ঈশ্বরের বাক্যকে আপনি কতখানি ভালবাসেন?
“আমি তোমার ব্যবস্থা কেমন ভালবাসি! তাহা সমস্ত দিন আমার ধ্যানের বিষয়।”—গীতসংহিতা ১১৯:৯৭.
১. একটা উপায় কী যার দ্বারা ঈশ্বর-ভয়শীল ব্যক্তিরা দেখাতে পারেন যে তারা ঈশ্বরের বাক্যকে ভালবাসেন?
পৃথিবীর কোটি কোটি লোকেদের কাছে বাইবেল আছে। কিন্তু, বাইবেল থাকা এবং ঈশ্বরের বাক্যকে ভালবাসার মধ্যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে। একজন ব্যক্তি যদি মাঝে মধ্যে বাইবেল পড়েন, তাহলে কি তিনি দাবি করতে পারেন যে তিনি ঈশ্বরের বাক্যকে ভালবাসেন? কখনই না! অন্যদিকে, এমন লোকেরাও আছেন যারা একসময় বাইবেলে বিশ্বাস করতেন না কিন্তু এখন রোজ বাইবেল পড়েন। তারা ঈশ্বরের বাক্যকে ভালবাসতে শিখেছেন আর গীতরচকের মতো তারা “সমস্ত দিন” ঈশ্বরের বাক্যকে তাদের ধ্যানের বিষয় করে নিয়েছেন।—গীতসংহিতা ১১৯:৯৭.
২. বিশ্বাস কীভাবে একজন যিহোবার সাক্ষিকে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও টিকে থাকার শক্তি জুগিয়েছিল?
২ ন্যাশো ডরি হলেন এমন একজন যিনি ঈশ্বরের বাক্যকে ভালবাসতে শিখেছিলেন। তার দেশ আলবানিয়া আর তিনি সেখানে অন্যান্য খ্রীষ্টান ভাইবোনদের সঙ্গে অনেক বছর ধরে ধৈর্য ধরে যিহোবার সেবা করেছেন। তখন বেশির ভাগ সময়ই যিহোবার সাক্ষিদের কাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল আর এই বিশ্বস্ত খ্রীষ্টানেরা বাইবেলের বইপত্রিকা খুব বেশি পেতেন না। তারপরও, ভাই ডরি বিশ্বাসে অটল ছিলেন। কীভাবে? তিনি বলেছিলেন, ‘আমার লক্ষ্য ছিল রোজ অন্তত এক ঘন্টা করে বাইবেল পড়া আর তা আমি আমার চোখ খারাপ হয়ে যাওয়ার আগে পর্যন্ত ৬০ বছর ধরে করে এসেছি।’ এখনও পর্যন্ত আলবানিয় ভাষায় পুরো বাইবেল পাওয়া যায় না কিন্তু ভাই ডরি ছোটবেলাতেই গ্রিক ভাষা শিখেছিলেন তাই তিনি গ্রিক ভাষার বাইবেল পড়তেন। রোজ বাইবেল পড়া ভাই ডরিকে বিভিন্ন পরীক্ষার মধ্যেও টিকে থাকার শক্তি জুগিয়েছিল আর তা আমাদেরও শক্তি জোগাতে পারে।
ঈশ্বরের বাক্যের জন্য “লালসা কর”
৩. ঈশ্বরের বাক্যের জন্য খ্রীষ্টানদের কেমন মনোভাব গড়ে তোলা উচিত?
৩ প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন, “নবজাত শিশুদের ন্যায় সেই পারমার্থিক অমিশ্রিত দুগ্ধের লালসা কর।” (১ পিতর ২:১, ২) কোন শিশু যেমন তার মায়ের দুধের জন্য আকাঙ্ক্ষা করে, তেমনই যে খ্রীষ্টানেরা তাদের আধ্যাত্মিক চাহিদার বিষয়ে সতর্ক তারা ঈশ্বরের বাক্য পড়ে অনেক আনন্দ খুঁজে পান। আপনিও কি তাই মনে করেন? যদি না করে থাকেন, হতাশ হবেন না। আপনিও ঈশ্বরের বাক্যের জন্য লালসা গড়ে তুলতে পারেন।
৪. বাইবেল পড়াকে রোজকার অভ্যাস করে তোলার জন্য কী কী করা দরকার?
৪ তা করার জন্য প্রথমে বাইবেল পড়াকে রোজকার অভ্যাস করে তুলতে নিজেকে তৈরি করুন, সম্ভব হলে প্রতিদিন তা পড়ুন। (প্রেরিত ১৭:১১) ভাই ন্যাশো ডরির মতো আপনি হয়তো রোজ একঘন্টা করে বাইবেল পড়তে পারবেন না কিন্তু রোজ ঈশ্বরের বাক্য পড়ার জন্য আপনি হয়তো কিছুটা সময় আলাদা করে রাখতে পারেন। অনেক খ্রীষ্টান ভাইবোনেরা বাইবেলের কোন অধ্যায় বা পদের ওপর ধ্যান করার জন্য সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠেন। দিন শুরু করার জন্য এর চেয়ে ভাল অভ্যাস আর কী হতে পারে? অন্যেরা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে কিছুক্ষণ বাইবেল পড়েন। আবার অনেকে তাদের সুবিধা মতো সময়ে বাইবেল পড়ে থাকেন। জরুরি বিষয় হল রোজ বাইবেল পড়া। এরপর, আপনি যা পড়েছেন তা নিয়ে কিছুক্ষণ ধ্যান করুন। আসুন এখন আমরা এমন কয়েকজন ব্যক্তির বিষয় দেখি যারা ঈশ্বরের বাক্য পড়ে ও ধ্যান করে উপকার পেয়েছিলেন।
একজন গীতরচক যিনি ঈশ্বরের ব্যবস্থাকে ভালবেসেছিলেন
৫, ৬. ১১৯ গীতের লেখকের নাম না জানলেও তিনি যা লিখেছিলেন তা পড়ে ও ধ্যান করে আমরা তার সম্বন্ধে কী জানি?
৫ ১১৯ গীতের লেখকের ঈশ্বরের বাক্যের জন্য গভীর ভালবাসা ছিল। কিন্তু ওই গীত কে লিখেছিলেন? বাইবেলে কোথাও তার নাম বলা নেই। কিন্তু প্রসঙ্গ থেকে আমরা তার সম্বন্ধে অল্প কিছু জানতে পারি আর এটুকু বুঝতে পারি যে তার জীবনে অনেক সমস্যা ছিল। তার আশেপাশের লোকেরা হয়তো নিজেদের যিহোবার উপাসক বলে দাবি করেছিলেন কিন্তু বাইবেলের নীতিগুলোকে তার মতো ভালবাসেননি। তাই বলে তাদের চালচলন দেখে, গীতরচক যা ঠিক তা করা ছেড়ে দেননি। (গীতসংহিতা ১১৯:২৩) আপনি যদি এমন কারও সঙ্গে বাস করেন বা কাজ করেন যিনি বাইবেলের নীতিগুলোকে মেনে চলেন না, তাহলে আপনার ও গীতরচকের অবস্থার মধ্যে আপনি হয়তো কিছু মিল খুঁজে পাবেন।
৬ গীতরচক একজন ধার্মিক লোক ছিলেন কিন্তু অতি-ধার্মিক ছিলেন না। তিনি খোলাখুলিভাবে তার নিজের ভুল স্বীকার করেছিলেন। (গীতসংহিতা ১১৯:৫, ৬, ৬৭) কিন্তু তিনি পাপের কাছে হার মানেননি। তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, “যুবক কেমন করিয়া নিজ পথ বিশুদ্ধ করিবে?” তার উত্তর ছিল: “তোমার বাক্যানুসারে সাবধান হইয়াই করিবে।” (গীতসংহিতা ১১৯:৯) এরপর, ভাল কাজ করতে ঈশ্বরের বাক্য কতখানি শক্তি জোগায় তা বলার জন্য গীতরচক আরও বলেছিলেন: “তোমার বচন আমি হৃদয়মধ্যে সঞ্চয় করিয়াছি, যেন তোমার বিরুদ্ধে পাপ না করি।” (গীতসংহিতা ১১৯:১১) ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ না করার জন্য যে শক্তি আমাদেরকে সাহায্য করে তার সত্যিই অনেক ক্ষমতা আছে!
৭. বিশেষ করে যুবক-যুবতীদেরকে কেন রোজ বাইবেল পড়ার ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে?
