যিহোবা পথ তৈরি করে দেন
“রাজ্যের এই সুসমাচার . . . প্রচার করা যাইবে।”—মথি ২৪:১৪.
১. প্রথম ও বিংশ শতাব্দীতে প্রচার কাজের মাধ্যমে কী সম্পন্ন হয়েছে?
যিহোবা মানবজাতিকে প্রেম করেন তাই তিনি চান “যেন সমুদয় মনুষ্য পরিত্রাণ পায়, ও সত্যের তত্ত্বজ্ঞান পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পারে।” (১ তীমথিয় ২:৪) এইজন্য সারা পৃথিবীতে প্রচার করা ও শিক্ষা দেওয়া খুবই জরুরি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রথম শতাব্দীতে এই প্রচার কাজ খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীকে “সত্যের স্তম্ভ ও দৃঢ় ভিত্তি” করে তুলেছিল। (১ তীমথিয় ৩:১৫) এরপর বেশ কিছু সময় ধরে ধর্মভ্রষ্টতা সত্যের জ্যোতিকে আবছা করে রেখেছিল। আজকে বিংশ শতাব্দীতে, এই ‘শেষকালে’ লাখ লাখ লোকেদের বাইবেল থেকে অনন্ত জীবনের আশা দেওয়া হচ্ছে আর এভাবে ‘সত্য জ্ঞান’ আবারও প্রচুরভাবে ছড়িয়ে পড়ছে।—দানিয়েল ১২:৪.
২. প্রচার কাজের জন্য যিহোবা কী করেছেন?
২ ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে বাধা দেওয়ার জন্য শয়তানের অবিরাম প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, প্রথম শতাব্দী ও বিংশ শতাব্দীতে প্রচার কাজে বিরাট সাফল্য এসেছে। এটা আমাদেরকে যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণীর কথা মনে করিয়ে দেয়। সা.কা.পূ. ষষ্ঠ শতাব্দীতে যিহূদী নির্বাসিতদের যিহূদাতে ফিরে আসা সম্বন্ধে যিশাইয় লিখেছিলেন: “প্রত্যেক উপত্যকা উচ্চীকৃত হইবে, প্রত্যেক পর্ব্বত ও উপপর্ব্বত নিম্ন করা যাইবে; বক্র স্থান সরল হইবে, উচ্চনীচ ভূমি সমস্থলী হইবে।” (যিশাইয় ৪০:৪) যিহোবা প্রথম শতাব্দীতে ও বিংশ শতাব্দীতে এই বিরাট প্রচার কাজে আসা বাধাগুলোকে সরিয়ে দিয়ে পথ তৈরি করে দিয়েছেন ও সহজ করে দিয়েছেন।
৩. কোন্ কোন্ উপায়ে যিহোবা তাঁর উদ্দেশ্যগুলো পরিপূর্ণ করতে পারেন?
৩ কিন্তু এর মানে নয় যে সুসমাচার প্রচার কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পৃথিবীতে যেসব ঘটনা ঘটছে তার প্রত্যেকটাতে যিহোবা হস্তক্ষেপ করেন; কিংবা তা এও বোঝায় না যে কী ঘটবে সেই ব্যাপারে সমস্ত খুঁটিনাটি বিষয় জানার জন্য যিহোবা তাঁর দূরদর্শিতাকে কাজে লাগান। এটা মানতেই হবে যে তিনি ভবিষ্যতের ঘটনাগুলো জানেন ও সেগুলোকে ঘটাতেও পারেন। (যিশাইয় ৪৬:৯-১১) কিন্তু সেইসঙ্গে কোন কোন ঘটনা যখন নিজের থেকে ঘটে যায় তিনি তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করার জন্য সেটাকে ব্যবহার করেন। একজন অভিজ্ঞ মেষপালক যেমন জানেন যে পালকে কীভাবে চালাতে হয় ও কীভাবে রক্ষা করতে হয়, তেমনই যিহোবা তাঁর লোকেদের পরিচালনা দেন। তিনি তাদেরকে পরিত্রাণের পথে নিয়ে যান, তাদের আধ্যাত্মিকতাকে রক্ষা করেন এবং তাদের সেই পরিস্থিতি ও অগ্রগতির সুযোগ নেওয়ার জন্য প্রেরণা দেন যা সারা পৃথিবীতে সুসমাচার প্রচার কাজকে বাড়িয়ে তোলায় সফলতা দেবে।—গীতসংহিতা ২৩:১-৪.
