ঈশ্বর এবং কৈসর
“তবে যাহা যাহা কৈসরের, কৈসরকে দেও, আর যাহা যাহা ঈশ্বরের, ঈশ্বরকে দেও।”—লূক ২০:২৫.
১. (ক) যিহোবার উচ্চীকৃত স্থান কোন্টি? (খ) আমরা যিহোবাকে কী দিতে বাধ্য যা আমরা কখনও কৈসরকে দিতে পারি না?
যখন যীশু সেই নির্দেশটি দেন, তখন তাঁর মনে এই বিষয়ে কোন সন্দেহ ছিল না যে, তাঁর দাসেদের কাছে ঈশ্বরের চাহিদাগুলি সব কিছুর উর্দ্ধে স্থান নেবে, যা কৈসর অথবা রাষ্ট্র তাদের কাছ থেকে হয়ত চাইতে পারে। যিহোবার কাছে গীতরচকের প্রার্থনার সত্যতাকে যীশু অন্যদের চেয়ে আরও পূর্ণভাবে হৃদয়ঙ্গম করেছিলেন: “তোমার রাজ্য সর্ব্বযুগের রাজ্য, তোমার কর্ত্তৃত্ব [সার্বভৌমত্ব]a পুরুষে, পুরুষে চিরস্থায়ী।” (গীতসংহিতা ১৪৫:১৩) যখন দিয়াবল যীশুকে জগতের সমস্ত রাজ্যের কর্তৃত্ব দিতে চেয়েছিল, যীশু উত্তর দিয়েছিলেন: “লেখা আছে, ‘তোমার ঈশ্বর প্রভুকেই [“যিহোবাকেই,” NW] প্রণাম করিবে, কেবল তাঁহারই আরাধনা করিবে।’” (লূক ৪:৫-৮) উপাসনা কখনও “কৈসরকে” দেওয়া যেতে পারে না, তা সেই কৈসর রোমীয় সম্রাট, অন্য কোন মনুষ্য শাসক অথবা স্বয়ং রাষ্ট্র যাই হোক না কেন।
২. (ক) এই জগতের ক্ষেত্রে শয়তানের আপেক্ষিক স্থান কী? (খ) কার অনুমতিতে শয়তান তার স্থান অধিকার করে আছে?
২ জগতের রাজ্য সকল যে শয়তানের তা যীশু অস্বীকার করেননি। পরে, তিনি শয়তানকে “এ জগতের অধিপতি” বলে ডেকেছিলেন। (যোহন ১২:৩১; ১৬:১১) সা.শ. প্রথম শতাব্দীর শেষের দিকে, প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন: “আমরা জানি যে, আমরা ঈশ্বর হইতে; আর সমস্ত জগৎ সেই পাপাত্মার মধ্যে শুইয়া রহিয়াছে।” (১ যোহন ৫:১৯) এর অর্থ এই নয় যে যিহোবা সমস্ত পৃথিবীর উপর তাঁর সার্বভৌমত্বকে ছেড়ে দিয়েছেন। সেই শয়তানের কথা স্মরণ করুন, যে সমস্ত রাজনৈতিক রাজ্যগুলির শাসন কর্তৃত্ব অর্পণ করার সময়ে যীশুকে বলেছিল: “তোমাকেই আমি এই সমস্ত কর্ত্তৃত্ব . . . দিব; কেননা ইহা আমার কাছে সমর্পিত হইয়াছে।” (লূক ৪:৬) কেবলমাত্র ঈশ্বরের অনুমতিতেই শয়তান জগতের রাজ্যগুলির উপরে কর্তৃত্ব ব্যবহার করে থাকে।
৩. (ক) জাতীয় সরকারগুলি যিহোবার সামনে কোন্ স্থান অধিকার করে আছে? (খ) কিভাবে আমরা বলতে পারি যে এই জগতের সরকারগুলির প্রতি বশীভূত হওয়ার অর্থ নয় এই জগতের ঈশ্বর, শয়তানের কাছে নিজেদের বশীভূত করা?
