ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w৯৭ ৪/১ পৃষ্ঠা ৪-৮
  • এটাই কি প্রকৃতপক্ষে শেষ কাল?

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • এটাই কি প্রকৃতপক্ষে শেষ কাল?
  • ১৯৯৭ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • যীশুর অনুগামীরা এক অর্থপূর্ণ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে
  • যিরূশালেমের বিনাশ
  • শেষ কালে যুদ্ধ
  • চিহ্নের অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলি
  • আমাদের বংশটি সম্বন্ধেই কি ভাববাণী করা হয়েছিল?
  • সুসমাচার
  • আমরা কি “শেষ কালে” বাস করছি?
    বাইবেল প্রকৃতপক্ষে কী শিক্ষা দেয়?
  • কী করে জানতে পারি যে আমরা “শেষ কালে” বাস করছি
    ঈশ্বর কি প্রতই আমাদের জন্য চিন্তা করেন?
  • যিশু এক সুদূরপ্রসারী ভবিষ্যদ্‌বাণী প্রদান করেন
    বাইবেল—এই বইয়ে কোন বার্তা রয়েছে?
১৯৯৭ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w৯৭ ৪/১ পৃষ্ঠা ৪-৮

এটাই কি প্রকৃতপক্ষে শেষ কাল?

আপনি একটি নৌকার অগ্রভাগে আছেন যখন এটি নদীর এক বিপজ্জনক এলাকায় প্রবেশ করছে। জলপ্রপাতের ফেনা এবং বিন্দু বিন্দু জলকণার মধ্য দিয়ে প্রকাণ্ড শিলাখণ্ডগুলি দেখা যায়। আপনি সেগুলি প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেন। আপনার পাশের ব্যক্তিটির নৌকার হাল ধরতে সাহায্য করার কথা, কিন্তু তার অল্প অভিজ্ঞতা রয়েছে। আরও মন্দতর বিষয় হল, আপনার কোন মানচিত্র নেই, তাই এই স্রোত কোন শান্ত এলাকায় অথবা জলপ্রপাতে গিয়ে শেষ হবে কি না, সেই সম্বন্ধে আপনার কোন ধারণা নেই।

এটি এক মনোরম দৃশ্য বিবরণী নয়, তাই নয় কি? তাই আসুন আমরা এটিকে পরিবর্তন করি। কল্পনা করুন যে আপনার সাথে একজন অভিজ্ঞ পথপ্রদর্শক আছেন, যিনি এই নদীর প্রতিটি পাথর, প্রতিটি বাঁক সম্বন্ধে অবগত। তিনি অনেক আগে থেকেই জানেন যে এই ফেনিল জল নিকটবর্তী হচ্ছে, তিনি জানেন এটি কোথায় শেষ হবে এবং কিভাবে এর মধ্যে দিয়ে কৌশলে তার নিজস্ব পথে যাওয়া যায়। আপনি কি অনেক বেশি নিরাপদ অনুভব করবেন না?

প্রকৃতপক্ষে, আমরা সকলেই অনুরূপ বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছি। যদিও আমাদের নিজস্ব কোন দোষ নেই, আমরা নিজেদের মানব ইতিহাসের এক বিপজ্জনক অবস্থার মধ্যে দেখতে পাই। অধিকাংশ লোকেদের কোন ধারণা নেই যে কত দিন পরিস্থিতি এইভাবে চলবে, অবস্থার কোন উন্নতি হবে অথবা ইতিমধ্যে কী করে ভালভাবে বেঁচে থাকা যায়। কিন্তু আমাদের হতাশ অথবা অসহায় মনে করার প্রয়োজন নেই। আমাদের সৃষ্টিকর্তা আমাদের জন্য একটি পথপ্রদর্শক সরবরাহ করেছেন—যা ইতিহাসের এই অন্ধকারময় সময় সম্বন্ধে ভাববাণী করে, কিভাবে তা শেষ হবে সেই সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করে এবং রক্ষা পাওয়ার জন্য আমাদের যে নির্দেশনা প্রয়োজন তা প্রদান করে। সেই পথপ্রদর্শকটি হচ্ছে একটি বই, বাইবেল। এর লেখক, যিহোবা ঈশ্বর নিজেকে মহান নির্দেশদাতা হিসাবে অভিহিত করেন এবং যিশাইয়ের মাধ্যমে তিনি পুনরায় আশ্বাসজনকভাবে বলেন: “দক্ষিণে কি বামে ফিরিবার সময়ে তোমার কর্ণ পশ্চাৎ হইতে এই বাণী শুনিতে পাইবে, এই পথ, তোমরা এই পথেই চল।” (যিশাইয় ৩০:২০, ২১) এইধরনের নির্দেশনাকে কি আপনি স্বাগত জানাবেন? তাহলে, আসুন আমাদের দিন কিরূপ হবে সেই সম্বন্ধে বাইবেল প্রকৃতই ভাববাণী করেছিল কি না, আমরা তা বিবেচনা করি।

