। (প্রকা. ২১:১৪) কখনো কখনো হতে পারে, আমরা আমাদের প্রার্থনার উত্তর সেভাবে পাই না, যেভাবে আমরা চাই। এই ক্ষেত্রে আমরা মনে রাখতে পারি যে, যিহোবা আমাদের খুব ভালোবাসেন এবং কখনো অন্যায় করেন না। তাই আমরা নিশ্চিত থাকব, তিনি আমাদের প্রার্থনার যে-উত্তরই দিক না কেন, তা আমাদের ভালোর জন্যই। এ ছাড়া, আমরা এই বিষয়ে কোনো অভিযোগ করব না।—ইয়োব ৩৩:১৩.
৭. আমাদের কী করা উচিত নয় আর কেন?
৭ আমাদের নিজেকে অন্যদের সঙ্গে তুলনা করা উচিত নয়। কিন্তু, কখনো কখনো আমরা হয়তো তা করতে শুরু করি। যেমন হতে পারে, আমরা একটা বিষয় নিয়ে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছি, কিন্তু সেটার উত্তর আমরা সেভাবে পাইনি। আর পরে আমরা জানতে পারি, অন্য কেউ এই একই বিষয় নিয়ে প্রার্থনা করেছে এবং সে তার উত্তর পেয়েছে। বোন এনার সঙ্গে এমনটাই ঘটেছিল। বোনের স্বামী ক্যান্সারে ভুগছিলেন আর তাই, তিনি প্রার্থনা করেছিলেন যেন তার স্বামী সুস্থ হয়ে যান। প্রায় একই সময়ে দু-জন বয়স্ক বোনও ক্যান্সারে ভুগছিলেন। বোন এনা তার স্বামী এবং সেই বোনদের জন্য হৃদয় উজাড় করে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। সেই দু-জন বোন সুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু বোন এনার স্বামী মারা গিয়েছিলেন। প্রথম প্রথম বোনের মনে হয়েছিল, সেই দু-জন বোন এইজন্য সুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন কারণ যিহোবা তাদের সুস্থ করেছিলেন। তাই, বোন চিন্তা করছিলেন, ‘যিহোবা সেই দু-জন বোনকে সুস্থ করে দিলেন, কিন্তু কেন আমার স্বামীকে সুস্থ করলেন না?’ আমরা জানি না, কেন এমনটা ঘটেছিল। কিন্তু আমরা এটা জানি, ভবিষ্যতে যিহোবা সমস্ত দুঃখকষ্ট চিরকালের জন্য দূর করে দেবেন। তিনি তাঁর উপাসকদের জীবন ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করে আছেন, যারা মৃত্যুতে ঘুমিয়ে আছে।—ইয়োব ১৪:১৫.
৮. (ক) যিশাইয় ৪৩:২ পদ অনুযায়ী কীভাবে যিহোবা আমাদের পাশে থাকেন? (খ) কঠিন পরিস্থিতিতে প্রার্থনা করলে কীভাবে আমরা সাহায্য পেতে পারি? (প্রার্থনা আমাদের কঠিন পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধরতে সাহায্য করে শিরোনামের ভিডিওটা দেখুন।)
৮ যিহোবা সবসময় আমাদের পাশে থাকবেন। যিহোবা আমাদের পিতা এবং আমাদের অনেক ভালোবাসেন। তাই তিনি চান না যে, আমরা কষ্টের মধ্যে থাকি। (যিশা. ৬৩:৯) কিন্তু, তিনি কোনো অলৌকিক কাজ করেন না, যাতে আমাদের উপর কোনো সমস্যা না আসে। কখনো কখনো আমাদের নদী অথবা আগুনের মতো বড়ো বড়ো সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। (পড়ুন, যিশাইয় ৪৩:২.) তবে যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছেন যে, তিনি এগুলোর ‘মধ্য দিয়া চলতে’ অথবা এগুলো পার করতে আমাদের সাহায্য করবেন। এই সমস্যাগুলো আমাদের ডুবিয়ে দিতে পারবে না অথবা আমাদের জ্বালিয়ে দিতে পারবে না। যিহোবা আমাদের তাঁর পবিত্র শক্তিও দেবেন, যাতে আমরা এই সমস্যাগুলো সহ্য করতে পারি। (লূক ১১:১৩; ফিলি. ৪:১৩) আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত থাকতে পারি যে, এই সমস্যাগুলোর সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করার জন্য এবং তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থাকার জন্য আমাদের যা-কিছু প্রয়োজন, যিহোবা আমাদের তা দেবেন।d
যিহোবা আমাদের কাছ থেকে কী আশা করেন?
