ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w০১ ১১/১৫ পৃষ্ঠা ১০-১৫
  • যিহোবা আমাদেরকে দিন গণনা করতে শিক্ষা দেন

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • যিহোবা আমাদেরকে দিন গণনা করতে শিক্ষা দেন
  • ২০০১ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • যিহোবা—আমাদের “বাসস্থান”
  • যিহোবা সবসময় আমাদেরকে সাহায্য করার জন্য তৈরি
  • যিহোবা আমাদেরকে “দিন গণনা করিতে” সাহায্য করেন
  • যিহোবার আশীর্বাদ আনন্দ নিয়ে আসে
  • আসুন আমরা আমাদের দিন গণনা করে চলি
  • সময়—এত অল্প কেন?
    ১৯৯৯ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • গীতসংহিতা বইয়ের তৃতীয় এবং চতুর্থ বিভাগের প্রধান বিষয়গুলো
    ২০০৬ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • যিহোবা—আমাদের বাসস্থান
    ২০১৩ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • কীভাবে আমরা আমাদের দিনকে যিহোবার সামনে গণনা করতে পারি?
    ২০০২ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
আরও দেখুন
২০০১ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w০১ ১১/১৫ পৃষ্ঠা ১০-১৫

যিহোবা আমাদেরকে দিন গণনা করতে শিক্ষা দেন

“এরূপে আমাদের দিন গণনা করিতে শিক্ষা দেও, যেন আমরা প্রজ্ঞার চিত্ত লাভ করি।”—গীতসংহিতা ৯০:১২.

১. “দিন গণনা করিতে” শিক্ষা দেওয়ার জন্য যিহোবার কাছে সাহায্য চাওয়া কেন উপযুক্ত?

যিহোবা ঈশ্বর আমাদের সৃষ্টিকর্তা ও জীবনদাতা। (গীতসংহিতা ৩৬:৯; প্রকাশিত বাক্য ৪:১১) তাই, আমাদের জীবনের বছরগুলোকে আমরা কীভাবে বুদ্ধির সঙ্গে কাজে লাগাতে পারি, তা তাঁর চেয়ে ভাল আর কেউই শিক্ষা দিতে পারেন না। অতএব, উপযুক্ত কারণেই ঈশ্বরের কাছে গীতরচক অনুরোধ করেছিলেন: “এরূপে আমাদের দিন গণনা করিতে শিক্ষা দেও, যেন আমরা প্রজ্ঞার চিত্ত লাভ করি।” (গীতসংহিতা ৯০:১২) আর ৯০ গীতে এই একান্ত অনুরোধটা রয়েছে, যা আমাদের মন দিয়ে বিবেচনা করা উচিত। কিন্তু, প্রথমে আসুন ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত এই গানটা আমরা সংক্ষেপে আলোচনা করি।

২. (ক) গীতসংহিতা ৯০ অধ্যায় কে রচনা করেছেন আর এটা সম্ভবত কখন লেখা হয়েছে? (খ) জীবন সম্বন্ধে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর ৯০ গীত কীভাবে ছাপ ফেলবে?

২ গীতসংহিতা ৯০ অধ্যায়ের ওপরে লেখা আছে, “ঈশ্বরের লোক মোশির প্রার্থনা।” এই গীতে যেহেতু মানুষের ক্ষণস্থায়ী জীবনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে, তাই এটা সম্ভবত ইস্রায়েলীয়রা মিশরের দাসত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ও ৪০ বছর ধরে প্রান্তরে ঘুরে বেড়ানোর সময় লেখা হয়েছিল, যে সময়ে হাজার হাজার লোকেদের মৃত্যুর মাধ্যমে এক অবিশ্বাসী বংশের লোপ হয়েছিল। (গণনাপুস্তক ৩২:৯-১৩) কিন্তু এটা যখনই হোক না কেন, গীতসংহিতা ৯০ অধ্যায় থেকে বোঝা যায় যে অসিদ্ধ মানুষের জীবন খুবই ছোট। তাই এটা পরিষ্কার যে, আমাদের মূল্যবান দিনগুলোকে বুদ্ধির সঙ্গে কাজে লাগাতে হবে।

৩. গীতসংহিতা ৯০ অধ্যায়ে কোন্‌ কোন্‌ মূল বিষয় রয়েছে?

