ঈশ্বরের রাজ্য আসার পর কী দূর হয়ে যাবে?
“জগৎ ও তাহার অভিলাষ বহিয়া যাইতেছে; কিন্তু যে ব্যক্তি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, সে অনন্তকালস্থায়ী।”—১ যোহন ২:১৭.
১, ২. (ক) কীভাবে এই দুষ্ট জগৎকে এমন একজন অপরাধীর সঙ্গে তুলনা করা যায়, যাকে শীঘ্রই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।) (খ) এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর স্বর্গ ও পৃথিবীর প্রত্যেকেই কেমন অনুভব করবে?
এই দৃশ্যটা কল্পনা করুন। একজন কুখ্যাত অপরাধীকে একটা জেলের বারান্দা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং তার সঙ্গে থাকা রক্ষীরা চিৎকার করে বলছে, ‘দেখো, মৃত ব্যক্তি হেঁটে যাচ্ছে!’ কেন তারা এইরকম কথা বলছে? যদিও সেই অপরাধী এখনও বেঁচে আছেন এবং দেখতে বেশ সুস্থসবল কিন্তু তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে এবং শীঘ্রই সেই দণ্ড কার্যকর করা হবে। এটা এমন যেন তিনি ইতিমধ্যেই মারা গিয়েছেন।a
২ বর্তমানে আমরা যে-দুষ্ট জগতে বাস করছি, সেটাকে সেই অপরাধীর সঙ্গে তুলনা করা যায়, যাকে শীঘ্রই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। বাইবেল বলে: ‘জগৎ বহিয়া যাইতেছে।’ (১ যোহন ২:১৭) যিহোবা নিজে স্থির করেছেন যে, এই বিধিব্যবস্থাকে শীঘ্রই ধ্বংস করা হবে, তাই নিঃসন্দেহে এটা ধ্বংস হবেই। কিন্তু, এই বিধিব্যবস্থার ধ্বংস এবং সেই অপরাধীর মৃত্যুদণ্ডের মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। কেউ কেউ মনে করতে পারে, সেই অপরাধীর বিচার অন্যায্য ছিল আর তাই তারা হয়তো এই আশা নিয়ে প্রতিবাদ করতে পারে যে, তার মৃত্যুদণ্ড বাতিল করা হবে। কিন্তু, যিহোবা হলেন সিদ্ধ বা নিখুঁত বিচারক এবং এই বিধিব্যবস্থাকে ধ্বংস করার বিষয়ে তাঁর সিদ্ধান্ত পুরোপুরি ন্যায্য। (দ্বিতীয়. ৩২:৪) এই দণ্ড কোনোভাবেই বাতিল হবে না। এই বিধিব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর স্বর্গ ও পৃথিবীর প্রত্যেকেই স্বীকার করবে, যিহোবার বিচার সঠিক। প্রত্যেকে প্রচুর স্বস্তি লাভ করবে!
৩. ঈশ্বরের রাজ্য আসার পর কোন চারটে সমস্যা দূর হয়ে যাবে?
৩ এই ‘জগতের’ অন্তর্ভুক্ত কী, যা “বহিয়া যাইতেছে”? এর অন্তর্ভুক্ত এমন সমস্ত মন্দ বিষয়, যেগুলো বর্তমানে জীবনের একটা অংশ হয়ে উঠেছে। এগুলো সব শীঘ্রই দূর হয়ে যাবে। এটা আসলে ‘রাজ্যের সুসমাচারের’ একটা অংশ। (মথি ২৪:১৪) এই প্রবন্ধে আমরা চারটে সমস্যা নিয়ে আলোচনা করব, যেগুলো ঈশ্বরের রাজ্য আসার পর দূর হয়ে যাবে: দুষ্ট লোক, কলুষিত সংগঠন, অন্যায় কাজ ও মন্দ পরিস্থিতি। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে আমরা শিখব (১) সেগুলো এখন কীভাবে আমাদের প্রভাবিত করে, (২) যিহোবা সেগুলোকে কী করবেন এবং (৩) তিনি সেগুলো দূর করে দেওয়ার পর কী থাকবে।
দুষ্ট লোক
৪. দুষ্ট লোকেরা এখন আমাদের কীভাবে প্রভাবিত করে?
