আপনি কি যিহোবার সংগঠনকে উপলব্ধি করেন?
“সদাপ্রভু এই কথা কহেন, স্বর্গ আমার সিংহাসন, পৃথিবী আমার পাদপীঠ।”—যিশাইয় ৬৬:১.
১, ২. (ক) যিহোবার সংগঠনের কোন্ দৃশ্যত প্রমাণ আপনি উল্লেখ করতে পারেন? (খ) যিহোবা কোথায় বাস করেন?
আপনি কি বিশ্বাস করেন যে যিহোবার একটি সংগঠন আছে? যদি করেন, তাহলে কেন আপনি তা বিশ্বাস করেন? আপনি হয়ত উত্তর দিতে পারেন: ‘আমাদের একটি কিংডম হল আছে। এক প্রাচীনগোষ্ঠী সহ আমাদের একটি সুসংগঠিত মণ্ডলী রয়েছে। আমাদের একজন যথার্থরূপে নিযুক্ত সীমা অধ্যক্ষ রয়েছেন যিনি নিয়মিতভাবে আমাদের পরিদর্শন করেন। আমরা সুব্যবস্থিত অধিবেশন এবং সম্মেলনগুলিতে যোগ দিই। আমাদের দেশে ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটির একটি শাখা অফিস আছে। নিশ্চিতভাবে, এইসব এবং আরও অনেক কিছু প্রমাণ করে যে যিহোবার একটি কার্যরত সংগঠন রয়েছে।’
২ এইধরনের বৈশিষ্ট্যগুলি একটি সংগঠনের প্রমাণস্বরূপ। কিন্তু আমরা সকলে যদি কেবল পৃথিবীতে যেটি রয়েছে তার প্রতি দৃষ্টি দিই ও উপলব্ধি করি, তাহলে আমরা যিহোবার সংগঠন সম্বন্ধে সম্পূর্ণ বোধগম্যতা লাভ করছি না। যিহোবা যিশাইয়কে বলেছিলেন যে পৃথিবী কেবল তাঁর পাদপীঠ কিন্তু স্বর্গ তাঁর সিংহাসন। (যিশাইয় ৬৬:১) যিহোবা কোন্ “স্বর্গ” সম্বন্ধে উল্লেখ করছিলেন? আমাদের বায়ুমণ্ডল সম্বন্ধে? বহিঃস্থ মহাশূন্য সম্বন্ধে? অথবা জীবনের অন্য কোন স্তর সম্বন্ধে? যিশাইয় যিহোবার “পবিত্রতার ও . . . প্রতাপের বসতি” সম্বন্ধে বলেন এবং গীতরচক এই স্বর্গকে তাঁর “আপন বাসস্থান” হিসাবে বর্ণনা করেন। অতএব, যিশাইয় ৬৬:১ পদে উল্লেখিত “স্বর্গ” অদৃশ্য আত্মিক রাজ্যকে নির্দেশ করে যেখানে যিহোবার সর্বোচ্চ অথবা পরম অবস্থান রয়েছে।—যিশাইয় ৬৩:১৫; গীতসংহিতা ৩৩:১৩, ১৪.
৩. কিভাবে আমরা সন্দেহগুলি অতিক্রম করতে পারি?
