মহাক্লেশ থেকে জীবন্ত রক্ষা পাওয়া
“ইহারা সেই লোক, যাহারা সেই মহাক্লেশের মধ্য হইতে আসিয়াছে, এবং মেষশাবকের রক্তে আপন আপন বস্ত্র ধৌত করিয়াছে, ও শুক্লবর্ণ করিয়াছে।”—প্রকাশিত বাক্য ৭:১৪.
১. পার্থিব পুনরুত্থানে কারা পুনরুত্থিতদের অভ্যর্থনা জানাবে?
যখন অগণিত লক্ষ লক্ষ ‘ধার্ম্মিক অধার্ম্মিক ব্যক্তিদের’ পুনরুত্থান হবে, তখন তাদের শূন্য পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হবে না। (প্রেরিত ২৪:১৫) তারা এক উন্নত সুন্দর পরিবেশে জাগ্রত হয়ে দেখবে যে বাসস্থান, তাদের জন্য পোশাক-পরিচ্ছদ এবং প্রচুর পরিমাণে খাদ্য প্রস্তুত করা হয়েছে। কারা এইসব প্রস্তুতি করবে? স্পষ্টতই, পার্থিব পুনরুত্থান শুরু হবার আগে নতুন জগতে লোকেরা বসবাস করবে। কারা? বাইবেল ইঙ্গিত করে যে তারা হল আগত মহাক্লেশের রক্ষাপ্রাপ্তেরা। সকল বাইবেল শিক্ষার মধ্যে এটি হল সবচেয়ে কৌতুহলজনক বিষয়—যে কিছু বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা মহাক্লেশ থেকে জীবন্ত রক্ষা পাবে এবং তারা কখনও মারা যাবে না। এই আশা পবিত্র শাস্ত্রে উত্তমরূপে প্রমাণিত আছে।
যেমন নোহের দিনে
২, ৩. (ক) নোহের দিনের সাথে আমাদের দিনের কোন্ সাদৃশ্যগুলি তুলে ধরা হয়েছে? (খ) জলপ্লাবন থেকে নোহ ও তার পরিবারের রক্ষা পাওয়া কী ইঙ্গিত করে?
২ মথি ২৪:৩৭-৩৯ পদে যীশু খ্রীষ্ট নোহের দিনের সাথে শেষকালের তুলনা করেছিলেন, যে সময় এখন আমরা বাস করছি। তিনি বলেছিলেন: “বাস্তবিক নোহের সময়ে যেরূপ হইয়াছিল, মনুষ্যপুত্রের আগমনও তদ্রূপ হইবে। কারণ জলপ্লাবনের সেই পূর্ব্ববর্ত্তী কালে, জাহাজে নোহের প্রবেশ দিন পর্য্যন্ত লোকে যেমন ভোজন ও পান করিত, বিবাহ করিত ও বিবাহিতা হইত, এবং বুঝিতে পারিল না যাবৎ না বন্যা আসিয়া সকলকে ভাসাইয়া লইয়া গেল; তদ্রূপ মনুষ্যপুরে আগমন হইবে।”
৩ যারা ঈশ্বরের সাবধানবাণীতে কর্ণপাত করেনি তাদের সকলকে জগদ্ব্যাপী মহাপ্লাবন ভাসিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু, তা নোহ ও তার পরিবারকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়নি। যেমন যীশু বলেছিলেন, তারা ‘জাহাজে প্রবেশ করে।’ তাদের ঈশ্বরীয় ভক্তির জন্য যিহোবা তাদের রক্ষার পথ প্রদান করেন। দ্বিতীয় পিতর ২:৫, ৯ নোহ ও তার পরিবারের রক্ষার বিষয় ইঙ্গিত করে যখন এটি বলে: “তিনি [ঈশ্বর]. . . যখন ভক্তিহীনদের জগতে জলপ্লাবন আনিলেন, তখন আর সাত জনের সহিত ধার্ম্মিকতার প্রচারক নোহকে রক্ষা করিলেন। ইহাতে জানি প্রভু ভক্তদিগকে পরীক্ষা হইতে উদ্ধার করিতে . . . জানেন।” সাধারণ লোকেরা ঈশ্বরের সাবধানবাণী শুনবে না তা দেখাতে যীশু নোহের দিনের সাথে শেষকালের তুলনা করেছিলেন। তৎসত্ত্বেও, তা করার দ্বারা তিনি আরও প্রমাণ করেছিলেন যে নোহ ও তার পরিবার যিহোবা ঈশ্বরের বাধ্য হয়েছিলেন, জাহাজে প্রবেশ করেছিলেন এবং মহাপ্লাবন থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। নোহ ও তার পরিবারের রক্ষা এই জগতের শেষে ঈশ্বরের বিশ্বস্ত দাসদের রক্ষার প্রতি দৃষ্টিপাত করায়।
প্রথম শতাব্দীর উদাহরণ
৪. যীশুর বাক্যের পরিপূর্ণতা অনুসারে, কোন্ ঘটনাগুলি সা.শ. ৭০ সালে যিরূশালেমকে ধ্বংস করতে পরিচালিত করে?