৩ গীতসংহিতা ৯০ অধ্যায় ১ থেকে ৬ পদে যিহোবাকে আমাদের চিরস্থায়ী বাসস্থান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ৭ থেকে ১২ পদ দেখায় যে, আমাদের জীবনের এই দ্রুত কেটে যাওয়া বছরগুলোকে আমরা কীভাবে তাঁর কাছে গ্রহণযোগ্য এক উপায়ে কাজে লাগাতে পারি। আর ১৩ থেকে ১৭ পদে প্রকাশ করা হয়েছে, আমরা মনপ্রাণ দিয়ে যিহোবার প্রেমপূর্ণ দয়া ও তাঁর আশীর্বাদ পেতে চাই। অবশ্য, এই গীত যিহোবার দাস হিসেবে আমাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলছে না। তবুও, এখানে প্রার্থনার আকারে হৃদয়ের যে অনুভূতি ব্যক্ত হয়েছে, তাতে আমাদের মনোযোগ দেওয়া উচিত। অতএব, আসুন আমরা ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গীকৃত ব্যক্তিদের দৃষ্টিতে গীতসংহিতা ৯০ অধ্যায়টা মন দিয়ে বিবেচনা করি।

যিহোবা—আমাদের “বাসস্থান”

৪-৬. কীভাবে যিহোবা আমাদের “বাসস্থান”?

৪ গীতরচক এই কথা বলে শুরু করেন: “হে প্রভু, তুমিই আমাদের বাসস্থান হইয়া আসিতেছ, পুরুষে পুরুষে হইয়া আসিতেছ। পর্ব্বতগণের জন্ম হইবার পূর্ব্বে, তুমি পৃথিবী ও জগৎকে [“প্রসব বেদনায়,” NW] জন্ম দিবার পূর্ব্বে, এমন কি, অনাদিকাল হইতে অনন্তকাল তুমিই ঈশ্বর।”—গীতসংহিতা ৯০:১, ২.

৫ ‘সনাতন ঈশ্বর’ যিহোবা হলেন আমাদের “বাসস্থান”—এক আধ্যাত্মিক আশ্রয়। (রোমীয় ১৬:২৬) আমরা নিরাপদ বোধ করি কারণ “প্রার্থনা-শ্রবণকারী” হিসেবে তিনি সবসময় আমাদের সাহায্য করতে চান। (গীতসংহিতা ৬৫:২) আমরা তাঁর প্রিয় পুত্রের মাধ্যমে আমাদের উদ্বেগগুলোকে আমাদের স্বর্গীয় পিতার কাছে অর্পণ করি বলে ‘সমস্ত চিন্তার অতীত যে ঈশ্বরের শান্তি তাহা আমাদের হৃদয় ও মন রক্ষা করে।’—ফিলিপীয় ৪:৬, ৭; মথি ৬:৯; যোহন ১৪:৬, ১৪.

৬ আমরা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে নিরাপত্তা বোধ করি কারণ রূপক অর্থে যিহোবা আমাদের “বাসস্থান।” এছাড়াও তিনি আধ্যাত্মিক আশ্রয়স্থল হিসেবে ‘অন্তরাগারের’—যা তাঁর লোকেদের মণ্ডলীগুলোকে বোঝায়—ব্যবস্থা করেন, যেখানে প্রেমময় পালকরা আমাদের নিরাপত্তার জন্য বিরাট অবদান রাখেন। (যিশাইয় ২৬:২০: ৩২:১, ২; প্রেরিত ২০:২৮, ২৯) এছাড়াও আমরা কেউ কেউ, বহু বছর ধরে যিহোবার সেবা করে চলেছে এমন পরিবার থেকে এসেছি এবং ব্যক্তিগতভাবে লক্ষ্য করেছি যে, তিনি ‘পুরুষে পুরুষে বাসস্থান’ হয়ে এসেছেন।

৭. কোন্‌ অর্থে পর্বতগুলোর “জন্ম” হয়েছিল এবং পৃথিবীকে “প্রসব বেদনায়” জন্ম দেওয়া হয়েছিল?