৩ সুতরাং, আমরা যদি যিহোবার সংগঠনকে সত্যই প্রত্যক্ষ এবং উপলব্ধি করতে চাই, তাহলে আমাদের অবশ্যই স্বর্গের দিকে তাকাতে হবে। আর কিছুজনের জন্য সেটিই একটি সমস্যা। যেহেতু যিহোবার স্বর্গীয় সংগঠন অদৃশ্য, তাই কিভাবে আমরা জানি যে এটি প্রকৃতই অস্তিত্বে আছে? এমনকি কেউ কেউ হয়ত বেশ কিছু সময় ধরে সন্দেহ পোষণ করে এসেছেন এবং ভেবেছেন ‘আমরা কিভাবে নিশ্চিত হতে পারি?’ বিশ্বাস কিভাবে সন্দেহকে অতিক্রম করতে পারে? দুটি মুখ্য উপায় হল ঈশ্বরের বাক্যের আন্তরিক ব্যক্তিগত অধ্যয়ন এবং খ্রীষ্টীয় সভাগুলিতে নিয়মিত উপস্থিতি ও অংশগ্রহণ। এইভাবে আমরা সত্যের আলো দ্বারা আমাদের সন্দেহের অন্তে পৌঁছাতে পারি। ঈশ্বরের অন্যান্য দাসেরাও ছিলেন যাদের সন্দেহ ছিল। আসুন আমরা ইলীশায়ের দাসের বিষয়টি বিবেচনা করি যখন অরামের রাজা ইস্রায়েলকে আক্রমণ করেছিলেন।—যোহন ২০:২৪-২৯; যাকোব ১:৫-৮ পদগুলির সাথে তুলনা করুন।
যিনি স্বর্গীয় বাহিনী দেখেছিলেন
৪, ৫. (ক) ইলীশায়ের দাসের কোন্ সমস্যা হয়েছিল? (খ) কিভাবে যিহোবা ইলীশায়ের প্রার্থনার প্রতি সাড়া দিয়েছিলেন?
৪ অরামের রাজা ইলীশায়কে বন্দী করতে রাতের বেলা এক বৃহৎ সেনাবাহিনীকে দোথনে পাঠিয়েছিলেন। ইলীশায়ের দাস যখন ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে, সম্ভবত তাদের মধ্য প্রাচ্যের বাসগৃহের সমতল ছাদের উপর সতেজ বাতাস গ্রহণ করার জন্য বাইরে গিয়েছিলেন, তখন কী এক আঘাতই না তিনি পেয়েছিলেন! ঈশ্বরের ভাববাদীকে বন্দী করার অপেক্ষায় অশ্ব ও যুদ্ধরথ সহ সম্পূর্ণ অরামীয় সেনাবাহিনী নগর বেষ্টন করেছিল। দাসটি ইলীশায়ের কাছে আর্তনাদ করে বলেছিলেন: “হায় হায়, হে প্রভু! আমরা কি করিব?” স্পষ্টতই, শান্তভাবে এবং দৃঢ়প্রত্যয়ের সঙ্গে ইলীশায় উত্তর দিয়েছিলেন: “ভয় করিও না, উহাদের সঙ্গীদের অপেক্ষা আমাদের সঙ্গী অধিক।” দাসটি নিশ্চয় চিন্তা করেছিলেন, ‘তারা কোথায়? আমি তাদের দেখতে পাচ্ছি না!’ মাঝে মাঝে আমাদেরও হয়ত এই সমস্যা হতে পারে—স্বর্গীয় বাহিনীকে আমাদের বোধগম্যতার চোখ দ্বারা দেখা অথবা প্রত্যক্ষ করায় ব্যর্থতা।—২ রাজাবলি ৬:৮-১৬; ইফিষীয় ১:১৮.
৫ ইলীশায় তার দাসের চোখ খুলে দেওয়ার জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। পরে কী ঘটেছিল? “তখন সদাপ্রভু সেই যুবকটীর চক্ষু খুলিয়া দিলেন, এবং সে দেখিতে পাইল, আর দেখ, ইলীশায়ের চারিদিকে অগ্নিময় অশ্বে ও রথে পর্ব্বত পরিপূর্ণ।” (২ রাজাবলি ৬:১৭) হ্যাঁ, তিনি দেখেছিলেন স্বর্গীয় বাহিনী, দূত বাহিনী ঈশ্বরের দাসকে সুরক্ষিত করার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তখন তিনি ইলীশায়ের দৃঢ়প্রত্যয়কে বুঝতে পেরেছিলেন।
৬. কিভাবে আমরা যিহোবার স্বর্গীয় সংগঠনের বিষয়ে অন্তর্দৃষ্টি লাভ করতে পারি?
