বোঝার ক্ষমতা নিয়ে ও বিশ্বাস জন্মানোর মতো করে শিক্ষা দিন
“জ্ঞানবানের হৃদয় তার মুখকে বোঝার ক্ষমতা দেয়, আর তার ওষ্ঠে বিশ্বাস জন্মায়।”—হিতোপদেশ ১৬:২৩, NW.
১. ঈশ্বরের বাক্য শিক্ষা দেওয়ার মানে শুধু তথ্য দেওয়াই নয় কেন?
ঈশ্বরের বাক্যের শিক্ষক হওয়ায় আমাদের চেষ্টা হল ছাত্রছাত্রীদের শুধু মন নয় কিন্তু হৃদয়কেও আলোকিত করা। (ইফিষীয় ১:১৮) তাই শিক্ষা দেওয়ার মানে শুধু তথ্য দিয়ে চলার চেয়ে আরও বেশি কিছু বোঝায়। হিতোপদেশ ১৬:২৩ পদ বলে: “জ্ঞানবানের হৃদয় তার মুখকে বোঝার ক্ষমতা দেয়, আর তার ওষ্ঠে বিশ্বাস জন্মায়।”
২. (ক) বিশ্বাস জন্মানোর মানে কী? (খ) প্রত্যেক খ্রীষ্টান কীভাবে অন্যদের শিক্ষা দিয়ে বিশ্বাস জন্মাতে পারেন?
২ প্রেরিত পৌল নিশ্চয়ই তার শিক্ষা দেওয়ার কাজে এই নীতি মেনে চলেছিলেন। তিনি যখন করিন্থে ছিলেন, তখন “প্রতি বিশ্রামবারে তিনি সমাজ-গৃহে কথা প্রসঙ্গ করিতেন, এবং যিহূদী ও গ্রীকদিগকে বিশ্বাস করিতে প্রবৃত্তি দিতেন [বিশ্বাস জন্মাতেন]।” (প্রেরিত ১৮:৪) একজন পণ্ডিত ব্যক্তির মতে, যে গ্রিক শব্দটাকে “বিশ্বাস জন্মাতেন” বলে অনুবাদ করা হয়েছে তার মানে “যুক্তি বা নৈতিক ধারণা দিয়ে বুঝিয়ে অন্যের চিন্তাধারাকে বদলে দেওয়া।” পৌল এমনভাবে যুক্তি দেখিয়ে লোকেদের বুঝিয়েছিলেন যে তারা তাদের চিন্তাধারা বদলেছিলেন। অন্যের মধ্যে বিশ্বাস জন্মানোয় পৌল এতটাই নিপুণ ছিলেন যে তার শত্রুরাও তাকে ভয় করত। (প্রেরিত ১৯:২৪-২৭) কিন্তু তবুও, পৌল তার নিজের ক্ষমতায় শিক্ষা দেননি। তিনি করিন্থীয়দের বলেছিলেন: “আমার বাক্য ও আমার প্রচার জ্ঞানের প্ররোচক বাক্যযুক্ত ছিল না, বরং আত্মার ও পরাক্রমের প্রদর্শনযুক্ত ছিল, যেন তোমাদের বিশ্বাস মনুষ্যদের জ্ঞানযুক্ত না হইয়া ঈশ্বরের পরাক্রমযুক্ত হয়।” (১ করিন্থীয় ২:৪, ৫) যেহেতু সব খ্রীষ্টানই যিহোবা ঈশ্বরের আত্মার সাহায্য পান, তাই তারা সবাই এমন শিক্ষক হয়ে উঠতে পারেন যারা অন্যদের মধ্যে বিশ্বাস জন্মাতে পারেন। কিন্তু কীভাবে? আসুন আমরা শিক্ষা দেওয়ার কিছু কার্যকর কৌশলের দিকে নজর দিই।
ভাল করে শুনুন
৩. অন্যদের শিক্ষা দেওয়ার সময় কেন বোঝার ক্ষমতা প্রয়োজন আর কীভাবে আমরা আমাদের বাইবেল ছাত্রের হৃদয়ে পৌঁছাতে পারি?