৭ খ্রীষ্টান যুবক-যুবতীরা গীতরচকের কথাগুলো মনে রাখলে ভাল করবে। আজকে তারা বিপদের মধ্যে রয়েছে। যিহোবার এই উঠতি বয়সের উপাসকদের কলুষিত করতে পারলে শয়তান খুব খুশি হবে। শয়তানের লক্ষ্য হল খ্রীষ্টান যুবক-যুবতীদের লোভ দেখানো যাতে তারা মাংসিক আকাঙ্ক্ষার কাছে হার মানে এবং ঈশ্বরের ব্যবস্থাকে লঙ্ঘন করে। সিনেমা ও টেলিভিশনের অনুষ্ঠানগুলোতে প্রায়ই শয়তানের চিন্তাভাবনা দেখানো হয়। এইসব অনুষ্ঠানের নায়ক-নায়িকাদের আকর্ষণীয় ও ভাল বলে মনে হয়; তাদের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্ককে খুবই সাধারণ হিসেবে দেখানো হয়। এগুলো কী শেখায়? ‘অবিবাহিত লোকেরা যখন একজন অন্যজনকে সত্যিকারের ভালবাসে তখন তাদের মধ্যে যৌন সম্পর্ক দোষের কিছু নয়।’ দুঃখজনক হলেও সত্যি যে প্রতি বছর বেশ কিছু খ্রীষ্টান যুবক-যুবতী এই ফাঁদে পা দেয়। কারও কারও বিশ্বাসরূপ নৌকা ভেঙে যায়। তাই চাপ অনেক! কিন্তু সেই চাপ কি এতই প্রচণ্ড যে তোমরা যুবক-যুবতীরা, তোমাদের জন্য তা মোকাবিলা করা একেবারেই অসম্ভব? কখনই না! খ্রীষ্টান যুবক-যুবতীদের জন্য যিহোবা একটা উপায় রেখেছেন যাতে তারা খারাপ আকাঙ্ক্ষাগুলোকে দমন করতে পারে। ‘ঈশ্বরের বাক্যানুসারে সাবধান হইয়া, ঈশ্বরের বচন হৃদয়মধ্যে সঞ্চয় করিয়া’ তারা শয়তানের যে কোন অস্ত্রকে প্রতিরোধ করতে পারে। রোজ কতটুকু সময় তুমি বাইবেল পড় ও ধ্যান কর?
৮. এই অনুচ্ছেদে দেওয়া উদাহরণগুলো আপনাকে কীভাবে মোশির ব্যবস্থার জন্য উপলব্ধি গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে?
৮ ১১৯ গীতের লেখক বলেছিলেন: “আমি তোমার ব্যবস্থা কেমন ভালবাসি!” (গীতসংহিতা ১১৯:৯৭) তিনি কোন্ ব্যবস্থার কথা বুঝিয়েছিলেন? যিহোবা যে ব্যবস্থা দিয়েছিলেন, যার মধ্যে মোশির ব্যবস্থাও ছিল। এই ব্যবস্থাগুলোর দিকে এক ঝলক তাকিয়ে কেউ হয়তো এগুলোকে সেকেলে বলে বাতিল করে দিতে পারে এবং ভাবতে পারে যে এগুলোকে কীভাবে একজন ভালবাসতে পারে। কিন্তু আমরা যখন মোশির ব্যবস্থার বিভিন্ন দিক নিয়ে গীতরচকের মতো ধ্যান করব, তখন আমরা ওই ব্যবস্থার পিছনে যে প্রজ্ঞা আছে তা বুঝতে পারব। ওই ব্যবস্থায় বিভিন্ন ভবিষ্যদ্বাণী ছাড়াও স্বাস্থ্যবিধান এবং খাবারদাবারের ব্যাপারে কিছু বিধিনিষেধ ছিল, যা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে সাহায্য করত এবং স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য দরকার ছিল। (লেবীয় পুস্তক ৭:২৩, ২৪, ২৬; ১১:২-৮) ব্যবস্থা ব্যাবসায় সৎ থাকতে এবং অভাবী ইস্রায়েলীয়দের সাহায্য করতে বলেছিল। (যাত্রাপুস্তক ২২:২৬, ২৭; ২৩:৬; লেবীয় পুস্তক ১৯:৩৫, ৩৬; দ্বিতীয় বিবরণ ২৪:১৭-২১) বিচারে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হতো। (দ্বিতীয় বিবরণ ১৬:১৯; ১৯:১৫) তাই কোন সন্দেহ নেই যে ১১৯ গীতের লেখক নিজের জীবনে দেখেছিলেন, যারা ঈশ্বরের বাক্যকে কাজে লাগিয়েছিল তাদের জীবন কতটা সফল হয়েছিল আর এতে ব্যবস্থার প্রতি তার ভালবাসা আরও বেড়ে গিয়েছিল। একইভাবে আজকেও খ্রীষ্টানেরা যখন বাইবেলের নীতিগুলোকে কাজে লাগিয়ে সফল হন তখন ঈশ্বরের বাক্যের জন্য তাদের ভালবাসা ও উপলব্ধি আরও বেড়ে যায়।
এক সাহসী রাজপুত্র
৯. ঈশ্বরের বাক্যের জন্য রাজা হিষ্কিয় কেমন মনোভাব গড়ে তুলেছিলেন?
৯ ১১৯ গীতের কথাগুলো যুবক রাজপুত্র হিষ্কিয়ের জীবনের সঙ্গে মিলে যায়। কিছু বাইবেল পণ্ডিত বলেন যে ওই গীতের লেখক ছিলেন হিষ্কিয়। এই বিষয়টা যদিও স্পষ্ট নয় কিন্তু আমরা জানি যে হিষ্কিয় ঈশ্বরের বাক্যকে গভীরভাবে সম্মান করতেন। তার জীবনযাপনের মাধ্যমে তিনি দেখিয়েছিলেন যে গীতসংহিতা ১১৯:৯৭ পদের কথাগুলো তার জীবনে কত সত্যি ছিল। হিষ্কিয়ের সম্বন্ধে বাইবেল বলে: “তিনি সদাপ্রভুতে আসক্ত ছিলেন, তাঁহার পশ্চাদ্গমন হইতে ফিরিলেন না, বরং সদাপ্রভু মোশিকে যে সকল আজ্ঞা দিয়াছিলেন, সে সমস্ত পালন করিতেন।”—২ রাজাবলি ১৮:৬.
১০. যে খ্রীষ্টানদের বাবামা সত্যে নেই হিষ্কিয়ের উদাহরণ তাদের কীভাবে উৎসাহ দেয়?
১০ হিষ্কিয় সম্বন্ধে অন্যান্য সমস্ত বিবরণ দেখায় যে তিনি এক ধার্মিক পরিবারে মানুষ হননি। তার বাবা, রাজা আহস ছিলেন একজন অবিশ্বস্ত প্রতিমাপূজক যিনি তার এক ছেলেকে—হিষ্কিয়ের নিজের ভাইকে—মিথ্যা দেবতার উদ্দেশে বলি হিসেবে জীবন্ত দগ্ধ করেছিলেন! (২ রাজাবলি ১৬:৩) এই খারাপ উদাহরণ সত্ত্বেও, হিষ্কিয় পৌত্তলিক প্রভাব থেকে তার “নিজ পথ বিশুদ্ধ” রাখতে পেরেছিলেন কারণ তিনি ঈশ্বরের বাক্যকে ভালভাবে জেনেছিলেন।—২ বংশাবলি ২৯:২.
১১. হিষ্কিয়ের অবিশ্বস্ত বাবার কাজের ফল কী হয়েছিল?
১১ বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হিষ্কিয় দেখেছিলেন যে তার প্রতিমাপূজক বাবা কীভাবে দেশ শাসন করতেন। যিহূদার চারদিকেই শত্রুরা ছিল। অরাম-রাজ রৎসীন এবং ইস্রায়েল-রাজ পেকহ এক হয়ে যিরূশালমকে অবরোধ করেছিলেন। (২ রাজাবলি ১৬:৫, ৬) এছাড়া ইদোমীয়েরা ও পলেষ্টীয়েরা যিহূদা আক্রমণ করেছিল এবং এমনকি যিহূদার কিছু শহর জয় করে নিয়েছিল। (২ বংশাবলি ২৮:১৬-১৯) এমন সংকটের মুখে আহস কী করেছিলেন? অরামের বিরুদ্ধে জয়ী হতে যিহোবার কাছে সাহায্য না চেয়ে আহস অশূর-রাজের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন আর তার জন্য সোনা, রুপো এমনকি মন্দিরের ভাণ্ডার থেকে পর্যন্ত উপঢৌকন পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তবুও যিহূদায় স্থায়ী শান্তি আসেনি।—২ রাজাবলি ১৬:৬, ৮.
১২. কী হিষ্কিয়কে তার বাবার করা ভুলগুলো না করতে সাহায্য করেছিল?
১২ শেষ পর্যন্ত আহসের মৃত্যু হয় এবং হিষ্কিয় ২৫ বছর বয়সে রাজা হন। (২ বংশাবলি ২৯:১) তুলনামূলকভাবে তার বয়স কম ছিল কিন্তু তাই বলে তা তাকে ভাল রাজা হতে বাধা দেয়নি। তার অবিশ্বস্ত বাবাকে নকল না করে তিনি যিহোবার ব্যবস্থা মতো কাজ করেছিলেন। আর রাজাদের জন্য যে বিশেষ আজ্ঞা ছিল সেটাও তিনি পালন করেছিলেন: “স্বীয় রাজ্যের সিংহাসনে উপবেশন কালে [রাজা] আপনার নিমিত্ত একখানি পুস্তকে লেবীয় যাজকদের সম্মুখস্থিত এই ব্যবস্থার অনুলিপি লিখিবে। তাহা তাহার নিকটে থাকিবে, এবং সে যাবজ্জীবন তাহা পাঠ করিবে; যেন সে আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভয় করিতে ও এই ব্যবস্থার সমস্ত বাক্য . . . পালন করিতে শিখে।” (দ্বিতীয় বিবরণ ১৭:১৮, ১৯) রোজ ঈশ্বরের বাক্য পড়ে হিষ্কিয় যিহোবাকে ভয় করতে শিখেছিলেন এবং তার দুষ্ট বাবা যে ভুলগুলো করেছিলেন সেই একই ভুল তিনি করেননি।
১৩. কীভাবে একজন খ্রীষ্টান নিশ্চিত হতে পারেন যে আধ্যাত্মিক অর্থে তিনি সবকিছুতেই সফল হবেন?
১৩ শুধু ইস্রায়েলের রাজাদেরই নয় কিন্তু ঈশ্বর-ভয়শীল সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের সবসময় ঈশ্বরের বাক্য নিয়ে ধ্যান করতে বলা হয়েছিল। প্রথম গীত এমন একজন ব্যক্তিকে সত্যিকারের সুখী বলে বর্ণনা করে যে “সদাপ্রভুর ব্যবস্থায় আমোদ করে, তাঁহার ব্যবস্থা দিবারাত্র ধ্যান করে।” (গীতসংহিতা ১:১, ২) এইরকম একজন ব্যক্তি সম্বন্ধে গীতরচক বলেন: “সে যাহা কিছু করে, তাহাতেই কৃতকার্য্য হয়।” (গীতসংহিতা ১:৩) অন্যদিকে, যে ব্যক্তির যিহোবার ওপর বিশ্বাসের অভাব আছে তার সম্বন্ধে বাইবেল বলে: “সে দ্বিমনা লোক, আপনার সকল পথে অস্থির।” (যাকোব ১:৮) আমরা সবাই সুখী ও সফল হতে চাই। তাই রোজ, মন দিয়ে বাইবেল পড়া আমাদের সুখী করতে পারে।
ঈশ্বরের বাক্য যীশুকে শক্তি দিয়েছিল
১৪. যীশু কীভাবে ঈশ্বরের বাক্যের জন্য ভালবাসা দেখিয়েছিলেন?
১৪ একবার যীশুর বাবামা দেখেছিলেন যে তিনি যিরূশালেম মন্দিরে ধর্মগুরুদের মাঝে বসে কথা বলছিলেন। ঈশ্বরের ব্যবস্থার এই পণ্ডিত ব্যক্তিরা “তাঁহার বুদ্ধি ও উত্তরে অতিশয় আশ্চর্য্য জ্ঞান করিল!” (লূক ২:৪৬, ৪৭) এই ঘটনার সময় যীশুর বয়স ছিল ১২ বছর। হ্যাঁ, এমনকি বালক বয়সেও তাঁর ঈশ্বরের বাক্যের জন্য প্রগাঢ় ভালবাসা ছিল। পরে যীশু দিয়াবলকে তিরস্কার করার জন্য শাস্ত্রপদ ব্যবহার করেছিলেন, তিনি বলেছিলেন: “‘মনুষ্য কেবল রুটীতে বাঁচিবে না, কিন্তু ঈশ্বরের মুখ হইতে যে প্রত্যেক বাক্য নির্গত হয়, তাহাতেই বাঁচিবে।’” (মথি ৪:৩-১০) এর পরপরই যীশু তাঁর নিজের নগর নাসারতের লোকেদের কাছে প্রচার করার সময় শাস্ত্র থেকে কথা বলেছিলেন।—লূক ৪:১৬-২১.