৬ ইলীশায়ের দাসের যেমন হয়েছিল তদ্রূপ আমাদেরও কি মাঝে মাঝে প্রত্যক্ষ করার ক্ষেত্রে একইরকম সমস্যা হয়ে থাকে? আমাদের কি পরিস্থিতিগুলির কেবল আক্ষরিক দিক দেখার প্রবণতা রয়েছে যা কিছু দেশে আমাদের অথবা আমাদের খ্রীষ্টীয় কাজের প্রতি হুমকিস্বরূপ? যদি তাই হয়, তাহলে আমরা কি আমাদেরকে জ্ঞানালোকপ্রাপ্ত করতে একটি বিশেষ দর্শন প্রত্যাশা করতে পারি? না, কারণ আমাদের এমন কিছু রয়েছে যা ইলীশায়ের দাসের ছিল না—একটি সম্পূর্ণ বই, বাইবেল যার মধ্যে অনেক দর্শন রয়েছে ও যেটি স্বর্গীয় সংগঠন সম্বন্ধে আমাদের অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করতে পারে। এছাড়া সেই অনুপ্রাণিত বাক্য আমাদের চিন্তাধারা ও জীবনের পথকে সরল রাখার জন্য পরিচালনাকারী নীতিগুলিও প্রদান করে। কিন্তু, বিচক্ষণতা অনুসন্ধান করা এবং যিহোবার ব্যবস্থার প্রতি উপলব্ধিবোধ গড়ে তোলার জন্য আমাদের অবশ্যই প্রচেষ্টা করতে হবে। আর তা আমরা ব্যক্তিগত অধ্যয়ন এবং সেইসঙ্গে প্রার্থনা ও ধ্যানের মাধ্যমে করতে পারি।—রোমীয় ১২:১২; ফিলিপীয় ৪:৬; ২ তীমথিয় ৩:১৫-১৭.
প্রত্যক্ষ করার জন্য অধ্যয়ন
৭. (ক) ব্যক্তিগত বাইবেল অধ্যয়ন সম্বন্ধে কয়েকজনের হয়ত কী সমস্যা থাকতে পারে? (খ) কেন বাইবেল অধ্যয়ন প্রচেষ্টার যোগ্য?
৭ অনেকের কাছেই ব্যক্তিগত অধ্যয়ন অপরিহার্যভাবে আনন্দদায়ক বিষয় নয়, যেমন যারা বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করাকে কখনও উপভোগ করেননি অথবা যাদের তাতে অংশ নেওয়ার সুযোগ কখনও হয়নি। কিন্তু, আমরা যদি যিহোবার সংগঠনকে আমাদের বোধগম্যতার চোখ দিয়ে প্রত্যক্ষ ও উপলব্ধি করতে চাই, তাহলে আমাদের অবশ্যই অধ্যয়ন করার আকাঙ্ক্ষা গড়ে তুলতে হবে। আপনি কি কোন প্রস্তুতি ছাড়া এক সুস্বাদু ভোজ উপভোগ করতে পারেন? একজন প্রধান পাচক অথবা বাবুর্চি আপনাকে বলবেন যে সুস্বাদু ভোজ প্রস্তুত করার জন্য প্রচুর কাজ করতে হয়। কিন্তু, এটি হয়ত আধ ঘন্টা অথবা তার চেয়েও কম সময়ের মধ্যে খেয়ে ফেলা যেতে পারে। অপরপক্ষে, ব্যক্তিগত অধ্যয়নের উপকারগুলি সারা জীবন স্থায়ী হতে পারে। আমরা যখন দেখি যে ব্যক্তিগত অধ্যয়নের মাধ্যমে আমাদের অগ্রগতি হচ্ছে তখন এটি এক অর্জিত রুচি হতে পারে। প্রেরিত পৌল যথার্থই বলেছিলেন যে নিজেদের প্রতি ও আমাদের শিক্ষার প্রতি আমাদের অবিরত মনোযোগ দেওয়া এবং পাঠে নিবিষ্ট থাকা উচিত। এর জন্য অবিরত প্রচেষ্টার প্রয়োজন হলেও উপকারগুলি অনন্তকালীন হতে পারে।—১ তীমথিয় ৪:১৩-১৬.
৮. হিতোপদেশ কোন্ মনোভাব সম্বন্ধে পরামর্শ দিয়ে থাকে?