৪ দুষ্ট লোকেরা এখন আমাদের কীভাবে প্রভাবিত করে? প্রেরিত পৌল বলেছিলেন, শেষকালে “বিষম সময়” উপস্থিত হবে। এরপর, তিনি আরও বলেছিলেন: “দুষ্ট লোকেরা ও বঞ্চকেরা . . . উত্তর উত্তর কুপথে অগ্রসর হইবে।” (২ তীম. ৩:১-৫, ১৩) আপনি কি এই ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপূর্ণতা দেখতে পাচ্ছেন? আমাদের মধ্যে অনেকেই দুষ্ট লোকেদের, যেমন নিষ্ঠুর উত্ত্যক্তকারী, বর্ণবিদ্বেষী ও কুখ্যাত অপরাধীদের শিকার হয়েছে। এই দুষ্ট লোকেদের মধ্যে কেউ কেউ নিজেদের খারাপ কাজগুলো গোপন করার চেষ্টা করে না। আবার অন্যেরা লোকেদের সাহায্য করার ভান করে, তবে তারা আসলে দুষ্ট। কিন্তু, আমরা যদি কোনো অপরাধের শিকার না-ও হই, তবুও আমরা দুষ্ট লোকেদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকি। আমরা যখন শুনি, শিশুরা, বয়স্ক লোকেরা ও অসহায় ব্যক্তিরা নিষ্ঠুর আচরণের শিকার হয়েছে, তখন আমরা প্রচণ্ড দুঃখ পাই। এই দুষ্ট লোকেদের আচরণ বলতে গেলে পশুর মতো ও পৈশাচিক। (যাকোব ৩:১৫) আনন্দের বিষয় হল, যিহোবার বাক্য আমাদের আশা প্রদান করে।
৫. (ক) দুষ্ট লোকেদের এখনও কোন সুযোগ রয়েছে? (খ) সেই লোকেদের কী হবে, যারা পরিবর্তিত হতে চায় না?
৫ যিহোবা কী করবেন? এই মুহূর্তে যিহোবা দুষ্ট লোকেদের পরিবর্তিত হওয়ার সুযোগ দিচ্ছেন। (যিশা. ৫৫:৭) যদিও এই বিধিব্যবস্থাকে শীঘ্রই ধ্বংস করা হবে কিন্তু এখনও তাদের চূড়ান্ত বিচার করা হয়নি। তা হলে, সেই লোকেদের কী হবে, যারা পরিবর্তিত হতে চায় না এবং যারা একেবারে মহাক্লেশের সময় পর্যন্ত এই বিধিব্যবস্থাকে সমর্থন করে চলবে? যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছেন, তিনি পৃথিবী থেকে সমস্ত দুষ্ট লোককে দূর করে দেবেন। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৩৭:১০.) বর্তমানে, অনেক ব্যক্তি তাদের খারাপ কাজগুলোকে গোপন করার চেষ্টা করে আর প্রায় সময়ই তারা তাদের কাজগুলোর জন্য কোনো শাস্তি পায় না। (ইয়োব ২১:৭, ৯) কিন্তু, বাইবেল আমাদের মনে করিয়ে দেয়: “মানুষের পথে তাঁহার [ঈশ্বরের] দৃষ্টি আছে; তিনি তাহার সমস্ত পাদসঞ্চার দেখেন; এমন অন্ধকার কি মৃত্যুচ্ছায়া নাই, যেখানে অধর্ম্মাচারিগণ লুকাইতে পারে।” (ইয়োব ৩৪:২১, ২২) তাই, যিহোবার কাছে কোনো কিছুই গোপন করা যায় না। তিনি দুষ্ট লোকেদের সমস্ত কাজই দেখতে পান। আরমাগিদোনের পরে আমরা হয়তো তাদের খুঁজব, কিন্তু তাদের আর দেখতে পাব না। তারা চিরকালের জন্য দূর হয়ে যাবে!—গীত. ৩৭:১২-১৫.
৬. দুষ্ট লোকেরা দূর হয়ে যাওয়ার পর কারা থাকবে এবং কেন এটা একটা সুখবর?