এক কঠিন কাজ
৪, ৫. কেন রাজ্যের সুসমাচার প্রচার একটা কঠিন কাজ হয়ে এসেছে?
৪ নোহের দিনে জাহাজ বানানোর কাজের মতো প্রথম শতাব্দী ও এখনও রাজ্যের প্রচার কাজ এক বিরাট কাজ। সব লোকেদের কাছে যে কোন খবর পৌঁছে দেওয়াই কঠিন কাজ আর সুসমাচার প্রচারের কাজ তো আরও বেশি কঠিন। প্রথম শতাব্দীতে যীশুর শিষ্যদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে খুবই কম ছিল। তাদের নেতা যীশু একজন রাজদ্রোহীর দোষে মারা গিয়েছিলেন। আর সেইসময় যিহূদী ধর্ম খুবই প্রতিষ্ঠিত ছিল। যিরূশালেমে তাদের একটা চমৎকার মন্দির ছিল। ভূমধ্যসাগরের আশেপাশের অঞ্চলগুলোতে ন-যিহূদী অন্যান্য ধর্মগুলোও বেশ প্রতিষ্ঠিত ছিল যাদেরও নিজেদের মন্দির ও পুরোহিত ছিল। একইভাবে ১৯১৪ সালে যখন “শেষকাল” শুরু হয়েছিল তখন অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের সংখ্যা ছিল খুবই কম আর অন্য ধর্মের লোকেরা যারা দাবি করতেন যে তারা ঈশ্বরের সেবা করেন তাদের সংখ্যা ছিল অনেক।—দানিয়েল ১২:৯.
৫ যীশু তাঁর শিষ্যদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে তাদের ওপর তাড়না আসবে। তিনি বলেছিলেন: “লোকেরা ক্লেশ দিবার জন্য তোমাদিগকে সমর্পণ করিবে, ও তোমাদিগকে বধ করিবে, আর আমার নাম প্রযুক্ত সমুদয় জাতি তোমাদিগকে দ্বেষ করিবে।” (মথি ২৪:৯) এইরকম সমস্যাগুলো ছাড়াও বিশেষ করে এই “শেষ কালে” খ্রীষ্টানদের জন্য “বিষম সময় উপস্থিত হইবে।” (২ তীমথিয় ৩:১) এত বড় কাজ, তাড়না আর কঠিন সময়, প্রচার কাজকে আরও কঠিন ও কষ্টকর করে তুলেছে। এর জন্য অনেক বিশ্বাস দরকার।
৬. যিহোবার লোকেরা যে সফল হবে সেই বিষয়ে যিহোবা তাদের কোন্ আশ্বাস দিয়েছেন?
৬ যিহোবা যদিও জানতেন যে সমস্যা আসবে কিন্তু তিনি এও জানতেন যে কোন কিছুই এই কাজকে থামিয়ে রাখতে পারবে না। এই কাজের সফলতার কথা এক সুপরিচিত ভবিষ্যদ্বাণীতে বলা হয়েছিল আর তা প্রথম শতাব্দীতে পূর্ণ হয়েছিল আর বিংশ শতাব্দীতে পূর্ণ হচ্ছে: “রাজ্যের এই সুসমাচার সমুদয় জগতে প্রচার করা যাইবে।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।)—মথি ২৪:১৪.