৮ প্রাচীনকালের একজন বিজ্ঞ ব্যক্তি বলেছিলেন: “বৎস [অথবা কন্যা], তুমি যদি আমার কথা সকল গ্রহণ কর, যদি আমার আজ্ঞা সকল তোমার কাছে সঞ্চয় কর, যদি প্রজ্ঞার দিকে কর্ণপাত কর, যদি বুদ্ধিতে মনোনিবেশ কর; হাঁ, যদি সুবিবেচনাকে আহ্বান কর, যদি বুদ্ধির জন্য উচ্চৈঃস্বর কর; যদি রৌপ্যের ন্যায় তাহার অন্বেষণ কর, গুপ্ত ধনের ন্যায় তাহার অনুসন্ধান কর; তবে সদাপ্রভুর ভয় বুঝিতে পারিবে, ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান প্রাপ্ত হইবে।”—হিতোপদেশ ২:১-৫.
৯. (ক) সোনার মূল্যের সাথে কিভাবে “ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান”-কে তুলনা করা যায়? (খ) যথার্থ জ্ঞান লাভ করার জন্য আমাদের কোন্ সহায়কগুলি প্রয়োজন?
৯ দায়িত্বটি কার আপনি কি তা উপলব্ধি করতে পারেন? ‘যদি কর’ বাক্যাংশটি পুনরাবৃত্ত হয়েছে। আর “যদি গুপ্ত ধনের ন্যায় তাহার অনুসন্ধান কর” অভিব্যক্তিটি লক্ষ্য করুন। সেই খনি-শ্রমিকদের কথা চিন্তা করুন যারা রূপা ও সোনার জন্য বলিভিয়া, মেক্সিকো, দক্ষিণ আফ্রিকা ও অন্যান্য দেশে বহু শতাব্দী ধরে খনি খনন করেন। তারা প্রস্তরখণ্ড খনন করার জন্য গাঁইতি ও বেলচা ব্যবহার করে কঠোর পরিশ্রম করেন যেখান থেকে তারা মূল্যবান ধাতুগুলি পেতে পারেন। তারা সোনাকে এতই মূল্যবান হিসাবে গণ্য করেন যে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্ণিয়ার একটি খনিতে তারা ৫৯১ কিলোমিটার বিস্তৃত এক সুরঙ্গ খনন করেছিলেন, খাড়াভাবে যার গভীরতা ছিল ১.৫ কিলোমিটার—শুধু সোনা পাওয়ার জন্য। কিন্তু, আপনি কি সোনা খেতে পারেন? সোনা পান করতে পারেন? একটি মরুভূমিতে আপনি যখন ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় মারা যাচ্ছেন তখন এটি কি আপনাকে বাঁচিয়ে রাখবে? না, এটির মূল্য কৃত্রিম এবং খেয়ালখুশিমত নির্ধারিত যা সর্বদা পরিবর্তিত হচ্ছে যেমন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিফলিত হয়। তবুও, লোকেরা এর জন্য মৃত্যুবরণ করেছে। তাহলে আধ্যাত্মিক সোনা, “ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান” লাভ করার জন্য আরও কতই না প্রচেষ্টা করা প্রয়োজন? চিন্তা করুন, নিখিলবিশ্বের সার্বভৌম প্রভু, তাঁর সংগঠন এবং তাঁর উদ্দেশ্যগুলি সম্বন্ধীয় জ্ঞান! এই ক্ষেত্রে, আমরা আধ্যাত্মিক গাঁইতি ও বেলচা ব্যবহার করতে পারি। সেগুলি হল বাইবেল-ভিত্তিক প্রকাশনাদি যা যিহোবার বাক্য খনন করতে এবং এর অর্থ বুঝতে আমাদের সাহায্য করে।—ইয়োব ২৮:১২-১৯.
অন্তর্দৃষ্টির জন্য খনন করা
১০. একটি দর্শনে দানিয়েল কী দেখেছিলেন?
