যিশু খ্রিস্ট যেভাবে চলতেন, সেভাবে চলুন
“যে বলে, আমি [ঈশ্বরে] থাকি, তাহার উচিত যে তিনি [যিশু] যেরূপ চলিতেন, সেও তদ্রূপ চলে।”—১ যোহন ২:৬.
১, ২. যিশুর প্রতি দৃষ্টি রাখার সঙ্গে কী জড়িত?
‘আইস, আমরাও ধৈর্য্যপূর্ব্বক আমাদের সম্মুখস্থ ধাবনক্ষেত্রে দৌড়ি,’ প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন, “বিশ্বাসের আদিকর্ত্তা ও সিদ্ধিকর্ত্তা যীশুর প্রতি দৃষ্টি রাখি।” (ইব্রীয় ১২:১, ২) বিশ্বস্ততার পথ অনুসরণ করার জন্য আমাদের যিশু খ্রিস্টের প্রতি দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন।
২ খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্রে যেমন ব্যবহৃত হয়েছে, ‘দৃষ্টি রাখার’ জন্য মূল ভাষার শব্দের অর্থ “কোনো বিক্ষেপ ছাড়াই একজনের মনোযোগকে চালিত করা,” “আরেকটা বিষয় দেখার জন্য একটা বিষয় থেকে চোখ সরিয়ে নেওয়া,” “কোনো বিষয়ে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা।” একটি তথ্যগ্রন্থ বলে: “ঠিক যে-মুহূর্তে একজন গ্রিক দৌড়বিদ স্টেডিয়ামে ধাবনক্ষেত্র এবং তার লক্ষ্য থেকে মনোযোগ সরিয়ে তা দর্শকদের দিকে ফেরান, ঠিক তখনই তার গতি ধীর হয়ে পড়ে। খ্রিস্টানদের বেলায়ও একই বিষয় ঘটতে পারে।” বিক্ষেপগুলো আমাদের আধ্যাত্মিক উন্নতির পথে অন্তরায় হতে পারে। আমাদের অবশ্যই যিশু খ্রিস্টের দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। আর এই আদিকর্তার মধ্যে আমরা কী দেখার প্রত্যাশা করি? যে-ইব্রীয় শব্দকে “আদিকর্ত্তা” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটার অর্থ হল “প্রধান নেতা, যিনি যেকোনো কিছুতে নেতৃত্ব নেন এবং এভাবে উদাহরণ স্থাপন করেন।” যিশুর প্রতি দৃষ্টি রাখার জন্য তাঁর উদাহরণ অনুসরণ করা প্রয়োজন।
৩, ৪. (ক) যিশু যেভাবে চলতেন, সেভাবে চলার জন্য আমাদের কী করা প্রয়োজন? (খ) কোন প্রশ্নগুলো আমাদের মনোযোগ পাওয়ার যোগ্য?
৩ বাইবেল বলে, “যে বলে, আমি [ঈশ্বরে] থাকি, তাহার উচিত যে তিনি [যিশু] যেরূপ চলিতেন, সেও তদ্রূপ চলে।” (১ যোহন ২:৬) যিশু যেমন তাঁর পিতার আজ্ঞাগুলো পালন করতেন, তেমনই যিশুর আজ্ঞাগুলো পালন করার মাধ্যমে আমাদের ঈশ্বরে থাকতে হবে।—যোহন ১৫:১০.
৪ তাই যিশু যেভাবে চলতেন, সেভাবে চলার জন্য আমাদের প্রধান নেতা হিসেবে তাঁকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ এবং তাঁর পদচিহ্নগুলো নিবিড়ভাবে অনুসরণ করা প্রয়োজন। এই ক্ষেত্রে যে-গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো বিবেচনা করতে হবে, সেগুলো হল: আজকে কীভাবে খ্রিস্ট আমাদের নেতৃত্ব দেন? তিনি যেভাবে চলতেন, তা অনুকরণ করার বিষয়টা কীভাবে আমাদের প্রভাবিত করা উচিত? যিশু খ্রিস্টের স্থাপিত আদর্শের প্রতি লেগে থাকার উপকারগুলো কী কী?
খ্রিস্ট যেভাবে তাঁর অনুসারীদের নেতৃত্ব দেন
৫. স্বর্গারোহণের আগে যিশু তাঁর অনুসারীদের কাছে কোন প্রতিজ্ঞা করেছিলেন?
৫ স্বর্গারোহণ করার আগে, পুনরুত্থিত যিশু খ্রিস্ট তাঁর শিষ্যদের দেখা দিয়েছিলেন এবং তাদেরকে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজের ভার দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “অতএব তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর।” সেই সময়ে প্রধান নেতা এই কথাগুলো বলার দ্বারা এও প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, এই কার্যভার পরিপূর্ণ করার সময় তিনি তাদের সঙ্গে সঙ্গে থাকবেন: “দেখ, আমিই যুগান্ত পর্য্যন্ত প্রতিদিন তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি।” (মথি ২৮:১৯, ২০) এই যুগান্তের শেষকালে কীভাবে যিশু খ্রিস্ট তাঁর অনুসারীদের সঙ্গে আছেন?
৬, ৭. পবিত্র আত্মার মাধ্যমে যিশু কীভাবে আমাদের নেতৃত্ব দেন?
৬ “সেই সহায়, পবিত্র আত্মা, যাঁহাকে পিতা আমার নামে পাঠাইয়া দিবেন,” যিশু বলেছিলেন, “তিনি সকল বিষয়ে তোমাদিগকে শিক্ষা দিবেন, এবং আমি তোমাদিগকে যাহা যাহা বলিয়াছি, সে সকল স্মরণ করাইয়া দিবেন।” (যোহন ১৪:২৬) যিশুর নামে পাঠানো পবিত্র আত্মা আজকে আমাদের নির্দেশনা এবং শক্তি প্রদান করে। এটি আমাদের আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে জ্ঞানালোকিত করে এবং “ঈশ্বরের গভীর বিষয় সকলও” বুঝতে সাহায্য করে। (১ করিন্থীয় ২:১০) অধিকন্তু, ‘প্রেম, আনন্দ, শান্তি, দীর্ঘসহিষ্ণুতা, মাধুর্য্য, মঙ্গলভাব, বিশ্বস্ততা, মৃদুতা, ইন্দ্রিয়দমনের’ মতো ঈশ্বরীয় গুণাবলি হল “আত্মার ফল।” (গালাতীয় ৫:২২, ২৩) পবিত্র আত্মার সাহায্যে, আমরা এই গুণাবলি গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করতে পারি।
৭ আমরা যখন শাস্ত্র অধ্যয়ন করি এবং যা শিখেছি, তা প্রয়োগ করার প্রচেষ্টা করি, তখন ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা আমাদের মধ্যে প্রজ্ঞা, বুদ্ধি বা বিচক্ষণতা, সুবিবেচনা বা বোধগম্যতা, জ্ঞান, বিচার এবং পরিণামদর্শিতা বা চিন্তা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। (হিতোপদেশ ২:১-১১) এ ছাড়া, পবিত্র আত্মা আমাদের প্রলোভন এবং পরীক্ষাগুলো সহ্য করতে সাহায্য করে। (১ করিন্থীয় ১০:১৩; ২ করিন্থীয় ৪:৭; ফিলিপীয় ৪:১৩) খ্রিস্টানদের জোরালো পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, তারা যেন ‘মাংসের ও আত্মার সমস্ত মালিন্য হইতে আপনাদিগকে শুচি করে, পবিত্রতা সিদ্ধ করে।’ (২ করিন্থীয় ৭:১) পবিত্র আত্মার সাহায্য ব্যতিরেকে আমরা কি আসলেই পবিত্রতা বা শুদ্ধতার বিষয়ে ঈশ্বরের চাহিদা অনুযায়ী জীবনযাপন করতে পারব? আজকে আমাদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য যিশু যে-মাধ্যম ব্যবহার করেন, তার মধ্যে একটা হল পবিত্র আত্মা, যেটি ব্যবহার করার জন্য যিহোবা তাঁর পুত্রকে ক্ষমতা দিয়েছেন।—মথি ২৮:১৮.
৮, ৯. নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য খ্রিস্ট কীভাবে ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাসকে’ ব্যবহার করেন?
৮ আরেকটা মাধ্যমের কথা বিবেচনা করুন, যেটার দ্বারা খ্রিস্ট আজকে মণ্ডলীকে নেতৃত্ব দেন। যিশু তাঁর আগমন বা উপস্থিতি এবং যুগান্তের বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছিলেন: “এখন, সেই বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস কে, যাহাকে তাহার প্রভু নিজ পরিজনের উপরে নিযুক্ত করিয়াছেন, যেন সে তাহাদিগকে উপযুক্ত সময়ে খাদ্য দেয়? ধন্য সেই দাস, যাহাকে তাহার প্রভু আসিয়া সেইরূপ করিতে দেখিবেন। আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, তিনি তাহাকে আপন সর্ব্বস্বের অধ্যক্ষ করিবেন।”—মথি ২৪:৩, ৪৫-৪৭.
৯ “প্রভু” হলেন যিশু খ্রিস্ট। “দাস” হল পৃথিবীতে অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের দল। এই দাস শ্রেণীকে আস্থা সহকারে যিশুর পার্থিব বিষয়গুলোর যত্ন নেওয়ার এবং সময়োপযোগী আধ্যাত্মিক খাবার জোগানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যৌথ ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাসের’ মধ্যে থেকে যোগ্য অধ্যক্ষদের একটা ছোট দল পরিচালক গোষ্ঠী গঠন করে, যা দাস শ্রেণীর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছে। তারা বিশ্বব্যাপী রাজ্যের প্রচার কাজে নির্দেশনা দেয় এবং উপযুক্ত সময়ে আধ্যাত্মিক পুষ্টি সরবরাহ করে। এভাবে খ্রিস্ট আত্মায় অভিষিক্ত “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস” এবং এর পরিচালক গোষ্ঠীর মাধ্যমে নেতৃত্ব দেন।
১০. প্রাচীনদের প্রতি আমাদের মনোভাব কেমন হওয়া উচিত এবং কেন?
১০ খ্রিস্টের নেতৃত্বের আরেকটা প্রকাশ হল ‘মনুষ্যদিগের নানা বর’ বা দানরূপ মানুষেরা—খ্রিস্টান প্রাচীন অথবা অধ্যক্ষরা। “পবিত্রগণকে পরিপক্ব করিবার নিমিত্ত” তাদেরকে নিযুক্ত করা হয়েছে “যেন পরিচর্য্যা-কার্য্য সাধিত হয়, যেন খ্রীষ্টের দেহকে গাঁথিয়া তোলা হয়।” (ইফিষীয় ৪:৮, ১১, ১২) তাদের সম্বন্ধে ইব্রীয় ১৩:৭ পদ বলে: “যাঁহারা তোমাদিগকে ঈশ্বরের বাক্য বলিয়া গিয়াছেন, তোমাদের সেই নেতাদিগকে স্মরণ কর, এবং তাঁহাদের আচরণের শেষগতি আলোচনা করিতে করিতে তাঁহাদের বিশ্বাসের অনুকারী হও।” প্রাচীনরা মণ্ডলীতে নেতৃত্ব দেয়। যেহেতু তারা খ্রিস্ট যিশুকে অনুকরণ করে, তাই তাদের বিশ্বাস অনুকরণযোগ্য হয়ে ওঠে। (১ করি. ১০:৩৪) এই ‘মনুষ্যদিগের নানা বরের’ বাধ্য থেকে এবং তাদের বশীভূত হয়ে আমরা প্রাচীন ব্যবস্থার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা দেখাতে পারি।—ইব্রীয় ১৩:১৭.
১১. আজকে কোন মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে খ্রিস্ট তাঁর অনুসারীদের নেতৃত্ব দেন আর তাঁর মতো করে চলার সঙ্গে কী জড়িত?
১১ হ্যাঁ, আজকে যিশু খ্রিস্ট তাঁর অনুসারীদের পবিত্র আত্মা, “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস” এবং মণ্ডলীর প্রাচীনদের মাধ্যমে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। খ্রিস্ট যেভাবে চলতেন, সেভাবে চলার সঙ্গে তাঁর নেতৃত্ব দেওয়ার ধরন বোঝা এবং সেটার বশীভূত থাকা জড়িত। সেইসঙ্গে এর জন্য প্রয়োজন তাঁর চলার ধরন অনুকরণ করা। “তোমরা ইহারই নিমিত্ত আহূত হইয়াছ,” প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন, “কেননা খ্রীষ্টও তোমাদের নিমিত্ত দুঃখ ভোগ করিলেন, এ বিষয়ে তোমাদের জন্য এক আদর্শ রাখিয়া গিয়াছেন, যেন তোমরা তাঁহার পদচিহ্নের অনুগমন কর।” (১ পিতর ২:২১) যিশুর নিখুঁত আদর্শ অনুসরণ করা আমাদের কোন উপায়ে প্রভাবিত করা উচিত?
ক্ষমতা ব্যবহার করার সময় যুক্তিবাদী হোন
১২. খ্রিস্টের উদাহরণের কোন দিক মণ্ডলীর প্রাচীনদের কাছে বিশেষ আগ্রহের বিষয়?
১২ যদিও যিশু তাঁর পিতার কাছ থেকে অতুলনীয় ক্ষমতা পেয়েছিলেন কিন্তু তা ব্যবহার করার ক্ষেত্রে তিনি যুক্তিবাদী ছিলেন। মণ্ডলীর সকলের—বিশেষভাবে অধ্যক্ষদের—তাদের “শান্ত ভাব [“যুক্তিবাদিতা,” NW] মনুষ্যমাত্রের বিদিত” হতে দেওয়া উচিত। (ফিলিপীয় ৪:৫; ১ তীমথিয় ৩:২, ৩, NW) যেহেতু মণ্ডলীতে প্রাচীনদের কিছুটা হলেও ক্ষমতা রয়েছে, তাই তা ব্যবহার করার সময় তাদের খ্রিস্টের পদচিহ্ন অনুসরণ করা অত্যাবশ্যক।
১৩, ১৪. অন্যদের ঈশ্বরকে সেবা করার বিষয়ে উৎসাহ দেওয়ার সময় প্রাচীনরা কোন উপায়ে খ্রিস্টকে অনুকরণ করতে পারে?
১৩ যিশু তাঁর শিষ্যদের সীমাবদ্ধতা সম্বন্ধে বিবেচনা করেছিলেন। তারা যতটুকু দিতে সক্ষম, তিনি তার চেয়ে বেশি তাদের কাছে দাবি করেননি। (যোহন ১৬:১২) তাদের চাপ না দিয়ে যিশু তাঁর অনুসারীদের ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার জন্য ‘প্রাণপণ করিতে’ উৎসাহ দিয়েছিলেন। (লূক ১৩:২৪) তিনি নেতৃত্ব দেওয়ার মাধ্যমে এবং তাদের হৃদয়কে অনুপ্রাণিত করার মাধ্যমে তা করেছিলেন। একইভাবে, আজকে খ্রিস্টান প্রাচীনরা ঈশ্বরকে সেবা করার ক্ষেত্রে অন্যদের লজ্জিত করে বা দোষ দিয়ে ভয় দেখায় না। এর পরিবর্তে তারা যিহোবা এবং যিশুর প্রতি ও সেইসঙ্গে তাদের সহমানবদের প্রতি ভালবাসার কারণে যিহোবাকে সেবা করার জন্য অন্যদেরকে উৎসাহিত করে।—মথি ২২:৩৭-৩৯.
১৪ লোকেদের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে যিশু তাঁর ওপর আস্থা সহকারে অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করেননি। অথবা তিনি কঠিন মান স্থাপন করেননি বা অসংখ্য নিয়মও চাপিয়ে দেননি। তাঁর পদ্ধতি ছিল অন্যদেরকে অনুপ্রাণিত করা আর তিনি মোশির মাধ্যমে দেওয়া আইনগুলোর পিছনে যে-নীতিগুলো রয়েছে, সেগুলো তাদের হৃদয়ে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে তা করেছিলেন। (মথি ৫:২৭, ২৮) যিশু খ্রিস্টকে অনুকরণ করে, প্রাচীনরা অযৌক্তিক নিয়মনীতি তৈরি করা অথবা তাদের ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি চাপিয়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকে। পোশাক-আশাক ও সাজগোজ অথবা আমোদপ্রমোদ ও চিত্তবিনোদনের ব্যাপারে প্রাচীনরা সেই ঈশ্বরীয় নীতিগুলো ব্যবহার করে হৃদয়ে পৌঁছানোর চেষ্টা করে যেগুলো মীখা ৬:৮; ১ করিন্থীয় ১০:৩১-৩৩; ১ তীমথিয় ২:৯, ১০ পদে লেখা আছে।
সহানুভূতিশীল এবং ক্ষমাশীল হোন
১৫. যিশু তাঁর শিষ্যদের ব্যর্থতার প্রতি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন?
১৫ শিষ্যদের ব্যর্থতা এবং ভুলত্রুটির প্রতি তিনি যেভাবে আচরণ করেছিলেন, সেই বিষয়ে খ্রিস্ট আমাদের জন্য অনুসরণযোগ্য আদর্শ স্থাপন করে গিয়েছেন। মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে তাঁর শেষ রাতের দুটো ঘটনা বিবেচনা করুন। গেৎশিমানী বাগানে পৌঁছানোর পর যিশু “পিতর, যাকোব ও যোহনকে সঙ্গে লইয়া গেলেন” এবং তাদেরকে ‘জাগিয়া থাকিতে’ বলেন। পরে “তিনি কিঞ্চিৎ অগ্রে গিয়া ভূমিতে পড়িলেন, এবং . . . প্রার্থনা করিলেন।” ফিরে এসে তিনি দেখেন যে, “তাঁহারা ঘুমাইয়া পড়িয়াছেন।” যিশু কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? তিনি বলেছিলেন: “আত্মা ইচ্ছুক বটে, কিন্তু মাংস দুর্ব্বল।” (মার্ক ১৪:৩২-৩৮) পিতর, যাকোব এবং যোহনকে কর্কশভাবে বকাঝকা করার পরিবর্তে তিনি সহানুভূতি প্রকাশ করেছিলেন! সেই রাতে পিতর তিন বার যিশুকে অস্বীকার করেছিলেন। (মার্ক ১৪:৬৬-৭২) এরপর পিতরের সঙ্গে যিশু কেমন ব্যবহার করেছিলেন? “প্রভু . . . উঠিয়াছেন, এবং শিমোনকে [পিতরকে] দেখা দিয়াছেন।” (লূক ২৪:৩৪) “তিনি কৈফাকে, পরে সেই বারো জনকে দেখা দিলেন,” বাইবেল বলে। (১ করিন্থীয় ১৫:৫) বিরক্তি বোধ করার পরিবর্তে, যিশু অনুতপ্ত প্রেরিতকে ক্ষমা করেছিলেন এবং তাকে শক্তিশালী করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে যিশু আস্থা সহকারে পিতরকে বড় বড় দায়িত্ব দিয়েছিলেন।—প্রেরিত ২:১৪; ৮:১৪-১৭; ১০:৪৪, ৪৫.
১৬. আমাদের সহবিশ্বাসীরা যখন আমাদের হতাশ করে অথবা আমাদের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করে, তখন কীভাবে আমরা যিশুর মতো চলতে পারি?
১৬ আমাদের সহবিশ্বাসীরা যখন অসিদ্ধতার কারণে আমাদের হতাশ করে অথবা আমাদের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করে, তখন আমাদের কি যিশুর মতো সহানুভূতিশীল এবং ক্ষমাশীল হওয়া উচিত নয়? পিতর সহবিশ্বাসীদের জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন: “তোমরা সকলে সমমনা, পরদুঃখে দুঃখিত, ভ্রাতৃপ্রেমিক, স্নেহবান্ ও নম্রমনা হও। মন্দের পরিশোধে মন্দ করিও না, এবং নিন্দার পরিশোধে নিন্দা করিও না; বরং আশীর্ব্বাদ কর।” (১ পিতর ৩:৮, ৯) অন্য ব্যক্তি যদি যিশুর মতো আচরণ করতে ব্যর্থ হয়, সহানুভূতিশীল এবং ক্ষমাশীল না হয় তা হলে? এমনকি তখনও আমরা যিশুকে অনুকরণ করার এবং তিনি যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতেন, সেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতে বাধ্য।—১ যোহন ৩:১৬.
রাজ্যের বিষয়গুলোকে প্রথম স্থানে রাখুন
১৭. কী দেখায় যে, ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করাকে যিশু তাঁর জীবনে প্রথম স্থান দিয়েছিলেন?
১৭ আরেকটা উপায়ে আমাদের যিশু যেভাবে চলতেন, সেভাবে চলতে হবে। ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার ঘোষণা করা যিশুর জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। শমরিয়ার শুখর নগরের কাছে শমরীয় মহিলার কাছে প্রচার করার পর, যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “আমার খাদ্য এই, যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, যেন তাঁহার ইচ্ছা পালন করি ও তাঁহার কার্য্য সাধন করি।” (যোহন ৪:৩৪) পিতার ইচ্ছা পালন করা যিশুকে শক্তি দিয়েছিল; এটা তাঁর কাছে খাবারের মতোই পুষ্টিকর, পরিতৃপ্তিদায়ক এবং সতেজদায়ক ছিল। ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে যিশুকে অনুকরণ করা কি অর্থপূর্ণ এবং পরিতৃপ্তিদায়ক জীবনের চেয়ে কোনো অংশে কম কিছু দেবে?