৩ শিক্ষা দেওয়ার কৌশলের প্রথমটা হল শোনা, বলা নয়। হিতোপদেশ ১৬:২৩ পদে যেমন বলা আছে যে বিশ্বাস জন্মানোর জন্য আমাদের বোঝার ক্ষমতা থাকতে হবে। যীশু যে লোকেদের শিক্ষা দিয়েছিলেন তাদেরকে বোঝার ক্ষমতা তাঁর ছিল। যোহন ২:২৫ পদ বলে: “মনুষ্যের অন্তরে কি আছে, তাহা তিনি আপনি জানিতেন।” কিন্তু আমরা যাদের শিক্ষা দিই তাদের অন্তরে কী আছে তা আমরা কী করে জানতে পারি? তা জানার একটা উপায় হল মন দিয়ে তাদের কথা শোনা। যাকোব ১:১৯ পদ বলে: “প্রত্যেক জন শ্রবণে সত্বর, কথনে ধীর . . . হউক।” তবে এটা ঠিক যে সব লোকেরাই তাদের মনের কথা চট করে প্রকাশ করতে চান না। আমাদের বাইবেল ছাত্রদের মনে যখন বিশ্বাস জন্মাবে যে তাদের জন্য আমাদের সত্যিকারের আগ্রহ আছে, তখন তাদের মনের কথা বলা তাদের জন্য অনেক সহজ হয়ে যাবে। আমরা যদি ভালবাসা দেখিয়ে ও বুঝেশুনে প্রশ্ন করি, তাহলে আমরা তাদের হৃদয়ে পৌঁছাতে পারি এবং তাদের চিন্তাধারা ‘তুলিয়া আনিতে’ পারি।—হিতোপদেশ ২০:৫.
৪. কেন খ্রীষ্টান প্রাচীনদের অন্যদের কথা মন দিয়ে শোনা জরুরি?
৪ এটা খুবই জরুরী যে খ্রীষ্টান প্রাচীনেরা অন্যদের কথা ভাল করে শোনেন। কারণ একমাত্র তখনই তারা সত্যি করে জানতে পারবেন “কাহাকে কেমন উত্তর দিতে হয়।” (কলসীয় ৪:৬) হিতোপদেশ ১৮:১৩ পদ সতর্ক করে: “শুনিবার পূর্ব্বে যে উত্তর করে, তাহা তাহার পক্ষে অজ্ঞানতা ও অপমান।” একবার দুজন ভাই ভাল উদ্দেশ্য নিয়েই এক বোনকে জাগতিক হয়ে পড়ার বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছিলেন কারণ তিনি কয়েকটা সভাতে আসেননি। কিন্তু সেই বোন খুবই দুঃখ পেয়েছিলেন কারণ তারা তাকে একবারও জিজ্ঞাসা করেননি যে কেন তিনি সভাতে আসতে পারেননি। মাত্র কিছুদিন আগেই তার অপারেশন হয়েছিল। তাহলে এটা কতই না জরুরি যে কাউকে পরামর্শ দেওয়ার আগে আমরা তার কথা শুনি!
৫. ভাইদের মধ্যে ঝগড়া হলে প্রাচীনেরা কীভাবে তা সামলাতে পারেন?