৭ পর্বতগুলো জন্ম হওয়ার আগে অথবা পৃথিবীকে “প্রসব বেদনায়” জন্ম দেবার আগে থেকেই যিহোবার অস্তিত্ব ছিল। মানুষের দৃষ্টিকোণে বিবেচনা করলে সমস্ত বৈশিষ্ট্য, গঠন ও জটিল উপাদান দিয়ে পৃথিবীকে সৃষ্টি করতে প্রচুর কাজ করতে হয়েছিল। আর পর্বতগুলোর “জন্ম” এবং পৃথিবীকে “প্রসব বেদনায়” জন্ম দেবার কথা বলে, এই সমস্ত কিছু সৃষ্টি করার সময় যিহোবা যে কাজগুলো করেছিলেন, তার প্রতি গীতরচক অনেক সম্মান দেখাচ্ছেন। সৃষ্টিকর্তার এই কাজের জন্য আমাদেরও কি একইরকম সম্মান ও কৃতজ্ঞতা দেখানো উচিত নয়?

যিহোবা সবসময় আমাদেরকে সাহায্য করার জন্য তৈরি

৮. “অনাদি হইতে অনন্তকাল পর্য্যন্ত” যিহোবাই ঈশ্বর এই কথার মানে কী?

৮ গীতরচক গেয়েছিলেন, “অনাদিকাল হইতে অনন্তকাল তুমিই ঈশ্বর।” মূল ভাষায় যে শব্দটাকে “অনন্তকাল” বলে অনুবাদ করা হয়েছে, তা সাধারণত সেই বিষয়গুলোকে বোঝাতে পারে, যেগুলোর শেষ আছে কিন্তু তার স্থায়িত্ব সম্বন্ধে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা নেই। (যাত্রাপুস্তক ৩১:১৬, ১৭; ইব্রীয় ৯:১৫) কিন্তু, ইব্রীয় শাস্ত্রের গীতসংহিতা ৯০:২ পদ ও অন্যান্য জায়গায় যে অনুবাদ করা হয়েছে এর থেকে দেখা যায় যে, এখানে ‘চিরকালকেই’ বোঝানো হয়েছে। (উপদেশক ১:৪) ঈশ্বর কীভাবে প্রথম থেকেই আছেন, তা আমরা বুঝতে পারি না। কিন্তু, যিহোবার কোন শুরু ছিল না এবং তাঁর কোন শেষও নেই। (হবক্‌কূক ১:১২) তিনি সবসময় থাকবেন এবং আমাদেরকে সাহায্য করার জন্য তৈরি আছেন।

৯. মানুষের অস্তিত্বের হাজার বছরকে গীতরচক কীসের সমান বলে বর্ণনা করেন?

৯ মানুষের অস্তিত্বের এক হাজার বছর সনাতন সৃষ্টিকর্তার কাছে যে খুবই কম সময়ের সমান, তা বলার জন্য গীতরচক অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। ঈশ্বরের উদ্দেশে তিনি লিখেছিলেন: “তুমি মর্ত্ত্যকে [“মরণশীল মানুষকে,” NW] ধূলিতে ফিরাইয়া থাক, বলিয়া থাক, মনুষ্য-সন্তানেরা, ফিরিয়া যাও। কেননা সহস্র বৎসর তোমার দৃষ্টিতে যেন গত কল্য, তাহা ত চলিয়া গিয়াছে, আর যেন রাত্রির এক প্রহরমাত্র।”—গীতসংহিতা ৯০:৩, ৪.

১০. কীভাবে ঈশ্বর মানুষকে ‘ধূলিতে ফিরাইয়া থাকেন’?

১০ মানুষ মরণশীল এবং ঈশ্বর তাকে ‘ধূলিতে ফিরাইয়া থাকেন।’ এর অর্থ চূর্ণ বা গুঁড়ো মাটি হিসেবে মানুষ “ধূলিতে” ফিরে যায়। উপযুক্ত কারণেই যিহোবা বলেন: ‘ধূলিতে প্রতিগমন কর, কেননা তুমি তাহা হইতেই গৃহীত হইয়াছ।’ (আদিপুস্তক ২:৭; ৩:১৯) এই কথাটা বলবান-দুর্বল, ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকলের প্রতিই প্রযোজ্য কারণ কোন অসিদ্ধ মানুষই ‘কোন মতে ভ্রাতাকে মুক্ত করিতে পারে না, কিম্বা প্রায়শ্চিত্তের জন্য ঈশ্বরকে কিছু দিতে পারে না, যেন সে নিত্যজীবী হয়।’ (গীতসংহিতা ৪৯:৬-৯) কিন্তু আমরা কতই না কৃতজ্ঞ যে, ‘ঈশ্বর আপনার একজাত পুত্ত্রকে দান করিলেন, যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে অনন্ত জীবন পায়।’—যোহন ৩:১৬; রোমীয় ৬:২৩.