১৫. অন্যদের কাছে প্রচার করার সময় যীশু কীভাবে উদাহরণ রেখেছিলেন?
১৫ শিক্ষা দেওয়ার সময় যীশু প্রায়ই ঈশ্বরের বাক্য থেকে উদ্ধৃতি করতেন। তাঁর শ্রোতারা “তাঁহার উপদেশে চমৎকার জ্ঞান” করত। (মথি ৭:২৮) আর কোন সন্দেহ নেই যে যীশু যা কিছু শিখিয়েছিলেন সেগুলো ছিল আসলে যিহোবা ঈশ্বরের শিক্ষা! যীশু বলেছিলেন: “আমার উপদেশ আমার নহে, কিন্তু যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তাঁহার। যে আপনা হইতে বলে, সে আপনারই গৌরব চেষ্টা করে; কিন্তু যিনি আপন প্রেরণকর্ত্তার গৌরব চেষ্টা করেন, তিনি সত্যবাদী, আর তাঁহাতে কোন অধর্ম্ম নাই।”—যোহন ১৭:১৬, ১৮.
১৬. ঈশ্বরের বাক্যের জন্য যীশু কতখানি ভালবাসা দেখিয়েছিলেন?
১৬ যীশুর মধ্যে কোন “অধর্ম্ম” ছিল না কিন্তু ১১৯ গীতের লেখক অসিদ্ধ ছিলেন। যীশুর মধ্যে কোন পাপ ছিল না, তিনি ছিলেন ঈশ্বরের পুত্র, যিনি “আপনাকে অবনত করিলেন; মৃত্যু পর্য্যন্ত . . . আজ্ঞাবহ হইলেন।” (ফিলিপীয় ২:৮; ইব্রীয় ৭:২৬) সিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও, যীশু ঈশ্বরের ব্যবস্থা অধ্যয়ন করেছিলেন এবং মেনে চলেছিলেন। আনুগত্য বজায় রাখার পিছনে এটাই ছিল তাঁর মূল শক্তি। পিতর যখন তাঁর প্রভুকে গ্রেপ্তার হওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য অস্ত্র ব্যবহার করেছিলেন তখন যীশু তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “তুমি কি মনে কর যে, আমি আমার পিতার কাছে বিনতি করিলে তিনি এখনই আমার জন্য দ্বাদশ বাহিনী অপেক্ষা অধিক দূত পাঠাইয়া দিবেন না? কিন্তু তাহা করিলে কেমন করিয়া শাস্ত্রীয় এই বচন সকল পূর্ণ হইবে যে, এরূপ হওয়া আবশ্যক?” (মথি ২৬:৫৩, ৫৪) হ্যাঁ, নির্মম ও অপমানজনক মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার চেয়ে শাস্ত্রের পরিপূর্ণতাই যীশুর কাছে বড় বিষয় ছিল। ঈশ্বরের বাক্যের জন্য কী অসাধারণ ভালবাসা!
খ্রীষ্টের অন্য অনুকারীরা
১৭. প্রেরিত পৌল ঈশ্বরের বাক্যকে কতখানি ভালবাসতেন?
১৭ প্রেরিত পৌল খ্রীষ্টান ভাইবোনদের লিখেছিলেন: “যেমন আমিও খ্রীষ্টের অনুকারী, তোমরা তেমনি আমার অনুকারী হও।” (১ করি. ১০:৩৪) তার প্রভুর মতো পৌলও শাস্ত্রের জন্য ভালবাসা গড়ে তুলেছিলেন। তিনি স্বীকার করেছিলেন: “আমি আমার সমস্ত মনপ্রাণ দিয়ে ঈশ্বরের ব্যবস্থাকে ভালবাসি।” (রোমীয় ৭:২২, দ্যা যিরূশালেম বাইবেল) পৌল সবসময়ই ঈশ্বরের বাক্য থেকে কথা বলতেন। (প্রেরিত ১৩:৩২-৪১; ১৭:২, ৩; ২৮:২৩) তার এক প্রিয় সহকারীকে শেষ উপদেশ দেওয়ার সময় পৌল তাকে বুঝিয়েছিলেন যে ‘ঈশ্বরের লোকেদের’ প্রতিদিনের জীবনে ঈশ্বরের বাক্য কতখানি জায়গা জুড়ে থাকবে।—২ তীমথিয় ৩:১৫-১৭.