৫ প্রাচীনদের জন্য শিক্ষা দেওয়ার মানে অন্যদের পরামর্শ দেওয়াও বোঝায়। এখানেও মন দিয়ে শোনা জরুরি। খ্রীষ্টান ভাইবোনদের মধ্যে যখন ঝগড়া হয় তখন শোনা বিশেষভাবে দরকার। শুধু সবকিছু শোনার পরই প্রাচীনেরা “যিনি বিনা মুখাপেক্ষায় প্রত্যেক ব্যক্তির ক্রিয়ানুযায়ী বিচার করেন” তাঁর মতো হতে পারেন। (১ পিতর ১:১৭) এইরকম পরিস্থিতিতে ভাইবোনেরা তাদের আবেগকে চেপে রাখতে পারেন না আর তাই প্রাচীনদের হিতোপদেশ ১৮:১৭ পদের পরামর্শ মনে রাখা উচিত যেখানে বলা আছে: “যে প্রথমে নিজ পক্ষ সমর্থন করে, তাহাকে ধার্ম্মিক বোধ হয়; কিন্তু তাহার প্রতিবাসী আসিয়া তাহার পরীক্ষা করে।” একজন দক্ষ শিক্ষক দুপক্ষের কথাই শুনবেন। প্রার্থনা করে তিনি এক শান্ত পরিবেশ তৈরি করতে সাহায্য করেন। (যাকোব ৩:১৮) যদি ভাইয়েরা উত্তেজিত হয়ে তর্কাতর্কি করতে শুরু করেন, তাহলে প্রাচীন হয়ত তাদের পরামর্শ দিতে পারেন যে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া না করে তারা যেন তাদের নিজের নিজের অভিযোগ তাকে বলেন। উপযুক্ত প্রশ্নগুলো জিজ্ঞাসা করে প্রাচীন হয়ত সেই ঝগড়ার কারণ খুঁজে পেতে পারেন। বেশিরভাগই দেখা যায় যে বিদ্বেষ আছে বলে নয় কিন্তু নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা না হওয়ার জন্য ভাইবোনদের মধ্যে সমস্যা হয়েছে। কিন্তু যদি তারা বাইবেলের নীতিকে অমান্য করেন, তবে একজন স্নেহময় শিক্ষক দুপক্ষের কথা শোনার পরই বোঝার ক্ষমতা দেখিয়ে তাদের শিক্ষা দেবেন।
সহজ করে বলার গুরুত্ব
৬. কীভাবে পৌল ও যীশু সহজভাবে শিক্ষা দেওয়ার উদাহরণ রেখেছেন?
৬ কোন বিষয়কে সহজ করে বলা শিক্ষা দেওয়ার আরেকটা দরকারী কৌশল। এটা ঠিক যে আমরা চাই যাতে আমাদের বাইবেল ছাত্ররা ‘সমস্ত পবিত্রগণের সহিত বুঝিতে সমর্থ হয় যে’ সত্যের “সেই প্রশস্ততা, দীর্ঘতা, উচ্চতা ও গভীরতা কি।” (ইফিষীয় ৩:১৮) বাইবেলে কিছু বিষয় আছে যা খুবই আগ্রহজনক কিন্তু সেগুলো বোঝা প্রায়ই কঠিন হয়। (রোমীয় ১১:৩৩) কিন্তু পৌল যখন গ্রিকদের কাছে প্রচার করেছিলেন তখন তিনি ‘খ্রীষ্টের হত’ হওয়ার সহজ বার্তার ওপর জোর দিয়েছিলেন। (১ করিন্থীয় ২:১, ২) একইভাবে, যীশুও অন্যের মন জয় করার মতো করে সরলভাবে প্রচার করেছিলেন। তিনি তাঁর পর্বতে দেওয়া উপদেশে সহজ ভাষায় কথা বলেছিলেন। তবুও, সেই কথায় আজ পর্যন্ত বলা সবচেয়ে গভীর সত্যগুলো পাওয়া যায়।—মথি ৫-৭ অধ্যায়।
৭. কীভাবে বাইবেল অধ্যয়ন করানোর সময় আমরা সবকিছু সহজ করে বুঝিয়ে দিতে পারি?