১১. কেন আমরা বলতে পারি যে, আমাদের কাছে দীর্ঘ সময় ঈশ্বরের কাছে খুবই অল্প সময়?

১১ মথূশেলহ ৯৬৯ বছর বেঁচে থাকলেও যিহোবার দৃষ্টিতে তিনি একদিনের চেয়েও কম সময় বেঁচে ছিলেন। (আদিপুস্তক ৫:২৭) ঈশ্বরের কাছে এক হাজার বছর চলে যাওয়া গতকালের মতো—মাত্র ২৪ ঘন্টা। গীতরচক আরও বলেন, ঈশ্বরের কাছে এক হাজার বছর, রাতের বেলায় শিবিরে পাহারা দেওয়া একজন প্রহরীর চার ঘন্টা সময়ের মতো। (বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ৭:১৯) তাই এটা স্পষ্ট যে, আমাদের কাছে দীর্ঘ সময় সনাতন ঈশ্বর যিহোবার কাছে খুবই অল্প সময়।

১২. ঈশ্বর কীভাবে মানুষকে ‘ভাসাইয়া লইয়া যান’?

১২ ঈশ্বর চিরকাল ধরে আছেন আর সেই তুলনায় মানুষের জীবন আসলে খুবই ছোট। গীতরচক বলেন: “তুমি তাহাদিগকে যেন বন্যায় ভাসাইয়া লইয়া যাইতেছ, তাহারা স্বপ্নবৎ; প্রাতঃকালে তাহারা তৃণের ন্যায়, যাহা বাড়িয়া উঠে। প্রাতঃকালে তৃণ পুষ্পিত হয়, ও বাড়িয়া উঠে, সায়ংকালে ছিন্ন হইয়া শুষ্ক হয়।” (গীতসংহিতা ৯০:৫, ৬) মোশি হাজার হাজার ইস্রায়েলীয়কে প্রান্তরে মারা যেতে দেখেছিলেন, ঈশ্বর যেন বন্যার মতো করে তাদের ‘ভাসাইয়া লইয়া যান।’ গীতসংহিতার এই অংশটুকু এভাবে অনুবাদ করা হয়েছে: “তুমি মানুষকে মৃত্যুর ঘুমে ভাসিয়ে নিয়ে যাও।” (নিউ ইন্টারন্যাশনাল ভারসান) অন্যদিকে অসিদ্ধ মানুষের আয়ু ক্ষণকালস্থায়ী “স্বপ্নবৎ,” যেটাকে মাত্র এক রাতের ঘুমের সঙ্গে তুলনা করা যায়।

১৩. কীভাবে আমরা “তৃণের ন্যায়” এবং তা কীভাবে আমাদের চিন্তাধারাকে প্রভাবিত করবে?

১৩ আমরা ‘প্রাতঃকালের তৃণের ন্যায়, যাহা বাড়িয়া উঠে’ কিন্তু সূর্যের প্রখর তাপে সন্ধ্যার মধ্যেই শুকিয়ে যায়। হ্যাঁ, আমাদের জীবন ঘাসের মতো ক্ষণস্থায়ী, যা মাত্র একদিনের মধ্যেই শুকিয়ে যায়। তাই, আসুন আমরা এই মূল্যবান সম্পদকে অপচয় না করি। এর বদলে, এই বিধিব্যবস্থায় বাকি দিনগুলোকে আমাদের কীভাবে ব্যবহার করা উচিত সেই সম্বন্ধে ঈশ্বরের কাছ থেকে আমাদের নির্দেশনা খোঁজা উচিত।

যিহোবা আমাদেরকে “দিন গণনা করিতে” সাহায্য করেন

১৪, ১৫. গীতসংহিতা ৯০:৭-৯ পদ ইস্রায়েলীয়দের ওপর কীভাবে পূর্ণ হয়েছিল?