৪ এই জগতের শেষে যে ঘটনাগুলি ঘটবে, তার বিষয়েও যীশু বলেছিলেন। মথি ২৪:২১, ২২ আমরা পড়ি: “তৎকালে এরূপ মহাক্লেশ উপস্থিত হইবে, যেরূপ জগতের আরম্ভ অবধি এ পর্য্যন্ত কখনও হয় নাই, কখনও হইবেও না। আর সেই দিনের সংখ্যা যদি কমাইয়া দেওয়া না যাইত তবে কোন প্রাণীই রক্ষা পাইত না; কিন্তু মনোনীতদের জন্য সেই দিনের সংখ্যা কমাইয়া দেওয়া যাইবে।” প্রথম শতাব্দীতে এই কথাগুলি প্রাথমিকভাবে পরিপূর্ণতা লাভ করেছিল। সা.শ. ৬৬ সালে, যিরূশালেম নগর সেস্টিয়াস গ্যালাসের নেতৃত্বাধীনে রোমীয় সেনাবাহিনীর দ্বারা অবরোধপ্রাপ্ত হয়। রোমীয় সেনাবাহিনী মন্দিরের প্রাচীর পর্যন্ত ধ্বংস করতে যায় এবং বহু যিহূদীরা আত্মসমর্পণ করতে প্রস্তুত হয়। কিন্তু, অপ্রত্যাশিতভাবে এবং আপাতদৃষ্টিতে কোন কারণ না থাকা সত্ত্বেও সেস্টিয়াস গ্যালাস তার বাহিনীকে অপসারণ করায়। রোমীয়রা অপসারিত হয়েছে দেখে খ্রীষ্টানেরা যীশুর কথানুযায়ী কাজ করে, যা বহু বছর আগে বলা হয়েছিল: “যখন তোমরা যিরূশালেমকে সৈন্যসামন্ত দ্বারা বেষ্টিত দেখিবে, তখন জানিবে যে, তাহার ধ্বংস সন্নিকট। তখন যাহারা যিহূদিয়ায় থাকে, তাহারা পাহাড় অঞ্চলে পলায়ন করুক, এবং যাহারা নগরের মধ্যে থাকে, তাহারা বাহিরে যাউক; আর যাহারা পল্লীগ্রামে থাকে, তাহারা নগরে প্রবেশ না করুক।” (লূক ২১:২০, ২১) খ্রীষ্টধর্মাবলম্বী যিহূদীরা, মনোনীতরা, তৎক্ষণাৎ শেষ আসন্নপ্রাপ্ত যিরূশালেম নগরকে পরিত্যাগ করে এবং এর ফলে খুব শীঘ্রই পরবর্তীকালে যে সাংঘাতিক ধ্বংস এর উপর আসে তার থেকে তারা রক্ষা পায়। সা.শ ৭০ সালে, সেনাপতি টাইটাসের নেতৃত্বাধীনে রোমীয় বাহিনী প্রত্যাবর্তন করে। তারা যিরূশালেমের চারিদিকে শিবির স্থাপন করে, নগরকে অবরোধ এবং ধ্বংস করে।
৫. সা.শ. ৭০ সালে কোন্ অর্থে যিরূশালেমের প্রতি ক্লেশ কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল?