যীশুর অনুগামীরা এক অর্থপূর্ণ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে

যীশুর অনুগামীরা নিশ্চয়ই বিস্মিত হয়ে গিয়েছিলেন। যীশু এই মাত্র তাদের সম্পূর্ণ নিশ্চয়তার সাথে বলেছিলেন যে, যিরূশালেমের আকর্ষণীয় মন্দির গৃহটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হবে! এইধরনের একটি ভবিষ্যদ্বাণী বিস্ময়কর ছিল। এর কিছুক্ষণ পরেই, যখন তারা জৈতুন পর্বতের উপর বসেছিলেন, শিষ্যদের মধ্যে চার জন যীশুকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন: “‘আমাদিগকে বলুন দেখি, এই সকল ঘটনা কখন্‌ হইবে? আর আপনার আগমনের [“উপস্থিতির,” NW] এবং যুগান্তের চিহ্ন কি?’” (মথি ২৪:৩; মার্ক ১৩:১-৪) তারা এটি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন অথবা পারেননি, যীশুর উত্তরের একাধিক পরিপূর্ণতা ছিল।

যিরূশালেমের মন্দির ধ্বংস এবং যিহূদী বিধিব্যবস্থার শেষ, খ্রীষ্টের উপস্থিতি এবং সমস্ত জগতের যুগান্ত একই সময়ে ঘটার ছিল না। তৎসত্ত্বেও, তাঁর সুদীর্ঘ উত্তরে, যীশু দক্ষতার সাথে প্রশ্নের এই সমস্ত দিকগুলিকে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি তাদের বলেছিলেন, যিরূশালমের ধ্বংসের পূর্বে পরিস্থিতি কিরূপ হবে; তিনি তাদের আরও বলেছিলেন যে তাঁর উপস্থিতির সময়ে জগতের অবস্থা কেমন হবে বলে প্রত্যাশা করা যেতে পারে যখন তিনি স্বর্গে রাজা হিসাবে শাসন করবেন এবং সম্পূর্ণ জগৎ ব্যবস্থাকে তার পরিসমাপ্তিতে আনার জন্য শেষপ্রান্তে উপনীত করবেন।

যিরূশালেমের বিনাশ

প্রথমে যিরূশালেম এবং এর মন্দির সম্বন্ধে যীশু কী বলেছিলেন সে সম্বন্ধে বিবেচনা করুন। তিন দশকেরও বেশি আগে, তিনি পৃথিবীর বৃহত্তম শহরগুলির অন্যতম একটি সম্বন্ধে ভয়ঙ্কর কষ্টকর সময়ের বিষয়ে ভাববাণী করেছিলেন। লূক ২১:২০, ২১ পদে লিপিবদ্ধ তাঁর বাক্যগুলি বিশেষভাবে লক্ষ্য করুন: “যখন তোমরা যিরূশালেমকে সৈন্যসামন্ত দ্বারা বেষ্টিত দেখিবে, তখন জানিবে যে, তাহার ধ্বংস সন্নিকট। তখন যাহারা যিহূদিয়ায় থাকে, তাহারা পাহাড় অঞ্চলে পলায়ন করুক, এবং যাহারা নগরের মধ্যে থাকে, তাহারা বাহিরে যাউক; আর যাহারা পল্লীগ্রামে থাকে, তাহারা নগরে প্রবেশ না করুক।” যদি যিরূশালেমকে বেষ্টিত থাকতে হয়, সৈন্যসামন্ত দ্বারা পরিবেষ্টিত হতে হয়, তবে “যাহারা নগরের মধ্যে থাকে” তারা কিভাবে যীশুর আদেশ অনুসারে ‘বাহির’ হতে পারত? স্পষ্টতই, যীশু ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন যে সুযোগের এক জানালা খোলা থাকবে। তা কি হয়েছিল?

