আপনার কি “খ্রীষ্টের মন” আছে?
“ধৈর্য্যের ও সান্ত্বনার ঈশ্বর এমন বর দিউন, যাহাতে তোমরা খ্রীষ্ট যীশুর অনুরূপে . . . একমনা হও।”—রোমীয় ১৫:৫.
১. খ্রীষ্টীয়জগতের অনেক ছবিতে যীশুকে কীভাবে আঁকা হয় আর সেগুলো কেন যীশুর আসল ছবি দেয় না?
“তাঁকে কেউ কখনও হাসতে দেখেনি।” একটা বইয়ে যীশুর সম্বন্ধে এই কথাগুলোই লেখা হয়েছিল আর এই বইয়ের লেখক মিথ্যেভাবে দাবি করেন যে তিনি প্রাচীনকালের একজন রোমীয় কর্মকর্তা ছিলেন। এই বইয়ে যীশুর বিষয়ে যা লেখা হয়েছে তা একাদশ শতাব্দী থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত অনেক শিল্পীদের ওপর ছাপ ফেলেছে।a আর সেইজন্য তারা যীশু খ্রীষ্টের এমন সব ছবি এঁকেছেন যেখানে তাঁকে গম্ভীর, খুব রাগী ব্যক্তি হিসেবে দেখানো হয়েছে যিনি হয়তো জীবনে কখনও হাসতেই শেখেননি। কিন্তু তা যীশুর সত্যিকারের ছবি হতে পারে না কারণ সুসমাচারের বইগুলো থেকে আমরা জানতে পারি যে তিনি একজন দরদি, দয়ালু ও সহানুভূতিশীল ব্যক্তি ছিলেন।
২. কীভাবে আমরা ‘খ্রীষ্ট যীশুর অনুরূপে একমন’ পেতে পারি আর এর ফলে আমরা কী করতে পারব?
২ অতএব, আমাদের যদি জানতে হয় যে সত্যি করেই যীশু কেমন ছিলেন, তাহলে আমাদের দেখতে হবে যে যীশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন তখন তিনি আসলে কেমন ব্যক্তি ছিলেন। তাই আসুন আমরা সুসমাচারের বইগুলো থেকে এমন কয়েকটা ঘটনা পরীক্ষা করি, যা আমাদেরকে “খ্রীষ্টের মন” সম্বন্ধে জানতে সাহায্য করবে। এর থেকে আমরা দেখতে পাব যে যীশু খ্রীষ্টের অনুভূতি কেমন ছিল, তাঁর ধ্যানধারণা, তাঁর চিন্তাভাবনা কেমন ছিল ও তিনি কীভাবে যুক্তি দিয়ে বোঝাতেন। (১ করিন্থীয় ২:১৬) আর এই আলোচনা করার সময় আমরা এটাও দেখব যে আমরা কীভাবে ‘খ্রীষ্ট যীশুর অনুরূপে একমন’ পেতে পারি। (রোমীয় ১৫:৫) এভাবে, আমরা আমাদের জীবন খ্রীষ্টের পদচিহ্ন অনুসারে চালাতে পারব আর অন্যদের সঙ্গে সেইরকম ব্যবহার করতে পারব যেমন যীশু করতেন।—যোহন ১৩:১৫.
সহজে যাওয়া যায়
৩, ৪. (ক) মার্ক ১০:১৩-১৬ পদের ঘটনাটা কোন্ সময়ে ঘটেছিল? (খ) শিষ্যরা যখন ছোট ছেলেমেয়েদের যীশুর কাছে আসতে নিষেধ করেছিলেন তখন তিনি কী বলেছিলেন?
৩ লোকেরা খুব সহজে যীশুর কাছে যেতে পারত। তাদের বয়স ও অবস্থা যাই হোক না কেন যীশুর কাছে যেতে তারা একেবারেই ইতস্তত করত না। মার্ক ১০:১৩-১৬ পদের ঘটনাটার কথা চিন্তা করুন। এটা তাঁর প্রচার কাজের প্রায় শেষ দিকে ঘটেছিল যখন তিনি শেষবারের মতো যিরূশালেমে যাচ্ছিলেন আর শীঘ্রিই তাকে খুব মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরণ করতে হবে।—মার্ক ১০:৩২-৩৪.