৯. যাকোব ১:৬, ৭ পদে যেমনটা বলা হয়েছে, কেন আমাদের আস্থা রাখা উচিত যে, যিহোবা আমাদের সাহায্য করবেন?
৯ যিহোবা চান যেন আমরা তাঁর উপর আস্থা রাখি। (ইব্রীয় ১১:৬) অনেকসময় আমরা চিন্তা করতে পারি, আমাদের সমস্যাগুলো আমরা কাটিয়ে উঠতে পারব কি না। অথবা আমরা চিন্তা করতে পারি, ‘জানি না, যিহোবা আমাকে এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবেন কি না?’ কিন্তু বাইবেল আমাদের আশ্বস্ত করে, যিহোবার শক্তির সাহায্যে আমরা “প্রাচীর উল্লঙ্ঘন” করতে পারি। (গীত. ১৮:২৯) তাই, আমাদের ভয় পাওয়া উচিত নয় আর যিহোবার উপর সন্দেহ করাও উচিত নয়। এর পরিবর্তে, প্রার্থনা করার সময়ে আমাদের সবসময় এই আস্থা রাখা উচিত যে, যিহোবা আমাদের প্রার্থনা শুনবেন এবং উত্তর দেবেন।—পড়ুন, যাকোব ১:৬, ৭.
১০. উদাহরণের সাহায্যে বলুন, কীভাবে আমরা আমাদের প্রার্থনার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করতে পারি।
১০ যিহোবা চান যেন আমরা আমাদের প্রার্থনার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করি। একজন ভাই হয়তো যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছেন যেন তিনি সম্মেলনে যাওয়ার জন্য ছুটি পেতে পারেন। কীভাবে যিহোবা সেই ভাইয়ের প্রার্থনার উত্তর দেবেন? হতে পারে, যিহোবা সেই ভাইকে সাহস জোগাবেন, যাতে তিনি তার বসের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। তবে, সেই ভাইকেই বসের সঙ্গে গিয়ে কথা বলতে হবে এবং হতে পারে বার বার বলতে হবে। অথবা তিনি বসকে বলতে পারেন, সেই দিনের পরিবর্তে তিনি অন্য দিন কাজ করে দেবেন। আর যদি প্রয়োজন হয়, তা হলে তিনি বসকে সেই দিনের বেতন কেটে নেওয়ার কথাও বলতে পারেন।
১১. কেন আমাদের চিন্তার বিষয়গুলো নিয়ে বার বার প্রার্থনা করা উচিত?
১১ যিহোবা চান যেন আমরা আমাদের চিন্তার বিষয়গুলো নিয়ে বার বার তাঁর কাছে প্রার্থনা করি। (১ থিষল. ৫:১৭) যিশু তাঁর শিষ্যদের যা বলেছিলেন, সেখান থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, অনেকসময় আমরা আমাদের প্রার্থনার উত্তর সঙ্গেসঙ্গে পাব না। (লূক ১১:৯) তাই, হাল ছেড়ে না দিয়ে বার বার হৃদয় উজাড় করে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন। (লূক ১৮:১-৭) আমরা যখন কোনো বিষয় নিয়ে বার বার প্রার্থনা করি, তখন এটা দেখায় যে, আমরা সেই বিষয়টা নিয়ে এমনি এমনিই প্রার্থনা করছি না বরং সেই বিষয়টা আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এভাবে আমরা এও দেখাই, যিহোবার উপর আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে যে, তিনি আমাদের সাহায্য করতে পারেন।
কখনো কখনো কেন আমাদের হয়তো অন্য কোনো বিষয় নিয়ে প্রার্থনা করা উচিত?
১২. (ক) প্রার্থনা করার বিষয়ে আমাদের কোন প্রশ্ন নিজেদের জিজ্ঞেস করা উচিত আর কেন? (খ) কেমনভাবে প্রার্থনা করলে আমরা দেখাব যে, আমরা যিহোবাকে সম্মান করি? (“আমার প্রার্থনা কি দেখায়, আমি যিহোবাকে সম্মান করি?” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।)
১২ আমরা হয়তো কোনো বিষয় নিয়ে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছি এবং যেমনটা আশা করেছিলাম, তেমনটা হয়নি। এইরকম ক্ষেত্রে আমরা তিনটে প্রশ্ন নিজেদের জিজ্ঞেস করতে পারি। প্রথম প্রশ্নটা হল: “আমি কি সঠিক বিষয় নিয়ে প্রার্থনা করছি?” অনেকসময় আমাদের মনে হতে পারে, আমাদের জন্য কোনটা সঠিক, তা আমরা জানি, কিন্তু পরে গিয়ে হয়তো তা থেকে আমাদের কোনো উপকারই আসবে না। আমরা হয়তো যিহোবার কাছে প্রার্থনা করছি যেন তিনি একটা নির্দিষ্ট উপায়ে আমাদের সমস্যার সমাধান করেন। কিন্তু, তিনি হয়তো এর চেয়েও একটা ভালো উপায় ভেবে রেখেছেন। এটাও হতে পারে, আমরা এমন এক বিষয় নিয়ে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করছি, যেটা তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী নয়। (১ যোহন ৫:১৪) আসুন, আমরা সেই বাবা-মায়ের উদাহরণ আরেক বার লক্ষ করি, যারা প্রার্থনা করেছিলেন যেন তাদের সন্তান যিহোবার সেবা করে চলে। আসলে এই ধরনের প্রার্থনা করা ভুল নয়। কিন্তু, যিহোবা কাউকেই তাঁর সেবা করার জন্য জোর করেন না। তিনি চান যেন আমরা এবং আমাদের সন্তানেরা নিজেদের ইচ্ছায় তাঁর সেবা করি। (দ্বিতীয়. ১০:১২, ১৩; ৩০:১৯, ২০) তাই, সেই বাবা-মা প্রার্থনা করতে পারেন যেন তারা তাদের সন্তানদের হৃদয়ে সত্য গেঁথে দিতে পারেন এবং সেই সন্তান নিজে থেকে যিহোবাকে ভালোবাসতে পারে আর তাঁর বন্ধু হয়ে উঠতে পারে।—হিতো. ২২:৬; ইফি. ৬:৪.
১৩. ইব্রীয় ৪:১৬ পদ অনুযায়ী যিহোবা কখন আমাদের সাহায্য করবেন? বুঝিয়ে বলুন।
১৩ দ্বিতীয় প্রশ্নটা হল: “যিহোবার দিক থেকে দেখলে আমরা যা পেতে চাই, এটা কি তা দেওয়ার সঠিক সময়?” আমরা হয়তো চিন্তা করি, আমাদের প্রার্থনার উত্তর এখনই চাই। তবে সত্যি বলতে কী, যিহোবা জানেন যে, আমাদের সাহায্য করার সঠিক সময় কখন। (পড়ুন, ইব্রীয় ৪:১৬.) আমরা যখন সঙ্গেসঙ্গে আমাদের প্রার্থনার উত্তর পাই না, তখন আমরা মনে করতে পারি, যিহোবা যেন আমাদের বলছেন, ‘আমি তোমার প্রার্থনার উত্তর দেব না।’ কিন্তু হতে পারে তিনি এটা বলছেন, ‘আমি তোমার প্রার্থনার উত্তর দেব, কিন্তু এখন নয়।’ আরেক বার সেই যুবক ভাইয়ের কথা চিন্তা করুন, যিনি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন যেন তিনি তাকে সুস্থ করে দেন। যিহোবা যদি অলৌকিকভাবে সেই ভাইকে সুস্থ করে দিতেন, তা হলে শয়তান হয়তো তাঁকে টিটকারি দিত যে, যিহোবা তাকে সুস্থ করেছেন বলেই তিনি তাঁর সেবা করছেন। (ইয়োব ১:৯-১১; ২:৪) আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে, যিহোবা আগে থেকে একটা সময় স্থির করে রেখেছেন, যখন তিনি সমস্ত ধরনের অসুস্থতা দূর করে দেবেন। (যিশা. ৩৩:২৪; প্রকা. ২১:৩, ৪) কিন্তু, সেই সময় না আসা পর্যন্ত আমরা এটা আশা করতে পারি না যে, তিনি অলৌকিকভাবে আমাদের সুস্থ করে দেবেন। তাই, সেই ভাই যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতে পারেন যেন তিনি তাকে অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করার জন্য এবং বিশ্বস্তভাবে তাঁর সেবা করার জন্য তাকে শক্তি ও মনের শান্তি দেন।—গীত. ২৯:১১.
১৪. বোন জ্যানিসের উদাহরণ থেকে আপনি কী শিখেছেন?
১৪ আরেক বার বোন জ্যানিসের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন, যিনি বেথেলে সেবা করার জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। পাঁচ বছর পর তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, যিহোবা তাঁর উত্তর দিয়েছেন, কিন্তু যেভাবে তিনি চেয়েছিলেন, সেভাবে নয়। বোন বলেন, “সেই সময়ে যিহোবা আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছিলেন এবং খ্রিস্টীয় গুণ বাড়াতে সাহায্য করেছিলেন। আমি বুঝতে পারি, আমাকে আরও বেশি করে যিহোবার উপর নির্ভর করতে হবে এবং আরও ভালোভাবে ব্যক্তিগত অধ্যয়ন করতে হবে। আমি এও শিখেছি, আমার আনন্দ এটার উপর নির্ভর করে না যে, আমি কোথায় সেবা করছি।” পরবর্তী সময়ে বোন জ্যানিসের স্বামীকে একজন সীমা অধ্যক্ষ হিসেবে সেবা করতে বলা হয় এবং বোন তাকে পুরোপুরিভাবে সমর্থন করেন। পুরোনো বিষয়গুলো মনে করে বোন বলেন, “যিহোবা আমাকে আমার প্রার্থনার উত্তর দিয়েছিলেন, কিন্তু আমি যেভাবে চেয়েছিলাম, সেভাবে নয়। যিহোবা কত চমৎকার উপায়ে প্রার্থনার উত্তর দেন, তা বুঝতে আমার কিছুটা সময় লেগেছিল। কিন্তু আমি তাঁর প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ যে, তিনি আমাকে এত ভালোবাসেন এবং আমার প্রতি এত দয়া দেখিয়েছেন।”
যদি মনে হয়, আপনার প্রার্থনার উত্তর আপনি পাননি, তা হলে আপনার প্রার্থনায় কিছু রদবদল করতে পারেন (১৫ অনুচ্ছেদ দেখুন)f
১৫. কেন কখনো কখনো নির্দিষ্টভাবে না বলে সাধারণভাবে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করা ভালো? (ছবিগুলোও দেখুন।)
১৫ তৃতীয় প্রশ্নটা হল, “আমরা যে-বিষয়টা নিয়ে প্রার্থনা করছি, তাতে কি কিছু রদবদল করতে হবে?” এটা ঠিক যে, যিহোবাকে আমাদের নির্দিষ্টভাবে বলতে হবে, আমরা কী চাই। কিন্তু, কখনো কখনো নির্দিষ্টভাবে না বলে সাধারণভাবে যিহোবাকে বলতে পারি যে, আমরা কী চাই। এভাবে আমরা জানতে পারব, যিহোবার ইচ্ছা কী। এখন আসুন, আমরা আবারও সেই বোনের প্রতি মনোযোগ দিই, যিনি রাজ্যের প্রচারকদের জন্য স্কুলে যোগ দেওয়ার জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। তিনি এই স্কুলে যোগ দিতে চেয়েছিলেন, যাতে যেখানে বেশি প্রয়োজন, সেখানে গিয়ে সেবা করতে পারেন। তিনি স্কুলে যোগ দেওয়ার বিষয়ে প্রার্থনা করার পাশাপাশি এই বিষয়েও প্রার্থনা করতে পারেন, যেন যিহোবা তাকে তাঁর সেবা করার বিভিন্ন দিক খুঁজে পেতে সাহায্য করেন। (প্রেরিত ১৬:৯, ১০) তারপর, তিনি তার প্রার্থনার সঙ্গে মিল রেখে কাজও করতে পারেন। তিনি তার সীমা অধ্যক্ষকে জিজ্ঞেস করতে পারেন, আশেপাশে এমন কোনো মণ্ডলী কি রয়েছে, যেখানে অগ্রগামীদের বেশি প্রয়োজন? অথবা তিনি শাখা অফিসকে চিঠি লিখে জিজ্ঞেস করতে পারেন, এমন কোনো এলাকা কি রয়েছে, যেখানে প্রচারকদের বেশি প্রয়োজন?e
১৬. আমরা কোন বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারি?