৩ একইভাবে, সার্বভৌম শাসক হিসাবে কেবলমাত্র ঈশ্বর অনুমতি দিয়েছেন বলেই রাষ্ট্র তার কর্তৃত্ব ব্যবহার করে থাকে। (যোহন ১৯:১১) তাই, “যে সকল কর্ত্তৃপক্ষ আছেন,” বলা যেতে পারে “তাঁহারা [“আপেক্ষিক,” NW] ঈশ্বর নিযুক্ত।” যিহোবার সর্বোচ্চ সার্বভৌম কর্তৃত্বের কাছে আপেক্ষিক রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব তুলনামূলকভাবে একেবারেই তুচ্ছ। তবুও, তারা হল “ঈশ্বরেরই পরিচারক,” “ঈশ্বরের সেবাকারী” যার ফলে তারা প্রয়োজনীয় সুযোগসুবিধাগুলি প্রদান করে থাকে, আইন ও শৃঙ্খলাকে বজায় রাখে এবং দুষ্টদের শাস্তি দিয়ে থাকে। (রোমীয় ১৩:১, ৪, ৬) তাই খ্রীষ্টানদের বোঝা প্রয়োজন যে এমনকি যদিও শয়তান এই জগতের অথবা বিধিব্যবস্থার অদৃশ্য শাসক, তবুও যখন তারা রাষ্ট্রের কাছে তাদের আপেক্ষিক বশ্যতা দেখিয়ে থাকে তখন তারা নিজেদের তার কাছে বশীভূত করে না। তারা ঈশ্বরের প্রতি বাধ্যতা দেখাচ্ছে। এই ১৯৯৬ সালেও রাজনৈতিক রাষ্ট্র হল “ঈশ্বরের ব্যবস্থার” একটি অংশ, এক ক্ষণস্থায়ী ব্যবস্থা যা ঈশ্বর থাকতে অনুমতি দিয়েছেন আর তা যিহোবার পার্থিব দাসেদের দ্বারা শনাক্তিকৃত হওয়া উচিত।—রোমীয় ১৩:২.
যিহোবার প্রাচীন দাসেরা এবং রাষ্ট্র
৪. মিশর সরকারের বিশিষ্ট ব্যক্তি হতে কেন যিহোবা যোষেফকে অনুমতি দিয়েছিলেন?
৪ প্রাক্-খ্রীষ্টীয় সময়ে, যিহোবা তাঁর কিছু দাসেদের রাষ্ট্র সরকারগুলিতে উচ্চ স্থান অধিকার করতে অনুমতি দিয়েছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, সা.শ.পূ. অষ্টাদশ শতাব্দীতে যোষেফ মিশরের প্রধান মন্ত্রী হয়েছিলেন, শাসনরত ফরৌণের একেবারে পরের পদটি। (আদিপুস্তক ৪১:৩৯-৪৩) পরবর্তী ঘটনাগুলি সাক্ষ্য দিয়েছিল যে যিহোবা এটিকে কৌশলে পরিচালনা করেছিলেন যাতে করে তার বংশধর ‘অব্রাহামের বংশকে’ রক্ষা করার ক্ষেত্রে তাঁর উদ্দেশ্যের উল্লেখযোগ্য কাজের জন্য একটি মাধ্যম হিসাবে যোষেফ কাজ করতে পারেন। অবশ্য, এটি মনে রাখতে হবে যে যোষেফকে দাসত্ব করার জন্য মিশরে বিক্রি করা হয়েছিল আর তিনি এমন একটি সময়ে বাস করছিলেন যখন ঈশ্বরের দাসেদের কাছে না ছিল মোশির ব্যবস্থা অথবা “খ্রীষ্টের ব্যবস্থা।”—আদিপুস্তক ১৫:৫-৭; ৫০:১৯-২১; গালাতীয় ৬:২.
৫. কেন বাবিলনের যিহূদী বন্দীদের “শান্তির অনুধাবন” করতে আদেশ দেওয়া হয়েছিল?