৭. প্রথম শতাব্দীতে প্রচার কাজ কতটা ব্যাপক ছিল?
৭ প্রথম শতাব্দীতে ঈশ্বরের দাসেরা বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন, পবিত্র আত্মার দ্বারা চালিত হয়ে তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। যিহোবা তাদের সঙ্গে ছিলেন বলে তাদের কাজে সাফল্য এসেছিল যতখানি তারা হয়তো আশাও করেননি। যীশুর মৃত্যুর প্রায় ২৭ বছর পর পৌল যখন কলসীয়দেরকে চিঠি লিখেছিলেন তখন তিনি বলতে পেরেছিলেন যে সুসমাচার “আকাশমণ্ডলের অধঃস্থিত সমস্ত সৃষ্টির কাছে প্রচারিত হইয়াছে।” (কলসীয় ১:২৩) আর একইভাবে, বিংশ শতাব্দীর শেষে এখন ২৩৩টা দেশে সুসমাচার প্রচার করা হচ্ছে।
৮. কোন্ কোন্ পরিস্থিতিতে অনেকে সুসমাচারে বিশ্বাস করেছেন? উদাহরণ দিন।
৮ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, লাখ লাখ লোকেরা সুসমাচারে বিশ্বাস করেছেন। অনেকে কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়েও যেমন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা ও চরম তাড়নার সময়েও সুসমাচারকে মেনে নিয়েছেন। প্রথম শতাব্দীতেও তা সত্য ছিল। পৌল ও সীলকে একবার প্রচণ্ড মারধোর করা হয়েছিল ও পরে জেলে ভরা হয়েছিল। শিষ্য তৈরি করার ক্ষেত্রে কত বড় বাধা! কিন্তু যিহোবা সেই পরিস্থিতিতে শিষ্য তৈরি হতে দিয়েছিলেন। পৌল ও সীল পরে ছাড়া পেয়েছিলেন আর কারারক্ষী ও তার পরিবার বিশ্বাসী হয়েছিল। (প্রেরিত ১৬:১৯-৩৩) এই অভিজ্ঞতাগুলো দেখায় যে বিরোধীদের তাড়না সুসমাচার প্রচারকে থামিয়ে রাখতে পারবে না। (যিশাইয় ৫৪:১৭) কিন্তু, খ্রীষ্টধর্মের ইতিহাসে সবসময়ই যে অত্যাচার ও তাড়না ছিল তা নয়। আসুন এখন কিছু অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করা যাক, যেগুলো প্রথম শতাব্দী ও সেইসঙ্গে এই বিংশ শতাব্দীতে সুসমাচার প্রচার করার পথকে সহজ করে দিয়েছে।
ধর্মীয় পরিবেশ
৯, ১০. প্রথম ও বিংশ শতাব্দীতে কীভাবে যিহোবা সুসমাচারের প্রতি আশা জাগিয়ে তুলেছিলেন?