৬ দুষ্ট লোকেরা দূর হয়ে যাওয়ার পর কারা থাকবে? যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছেন, “মৃদুশীলেরা দেশের” বা পৃথিবীর “অধিকারী হইবে, এবং শান্তির বাহুল্যে আমোদ করিবে।” পরে সেই একই গীতে আমরা পড়ি, “ধার্ম্মিকেরা দেশের” বা পৃথিবীর “অধিকারী হইবে, তাহারা নিয়ত তথায় বাস করিবে।” (গীত. ৩৭:১১, ২৯) এই ‘মৃদুশীল’ ও ‘ধার্ম্মিক’ ব্যক্তি কারা? মৃদুশীল ব্যক্তিরা হল সেই নম্র লোকেরা, যারা যিহোবার কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করে এবং তাঁর বাধ্য হয়। আর ধার্মিক ব্যক্তিরা হল সেই লোকেরা, যারা ঈশ্বরের চোখে যা সঠিক, তা করতে ভালোবাসে। বর্তমানে এই জগতে ধার্মিক লোকেদের চেয়ে দুষ্ট লোকেদের সংখ্যা আরও বেশি। কিন্তু, নতুন জগতে কেবল মৃদুশীল ও ধার্মিক ব্যক্তিরা থাকবে এবং তারা পৃথিবীকে এক পরমদেশে পরিণত করবে!
কলুষিত সংগঠন
৭. কলুষিত সংগঠনগুলো এখন আমাদের কীভাবে প্রভাবিত করে?
৭ কলুষিত সংগঠনগুলো এখন আমাদের কীভাবে প্রভাবিত করে? বর্তমানে এই জগতে ঘটে চলা বেশিরভাগ মন্দতার জন্য ব্যক্তি-বিশেষরা নয় বরং বিভিন্ন সংগঠন দায়ী। ধর্মীয় সংগঠনগুলো লক্ষ লক্ষ লোককে প্রতারিত করছে। উদাহরণ স্বরূপ, তারা ঈশ্বর সম্বন্ধে ভুল তথ্য তুলে ধরে, বাইবেল নির্ভরযোগ্য নয় এমন কথা বলে থাকে এবং লক্ষ লক্ষ লোককে পৃথিবী ও মানবজাতির ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে ভ্রান্ত ধারণা দেয়। কলুষিত সরকারগুলো যুদ্ধ ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় মদত জোগায় এবং দরিদ্র ও অসহায় ব্যক্তিদের অত্যাচার করে। এই সরকারগুলো পক্ষপাতিত্ব করার অথবা ঘুস নেওয়ার মাধ্যমে আরও ধনী ও ক্ষমতাবান হয়ে উঠছে। লোভী সংস্থাগুলোর কারণে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে এবং প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া, তারা লোকেদের নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে যাতে অল্পসংখ্যক লোক ধনী হতে পারে। স্পষ্টতই, বর্তমান জগতে ঘটে চলা বেশিরভাগ দুঃখকষ্টের জন্য এই কলুষিত সংগঠনগুলোই দায়ী।
৮. যে-সংগঠনগুলোকে বর্তমানে অনেকের কাছে শক্তিশালী বলে মনে হয়, সেগুলোর কী হবে বলে বাইবেল জানায়?
৮ যিহোবা কী করবেন? রাজনৈতিক শক্তিগুলো যখন সমস্ত মিথ্যা ধর্মীয় সংগঠনের উপর আক্রমণ নিয়ে আসবে, তখন মহাক্লেশ শুরু হবে। বাইবেলে এই ধর্মীয় সংগঠনগুলোকে একজন বেশ্যা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যার নাম মহতী বাবিল। (প্রকা. ১৭:১, ২, ১৬; ১৮:১-৪) সেই ধর্মীয় সংগঠনগুলোকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেওয়া হবে। কিন্তু, অন্যান্য সমস্ত কলুষিত সংগঠনের কী হবে? বাইবেল সেগুলোকে পর্বত ও দ্বীপের সঙ্গে তুলনা করে কারণ সেগুলোকে শক্তিশালী ও দৃঢ় বলে মনে হবে। (পড়ুন, প্রকাশিত বাক্য ৬:১৪.) কিন্তু এটি আরও বলে, ঈশ্বরের রাজ্যকে সমর্থন করে না এমন সমস্ত সরকার ও সংগঠনকে ধ্বংস করে দেওয়া হবে। এটা মহাক্লেশের চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে ঘটবে। (যির. ২৫:৩১-৩৩) এরপর, আর কোনো কলুষিত সংগঠন থাকবে না!