১৪ ঈশ্বর সম্বন্ধে গীতরচক আরও বলেন: “তোমার ক্রোধে আমরা ক্ষয় পাই, তোমার কোপে আমরা বিহ্বল হই। তুমি রাখিয়াছ আমাদের অপরাধ সকল তোমার সাক্ষাতে, আমাদের গুপ্ত বিষয় সকল তোমার মুখের দীপ্তিতে। কেননা তোমার ক্রোধে আমাদের সকল দিন বহিয়া যায়, আমরা আপন আপন বৎসর শ্বাসবৎ শেষ করি।”—গীতসংহিতা ৯০:৭-৯.

১৫ অবিশ্বাসী ইস্রায়েলীয়রা ‘ঈশ্বরের ক্রোধে ক্ষয় পাইয়াছিল।’ তারা ‘তাঁহার কোপে বিহ্বল’ হয়েছিল বা ‘তাঁর ক্রোধে আতঙ্কিত হয়েছিল।’ (নিউ ইন্টারন্যাশনাল ভারসন) কেউ কেউ ঈশ্বরের কাছ থেকে আসা বিচারের ফলে “প্রান্তরে নিপাতিত হইলেন।” (১ করিন্থীয় ১০:৫) যিহোবা ‘তাহাদের অপরাধ সকল তাঁহার সাক্ষাতে রাখিয়াছিলেন।’ তিনি তাদের প্রকাশ্য অন্যায়ের জন্য তাদেরকে দায়ী করেছিলেন, এমনকি তাদের “গুপ্ত বিষয় সকল” বা লুকিয়ে লুকিয়ে করা পাপগুলো ‘তাঁহার মুখের দীপ্তিতে’ ছিল। (হিতোপদেশ ১৫:৩) ঈশ্বরের ক্রোধের পাত্র হিসেবে অনুতাপহীন ইস্রায়েলীয়রা ‘তাহাদের বৎসর শ্বাসবৎ শেষ করিয়াছিল।’ সেদিক দিয়ে দেখলে আমাদের সংক্ষিপ্ত আয়ু ক্ষণিক নিঃশ্বাসের মতো, যা আমাদের ঠোঁট দিয়ে বেরিয়ে আসে।

১৬. কেউ কেউ যদি গোপনে পাপ করে চলে, তাহলে তাদের কী করা উচিত?

১৬ আমাদের মধ্যে কেউ যদি গোপনে পাপ করে চলি, তাহলে আমরা হয়তো কিছু সময়ের জন্য আমাদের আচরণ আশেপাশের লোকেদের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে পারি। কিন্তু, আমাদের গুপ্ত অন্যায় ‘যিহোবার মুখের দীপ্তিতে’ থাকবে এবং এই কাজগুলো তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে নষ্ট করে দেবে। যিহোবার সঙ্গে আবার কাছের সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইলে তাঁর কাছে আমাদের ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে, পাপকাজ করা বন্ধ করতে হবে এবং খ্রীষ্টান প্রাচীনদের আধ্যাত্মিক সাহায্যকে কৃতজ্ঞ মনে মেনে নিতে হবে। (হিতোপদেশ ২৮:১৩; যাকোব ৫:১৪, ১৫) অনন্ত জীবন বেঁচে থাকার আশাকে ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিয়ে ‘আমাদের আপন আপন বৎসর শ্বাসবৎ শেষ করার’ চেয়ে তা কত গুণ ভালই না হবে!

১৭. মানুষের গড় আয়ু কত আর আমাদের বছর কীসে পরিপূর্ণ?

১৭ অসিদ্ধ মানুষের আয়ু সম্বন্ধে গীতরচক বলেছিলেন: “আমাদের আয়ুর পরিমাণ সত্তর বৎসর; বলযুক্ত হইলে আশী বৎসর হইতে পারে; তথাপি তাহাদের দর্প ক্লেশ ও দুঃখমাত্র, কেননা তাহা বেগে পলায়ন করে, এবং আমরা উড়িয়া যাই।” (গীতসংহিতা ৯০:১০) সাধারণত মানুষের গড় আয়ু ৭০ বছর আর ৮৫ বছর বয়সে কালেব তার অসাধারণ শক্তির বিষয়ে বলেছিলেন। তবে কিছু ব্যতিক্রমও রয়েছে যেমন হারোণ (১২৩), মোশি (১২০) এবং যিহোশূয় (১১০) বছর বেঁচে ছিলেন। (গণনাপুস্তক ৩৩:৩৯; দ্বিতীয় বিবরণ ৩৪:৭; যিহোশূয়ের পুস্তক ১৪:৬, ১০, ১১; ২৪:২৯) কিন্তু যে অবিশ্বাসী বংশ মিশর থেকে বেরিয়ে এসেছিল, তাদের মধ্যে ২০ বছর ও তার চেয়ে বেশি বয়স্ক সমস্ত লোক প্রান্তরে ৪০ বছরের মধ্যেই মারা গিয়েছিল। (গণনাপুস্তক ১৪:২৯-৩৪) আজকে অনেক দেশে মানুষের আয়ু সাধারণত গীতরচক যে বয়সের কথা বলেছেন এর মতোই। আমাদের বছরগুলো ‘ক্লেশ ও দুঃখে’ পরিপূর্ণ। তা খুব দ্রুত কেটে যায় “এবং আমরা উড়িয়া যাই।”—ইয়োব ১৪:১, ২.

