যিহোবা প্রচুর পরিমাণে শান্তি ও সত্য প্রদান করেন
“আমি . . . তাহাদিগকে সুস্থ করিব, ও তাহাদের কাছে প্রচুর শান্তি ও সত্য প্রকাশ করিব।”—যিরমিয় ৩৩:৬.
১, ২. (ক) শান্তির ক্ষেত্রে জাতিগণের রেকর্ড কী দেখায়? (খ) সা.শ.পূ. ৬০৭ সালে শান্তি সম্বন্ধে যিহোবা ইস্রায়েলকে কী শিক্ষা দেন?
শান্তি! এটি কতই না কাম্য, তবুও মানব ইতিহাসে এটি কতই না বিরল! এই বিংশ শতাব্দী, বিশেষকরে শান্তির শতাব্দী ছিল না। বরঞ্চ, এটি মানব ইতিহাসের দুটি সবচাইতে ধ্বংসাত্মক যুদ্ধগুলি প্রত্যক্ষ করেছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর, পৃথিবীতে শান্তি বজায় রাখার জন্য জাতিপুঞ্জের প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেই সংগঠনটি ব্যর্থ হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, সেই একই উদ্দেশ্য নিয়ে রাষ্ট্রসংঘের সংগঠনটিও প্রতিষ্ঠিত হয়। আমাদের কেবলমাত্র দৈনিক সংবাদপত্রগুলি পড়তে হবে, দেখার জন্য যে এটিও কিভাবে সম্পূর্ণ অকৃতকার্য হচ্ছে।
২ মনুষ্য সংগঠন যে শান্তি আনতে পারবে না এটি জেনে কি আমাদের আর্শ্চয হওয়া উচিত? কখনই নয়। ২,৫০০ বছরেরও বেশি আগে, ঈশ্বরের মনোনীত লোক, ইস্রায়েলকে, এই বিষয়ের উপর এক শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল। সা.শ.পূ. সপ্তম শতাব্দীতে ইস্রায়েলের শান্তি উদীয়মান বিশ্বশক্তি, বাবিলনের দ্বারা বিঘ্নিত হয়। ইস্রায়েল মিশরের কাছ থেকে শান্তির আশা করেছিল। মিশর অকৃতকার্য হয়েছিল। (যিরমিয় ৩৭:৫-৮; যিহিষ্কেল ১৭:১১-১৫) সা.শ.পূ. ৬০৭ সালে, বাবিলনীয় সৈন্যেরা যিরূশালেমের প্রাচীর ভেঙে ফেলে এবং যিহোবার মন্দির পুড়িয়ে দেয়। ফলে মনুষ্য সংগঠনের উপর নির্ভর করার ব্যর্থতা ইস্রায়েলীয়রা খুব কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে উপলব্ধি করতে পেরেছিল। শান্তি উপভোগ করার পরিবর্তে জাতিটিকে বাবিলনে বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হয়।—২ বংশাবলি ৩৬:১৭-২১.
৩. যিরমিয়ের মাধ্যমে যিহোবার বাক্যের পরিপূর্ণতাস্বরূপ কোন্ ঐতিহাসিক ঘটনাগুলি শান্তি সম্বন্ধে ইস্রায়েলদের এক দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়?