৯ সারা পৃথিবীতে প্রচার কাজ কখন হবে সেই বিষয়টা ভেবে দেখুন। প্রথম শতাব্দীর পরিবেশ বিবেচনা করে বলা যায় যে দানিয়েল ৯:২৪-২৭ পদে ৭০ সপ্তাহের ভবিষ্যদ্বাণী ঠিক ঠিক দেখিয়েছিল যে মশীহ সা.কা. ২৯ সালে আবির্ভূত হবেন। প্রথম শতাব্দীর যিহূদীরা জানতেন না যে মশীহ ঠিক কখন আসবেন তাই তারা মশীহের আশায় ছিলেন, তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। (লূক ৩:১৫) ফ্রেঞ্চ ম্যানুয়েল বিবলিক বলে: “লোকেরা জানত, দানিয়েল যে সত্তর সপ্তাহের বিষয়ে বলেছিলেন তা খুব শীঘ্রই পরিপূর্ণ হতে যাচ্ছে; তাই যোহন বাপ্তাইজক যখন ঘোষণা করেছিলেন যে ঈশ্বরের রাজ্য সন্নিকট তখন সেই বিষয় শুনে কেউই অবাক হয়নি।”
১০ আজকের দিনের পরিবেশ সম্পর্কে কী বলা যায়? একটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল যে যীশু স্বর্গে রাজা হয়েছিলেন যা রাজ্যের ক্ষমতায় তাঁর উপস্থিতিকে চিহ্নিত করেছিল। বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী দেখায় যে তা ১৯১৪ সালে ঘটেছিল। (দানিয়েল ৪:১৩-১৭) আমাদের শতাব্দীর শুরুতেও কিছু ধার্মিক লোকেরা এই ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণ হবে বলে আশা করেছিলেন। আন্তরিক বাইবেল ছাত্রদের মধ্যেও এই আশা ছিল কারণ ১৮৭৯ সাল থেকে যখন তারা প্রহরীদুর্গ পত্রিকা প্রকাশ করতে শুরু করেন তখন তারা এর নাম জায়ন্স ওয়াচ টাওয়ার হেরাল্ড অফ ক্রাইস্টস্ প্রেজেন্স রেখেছিলেন। এভাবে, প্রথম শতাব্দীতে ও এখন ধার্মিক লোকেদের এই প্রত্যাশা সুসমাচার প্রচারের পথ তৈরি করতে সাহায্য করেছে।a
১১. রাজ্যের সুসমাচার প্রচারে সাহায্য করার জন্য কোন্ ধর্মীয় ভিত্তি পাওয়া গিয়েছিল?
১১ আরেকটা বিষয় যা এই দুই শতকের খ্রীষ্টানদের কাজে সাহায্য করেছে তা হল অনেক লোক পবিত্র শাস্ত্রগুলো অর্থাৎ বাইবেলের সঙ্গে পরিচিত ছিল। প্রথম শতাব্দীতে যিহূদী লোকেরা আশেপাশের অন্যান্য জাতিগুলোর মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। ওই যিহূদী লোকেদের সমাজগৃহ ছিল যেখানে লোকেরা শাস্ত্র পড়ার জন্য ও আলোচনা শোনার জন্য নিয়মিত মিলিত হতো। ফলে, প্রাথমিক খ্রীষ্টানেরা লোকেদের সহজেই নতুন সত্য শেখাতে পেরেছিলেন কারণ ইতিমধ্যেই তাদের শাস্ত্র সম্বন্ধে জ্ঞান ছিল। (প্রেরিত ৮:২৮-৩৬; ১৭:১, ২) একইভাবে এই শতকের প্রথম দিকেও যিহোবার লোকেরা অনেক দেশে এইরকম পরিবেশ উপভোগ করেছিলেন। খ্রীষ্টান দেশগুলোতে, বিশেষ করে প্রোটেস্টান্ট দেশগুলোতে বাইবেল পাওয়া যেত। অনেক গির্জায় তা পড়াও হতো; লাখ লাখ লোকেদের নিজস্ব বাইবেল ছিল। লোকেদের কাছে বাইবেল ছিল কিন্তু তা বোঝার জন্য তাদের সাহায্যের দরকার ছিল।
আইনের উপকারগুলো
১২. প্রথম শতাব্দীতে রোমীয় আইন কীভাবে সুরক্ষা যুগিয়েছিল?