১০ যিহোবার স্বর্গীয় সংগঠন বিষয়ক জ্ঞানার্জন শুরু করার জন্য আসুন আমরা কিছু আধ্যাত্মিক খনন করি। এক মুখ্য অন্তর্দৃষ্টির জন্য, আসুন আমরা সিংহাসনে উপবিষ্ট অনেক দিনের বৃদ্ধ সম্বন্ধীয় দানিয়েলের দর্শনের প্রতি মনোযোগ দিই। দানিয়েল লেখেন: “আমি দৃষ্টিপাত করিতে করিতে কয়েকটী সিংহাসন স্থাপিত হইল, এবং অনেক দিনের বৃদ্ধ উপবিষ্ট হইলেন, তাঁহার পরিচ্ছদ হিমানীর ন্যায় শুক্লবর্ণ এবং তাঁহার মস্তকের কেশ বিশুদ্ধ মেষলোমের তুল্য; তাঁহার সিংহাসন অগ্নিশিখাময়, তাহার চক্র সকল জলন্ত অগ্নি। তাঁহার সম্মুখ হইতে অগ্নির স্রোত নির্গত হইয়া বহিতেছিল; সহস্রের সহস্র তাঁহার পরিচর্য্যা করিতেছিল, এবং অযুতের অযুত তাঁহার সম্মুখে দণ্ডায়মান ছিল; বিচার বসিল এবং পুস্তক সকল খোলা হইল।” (দানিয়েল ৭:৯, ১০) যিহোবার পরিচর্যায় রত কারা এই সহস্রের সহস্র? নতুন জগৎ অনুবাদ (ইংরাজি) এর প্রান্তীয় প্রসঙ্গগুলি “গাঁইতি” ও “বেলচা” হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে যা আমাদের গীতসংহিতা ৬৮:১৭ এবং ইব্রীয় ১:১৪ পদের প্রসঙ্গগুলির দিকে পরিচালিত করে। হ্যাঁ, যারা পরিচর্যা করছিলেন তারা হলেন স্বর্গীয় দূতগণ!
১১. ইলীশায়ের বাক্যগুলি বোঝার জন্য দানিয়েলের দর্শন আমাদের কিভাবে সাহায্য করে?
১১ দানিয়েলের বিবরণ বলে না যে তিনি ঈশ্বরের কর্তৃত্বাধীন সকল বিশ্বস্ত দূতেদের দেখেছিলেন। হয়ত আরও লক্ষ লক্ষ দূতেরা আছেন। কিন্তু এখন আমরা নিশ্চিতভাবেই উপলব্ধি করতে পারি যে কেন ইলীশায় বলতে পেরেছিলেন: “উহাদের সঙ্গীদের অপেক্ষা আমাদের সঙ্গী অধিক।” অরাম রাজের সেনাবাহিনী এমনকি যদিও তাতে অবিশ্বস্ত, মন্দ দূতেদের সমর্থন ছিল, যিহোবার স্বর্গীয় বাহিনী তাদের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল!—গীতসংহিতা ৩৪:৭; ৯১:১১.
১২. কিভাবে আপনি দূতেদের সম্বন্ধে আরও বেশি জানতে পারেন?
১২ সম্ভবত আপনি এই দূতেদের সম্বন্ধে আরও বেশি কিছু জানতে চাইবেন, যেমন যিহোবার সেবায় তারা যে ভূমিকা পালন করেন সেই বিষয়ে। দূতের জন্য ব্যবহৃত গ্রীক শব্দটি থেকে আমরা দেখতে পাই যে তারা হলেন বার্তাবাহকগণ কারণ এটির অর্থ “বার্তাবাহক”-ও। কিন্তু, তাদের আরও অনেক কর্তব্য রয়েছে। অতএব, সেটি কী তা খুঁজে পাওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই খনন করতে হবে। আপনার কাছে যদি শাস্ত্রের প্রতি অন্তর্দৃষ্টি (ইংরাজি) প্রকাশনাটি থাকে, তাহলে আপনি “দূতগণ” প্রবন্ধটি অধ্যয়ন করতে অথবা দূতেদের সম্বন্ধে প্রহরীদুর্গ এর পূর্ববর্তী প্রবন্ধগুলি পড়তে পারেন। ঈশ্বরের এই স্বর্গীয় সেবকদের সম্বন্ধে আপনি আরও কত কী জানতে পারেন তা দেখে আপনি বিস্ময়াভিভূত হয়ে পড়বেন এবং তাদের সমর্থনকে আপনি উপলব্ধি করতে পারবেন। (প্রকাশিত বাক্য ১৪:৬, ৭) কিন্তু, ঈশ্বরের স্বর্গীয় সংগঠনে কিছু আত্মিক প্রাণী বিশেষ উদ্দেশ্যগুলি সম্পাদন করেন।
যিশাইয় যা দেখেছিলেন
১৩, ১৪. দর্শনে যিশাইয় কী দেখেছিলেন এবং কিভাবে এটি তাকে প্রভাবিত করেছিল?
১৩ আসুন এখন আমরা যিশাইয়ের দর্শনে কিছু খনন করি। ৬ অধ্যায় ১ থেকে ৭ পদ পড়ার সময়ে আপনার অভিভূত হওয়া উচিত। যিশাইয় বলেন যে তিনি ‘প্রভুকে [“যিহোবাকে,” “NW”] এক . . . সিংহাসনে উপবিষ্ট দেখিলেন’ এবং “তাঁহার নিকটে সরাফগণ দণ্ডায়মান ছিলেন।” তারা যিহোবার প্রতাপ ঘোষণা ও তাঁর পবিত্রতার উচ্চপ্রশংসা করছিলেন। আপনার এমনকি এই বিবরণটি পড়ার দ্বারা প্রভাবিত হওয়া উচিত। যিশাইয়ের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল? “তখন আমি কহিলাম, হায়, আমি [শিওলে] নষ্ট হইলাম, কেননা আমি অশুচি-ওষ্ঠাধর মনুষ্য, এবং অশুচি-ওষ্ঠাধর জাতির মধ্যে বাস করিতেছি; আর আমার চক্ষু রাজাকে, বাহিনীগণের সদাপ্রভুকে দেখিতে পাইয়াছে।” সেই দর্শনের দ্বারা তিনি কতই না অভিভূত হয়েছিলেন! আপনিও কি হন?
১৪ অতএব যিশাইয় কিভাবে এই প্রতাপান্বিত দর্শনের সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে সক্ষম হয়েছিলেন? তিনি ব্যাখ্যা করেন যে একজন সরাফ তার উদ্ধারের জন্য এসেছিলেন এবং বলেছিলেন: “তোমার অপরাধ ঘুচিয়া গেল ও তোমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত হইল।” (যিশাইয় ৬:৭) যিশাইয় ঈশ্বরের করুণার উপর নির্ভর করতে এবং যিহোবার বাক্যের প্রতি মনোযোগ দিতে পেরেছিলেন। এখন, আপনি কি এই উচ্চপদস্থ আত্মিক প্রাণীদের সম্বন্ধে আরও বেশি কিছু জানতে চান না? অতএব আপনাকে অবশ্যই কী করতে হবে? আরও তথ্যের জন্য খনন করুন। সহায়ক হিসাবে আপনি প্রহরীদুর্গ প্রকাশনাদির বর্ণানুক্রমিক সূচি (ইংরাজি) ব্যবহার এবং এটিতে স্পষ্ট তথ্যের বিভিন্ন উৎস সম্বন্ধে যে প্রসঙ্গগুলি রয়েছে তা অনুসরণ করতে পারেন।
যিহিষ্কেল কী দেখেছিলেন?
১৫. কী ইঙ্গিত করে যে যিহিষ্কেলের দর্শন নির্ভরযোগ্য?