১৬ এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পেরেছি যে, কেন আমরা আস্থা রাখতে পারি, যিহোবা আমাদের প্রার্থনার উত্তর অবশ্যই দেবেন। আর তিনি যেভাবে উত্তর দেন, সেটা থেকে আমরা বুঝতে পারি, তিনি আমাদের কত ভালোবাসেন এবং কখনো আমাদের প্রতি অন্যায় করেন না। (গীত. ৪:৩; যিশা. ৩০:১৮) হতে পারে, কখনো কখনো আমরা যেভাবে চেয়েছি, সেভাবে আমাদের প্রার্থনার উত্তর পাইনি। কিন্তু আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, তিনি সবসময় আমাদের প্রার্থনা শুনবেন। তিনি আমাদের অনেক ভালোবাসেন এবং কখনো আমাদের একা ছেড়ে দেবেন না। (গীত. ৯:১০) তাই আসুন, আমরা সবসময় যিহোবার উপর নির্ভর করি এবং তাঁকে আমাদের মনের কথা খুলে বলি।—গীত. ৬২:৮.
গান ৪৫ আমার হৃদয়ের চিন্তা
a এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, কেন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবা আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেন আর তিনি যেভাবে আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেন, তা থেকে আমরা কীভাবে বুঝতে পারি, তিনি আমাদের কতটা ভালোবাসেন এবং তিনি কখনো আমাদের প্রতি অন্যায় করেন না।
b কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।
c ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় দেওয়া “যিহোবার উপর আস্থা রাখুন” শিরোনামের প্রবন্ধের ৩-৬ অনুচ্ছেদ দেখুন।
d যিহোবা যেভাবে আমাদের সমস্যাগুলো সহ্য করতে সাহায্য করেন, সেই বিষয়ে আরও জানার জন্য jw.org ওয়েবসাইটে প্রার্থনা আমাদের কঠিন পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধরতে সাহায্য করে শিরোনামের ভিডিওটা দেখুন।
e আপনি যদি অন্য কোনো দেশে গিয়ে সেবা করতে চান, তা হলে সেই বিষয়ে আরও জানার জন্য যিহোবার ইচ্ছা পালন করার জন্য সংগঠিত (ইংরেজি) বইয়ের ১০ অধ্যায়ের ৬-৯ অনুচ্ছেদ দেখুন।
f ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: দু-জন বোন রাজ্যের প্রচারকদের জন্য স্কুলে যাওয়ার জন্য ফর্ম পূরণ করার আগে প্রার্থনা করছেন। পরে, তাদের মধ্যে একজনকে ডাকা হয়, কিন্তু আরেকজনকে ডাকা হয় না। যাকে ডাকা হয়নি, তিনি অতিরিক্ত দুঃখিত হননি। তিনি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করছেন যেন তিনি তাকে তাঁর সেবা করার আরও দিকগুলো খুঁজে পেতে সাহায্য করেন। এরপর, তিনি শাখা অফিসকে চিঠি লিখে পাঠান যে, তিনি এমন এলাকায় গিয়ে সেবা করার জন্য প্রস্তুত, যেখানে প্রচারকদের বেশি প্রয়োজন।