৫ বেশ কিছু শতাব্দী পর বাবিলনে বন্দীত্বে থাকাকালীন যিহূদী বন্দীদের, সেখানকার শাসকদের বশীভূত হতে এবং এমনকি সেই নগরের জন্য প্রার্থনা করতে বলার জন্য বিশ্বস্ত ভাববাদী যিরমিয় যিহোবার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। তাদের উদ্দেশ্যে তার পত্রে তিনি লিখেছিলেন: “বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, সমস্ত নির্ব্বাসিত লোকের প্রতি . . . আমি তোমাদিগকে যে নগরে বন্দি করিয়া আনিয়াছি, তথাকার শান্তি চেষ্টা কর, ও সেখানকার নিমিত্ত সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা কর; কেননা সেখানকার শান্তিতে তোমাদের শান্তি হইবে।” (যিরমিয় ২৯:৪, ৭) যিহোবাকে উপাসনা করার স্বাধীনতা থাকার জন্য যিহোবার লোকেদের নিজেদের এবং যেখানে তারা বাস করে সেই জাতির জন্য সর্বদা ‘শান্তির চেষ্টা করার’ কারণ রয়েছে।—১ পিতর ৩:১১.
৬. যদিও উচ্চ সরকারি স্থান দেওয়া হয়েছিল, তবুও কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে দানিয়েল ও তার তিন বন্ধু যিহোবার আইনের পরিপ্রেক্ষিতে আপোশ করতে প্রত্যাখ্যান করেছিল?
৬ বাবিলনীয় বন্দীত্বের সময়ে, দানিয়েল এবং অপর তিনজন বিশ্বস্ত যিহূদী যাদের বাবিলনে দাসত্ব করার জন্য বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তারা রাষ্ট্রীয় নির্দেশনার প্রতি বশীভূত হয়েছিলেন এবং বাবিলনে উচ্চ-পদস্থ সরকারি কর্মচারী হয়েছিলেন। (দানিয়েল ১:৩-৭; ২:৪৮, ৪৯) যাইহোক, এমনকি তাদের প্রশিক্ষণ চলাকালীন, খাদ্য সম্বন্ধীয় বিষয়ে তারা দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, যা মোশির মাধ্যমে প্রদত্ত তাদের ঈশ্বর, যিহোবার আইনকে লঙ্ঘন করার জন্য পরিচালিত করতে পারত। এর জন্য তারা আশীর্বাদপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। (দানিয়েল ১:৮-১৭) যখন রাজা নবুখদ্নিৎসর একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিমা নির্মাণ করেছিলেন, তখন দানিয়েলের তিনজন ইব্রীয় বন্ধুকে তাদের রাষ্ট্রের সহপ্রশাসকদের সাথে অনুষ্ঠানটিতে যোগ দিতে স্পষ্টতঃ বাধ্য করা হয়েছিল। কিন্তু, তারা সেই রাষ্ট্রীয় মূর্তির কাছে “উপুড় হইয়া প্রণাম” করতে অস্বীকার করেছিলেন। আবার, যিহোবা তাদের বিশ্বস্ততাকে পুরস্কৃত করেছিলেন। (দানিয়েল ৩:১-৬, ১৩-২৮) একইভাবে আজকের দিনে, যিহোবার সাক্ষীরা যেখানে তারা বাস করে সেখানকার জাতীয় পতাকাকে সম্মান করে, কিন্তু তারা সেটিকে উপাসনা করার মত কোন কাজ করে না।—যাত্রাপুস্তক ২০:৪, ৫; ১ যোহন ৫:২১.
৭. (ক) বাবিলনের সরকারি কাঠামোতে উচ্চ স্থান অধিকার করা সত্ত্বেও কোন্ সর্বোৎকৃষ্ট পদক্ষেপ দানিয়েল নিয়েছিলেন? (খ) খ্রীষ্টীয় সময়ে কী পরিবর্তন আসে?