১৮, ১৯. (ক) “আমাদের দিন গণনা করিতে শিক্ষা দেও, যেন আমরা প্রজ্ঞার চিত্ত লাভ করি” কথাগুলোর মানে কী? (খ) প্রজ্ঞা কাজে লাগালে তা আমাদেরকে কী করতে পরিচালিত করবে?

১৮ এরপর গীতরচক গেয়ে ওঠেন: “তোমার কোপের বল কে বুঝে? তোমার ভয়াবহতার অনুরূপ ক্রোধ কে বুঝে? এরূপে আমাদের দিন গণনা করিতে শিক্ষা দেও, যেন আমরা প্রজ্ঞার চিত্ত লাভ করি।” (গীতসংহিতা ৯০:১১, ১২) আমাদের মধ্যে কেউই ঈশ্বরের কোপের বল বা ভয়াবহতার অনুরূপ ক্রোধ বুঝি না আর তাই এটা যিহোবার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধামিশ্রিত ভয়কে আরও বাড়িয়ে তুলবে। আসলে, এটা আমাদেরকে তাঁকে এই কথা জিজ্ঞেস করতে প্রেরণা দেবে, ‘কীরূপে আমাদের দিন গণনা করিতে পারি, যেন আমরা প্রজ্ঞার চিত্ত লাভ করি।’

১৯ গীতরচকের কথাগুলো হল একটা প্রার্থনা, যেখানে যিহোবার কাছে অনুরোধ করা হয়েছে যাতে তিনি তাঁর লোকেদেরকে শিক্ষা দেন যে, কীভাবে তারা তাদের বাকি দিনগুলো ঈশ্বরের অনুমোদিত পথে মূল্যায়ন ও ব্যবহার করতে গিয়ে প্রজ্ঞাকে কাজে লাগাতে পারেন। ৭০ বছরের জীবনে প্রায় ২৫,৫০০ দিন বেঁচে থাকার আশা রয়েছে। কিন্তু, আমাদের বয়স যতই হোক না কেন, ‘আমরা ত কল্যকার তত্ত্ব জানি না; আমাদের জীবন কি প্রকার? আমরা ত বাষ্পস্বরূপ, যাহা ক্ষণেক দৃশ্য থাকে, পরে অন্তর্হিত হয়।’ (যাকোব ৪:১৩-১৫) যেহেতু ‘আমাদের সকলের প্রতি কাল ও দৈব ঘটে,’ তাই আমরা বলতে পারি না যে, কতদিন আমরা বেঁচে থাকব। তাই আসুন আমরা পরীক্ষাগুলো মোকাবিলা করার, অন্যদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করার এবং এখন অর্থাৎ বর্তমানে যিহোবার সেবায় যথাসাধ্য চেষ্টা করার জন্য প্রজ্ঞা চেয়ে প্রার্থনা করি। (উপদেশক ৯:১১; যাকোব ১:৫-৮) যিহোবা আমাদেরকে তাঁর বাক্য, তাঁর আত্মা ও তাঁর সংগঠনের মাধ্যমে নির্দেশনা দেন। (মথি ২৪:৪৫-৪৭; ১ করিন্থীয় ২:১০; ২ তীমথিয় ৩:১৬, ১৭) প্রজ্ঞা কাজে লাগালে তা আমাদেরকে ‘প্রথমে ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে চেষ্টা করিতে’ এবং যিহোবার গৌরব আনে ও তাঁর হৃদয়কে আনন্দিত করে এমনভাবে আমাদের দিনকে কাজে লাগাতে পরিচালিত করবে। (মথি ৬:২৫-৩৩; হিতোপদেশ ২৭:১১) সমস্ত মনপ্রাণ দিয়ে তাঁকে উপাসনা করলে আমাদের সব সমস্যা দূর হয়ে যাবে না ঠিকই কিন্তু তা নিশ্চয়ই প্রচুর আনন্দ নিয়ে আসবে।