১২ সরকারি আইন প্রায়ই খ্রীষ্টধর্ম প্রচারে বেশ সাহায্য করেছে। প্রথম শতাব্দীতে রোমীয় সাম্রাজ্য শাসন করত আর রোজকার জীবনে এর লিখিত আইন গভীর প্রভাব ফেলত। এই আইনগুলো লোকেদের সুরক্ষা দিত আর প্রাথমিক খ্রীষ্টানেরা সেগুলো থেকে অনেক উপকারও পেয়েছিলেন। যেমন, পৌল রোমীয় সরকারের কাছে আপীল করায় জেল থেকে ছাড়া পেয়েছিলেন আর বেত্রাঘাত থেকেও রেহাই পেয়েছিলেন। (প্রেরিত ১৬:৩৭-৩৯; ২২:২৫, ২৯) রোমীয় আইন ব্যবস্থার কথা বলে ইফিষের ক্রুদ্ধ জনতাকে শান্ত করা গিয়েছিল। (প্রেরিত ১৯:৩৫-৪১) একবার পৌল যিরূশালেমে মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই পেয়েছিলেন কারণ তিনি একজন রোমীয় নাগরিক ছিলেন। (প্রেরিত ২৩:২৭) পরে রোমীয় আইন তাকে তার বিশ্বাসের পক্ষে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ দিয়েছিল। (প্রেরিত ২৫:১১) যদিও বেশিরভাগ সরকারই অত্যাচারী ছিল কিন্তু প্রথম শতাব্দীর আইন সাধারণত ‘সুসমাচারের পক্ষসমর্থন ও প্রতিপাদন’ করার পথ করে দিয়েছিল।—ফিলিপীয় ১:৭.
১৩. আমাদের সময়ে প্রচার কাজ কীভাবে আইনের সাহায্য পেয়ে এসেছে?
১৩ আজকে অনেক দেশে একই বিষয় দেখা যায়। যদিও অনেকে “বিধান দ্বারা উপদ্রব রচনা” করেন কিন্তু অনেক দেশের লিখিত আইনে ধর্মীয় স্বাধীনতা মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। (গীতসংহিতা ৯৪:২০) অনেক দেশে যিহোবার সাক্ষিদের কাজকে বৈধ করা হয়েছে কারণ তারা জেনেছে যে এই লোকেরা সমাজের জন্য বিপদজনক কিছু করেন না। আমেরিকাতে যেখানে সাক্ষিদের বেশিরভাগ ছাপার কাজ হয়ে থাকে সেখানকার আইন ১২০ বছর ধরে প্রহরীদুর্গ পত্রিকা ছাপানোর অনুমতি দিয়ে চলেছে আর সারা পৃথিবীর লোকেরা তা পড়তে পারছে।
শান্তি ও সহনশীলতার সময়
১৪, ১৫. প্রথম শতাব্দীতে সামাজিক ব্যবস্থায় কিছু সময় শান্ত অবস্থা কীভাবে প্রচার কাজকে উপকৃত করেছে?
১৪ শান্তির সময়ে প্রচার কাজের অনেক সুবিধা হয়েছে। যীশু যদিও সঠিকভাবে ভাববাণী করেছিলেন যে প্রথম ও বিংশ এই দুই শতাব্দীতেই ‘জাতির বিপক্ষে জাতি উঠিবে’ কিন্তু এমন সময়ও ছিল যখন কোন যুদ্ধ-বিবাদ ছিল না আর তা রাজ্যের প্রচার কাজকে এগিয়ে নিতে অনেক সাহায্য করেছে। (মথি ২৪:৭) প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানেরা প্যাক্স রোমানা অথবা রোমীয় শান্তি উপভোগ করেছিলেন। একজন ইতিহাসবেত্তা লিখেছিলেন: “রোম ভূমধ্যসাগরীয় এলাকাগুলোকে পুরোপুরি দখল করে নিয়েছিল আর এর ফলে সেই দেশগুলোর মধ্যে অবিরত যে যুদ্ধ লেগেই থাকত সেগুলো একেবারেই শেষ হয়ে গিয়েছিল।” এই স্থিরতা প্রাথমিক খ্রীষ্টানদেরকে তুলনামূলকভাবে নিরাপদে রোমের যে কোন জায়গায় ভ্রমণ করার সুযোগ করে দিয়েছিল।
১৫ রোমীয় সাম্রাজ্য কৌশলে তার শাসনাধীন লোকেদের মধ্যে একতা আনতে চেষ্টা করেছিল। এই কারণে শুধু বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত, অন্য ধর্মের প্রতি সহনশীলনতা ও মতবিনিময়কেই বাড়ানো হয়নি কিন্তু আন্তর্জাতিক ভ্রাতৃত্বের মনোভাবকেও উৎসাহ দেওয়া হয়েছিল। সভ্যতার পথে (ইংরেজি) বই বলে: “[রোমীয়] সাম্রাজ্যের একতা [খ্রীষ্টীয় প্রচারের] ক্ষেত্রকে সুগম করেছিল। জাতীয় প্রতিবন্ধকতাকে ভেঙে ফেলা হয়েছিল। একজন রোমীয় নাগরিক নিজেকে সারা বিশ্বের নাগরিক বলে মনে করত। . . . তাই রোমীয় নাগরিকদের যখন এমন এক ধর্ম শেখানো হয়েছিল যা আন্তর্জাতিক ভ্রাতৃত্বের কথা বলে তখন তাদের এটা মেনে নিতে কোন অসুবিধা হয়নি।”—প্রেরিত ১০:৩৪, ৩৫; ১ পিতর ২:১৭ পদগুলোর সঙ্গে তুলনা করুন।
১৬, ১৭. কোন্ বিষয় আমাদের সময়ে শান্তি বাড়াতে সাহায্য করেছে আর অনেক লোকেরা কী বুঝতে পেরেছেন?
১৬ কিন্তু আমাদের দিন সম্বন্ধে কী বলা যায়? বিংশ শতাব্দীতে যেধরনের বড় ও ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ হয়েছে তা আগে কখনও হয়নি এবং কিছু কিছু দেশে গৃহযুদ্ধ লেগেই আছে। (প্রকাশিত বাক্য ৬:৪) কিন্তু কখনও কখনও শান্তির সময়ও ছিল। গত ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বের বৃহত্তর শক্তিগুলো কোন বড় যুদ্ধ করেনি। এই পরিস্থিতি ওই দেশগুলোতে সুসমাচার প্রচারে অনেক সাহায্য করেছে।
১৭ যুদ্ধের ভয়াবহ পরিণতির কথা ভেবেই আজকের দিনের বেশিরভাগ জাতি যুদ্ধ থেকে বিরত হয় আর তাই শান্তি বজায় থাকে। বিংশ শতাব্দীতে ঘটা যুদ্ধগুলোর ভয়ানক ফলাফল দেখে অনেকে বুঝেছেন যে সারা পৃথিবীতে একটাই সরকার হওয়া দরকার। আরেকটা বিশ্বযুদ্ধ না শুরু হয়ে যায় এই ভয়েই জাতিপুঞ্জ ও রাষ্ট্রসংঘ গঠন করা হয়েছে। (প্রকাশিত বাক্য ১৩:১৪) দুটো সংগঠনই তাদের লক্ষ্য সম্বন্ধে ঘোষণা করেছিল যে তারা পৃথিবীর সমস্ত জাতিগুলোর মধ্যে সহযোগিতা ও শান্তি বাড়াবে। যে লোকেরা এই প্রয়োজনগুলো উপলব্ধি করেন, যখন তারা এমন এক সরকার অর্থাৎ ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে সুসমাচার শোনেন যেটা কি না পৃথিবীতে প্রকৃত ও স্থায়ী শান্তি নিয়ে আসবে তখন তারা এই বিষয়ে আরও বেশি শিখতে চান।
১৮. ধর্মের প্রতি কোন্ ধরনের মনোভাব প্রচার কাজে সাহায্য করেছে?
১৮ যদিও প্রথম শতাব্দী ও এই বিংশ শতাব্দীতে কখনও কখনও খ্রীষ্টানদের ওপর নির্দয়ভাবে তাড়না করা হয়েছে, তবুও এমন সময়ও ছিল যখন তাদের ওপর তাড়না ছিল না ও তাদের ধর্ম পালন করার স্বাধীনতা ছিল। (যোহন ১৫:২০; প্রেরিত ৯:৩১) রোমীয়রা যে দেশগুলো জয় করেছিল সেই দেশের দেবদেবীদের উপাসনাকে রোমীয়রা অবাধে মেনে নিয়েছিল এবং এমনকি তারা নিজেরা সেগুলোর উপাসনা করেছিল। অধ্যাপক রডনি স্টার্ক লিখেছিলেন: “রোমীয়রা যতখানি ধর্মীয় স্বাধীনতা দিয়েছিল, তা আমেরিকার স্বাধীনতা বিপ্লবের আগে আর কোথাও দেখা যায়নি।” অনেক দেশের লোকেরা এখন অন্য ধর্মের দৃষ্টিভঙ্গি মেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে উদার হয়েছেন, ফলে যিহোবার সাক্ষিরা যে বার্তা তাদের কাছে নিয়ে যায় তা তারা আগ্রহ নিয়ে শোনেন।
প্রযুক্তির ভূমিকা
১৯. প্রাথমিক খ্রীষ্টানেরা কীভাবে কোডেক্স ব্যবহার করতেন?
১৯ আরও ভেবে দেখুন যে কীভাবে যিহোবা তাঁর লোকেদেরকে প্রযুক্তিগত উন্নতিগুলো থেকে উপকার পেতে সাহায্য করেছেন। প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের সময় যদিও প্রযুক্তি এত উন্নত ছিল না কিন্তু একটা সুবিধা তারা পেয়েছিলেন যা হল কোডেক্স বা হাতে লেখা পুঁথি। পরে কোডেক্স সেই গোটানো পুস্তকগুলোর জায়গা নিয়েছিল, যেগুলো ব্যবহার করা খুবই মুশকিল ছিল। কোডেক্সের জন্ম (ইংরেজি) নামের বই বলে: “জাগতিক সাহিত্যে গোটানো পুস্তকের জায়গায় কোডেক্স আসতে অনেকখানি সময় লেগেছিল কিন্তু মনে হয় যে খ্রীষ্টানেরা খুব তাড়াতাড়ি আর ব্যাপকভাবে কোডেক্স ব্যবহার করেছিলেন।” এই বইটা আরও বলে: “দ্বিতীয় শতাব্দীতে খ্রীষ্টানেরা এত ব্যাপকভাবে কোডেক্স ব্যবহার করেছিলেন যে মনে হয়েছিল যেন এর ব্যবহার অনেক আগে শুরু হয়েছিল, যখন কিনা তা সা.কা. ১০০ সালে শুরু হয়েছিল।” গোটানো পুস্তকের চেয়ে কোডেক্স ব্যবহার করা আরও সহজ ছিল। খুব সহজেই শাস্ত্র পদগুলো খুঁজে পাওয়া যেত। এটা নিশ্চয়ই সেই প্রাথমিক খ্রীষ্টানদেরকে অনেক সাহায্য করেছিল যারা পৌলের মতো শুধু শাস্ত্র বুঝিয়েই দিতেন না কিন্তু ‘শাস্ত্রের কথা লইয়া প্রসঙ্গও করিতেন।’—প্রেরিত ১৭:২, ৩.
২০. সারা পৃথিবীতে প্রচার কাজ চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঈশ্বরের লোকেরা কীভাবে আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়েছেন এবং কেন?
২০ আমাদের সময়ে প্রযুক্তিতে প্রভূত উন্নতি হয়েছে। দ্রুতগতি সম্পন্ন ছাপাখানাগুলো অনেক অনেক ভাষায় বাইবেল ভিত্তিক বই পত্রিকা একযোগে ছাপিয়ে চলেছে। আধুনিক প্রযুক্তি বাইবেলের অনুবাদকেও দ্রুততর করেছে। ট্রাক, ট্রেন, জাহাজ ও উড়োজাহাজ বাইবেল ভিত্তিক বই পত্রিকাগুলোকে সারা পৃথিবীতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পৌঁছে দিয়েছে। টেলিফোন ও ফ্যাক্স মেশিনগুলোর জন্য মুহূর্তের মধ্যে বিভিন্ন দেশে যোগাযোগ করা যায়। যিহোবা তাঁর আত্মার মাধ্যমে তাঁর দাসদের এই প্রযুক্তিগুলোকে সারা পৃথিবীতে সুসমাচার ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ব্যবহারিকভাবে কাজে লাগাতে পরিচালিত করেছেন। তারা তাদের জানার আকাঙ্ক্ষাকে মেটানোর জন্য কিংবা সবচেয়ে নতুন প্রযুক্তিকে ব্যবহার করার জন্য এই উন্নতিগুলোকে কাজে লাগাচ্ছেন না। বরং, তাদের প্রথম ও প্রধান চিন্তা হল কী তাদেরকে সবচেয়ে কার্যকরভাবে সুসমাচার প্রচার করে যেতে সাহায্য করবে।
২১. আমরা কোন্ বিষয়ে দৃঢ়নিশ্চিত হতে পারি?
২১ “রাজ্যের এই সুসমাচার সমুদয় জগতে প্রচার করা যাইবে,” যীশু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। (মথি ২৪:১৪) প্রাথমিক খ্রীষ্টানেরা যেমন এই ভবিষ্যদ্বাণীর পূর্ণতা দেখেছিলেন তেমনই আমরাও আজকে ব্যাপকভাবে এর পরিপূর্ণতা দেখতে পাই। এই কাজে বিভিন্ন বাধা এবং অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও, ভাল ও কঠিন সময়ে, আইন ও মানুষের মনোভাব বদলানোর সময়ে, যুদ্ধ ও শান্তির সময়ে এবং সবরকমের প্রযুক্তিগত উন্নতির সময়ে সুসমাচার প্রচারিত হচ্ছে। এটা কি যিহোবার প্রজ্ঞা ও আশ্চর্য দূরদর্শিতার প্রতি আপনার সশ্রদ্ধ ভয় জাগিয়ে তোলে না? আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারি যে যিহোবার সময় তালিকা ও তাঁর প্রেমময় উদ্দেশ্য অনুযায়ী প্রচার কাজ শেষ হবে আর ধার্মিকদের আশীর্বাদ করা হবে। তারা পৃথিবীর অধিকারী হবেন ও চিরকাল এখানে বেঁচে থাকবেন। (গীতসংহিতা ৩৭:২৯; হবক্কূক ২:৩) আমরা যদি যিহোবার ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করি তবে আমরাও তাদের মাঝে একজন হব।—১ তীমথিয় ৪:১৬.
[পাদটীকাগুলো]
a মশীহের সম্বন্ধে এই দুটো ভবিষ্যদ্বাণী আরও ভাল করে বোঝার জন্য ওয়াচটাওয়ার বাইবেল অ্যান্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটির জ্ঞান যা অনন্ত জীবনে পরিচালিত করে বইয়ের ৩৬, ৯৭ ও ৯৮-১০৭ পৃষ্ঠা দেখুন।
পুনরালোচনার বিষয়গুলো
◻ সুসমাচার প্রচার কেন একটা কঠিন কাজ?
◻ সরকারী আইন ও সামাজিক সুস্থিরতা কোন্ কোন্ দিক দিয়ে খ্রীষ্টানদের কাজে উপকার করেছে?
◻ প্রচার কাজে যিহোবার আশীর্বাদ আমাদেরকে ভবিষ্যতে কোন্ অগ্রগতির বিষয়ে নিশ্চিত করে?