৩ যিরূশালেম পতনের ঠিক আগে, যিহোবা কিন্তু প্রকাশ করে দিয়েছিলেন যে ইস্রায়েলে প্রকৃত শান্তি তিনিই নিয়ে আসবেন, মিশর নয়। যিরমিয়ের মাধ্যমে তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন: “আমি . . . তাহাদিগকে সুস্থ করিব, ও তাহাদের কাছে প্রচুর শান্তি ও সত্য প্রকাশ করিব। আর আমি যিহূদার ও ইস্রায়েলের বন্দি-দশা ফিরাইব, এবং পূর্ব্বকালের ন্যায় পুনর্ব্বার তাহাদিগকে গাঁথিয়া তুলিব।” (যিরমিয় ৩৩:৬, ৭) যিহোবার প্রতিজ্ঞা সা.শ.পূ. ৫৩৯ সালে পরিপূর্ণতা লাভ করতে শুরু করে, যখন বাবিলনকে জয় করা হয় এবং ইস্রায়েলীয় বন্দীদের মুক্তি দেওয়া হয়। (২ বংশাবলি ৩৬:২২, ২৩) সা.শ.পূ. ৫৩৭ সালের শেষের দিকে ইস্রায়েলীয়দের একটি দল ৭০ বছরের মধ্যে প্রথমবার ইস্রায়েলের মাটিতে কুটীর পর্ব উদ্যাপন করে! সেই উৎসবের পর, তারা যিহোবার মন্দির পুনর্নির্মাণ করার কাজ শুরু করে। এই সম্বন্ধে তাদের কী অনুভূতি হয়েছিল? বিবরণীটি জানায়: “সদাপ্রভুর গৃহের ভিত্তিমূল স্থাপন সময়ে সদাপ্রভুর প্রশংসা করিতে করিতে সমস্ত লোক উচ্চৈঃস্বরে জয়ধ্বনি করিল।”—ইষ্রা ৩:১১.
৪. কিভাবে যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের মন্দির নির্মাণ কাজের জন্য উৎসাহিত করেন এবং শান্তি সম্বন্ধে তিনি কী প্রতিশ্রুতি দেন?
৪ আনন্দের সাথে শুরু করার পর, ইস্রায়েলীয়রা কিন্তু বিরোধিতার জন্য নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ে এবং তারা মন্দির নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেয়। কিছু বছর পর যিহোবা ভাববাদী হগয় ও সখরিয়কে ব্যবহার করেন ইস্রায়েলীয়দের উৎসাহিত করতে যাতে করে পুনর্নির্মাণের কাজ শেষ করা যায়। মন্দির নির্মাণ করা সম্বন্ধে হগয়ের কথা তাদের মধ্যে কতই না উত্তেজনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল: “এই গৃহের পূর্ব্ব প্রতাপ অপেক্ষা উত্তর প্রতাপ গুরুতর হইবে, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু বলেন; আর এই স্থানে আমি শান্তি প্রদান করিব”!—হগয় ২:৯.
যিহোবা তাঁর প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করেন
৫. সখরিয় পুস্তকের অষ্টম অধ্যায়টি কোন্ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য?
৫ বাইবেলের সখরিয় পুস্তকে, আমরা বহু অনুপ্রাণিত দর্শন ও ভবিষ্যদ্বাণীর কথা পড়ি যা ঈশ্বরের লোকেদের সা.শ.পূ. ষষ্ঠ শতাব্দীতে দৃঢ় করে তুলেছিল। সেই একই ভবিষ্যদ্বাণীগুলি যিহোবার সাহায্য সম্বন্ধে ক্রমাগতভাবে আমাদেরও নিশ্চয়তা দিয়ে আসছে। এগুলি আমাদের বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ যোগায় যে আমাদের দিনেও যিহোবা তাঁর লোকেদের শান্তি দেবেন। উদাহরণস্বরূপ, বইটির অষ্টম অধ্যায়ে যেখানে তাঁর নাম পাওয়া যায়, ভাববাদী সখরিয় দশবার এই বাক্যগুলি উচ্চারণ করেছেন: ‘যিহোবা এই কথা কহেন।’ প্রতিবার, এই ঐশিক ঘোষণা প্রকাশ করার সাথে ঈশ্বরের লোকেদের শান্তির এক যোগসূত্র লক্ষ্য করা যায়। কয়েকটি প্রতিজ্ঞা সখরিয়ের দিনেই পরিপূর্ণতা লাভ করেছিল। অন্য সমস্তগুলি ইতিমধ্যেই আজ পরিপূর্ণতা লাভ করেছে অথবা পরিপূর্ণতা লাভ করতে চলেছে।
“আমি . . . অন্তর্জ্বালায় সিয়োনের জন্য জ্বলিয়াছি”
৬, ৭. কোন্ ক্ষেত্রে যিহোবা ‘সিয়োনের জন্য অন্তর্জ্বালায় জ্বলছেন’?