৪ এই ঘটনাটার কথাও একটু কল্পনা করুন। লোকেরা তাদের ছোট ছেলেমেয়েদের ও শিশুদের যীশুর কাছে নিয়ে আসতে থাকে, যাতে তিনি তাদেরকে আশীর্বাদ করেন।b কিন্তু, শিষ্যরা ছেলেমেয়েদেরকে যীশুর কাছে আনতে নিষেধ করেন। যীশুর মৃত্যু একেবারে কাছে চলে এসেছিল আর তাই এই সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। শিষ্যরা হয়তো ভেবেছিলেন যে বাচ্চারা তাঁকে জ্বালাতন করবে আর যীশু বিরক্ত হবেন। কিন্তু তাদের চিন্তা আসলে ভুল ছিল। যীশু যখন দেখেন যে শিষ্যরা বাচ্চাদের আসতে বারণ করছিলেন তিনি মোটেও খুশি হননি। যীশু ছোট ছেলেমেয়েদেরকে তাঁর কাছে ডাকেন আর বলেন: “শিশুদিগকে আমার নিকটে আসিতে দেও।” (মার্ক ১০:১৪) এরপর তিনি এমন কিছু করেন যা দেখায় যে তিনি লোকেদের কত ভালবাসতেন ও তিনি কত কোমল ছিলেন। ওই বিবরণ বলে: “তিনি তাহাদিগকে কোলে করিলেন, ও তাহাদের উপরে হস্তার্পণ করিয়া আশীর্ব্বাদ করিলেন।” (মার্ক ১০:১৬) কোন সন্দেহ নেই যে বাচ্চারা যীশুর কাছে আসতে একেবারেই ভয় পেত না আর তাঁর কোলে বসতে তারা খুব ভালবাসত।
৫. মার্ক ১০:১৩-১৬ পদের ঘটনা আমাদেরকে যীশু কীধরনের ব্যক্তি ছিলেন বলে জানায়?
৫ ওই ছোট ঘটনা আমাদেরকে যীশু কী ধরনের ব্যক্তি ছিলেন সেই বিষয়ে অনেক কিছু জানায়। লক্ষ্য করে দেখুন যে লোকেরা সহজেই তাঁর কাছে আসতে পারত। যদিও পৃথিবীতে আসার আগে স্বর্গে তাঁর এক উচ্চ পদ ছিল কিন্তু তবুও পাপী মানুষেরা নির্ভয়ে তাঁর কাছে আসত। যীশু কখনও তাদের নিচু চোখে দেখেননি। (যোহন ১৭:৫) তাই এটা কি সত্যিই ভাববার মতো বিষয় নয় যে যীশু যদি সত্যিই হাসিখুশি না হতেন তাহলে কি করে ছোট ছেলেমেয়েরা তাঁর সঙ্গে থাকতে পছন্দ করত? শিশুরা নিশ্চয়ই এমন কারও কাছে যেতে চাইবে না যিনি কখনও হাসেন না বা যিনি সবসময় গম্ভীর ও চুপচাপ থাকেন! সব বয়সের লোকেরাই যীশুর কাছে আসত কারণ তারা জানত যে তিনি সবাইকে ভালবাসতেন ও সবার জন্য চিন্তা করতেন আর তারা নিশ্চিত ছিলেন যে তিনি তাদেরকে কখনও ফিরিয়ে দেবেন না।
৬. প্রাচীনেরা কীভাবে নিজেদের এমন করে তুলতে পারেন যাতে অন্যেরা সহজে ও নির্ভয়ে তাদের কাছে যায়?
৬ এই ঘটনা পড়ার ও এটা নিয়ে চিন্তা করার সময় আমরা নিজেদেরকে জিজ্ঞেস করতে পারি, ‘আমার কি খ্রীষ্টের মন আছে? আমার কাছে কি লোকেরা সহজেই আসতে পারে?’ আজ আমরা শেষকালে বাস করছি আর এটা খুবই কঠিন সময়, তাই আজ ঈশ্বরের মেষদের এমন পালকদের দরকার যাদের কাছে নির্ভয়ে ও সহজে যাওয়া যায়, কারণ এই পালকেরা তাদের জন্য ‘ঝটিকা হইতে অন্তরাল।’ (যিশাইয় ৩২:১, ২; ২ তীমথিয় ৩:১) তাই প্রাচীনেরা আপনারা যদি ভাইদের জন্য প্রকৃতই চিন্তা করেন ও তাদের জন্য যে কোন কিছু করার জন্য তৈরি থাকেন, তাদের জন্য নিজেকে উজাড় করে দেন, তাহলে তারা বুঝবেন যে আপনারা তাদের জন্য চিন্তা করেন। এটা আপনাদের চেহারায় ফুটে উঠবে, আপনাদের কথা বলার ভঙ্গি, আপনাদের গলার আওয়াজ এবং আপনাদের সদয় ব্যবহার দেখে তারা তা বুঝতে পারবেন। তারা বুঝবেন যে আপনি অন্তর থেকে তাদের জন্য চিন্তা করেন, তাদেরকে ভালবাসেন। আর এইরকম হলে সবাই আপনার ওপর ভরসা করতে পারবে এমনকি ছোট ছেলেমেয়েরাও আপনার কাছে সহজে, নির্ভয়ে আসতে পারবে। একজন বোন বলেন যে কেন তিনি একজন প্রাচীনের কাছে তার মনের কথা বলতে পেরেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “প্রাচীন খুবই নরমভাবে ও দয়া আর চিন্তা দেখিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তার সঙ্গে কথা বলার সময় আমি একেবারেই ইতস্তত করিনি, ভয়ও পাইনি তা না হলে আমি হয়তো মুখ খুলতেই পারতাম না।”
অন্যদের জন্য চিন্তা করুন
৭. (ক) কীভাবে যীশু দেখিয়েছিলেন যে তিনি অন্যদের জন্য চিন্তা করতেন? (খ) কেন যীশু একজন অন্ধ ব্যক্তিকে একবারেই না করে ধীরে ধীরে সুস্থ করেছিলেন?
৭ যীশু অন্যদের জন্য চিন্তা করতেন। অন্যদের কষ্ট দেখে তিনি দুঃখিত হতেন। অসহায় দুঃখী লোকেদের কষ্ট দেখে তার এতই দয়া হতো যে তিনি তাদের কষ্ট দূর না করে থাকতে পারতেন না। (মথি ১৪:১৪) তিনি জানতেন যে মানুষেরা জন্ম থেকেই অসিদ্ধ আর সেইমতো তিনি তাদের প্রয়োজন মেটাতেন। (যোহন ১৬:১২) একবার লোকেরা তাঁর কাছে একজন অন্ধ লোককে নিয়ে এসেছিল আর তাকে সুস্থ করে দেওয়ার জন্য তারা যীশুর কাছে মিনতি করেছিল। যীশু ওই অন্ধের চোখ খুলে দিয়েছিলেন কিন্তু তিনি একবারেই তা করেননি। প্রথমে ওই অন্ধ আবছা আবছা দেখেছিল আর তার মনে হয়েছিল যে মানুষেরা ‘গাছের মতন বেড়াইতেছিল।’ এরপর যীশু তাকে পুরোপুরি সুস্থ করেছিলেন। কেন তিনি সেই লোককে ধীরে ধীরে সুস্থ করেছিলেন? হতে পারে এইজন্য যে সে ছোটবেলা থেকেই অন্ধ ছিল, তার কাছে সবকিছু এতদিন শুধু অন্ধকার ছিল। তাই যীশু যদি তাকে একবারেই সুস্থ করে দিতেন, তাহলে হঠাৎ করে সূর্যের আলো বা পৃথিবীর সবকিছু দেখে তার চোখ ধাঁধিয়ে যেত।—মার্ক ৮:২২-২৬.
৮, ৯. (ক) যীশু ও তাঁর শিষ্যরা দিকাপলি অঞ্চলে আসার সঙ্গে সঙ্গে কী ঘটেছিল? (খ) একজন বধির লোককে যীশু কীভাবে সুস্থ করেছিলেন বলুন।
৮ সাধারণ কাল ৩২ সালে নিস্তারপর্বের পরে আরেকটা ঘটনার কথা দেখুন। যীশু ও তাঁর শিষ্যরা গালীল সাগরের পূর্ব দিকে দিকাপলি অঞ্চলে এসেছেন। সেখানে অনেক লোকেরা যীশুকে দেখে ফেলে ও তাঁর পিছনে আসতে শুরু করে। তারা তাঁর কাছে অসুস্থ ও অক্ষম লোকেদের নিয়ে আসে আর তিনি তাদের সকলকে সুস্থ করেন। (মথি ১৫:২৯, ৩০) কিন্তু এখানে এক আগ্রহজনক ঘটনা ঘটে। যীশু তাদের মধ্যে থেকে একজন লোককে বেছে নেন ও তাকে এক পাশে নিয়ে গিয়ে সুস্থ করেন। সুসমাচার লেখক মার্কই শুধু এই ঘটনাটার কথা ও সেখানে যা ঘটেছিল সে কথা লেখেন।—মার্ক ৭:৩১-৩৫.
৯ এই লোকটা বধির এবং তোতলা ছিল। যীশু হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন যে সে তার রোগের কারণে সবার সামনে আসতে লজ্জা পাবে বা ইতস্তত করবে। এরপর যীশু এমন কিছু করেছিলেন যা তিনি সচরাচর করতেন না। তিনি তাকে ভিড়ের মধ্যে থেকে সরিয়ে এক নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলেন। তারপর তিনি কিছু অঙ্গভঙ্গি করে তাকে বুঝিয়েছিলেন যে তিনি তার জন্য কী করতে যাচ্ছেন। তিনি “তাহার দুই কর্ণে আপন অঙ্গুলী দিলেন থুথু ফেলিলেন, ও তাহার জিহ্বা স্পর্শ করিলেন।” (মার্ক ৭:৩৩) এরপর যীশু স্বর্গের দিকে তাকিয়েছিলেন এবং দীর্ঘনিশ্বাস নিয়ে প্রার্থনা করেছিলেন। এই সমস্তকিছু করে তিনি হয়তো তাকে বলতে চেয়েছিলেন যে ‘আমি যা করতে যাচ্ছি তা আমার নিজের শক্তিতে নয় কিন্তু ঈশ্বরের শক্তিতেই করছি।’ এরপর তিনি বলেছিলেন: “খুলিয়া যাউক।” (মার্ক ৭:৩৪) এতে সেই লোক শুনতে আর অন্যদের মতো কথা বলতে শুরু করেছিল।
১০, ১১. কীভাবে আমরা দেখাই যে আমরা মণ্ডলীতে ও পরিবারের লোকেদের আবেগ, অনুভূতির কথা মনে রেখে তাদের সঙ্গে ব্যবহার করছি?
১০ অন্যদের জন্য যীশু কত চিন্তা করতেন! তিনি তাদের বুঝতেন, তাদের অনুভূতি তাঁকে নাড়া দিত আর তিনি তাদেরকে দয়া দেখিয়ে তাদের সঙ্গে ব্যবহার করতেন। খ্রীষ্টান হওয়ায়, আমাদেরও খ্রীষ্টের মতো করা দরকার আর এইভাবে আমরা দেখাব যে আমাদের কাছে খ্রীষ্টের মন আছে। বাইবেল আমাদের পরামর্শ দেয়: “তোমরা সকলে সমমনা, পরদুঃখে দুঃখিত, ভ্রাতৃপ্রেমিক, স্নেহবান্ ও নম্রমনা হও।” (১ পিতর ৩:৮) এইজন্য আমাদের অন্যদের সঙ্গে এমনভাবে কথা বলা ও তাদের সঙ্গে এমনভাবে ব্যবহার করা দরকার যা দেখাবে যে আমরা তাদের অনুভূতির বিষয় খেয়াল রাখি।
১১ মণ্ডলীতে, আমাদের অন্য ভাইবোনদের আবেগ ও অনুভূতির কথা মনে রেখে তাদের সঙ্গে মর্যাদা ও সম্মান দেখিয়ে ব্যবহার করা দরকার, ঠিক যেমন আমরা চাই যে অন্যেরা আমাদের সঙ্গে করুক। (মথি ৭:১২) আর আমাদের খেয়াল রাখা দরকার যে আমরা কী বলছি এবং কীভাবে বলছি। (কলসীয় ৪:৬) আমাদের মনে রাখা দরকার যে ‘অবিবেচনার কথা বলা খড়্গাঘাতের মত।’ (হিতোপদেশ ১২:১৮) পরিবারের লোকেদের সঙ্গে আমরা কীভাবে ব্যবহার করব? স্বামী ও স্ত্রী যারা সত্যি সত্যিই একে অন্যকে ভালবাসেন তারা অবশ্যই একে অন্যের অনুভূতিকে সম্মান করবেন। (ইফিষীয় ৫:৩৩) তারা একে অন্যের সঙ্গে রূঢ়ভাবে কথা বলবেন না, দোষ ধরবেন না, সবসময় একজন আরেকজনের সমালোচনা করবেন না, একজন আরেকজনকে ছোট করে কথা বলবেন না। আর যদি তারা এটা করেন তাহলে তা অন্যের মনে খুবই গভীর ক্ষত তৈরি করে যা সারতে অনেক সময় লেগে যায়। ছেলেমেয়েদেরও আবেগ ও অনুভূতি রয়েছে আর যে বাবামায়েরা তাদের ছেলেমেয়েদের ভালবাসেন তারা এই বিষয়টা খেয়াল রাখেন। তাই শাসন করার সময় বাবামায়েরা এমনভাবে শাসন করবেন না যাতে ছেলেমেয়েদের আত্মসম্মানে আঘাত লাগে বা তাদের মন ভেঙে যায় আর সবার সামনে এমন কিছু বলা ঠিক নয় যাতে তারা লজ্জা পায়।c (কলসীয় ৩:২১) তাই যখন আমরা অন্যের আবেগ, অনুভূতিকে মনে রেখে তাদের সঙ্গে ব্যবহার করি তখন আমরা দেখাই যে আমাদের খ্রীষ্টের মন আছে।
অন্যদের ওপর ভরসা রাখার ইচ্ছা
১২. যীশু তাঁর শিষ্যদেরকে কোন্ সঠিক দৃষ্টিতে দেখেছিলেন?
১২ যীশু তাঁর শিষ্যদেরকে সঠিক দৃষ্টিতে দেখেছিলেন। তিনি ভাল করেই জানতেন যে তাঁর শিষ্যরা অসিদ্ধ ও তারা ভুল করবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হল, তিনি মানুষের হৃদয় পড়তে পারতেন। (যোহন ২:২৪, ২৫) তিনি শুধু তাদের অসিদ্ধতাকেই দেখেননি কিন্তু তাদের ভাল গুণগুলো দেখেছিলেন। এছাড়াও তিনি এই লোকেদের যোগ্যতা দেখেছিলেন কারণ যিহোবা তাদের আকর্ষণ করেছিলেন। (যোহন ৬:৪৪) শিষ্যদের সঙ্গে যীশু যেভাবে কথা বলতেন ও তাদের সঙ্গে যেভাবে ব্যবহার করতেন তা দেখিয়েছিল যে তিনি তাদের সঠিক দৃষ্টিতে দেখতেন। শুধু তাই-ই নয় তাদের ওপর যীশুর ভরসা ছিল।
১৩. কীভাবে যীশু দেখিয়েছিলেন যে তাঁর শিষ্যদের ওপর তাঁর ভরসা ছিল?
১৩ কীভাবে যীশু দেখিয়েছিলেন যে তাদের ওপর তাঁর ভরসা আছে? পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় তিনি তাঁর অভিষিক্ত শিষ্যদের এক গুরু দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি তাদের হাতে সারা পৃথিবীতে রাজ্যের কাজ দেখাশোনা করার দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিলেন। (মথি ২৫:১৪, ১৫; লূক ১২:৪২-৪৪) প্রচার কাজের সময় ছোট ছোট বিষয়গুলোতেও তিনি দেখিয়েছিলেন যে তাদের ওপর তাঁর ভরসা আছে। তিনি যখন অলৌকিকভাবে লোকেদের খাইয়েছিলেন তখন খাবার ভাগ করে দেওয়ার দায়িত্ব তাঁর শিষ্যদের দিয়েছিলেন।—মথি ১৪:১৫-২১; ১৫:৩২-৩৭.
১৪. মার্ক ৪:৩৫-৪১ পদে দেওয়া ঘটনাটা আপনি অল্প কথায় কীভাবে বলবেন?
১৪ এছাড়া মার্ক ৪:৩৫-৪১ পদে দেওয়া ঘটনাটার কথাও চিন্তা করুন। যীশু তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে একটা নৌকায় চড়েন ও গালীল সাগরের পূর্ব দিকে যেতে থাকেন। কিছুক্ষণ পরে যীশু নৌকার পিছন দিকে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। কিন্তু, সঙ্গে সঙ্গেই “ভারী ঝড় উঠিল।” গালীল সাগরে প্রায়ই এরকম ঝড় হতো কারণ সমুদ্রতল থেকে এটা অনেকখানি (প্রায় ২০০ মিটার) নিচে ছিল আর এর আশেপাশের হাওয়া বেশ গরম ছিল। আবার উত্তর দিকের হর্মোণ পাহাড় থেকেও দমকা হাওয়া এই সমুদ্রের দিকে বয়ে আসত আর এর ফলে আবহাওয়া উত্তাল হয়ে পড়ত, এই মুহূর্তে শান্ত আবার পরের মুহূর্তেই প্রচণ্ড ঝড় শুরু হয়ে যেত। যীশু গালীলে বড় হয়েছিলেন তাই কোন সন্দেহ নেই যে এইরকম ঝড়ের কথা তিনি জানতেন। কিন্তু তবুও তিনি শিষ্যদের ওপর পুরোপুরি ভরসা করে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। তাঁর শিষ্যদের কেউ কেউ জেলে ছিলেন, তারা নৌকা চালানো জানতেন, তাই তিনি তাদের যোগত্যার ওপর ভরসা করেছিলেন।—মথি ৪:১৮, ১৯.
১৫. যীশু যেভাবে তাঁর শিষ্যদের ওপর ভরসা করতেন সেইরকমই অন্যদের ওপর ভরসা করে কীভাবে আমরা যীশুর মতো হতে পারি?
১৫ যীশু যেমন তাঁর শিষ্যদের ওপর ভরসা করেছিলেন, তেমনই আমরাও কি তাঁর মতো করতে পারি? কেউ কেউ অন্যদের দায়িত্ব দেওয়াকে কঠিন বলে মনে করেন। তারা হয়তো নিজেরাই সবকিছু করতে চান। তারা হয়তো ভাবেন, ‘আমি যদি চাই যে সবকিছু ঠিক ঠিক হোক তাহলে আমাকেই তা করতে হবে!’ কিন্তু সব কাজ যদি আমরা নিজেরাই করতে চাই, তাহলে আমরা হয়তো খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারি আর আমরা হয়তো আমাদের পরিবারের সঙ্গেও সময় কাটাতে পারব না। এছাড়াও, আমরা যদি অন্যদের কাজ ও দায়িত্ব না দিই, তাহলে আমরা তাদের অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণ লাভ করায় বাধা দিচ্ছি যা পরে তাদের কাজে আসবে। তাই অন্যদের ওপর ভরসা করতে ও তাদের দায়িত্ব ভাগ করে দিতে শেখা আমাদের খুবই উচিত। অতএব, আসুন আমরা নিজেদের জিজ্ঞেস করি ও সৎভাবে উত্তর দিই যে ‘এই ব্যাপারে কি আমার খ্রীষ্টের মন আছে? আমি কি অন্যদেরকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য তৈরি, আমি কি তাদের ওপর ভরসা করি যে তারা তাদের সাধ্যমতো সেগুলো করবে?’
তিনি তাঁর শিষ্যদের বিশ্বাস করতেন
১৬, ১৭. পৃথিবীতে যীশুর শেষ রাতে, যীশু তাঁর প্রেরিতদের কোন্ আশ্বাস দিয়েছিলেন, যদিও তিনি জানতেন যে তারা তাঁকে ছেড়ে চলে যাবেন?
১৬ যীশু তাঁর শিষ্যদের সঠিক দৃষ্টিতে দেখতেন তা আরেকটা উপায়ে আমরা দেখতে পাই। তিনি শুধু তাদের ওপর ভরসাই রাখেননি, তিনি তাদেরকে বলেছিলেন তাদের ওপর তাঁর বিশ্বাস আছে। তাঁর জীবনের শেষ রাতে তিনি তাঁর প্রেরিতদের আশ্বাস দিয়ে যে কথাগুলো বলেছিলেন তাতে পরিষ্কার দেখা গিয়েছিল যে তিনি তাঁর শিষ্যদেরকে বিশ্বাস করেন। দেখুন যে সেই রাতে কী ঘটেছিল।
১৭ এই সন্ধ্যায় যীশু খুবই ব্যস্ত ছিলেন। তিনি তাঁর শিষ্যদের পা ধুইয়ে দিয়ে তাদের নম্র হতে শিখিয়েছিলেন। এরপর তারা সান্ধ্য ভোজনে বসেছিলেন, যা তাঁর মৃত্যুর স্মরণে প্রত্যেক বছর পালন করা হবে। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর প্রেরিতেরা আবার তাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ এই নিয়ে তর্কবিতর্ক শুরু করে দেয়। আবারও ধৈর্য ধরে, তাদের ওপর রাগ না দেখিয়ে যীশু তাদেরকে বুঝিয়েছিলেন। এরপর তিনি তাদেরকে সামনে কী ঘটতে চলেছে সে বিষয়ে বলেছিলেন: “এই রাত্রিতে তোমরা সকলে আমাতে বিঘ্ন পাইবে; কেননা লেখা আছে, ‘আমি পালরক্ষককে আঘাত করিব, তাহাতে পালের মেষেরা ছিন্নভিন্ন হইয়া যাইবে।’” (মথি ২৬:৩১; সখরিয় ১৩:৭) তিনি জানতেন যে তাঁর ঘনিষ্ঠ সঙ্গীরা এই কঠিন মুহূর্তে তাঁকে ছেড়ে চলে যাবে। কিন্তু তিনি তাদের বকাঝকা করেননি। বরং তিনি তাদেরকে বলেছিলেন যে তারা তাঁকে ছেড়ে গেলেও তিনি তাদেরকে ছেড়ে যাবেন না। তাই তিনি বলেছিলেন: “কিন্তু উত্থিত হইলে পর আমি তোমাদের অগ্রে গালীলে যাইব।” (মথি ২৬:৩২) হ্যাঁ, তিনি তাদেরকে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে তারা তাঁকে ছেড়ে গেলেও তিনি তাদেরকে ছেড়ে যাবেন না। তাঁর কঠিন পরীক্ষা শেষ হলে, তিনি তাদের সঙ্গে আবারও দেখা করবেন।
১৮. গালীলে যীশু তাঁর শিষ্যদের কোন্ গুরু দায়িত্ব দিয়েছিলেন আর প্রেরিতেরা তা কীভাবে পালন করেছিলেন?
১৮ যীশু তাঁর কথা রেখেছিলেন। পুনরুত্থানের পর গালীলে যীশু তাঁর ১১ জন প্রেরিতকে দেখা দিয়েছিলেন, যাদের সঙ্গে তখন আরও অনেকে ছিলেন। (মথি ২৮:১৬, ১৭; ১ করিন্থীয় ১৫:৬) সেই সময়ও যীশু তাঁর শিষ্যদের এক গুরু দায়িত্ব দিয়েছিলেন: “অতএব তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর; পিতার ও পুত্ত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে তাহাদিগকে বাপ্তাইজ কর; আমি তোমাদিগকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিয়াছি সে সমস্ত পালন করিতে তাহাদিগকে শিক্ষা দেও।” (মথি ২৮:১৯, ২০) প্রেরিতের পুস্তক আমাদের স্পষ্ট প্রমাণ দেয় যে প্রেরিতেরা শেষ পর্যন্ত বিশ্বস্ত থেকে তাদের যে কাজ দেওয়া হয়েছিল সেই দায়িত্ব পালন করেছিলেন। প্রথম শতাব্দীতে তারা বিশ্বস্তভাবে রাজ্যের সুসমাচার প্রচার কাজ সম্পূর্ণ করেছিলেন।—প্রেরিত ২:৪১, ৪২; ৪:৩৩; ৫:২৭-৩২.
১৯. পুনরুত্থানের পর যীশুর কাজ আমাদেরকে খ্রীষ্টের মন সম্বন্ধে কী শেখায়?
১৯ এই বিবরণ আমাদের খ্রীষ্টের মন সম্বন্ধে কী শেখায়? যীশু তাঁর শিষ্যদের দোষগুলো জানতেন কিন্তু তবুও তিনি তাদেরকে “শেষ পর্য্যন্ত প্রেম করিলেন।” (যোহন ১৩:১) তাদের মধ্যে ভুলত্রুটি থাকলেও, তিনি তাদেরকে বিশ্বাস করেছিলেন। আর আমরা দেখেছি যে যীশু তাদেরকে বিশ্বাস করে ভুল কিছু করেননি। তিনি তাদেরকে বিশ্বাস করায়, তাদের ওপর আস্থা রাখায় শিষ্যরা তাদেরকে দেওয়া কাজ করে চলার শক্তি পেয়েছিলেন আর এইজন্যই তারা যীশুর দেওয়া আজ্ঞাকে পুরোপুরি পালন করতে পেরেছিলেন।
২০, ২১. আমাদের খ্রীষ্টান ভাইবোনদের বিষয়ে আমরা কীভাবে ভাল দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে পারি?
২০ আমাদের জীবনে যখন এইরকম কোন পরিস্থিতি আসে তখন আমরা কীভাবে খ্রীষ্টের মন দেখাতে পারি? ভাইবোনদের সম্বন্ধে ভেবে নেবেন না যে তাদের দিয়ে কিছুই হবে না। আপনি যদি তাদের বিষয়ে খারাপ ভাবেন, তাহলে আপনার কথা ও কাজে তা ফুটে উঠবে। (লূক ৬:৪৫) কিন্তু, বাইবেল আমাদের বলে যে প্রেম “সকলই বিশ্বাস করে।” (১ করিন্থীয় ১৩:৭) প্রেম সবসময় ভাল চিন্তা করে, খারাপ নয়। এটা একজনের মন ভেঙে দিতে নয় কিন্তু তাদের গড়ে তুলতে চেষ্টা করে। লোকেদেরকে ভয় না দেখিয়ে ভালবেসে উৎসাহ দিলে তারা আরও ভালভাবে কাজ করতে পারে। আমাদের তাদের ওপর আস্থা আছে তা দেখালে তারা উৎসাহ পায় এবং গড়ে ওঠে। (১ থিষলনীকীয় ৫:১১) যীশু খ্রীষ্টের মতো আমরাও যদি আমাদের ভাইদের বিষয়ে ভাল ধারণা রাখি, তাহলে আমরা তাদের সঙ্গে এমনভাবে ব্যবহার করব, যার ফলে তারা তাদের দায়িত্ব আরও সহজে ও ভালভাবে পালন করতে পারে।
২১ খ্রীষ্টের মন পেতে গেলে ও তা দেখাতে চাইলে আমাদের শুধু যীশুর মতো কিছু কাজ করাই যথেষ্ট নয়, আমাদের আরও বেশি কিছু করা দরকার। আগের প্রবন্ধ থেকে যেমন আমরা শিখেছি যে আমরা যদি সত্যি সত্যিই যীশুর মতো কাজ করতে চাই, তাহলে আমাদের অবশ্যই প্রথমে যীশুর মতো করে বিষয়গুলোকে দেখতে হবে। সুসমাচারের বইগুলো আমাদেরকে তাঁর ব্যক্তিত্বের আরও একটা দিক সম্বন্ধে জানায় আর তা হল যে তাঁর পিতার দেওয়া কাজকে তিনি কীভাবে দেখতেন। পরের প্রবন্ধে আমরা এটা দেখব।
[পাদটীকাগুলো]
a এই বইয়ে ওই মিথ্যে লেখক অনুমান করে বলেন যে তাঁর চেহারা কেমন ছিল অর্থাৎ যীশুর চুল, দাড়ি এবং চোখের রং কেমন ছিল। বাইবেল অনুবাদক ইডগার জে. গুডস্পিড বলেন যে এইরকম জালিয়াতি “এইজন্য করা হয়েছিল যাতে সেই সময়ের শিল্পীর নির্দেশিকায় যে বর্ণনা ছিল তাকে যেন সত্যি প্রমাণ করা যায়।”
b মনে হয় যে সেখানে বিভিন্ন বয়সের ছেলেমেয়েরা ছিল। এখানে যে গ্রিক শব্দকে ‘শিশু’ হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে তা যায়ীরের ১২ বছরের মেয়ের জন্যও ব্যবহার করা হয়েছিল। (মার্ক ৫:৩৯, ৪২; ১০:১৩) যাইহোক, এই একই ঘটনার কথা লিখতে গিয়ে লূক যে গ্রিক শব্দ ব্যবহার করেছেন তা শিশুদের বেলায়ও খাটে।—লূক ১:৪১; ২:১২; ১৮:১৫.
c ১৯৯৮ সালের ১লা এপ্রিল সংখ্যার প্রহরীদুর্গ-এ “আপনি কি তাদের মর্যাদাকে সম্মান করেন?” প্রবন্ধটা দেখুন।
আপনি কি বলতে পারেন?
• শিষ্যরা যখন শিশুদেরকে তাঁর কাছে আসতে নিষেধ করেছিলেন তখন যীশু কী বলেছিলেন?
• কীভাবে বোঝা যায় যে যীশু অন্যদের জন্য চিন্তা করতেন?
• অন্যদের ওপর ভরসা করার ব্যাপারে আমরা কীভাবে যীশুর মতো হতে পারি?
• যীশু তাঁর প্রেরিতদেরকে বিশ্বাস করতেন, আমরা কীভাবে সেইরকমই করতে পারি?
[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
ছোট ছেলেমেয়েরা যীশুর কাছে আসতে ভালবাসত
[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
যীশু অন্যদেরকে দয়া দেখিয়েছিলেন
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
যে প্রাচীনদের কাছে সহজেই যাওয়া যায়, তারা মণ্ডলীর জন্য আশীর্বাদ