৭ আধুনিক বাবিলনের রাজবংশের পতনের পর, দানিয়েলকে বাবিলনে নতুন মাদীয়-পারসীক শাসন যা বাবিলনে এর বিকল্পে আসে তার অধীনে এক উচ্চ-পদস্থ সরকারি পদে অধিষ্ঠিত করা হয়েছিল। (দানিয়েল ৫:৩০, ৩১; ৬:১-৩) কিন্তু তার সেই উচ্চ পদকে তিনি তার বিশ্বস্ততাকে আপোশ করাতে পরিচালিত করতে সুযোগ দেননি। যখন একটি রাষ্ট্রীয় আইন যিহোবাকে নয় কিন্তু রাজা দারিয়াবসকে উপাসনা করতে দাবি করেছিল, তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এই কারণে তাকে সিংহদের কাছে ফেলে দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু যিহোবা তাকে উদ্ধার করেছিলেন। (দানিয়েল ৬:৪-২৪) অবশ্য, এটি ঘটেছিল প্রাক্-খ্রীষ্টীয় সময়ে। একবার যখন খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন ঈশ্বরের দাসেরা “খ্রীষ্টের ব্যবস্থার অধীনে” আসে। বহু জিনিস যা যিহূদী ব্যবস্থার অধীনে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, সেগুলিকে স্বতন্ত্ররূপে দেখা হয়েছিল, যিহোবা তাঁর লোকেদের সাথে তখন যে ভাবে ব্যবহার করছিলেন তার উপর ভিত্তি করে।—১ করিন্থীয় ৯:২১, NW; মথি ৫:৩১, ৩২; ১৯:৩-৯.
রাষ্ট্রের প্রতি যীশুর মনোভাব
৮. কোন্ ঘটনাটি দেখায় যে রাজনৈতিক ব্যাপারে জড়িত হওয়াকে এড়িয়ে চলতে যীশু সংকল্পবদ্ধ ছিলেন?
৮ যখন যীশু খ্রীষ্ট পৃথিবীতে ছিলেন, তিনি তাঁর অনুগামীদের জন্য উচ্চতর মান স্থাপন করেছিলেন আর তিনি রাজনীতি অথবা সামরিক বিষয়ের ক্ষেত্রে সমস্ত সম্পর্ককে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। কয়েকটি রুটি ও দুটি মাছ দিয়ে যখন যীশু কয়েক হাজার লোককে অলৌকিকভাবে খাইয়েছিলেন, তখন যিহূদীরা তাঁকে ধরে রাজনৈতিক রাজা করতে চেয়েছিল। কিন্তু যীশু দ্রুত পর্বতে প্রস্থান করে তাদের এড়িয়ে গিয়েছিলেন। (যোহন ৬:৫-১৫) এই ঘটনাটি সম্বন্ধে, নতুন নিয়মের উপর নতুন আন্তর্জাতিক মন্তব্য (ইংরাজি) বলে: “সেই সময়ে যিহূদীদের মধ্যে তীব্র জাতিগত মনোভাব ছিল আর নিঃসন্দেহে অনেকেই যারা অলৌকিক কাজটি দেখেছিল, মনে করেছিল যে এখানে ঐশিকভাবে সর্বজনগ্রাহ্য একজন নেতা ছিলেন, যিনি হলেন সেই ব্যক্তি যিনি তাদের রোমীয়দের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দেবেন। তাই তারা তাঁকে রাজা করার জন্য নিজেরা সংকল্পবদ্ধ হয়েছিল।” এটি আরও বলে যে রাজনৈতিক নেতৃত্বের এই প্রস্তাবকে যীশু “চূড়ান্তভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।” রোমান শাসনের বিরুদ্ধে যিহূদীদের কোন রকম বিদ্রোহকে যীশু সমর্থন করেননি। প্রকৃতপক্ষে, সেই বিদ্রোহের ফল কী হবে সে সম্বন্ধে তিনি ভাববাণী করেছিলেন যা তাঁর মৃত্যুর পরে ঘটবে—যিরূশালেমের অধিবাসীদের জন্য অবর্ণিত দুর্দশা এবং সেই নগরের ধ্বংস।—লূক ২১:২০-২৪.
৯. (ক) জগতের সাথে তাঁর রাজ্যের সম্পর্ক সম্বন্ধে যীশু কী বর্ণনা দিয়েছিলেন? (খ) জগতের সরকারগুলির সাথে ব্যবহার করা সম্বন্ধে যীশু কোন্ নির্দেশ দিয়েছিলেন?
৯ তাঁর মৃত্যুর অল্প কিছুদিন আগে, যীশু যিহূদার রোমীয় সম্রাটের বিশেষ প্রতিনিধিকে বলেছিলেন: “আমার রাজ্য এ জগতের নয়; যদি আমার রাজ্য এ জগতের হইত, তবে আমার অনুচরেরা প্রাণপণ করিত, যেন আমি যিহূদীদের হস্তে সমর্পিত না হই; কিন্তু আমার রাজ্য ত এখানকার নয়।” (যোহন ১৮:৩৬) যতক্ষণ পর্যন্ত না তাঁর রাজ্য রাজনৈতিক সরকারগুলিকে শেষ করছে ততক্ষণ খ্রীষ্টের শিষ্যেরা তাঁর উদাহরণ অনুসরণ করবে। তারা প্রতিষ্ঠিত কর্তৃপক্ষদের প্রতি বাধ্যতা দেখায়, কিন্তু তাদের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হস্তক্ষেপ করে না। (দানিয়েল ২:৪৪; মথি ৪:৮-১০) এই বলে যীশু তাঁর শিষ্যদের জন্য নির্দেশবলী প্রদান করেছিলেন: “তবে কৈসরের যাহা যাহা, কৈসরকে দেও, আর ঈশ্বরের যাহা যাহা, ঈশ্বরকে দেও।” (মথি ২২:২১) পূর্বেই, তাঁর পর্বতে দত্ত উপদেশে যীশু বলেছিলেন: “যে কেহ এক ক্রোশ যাইতে তোমাকে পীড়াপীড়ি করে, তাহার সঙ্গে দুই ক্রোশ যাও।” (মথি ৫:৪১) উপদেশের এই প্রসঙ্গটিতে, যীশু বৈধ দাবিগুলির প্রতি ইচ্ছাকৃত বশীভূত হওয়ার নীতিটিকে তুলে ধরেছিলেন, তা মনুষ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে অথবা সরকারি দাবিগুলির ক্ষেত্রে যাই হোক না কেন ঈশ্বরের আইনের সাথে সেগুলির মিল রয়েছে।—লূক ৬:২৭-৩১; যোহন ১৭:১৪, ১৫.
খ্রীষ্টানেরা ও কৈসর
১০. একজন ইতিহাসবেত্তার মতানুসারে, কৈসর সম্বন্ধে প্রাথমিক খ্রীষ্টানেরা কোন্ বিবেকবুদ্ধিপূর্ণ স্থান ধরে রেখেছিল?
১০ এই সংক্ষিপ্ত নির্দেশাবলী খ্রীষ্টান ও রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ককে পরিচালিত করেছিল। খ্রীষ্টতত্ত্বের উত্থান (ইংরাজি) নামক তার বইয়ে, ইতিহাসবেত্তা ই. ডবলিউ বার্ন্স লিখেছিলেন: “পরবর্তী শতাব্দীগুলিতে, যখনই রাষ্ট্রের প্রতি তার কর্তব্য সম্বন্ধে একজন খ্রীষ্টানের মধ্যে সন্দেহ আসত, সে খ্রীষ্টের কর্তৃত্বমূলক শিক্ষার প্রতি ফিরে তাকাত। সে কর প্রদান করত: হয়ত সেই সংগৃহীত অর্থ বহন করার পক্ষে কঠিন হত—সেই পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যের পতনের পূর্বে তা অসহনীয় হয়ে উঠেছিল—কিন্তু কষ্টকর হলেও খ্রীষ্টানকে তা সহ্য করতে হয়েছিল। একইভাবে তাকে রাষ্ট্রের অন্যান্য সমস্ত দায়িত্বাদি গ্রহণ করতে হত যতক্ষণ পর্যন্ত তাকে যে জিনিসগুলি ঈশ্বরের তা কৈসরকে দিতে বলা না হত।”
১১. জাগতিক শাসকদের সাথে ব্যবহার করা সম্বন্ধে পৌল খ্রীষ্টানদের কিভাবে উপদেশ দিয়েছিলেন?