যিহোবার আশীর্বাদ আনন্দ নিয়ে আসে

২০. (ক) কোন্‌ উপায়ে ঈশ্বর ‘দুঃখ প্রকাশ করেন’? (খ) আমরা যদি গুরুতর ভুল করি কিন্তু প্রকৃত অনুতাপ করি, তাহলে যিহোবা আমাদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করবেন?

২০ আমাদের বাকি দিনগুলো আমরা যদি আনন্দ করে কাটিয়ে দিতে পারতাম, তাহলে তা কত চমৎকারই না হতো! এই বিষয়ে মোশি অনুরোধ করেন: “হে সদাপ্রভু, ফির, কত কাল? তোমার দাসগণের প্রতি সদয় হও [“দুঃখ প্রকাশ কর, NW]। প্রত্যূষে আমাদিগকে তোমার দয়াতে [বা “একনিষ্ঠ প্রেমে,” পাদটীকা, NW] তৃপ্ত কর, যেন আমরা যাবজ্জীবন আনন্দ ও আহ্লাদ করি।” (গীতসংহিতা ৯০:১৩, ১৪) ঈশ্বর কখনও ভুল করেন না। তাসত্ত্বেও, অনুতপ্ত অন্যায়কারী যখন ভুল কাজের জন্য তাঁর সাবধানবাণী শুনে মনোভাব ও আচরণ পালটায়, তখন তিনি ‘দুঃখ প্রকাশ করেন’ এবং তিনি ক্রোধ প্রকাশ ও শাস্তি দেওয়া থেকে “ফিরেন।” (দ্বিতীয় বিবরণ ১৩:১৭) তাই, আমরা যদি এমনকি গুরুতর অন্যায়ও করে থাকি কিন্তু প্রকৃত অনুতাপ করি, তাহলে যিহোবা ‘আমাদিগকে তাঁহার দয়াতে তৃপ্ত করিবেন’ এবং আমাদের ‘আনন্দ করার’ যথেষ্ট কারণ থাকবে। (গীতসংহিতা ৩২:১-৫) আর ধার্মিক পথে জীবনযাপন করে আমাদের প্রতি ঈশ্বরের একনিষ্ঠ প্রেম দেখতে পারব এবং “যাবজ্জীবন,” হ্যাঁ, আমাদের বাকি জীবন “আহ্লাদ” করতে পারব।

২১. গীতসংহিতা ৯০:১৫, ১৬ পদে মোশি হয়তো কোন্‌ বিষয়ে অনুরোধ করেছেন?

২১ গীতরচক অন্তর থেকে প্রার্থনা করেন: “যত দিন তুমি আমাদিগকে দুঃখ দিয়াছ, যত বৎসর আমরা বিপদ দেখিয়াছি, তদনুসারে আমাদিগকে আনন্দিত কর। তোমার দাসগণের কাছে তোমার কর্ম্ম, তাহাদের সন্তানদের উপরে তোমার প্রতাপ দৃষ্ট হউক।” (গীতসংহিতা ৯০:১৫, ১৬) যত সময় ধরে ইস্রায়েলীয়রা দুঃখ পেয়েছিল ও যত বছর ধরে তারা বিপদ দেখেছিল, এখানে মোশি হয়তো ঠিক তত সময় ধরে তাদেরকে আশীর্বাদ করার জন্য ঈশ্বরকে অনুরোধ করেছিলেন। তিনি প্রার্থনা করেছিলেন যাতে ইস্রায়েলীয়দেরকে আশীর্বাদ করার জন্য তাঁর “কর্ম্ম” তাঁর দাসদের কাছে স্পষ্ট হয় এবং তাদের সন্তান বা বংশধরদের মাঝে তাঁর মহিমা প্রকাশ পায়। তাই, উপযুক্ত কারণেই আমরা প্রার্থনা করতে পারি যে, ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাত নতুন জগতে তিনি যেন বাধ্য মানবজাতির ওপর তাঁর আশীর্বাদ বর্ষণ করেন।—২ পিতর ৩:১৩.