৬ এই অভিব্যক্তিটি প্রথম প্রকাশ পায় সখরিয় ৮:২ পদে, যেখানে আমরা পড়ি: “বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমি মহৎ অন্তর্জ্বালায় সিয়োনের জন্য জ্বলিয়াছি, আর আমি তাহার জন্য মহাক্রোধে জ্বলিয়াছি।” যিহোবা ঈর্ষান্বিত হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন, তাঁর লোকের প্রতি অধিক পরিমাণে উদ্যোগী হওয়ার অর্থ হল যে তিনি তাদের পুনর্স্থাপিত করার ক্ষেত্রে সজাগ থাকবেন। ইস্রায়েলদের নিজের দেশে ফিরিয়ে আনা এবং মন্দির পুনর্নির্মাণ করা হল সেই উদ্যোগেরই প্রমাণ।
৭ যিহোবার লোকেদের যারা বিরোধিতা করেছে তাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? তাঁর লোকেদের প্রতি তিনি যেরকম উদ্যোগ দেখাবেন ঠিক একই রকমভাবে তিনি এই শত্রুদের উপর তাঁর ‘মহাক্রোধ’ বর্ষণ করবেন। যখন বিশ্বস্ত যিহূদীরা পুনর্নিমিত মন্দিরে উপাসনা করত, তখন তারা মহৎ বাবিলন, যার পতন ঘটেছে, তার পরিণতি সম্বন্ধে চিন্তা করতে পারত। তাছাড়াও তারা শত্রুদের সম্পূর্ণ অকৃতকার্যতার কথাও ভাবতে পারত, যারা মন্দির পুনর্নিমাণে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। (ইষ্রা ৪:১-৬; ৬:৩) আর তারা যিহোবাকে তাঁর প্রতিজ্ঞা পালন করার জন্য ধন্যবাদ দিতেও পারত। তাঁর উদ্যোগই তাদের জয়ী করে তুলেছিল!
“সত্যপুরী”
৮. প্রাচীন কালের বিপরীতে, সখরিয়ের দিনে কিভাবে যিরূশালেম সত্যপুরী হতে পেরেছিল?
৮ দ্বিতীয়বার সখরিয় লেখেন: “সদাপ্রভু এই কথা কহেন।” কোন্ পরিস্থিতিতে যিহোবা এই বাক্যগুলি বলেন? “আমি সিয়োনে ফিরিয়া আসিয়াছি, আমি যিরূশালেমের মধ্যে বাস করিব; আর যিরূশালেম সত্যপুরী নামে, এবং বাহিনীগণের সদাপ্রভুর পর্ব্বত পবিত্র পর্ব্বত নামে আখ্যাত হইবে।” (সখরিয় ৮:৩) সা.শ.পূ. ৬০৭ সালের আগে যিরূশালেম কোন রকমভাবেই সত্যপুরী ছিল না। এর যাজক ও ভাববাদীরা ছিল কলুষিত এবং এর লোকেরা ছিল অবিশ্বস্ত। (যিরমিয় ৬:১৩; ৭:২৯-৩৪; ১৩:২৩-২৭) এখন ঈশ্বরের লোকেরা মন্দির পুনর্নির্মাণ করছিল আর এর মাধ্যমে তারা পবিত্র উপাসনার প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি পালন করেছিল। আত্মিকভাবে যিহোবা আবার যিরূশালেমে অবস্থান করতে আরম্ভ করেন। আবার সেখানে সত্য উপাসনার কথা বলা হয়, অতএব আবার যিরূশালেমকে “সত্যপুরী” বলা যেতে পারে। তার উচ্চস্থানটিকে “সদাপ্রভুর পর্ব্বত” বলা যেতে পারে।
৯. “ঈশ্বরের ইস্রায়েল” ১৯১৯ সালে কোন্ পরিস্থিতির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন উপলব্ধি
৯ যদিও এই দুটি ঘোষণা প্রাচীন ইস্রায়েলের কাছে অর্থপূর্ণ ছিল আর বিংশ শতাব্দী যতই শেষের দিকে এগিয়ে আসছে তা আমাদের জন্যও বিশেষ অর্থ রাখে। প্রায় ৮০ বছর আগে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়, কয়েক সহস্র অভিষিক্তেরা, যারা তখন “ঈশ্বরের ইস্রায়েল” এর প্রতিনিধিত্ব করত, তারা আত্মিক বন্দীত্ব বরণ করেছিল, ঠিক যেমন প্রাচীন ইস্রায়েল বাবিলনীয় বন্দিত্বে ছিল। (গালাতীয় ৬:১৬) ভবিষ্যদ্বাণীমূলকভাবে, তাদের রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহের সাথে তুলনা করা হয়েছিল। তবুও, তাদের “আত্মায় ও সত্যে” যিহোবাকে উপাসনা করার আন্তরিক ইচ্ছা ছিল। (যোহন ৪:২৪) সুতরাং, ১৯১৯ সালে, যিহোবা বন্দীত্ব থেকে তাদের মুক্তি দেন এবং আত্মিকভাবে মৃত অবস্থা থেকে তাদের উত্থিত করেন। (প্রকাশিত বাক্য ১১:৭-১৩) সুতরাং যিহোবা স্পষ্টভাবে হ্যাঁ বলেন যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণীমূলক প্রশ্নে: “এক দিবসে কি কোন দেশের জন্ম হইবে? কোন জাতি কি একেবারেই ভূমিষ্ঠ হইবে?” (যিশাইয় ৬৬:৮) ১৯১৯ সালে, যিহোবার লোকেরা আবার আত্মিক জাতি হিসাবে তাদের নিজের ‘দেশে’ অর্থাৎ পৃথিবীতে এক আধ্যাত্মিক ভূমিতে অস্তিত্বে আসে।
১০. ১৯১৯ সাল থেকে আরম্ভ করে, কোন্ আশীর্বাদগুলি অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা তাদের “দেশ”-এ উপভোগ করেছিল?
১০ নিজেদের দেশে সুরক্ষিত অবস্থায়, অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা যিহোবার মহান আত্মিক মন্দিরে উপাসনা করে চলে। তাদের “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস,” হিসাবে গণ্য করা হয়, যারা যীশুর পার্থিব পরিজনের যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব নেয়, এমন এক সুযোগ যা তারা এখনও উপভোগ করে যতই এই বিংশ শতাব্দী শেষের দিকে এগিয়ে আসছে। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) তারা ভালভাবে এই শিক্ষা পেয়েছে যে যিহোবাই হলেন “শান্তির ঈশ্বর।”—১ থিষলনীকীয় ৫:২৩.
১১. কিভাবে খ্রীষ্টজগতের ধর্মীয় নেতারা নিজেদের ঈশ্বরের লোকেদের শত্রু হিসাবে প্রতিপন্ন করে?
১১ ইস্রায়েলের ঈশ্বরের শত্রুদের সম্বন্ধে কী? তাঁর লোকেদের প্রতি যিহোবার যেমন উদ্যোগ ঠিক তেমনি তাঁর ক্রোধ রয়েছে বিরোধীদের উপর। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় খ্রীষ্টজগতের ধর্মীয় নেতারা প্রচন্ড চাপ আনে যখন তারা চেষ্টা করে—এবং অকৃতকার্য হয়—সত্যভাষী খ্রীষ্টানদের একটি ছোট দলকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় খ্রীষ্টজগতের পরিচারকেরা একটি বিষয়ে একতাবদ্ধ ছিল: সংঘর্ষের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত দুটি দলের সরকারকেই তারা প্ররোচিত করে যিহোবার সাক্ষীদের দমন করতে। এমনকি আজকের দিনেও, বহু জায়গায় ধর্মীয় নেতারা সরকারকে প্ররোচিত করে যিহোবার সাক্ষীদের খ্রীষ্টীয় প্রচারের কাজকে নিয়ন্ত্রিত করতে বা তার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে।
১২, ১৩. খ্রীষ্টজগতের বিরুদ্ধে কিভাবে যিহোবার ক্রোধ প্রকাশ পায়?
১২ এটি যিহোবার কাছে অলক্ষিত থাকেনি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর, খ্রীষ্টজগৎ এবং তার সাথে মহতী বাবিলের বাকি অংশ, এক পতনের অভিজ্ঞতা লাভ করেছিল। (প্রকাশিত ১৪:৮) খ্রীষ্টজগতের যে পতন তার বাস্তবতা জনসাধারণ জানতে পারে যখন, ১৯২২ সাল থেকে আরম্ভ করে, একটির পর একটি রূপক আঘাতগুলি বর্ষিত হয়, সকলের কাছে তার আধ্যাত্মিক মৃত অবস্থাকে প্রকাশ করে দেয় এবং তার আসন্ন ধ্বংস সম্বন্ধে সতর্ক করে দেয়। (প্রকাশিত বাক্য ৮:৭–৯:২১) এই আঘাতগুলি বর্ষিত যে হয়েই চলেছে তার প্রমাণস্বরূপ, “মিথ্যা ধর্মের শেষ নিকট” নামক এই বক্তৃতাটি ২৩শে এপ্রিল, ১৯৯৫ সালে, পৃথিবীব্যাপী দেওয়া হয় এবং তারই সাথে রাজ্য সংবাদ নামক একটি বিশেষ সংস্করণের লক্ষাধিক কপি বন্টন করা হয়।
১৩ আজকে, খ্রীষ্টজগৎ এক দুঃখজনক পরিস্থিতিতে রয়েছে। সমগ্র বিংশ শতাব্দীতে, তার সদস্যেরা একে অপরকে হত্যা করেছে সেই সব নৃশংস যুদ্ধগুলিতে, যেগুলি তার যাজকেরা ও পরিচারকেরা আশীর্বাদযুক্ত করেছে। কয়েকটি দেশে তার প্রভাব বলতে গেলে একেবারেই নেই। মহতী বাবিল ও তার বাকি অংশের সাথে এর ধ্বংস অনিবার্য।—প্রকাশিত বাক্য ১৮:২১.
যিহোবার লোকেদের জন্য শান্তি
১৪. শান্তিতে আছে এমন লোকেদের কোন্ ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বাক্যের চিত্র দেওয়া হয়েছে?
১৪ অন্যদিকে আবার, এই বছর ১৯৯৬ সালে, যিহোবার লোকেরা তাদের পুনর্স্থাপিত দেশে প্রচুর পরিমাণে শান্তি উপভোগ করছে, যেমন যিহোবার তৃতীয় ঘোষণাতে এর বর্ণনা পাওয়া যায়: “বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, যাহারা অধিক বয়স প্রযুক্ত প্রত্যেকে লাঠি হাতে করে, এমন প্রাচীনেরা ও প্রাচীনারা পুনর্ব্বার যিরূশালেমের চকে বসিবে। আর চকে ক্রীড়া করে, এমন বালক বালিকাতে নগরের চক সকল পরিপূর্ণ হইবে।”—সখরিয় ৮:৪, ৫.
১৫. জাতিদের মধ্যে যুদ্ধ থাকা সত্ত্বেও, যিহোবার দাসেরা কিধরনের শান্তি উপভোগ করেছে?
১৫ এই আনন্দদায়ক বাক্যসুলভ চিত্রটি এই যুদ্ধ বিধ্বস্ত জগতে এক উল্লেখযোগ্য বিষয়টিকে প্রকাশ করে—অর্থাৎ মানুষেরা শান্তিতে রয়েছে। ১৯১৯ সাল থেকে, যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বাক্যগুলি পরিপূর্ণতা লাভ করে আসছে: “শান্তি নিকটবর্ত্তী ও দূরবর্ত্তী উভয়েরই শান্তি, ইহা সদাপ্রভু কহেন; হাঁ, আমি তাহাকে সুস্থ করিব! কিন্তু . . . আমার ঈশ্বর কহেন, দুষ্ট লোকদের কিছুই শান্তি নাই।” (যিশাইয় ৫৭:১৯-২১) অবশ্য, যিহোবার লোকেরা, জগতের অংশ না হয়েও তারা জাতিগুলির উচ্ছৃঙ্খলতার প্রভাবকে এড়াতে পারত না। (যোহন ১৭:১৫, ১৬) কয়েকটি দেশে তারা চরম কষ্ট সহ্য করে এমনকি কয়েকজন নিহতও হয়েছে। কিন্তু তবুও, প্রকৃত খ্রীষ্টানদের শান্তি রয়েছে প্রধানত দুটি উপায়ে। প্রথমত, তাদের “প্রভু যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা [তাদের] ঈশ্বরের উদ্দেশে সন্ধি” আছে। (রোমীয় ৫:১) দ্বিতীয়ত, তাদের নিজেদের মধ্যে শান্তি রয়েছে। তারা “যে জ্ঞান উপর হইতে আইসে” তা অর্জন করে, যা হল “প্রথমে শুচি, পরে শান্তিপ্রিয়।” (যাকোব ৩:১৭; গালাতীয় ৫:২২-২৪) এছাড়াও তারা আগ্রহে অপেক্ষা করে আছে পূর্ণ অর্থে সেই শান্তি উপভোগ করার জন্য যখন “মৃদুশীলেরা দেশের [“পৃথিবীর,” NW] অধিকারী হইবে, এবং শান্তির বাহুল্যে আমোদ করিবে।”—গীতসংহিতা ৩৭:১১.
১৬, ১৭. (ক) কিভাবে “প্রাচীনেরা ও প্রাচীনারা” এবং “বালক বালিকা” যিহোবার সংগঠনকে সুদৃঢ় করে তুলেছে? (খ) কোন্ জিনিসটি যিহোবার লোকেদের শান্তিকে প্রকাশ করে?
১৬ আজও যিহোবার লোকেদের মধ্যে ‘প্রাচীন ও প্রাচীনারা’, অভিষিক্ত জনেরা আছেন যারা যিহোবার সংগঠনের প্রাথমিক জয়গুলির কথা মনে রেখেছেন। তাদের বিশ্বস্ততা ও সহিষ্ণুতা বিশেষভাবে প্রশংসার যোগ্য। অল্পবয়সী অভিষিক্তেরা ১৯৩০ এর দশকে ও ২য় বিশ্বযুদ্ধের অগ্নিময় দিনগুলিতে এবং পরবর্তী বছরগুলিতে যে বৃদ্ধি হয়েছিল সেই ক্ষেত্রে নেতৃত্ব নিয়েছিলেন। এছাড়াও, বিশেষকরে ১৯৩৫ সাল থেকে, “অপর মেষ”এর অন্তর্ভুক্ত “বিস্তর লোক” নিজের থেকেই প্রকাশ পেতে শুরু করে। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯; যোহন ১০:১৬, NW) যতই অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা বৃদ্ধ হয়ে পড়ছে ও তাদের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে, অপর মেষেরা প্রচার কাজকে তুলে ধরেছে এবং তারা তা সমগ্র পৃথিবীতে প্রসারিত করে চলেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে অপর মেষেরা ঈশ্বরের লোকেদের দেশে স্রোতের মত প্রবাহিত হচ্ছে। কেবল গত বছরেই, ৩,৩৮,৪৯১ জন যিহোবার উদ্দেশ্যে তাদের উৎসর্গীকরণের চিহ্নস্বরূপ বাপ্তিস্ম নিয়েছে! এই নতুন ব্যক্তিরা আধ্যাত্মিকভাবে অবশ্যই খুবই অল্পবয়সী। তাদের সতেজতা ও উদ্যোগকে মূল্যবান জ্ঞান করা হয় যতই তারা সেই শ্রেণীর সংখ্যাকে বাড়িয়ে তুলছে যারা কৃতজ্ঞতার সাথে প্রশংসার এই গীত গায় “আমাদের ঈশ্বরের, যিনি সিংহাসনে বসিয়া আছেন, এবং মেষশাবকের দান।”—প্রকাশিত বাক্য ৭:১০.