১৫ আসুন আমরা আরেক প্রকার আত্মিক সৃষ্টির প্রতি মনোযোগ দিই। বাবিলনে বন্দী থাকাকালে যিহিষ্কেল একটি অনুপ্রাণিত দর্শন লাভ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। আপনার বাইবেলে যিহিষ্কেল ১ অধ্যায়টি খুলে প্রথম তিনটি পদ লক্ষ্য করুন। বিবরণটি কিভাবে শুরু হয়? এটি কি বলে, ‘একদা, এক দূর দেশে . . . ’? না, এটি কোন কাল্পনিক রূপকথা নয়। ১ পদ উল্লেখ করে: “ত্রিংশ বৎসরের চতুর্থ মাসে, মাসের পঞ্চম দিবসে, যখন আমি কবার নদীতীরে নির্ব্বাসিত লোকদের মধ্যে ছিলাম, তখন স্বর্গ খুলিয়া গেল, আর আমি ঈশ্বরীয় দর্শন প্রাপ্ত হইলাম।” এই পদে আপনি কী লক্ষ্য করেন? এটি একটি যথাযথ তারিখ ও একটি নির্দিষ্ট স্থান সম্বন্ধে উল্লেখ করে। এই পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনাটি যিহোয়াখীন রাজার নির্বাসনের পঞ্চম বৎসর, সা.কা.পূ. ৬১৩ সালের প্রতি নির্দেশ করে।
১৬. যিহিষ্কেল কী দেখেছিলেন?
১৬ যিহিষ্কেলের উপরে যিহোবা হস্তার্পণ করেছিলেন, ফলে তিনি একটি বৃহৎ স্বর্গীয় রথে এক সিংহাসনে উপবিষ্ট যিহোবার এক ভীতি উদ্রেককারী দর্শন দেখেছিলেন যে রথটির বড় বড় চাকা ছিল ও তার চারিদিকে চোখ ছিল। এখানে যে বিষয়টি আমাদের আগ্রহ জাগায় তা হল চারটি প্রাণী যারা প্রতিটি চাকার পাশে দণ্ডায়মান। “তাহাদের আকৃতি এই; তাহাদের রূপ মনুষ্যবৎ। আর প্রত্যেকের চারি চারি মুখ ও চারি চারি পক্ষ। . . . তাহাদের মুখের আকৃতি এই; তাহাদের মানুষের মুখ ছিল, আর দক্ষিণদিকে চারিটীর সিংহের মুখ, এবং বামদিকে চারিটীর গোরুর মুখ, আবার চারিটীর ঈগল পক্ষীর মুখ ছিল।”—যিহিষ্কেল ১:৫, ৬, ১০.
১৭. করূবগণের চারটি মুখ কী চিত্রিত করে?
১৭ এই চারটি জীবন্ত প্রাণী কারা ছিলেন? যিহিষ্কেল নিজেই আমাদের জানান যে তারা ছিলেন করূব। (যিহিষ্কেল ১০:১-৩, ১৪) কেন তাদের চারটি করে মুখ ছিল? সার্বভৌম প্রভু যিহোবার চারটি উল্লেখযোগ্য গুণকে চিত্রিত করার জন্য। ঈগলের মুখ দূরদর্শী প্রজ্ঞার এক প্রতীক। (ইয়োব ৩৯:২৭-২৯) গরুর মুখ কী চিত্রিত করেছিল? গলা ও কাঁধের প্রচণ্ড শক্তির দ্বারা একটি লড়াকু ষাঁড় আরোহী সহ ঘোড়াকে শূন্যে তুলে ফেলার জন্য পরিচিত। নিশ্চিতভাবেই, গরুটি যিহোবার অসীম ক্ষমতার এক প্রতীক। সিংহ সাহসী ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। পরিশেষে, মানুষের মুখ যথার্থভাবেই ঈশ্বরের প্রেমকে চিত্রিত করে, কারণ মানুষই হল একমাত্র পার্থিব প্রাণী যারা এই গুণটিকে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে প্রকাশ করতে পারেন।—মথি ২২:৩৭, ৩৯; ১ যোহন ৪:৮.
১৮. কিভাবে প্রেরিত যোহন স্বর্গীয় সংগঠনের প্রতি আমাদের প্রত্যক্ষকরণকে আরও বৃদ্ধি করেন?