সা.শ. ৬৬ সালে সেসটিয়াস গ্যালাসের নেতৃত্বাধীনে রোমীয় সৈন্যেরা যিহূদী বিদ্রোহী শক্তিকে যিরূশালেমে ফিরে আসতে বাধ্য করেছিল এবং তাদের সেই শহরের মধ্যে আটকে রেখেছিল। এমনকি রোমীয়রা জোরপূর্বক সেই শহরে প্রবেশ করেছিল এবং মন্দিরের দেওয়াল পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু তারপর গ্যালাস তার সৈন্যদের এমন কিছু করতে বলেছিলেন যা সত্যই বিভ্রান্তিকর। তিনি তাদের পশ্চাদপসারণ করতে আদেশ দিয়েছিলেন! উল্লসিত যিহূদী সৈন্যেরা পলায়নরত রোমীয় শত্রুদের পশ্চাদ্ধাবন করে এবং তাদের ক্ষতিজনক আঘাত করতে আরম্ভ করে। এইভাবেই, যীশুর ভাববাণীকৃত সুযোগের জানালা খুলে গিয়েছিল। সত্য খ্রীষ্টানেরা তাঁর সতর্কবাণীতে মনোযোগ দিয়েছিল এবং যিরূশালেম থেকে বের হয়ে গিয়েছিল। সেটি বিজ্ঞতার কাজ ছিল কারণ মাত্র চার বছর পরে, সেনাপতি টাইটাসের নেতৃত্বাধীনে রোমীয় সৈন্যেরা পুনরায় ফিরে এসেছিল। এই সময়ে পলায়ন সম্ভবপর ছিল না।

রোমীয় সৈন্যেরা পুনরায় যিরূশালেমকে বেষ্টিত করেছিল; তারা এর চারিদিকে জাঙ্গাল বেঁধেছিল। যীশু যিরূশালেম সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: “তোমার উপরে এমন সময় উপস্থিত হইবে, যে সময়ে তোমার শত্রুগণ তোমার চারিদিকে জাঙ্গাল বাঁধিবে, তোমাকে বেষ্টন করিবে, তোমাকে সর্ব্বদিকে অবরোধ করিবে।”a (লূক ১৯:৪৩) শীঘ্রই, যিরূশালেমের পতন হয়েছিল; এর প্রতাপান্বিত মন্দির ধূমায়িত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। যীশুর বাক্যগুলি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পূর্ণ হয়েছিল!

কিন্তু, যিরূশালেম ধ্বংস ছাড়াও যীশুর মনে আরও বেশি কিছু ছিল। তাঁর শিষ্যেরা তাঁর উপস্থিতির চিহ্ন সম্বন্ধেও তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। তখন তারা তা জানতেন না, কিন্তু এটি এমন একটি সময়কে উল্লেখ করেছিল যখন তিনি রাজা হিসাবে রাজত্ব করার জন্য স্বর্গে অধিষ্ঠিত হবেন। তিনি কী ভাববাণী করেছিলেন?

শেষ কালে যুদ্ধ

যদি আপনি মথি ২৪ ও ২৫ অধ্যায়, মার্ক ১৩ অধ্যায় এবং লূক ২১ অধ্যায় পড়েন, তাহলে আপনি নির্ভুল প্রমাণ দেখতে পাবেন যে যীশু আমাদের নিজস্ব যুগ সম্বন্ধে কথা বলছিলেন। তিনি যুদ্ধের এক সময় সম্বন্ধে ভাববাণী করেছিলেন—শুধুমাত্র “যুদ্ধের কথা ও যুদ্ধের জনরব”-ই নয়, যা মানব ইতিহাসে সবসময়েই ঘটে আসছে, কিন্তু সেই যুদ্ধ যা ‘জাতির বিপক্ষে জাতি ও রাজ্যের বিপক্ষে রাজ্যকে’ অন্তর্ভুক্ত করে—হ্যাঁ, বৃহৎ বৃহৎ আন্তর্জাতিক যুদ্ধগুলি।—মথি ২৪:৬-৮.