২২. গীতসংহিতা ৯০:১৭ পদ অনুসারে কীসের জন্য আমরা উপযুক্তভাবে প্রার্থনা করতে পারি?

২২ গীতসংহিতা ৯০ অধ্যায় এই অনুরোধ দিয়ে শেষ হয়: “আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর প্রসন্নভাব আমাদের উপরে বর্ত্তুক; আর তুমি আমাদের পক্ষে আমাদের হস্তের কর্ম্ম স্থায়ী কর, আমাদের হস্তের কর্ম্ম তুমি স্থায়ী কর।” (গীতসংহিতা ৯০:১৭) এই কথাগুলো থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, আমরা উপযুক্তভাবেই প্রার্থনা করতে পারি, যাতে ঈশ্বর তাঁকে সেবা করার জন্য আমাদের প্রচেষ্টায় আশীর্বাদ করেন। অভিষিক্ত খ্রীষ্টান বা তাদের সঙ্গী “অপর মেষ” হিসেবে আমরা আনন্দ করি যে, আমাদের ওপর “সদাপ্রভুর প্রসন্নভাব” রয়েছে। (যোহন ১০:১৬, NW) আমরা কতই না খুশি যে, রাজ্য ঘোষণাকারী হিসেবে এবং আরও অন্যান্য উপায়ে ঈশ্বর ‘আমাদের হস্তের কর্ম্ম স্থায়ী করিয়াছেন।’

আসুন আমরা আমাদের দিন গণনা করে চলি

২৩, ২৪. গীতসংহিতা ৯০ অধ্যায়ের ওপর ধ্যান করে আমরা কীভাবে উপকার পেতে পারি?

২৩ নব্বই গীতের ওপর ধ্যান করা নিশ্চয়ই আমাদের “বাসস্থান” যিহোবার ওপর আমাদের আস্থাকে আরও বাড়িয়ে দেবে। জীবনের সংক্ষিপ্ত আয়ু সম্বন্ধে এখানে যে কথাগুলো বলা রয়েছে তা নিয়ে চিন্তা করে, আমাদের দিন গণনা করার বিষয়ে যে ঈশ্বরের নির্দেশনা দরকার সেই সম্বন্ধে আমাদের আরও বেশি আগ্রহী হওয়া উচিত। আর আমরা যদি ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা খুঁজে চলি ও নিয়মিত কাজে লাগিয়ে যাই, তাহলে আমরা যিহোবার প্রেমপূর্ণ দয়া ও আশীর্বাদ লাভ করতে পারব।

২৪ যিহোবা আমাদের দিন গণনা করতে শিক্ষা দিয়ে চলবেন। আর আমরা যদি তাঁর নির্দেশনা মেনে নিই, তাহলে আমরা চিরকাল আমাদের দিন গণনা করে চলতে পারব। (যোহন ১৭:৩) কিন্তু আমরা যদি সত্যি সত্যি অনন্ত জীবনের প্রতি দৃষ্টি রাখতে চাই, তাহলে যিহোবাকে অবশ্যই আমাদের আশ্রয় করতে হবে। (যিহূদা ২০, ২১) পরের প্রবন্ধে আমরা দেখব, এই বিষয়টা ৯১ গীতের উৎসাহজনক কথাগুলোর মাধ্যমে স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• কীভাবে যিহোবা আমাদের “বাসস্থান”?

• কেন আমরা বলতে পারি যে, যিহোবা সবসময় আমাদেরকে সাহায্য করার জন্য তৈরি আছেন?

• কীভাবে যিহোবা আমাদেরকে “দিন গণনা করিতে” সাহায্য করেন?

• কী আমাদেরকে ‘যাবজ্জীবন আহ্লাদ করিতে’ সাহায্য করে?

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

“পর্ব্বতগণের জন্ম হইবার পূর্ব্বে” যিহোবা ঈশ্বরের অস্তিত্ব ছিল

[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]

মথূশেলহ ৯৬৯ বছর বেঁচে থাকলেও যিহোবার দৃষ্টিতে তিনি একদিনের চেয়েও কম সময় বেঁচে ছিলেন

[১৪ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

যিহোবা ‘আমাদের হস্তের কর্ম্ম স্থায়ী করিয়াছেন’

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৫)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার