“হে ক্ষুদ্র মেষপাল, ভয় করিও না”
“হে ক্ষুদ্র মেষপাল, ভয় করিও না, কেননা তোমাদিগকে সেই রাজ্য দিতে তোমাদের পিতার হিতসঙ্কল্প হইয়াছে।”—লূক ১২:৩২.
১. যীশুর বাক্য: “হে ক্ষুদ্র মেষপাল, ভয় করিও না” এর ভিত্তি কী ছিল?
“তাঁহার [ঈশ্বরের] রাজ্যের বিষয়ে সচেষ্ট হও।” (লূক ১২:৩১) যখন যীশু তাঁর শিষ্যদের এই কথাগুলি বলেছিলেন, তখন তিনি এক নীতির কথা বলেছিলেন যা তাঁর দিন থেকে আরম্ভ করে আজকের দিন অবধি খ্রীষ্টানদের চিন্তাধারাকে পরিচালনা করছে। ঈশ্বরের রাজ্য আমাদের জীবনে প্রথম স্থান হওয়া উচিত। (মথি ৬:৩৩) যীশু কিন্তু, লূকের বিবরণে এক বিশেষ খ্রীষ্টানদের দলকে মনোরম ও আস্থাপূর্ণ বাক্য বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “হে ক্ষুদ্র মেষপাল, ভয় করিও না, কেননা তোমাদিগকে সেই রাজ্য দিতে তোমাদের পিতার হিতসঙ্কল্প হইয়াছে।” (লূক ১২:৩২) উত্তম মেষপালক হিসাবে, যীশু জানতেন যে তাঁর ঘনিষ্ঠ শিষ্যদের জন্য সামনে এক কঠিন সময় রয়েছে। কিন্তু যদি তারা ঈশ্বরের রাজ্যের জন্য প্রচেষ্টা করে চলে তাহলে তাদের ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। তাই, তাঁর উপদেশ কোন কঠোর আদেশ ছিল না। বরং, এটি এক প্রেমপূর্ণ প্রতিজ্ঞা ছিল যা তাদের মধ্যে আস্থা ও সাহস যুগিয়েছিল।
২. ক্ষুদ্র মেষপাল কাদের দ্বারা গঠিত এবং কেন তারা বিশেষ করে সুযোগপ্রাপ্ত?
২ যীশু তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে কথা বলছিলেন এবং তিনি তাদের “ক্ষুদ্র মেষপাল” বলে ডেকেছিলেন। তিনি তাদের সঙ্গেও কথা বলছিলেন যাদের যিহোবা ‘রাজ্য দেবেন।’ যে বিরাট জনতা যীশুকে পরে গ্রহণ করবে তাদের তুলনায় এই দলটি সত্যই সংখ্যায় খুব ক্ষুদ্র ছিল। তাদের অমূল্য হিসাবেও বিবেচিত করা হয়েছিল, কারণ এক বিশেষ ভবিষ্যতের জন্য রাজকীয় পরিচর্যায় ব্যবহৃত হবে বলে তাদের মনোনয়ন করা হয়েছিল। তাদের পিতা মহান মেষপালক, যিহোবা, খ্রীষ্টের মশীহ রাজ্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত স্বর্গীয় উত্তরাধিকার পাওয়ার জন্য তাদের ক্ষুদ্র মেষপাল বলে ডাকেন।
ক্ষুদ্র মেষপাল
৩. যোহন ক্ষুদ্র মেষপালের কোন্ গৌরাবান্বিত দর্শন দেখেন?
৩ তাহলে, এইধরনের এক অপূর্ব আশাসহ ক্ষুদ্র মেষপাল কাদের নিয়ে গঠিত? যীশু খ্রীষ্টের অনুগামী যারা পবিত্র আত্মা দ্বারা অভিষিক্ত। (প্রেরিত ২:১-৪) স্বর্গীয় গায়ক হিসাবে তাদের হাতে বীণা দেখে প্রেরিত যোহন লেখেন: “আমি দৃষ্টি করিলাম, আর দেখ, সেই মেষশাবক সিয়োন পর্ব্বতের উপরে দাঁড়াইয়া আছেন, এবং তাঁহার সহিত এক লক্ষ চোয়াল্লিশ সহস্র লোক, তাহাদের ললাটে তাঁহার নাম ও তাঁহার পিতার নাম লিখিত। ইহারা রমণীদের সংসর্গে কলুষিত হয় নাই, কারণ ইহারা অমৈথুন। যে কোন স্থানে মেষশাবক গমন করেন, সেই স্থানে ইহারা তাঁহার অনুগামী হয়। ইহারা ঈশ্বরের ও মেষশাবকের নিমিত্ত অগ্রিমাংশ বলিয়া মনুষ্যদের মধ্য হইতে ক্রীত হইয়াছে। আর “তাহাদের মুখে কোন মিথ্যা কথা পাওয়া যায় নাই;” তাহারা নির্দ্দোষ।”—প্রকাশিত বাক্য ১৪:১, ৪, ৫.
৪. আজকে পৃথিবীতে ক্ষুদ্র মেষপালের স্থান কী?
৪ সা.শ. ৩৩ সালে পঞ্চাশত্তমী থেকে, এই অভিষিক্ত, আত্মায়-জাত ব্যক্তিরা পৃথিবীতে খ্রীষ্টের রাজদূত হিসাবে সেবা করে আসছে। (২ করিন্থীয় ৫:২০) আজকে, কেবলমাত্র এদের অবশিষ্টাংশরা রয়েছে, যারা একত্রে বিশ্বস্ত বুদ্ধিমান দাস শ্রেণী হিসাবে সেবা করছে। (মথি ২৪:৪৫; প্রকাশিত বাক্য ১২:১৭) বিশেষ করে ১৯৩৫ সাল থেকে, এদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে “অপর মেষ,” খ্রীষ্টানেরা যাদের পার্থিব আশা আছে, যাদের সংখ্যা এখন লক্ষ লক্ষ। সমগ্র পৃথিবীতে সুসমাচার প্রচার করার ক্ষেত্রে এরা সাহায্য করছে।—যোহন ১০:১৬.
৫. ক্ষুদ্র মেষপালের অবশিষ্টাংশদের মনোভাব কী এবং কেন তারা ভীত নয়?
৫ এই অবশিষ্ট ক্ষুদ্র মেষপাল যারা পৃথিবীতে আছে তাদের মনোভাব কী রকম? “অকম্পনীয় রাজ্য” পাবে এই বিষয় জেনে তারা ঈশ্বরীয় ভয় ও অনুকম্পার সাথে পবিত্র পরিচর্যা করে। (ইব্রীয় ১২:২৮) তারা নম্রভাবে উপলব্ধি করে যে তারা অতুলনীয় সুযোগ পেয়েছে যা তাদের অত্যন্ত খুশি করেছে। তারা “মহামূল্য মুক্তা” পেয়েছে যা যীশু যখন রাজ্যের বিষয়ে বলছিলেন তখন সেই বিষয়ে ইঙ্গিত করেছিলেন। (মথি ১৩:৪৬) যতই এই মহাক্লেশ আরও সন্নিকটে আসছে, ঈশ্বরের অভিষিক্ত ব্যক্তিরা নির্ভয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যদিও এই মানব জগতের উপর ‘যিহোবার সেই মহৎ ও প্রসিদ্ধ দিন’ যা আসতে চলেছে, তবুও তাদের ভবিষ্যৎকে অত্যন্ত ভয় করে না। (প্রেরিত ২:১৯-২১) কেন তারা ভয় করবে?
সংখ্যার হ্রাস
৬, ৭. (ক) ক্ষুদ্র মেষপাল যারা এখনও পৃথিবীতে আছে তাদের সংখ্যা কেন খুব অল্প? (খ) প্রত্যেক ব্যক্তি যে আশার অন্তর্ভুক্ত হোক না কেন কী রকম দৃষ্টিভঙ্গি তাদের রাখতে হবে?
৬ সম্প্রতি কয়েক বছরে এই ক্ষুদ্র মেষপাল যারা পৃথিবীতে আছে তাদের সংখ্যা কম হয়ে গেছে। ১৯৯৪ সালের স্মরণার্থক সভার রিপোর্ট থেকে আমরা তার প্রমাণ পাই। জগদ্ব্যাপী যিহোবার লোকেদের প্রায় ৭৫,০০০ মণ্ডলীতে, শুধু ৮,৬১৭ জন সেই প্রতীক চিহ্নে অংশগ্রহণ করে প্রকাশ্যে প্রদর্শন করে যে তারা অবশিষ্টাংশের সদস্য। (মথি ২৬:২৬-৩০) বিপরীতে, মোট উপস্থিতি ছিল ১,২২,৮৮,৯১৭ জন। অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা জানে যে তা আশা করা যেতে পারে। ক্ষুদ্র মেষপাল গঠন করতে যিহোবা এক সীমিত সংখ্যা, ১,৪৪,০০০ জনকে ঠিক করেছেন আর তিনি সা.শ. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিন থেকে এদের একত্রিত করছেন। যুক্তিযুক্তরূপে, এই আহ্বান বন্ধ হয়ে যাবে যখন এর সংখ্যা পূর্ণ হয়ে আসবে এবং প্রমাণ দেখায় যে এই বিশেষ আশীর্বাদপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সাধারণ অর্থে একত্রীকরণ ১৯৩৫ সালে শেষ হয়ে যায়। কিন্তু, ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল যে এই শেষকালে, অপর মেষ যারা “প্রত্যেক জাতির ও বংশের ও প্রজাবৃন্দের ও ভাষার বিস্তর লোক তাহা গণনা করিতে সমর্থ কেহ ছিল না” গড়ে উঠবে। ১৯৩৫ সাল থেকে যিহোবা সাধারণ অর্থে এই বিস্তর লোকেদের একত্রীকরণ করছেন যাদের আশা হল পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্ত জীবন পাওয়া।—প্রকাশিত বাক্য ৭:৯; ১৪:১৫, ১৬; গীতসংহিতা ৩৭:২৯.
৭ পৃথিবীতে এই ক্ষুদ্র মেষপাল যারা আছে তাদের মধ্যে অধিকাংশই ৭০, ৮০ এবং ৯০ বছরের। কিছু জন জীবনের একশ বছর পার করে গেছে। তাদের বয়স যাই হোক না কেন, তারা জানে যে স্বর্গীয় পুনরুত্থানের দ্বারা তারা অবশেষে যীশু খ্রীষ্টের সাথে সংযুক্ত হবে এবং তাঁর মহিমান্বিত রাজ্যে তাঁর সাথে রাজত্ব করবে। যারা বিস্তর লোকের অংশ তারা রাজা, খ্রীষ্টের পার্থিব প্রজা হবে। যিহোবা যারা প্রেম করে তাদের জন্য তিনি যা রেখেছেন আসুন তাতে আমরা প্রত্যেকেই আনন্দ করি। এটা আমাদের মনোনয়ন করার বিষয় নয় কোন্ আশা আমাদের হওয়া উচিত। সেটি যিহোবার নির্ধারণ করার বিষয়। উভয় দলই তাদের আনন্দপূর্ণ ভবিষ্যতের জন্য খুশি হতে পারে, তা স্বর্গীয় রাজ্যে অথবা সেই রাজ্যের অধীনে পরমদেশ পৃথিবীতে, যেখানেই হোক না কেন।—যোহন ৬:৪৪, ৬৫; ইফিষীয় ১:১৭, ১৮.
৮. কতদূর ১,৪৪,০০০ জনের মুদ্রাঙ্কিকরণ পৌঁছেছে এবং কখন তা শেষ হবে?
৮ এই ১,৪৪,০০০ নির্দিষ্ট সংখ্যার ক্ষুদ্র মেষপাল হল ‘ঈশ্বরের ইস্রায়েল’ যা সাধারণ ইস্রায়েলের পরিবর্তে এসেছে। (গালাতীয় ৬:১৬) তাই, অবশিষ্টাংশ সেই আত্মিক জাতির শেষভাগ যা পৃথিবীতে আছে তা গঠন করে। যিহোবার সর্বশেষ অনুমোদনের জন্য এই অবশিষ্টাংশদের মুদ্রাঙ্কিত করা হচ্ছে। একটি দর্শনে প্রেরিত যোহন এটি ঘটতে দেখে তিনি বর্ণনা করেছিলেন: “পরে দেখিলাম, আর এক দূত সূর্য্যের উদয় স্থান হইতে উঠিয়া আসিতেছেন, তাঁহার কাছে জীবন্ত ঈশ্বরের মুদ্রা আছে; তিনি উচ্চৈঃস্বরে ডাকিয়া, যে চারি দূতকে পৃথিবীর ও সমুদ্রের হানি করিবার ক্ষমতা প্রদত্ত হইয়াছিল, তাঁহাদিগকে কহিলেন। আমরা যে পর্য্যন্ত আমাদের ঈশ্বরের দাসগণকে ললাটে মুদ্রাঙ্কিত না করি, সে পর্য্যন্ত তোমরা পৃথিবীর কিম্বা সমুদ্রের কিম্বা বৃক্ষসমূহের হানি করিও না। পরে আমি ঐ মুদ্রাঙ্কিত লোকদের সংখ্যা শুনিলাম; [আত্মিক] ইস্রায়েল-সন্তানদের সমস্ত বংশের এক লক্ষ চুয়াল্লিশ সহস্র লোক মুদ্রাঙ্কিত।” (প্রকাশিত বাক্য ৭:২-৪) যেহেতু এই আত্মিক ইস্রায়েলকে মুদ্রাঙ্কিত করার কাজ পরিষ্কাররূপে শেষের দিকে এসে গেছে, উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনা সম্প্রতি ঘটতে চলেছে। একটি বিষয় হল, “মহাক্লেশ,” যখন ধ্বংসের চারটি বাতাস পৃথিবীর উপর খুলে দেবে, তা নিশ্চয়ই খুবই সন্নিকট।—প্রকাশিত বাক্য ৭:১৪.
৯. বিস্তর লোকেদের ক্রম বর্ধমান সংখ্যা ক্ষুদ্র মেষপাল কোন্ দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখে?
৯ যারা বিস্তর লোকের অংশ যাদের সংখ্যা লক্ষ লক্ষ তাদের ইতিমধ্যেই একত্রিত করা হয়েছে। এটি অবশিষ্টাংশদের হৃদয়কে কতই না আন্তরিকতায় ভরিয়ে দেয়! যদিও ক্ষুদ্র মেষপালের যারা পৃথিবীতে আছে তাদের সংখ্যা কমছে, তারা বিস্তর লোকের মধ্যে যোগ্য ব্যক্তিদের, ঈশ্বরের প্রসারিত পার্থিব সংগঠনের সঙ্গে জড়িত দায়িত্বগুলি নেওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দিয়েছে ও প্রস্তুত করেছে। (যিশাইয় ৬১:৫) যেমন যীশু ইঙ্গিত করেছিলেন, মহাক্লেশ থেকে রক্ষাপ্রাপ্তেরা থাকবে।—মথি ২৪:২২.
“ভয় করিও না”
১০. (ক) ঈশ্বরের লোকেদের উপর কোন্ আক্রমণ আসতে চলেছে এবং তা কোন্ দিকে নিয়ে যাবে? (খ) আমাদের প্রত্যেককে কোন্ প্রশ্ন করা হচ্ছে?
১০ শয়তান ও তার মন্দ দূতেদের পৃথিবীর সান্নিধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে। সে এবং তার দল যিহোবার লোকেদের উপর তাদের সর্বাত্মক আক্রমণ চালাবার জন্য কৌশলী হচ্ছে। এই আক্রমণ যা বাইবেলে বর্ণনা করা হয়েছে মাগোগ দেশীয় গোগের আক্রমণ হিসাবে। কাদের উপর বিশেষ করে দিয়াবল তার আক্রমণ কেন্দ্রীভূত করে? এটি কি ক্ষুদ্র মেষপাল, ঈশ্বরের আত্মিক ইস্রায়েলের শেষ সদস্যদের, যারা “পৃথিবীর মধ্যবর্তী স্থানে” শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছে তাদের উপর কী নয়? (যিহিষ্কেল ৩৮:১-১২, NW) হ্যাঁ, কিন্তু বিশ্বস্ত অভিষিক্ত শ্রেণীর অবশিষ্টাংশের সাথে তাদের বিশ্বস্ত সাথি, অপর মেষেরা একত্রে দেখবে কিভাবে শয়তানের আক্রমণ নাটকীয়ভাবে যিহোবা শেষ করবেন। তাঁর লোকেদের পক্ষে তিনি হস্তক্ষেপ করবেন এবং “সদাপ্রভুর ঐ মহৎ ও ভয়ঙ্কর দিনের” আগমন শুরু করবেন (যোয়েল ২:৩১) আজকে, এই বিশ্বস্ত এবং বুদ্ধিমান দাস এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, জীবন-রক্ষাকারী পরিচর্যা কাজ করছে, যেটি হল যিহোবার আগত হস্তক্ষেপ সম্বন্ধে সাবধানবাণী দেওয়া। (মালাখি ৪:৫; ১ তীমথিয় ৪:১৬) যিহোবার রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করে কি আপনি সেই পরিচর্যার কাজে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করছেন? রাজ্যের একজন নির্ভীক ঘোষণাকারী হিসাবে আপনি কি তা করতেই থাকবেন?
১১. সাহসী মনোভাব কেন এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ?
১১ বর্তমান জগতের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে, ক্ষুদ্র মেষপালদের প্রতি যীশুর কথাগুলি কতই না সময়োপযোগী: “হে ক্ষুদ্র মেষপাল, ভয় করিও না”! যিহোবার উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে যা এখন সম্পন্ন হচ্ছে তার জন্য এই ধরনের সাহসী মনোভাব অত্যন্ত প্রয়োজন। ব্যক্তিগতভাবে যারা ক্ষুদ্র মেষপালের অন্তর্ভুক্ত তাদের মধ্যে প্রত্যেকেই শেষ পর্যন্ত সহ্য করার প্রয়োজন সম্বন্ধে বুঝতে পারে। (লূক ২১:১৯) ক্ষুদ্র মেষপালের প্রভু ও মালিক, যীশু খ্রীষ্ট যেমন সহ্য করেছিলেন এবং তিনি তাঁর পার্থিব জীবনের শেষ পর্যন্ত বিশ্বস্ত প্রমাণিত হয়েছিলেন, তেমনি অবশিষ্টাংশের প্রত্যেক জনকেই অবশ্যই সহ্য করতে ও বিশ্বস্ততা প্রমাণ করতে হবে।—ইব্রীয় ১২:১, ২.
১২. যীশুর মত পৌল কিভাবে অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের ভয় না করতে প্রেরণাদান করেন?
১২ যেমন প্রেরিত পৌল দৃষ্টিভঙ্গি রেখেছিলেন ঠিক তেমনি সকল অভিষিক্ত ব্যক্তিদের রাখতে হবে। লক্ষ্য করুন একজন অভিষিক্ত জনসাধারণ্যে পুনরুত্থানের ঘোষণাকারী হিসাবে তার বাক্যগুলি, ভয় করো না যীশুর প্রেরণাদানের সাথে কত সামঞ্জস্যপূর্ণ। পৌল লিখেছিলেন: “যীশু খ্রীষ্টকে স্মরণ কর; আমার সুসমাচার অনুসারে তিনি মৃতগণের মধ্য হইতে উত্থাপিত, দায়ূদের বংশজাত; সেই সুসমাচার সম্বন্ধে আমি দুষ্কর্ম্মকারীর ন্যায় বন্ধনদশা পর্য্যন্ত ক্লেশভোগ করিতেছি; কিন্তু ঈশ্বরের বাক্য বদ্ধ হয় নাই। এই কারণ আমি মনোনীতদের নিমিত্ত সকলই সহ্য করি, যেন তাহারাও খ্রীষ্ট যীশুতে স্থিত পরিত্রাণ অনন্তকালীয় প্রতাপের সহিত প্রাপ্ত হয়। এই কথা বিশ্বসনীয়; কারণ আমরা যদি তাঁহার সহিত মরিয়া থাকি, তাঁহার সহিত জীবিতও হইব। যদি সহ্য করি, তবে তাঁহার সহিত রাজত্বও করিব; যদি তাঁহাকে অস্বীকার করি, তিনিও আমাদিগকে অস্বীকার করিবেন; আমরা যদি অবিশ্বস্ত হই, তিনি বিশ্বস্ত থাকেন; কারণ তিনি আপনাকে অস্বীকার করিতে পারেন না।”—২ তীমথিয় ২:৮-১৩.
১৩. ক্ষুদ্র মেষপালের সদস্যেরা কোন্ দৃঢ় নিশ্চয়তা ধরে রেখেছে এবং তা তাদের কী করতে প্ররোচিত করে?
১৩ প্রেরিত পৌলের মত, অভিষিক্ত ক্ষুদ্র মেষপালের অবশিষ্টাংশেরা ঈশ্বরের বাক্যে লিখিত শক্তিশালী বার্তা ঘোষণা করার সময়ে দুঃখভোগ করতে ইচ্ছুক। পরিত্রাণ সম্বন্ধে ঐশিক প্রতিজ্ঞাগুলি এবং যদি মৃত্যু পর্যন্ত তারা বিশ্বস্ত থাকে তবে তারা “জীবন-মুকুট” পাবে, সেই বিষয়গুলির উপর তাদের বিশ্বাস অত্যন্ত গভীর। (প্রকাশিত বাক্য ২:১০) তাৎক্ষণিক পুনরুত্থান ও পরিবর্তনের অভিজ্ঞতার দ্বারা, তারা খ্রীষ্টের সাথে রাজা হিসাবে রাজত্ব করার জন্য তাঁর সঙ্গে সংযুক্ত হবে। তাদের জগৎ বিজয়কারী বিশ্বস্ত রক্ষাকারী জীবনের জন্য কতই না এক কৃতকার্যতা!—১ যোহন ৫:৩, ৪.
এক অদ্বিতীয় আশা
১৪, ১৫. কোন্ দিক দিয়ে ক্ষুদ্র মেষপালের পুনরুত্থান অদ্বিতীয়?
১৪ যে পুনরুত্থানের আশা ক্ষুদ্র মেষপালের আছে তা অদ্বিতীয়। কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে? প্রথমত, এটি একটি অর্থে ‘ধার্ম্মিক অধার্ম্মিকদের’ সাধারণ পুনরুত্থানের পূর্বে হবে। (প্রেরিত ২৪:১৫) আসলে, অভিষিক্তদের পুনরুত্থান এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে পড়ে, যা ১ করিন্থীয় ১৫:২০, ২৩ পদে পাওয়া বাক্যগুলির দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রতিপাদন করে: “খ্রীষ্ট মৃতগণের মধ্য হইতে উত্থাপিত হইয়াছেন, তিনি নিদ্রাগতদের অগ্রিমাংশ। কিন্তু প্রত্যেক জন আপন আপন শ্রেণীতে; খ্রীষ্ট অগ্রিমাংশ, পরে খ্রীষ্টের লোক সকল তাঁহার আগমনকালে।” যীশু যেরকম সহ্যশক্তি এবং বিশ্বাস প্রদর্শন করেছিলেন, ক্ষুদ্র মেষপাল জানে পার্থিব জীবন শেষ করার পরে তাদের জন্য কী সঞ্চিত করা রয়েছে, বিশেষ করে তখন থেকে যখন প্রকৃত প্রভু ন্যায়বিচার করতে ১৯১৮ সালে তাঁর মন্দিরে আসেন।—মালাখি ৩:১.
১৫ এই পুনরুত্থানকে অদ্বিতীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখবার জন্য পৌল আরও আমাদের কারণ দেন। তিনি লিখেছিলেন যেমন ১ করিন্থীয় ১৫:৫১-৫৩ পদগুলিতে লিপিবদ্ধ আছে: “দেখ, আমি তোমাদিগকে এক নিগূঢ়তত্ত্ব বলি; আমরা সকলে নিদ্রাগত হইব না, কিন্তু সকলে রূপান্তরীকৃত হইব; এক মুহূর্ত্তের মধ্যে, চক্ষুর পলকে, শেষ তূরীধ্বনিতে হইব; . . . কারণ এই ক্ষয়ণীয়কে অক্ষয়তা পরিধান করিতে হইবে, এবং এই মর্ত্ত্যকে অমরতা পরিধান করিতে হইবে।” এই কথাগুলি ক্ষুদ্র মেষপালেরা যারা খ্রীষ্টের উপস্থিতির সময় মারা যায় তাদের জন্য প্রযোজ্য। দীর্ঘ সময়ের জন্য মৃত্যুতে না শুয়ে, “এক মুহূর্ত্তের মধ্যে, চক্ষুর পলকে” তারা অমরত্ব পাবে।
১৬, ১৭. তাদের পুনরুত্থানের আশা সম্বন্ধে কিভাবে অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা আজকে বিশেষ করে আশীর্বাদপ্রাপ্ত?
১৬ এই বোধগম্যতা অনুসারে আমরা প্রেরিত যোহনের লেখা বাক্য প্রকাশিত বাক্য ১৪:১২, ১৩ পদে বাক্যগুলির তাৎপর্য বুঝতে পারি। তিনি লিখেছিলেন: “‘এস্থলে সেই পবিত্রগণের ধৈর্য্য দেখা যায়, যাহারা ঈশ্বরের আজ্ঞা ও যীশুর বিশ্বাস পালন করে।’ পরে আমি স্বর্গ হইতে এই বাণী শুনিলাম, তুমি লিখ, ধন্য সেই মৃতেরা যাহারা এখন অবধি প্রভুতে মরে, হাঁ, আত্মা কহিতেছেন, তাহারা আপন আপন শ্রম হইতে বিশ্রাম পাইবে; কারণ তাহাদের কার্য্য সকল তাহাদের সঙ্গে সঙ্গে চলে।”
১৭ ক্ষুদ্র মেষপালের অবশিষ্টাংশদের জন্য কতই অদ্বিতীয় পুরস্ককারই না সঞ্চিত রয়েছে! মৃত্যুতে ঘুমানোর পরে, তাদের পুনরুত্থান শীঘ্রই আসবে। কতই না মহৎ পরিবর্তন যখন তারা আত্মিক স্থানে তাদের নির্ধারিত কাজ শুরু করবে! ক্ষুদ্র মেষপালদের এইভাবে মহিমান্বিত করা চলাকালীন আর বাইবেলের মুখ্য ভবিষ্যদ্বাণীগুলির পরিপূর্ণতা শেষের দিকে বলে, ক্ষুদ্র মেষপালের অবশিষ্টাংশকে সত্যই ‘ভয় করতে হবে না।’ আর তাদের নির্ভীকতা বিস্তর লোককে উৎসাহিত করে, যাদের সেই একই নির্ভীকতার মনোভাব গড়ে তুলতে হবে যেহেতু তারা পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় সমস্যার সময়ে তাদের ত্রাণের প্রত্যাশা করে রয়েছে।
১৮, ১৯. (ক) যে সময়ে আমরা বাস করছি তা কেন জরুরি? (খ) কেন অভিষিক্ত ও অপর মেষ উভয়েরই ভয় করা উচিত নয়?
১৮ ক্ষুদ্র মেষপালের কাজগুলির পুনরায় বিবেচনা তাদের ও বিস্তর লোকের অংশ তাদের সত্য ঈশ্বরকে অনবরত ভয় করতে সমর্থ করে। তাঁর দ্বারা ন্যায়বিচারের সময় এসে গেছে এবং যতক্ষণ অনুকূল সময় আছে তা মহামূল্যবান। অন্যদের কাজ করার জন্য সত্যই খুব অল্প সময় আছে। ঈশ্বরের উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ হবে না সেই বিষয় কিন্তু আমরা ভয় পাই না। সেটি অবশ্যই সফলতা লাভ করবে!
১৯ ইতিমধ্যেই, উচ্চ স্বর্গীয় স্বরকে এই বলতে শোনা গেছে: “জগতের রাজ্য আমাদের প্রভুর ও তাঁহার খ্রীষ্টের হইল, এবং তিনি যুগপর্য্যায়ের যুগে যুগে রাজত্ব করিবেন।” (প্রকাশিত বাক্য ১১:১৫) বাস্তবিকই, মহান মেষপালক, যিহোবা তাঁর সমস্ত মেষদের “নিজ নামের জন্য . . . ধর্ম্মপথে গমন” করতে পরিচালনা করছেন। (গীতসংহিতা ২৩:৩) ক্ষুদ্র মেষপালকে তাদের স্বর্গীয় পুরস্কারের দিকে লক্ষ্যভ্রষ্টহীনভাবে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আর অপর মেষদের সুরক্ষিতভাবে মহাক্লেশ থেকে পার করে নিয়ে যাওয়া হবে যাতে করে তারা খ্রীষ্ট যীশুর রাজত্বের অধীনে ঈশ্বরের মহিমান্বিত রাজ্যের পার্থিব অংশে অনন্ত জীবন উপভোগ করতে পারে। যদিও, যীশুর কথাগুলি ক্ষুদ্র মেষপালের প্রতি বলা হয়েছিল, অবশ্যই ঈশ্বরের সমগ্র সেবকদের তাঁর কথাগুলি শুনবার কারণ রয়েছে যা হল: “ভয় করিও না।”
আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারবেন?
◻ ক্ষুদ্র মেষপালের অবশিষ্টাংশের সংখ্যা কম হবে তা কেন আমরা আশা করতে পারি?
◻ অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশের আজকে পরিস্থিতি কী রকম?
◻ মাগোগ দেশের গোগের আক্রমণ সত্ত্বেও কেন খ্রীষ্টানেরা ভয় করে না?
◻ বিশেষ করে আজকের দিনে ১,৪৪,০০০ জনের পুনরুত্থানের আশা কেন অদ্বিতীয়?