৫ যিহূদী ইতিহাসবেত্তা যোসিফাস বলেন যে ১১,০০,০০০ যিহূদী নিহত হয়, ৯৭,০০০ রক্ষা পায় ও তাদের বন্দী করা হয়। সেই ন-খ্রীষ্টীয় যিহূদী রক্ষাপ্রাপ্তেরা নিশ্চয়ই যীশুর ভাববাণীর ‘মনোনীতরা’ ছিল না। বিদ্রোহী যিহূদী জাতির সাথে কথা বলার সময়ে যীশু বলেছিলেন: “দেখ, তোমাদের গৃহ তোমাদের নিমিত্ত উৎসন্ন পড়িয়া রহিল। কেননা আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তোমরা এখন অবধি আমাকে আর দেখিতে পাইবে না, যে পর্য্যন্ত না বলিবে, “ধন্য তিনি, যিনি প্রভুর নামে আসিতেছেন!”” (মথি ২৩:৩৮, ৩৯) যিরূশালেমে একত্রিত সেই যিহূদীরা যে শেষ মুহূর্তে যীশুকে মশীহরূপে গ্রহণ করে খ্রীষ্টান হয়ে যিহোবার অনুমোদন পেয়েছিল তার কোন বিবরণ নেই। তবুও সা.শ. ৭০ সালে যে ক্লেশ যিরূশালেমের উপর এসেছিল তা কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। রোমীয় বাহিনীদের দ্বারা চুড়ান্ত অবরোধ দীর্ঘ সময়ের জন্য বহাল ছিল না। রোমীয় সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশে শুধুমাত্র দাস হিসাবে তাদের পাঠিয়ে তা কিছু যিহূদীদের রক্ষা পেতে সুযোগ দেয়।
রক্ষাপ্রাপ্তদের এক বিস্তর লোক
৬, ৭. (ক) কোন্ অতুলনীয় ক্লেশের অংশ হিসাবে, কোন্ মহা ধর্মীয় নগর ধ্বংসপ্রাপ্ত হতে যাবে? (খ) এই জগতের উপর আগত মহাক্লেশ সম্বন্ধে যোহন কী ভবিষ্যদ্বাণী করেন?
৬ সা.শ ৭০ সালে যিরূশালেমের ধ্বংস সেই ধর্মীয় নগরের পক্ষে এক “মহাক্লেশ” হলেও যীশুর বাক্যের বৃহত্তর পরিপূর্ণতা তখনও বাস্তবায়িত হয়নি। এক বৃহত্তর ধর্মীয় নগর, জগদ্ব্যাপী মিথ্যা ধর্মের সাম্রাজ্য, মহতী বাবিল, মারাত্মক মহাক্লেশ ভোগ করবে যার পরই আসবে অবশিষ্ট শয়তানের বিধি ব্যবস্থার উপর অতুলনীয় ক্লেশ। (মথি ২৪:২৯, ৩০; প্রকাশিত বাক্য ১৮:২১) যিরূশালেম ধ্বংস হওয়ার প্রায় ২৬ বছর পরে, প্রেরিত যোহন প্রকাশিত বাক্য ৭:৯-১৪ পদে এই জগদ্ব্যাপী মহাক্লেশের সম্বন্ধে লেখেন। তিনি দেখান যে এক বিরাট জনতা এতে রক্ষা পাবে।
৭ এই রক্ষাপ্রাপ্তদের “বিস্তর লোক” বলা হয়, যাদের শনাক্ত করা হয় কিছু নিষ্পত্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করার দ্বারা। প্রকাশিত বাক্য ৭:১৪ পদ অনুসারে স্বর্গের ২৪ জন প্রাচীনের মধ্যে একজন যোহনকে বলেন: “ইহারা সেই লোক, যাহারা সেই মহাক্লেশের মধ্য হইতে আসিয়াছে, এবং মেষশাবকের রক্তে আপন আপন বস্ত্র ধৌত করিয়াছে, ও শুক্লবর্ণ করিয়াছে।” হ্যাঁ, বিস্তর লোক যিহোবাকে তাদের পরিত্রাণের উৎস বলে ঘোষণা করে। তারা যীশুর পাতিত রক্তে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের স্রষ্টা ও তাঁর নিযুক্ত রাজা, যীশু খ্রীষ্টের সামনে তাদের ধার্মিক মান আছে।
৮. “বিস্তর লোক” এবং যীশুর অভিষিক্ত ভাইদের অবশিষ্টাংশদের মধ্যে কী উত্তম সম্পর্ক রয়েছে?
৮ বর্তমানে, বিস্তর লোকের প্রায় ৫০ লক্ষ সদস্য স্বর্গীয় রাজা যীশু খ্রীষ্টের সক্রিয় নেতৃত্বের অধীনে বাস করছে। তারা খ্রীষ্টের অধীনতা স্বীকার করে এবং এখনও পৃথিবীতে থেকে তাঁর অভিষিক্ত ভাইদের সাথে ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে থাকে। তারা এই অভিষিক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে যা ব্যবহার করে তার সম্বন্ধে যীশু বলেন: “আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, আমার এই ভ্রাতৃগণের—এই ক্ষুদ্রতমদিগের—মধ্যে এক জনের প্রতি যখন ইহা করিয়াছিলে, তখন আমারই প্রতি করিয়াছিলে।” (মথি ২৫:৪০) যেহেতু তারা খ্রীষ্টের অভিষিক্ত ভাইদের প্রতি নিঃস্বার্থভাবে সাহায্য করে, তাই সেই বিস্তর লোকরা স্বয়ং যীশুর প্রতি উত্তম কাজ করেছে বলে বিচারিত হয়। তা তাদের যীশু খ্রীষ্ট ও যিহোবা ঈশ্বরের সাথে সুরক্ষিত সম্পর্ক বজায় রাখতে সাহায্য করে। তারা অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশদের সাথে যোগ দিয়ে ঈশ্বরের সাক্ষী হতে এবং তাঁর নাম বহন করতে সুযোগপ্রাপ্ত হয়েছে।—যিশাইয় ৪৩:১০, ১১; যোয়েল ২:৩১, ৩২.
জাগ্রত থাকা
৯, ১০. (ক) মনুষ্য পুত্রের সামনে আমাদের ধার্মিক মান বজায় রাখতে আমাদের অবশ্যই কী করতে হবে? (খ) ‘জেগে থাকতে’ হলে আমাদের কিভাবে চলতে হবে?
৯ বিরত না হয়ে মনুষ্য পুত্রের সামনে বিস্তর লোকেদের তাদের ধার্মিকতার মান ক্রমাগত বজায় রাখতে হবে, যার সাথে জড়িত আছে শেষ পর্যন্ত সজাগভাবে জীবনযাপন করা। যীশু তা স্পষ্ট রূপে প্রকাশ করেন যখন তিনি বলেন: “আপনাদের বিষয়ে সাবধান থাকিও, পাছে ভোগপীড়ায় ও মত্ততায় এবং জীবিকার চিন্তায় তোমাদের হৃদয় ভারগ্রস্ত হয়, আর সেই দিন হঠাৎ ফাঁদের ন্যায় তোমাদের উপরে আসিয়া পড়ে; কেননা সেই দিন সমস্ত ভূতল-নিবাসী সকলের উপরে উপস্থিত হইবে। কিন্তু তোমরা সর্ব্বসময়ে জাগিয়া থাকিও এবং প্রার্থনা করিও, যেন এই যে সকল ঘটনা হইবে, তাহা এড়াইতে, এবং মনুষ্যপুত্রের সম্মুখে দাঁড়াইতে, শক্তিমান্ হও।”—লূক ২১:৩৪-৩৬.
১০ মনুষ্য পুত্রের সামনে দাঁড়াতে সফলকামী হতে, আমাদের তাঁর অনুমোদন থাকা চাই, আর যদি আমরা এই জগতের চিন্তাধারার দ্বারা নিজেদের প্রভাবিত করি তাহলে তা আমরা পেতে পারব না। জাগতিক চিন্তাধারা প্রলোভনসঙ্কুল এবং তা একজনকে মাংসিক অভিলাষে পর্যবসিত করতে পরিচালিত করতে পারে অথবা জীবনের সমস্যা এতই ভারগ্রস্ত হয়ে পড়ে যে সে রাজ্যের আগ্রহকে প্রথম স্থান দিতে পারে না। (মথি ৬:৩৩) সেই ধরনের জীবনধারা ব্যক্তির আধ্যাত্মিকতাকে দুর্বল এবং ঈশ্বর ও অন্যের প্রতি তার দায়িত্ব সম্বন্ধে তাকে বেপরোয়া করে তোলে। সে নিষ্ক্রিয় হতে পারে অথবা গুরুতর পাপ করার দ্বারা মণ্ডলীতে তার স্থানকে বিপদাপন্ন করতে পারে এমনকি হয়ত অনুতাপহীন মনোভাবও প্রদর্শন করতে পারে। বিস্তর লোকেদের প্রত্যেকের নিজের প্রতি মনোযোগ দেওয়া দরকার। এই ঈশ্বরবিহীন জগৎ ও তার অভ্যাসগুলি থেকে তাকে অবশ্যই পৃথক থাকতে হবে।—যোহন ১৭:১৬.
১১. কোন্ শাস্ত্রীয় নীতিগুলির প্রয়োগ আমাদের আরমাগিদোন থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করবে?
১১ এইক্ষেত্রে, আমাদের যা প্রয়োজন তা যিহোবা তাঁর বাক্য, তাঁর পবিত্র আত্মা এবং তাঁর দৃশ্যত সংগঠনের মাধ্যমে প্রদান করেছেন। আমাদের এই সকলের পূর্ণ সুযোগ গ্রহণ করা দরকার। তাছাড়াও, আমরা যদি তাঁর অনুমোদন পেতে আশা করি, তাহলে আমাদের প্রার্থনাপূর্ণ ও ঈশ্বরের প্রতি বাধ্য হতে হবে। যা মন্দ তাকে আমাদের তীব্র ঘৃণা করতে হবে। গীতরচক বলেন: “আমি অলীক লোকদের সঙ্গে বসি নাই, আমি ছদ্মবেশীদের সঙ্গে চলিব না। আমি দুরাচারদের সমাজ ঘৃণা করি, দুষ্টগণের সঙ্গে বসিব না। পাপীদের সহিত আমার প্রাণ লইও না, রক্তপাতী মনুষ্যদের সহিত আমার জীবন লইও না।” (গীতসংহিতা ২৬:৪, ৫, ৯) খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে, যুবক ও বৃদ্ধ উভয়কেই, যারা যিহোবার প্রতি উৎসর্গীকৃত নয় তাদের সাথে তাদের মেলামেশাকে সীমিত রাখতে হবে। ঈশ্বরের অনুমোদন পেতে হলে আমাদের এই জগৎ থেকে নির্দোষ ও নিষ্কলঙ্ক হতে সচেষ্ট হতে হবে। (গীতসংহিতা ২৬:১-৫; যাকোব ১:২৭; ৪:৪) ফলে, আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে যিহোবা আমাদের ঈশ্বরবিহীনদের সাথে আরমাগিদোনে, মৃত্যুর দিকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবেন না।
কিছু ব্যক্তি “কখনও মরিবে না”
১২, ১৩. (ক) লাসারকে পুনরুত্থিত করার আগে, যীশু কোন্ কথাগুলি বলেছিলেন যা মার্থা সম্পূর্ণভাবে বুঝতে পারেনি? (খ) যীশুর বাক্য কিছু ব্যক্তি ‘কখনই মরবে না’ এর অর্থ কী করে না?
১২ এই বিধি ব্যবস্থার থেকে রক্ষাপ্রাপ্ত হওয়া এবং কখনও মরতে হবে না তার সম্ভাবনা সম্বন্ধে চিন্তা করা রোমাঞ্চকর। এই আশাটি আমাদের সামনে যীশু প্রদান করেছিলেন। তাঁর মৃত বন্ধু লাসারকে পুনরুত্থিত করার ঠিক আগে, যীশু লাসারের ভগ্নী মার্থাকে বলেছিলেন: “আমিই পুনরুত্থান ও জীবন; যে আমাতে বিশ্বাস করে, সে মরিলেও জীবিত থাকিবে; আর যে কেহ জীবিত আছে, এবং আমাতে বিশ্বাস করে, সে কখনও মরিবে না; ইহা কি বিশ্বাস কর?” মার্থা পুনরুত্থানে বিশ্বাস করেছিল কিন্তু যীশু যা বলেছিলেন তা সে সম্পূর্ণ বুঝতে পারেনি।—যোহন ১১:২৫, ২৬.
১৩ যীশু এটি ইঙ্গিত করেননি যে তাঁর বিশ্বস্ত প্রেরিতরা মাংসিক দেহতে জীবিত থাকবে এবং তারা কখনও মরবে না। এর পরিবর্তে, তিনি পরবর্তীকালে ইঙ্গিত করেন যে তাঁর শিষ্যেরা মারা যাবে। (যোহন ২১:১৬-২৩) প্রকৃতপক্ষে, সা.শ. ৩৩ সালে পঞ্চাশত্তমীর দিনে তাদের পবিত্র আত্মা দ্বারা অভিষিক্ত করার অর্থ হল যে তাদের রাজা ও যাজক হিসাবে স্বর্গীয় উত্তরাধিকার লাভ করতে হলে তাদের মরতেই হবে। (প্রকাশিত বাক্য ২০:৪, ৬) ফলে, সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে, প্রথম শতাব্দীর সকল খ্রীষ্টানেরা মারা যান। কিন্তু, যীশু বলেন তিনি যা করেছিলেন তা উদ্দেশ্য নিয়েই করেছিলেন। কখনই মৃত্যুভোগ না করে জীবিত থাকার সম্বন্ধে তাঁর বাক্যগুলি পরিপূর্ণ হবেই।
১৪, ১৫. (ক) কিছু ব্যক্তি ‘কখনই মরবে না’ যীশুর এই কথাগুলি কিভাবে পরিপূর্ণ হবে? (খ) এই জগতের পরিস্থিতি কেমন, কিন্তু ধার্মিক লোকেদের কী আশা আছে?
১৪ একটি বিষয় হল, বিশ্বস্ত অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা কখনও অনন্তকালীন মৃত্যুর সম্মুখীন হবে না। (প্রকাশিত বাক্য ২০:৬) যীশুর বাক্যগুলিও এক বিশেষ সময়ের প্রতি দৃষ্টিপাত করায় যখন ঈশ্বর মানবজাতির বিষয় সম্পর্কে হস্তক্ষেপ করে পৃথিবী থেকে মন্দতার নিঃশেষ করবেন, ঠিক যেমন তিনি নোহের দিনে করেছিলেন। সেই সময়ে যে সকল বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করছে বলে দেখা যাবে তাদের ঈশ্বরের বিচারকার্যের মাধ্যমে মৃত্যুভোগ করতে হবে না। পরিবর্তে, নোহ ও তার পরিবারের মত, তারা এই জগৎ ধ্বংস থেকে রক্ষা পাওয়ার সুযোগ পাবে। সেই ধরনের আশা হল দৃঢ়, বাইবেল শিক্ষার উপর ভিত্তি করা এবং উদাহরণ দ্বারা প্রদর্শিত। (তুলনা করুন ইব্রীয় ৬:৯; ২ পিতর ২:৪-৯.) বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপূর্ণতা দেখায় যে অধার্মিক মানব সমাজ দ্বারা গঠিত বর্তমান জগৎ খুব শীঘ্রই ধ্বংসের দ্বারা শেষ হবে। বর্তমান পরিস্থিতিকে পরিবর্তিত করা যাবে না, কারণ জগৎ হল সংশোধনাতীতভাবে মন্দ। নোহের দিনের জগৎ সম্বন্ধে ঈশ্বর যা বলেছিলেন তা বর্তমানের জগতের ক্ষেত্রেও সত্য। মানব সমাজের বহু সংখ্যকদের হৃদয় মন্দতায় পরিপূর্ণ এবং তাদের চিন্তাধারা সর্বদাই মন্দ।—আদিপুস্তক ৬:৫.
১৫ ঐশিক হস্তক্ষেপ ছাড়াই যিহোবা মানুষকে শতাব্দীব্যাপী পৃথিবীকে পরিচালনা করতে দিয়েছেন, কিন্তু তাদের সময় প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। ঠিক যেমন বাইবেল বলেছে খুব শীঘ্রই যিহোবা পৃথিবীতে সকল দুষ্টদের বিনাশ করবেন। (গীতসংহিতা ১৪৫:২০; হিতোপদেশ ২:২১, ২২) কিন্তু, তিনি দুষ্টদের সাথে ধার্মিকদের বিনাশ করবেন না। ঈশ্বর কখনও সেই রকম করেননি! (তুলনা করুন আদিপুস্তক ১৮:২২, ২৩, ২৬.) যারা ঈশ্বরীয় ভয়ের সাথে তাঁকে বিশ্বস্তভাবে সেবা করতে যথাসাধ্য প্রচেষ্টা করছে তাদের কেন তিনি ধ্বংস করবেন? এটি একমাত্র যুক্তিসঙ্গত বিষয় যে, যে সকল বিশ্বস্ত উপাসকেরা জীবিত আছে যখন মহাক্লেশ আরম্ভ হবে তখন তারাই তাঁর অনুমোদন পাবে এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে না ঠিক যেমন নোহ ও তার পরিবার ধ্বংস হয়নি যখন তার সময়কালের দুষ্ট জগৎ মহাপ্লাবনে ধ্বংস হয়েছিল। (আদিপুস্তক ৭:২৩) তারা ঐশিক সুরক্ষা পাবে এবং এই জগতের শেষ থেকে উদ্ধারপ্রাপ্ত হবে।
১৬. নতুন জগতে কী অপূর্ব বিষয়গুলি ঘটবে, রক্ষাপ্রাপ্তদের জন্য তা কী অর্থ রাখবে?
১৬ তারপর কী হবে? নতুন জগতে, যীশুর প্রায়শ্চিত্তমূলক বলিদানের উপকারগুলি যখন সম্পূর্ণরূপে প্রয়োগ করা হবে আরোগ্যকর আশীর্বাদগুলি মানবজাতির উপর প্রবাহিত হবে। বাইবেল একটি রূপক “জীবন-জলের নদী”-র কথা বলে “তাহা স্ফটিকের ন্যায় উজ্জ্বল, তাহা ঈশ্বরের ও মেষশাবকের সিংহাসন হইতে নির্গত হইয়া তথাকার চকের মধ্যস্থানে বহিতেছে; “নদীর এপারে ওপারে জীবন-বৃক্ষ আছে, তাহা দ্বাদশ বার ফল উৎপন্ন করে, এক এক মাসে আপন আপন ফল দেয়, এবং সেই বৃক্ষের পত্র জাতিগণের আরোগ্য নিমিত্তক।”” (প্রকাশিত বাক্য ২২:১, ২) এটি বলা রোমাঞ্চকর যে “আরোগ্য” হওয়ার মধ্যে জড়িত আছে আদমজনিত মৃত্যুকে জয় লাভ করা! “তিনি মৃত্যুকে অনন্তকালের জন্য বিনষ্ট করিয়াছেন, ও প্রভু সদাপ্রভু সকলের মুখ হইতে চক্ষুর জল মুছিয়া দিবেন।” (যিশাইয় ২৫:৮) ফলে, যারা মহাক্লেশ থেকে উদ্ধার পেয়ে নতুন জগতে যাবে তারা কখনও মৃত্যুর সম্মুখীন হবে না!
এক নিশ্চিত আশা
১৭. কিছু জন আরমাগিদোন থেকে রক্ষা পাবে এবং “কখনই মরিবে না“ এই আশা কতটা নিশ্চিত?
১৭ এই বিস্ময়কর আশার প্রতি কি আমরা সম্পূর্ণ ভরসা রাখতে পারি? নিশ্চয়ই! যীশু মার্থাকে ইঙ্গিত করেছিলেন যে এমন এক সময় আসবে যখন মানুষ কখনও না মারা গিয়ে বেঁচে থাকবে। (যোহন ১১:২৬) তাছাড়াও, প্রকাশিত বাক্যের ৭ অধ্যায়ে, যা যীশু যোহনকে প্রদান করেছিলেন, সেখানে প্রকাশ করা হয়েছিল যে বিস্তর লোক মহাক্লেশ থেকে উদ্ধার পেয়ে বার হয়ে আসছে। আমরা কি যীশু খ্রীষ্ট এবং নোহের দিনের জলপ্লাবনের ঐতিহাসিক বিবরণকে বিশ্বাস করতে পারি? নিঃসন্দেহে পারি! তাছাড়াও, বাইবেলে আরও অন্যান্য ঘটনা সম্বন্ধে বিবরণ আছে যখন ঈশ্বর দণ্ডাজ্ঞার সময় এবং জাতিগণের পতন থেকে তাঁর দাসদের জীবন্ত রক্ষা করেছিলেন। এই শেষকালের সময়ে কি তিনি অতটা করবেন না বলে আশা করা যেতে পারে? স্রষ্টার পক্ষে কি কোন কিছু অসম্ভব?—তুলনা করুন মথি ১৯:২৬.
১৮. যিহোবার ধার্মিক নতুন জগতে জীবন সম্বন্ধে কিভাবে আমরা দৃঢ় নিশ্চিত হতে পারি?
১৮ এখন যিহোবাকে বিশ্বস্তভাবে সেবা করার মাধ্যমে আমরা নতুন জগতে অনন্ত জীবনের আশা রাখতে পারি। অগণিত লক্ষ লক্ষ লোকেরা পুনরুত্থানের মাধ্যমে নতুন জগতে জীবন পাবে। তবুও, আমাদের দিনে লক্ষ লক্ষ যিহোবার লোকেরা—হ্যাঁ, এক বিস্তর লোক যাদের সংখ্যা কোন মানুষ গণনা করতে অথবা সীমিত রাখতে পারে না—তাদের মহাক্লেশ থেকে জীবন্ত রক্ষা পাওয়ার এক অনুপম সুযোগ থাকবে। আর তারা কখনও মরবে না।
দয়া করে বর্ণনা করুন
◻ নোহের দিনের ঘটনাগুলি কিভাবে দেখায় যে আরমাগিদোনে কিছু জন রক্ষা পাবে?
◻ যখন যীশু যিহোবার দণ্ডাজ্ঞা প্রদান করতে আসবেন তখন দাঁড়িয়ে থাকার জন্য আমাদের অবশ্যই কী করার প্রয়োজন?
◻ আমরা কেন বলতে পারি যে আরমাগিদোন থেকে রক্ষাপ্রাপ্তদের ‘কখনই মরতে হবে না‘?
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিরূশালেমের ক্লেশ থেকে খ্রীষ্টানেরা রক্ষা পেয়েছিল