১৮. সন্তানদেরকে পূর্ণসময়ের সেবা বেছে নিতে উৎসাহিত করার সঙ্গে কোন আশীর্বাদগুলো আসে?
১৮ বাবামারা যখন তাদের সন্তানদের পূর্ণসময়ের সেবা করার জন্য উৎসাহিত করে, তখন তারা ও সেইসঙ্গে তাদের সন্তানরা অনেক আশীর্বাদ লাভ করে। যমজ সন্তানের এক বাবা তার ছেলেদের একেবারে শৈশব থেকেই তাদের সামনে অগ্রগামী সেবাকে লক্ষ্য হিসেবে রেখেছিলেন। তাদের পড়ালেখা শেষ করার পর, সেই যমজ ভাইয়েরা অগ্রগামী হয়। এর ফলে তিনি যে-আনন্দ পেয়েছিলেন, সেই সম্বন্ধে পিতা লেখেন: “আমাদের ছেলেরা আমাদের হতাশ করেনি। কৃতজ্ঞতা সহকারে আমরা বলতে পারি, ‘সন্তানেরা সদাপ্রভুদত্ত অধিকার’।” (গীতসংহিতা ১২৭:৩) আর সন্তানরা পূর্ণসময়ের সেবা অনুধাবন করে কীভাবে উপকৃত হতে পারে? পাঁচ সন্তানের একজন মা বলেন: “অগ্রগামীর কাজ আমার সব সন্তানকে যিহোবার সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে, তাদের ব্যক্তিগত অধ্যয়নের অভ্যাসে উন্নতি এনেছে, বিজ্ঞতার সঙ্গে তাদের সময়কে কাজে লাগানোর জন্য শিখতে সাহায্য করেছে এবং আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোকে তাদের জীবনে প্রথম স্থানে রাখা শিখতে সাহায্য করেছে। যদিও তাদের সকলকে অনেক রদবদল করতে হয়েছিল কিন্তু তাদের একজনও তারা যে-পথ বেছে নিয়েছে, সেটার জন্য দুঃখবোধ করেনি।”
১৯. ভবিষ্যতের জন্য কোন পরিকল্পনার বিষয়ে অল্পবয়স্কদের বিজ্ঞতার সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত?
১৯ অল্পবয়স্করা, ভবিষ্যতের জন্য তোমাদের পরিকল্পনা কী? তোমরা কি কোনো বৃত্তিমূলক পেশায় দক্ষ হওয়ার চেষ্টা করছ? নাকি তোমরা পূর্ণসময়ের সেবার কেরিয়ারের দিকে এগোচ্ছ? “তোমরা ভাল করিয়া দেখ, কিরূপে চলিতেছ; অজ্ঞানের ন্যায় না চলিয়া জ্ঞানবানের ন্যায় চল,” পৌল উপদেশ দিয়েছিলেন, “সুযোগ কিনিয়া লও, কেননা এই কাল মন্দ।” তিনি আরও বলেন: “এই কারণ নির্ব্বোধ হইও না, কিন্তু প্রভুর [“যিহোবার,” NW] ইচ্ছা কি, তাহা বুঝ।”—ইফিষীয় ৫:১৫-১৭.
অনুগত হোন
২০, ২১. কোন উপায়ে যিশু অনুগত ছিলেন এবং কীভাবে আমরা তাঁর আনুগত্য অনুকরণ করতে পারি?
২০ যিশু যেভাবে চলতেন, সেভাবে চলার জন্য তাঁর আনুগত্যকে অনুকরণ করা প্রয়োজন। যিশুর আনুগত্য সম্বন্ধে বাইবেল বলে: “ঈশ্বরের স্বরূপবিশিষ্ট থাকিতে তিনি ঈশ্বরের সহিত সমান থাকা ধরিয়া লইবার বিষয় জ্ঞান করিলেন না, কিন্তু আপনাকে শূন্য করিলেন, দাসের রূপ ধারণ করিলেন, মনুষ্যদের সাদৃশ্যে জন্মিলেন; এবং আকার প্রকারে মনুষ্যবৎ প্রত্যক্ষ হইয়া আপনাকে অবনত করিলেন; মৃত্যু পর্য্যন্ত, এমন কি, ক্রুশীয় মৃত্যু পর্য্যন্ত আজ্ঞাবহ হইলেন।” যিশু তাঁর জন্য ঈশ্বরের ইচ্ছার বশীভূত থেকে অনুগতভাবে যিহোবার সার্বভৌমত্বকে সমর্থন করেছিলেন। যাতনাদণ্ডে মৃত্যু পর্যন্ত তিনি বাধ্য ছিলেন। আমাদের এই “ভাব” বা মানসিক প্রবণতা বজায় রাখতে হবে এবং অনুগতভাবে ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রতি বশীভূত থাকতে হবে।—ফিলিপীয় ২:৫-৮.
২১ যিশু তাঁর বিশ্বস্ত প্রেরিতদের বেলায়ও আনুগত্য দেখিয়েছিলেন। তাদের দুর্বলতা এবং অসিদ্ধতা সত্ত্বেও যিশু তাদেরকে “শেষ পর্য্যন্ত” ভালবেসেছিলেন। (যোহন ১৩:১) একইভাবে, আমাদের ভাইবোনদের অসিদ্ধতার কারণে আমাদের নিজেদের মধ্যে সমালোচনার মনোভাব গড়ে তুলতে দেওয়া উচিত নয়।
যিশুর দ্বারা স্থাপিত আদর্শে লেগে থাকুন
২২, ২৩. যিশুর দ্বারা স্থাপিত আদর্শে লেগে থাকার উপকারগুলো কী?
২২ অবশ্য, অসিদ্ধ মানুষ হিসেবে আমরা আমাদের নিখুঁত আদর্শের পদচিহ্ন অনুসরণ করে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে চলতে পারি না। কিন্তু, আমরা তাঁর পদচিহ্ন নিবিড়ভাবে অনুকরণ করার জন্য প্রচেষ্টা করতে পারি। তা করার জন্য আমাদের খ্রিস্টের নেতৃত্বের ধরন বোঝা ও তার বশীভূত থাকা এবং তিনি যে-আদর্শ স্থাপন করেছেন, তাতে লেগে থাকা প্রয়োজন।
২৩ খ্রিস্টকে অনুকরণ করা অনেক আশীর্বাদ নিয়ে আসে। আমাদের নিজেদের পরিবর্তে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার কারণে আমাদের জীবন আরও অর্থপূর্ণ এবং পরিতৃপ্তিদায়ক হয়ে ওঠে। (যোহন ৫:৩০; ৬:৩৮) আমাদের এক উত্তম বিবেক থাকে। আমাদের চলার ধরন উদাহরণযোগ্য হয়ে ওঠে। যারা পরিশ্রান্ত ও ভারাক্রান্ত ছিল তাদের সকলকে যিশু তাঁর কাছে আসার এবং তাদের প্রাণের জন্য বিশ্রাম বা সতেজতা লাভ করার আমন্ত্রণ জানান। (মথি ১১:২৮-৩০) আমরা যখন যিশুর উদাহরণ অনুকরণ করি, তখন আমরাও আমাদের সাহচর্যের মাধ্যমে অন্যদের সতেজ করতে পারি। তাই, আসুন আমরা যিশু যেভাবে চলতেন, ক্রমাগত সেভাবে চলি।
আপনি কি মনে করতে পারেন?
• আজকে খ্রিস্ট তাঁর অনুসারীদের কীভাবে নেতৃত্ব দেন?
• প্রাচীনরা তাদের ঈশ্বরদত্ত ক্ষমতা ব্যবহার করার ক্ষেত্রে কীভাবে খ্রিস্টের নেতৃত্ব অনুসরণ করতে পারে?
• অন্যদের ভুলগুলো মোকাবিলা করার সময় কীভাবে আমরা যিশুর উদাহরণ অনুসরণ করতে পারি?
• কীভাবে অল্পবয়স্করা রাজ্যের বিষয়গুলোকে প্রথম স্থানে রাখতে পারে?
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
খ্রিস্টান প্রাচীনরা আমাদেরকে খ্রিস্টের নেতৃত্ব অনুসরণ করার জন্য সাহায্য করে থাকে
[২৪, ২৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
তরুণ-তরুণীরা, পরিতৃপ্তিদায়ক খ্রিস্টীয় জীবনযাপনের জন্য তোমরা কোন পরিকল্পনা করছ?