৭ এইরকমই বাইবেল অধ্যয়নের সময় আমরাও সবকিছু সহজ করে বুঝিয়ে দিতে পারি। কীভাবে? “ভিন্ন প্রকার” বিষয়গুলোতে বেশি মনোযোগ দিয়ে। (ফিলীপীয় ১:১০) কঠিন বিষয়গুলো আলোচনা করার সময় আমাদের উচিত সহজ ভাষায় সেগুলো বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা। আমরা যে বইটা নিয়ে অধ্যয়ন করছি তাতে দেওয়া প্রত্যেকটা পদ না পড়ে ও আলোচনা না করে, আমাদের উচিত প্রধান শাস্ত্রপদগুলো আলোচনা করা। আর এর জন্য আমাদের আগে থেকে ভালভাবে তৈরি হতে হবে। একসঙ্গে অনেক বিষয় বলে ছাত্রকে দ্বিধার মধ্যে ফেলে দেওয়া আমাদের উচিত হবে না আর কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে মাথা ঘামিয়ে আসল বিষয় থেকে সরে যাওয়াও ঠিক হবে না। ছাত্র যদি এমন কোন প্রশ্ন করে বসেন যা আলোচনার বিষয়বস্তুর বাইরে তবে আমরা কৌশলের সঙ্গে বলতে পারি যে অধ্যয়নের পরে আমরা এই বিষয়টা নিয়ে কথা বলব।
উপযুক্ত প্রশ্নগুলো
৮. কীভাবে যীশু উপযুক্ত প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছিলেন?
৮ উপযুক্ত প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা শিক্ষা দেওয়ার আরেকটা ভাল কৌশল। যীশু শিক্ষা দেওয়ার সময় অনেক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যীশু পিতরকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন: “শিমোন, তোমার কেমন বোধ হয়? পৃথিবীর রাজারা কাহাদের হইতে কর বা রাজস্ব গ্রহণ করিয়া থাকেন? কি আপন সন্তানদের হইতে, না অন্য লোক হইতে? পিতর কহিলেন, অন্য লোক হইতে। তখন যীশু তাঁহাকে কহিলেন, তবে সন্তানেরা স্বাধীন।” (মথি ১৭:২৪-২৬) মন্দিরে যে ঈশ্বরের উপাসনা করা হয় তাঁর একজাত পুত্র হওয়ায় যীশু মন্দিরে কর দিতে বাধ্য ছিলেন না। কিন্তু যীশু উপযুক্ত প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে এই সত্যকে জানিয়েছিলেন। এইভাবে পিতরকে তার জানা বিষয়গুলোর ওপর ভিত্তি করেই এক সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে যীশু সাহায্য করেছিলেন।
৯. বাইবেল অধ্যয়নের সময় আমরা কীভাবে প্রশ্ন ব্যবহার করতে পারি?
৯ বাইবেল অধ্যয়ন করার সময় আমরা উপযুক্ত প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে পারি। ছাত্র যদি ভুল উত্তর দেন, তবে তাকে শুধরে দেওয়ার ইচ্ছা হয়ত আমাদের মনে সঙ্গেই সঙ্গেই জাগতে পারে কিন্তু এইরকম করলে তিনি কি সেই উত্তর আদৌ মনে রাখবেন? তাই সবচেয়ে ভাল হয় তাকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে তার কাছ থেকেই সঠিক উত্তরটা পাওয়ার চেষ্টা করা। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তিনি কেন ঈশ্বরের নাম ব্যবহার করবেন এই বিষয়টা বুঝতে যদি তার মুশকিল হয়, তবে আমরা হয়ত তাকে জিজ্ঞাসা করতে পারি, ‘আপনার নাম কি আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ? . . . কেন গুরুত্বপূর্ণ? . . . কেউ যদি আপনার নাম ধরে ডাকতে না চান, তাহলে আপনার কেমন লাগবে? . . . তাহলে আমরা ঈশ্বরকে তাঁর নাম ধরে ডাকি এটা চাওয়া কি তাঁর জন্য ঠিক নয়?’
১০. যারা মানসিক আঘাত পেয়েছেন তাদেরকে সাহায্য করার জন্য প্রাচীনেরা কীভাবে প্রশ্ন ব্যবহার করতে পারেন?