১৭ আজকে, ‘চকগুলি বালক ও বালিকাদের দ্বারা পূর্ণ,’ সেইসব সাক্ষীদের দ্বারা যাদের মধ্যে তারুণ্যসুলভ এক উদ্যোগ রয়েছে। ১৯৯৫ সালের পরিচর্যা বছরে, ২৩২টি দেশ ও সমুদ্রবর্তী দ্বীপগুলির থেকে রিপোর্ট পাওয়া গেছে। কিন্তু এখানে অভিষিক্ত ও অপর মেষেদের মধ্যে কোন আন্তর্জাতিক বিরোধিতা, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, নিরর্থক ঈর্ষা দেখা যায় না। সকলেই একসাথে আধ্যাত্মিকভাবে বেড়ে ওঠে, প্রেমে একতাবদ্ধ থাকে। জগতের এই প্রেক্ষাপটে যিহোবার সাক্ষীদের জগদ্ব্যাপী ভ্রাতৃসমাজ সত্যই খুবই স্বতন্ত্র।—কলসীয় ৩:১৪; ১ পিতর ২:১৭.
যিহোবার পক্ষে কি খুবই কঠিন?
১৮, ১৯. ১৯১৯ সালের পর থেকে যিহোবা কী সম্পাদন করতে পেরেছিলেন যা হয়ত মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিপ্রেক্ষিতে অসম্ভব বলে মনে হয়েছিল?
১৮ ১৯১৮ সালে যখন অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশদের সংখ্যা মাত্র কয়েক হাজারে সীমাবদ্ধ ছিল আর নিরুৎসাহিত প্রাণী হিসাবে তারা আধ্যাত্মিক বন্দীদশায় ছিল, তখন কেউ ভাবতে পারেনি যে ঘটনাগুলি এইধরনের মোড় নেবে। কিন্তু, যিহোবা তা জানতেন—যা তাঁর চতুর্থ ভবিষ্যদ্বাণীমূলক ঘোষণার দ্বারা প্রকাশ পায়: “বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, এই লোকদের অবশিষ্টাংদের দৃষ্টিতে তাহা যদি তৎকালে অসম্ভব বোধ হয়, তবে কি আমার দৃষ্টিতেও অসম্ভব বোধ হইবে? ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু বলেন।”—সখরিয় ৮:৬.
১৯ ১৯১৯ সালে, যিহোবার আত্মা আসন্ন কাজের জন্য তাঁর লোকেদের পুনর্জাগ্রত করে। তবুও, যিহোবার সেই ছোট সংগঠনকে ধরে রাখার জন্য বিশ্বাসের প্রয়োজন ছিল। তাদের সংখ্যা ছিল খুবই অল্প এবং অনেক বিষয় পরিষ্কার ছিল না। কিন্তু, ধীরে ধীরে যিহোবা সাংগঠনিকভাবে তাদের দৃঢ় করে তোলেন এবং সুসমাচার প্রচার ও শিষ্যকরণের এই খ্রীষ্টীয় কাজের জন্য তাদের প্রস্তুত করেন। (যিশাইয় ৬০:১৭, ১৯; মথি ২৪:১৪; ২৮:১৯, ২০) কালক্রমে, তিনি তাদের সাহায্য করেন নিরপেক্ষতা ও সার্বিক সার্বভৌমত্ব সম্বন্ধীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিকে বিচক্ষণতার সাথে বুঝতে। সাক্ষীদের এই ছোট দলের সাহায্যে তাঁর উদ্দেশ্য সম্পাদন করা কি যিহোবার পক্ষে খুবই কঠিন? এর উত্তর অবশ্যই না! এর প্রমাণ পাওয়া যাবে এই পত্রিকার ১২ থেকে ১৫ পৃষ্ঠার মধ্যে, যেখানে ১৯৯৫ সালের পরিচর্যা বছরে যিহোবার সাক্ষীদের একটি কাজের তালিকা দেওয়া হয়েছে।
“আমি তাহাদের ঈশ্বর হইব”
২০. ঈশ্বরের লোকেদের একত্রীকরণ কতখানি ব্যাপকতা লাভ করবে সেই সম্বন্ধে কী ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল?