১১ এই নীতিটির সাথে এই বিষয়টির মিল ছিল যেটি, খ্রীষ্টের মৃত্যুর ২০ বছরের অল্প কিছু সময় পর, প্রেরিত পৌল রোমের খ্রীষ্টানদের বলেছিলেন: “প্রত্যেক প্রাণী প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্ত্তৃপক্ষদের বশীভূত হউক।” (রোমীয় ১৩:১) প্রায় দশ বছর পর, রোমে পৌলের দ্বিতীয়বার কারারুদ্ধ হওয়ার ও তাকে হত্যা করার অল্প কিছুদিন আগে, পৌল তীতকে লিখেছিলেন: “তুমি তাহাদিগকে [ক্রীতের খ্রীষ্টানদের] স্মরণ করাইয়া দেও, যেন তাহারা আধিপত্যের ও কর্ত্তৃত্বের বশীভূত হয়, বাধ্য হয়, সর্ব্বপ্রকার সৎক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত হয়, কাহারও নিন্দা না করে, নির্ব্বিরোধ ও ক্ষান্তশীল হয়, সকল মনুষ্যের কাছে সম্পূর্ণ মৃদুতা দেখায়।”—তীত ৩:১, ২.
“প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্ত্তৃপক্ষদের” ক্রমশ বুঝতে পারা
১২. (ক) সরকারি কর্তৃপক্ষদের প্রতি সঠিক স্থান হিসাবে খ্রীষ্টীয় আপেক্ষিক বশ্যতা সম্বন্ধে চার্লস টেজ্ রাসেল কোন্ দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করতেন? (খ) সেনাবাহিনীতে কাজ করা সম্বন্ধে, ১ম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা কী স্বতন্ত্র দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেছিল?
১২ ১৮৮৬ সালের প্রারম্ভে, চার্লস টেজ্ রাসেল যুগের পরিকল্পনা (ইংরাজি) নামক বইয়ে লিখেছিলেন: “কোনভাবেই যীশু কিংবা প্রেরিতেরা পার্থিব শাসকদের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেননি। . . . তারা গির্জাকে আইনগুলির প্রতি বাধ্য হতে এবং যারা কর্তৃত্ব পদে রয়েছে তাদের সম্মান করতে, . . . তাদের ধার্য কর প্রদান করতে এবং যেখানে রাষ্ট্রের আইনগুলি ঈশ্বরের আইনের (প্রেরিত ৪:১৯; ৫:২৯) পরিপন্থী সেখানে সেগুলিকে বর্জন করে, প্রতিষ্ঠিত যে কোন আইনের প্রতিরোধ না করতে শিক্ষা দিয়েছিলেন। (রোমীয় ১৩:১-৭; মথি ২২:২১) যদিও তারা এই জগতের সরকারগুলি থেকে আলাদা ছিলেন এবং তাতে কোন অংশ নেননি, তবুও যীশু ও প্রেরিতেরা এবং প্রাথমিক গির্জা সকলেই আইন-মান্যকারী ছিলেন।” এই বইটি সঠিকভাবে প্রেরিত পৌলের দ্বারা উল্লেখিত মনুষ্য সরকারের কর্তৃপক্ষ হিসাবে “উচ্চতর শক্তিগুলি” অথবা “প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্ত্তৃপক্ষদের” শনাক্ত করেছিল। (রোমীয় ১৩:১; কিং জেমস্ ভারসন) ১৯০৪ সালে, নতুন সৃষ্টি (ইংরাজি) নামক বইটি বর্ণনা করেছিল যে সত্য খ্রীষ্টানদের “বর্তমান দিনে আইন-মান্যকারী লোকেদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত—আন্দোলনকারী, কলহপ্রবণ, ছিদ্রান্বেষী ব্যক্তি তারা হবে না।” কিছু ব্যক্তি বুঝেছিল এটির অর্থ সরকারি শক্তিগুলির প্রতি সম্পূর্ণ বশীভূত হওয়া, এমনকি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে সেনাবাহিনীতে অংশ গ্রহণ করা পর্যন্ত। কিন্তু অন্যেরা, এটিকে যীশুর এই মন্তব্যের “যে সকল লোক খড়গ ধারণ করে, তাহারা খড়গ দ্বারা বিনষ্ট হইবে,” বিপরীত বলে গণ্য করেছিল। (মথি ২৬:৫২) তাই স্পষ্টতই, প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষদের প্রতি খ্রীষ্টীয় বশ্যতা সম্বন্ধে পরিষ্কার বোধগম্যতার প্রয়োজন ছিল।
১৩. ১৯২৯ সালে উচ্চতর শক্তি সম্বন্ধে কোন্ পরিবর্তিত চিন্তাধারা প্রদান করা হয়েছিল এবং কিভাবে এটি উপকারী বলে প্রমাণিত হয়েছিল?
১৩ ১৯২৯ সালে, এক সময়ে যখন বিভিন্ন সরকারের আইনগুলি, ঈশ্বর যা আদেশ করেছিলেন অথবা ঈশ্বরের আইন যা নিষিদ্ধ করে এমন বিষয়গুলি দাবি করে, সেগুলিকে নিষিদ্ধ করতে আরম্ভ করে, তখন মনে করা হয়েছিল যে উচ্চতর শক্তি অবশ্যই যিহোবা ঈশ্বর এবং যীশু খ্রীষ্ট হবেন।b ২য় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে ও যুদ্ধ চলাকালীন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এবং ভীতির সমতা ও তার সামরিক প্রস্তুতিসহ ঠাণ্ডা লড়াইয়ের সময়ে যিহোবার দাসেরা এটি বুঝেছিল। পশ্চাতের দিকে তাকিয়ে এটি অবশ্যই বলতে হবে যে এই বিষয়গুলি যিহোবার ও তাঁর খ্রীষ্টের প্রাধান্যকে মহিমান্বিত করেছিল যা, সম্পূর্ণ সমস্যাবহূল সময়ে আপোশহীনভাবে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে ঈশ্বরের দাসেদের সাহায্য করেছিল।
আপেক্ষিক বশ্যতা
১৪. কিভাবে ১৯৬২ সালে রোমীয় ১৩:১, ২ এবং সম্পর্কযুক্ত পদগুলির উপর বৃদ্ধিরত দীপ্তি প্রকাশ পেয়েছিল?
১৪ ১৯৬১ সালে, পবিত্র শাস্ত্রের নতুন জগৎ অনুবাদ (ইংরাজি) শেষ হয়। এর প্রস্তুতির জন্য শাস্ত্রের পাঠ্য ভাষার উপর পুঙ্খানুপুঙ্খ অধ্যয়নের প্রয়োজন হয়েছিল। বাক্যগুলির নির্ভুল অনুবাদ কেবলমাত্র রোমীয় ১৩ অধ্যায়ে ব্যবহৃত নয়, কিন্তু এই পদগুলিতেও ব্যবহৃত হয়েছে, যেমন তীত ৩:১, ২ এবং ১ পিতর ২:১৩, ১৭ যা এটি স্পষ্ট করে যে “প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্ত্তৃপক্ষদের” অভিব্যক্তিটি সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ যিহোবা এবং তাঁর পুত্র যীশুর প্রতি নির্দেশ করে না, কিন্তু মনুষ্য সরকারের কর্তৃপক্ষদের প্রতি নির্দেশ করে। ১৯৬২ সালের শেষের দিকে, প্রহরীদুর্গ-এ যে প্রবন্ধগুলি প্রকাশ করা হয়েছিল তা রোমীয় ১৩ অধ্যায়ের বিষয় সঠিক ব্যাখ্যা দিয়েছিল আর সি. টি. রাসেলের সময়ে যে ধারণাটি পোষণ করা হয়েছিল তার থেকেও এটি আরও স্পষ্ট ধারণা প্রদান করেছিল। এই প্রবন্ধগুলি উল্লেখ করেছিল যে কর্তৃপক্ষদের প্রতি খ্রীষ্টানদের বশ্যতা সম্পূর্ণ হতে পারে না। এটি অবশ্যই আপেক্ষিক এবং এটি নির্ভরশীল এই বিষয়ের উপর যে এটি ঈশ্বরের দাসেদের ঈশ্বরের আইনের সাথে কোন সংঘর্ষ ঘটাবে না। প্রহরীদুর্গ-এ অতিরিক্ত প্রবন্ধগুলি এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর জোর দিয়েছিল।c
১৫, ১৬. (ক) কোন্ ভারসাম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি রোমীয় ১৩ অধ্যায়ের নতুন বোধগম্যতাকে বুঝতে সাহায্য করেছিল? (খ) কোন্ প্রশ্নগুলির উত্তর দেওয়া এখনও বাকি আছে?
১৫ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় শাস্ত্রীয় নীতিগুলির উপর ভিত্তি করে আপোশহীনভাবে রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষদের প্রতি ভারসাম্য সম্মান দেখানোর বিষয়ে রোমীয় ১৩ অধ্যায়ের এই বিশেষ ব্যাখ্যাটি সঠিকভাবে যিহোবার লোকেদের বুঝতে সাহায্য করেছিল। (গীতসংহিতা ৯৭:১১; যিরমিয় ৩:১৫) এটি তাদের ঈশ্বরের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এবং রাষ্ট্রের সাথে তাদের ব্যবহারের ক্ষেত্রে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে সাহায্য করেছিল। এটি তাদের নিশ্চিত করেছিল যে যখন তারা কৈসরের যা কৈসরকে দেয়, তখন তারা ঈশ্বরের যা তা ঈশ্বরকে দিতে উপেক্ষা করে না।
১৬ কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কৈসরের বিষয়গুলি কী? কোন্ বৈধ দাবিগুলি রাষ্ট্র একজন খ্রীষ্টানের উপর করতে পারে? এই প্রশ্নগুলি পরবর্তী প্রবন্ধে আলোচিত হবে।
[পাদটীকাগুলো]
a দেখুন গীতসংহিতা ১০৩:২২, NW, পাদটীকা।
b প্রহরীদুর্গ (ইংরাজি), জুন ১ এবং ১৫, ১৯২৯.
c দেখুন প্রহরীদুর্গ (ইংরাজি) নভেম্বর ১ এবং ১৫, ডিসেম্বর ১, ১৯৬২; নভেম্বর ১, ১৯৯০; ফেব্রুয়ারি ১, ১৯৯৩; জুলাই ১, ১৯৯৪.
আগ্রহের বিষয় যে, রোমীয় ১৩ অধ্যায়ের উপর তার মন্তব্যে, অধ্যাপক এফ. এফ. ব্রুস লেখেন: “বর্তমান প্রাসঙ্গিক বিষয় থেকে, ঠিক যেমন প্রেরিতদের লেখাগুলির সাধারণ প্রসঙ্গের মত এটি পরিষ্কার যে রাষ্ট্র যে উদ্দেশ্যে ঐশিকভাবে স্থাপিত হয়েছিল কেবলমাত্র তারই সীমার মধ্যে যথার্থভাবে বাধ্যতা দাবি করতে পারে—বিশেষ করে রাষ্ট্রকে শুধুমাত্র প্রতিরোধ করা যেতে পারে তাই নয়, কিন্তু তাকে অবশ্যই প্রতিরোধ করা হবে যদি সে সেই বাধ্যতা দাবি করে যা একমাত্র ঈশ্বরের প্রাপ্য।”
আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?
◻ কেন প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষদের প্রতি বশ্যতা স্বীকারের অর্থ শয়তানের প্রতি বশ্যতা স্বীকার নয়?
◻ তাঁর দিনের রাজনীতি সম্পর্কে যীশুর মনোভাব কেমন ছিল?
◻ কৈসরের সাথে তাদের ব্যবহারের ক্ষেত্রে যীশু তাঁর অনুগামীদের কী উপদেশ দিয়েছিলেন?
◻ জাতীয় শাসকদের সাথে ব্যবহার করার বিষয়ে পৌল কিভাবে উপদেশ দিয়েছিলেন?
◻ বছরের পর বছর ধরে কিভাবে প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষদের শনাক্তিকরণের বোধগম্যতাটি ক্রমশ বুঝতে পারা গিয়েছিল?
[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]
যখন শয়তান তাঁকে রাজনৈতিক ক্ষমতা দিতে চেয়েছিল, যীশু সেটিকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন
[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
রাসেল লিখেছিলেন যে “বর্তমান দিনে খ্রীষ্টানদের আইন-মান্যকারী লোকেদের মধ্যে পাওয়া উচিত”