১৮ অন্য দর্শনগুলিও রয়েছে যা আমাদের দৃশ্যটিকে সম্পূর্ণ করতে সাহায্য করতে পারে। এটি বাইবেলের বই প্রকাশিত বাক্যে বর্ণিত যোহনের দর্শনগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে। যিহিষ্কেলের মত তিনি যিহোবাকে করূবগণের দ্বারা পরিবেষ্টিত একটি প্রতাপান্বিত সিংহাসনে দেখেন। করূবগণ কী করছেন? তারা যিশাইয় ৬ অধ্যায়ের সরাফগণের ঘোষণার প্রতিধ্বনি করে বলেন: “‘পবিত্র, পবিত্র, পবিত্র প্রভু ঈশ্বর সর্ব্বশক্তিমান্, যিনি ছিলেন, ও যিনি আছেন, ও যিনি আসিতেছেন।’” (প্রকাশিত বাক্য ৪:৬-৮) যোহন সিংহাসনের নিকটে একটি মেষশাবককেও দেখতে পান। সেটি কাকে চিত্রিত করে? ঈশ্বরের মেষশাবক, যীশু খ্রীষ্টকে।—প্রকাশিত বাক্য ৫:১৩, ১৪.
১৯. এই অধ্যয়নের মাধ্যমে, যিহোবার সংগঠন সম্বন্ধে আপনি কী প্রত্যক্ষ করতে পেরেছেন?
১৯ সুতরাং এই দর্শনগুলির মাধ্যমে আমরা কী প্রত্যক্ষ করেছি? স্বর্গীয় সংগঠনের কেন্দ্রবিন্দুতে যিহোবা ঈশ্বর তাঁর সিংহাসনে উপবিষ্ট রয়েছেন এবং তাঁর সঙ্গে মেষশাবক যীশু খ্রীষ্ট আছেন যিনি বাক্য অথবা লোগোস। তারপর আমরা এক স্বর্গীয় দূত বাহিনী দেখতে পেয়েছি যার অন্তর্ভুক্ত সরাফ ও করূবগণ। তারা যিহোবার উদ্দেশ্যগুলি সম্পাদনকারী একটি বৃহৎ, ঐক্যবদ্ধ সংগঠনের অংশ। আর সেই উদ্দেশ্যগুলির একটি হল এই শেষকালে জগদ্ব্যাপী সুসমাচার প্রচার করা।—মার্ক ১৩:১০; যোহন ১:১-৩; প্রকাশিত বাক্য ১৪:৬, ৭.
২০. পরবর্তী প্রবন্ধে কোন্ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে?
২০ পরিশেষে, পৃথিবীতে যিহোবার সাক্ষীগণ আছেন যারা সার্বভৌম প্রভুর ইচ্ছা কিভাবে পালন করা যায় তা জানার জন্য তাদের কিংডম হলগুলিতে মিলিত হন। নিশ্চিতভাবেই, এখন আমরা উপলব্ধি করতে পারি যে শয়তান ও সত্যের শত্রুদের সঙ্গে যারা রয়েছেন তাদের চেয়ে আমাদের সঙ্গে আরও বেশি জন আছেন। কিন্তু যে প্রশ্নটি থেকে যায় তা হল, রাজ্যের সুসমাচার প্রচারের সঙ্গে স্বর্গীয় সংগঠন কিভাবে সম্বন্ধযুক্ত? পরবর্তী প্রবন্ধ এটি এবং অন্য বিষয়গুলি পরীক্ষা করবে।
পুনরালোচনার জন্য প্রশ্নগুলি
◻ যিহোবার সংগঠনকে উপলব্ধি করার জন্য আমাদের অবশ্যই কী প্রত্যক্ষ করতে হবে?
◻ ইলীশায়ের দাসের কোন্ অভিজ্ঞতা হয়েছিল এবং কিভাবে ভাববাদী তাকে উৎসাহিত করেছিলেন?
◻ ব্যক্তিগত অধ্যয়নকে আমাদের কিভাবে দেখা উচিত?
◻ কিভাবে দানিয়েল, যিশাইয় এবং যিহিষ্কেল স্বর্গীয় সংগঠন সম্বন্ধে পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দেন?
[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
ব্যক্তিগত অধ্যয়নের উপকারগুলি উত্তমরূপে প্রস্তুতকৃত ভোজের চেয়ে অনেক বেশি দীর্ঘমেয়াদী
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
স্বর্গীয় বাহিনীর একটি দর্শন ছিল ইলীশায়ের প্রার্থনার প্রতি যিহোবার উত্তর