এক মুহূর্তের জন্য চিন্তা করুন, আমাদের শতাব্দীতে যুদ্ধবিগ্রহ কিভাবে ভিন্নরূপ ধারণ করেছে। যখন যুদ্ধের অর্থ ছিল একটি যুদ্ধক্ষেত্রে শুধুমাত্র দুটি বিরোধী জাতির প্রতিনিধিত্বকারী সৈনিকদের মধ্যে তরবারি অথবা এমনকি বন্দুকের মাধ্যমে একে অপরের প্রতি অবিন্যস্ত সংঘর্ষ আর সেটাই ছিল যথেষ্ট ভয়ঙ্কর। কিন্তু ১৯১৪ সালে মহাযুদ্ধ শুরু হয়। ডোমিনো প্রতিক্রিয়ার মত সেই মহাযুদ্ধে এক জাতি অন্য জাতিকে অনুসরণ করেছিল—প্রথম বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ। স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রগুলি আরও অধিক লোককে এবং অধিকতর দূরত্ব থেকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল। মেশিনগানগুলি দুর্দান্ত দক্ষতার সাথে বুলেট ছুঁড়েছিল; মাস্টার্ড গ্যাস হাজার হাজার সৈনিকদের দগ্ধ, উৎপীড়িত, বিকলাঙ্গ এবং হত্যা করেছিল; ট্যাঙ্কগুলি প্রচণ্ড শব্দে নির্দয়ভাবে শত্রুদের সীমানায় প্রবেশ করেছিল, সেগুলির বৃহৎ বৃহৎ বন্দুকগুলি প্রজ্বলিত ছিল। উড়োজাহাজ এবং ডুবোজাহাজও ব্যবহৃত হয়েছিল—পরবর্তীকালের জন্য সেগুলি কেবলমাত্র অগ্রদূতস্বরূপ ছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ অকল্পনীয় বিষয়গুলি করেছিল—কোটি কোটি লোককে হত্যা করে প্রকৃতপক্ষে সেটি তার পূর্ববর্তী যুদ্ধকে ছোট করে দিয়েছিল। বিরাটকায় যুদ্ধ বিমান বহনকারী জাহাজগুলি সাগরের উপর ভাসমান শহরের ন্যায় চলতে থাকে এবং শত্রু লক্ষ্যস্থলগুলিতে আকাশ থেকে মৃত্যুজনক বোমা বর্ষণ করার জন্য যুদ্ধবিমানগুলিকে ছাড়তে থাকে। ডুবোজাহাজগুলি টর্পেডো দ্বারা আক্রমণ করেছিল এবং শত্রু জাহাজগুলিকে ডুবিয়ে দিয়েছিল। আর পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছিল, যার প্রত্যেকটি ধ্বংসকারী আঘাতের দ্বারা সহস্র সহস্র জীবন নিয়ে নিয়েছিল! ঠিক যেমন যীশু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, এই যুদ্ধের যুগকে চিহ্নিত করার জন্য বাস্তবিকপক্ষে “ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর লক্ষণ” দেখা গিয়েছিল।—লূক ২১:১১.

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে যুদ্ধ কি হ্রাস পেয়েছে? একেবারেই নয়। কখনও কখনও শুধুমাত্র এক বছরে আক্ষরিকভাবে অসংখ্য যুদ্ধগুলি প্রচণ্ডভাবে সংঘটিত হয়েছে—এমনকি এই ১৯৯০ এর দশকে—যা লক্ষ লক্ষ লোকের জন্য মৃত্যুধ্বনি শুনিয়েছে। আর যুদ্ধের প্রাথমিক শিকারের ক্ষেত্রে এক পরিবর্তন ঘটেছে। মৃতদের মধ্যে এখন আর প্রধানতঃ সৈনিকেরাই নেই। বর্তমানে যুদ্ধের অধিকাংশ হতাহতেরা—বস্তুতপক্ষে, তাদের ৯০ শতাংশের উপরে—বেসামরিক।