২০ পঞ্চম ঘোষণাটি আরও স্পষ্টভাবে আজকের দিনে যিহোবার সাক্ষীদের আনন্দপূর্ণ পরিস্থিতির বর্ণনা দেয়: “বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি পূর্ব্ব দেশ হইতে ও পশ্চিম দেশ হইতে আপন প্রজাদিগকে নিস্তার করিব; আর আমি তাহাদিগকে আনিব, তাহাতে তাহারা যিরূশালেমের মধ্যে বাস করিবে; এবং সত্যে ও ধার্ম্মিকতায় তাহারা আমার প্রজা হইবে, ও আমি তাহাদের ঈশ্বর হইব।”—সখরিয় ৮:৭, ৮.
২১. কিভাবে যিহোবার লোকেদের প্রচুর শান্তিকে বজায় রাখা ও প্রসারিত করা হয়েছে?
২১ ১৯৯৬ সালে আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি যে সুসমাচার পৃথিবীর চারিদিকে প্রচারিত হয়েছে, “পূর্ব্ব দেশ” থেকে “পশ্চিম দেশ” পর্যন্ত। সমস্ত জাতির লোকেদের শিষ্য করা হয়েছে এবং তারা যিহোবার প্রতিজ্ঞার পরিপূর্ণতা দেখতে পাচ্ছে: “তোমার সন্তানেরা সকলে সদাপ্রভুর কাছে শিক্ষা পাইবে, আর তোমার সন্তানদের পরম শান্তি হইবে।” (যিশাইয় ৫৪:১৩) আমাদের শান্তি আছে কারণ আমরা যিহোবার দ্বারা শিক্ষাপ্রাপ্ত হয়েছি। এই উদ্দেশ্য নিয়েই ৩০০ এরও বেশি ভাষায় সাহিত্যাদি প্রকাশিত হয়। কেবল গত বছরেই, আরও বারতি ২১টি ভাষা এর সাথে যুক্ত হয়। প্রহরীদুর্গ পত্রিকা এখন এক সাথে ১১১টি ভাষায় এবং সচেতন থাক! ৫৪টি ভাষায় প্রকাশিত হচ্ছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলি ঈশ্বরের লোকেদের শান্তিকে জনসাধারণ্যে উপস্থিত করে। সাপ্তাহিক সভাগুলি আমাদের একতাবদ্ধ করে এবং দৃঢ় থাকার জন্য যে উৎসাহের প্রয়োজন তা আমাদের দিয়ে থাকে। (ইব্রীয় ১০:২৩-২৫) হ্যাঁ, যিহোবা তাঁর লোকেদের “সত্যে ও ধার্ম্মিকতায়” শিক্ষিত করে তুলেছেন। তিনি তাঁর লোকেদের শান্তি প্রদান করছেন। এই প্রচুর শান্তিতে অংশ পাওয়ার জন্য আমরা কতই না আশীর্বাদপ্রাপ্ত!
আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?
◻ আধুনিক কালে, কিভাবে যিহোবা তাঁর লোকেদের জন্য ‘অন্তর্জ্বালায় জ্বলছেন’?
◻ এমনকি যুদ্ধ-বিদ্ধস্ত দেশগুলিতেও যিহোবার লোকেরা কিভাবে শান্তি উপভোগ করে?
◻ কোন্ অর্থে ‘চকগুলি বালক বালিকার দ্বারা পরিপূর্ণ’?
◻ যিহোবার লোকেরা যেন তাঁর দ্বারা শিক্ষাপ্রাপ্ত হতে পারে তার জন্য কোন্ ব্যবস্থাগুলি গ্রহণ করা হয়েছে?
[১২-১৫ পৃষ্ঠার তালিকা]
বিশ্বব্যাপী যিহোবার সাক্ষীদের ১৯৯৮ পরিচর্যা বছরের রিপোর্ট
(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)
[৮, ৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
সা.শ.পূ. ষষ্ঠ শতাব্দীতে, বিশ্বস্ত যিহূদীরা যারা মন্দির পুনর্নিমাণ করেছিল তারা বুঝতে পেরেছিল যে যিহোবাই হলেন শান্তির একমাত্র নির্ভরযোগ্য উৎস