১৮. আজকের দিনে ঈশ্বরের বাক্যের জন্য সম্মান দেখিয়েছিলেন এমন একজনের কথা বলুন।
১৮ আজকের দিনে যিহোবার অনেক বিশ্বস্ত দাসেরাও ঈশ্বরের বাক্যকে ততখানিই ভালবাসেন যেভাবে যীশু ভালবাসতেন। এই শতাব্দীর প্রথম দিকে একজন যুবক তার এক বন্ধুর কাছ থেকে একটা বাইবেল পেয়েছিলেন। এই অত্যন্ত দামি উপহারটা তার জীবনে কীভাবে কাজ করেছিল সে সম্বন্ধে তিনি এভাবে বর্ণনা করেছিলেন: “আমি রোজ বাইবেল থেকে কিছুটা অংশ অবশ্যই পড়ব বলে স্থির করেছিলাম।” সেই যুবক ছিলেন ফ্রেডরিক ফ্রাঞ্জ আর বাইবেলের জন্য তার ভালবাসা ছিল বলে তিনি সারাজীবন আনন্দের সঙ্গে ঈশ্বরের সেবা করে কাটিয়েছিলেন। লোকেরা তার সম্বন্ধে জানেন যে তিনি পুরো বাইবেলের যে কোন পদই মুখস্থ বলতে পারতেন।
১৯. ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয়ের সাপ্তাহিক বাইবেল পাঠের জন্য কেউ কেউ কীভাবে তৈরি হন?
১৯ যিহোবার সাক্ষিরা রোজ বাইবেল পড়ার জন্য অনেক চেষ্টা করে থাকেন। প্রতি সপ্তাহে ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয়ের জন্য তৈরি হতে তারা বাইবেলের কিছু অধ্যায় পড়েন। নির্ধারিত বাইবেল পাঠের মূল বিষয়গুলো সভাতে আলোচনা করা হয়। কিছু খ্রীষ্টান সাপ্তাহিক বাইবেল পাঠকে সাতটা ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে প্রতিদিন একেকটা ভাগ পড়েন। পড়ার সময় তারা বিষয়বস্তু নিয়ে চিন্তা করেন। সম্ভব হলে তারা বাইবেল ভিত্তিক বইপত্রিকা থেকে অতিরিক্ত গবেষণাও করে থাকেন।
২০. রোজ বাইবেল পড়ার জন্য সময় করে নিতে কী দরকার?
২০ রোজ বাইবেল পড়ার জন্য আপনাকে হয়তো অন্যান্য কাজের মধ্যে থেকে ‘সুযোগ কিনিয়া লইতে’ হতে পারে। (ইফিষীয় ৫:১৬) কিন্তু, যে উপকার আপনি পাবেন তা যে কোন ত্যাগস্বীকারের চেয়েও অনেক বেশি। আপনি যখন রোজ বাইবেল পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলবেন ঈশ্বরের বাক্যের জন্য আপনার ভালবাসা বাড়বে। আর তখন আপনিও গীতরচকের মতো বলতে চাইবেন: “আমি তোমার ব্যবস্থা কেমন ভালবাসি! তাহা সমস্ত দিন আমার ধ্যানের বিষয়।” (গীতসংহিতা ১১৯:৯৭) এইরকম মনোভাব এখন ও ভবিষ্যতের জন্য প্রচুর উপকার নিয়ে আসবে, যা পরের প্রবন্ধে আলোচনা করা হয়েছে।
আপনার কি মনে আছে?
◻ ১১৯ গীতের লেখক কীভাবে ঈশ্বরের বাক্যের জন্য গভীর ভালবাসা দেখিয়েছিলেন?
◻ যীশু ও পৌলের উদাহরণ থেকে আমরা কোন্ শিক্ষা পেতে পারি?
◻ আমরা নিজেরা কীভাবে ঈশ্বরের বাক্যের জন্য ভালবাসা বাড়িয়ে তুলতে পারি?
[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]
বিশ্বস্ত রাজাদের রোজ ঈশ্বরের বাক্য পড়তে হতো। আপনি কি পড়েন?
[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]
বালক অবস্থায়ও যীশুর ঈশ্বরের বাক্যের জন্য ভালবাসা ছিল