চিহ্নের অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলি

যুদ্ধ হল যীশুর উল্লেখিত চিহ্নের মাত্র একটি দিক। তিনি আরও সতর্ক করেছিলেন যে “দুর্ভিক্ষ” হবে। (মথি ২৪:৭) আর তাই ঘটে চলেছে, যদিও এটি আপাতবিরোধী সত্য যে, পৃথিবী সমস্ত মানবজাতিকে পরিতৃপ্ত করার জন্য যতটুকু প্রয়োজন তার চেয়ে বেশি খাদ্য উৎপাদন করে চলেছে, যদিও কৃষি-বিজ্ঞান মানব ইতিহাসের যে কোন সময়ের চাইতে অনেক বেশি এগিয়ে গেছে, যদিও পৃথিবীর যে কোন স্থানে খাদ্য পৌঁছানোর জন্য দ্রুতগামী এবং কার্যকর পরিবহণ ব্যবস্থা প্রাপ্তিসাধ্য। এই সমস্ত কিছু সত্ত্বেও, পৃথিবীর জনসংখ্যার প্রায় এক পঞ্চমাংশ প্রতিদিন অনাহারে থাকে।

যীশু আরও ভাববাণী করেছিলেন যে “স্থানে স্থানে . . . মহামারী” হবে। (লূক ২১:১১) আবারও আমাদের যুগ এক অদ্ভূত বাস্তবতা দেখেছে—যে কোন সময়ের চেয়ে অধিকতর উত্তম চিকিৎসা ব্যবস্থা, প্রযুক্তিগত সাফল্য, অনেক সাধারণ রোগব্যাধি প্রতিরোধ করার জন্য টিকা রয়েছে; তবুও, মহামারী সৃষ্টিকারী রোগগুলি নজিরবিহীন মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। ১ম বিশ্বযুদ্ধের পরেই স্প্যানিশ ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রাদুর্ভাব ঘটে এবং যুদ্ধের চেয়েও বেশি জীবন তা হরণ করে। এই রোগ এতই সংক্রামক ছিল যে শহরগুলিতে যেমন নিউ ইয়র্কে, কেবলমাত্র হাঁচি দেওয়ার জন্য জরিমানা অথবা বন্দী করা হত! বর্তমানে ক্যানসার এবং হৃদরোগ প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ জীবন হরণ করে—প্রকৃতই মহামারী। আর এইডস ক্রমাগত জীবনকে আঘাত করে চলেছে, যেটি মূলতঃ চিকিৎসা বিজ্ঞানের নিয়ন্ত্রণাধীনে নেই।

যদিও যীশু শেষ কালের আলোচনা অনেকাংশে সুদূরপ্রসারী ঐতিহাসিক এবং রাজনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে করেছিলেন, কিন্তু প্রেরিত পৌল সামাজিক সমস্যা এবং বিদ্যমান মনোভাবের উপর আরও বেশি আলোকপাত করেছিলেন। অংশতঃ তিনি লিখেছিলেন: “ইহা জানিও, শেষ কালে বিষম সময় উপস্থিত হইবে। কেননা মনুষ্যেরা আত্মপ্রিয়, . . . অসাধু, স্নেহরহিত, ক্ষমাহীন, . . . অজিতেন্দ্রিয়, প্রচণ্ড, সদ্‌বিদ্বেষী, বিশ্বাসঘাতক, দুঃসাহসী, গর্ব্বান্ধ, ঈশ্বরপ্রিয় নয়, বরং বিলাসপ্রিয় হইবে।”—২ তীমথিয় ৩:১-৫.

ঐ বাক্যগুলি কি আপনার কাছে পরিচিত শোনায়? আজকের জগতের সামাজিক অবক্ষয়ের মাত্র একটি দিক বিবেচনা করুন—পরিবারে বিভক্ততা। বিভক্ত গৃহ, আঘাতপ্রাপ্ত দম্পতি, অপব্যবহৃত সন্তানেরা এবং দুর্ব্যবহারপ্রাপ্ত বয়স্ক পিতামাতাদের সংখ্যা অত্যধিক—কী নিখুঁতভাবেই না এটি দেখায় যে লোকেরা “স্নেহরহিত,” “প্রচণ্ড” এবং এমনকি “বিশ্বাসঘাতক,” “সদ্‌বিদ্বেষী”! হ্যাঁ, আমরা দেখি যে এই বৈশিষ্ট্যগুলি আজকে মহামারীর পর্যায়ে পৌঁছেছে।

আমাদের বংশটি সম্বন্ধেই কি ভাববাণী করা হয়েছিল?

