৪ প্রার্থনায় আমরা কী বলব?
যিশু তাঁর শিষ্যদের প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন। আর লোকেরা এটাকে প্রভুর প্রার্থনাও বলে। অনেকে এই প্রার্থনা মুখস্থ করেছে। তারা দিনে বার বার এই একই প্রার্থনা করতে থাকে। কিন্তু, যিশু এমনটা একেবারে চান না, আমরা এটাকে মুখস্থ করি আর বার বার একই প্রার্থনা করি। আমরা কেন তা বলতে পারি?
যিশু তাঁর শিষ্যদের প্রার্থনা করা শেখানোর আগে বলেছিলেন, “প্রার্থনা করার সময় একই কথা বারবার বোলো না।” (মথি ৬:৭) এটা থেকে বোঝা যায় যে, যিশু একেবারে চাননি, লোকেরা তাঁর শেখানো প্রার্থনা মুখস্থ করে এবং বার বার একই কথা বলে। যিশু শুধুমাত্র এটা শেখাতে চেয়েছিলেন, এমন কোন কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে, যেগুলোর জন্য আমরা প্রার্থনা করতে পারি। এই প্রার্থনা বাইবেলের মথি ৬:৯-১৩ পদে লেখা রয়েছে। আসুন, এটা লক্ষ করি।
“হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতা, তোমার নাম পবিত্র হোক।”
যিশু তাঁর অনুসারীদের শিখিয়েছিলেন, তাদের শুধুমাত্র তাঁর পিতা যিহোবার কাছে প্রার্থনা করা উচিত। কিন্তু আপনি কি জানেন, কেন ঈশ্বরের নাম এতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং কেন তাঁর নাম পবিত্র করার প্রয়োজন রয়েছে?
প্রথম পুরুষ ও নারীর সৃষ্টির সময় থেকেই ঈশ্বরের শত্রু শয়তান তাঁর পবিত্র নামের উপর নিন্দা নিয়ে এসেছে। শয়তান চায়, আমরা যেন মনে করি যিহোবা স্বার্থপর, তিনি মিথ্যা কথা বলেন এবং আমাদের উপর শাসন করার তাঁর কোনো অধিকার নেই। (আদিপুস্তক ৩:১-৬) বেশিরভাগ লোক এমনটাই মনে করে। তারা মনে করে, ঈশ্বর নিষ্ঠুর এবং তিনি মানুষের জন্য কোনো চিন্তা করেন না। কেউ কেউ এমনটাও বলে, ঈশ্বর বলে কেউ নেই। আবার কেউ কেউ তো বাইবেল থেকে ঈশ্বরের নামই সরিয়ে ফেলেছে আর তারা বলে ঈশ্বরের নাম উচ্চারণও করতে নেই।
যদিও ঈশ্বরের নামের উপর নিন্দা নিয়ে আসা হয়েছিল, তবে বাইবেল বলে, ঈশ্বর তাঁর নাম পবিত্র করবেন। (যিহিষ্কেল ৩৯:৭) এ ছাড়া, তিনি আমাদের সমস্ত সমস্যা দূর করে দেবেন। কীভাবে তিনি এটা করবেন? এই প্রশ্নের উত্তর আমরা যিশুর প্রার্থনা থেকে পেতে পারি।
“তোমার রাজ্য আসুক।”
বর্তমানে বেশিরভাগ ধর্মীয় গুরু ঈশ্বরের রাজ্য কী, তা জানেন না। এই সম্বন্ধে তাদের ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। কিন্তু যিশুর শিষ্যেরা জানতেন যে, ঈশ্বরের রাজ্য হল এক সরকার। আগেকার দিনের ভাববাদীরা বলেছিলেন, মশীহ এই রাজ্যের রাজা হবেন, যাঁকে ঈশ্বর নিজে বাছাই করবেন। (যিশাইয় ৯:৬, ৭; দানিয়েল ২:৪৪) ঈশ্বরের রাজ্য শয়তানের সমস্ত মিথ্যা প্রকাশ করে দেবে আর ঈশ্বরের নামের উপর নিয়ে আসা কলঙ্ক দূর করে দেবে। এই রাজ্য শয়তানকেও সরিয়ে দেবে। ঈশ্বরের রাজ্য যখন আসবে, তখন মন্দতা থাকবে না, যুদ্ধ আর হবে না, কেউ অসুস্থ হবে না, খাবারের অভাব থাকবে না ও এমনকী কারো মৃত্যুও হবে না। (গীতসংহিতা ৪৬:৯; ৭২:১২-১৬; যিশাইয় ২৫:৮; ৩৩:২৪) আর ঈশ্বরের রাজ্য আসুক বলে প্রার্থনা করার অর্থই হল, এই সমস্ত প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ হোক বলে প্রার্থনা করা।
“তোমার ইচ্ছা যেমন স্বর্গে, তেমনই পৃথিবীতেও পূর্ণ হোক।”
যিশুর এই কথা থেকে বোঝা যায় যে, ঈশ্বরের ইচ্ছা যেমন স্বর্গে পূর্ণ হয়, তেমনই পৃথিবীতেও তাঁর ইচ্ছা অবশ্যই পূর্ণ হবে। কীভাবে আমরা তা বলতে পারি? যিশু শয়তান ও তার মন্দ দূতেদের স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে নিক্ষেপ করেছিলেন। তখন থেকে ঈশ্বরের ইচ্ছা স্বর্গে পূর্ণ হচ্ছে। আর তাই, আমরা নিশ্চিত হতে পারি, ঈশ্বরের ইচ্ছা পৃথিবীতেও পূর্ণ হবে। (প্রকাশিত বাক্য ১২:৯-১২) উপরে উল্লেখিত যিশুর প্রার্থনার দুটো বিনতির মতো এই বিনতি থেকেও আমরা শিখতে পারি যে, কোন বিষয়টা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ অর্থাৎ আমাদের ইচ্ছার চেয়ে ঈশ্বরের ইচ্ছা পূর্ণ হওয়া আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ঈশ্বরের ইচ্ছা পূর্ণ হলে আমাদের সবার মঙ্গল হবে। এই কারণেই যিশু তাঁর পিতাকে বলেছিলেন: “আমার ইচ্ছা নয়, বরং তোমার ইচ্ছাই পূর্ণ হোক।”—লূক ২২:৪২.
“আমাদের আজকের খাবার আজ আমাদের দাও।”
যিশুর এই কথা থেকে বোঝা যায় যে, আমরা নিজেদের জন্যও প্রার্থনা করতে পারি। প্রতিদিন আমাদের যা-কিছু প্রয়োজন, সেগুলোর জন্য প্রার্থনা করার মাধ্যমে আমরা দেখাই, শুধুমাত্র যিহোবা আমাদের তা জোগাতে পারেন। “তিনিই লোকদের জীবন ও শ্বাস এবং সমস্ত কিছু দেন।” (প্রেরিত ১৭:২৫) বাইবেল বলে, তিনি একজন বাবার মতো, যিনি তাঁর সন্তানদের ভালোবাসেন এবং খুশিমনে তাদের যা প্রয়োজন, তা জোগান। কিন্তু আমরা প্রার্থনার সময় যদি এমন কিছু চাই, যেগুলোর কারণে আমাদের ক্ষতি হতে পারে, তা হলে একজন ভালো বাবা অথবা মায়ের মতো তিনিও সেটা আমাদের দেবেন না।
“আমাদের পাপ ক্ষমা করো।”
পাপ কী এবং এর পরিণতি যে-কতটা খারাপ হতে পারে, তা অনেকেই বর্তমানে বোঝে না। বাইবেল বলে, আমরা পাপেই জন্মেছি। এই কারণেই আমরা বার বার কথায় ও কাজে অনেক ভুল করি। পাপের কারণেই আমরা বৃদ্ধ হই ও মারা যায়। কিন্তু, ঈশ্বর যদি আমাদের ক্ষমা করে দেন, তবেই আমরা ভবিষ্যতে অনন্ত জীবন লাভ করতে পারব। (রোমীয় ৩:২৩; ৫:১২; ৬:২৩) আর এই কারণেই ঈশ্বর সম্বন্ধে বাইবেল বলে: “হে প্রভু, তুমি মঙ্গলময় ও ক্ষমাবান্।”—গীতসংহিতা ৮৬:৫.
“শয়তানের হাত থেকে উদ্ধার করো।”
কিছু কিছু বাইবেলে এই কথাটা এভাবেও লেখা রয়েছে, “মন্দ হইতে রক্ষা কর।” কিন্তু বাইবেল যখন প্রথমে লেখা হয়েছিল, তখন এই শাস্ত্রপদে শয়তানের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। শয়তানের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমাদের ঈশ্বরের কাছ থেকে সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে। একমাত্র তিনিই আমাদের রক্ষা করতে পারেন। অনেকে মনে করে, শয়তান বলে কেউ নেই। কিন্তু, যিশু বলেছিলেন যে, শয়তান সত্যিই আছে আর এমনকী সে-ই “এই জগতের শাসক।” (যোহন ১২:৩১; ১৬:১১) শয়তান এই জগৎকে যিহোবার কাছ থেকে অনেক দূরে সরিয়ে ফেলেছে আর সে আপনাকেও তাঁর কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যেতে চায়। (১ পিতর ৫:৮) কিন্তু, যিহোবা শয়তানের চেয়ে অনেক গুণ শক্তিশালী আর তিনি সেই লোকদের রক্ষা করেন, যারা তাঁকে ভালোবাসে।
যিশুর প্রার্থনা থেকে আমরা শিখেছি যে, প্রার্থনায় আমরা কোন কোন বিষয় উল্লেখ করতে পারি। তবে, আমরা আরও কিছু বিষয়ের জন্য প্রার্থনা করতে পারি। ১ যোহন ৫:১৪ পদে ঈশ্বরের বিষয়ে এভাবে লেখা আছে: “ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে প্রার্থনায় আমরা যা-কিছুই চাই না কেন, তিনি আমাদের প্রার্থনা শোনেন।” কখনো এমনটা চিন্তা করবেন না, ‘এত ছোটো বিষয়ের জন্য আমি কী বলে প্রার্থনা করব?’ আপনি তাঁকে মনের সমস্ত কথা খুলে বলতে পারেন।—১ পিতর ৫:৭.
তাহলে কখন ও কোথায় প্রার্থনা করব?