৯. কেন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, নতুন পৃথিবীকে সুসংগঠিত করা হবে?
৯ কলুষিত সংগঠনগুলোকে দূর করে দেওয়ার পর কী থাকবে? আরমাগিদোনের পর পৃথিবীতে কি কোনো সংগঠন থাকবে? বাইবেল বলে: “তাঁহার প্রতিজ্ঞা অনুসারে আমরা এমন নূতন আকাশমণ্ডলের ও নূতন পৃথিবীর অপেক্ষায় আছি, যাহার মধ্যে ধার্ম্মিকতা বসতি করে।” (২ পিতর ৩:১৩) পুরোনো আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী বলতে কলুষিত সরকার ও সেগুলোর নিয়ন্ত্রণাধীন লোকেদের বোঝায়। এগুলো দূর হয়ে যাওয়ার পর কী থাকবে? ‘নূতন আকাশমণ্ডল ও নূতন পৃথিবী।’ নতুন আকাশমণ্ডল এক নতুন সরকারকে অর্থাৎ সেই রাজ্যকে নির্দেশ করে, যে-রাজ্য যিশু খ্রিস্ট ও তাঁর ১,৪৪,০০০ জন সহ-শাসককে নিয়ে গঠিত। আর নতুন পৃথিবী সেই লোকেদের নির্দেশ করে, যাদের উপর ঈশ্বরের রাজ্য শাসন করবে। যিশু ও তাঁর সহ-শাসকরা যিহোবা ঈশ্বরকে একেবারে নিখুঁতভাবে অনুকরণ করবে, যিনি শৃঙ্খলার ঈশ্বর। (১ করি. ১৪:৩৩) তাই, ‘নূতন পৃথিবীকে’ সুসংগঠিত করা হবে। সেখানে বিভিন্ন বিষয়ের যত্ন নেওয়ার জন্য উত্তম পুরুষেরা থাকবে। (গীত. ৪৫:১৬) এই পুরুষেরা খ্রিস্ট এবং ১,৪৪,০০০ জন ব্যক্তির কাছ থেকে নির্দেশনা লাভ করবে। সেই সময়ের কথা কল্পনা করে দেখুন, যখন সমস্ত কলুষিত সংগঠন দূর হয়ে গিয়ে কেবল একটা একতাবদ্ধ সংগঠন থাকবে, যা কখনো কলুষিত হবে না!
অন্যায় কাজ
১০. আপনি যেখানে বাস করেন, সেখানে কোন ধরনের অন্যায় কাজ খুবই সাধারণ এবং আপনি ও আপনার পরিবার কীভাবে সেগুলোর দ্বারা প্রভাবিত হন?
১০ অন্যায় কাজগুলো এখন আমাদের কীভাবে প্রভাবিত করে? আমরা এমন এক জগতে বাস করছি, যেখানে অনৈতিকতা, অসততা ও চরম দৌরাত্ম্য খুবই সাধারণ বিষয়। জগতের আমোদপ্রমোদের মধ্যে এই বিষয়গুলোকে আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরা হয় আর অন্যদিকে ন্যায় ও অন্যায় সম্বন্ধে যিহোবার মানদণ্ড নিয়ে ঠাট্টা করা হয়। (যিশা. ৫:২০) বিশেষ করে বাবা-মায়েদের এই ধরনের মন্দ প্রভাবের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে, যাতে তারা তাদের সন্তানদের রক্ষা করতে পারে। আসলে, ঈশ্বরের মানগুলোর প্রতি সম্মান দেখায় না এমন এক জগতে যিহোবার সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ককে সুরক্ষিত রাখার জন্য সমস্ত সত্য খ্রিস্টানকেই প্রাণপণ প্রচেষ্টা করতে হবে।
১১. সদোম ও ঘমোরার উপর যিহোবার বিচার থেকে আমরা কী শিখি?
১১ অন্যায় কাজগুলোকে যিহোবা কী করবেন? সদোম ও ঘমোরা নগরে ঘটে চলা মন্দ বিষয়গুলোর প্রতি যিহোবা কী করেছিলেন, তা একটু বিবেচনা করুন। (পড়ুন, ২ পিতর ২:৬-৮.) লোট একজন ধার্মিক ব্যক্তি ছিলেন এবং তিনি ও তার পরিবার তাদের আশেপাশের লোকেদের খারাপ কাজগুলোর কারণে প্রচুর কষ্ট ভোগ করেছিলেন। সেখানে ঘটে চলা অন্যায় কাজগুলো দূর করার জন্য যিহোবা সেই পুরো এলাকাটা ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। কিন্তু একইসময়ে, তিনি আমাদের সময়ের দুষ্ট লোকেদের জন্য সেটা “দৃষ্টান্তস্বরূপ” করেছিলেন। ঠিক যেমন যিহোবা সেই সময় সমস্ত অনৈতিক কাজ দূর করে দিয়েছিলেন, একইভাবে তিনি এই বর্তমান বিধিব্যবস্থা ধ্বংস করার সময় সেই কাজগুলো দূর করবেন।
১২. এই বিধিব্যবস্থা দূর হয়ে যাওয়ার পর আপনি কোন কাজগুলো করার জন্য অপেক্ষা করে আছেন?
১২ অন্যায় কাজগুলো দূর করে দেওয়ার পর কী থাকবে? নতুন জগতে আমরা বিভিন্ন রোমাঞ্চকর কাজে ব্যস্ত থাকব। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমরা পৃথিবীকে পরমদেশে পরিণত করব এবং নিজেদের ও আমাদের প্রিয়জনদের জন্য গৃহ নির্মাণ করব। এ ছাড়া, আমরা লক্ষ লক্ষ পুনরুত্থিত ব্যক্তিকে স্বাগত জানব এবং তাদের যিহোবা ও সেইসঙ্গে তিনি মানুষের জন্য যা-কিছু করেছেন, সেগুলো সম্বন্ধে শিক্ষা দেব। (যিশা. ৬৫:২১, ২২; প্রেরিত ২৪:১৫) সেই সময়ে, আমরা এমন কাজে ব্যস্ত থাকব, যা আমাদের জন্য আনন্দ ও সেইসঙ্গে যিহোবার জন্য প্রশংসা নিয়ে আসবে!
মন্দ পরিস্থিতি
১৩. এদনে বিদ্রোহের পরিণতি কী হয়েছে?
১৩ মন্দ পরিস্থিতি এখন আমাদের কীভাবে প্রভাবিত করে? দুষ্ট লোক, কলুষিত সংগঠন এবং অন্যায় কাজে পরিপূর্ণ এই জগতের কারণে এমন এক মন্দ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যা বসবাসের অনুপযোগী। আমরা সবাই যুদ্ধ, দরিদ্রতা, বর্ণবিদ্বেষ ও মৃত্যুর মতো বিভিন্ন বিষয়ের কারণে কষ্ট ভোগ করছি। এই মন্দ পরিস্থিতি সেই সময় শুরু হয়েছিল, যখন শয়তান, আদম ও হবা সর্বশক্তিমান যিহোবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। আর তাদের এই বিদ্রোহের কারণে আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।
১৪. মন্দ পরিস্থিতিকে যিহোবা কী করবেন?
১৪ মন্দ পরিস্থিতিকে যিহোবা কী করবেন? কিছু উদাহরণ বিবেচনা করুন। যিহোবা সমস্ত যুদ্ধ দূর করার প্রতিজ্ঞা করেছেন। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৪৬:৮, ৯.) তিনি অসুস্থতা দূর করে দেবেন। (যিশা. ৩৩:২৪) তিনি মৃত্যুকে অনন্তকালের জন্য বিনষ্ট করবেন। (যিশা. ২৫:৮) তিনি দরিদ্রতা দূর করবেন। (গীত. ৭২:১২-১৬) আর যিহোবা অন্যান্য সমস্ত মন্দ পরিস্থিতি দূর করবেন, যেগুলো বর্তমানে আমাদের জীবন দুর্দশাগ্রস্ত করে তোলে। তিনি এমনকী শয়তান ও তার মন্দদূতদের খারাপ প্রভাবও দূর করে দেবেন!—ইফি. ২:২.