১০ পালের দেখাশোনা করার সময়ও প্রাচীনেরা উপযুক্তভাবে প্রশ্ন ব্যবহার করতে পারেন। শয়তানের জগৎ মণ্ডলীর অনেক ভাইবোনদেরই মানসিক আঘাত দিয়েছে আর তাদের ওপর অত্যাচার করেছে, তাই তারা নিজেদেরকে অপরিচ্ছন্ন ভাবতে পারেন আর তারা হয়ত ভাবতে পারেন যে কেউ তাদের ভালবাসেন না। এইরকম একজন ব্যক্তিকে প্রাচীন হয়ত যুক্তি দেখাতে পারেন এই প্রশ্ন করে: ‘আপনি নিজেকে অপবিত্র মনে করছেন কিন্তু আপনি কি জানেন যিহোবা আপনার সম্বন্ধে কী মনে করেন? আমাদের প্রেমময় স্বর্গীয় পিতা আপনার জন্য তাঁর পুত্রকে মরতে দিয়েছেন যেন আপনি মুক্তি পান, তাহলে তার মানে কি এই নয় যে ঈশ্বর আপনাকে ভালবাসেন?’—যোহন ৩:১৬.
১১. উত্তর চাওয়া হয় না এমন প্রশ্ন বলতে কী বোঝায় এবং কীভাবে সেগুলো একটা বড় দলকে শিক্ষা দেওয়ার সময় ব্যবহার করা যেতে পারে?
১১ শিক্ষা দেওয়ার আরেকটা ভাল কৌশল হল এমন প্রশ্ন করা যার উত্তর চাওয়া হয় না। শ্রোতারা জোরে এইরকম প্রশ্নের উত্তর দেবেন তা আশা করা হয় না কিন্তু এগুলো থেকে তারা বিষয়বস্তু বোঝার জন্য তাদের নিজেদের যুক্তি ব্যবহার করতে পারেন। প্রাচীন কালের ভাববাদীরা প্রায়ই এইরকম প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতেন যাতে শ্রোতারা কোন একটা বিষয় নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে পারেন। (যিরমিয় ১৮:১৪, ১৫) যীশুও উপযুক্তভাবে এইরকম প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছিলেন। (মথি ১১:৭-১১) এইধরনের প্রশ্ন বিশেষ করে তখনই বেশি কার্যকর হয় যখন একটা বড় দলকে শিক্ষা দেওয়া হয়। যিহোবাকে সুখী করার জন্য তাদের অবশ্যই মন প্রাণ উজাড় করে দিতে হবে, শ্রোতাদের সরাসরি এই কথা না বলে এটা জিজ্ঞাসা করা হয়ত আরও কার্যকারী হবে: ‘আমরা যদি আমাদের পরিচর্যায় মন প্রাণ উজাড় করে না দিই, তবে যিহোবা কি সুখী হবেন?’
১২. কারও মনোভাব জানার জন্য যে প্রশ্নগুলো করা হয় তার গুরুত্ব কী?
১২ ছাত্রের মনোভাব জানার জন্য যে প্রশ্নগুলো করা হয় সেগুলো এই বিষয়টা জেনে নিতে সাহায্য করে যে তিনি যা শিখছেন তা আসলেই বিশ্বাস করেন কি না। (মথি ১৬:১৩-১৬) একজন ছাত্র হয়ত ব্যভিচারের বিষয়ে এই বলে ঠিক উত্তর দিতে পারেন যে ব্যভিচার করা অন্যায়। কিন্তু তারপরও তাকে এইরকম প্রশ্নগুলো জিজ্ঞাসা করুন না কেন, নৈতিক বিষয়ে ঈশ্বরের মানদণ্ড সম্বন্ধে আপনি কী মনে করেন? আপনার কি মনে হয় যে এটা আমাদের স্বাধীনতায় বাধা দেয়? দয়া করে আপনি কি বলবেন যে আপনি ঈশ্বরের মানদণ্ড মেনে চলেন বা চলেন না তা সত্যিই একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়?
হৃদয়ে পৌঁছানোর মতো উদাহরণ
১৩, ১৪. (ক) কোন কিছুর উদাহরণ দেওয়ার মানে কী? (খ) কেন উপযুক্ত উদাহরণ কার্যকর?
১৩ উপযুক্ত উদাহরণ দেওয়া হল আরেকটা কৌশল যেটা করে শ্রোতা ও বাইবেল ছাত্রদের হৃদয়ে পৌঁছানো যেতে পারে। যে গ্রিক শব্দকে “উদাহরণ” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে তার আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে “পাশে বা একসঙ্গে রাখা।” আপনি যখন কোন উদাহরণ দেন, তখন আপনি অন্য একটা বিষয়কে আসল বিষয়ের ‘পাশে রাখেন,’ এইরকম কিছু বলেন। যেমন, যীশু জিজ্ঞাসা করেছিলেন: “আমরা কিসের সহিত ঈশ্বরের রাজ্যের তুলনা করিব? কোন্ দৃষ্টান্ত দ্বারাই বা তাহা ব্যক্ত করিব?” উত্তরে যীশু লোকেদের পরিচিত সরিষা দানার কথা বলেছিলেন।—মার্ক ৪:৩০-৩২.
১৪ ঈশ্বরের ভাববাদীরা অনেক অনেক কার্যকর উদাহরণ ব্যবহার করেছিলেন। ঈশ্বর ইস্রায়েলীয়দের শাস্তি দেওয়ার জন্য অশূরীয়দের ব্যবহার করেছিলেন কিন্তু অশূরীয়রা যখন তাদের ইচ্ছামতো নিষ্ঠুর আচরণ করতে শুরু করেছিল, তখন যিশাইয় তাদের দুঃসাহসকে প্রকাশ করেছিলেন এই উদাহরণ দিয়ে: “কুড়ালি কি ছেদকের বিপরীতে দর্প করিবে? করপত্র কি করপত্রী হইতে আপনাকে শ্রেষ্ঠ মানিবে?” (যিশাইয় ১০:১৫) লোকেদের শিক্ষা দেওয়ার সময় যীশুও অনেক উদাহরণ ব্যবহার করেছিলেন। বলা আছে যে তিনি “দৃষ্টান্ত ব্যতিরেকে তাহাদিগকে কিছুই বলিতেন না।” (মার্ক ৪:৩৪) সঠিক উদাহরণ সত্যিই কার্যকর কারণ সেগুলো মনে ও হৃদয়ে গেঁথে যায়। এগুলো শ্রোতাকে তাদের পরিচিত কোন কিছুর সঙ্গে নতুন তথ্যকে তুলনা করে তা তাড়াতাড়ি বুঝে নিতে সাহায্য করে।
১৫, ১৬. কীভাবে উদাহরণ সবচেয়ে বেশি কার্যকর হতে পারে? উদাহরণ দিন।
১৫ কীভাবে আমরা এমন উদাহরণগুলো ব্যবহার করতে পারি যা সত্যিই হৃদয়ে পৌঁছায়? প্রথমত, যে উদাহরণ ব্যবহার করা হবে তার সঙ্গে আসল বিষয়ের মিল থাকা চাই। যদি ঠিক মতো তুলনা করা না হয়, তবে উদাহরণ শ্রোতাদের জ্ঞান দেওয়ার চেয়ে বরং তাদের মনোযোগ নষ্ট করে দেবে। একবার একজন বক্তা ভাল উদ্দেশ্য নিয়েই যীশু খ্রীষ্টের প্রতি অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশদের বশ্যতাকে বোঝানোর জন্য তাদেরকে এক প্রভুভক্ত পোষা কুকুরের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। কিন্তু এইরকম মর্যাদাহানিকর তুলনা কি সত্যিই উপযুক্ত? বাইবেল এই একই বিষয় আরও আগ্রহজনক এবং মর্যাদার সঙ্গে প্রকাশ করে। বাইবেলে যীশুর ১,৪৪,০০০ অভিষিক্ত অনুগামীদেরকে “আপন বরের নিমিত্ত বিভূষিতা কন্যার” সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।—প্রকাশিত বাক্য ২১:২.
১৬ উদাহরণগুলো সবচেয়ে বেশি কার্যকর তখনই হয়ে ওঠে যখন সেগুলো মানুষের জীবনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হয়। নাথনের দেওয়া মৃত মেষের উদাহরণ রাজা দায়ূদের হৃদয়কে স্পর্শ করেছিল কারণ তিনি মেষ ভালবাসতেন এবং যুবক বয়সে মেষ চড়াতেন। (১ শমূয়েল ১৬:১১-১৩; ২ শমূয়েল ১২:১-৭) এই উদাহরণ যদি কোন ষাঁড়ের হতো, তাহলে হয়ত এটা এতটা কার্যকর হতো না। একইভাবে, আমরা যদি আমাদের শ্রোতাদের এমন কোন বিজ্ঞানের বিষয় বা ঐতিহাসিক ঘটনার উদাহরণ দিই যা তারা একেবারেই জানেন না, তাহলে তা হয়ত তাদের মনে খুব কমই দাগ কাটবে। যীশু রোজকার জীবন থেকে উদাহরণ দিতেন। তিনি খুবই সাধারণ বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতেন যেমন প্রদীপ, আকাশের পাখি, এবং মাঠের লিলি ফুল। (মথি ৫:১৫, ১৬; ৬:২৬, ২৮) যীশুর শ্রোতারা সহজেই এই জিনিসগুলো বুঝে নিতেন।
১৭. (ক) আমরা কোন্ বিষয়ে উদাহরণ দেব? (খ) কীভাবে আমরা বইয়ে দেওয়া উদাহরণগুলোকে আমাদের ছাত্রদের পরিস্থিতির সঙ্গে মিলিয়ে বোঝাতে পারি?
১৭ প্রচারে আমাদের এমন অনেক সুযোগ আসে যখন আমরা সহজ কিন্তু কার্যকর উদাহরণ ব্যবহার করতে পারি। চারিদিকে খেয়াল রাখুন। (প্রেরিত ১৭:২২, ২৩) আপনি হয়ত শ্রোতার ছেলেমেয়ে, ঘর, চাকরি বা শখের বিষয়ে কোন উদাহরণ দিতে পারেন। কিংবা আমরা হয়ত আমাদের বাইবেল ছাত্রের ক্ষমতাকে মাথায় রেখে বইয়ে দেওয়া উদাহরণগুলোই ভালভাবে বোঝাতে পারি। দৃষ্টান্ত হিসাবে, জ্ঞান যা অনন্ত জীবনে পরিচালিত করে বইয়ের ৮ অধ্যায়ের ১৪ অনুচ্ছেদে দেওয়া সুন্দর উদাহরণটাই নিন। এখানে একজন স্নেহময় বাবা কিংবা মার কথা বলা আছে যাকে একজন প্রতিবেশী মিথ্যা দোষ দিয়েছে। আমরা চিন্তা করতে পারি যে আমরা এই উদাহরণটা কীভাবে বাইবেল ছাত্রকে বোঝাতে পারি যিনি একজন বাবা বা মা।
দক্ষতার সঙ্গে বাইবেলের পদগুলো পড়া
১৮. কেন আমাদের ভাল করে পড়তে পারার জন্য চেষ্টা করা উচিত?
১৮ পৌল তীমথিয়কে পরামর্শ দিয়েছিলেন: “তুমি পাঠ করিতে এবং প্রবোধ ও শিক্ষা দিতে নিবিষ্ট থাক।” (১ তীমথিয় ৪:১৩) যেহেতু বাইবেল আমাদের শিক্ষার ভিত্তি, তাই এটা ভালভাবে পড়তে পারা উপকারী। লেবীয়দের ঈশ্বরের লোকেদের সামনে মোশির ব্যবস্থা পড়ে শোনানোর বিশেষ সুযোগ ছিল। পড়ার সময় তারা কি থেমে থেমে বা একঘেয়ে সুরে পড়েছিলেন? না, কারণ নহিমিয় ৮:৮ পদে বাইবেল বলে: “তাহারা স্পষ্ট উচ্চারণপূর্ব্বক সেই পুস্তক, ঈশ্বরের ব্যবস্থা, পাঠ করিল, এবং তাহার অর্থ করিয়া লোকদিগকে পাঠ বুঝাইয়া দিল।”
১৯. বাইবেল পড়ায় আমরা কীভাবে আমাদের দক্ষতা বাড়াতে পারি?
১৯ কিছু খ্রীষ্টান ভাই খুবই ভাল বক্তা কিন্তু পড়ার কথা এলে তারা আটকে যান। কীভাবে তারা তাদের দক্ষতা বাড়াতে পারেন? অভ্যাস করে। হ্যাঁ, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা ভাল করে পড়তে পারছেন ততক্ষণ পর্যন্ত বার বার জোরে জোরে পড়ে। আপনার মাতৃভাষায় যদি বাইবেলের অডিওক্যাসেট পাওয়া যায়, তবে তা শোনা ভাল হবে কারণ তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন কীভাবে বিশেষ বিশেষ জায়গায় জোর দিতে হয়, স্বরের ওঠানামা করতে হয় আর জানতে পারবেন যে কীভাবে নাম ও কঠিন শব্দগুলো উচ্চারণ করতে হয়। নতুন জগৎ অনুবাদ (ইংরাজি) বাইবেল যাদের ভাষায় আছে তারা এর উচ্চারণ সহায়িকা থেকে সাহায্য পেতে পারেন। বার বার অভ্যাস করলে মহের-শালল-হাশ-বসের মতো নামগুলোও সহজে পড়া যাবে।—যিশাইয় ৮:১.
২০. কীভাবে আমরা ‘আমাদের শিক্ষার বিষয়ে সাবধান’ হতে পারি?
২০ যিহোবার লোক হওয়ায়, শিক্ষক হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া আমাদের জন্য কত বড় সুযোগ! অতএব, আসুন আমরা সবাই এই দায়িত্বকে গুরুত্বের সঙ্গে নিই। আমরা যেন ‘আমাদের বিষয়ে ও আমাদের শিক্ষার বিষয়ে সাবধান হই।’ (১ তীমথিয় ৪:১৬) ছাত্রদের কথা মন দিয়ে শুনে, বিষয়বস্তু সহজ করে বলে, কার্যকারী প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে, উপযুক্ত উদাহরণ ব্যবহার করে আর দক্ষতার সঙ্গে বাইবেলের পদ পড়ে আমরা ভাল শিক্ষক হতে পারি। যিহোবা তাঁর সংগঠনের মাধ্যমে যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছেন তার থেকে আমরা সবাই যেন উপকৃত হই, কারণ এটা আমাদের “শিক্ষাগ্রাহীদের জিহ্বা” পেতে সাহায্য করতে পারে। (যিশাইয় ৫০:৪) আমাদের পরিচর্যার জন্য যোগানো সব হাতিয়ার যার মধ্যে রয়েছে ব্রোশার, অডিওক্যাসেট, এবং ভিডিওক্যাসেট এগুলো পুরোপুরি ব্যবহার করে আমরা বোঝার ক্ষমতা নিয়ে ও বিশ্বাস জন্মানোর মতো করে শিক্ষা দিতে পারি।
আপনি কি মনে করতে পারেন?
◻ কীভাবে মন দিয়ে শোনা আমাদের শিক্ষা দেওয়ার কাজে সাহায্য করতে পারে?
◻ কীভাবে আমরা পৌল ও যীশুর মতো সহজ করে শিক্ষা দিতে পারি?
◻ অন্যদের শিক্ষা দেওয়ার সময় আমরা কোন্ ধরনের প্রশ্ন ব্যবহার করতে পারি?
◻ কোন্ ধরনের উদাহরণ সবচেয়ে বেশি কার্যকর?
◻ আমরা কীভাবে সকলের সামনে পড়ার ক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়াতে পারি?
[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
অন্যকে বোঝার জন্য একজন ভাল শিক্ষক শোনেন
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
যীশু রোজকার জীবন থেকে উদাহরণ দিতেন