কিন্তু, আপনি হয়ত ভাবতে পারেন, ‘এই অবস্থাগুলি কি সব সময়ই মানবজাতিকে আঘাত করেনি? কিভাবে আমরা জানি যে আমাদের আধুনিক বংশই হল এই প্রাচীন ভবিষ্যদ্বাণীগুলিতে ভাববাণীকৃত সেই বংশ?’ আসুন আমরা প্রমাণের তিনটি দিক বিবেচনা করি, যা প্রমাণ করে যে যীশু আমাদের সময় সম্বন্ধেই কথা বলছিলেন।

প্রথমতঃ, যদিও যিরূশালেম এবং এর মন্দির ধ্বংসের সাথে এক আংশিক, প্রাথমিক পরিপূর্ণতা হয়েছিল, যীশুর বাক্যগুলি নির্দিষ্টভাবে সেই দিনকে অতিক্রম করে ভবিষ্যতের প্রতি নির্দেশ করেছিল। সেই মহাবিপর্যয় যা যিরূশালেমকে ধ্বংস করেছিল তার প্রায় ৩০ বছর পর, যীশু বৃদ্ধ প্রেরিত যোহনকে দর্শন দিয়েছিলেন যা দেখিয়েছিল যে ভাববাণীকৃত পরিস্থিতি—যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, মহামারী এবং পরিণতিস্বরূপ মৃত্যু—যা ভবিষ্যতে বিশ্বব্যাপী আসতে যাচ্ছিল। হ্যাঁ, এই বিপর্যয় শুধু একটি এলাকাকে অন্তর্ভুক্ত করবে না, কিন্তু সমগ্র “পৃথিবী”-কে করবে।—প্রকাশিত বাক্য ৬:২-৮.

দ্বিতীয়তঃ, এই শতাব্দীতে যীশুর চিহ্নের কিছু লক্ষণ এমনভাবে পরিপূর্ণ হচ্ছে যেটিকে আমরা বলতে পারি চূড়ান্ত মাত্রায়। উদাহরণস্বরূপ, ১৯১৪ সাল থেকে যা হয়ে আসছে তার চেয়েও আরও মন্দতর যুদ্ধগুলি হওয়ার কি কোন সম্ভাবনা রয়েছে? যদি, আজকের সমস্ত পারমাণবিক শক্তিগুলি তাদের অস্ত্রগুলিকে ব্যবহার করে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ করত, তাহলে এই পৃথিবী অঙ্গারের ন্যায় বর্জনীয় অবস্থায় থাকত—এবং মানবজাতি সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত। অনুরূপভাবে, প্রকাশিত বাক্য ১১:১৮ পদ ভাববাণী করেছিল যে এই দিনগুলিতে যখন জাতিগণ “ক্রুদ্ধ,” মানবজাতি “পৃথিবীনাশক”-এ পরিণত হবে। ইতিহাসে এই প্রথমবারের মত, পরিবেশ দূষণ এবং অবক্ষয় এখন এই গ্রহের বাসযোগ্যতাকে বিপন্ন করেছে! অতএব এই বৈশিষ্ট্যটিও এখন তার পরিপূর্ণতা অথবা নিকটেই এর চূড়ান্ত পর্যায়টি দেখছে। যুদ্ধ এবং দূষণ কি সেই পর্যন্তই চলতে থাকবে যতক্ষণ না মানুষ নিজেকে এবং এই গ্রহকে ধ্বংস করে? না; কারণ বাইবেল নিজেই ঘোষণা করে যে পৃথিবী অনন্তকাল থাকবে আর সৎহৃদয় মানুষেরা এখানে বসবাস করবে।—গীতসংহিতা ৩৭:২৯; মথি ৫:৫.

তৃতীয়তঃ, শেষ কালের চিহ্ন বিশেষভাবে বিশ্বাসযোগ্য যখন সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করা হয়। সামগ্রিকভাবে, তিনটি সুসমাচারের পুস্তকে যীশুর উল্লেখিত বৈশিষ্ট্যগুলি, পৌলের লেখাগুলিতে এবং প্রকাশিত বাক্যে যা রয়েছে আমরা যখন তা বিবেচনা করি, এই চিহ্নের অনেক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। একজন ব্যক্তি হয়ত সেগুলির মধ্যে পৃথকভাবে এক একটি সম্বন্ধে তর্ক করতে পারে এই বলে যে অন্যান্য যুগও অনুরূপ সমস্যাগুলি দেখেছে, কিন্তু আমরা যখন সেগুলি একত্রে বিবেচনা করি, তখন সেগুলি শুধু একটি যুগের প্রতিই অভ্রান্ত অঙ্গুলি নির্দেশ করে—যেটি আমাদের নিজেদের যুগ।

তাহলে, এই সমস্ত কিছু কী বোঝায়? এটিই কি, যে বাইবেল সাধারণভাবে আমাদের যুগকে একটি প্রচণ্ড, আশাহীন সময় হিসাবে বর্ণনা করেছে? অবশ্যই না!