যুদ্ধ, অসুস্থতা এবং মৃত্যু নেই, এমন এক জগতের কথা কল্পনা করুন! (১৫ অনুচ্ছেদ দেখুন)
১৫. এমন কিছু বিষয় কী, যেগুলো আরমাগিদোনের পর চিরকালের জন্য দূর হয়ে যাবে?
১৫ যুদ্ধ, অসুস্থতা এবং মৃত্যু নেই, এমন এক জগতে বাস করা কেমন হবে, তা একটু কল্পনা করে দেখুন! সেখানে কোনো সৈন্যবাহিনী, অস্ত্রশস্ত্র অথবা যুদ্ধের স্মরণস্তম্ভ থাকবে না। আমাদের কোনো হাসপাতাল, ডাক্তার, নার্স, মর্গ অথবা কবরস্থানের প্রয়োজন হবে না। সেখানে কোনো অপরাধ থাকবে না আর তাই আমাদের জন্য কোনো পুলিশ, সিকিউরিটি অ্যালার্ম অথবা এমনকী তালা-চাবিরও প্রয়োজন হবে না! এই সমস্ত মন্দ পরিস্থিতি, যেগুলোর কারণে আমরা এত উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি, চিরকালের জন্য দূর হয়ে যাবে।
১৬, ১৭. (ক) যারা আরমাগিদোন থেকে রক্ষা পাবে, তারা কেমন অনুভব করবে? উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন। (খ) কীভাবে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, এই বিধিব্যবস্থার ধ্বংসের সময় আমরা রক্ষা পাব?
১৬ মন্দ পরিস্থিতি দূর করে দেওয়ার পর জীবন কেমন হবে? এই বিষয়টা কল্পনা করা সহজ নয়। আমরা মন্দ পরিস্থিতিতে এত দীর্ঘসময় ধরে বাস করছি যে, আমরা হয়তো এমনকী লক্ষও করি না, সেগুলো আমাদের উপর কতটা চাপ সৃষ্টি করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যে-লোকেরা এক ব্যস্ততম রেল স্টেশনের কাছাকাছি এলাকায় বাস করে, তারা হয়তো আর সেখানকার আওয়াজের বিষয়টা খুব-একটা লক্ষ করে না। আর যে-লোকেরা আবর্জনা ফেলার কাছাকাছি এলাকায় বাস করে, তারা হয়তো আর সেখানকার দুর্গন্ধের বিষয়টা লক্ষ করে না। কিন্তু, যিহোবা যখন সমস্ত মন্দ পরিস্থিতি দূর করে দেবেন, তখন আমরা প্রচুর স্বস্তি লাভ করব!
১৭ এখন আমরা যে-সমস্ত চাপের মুখোমুখি হই, সেগুলো দূর হয়ে যাওয়ার পর আমরা কেমন অনুভব করব? গীতসংহিতা ৩৭:১১ পদ বলে: “মৃদুশীলেরা . . . শান্তির বাহুল্যে আমোদ করিবে।” এটা জানা কতই-না সান্ত্বনাদায়ক যে, যিহোবা আমাদের জন্য এটাই চান! এই চাপপূর্ণ সময়ে যিহোবা ও তাঁর সংগঠনের সান্নিধ্যে থাকার জন্য যথাসাধ্য করুন। ভবিষ্যতের বিষয়ে আপনার আশা খুবই মূল্যবান। তাই, সেই আশা সম্বন্ধে গভীরভাবে চিন্তা করুন, সেটাকে আপনার কাছে বাস্তব করে তুলুন এবং অন্যদেরও সেই বিষয়ে জানান। (১ তীম. ৪:১৫, ১৬; ১ পিতর ৩:১৫) এভাবে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারবেন, এই বিধিব্যবস্থার ধ্বংসের সময় আপনি রক্ষা পাবেন এবং এরপর চিরকাল সুখে থাকবেন!
a এই অনুচ্ছেদে এমন একটা প্রথা সম্বন্ধে বর্ণনা করা হয়েছে, যা বহু বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কিছু জায়গার জেলগুলোতে সাধারণ ছিল।