সুসমাচার

শেষ কালের চিহ্নের একটি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য মথি ২৪:১৪ পদে লিপিবদ্ধ করা আছে: “আর সর্ব্ব জাতির কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত রাজ্যের এই সুসমাচার সমুদয় জগতে প্রচার করা যাইবে; আর তখন শেষ উপস্থিত হইবে।” এই শতাব্দীতে যিহোবার সাক্ষীরা একটি কাজ সম্পাদন করেছে যা মানব ইতিহাসে অদ্বিতীয়। তারা যিহোবা ঈশ্বরের রাজ্য সম্পর্কীয় বাইবেলের বার্তাকে গ্রহণ করেছে—এটি কী, কিভাবে এটি শাসন করে এবং কখন এটি সম্পন্ন হবে—সেই বার্তা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়েছে। তারা এই বিষয়ের উপর ৩০০রও বেশি ভাষায় সাহিত্যাদি প্রকাশ করেছে এবং কার্যকারীভাবে পৃথিবীর প্রতিটি দেশে লোকেদের কাছে তাদের বাড়িতে অথবা রাস্তায় অথবা তাদের ব্যবসায়ের স্থানে তা পৌঁছে দিয়েছে।

এইরূপ করার মাধ্যমে, তারা এই ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণ করে আসছে। কিন্তু তারা সেই সাথে আশার কথাও ছড়িয়ে দিচ্ছে। লক্ষ্য করুন যীশু এটিকে “সুসমাচার” বলেছিলেন, দুঃসংবাদ নয়। এই অন্ধকারময় সময়ে কিভাবে তা হতে পারে? কারণ বাইবেলের মুখ্য বার্তা এই পুরাতন জগতের শেষে পরিস্থিতি কতটা মন্দ হবে সেই সম্বন্ধে নয়। এর মুখ্য বার্তা ঈশ্বরের রাজ্যকে জড়িত করে এবং সেই রাজ্য এমন কিছু প্রতিজ্ঞা করে যা প্রত্যেক শান্তি-প্রিয় হৃদয়ের মানুষের কাছে মূল্যবান—মুক্তি।

কিন্তু, সেই মুক্তি কী এবং কিভাবে তা আপনার হতে পারে? দয়া করে এই বিষয়ের উপর পরবর্তী প্রবন্ধগুলি বিবেচনা করুন।

[পাদটীকাগুলো]

a টাইটাসের হাতে নির্ধারিত বিজয় ছিল। তৎসত্ত্বেও, দুটি গুরুত্বপূর্ণ কারণে তিনি তার পথে অগ্রসর হতে পারেননি। তিনি শান্তিপূর্ণ আত্মসমর্পণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু শহরের নেতারা একগুঁয়েমি করে, অদ্ভূতভাবে তা প্রত্যাখ্যান করেছিল। আর পরিশেষে যখন সেই শহরের দেওয়ালগুলি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছিল, তিনি মন্দিরটিকে অব্যাহতি দিতে আদেশ দিয়েছিলেন। তবুও, সেটি সম্পূর্ণভাবে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল! যীশুর ভবিষ্যদ্বাণী এটি পরিষ্কার করেছিল যে যিরূশালেম উৎসন্ন হবে এবং এর মন্দির সম্পূর্ণরূপে চূর্ণ-বিচূর্ণ হবে।—মার্ক ১৩:১, ২.

[৫ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

লোকেরা এইধরনের সমস্যাপূর্ণ প্রশ্নগুলির উত্তর খুঁজছে যেমন: বিষয়গুলি কেন এত মন্দ? মানবজাতি কোথায় এগিয়ে চলেছে?

[৬ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

বর্তমানে, যুদ্ধে হতাহতেরা ৯০ শতাংশের উপরে বেসামরিক

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিরূশালেমের ধ্বংস সম্বন্ধে যীশুর ভবিষ্যদ্বাণী পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরিপূর্ণ হয়েছিল

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৫)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার