জীবন ও পরিচর্যা সভার জন্য অধ্যয়ন পুস্তিকা-র রেফারেন্স
আগস্ট ৬-১২
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | লূক ১৭-১৮
“কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন”
nwtsty স্টাডি নোট—লূক ১৭:১২, ১৪
দশ জন কুষ্ঠ রোগী: বাইবেলের সময়ে, কুষ্ঠ রোগীরা স্পষ্টতই একত্রে মিলিত হতো বা দলে দলে বাস করত আর এর ফলে তাদের পক্ষে একে অন্যকে সাহায্য করা সম্ভব হতো। (২রাজা ৭:৩-৫) ঈশ্বরের ব্যবস্থায় বলা হয়েছিল, কুষ্ঠ রোগীরা পৃথক থাকবে। একজন কুষ্ঠ রোগীকে নিজের উপস্থিতি সম্বন্ধে অন্যদের সতর্ক করার জন্য চিৎকার করে এই কথা বলতে হতো: “অশুচি, অশুচি।” (লেবীয় ১৩:৪৫, ৪৬) ব্যবস্থায় দেওয়া নির্দেশের সঙ্গে মিল রেখে এই কুষ্ঠ রোগীরা যিশুর কাছ থেকে দূরে দাঁড়িয়েছিল।—দেখুন, মথি ৮:২ পদের স্টাডি নোট ও শব্দকোষের অধীনে “কুষ্ঠ রোগ; কুষ্ঠ রোগী।”
যাজকদের কাছে গিয়ে নিজেদের দেখাও: যিশু খ্রিস্ট, যিনি পৃথিবীতে থাকার সময় ব্যবস্থার অধীনে ছিলেন, তিনি হারোণের যাজকত্ব ব্যবস্থা কার্যরত বলে স্বীকার করেছিলেন এবং তিনি যাদের কুষ্ঠ রোগ থেকে সুস্থ করেছিলেন, তাদের যাজকের কাছে যেতে বলেছিলেন। (মথি ৮:৪; মার্ক ১:৪৪) মোশির ব্যবস্থা অনুযায়ী, একজন কুষ্ঠ রোগী সুস্থ হয়েছেন কি না, তা একজন যাজককে যাচাই করে নিশ্চিত করতে হতো। এরপর, সুস্থ হয়ে যাওয়া কুষ্ঠ রোগীকে মন্দিরে যেতে হতো এবং নির্দেশিত বলি উৎসর্গ করতে হতো।—লেবীয় ১৪:২-৩২.
প্রহরীদুর্গ ০৮ ১০/১ ২২-২৩ অনু. ৯-১০
কেন উপলব্ধি প্রকাশ করবেন?
অন্যদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ব্যর্থতাকে কি যিশু উপেক্ষা করেছিলেন? সেই বিবরণ আরও বলে: “যীশু উত্তর করিয়া কহিলেন, দশ জন কি শুচীকৃত হয় নাই? তবে সেই নয় জন কোথায়? ঈশ্বরের গৌরব করিবার জন্য ফিরিয়া আসিয়াছে, এই অন্যজাতীয় লোকটী ভিন্ন এমন কাহাকেও কি পাওয়া গেল না?”—লূক ১৭:১৭, ১৮.
অন্য নয় জন কুষ্ঠ রোগী দুষ্ট লোক ছিল না। এর আগে, তারা জনসমক্ষে যিশুর উপর বিশ্বাস প্রকাশ করেছিল এবং স্বেচ্ছায় তাঁর নির্দেশনার বাধ্য হয়েছিল, যেটার সঙ্গে নিজেদেরকে যাজকদের কাছে দেখানোর জন্য যিরূশালেমে যাত্রা করা জড়িত ছিল। যা-ই হোক, যদিও যিশুর সদয় কাজের জন্য নিঃসন্দেহে তাদের গভীর উপলব্ধিবোধ ছিল কিন্তু তারা তাঁর প্রতি সেই উপলব্ধি প্রকাশ করতে ব্যর্থ হয়েছিল। তাদের আচরণ যিশুকে দুঃখিত করেছিল। আমাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? কেউ যখন আমাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে, তখন আমরা কি সঙ্গে সঙ্গে তাকে ধন্যবাদ বলি ও যেখানে উপযুক্ত, একটা নোট লিখে সেটা পাঠিয়ে আমাদের উপলব্ধি প্রকাশ করি?
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
nwtsty স্টাডি নোট—লূক ১৭:১০
অনুপযোগী: আক্ষ. “অপদার্থ; অযোগ্য।” যিশুর দৃষ্টান্তের মূল বিষয় এটা নয় যে, দাস অর্থাৎ তাঁর শিষ্যরা নিজেদের অপদার্থ বা অযোগ্য বলে মনে করবে। প্রসঙ্গ থেকে বোঝা যায়, “অনুপযোগী” শব্দটা এই ধারণা প্রকাশ করে, দাসেরা নিজেদের সম্বন্ধে বিনয়ী মনোভাব অর্থাৎ বিশেষ কৃতিত্ব বা প্রশংসা লাভের যোগ্য নয় এমন মনোভাব, বজায় রাখবে। কোনো কোনো পণ্ডিত ব্যক্তি মনে করেন, এখানে শব্দটা অতিরঞ্জন হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে আর এর অর্থ “আমরা সামান্য দাস, কোনো বিশেষ মনোযোগ লাভের যোগ্য নই।”
nwtsty স্টাডি নোট—লূক ১৮:৮
এই বিশ্বাস: বা “এই ধরনের বিশ্বাস।” আক্ষ. “বিশ্বাস।” এই প্রসঙ্গে যিশু যে-বিশ্বাস সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন, তা সাধারণ বিশ্বাস নয় বরং নির্দিষ্ট ধরনের বিশ্বাসকে বোঝায়, যেমন যিশুর দৃষ্টান্তে তুলে ধরা বিধবার বিশ্বাস। (লূক ১৮:১-৮) এর অন্তর্ভুক্ত প্রার্থনার ক্ষমতা সম্বন্ধে বিশ্বাস থাকা ও সেইসঙ্গে ঈশ্বর যে তাঁর মনোনীত লোকেদের প্রতি ন্যায়বিচার করবেন সেই বিশ্বাস থাকা। যিশু স্পষ্টতই বিশ্বাস সম্বন্ধে এই প্রশ্নের উত্তর দেননি কারণ তিনি চেয়েছিলেন যেন তাঁর শিষ্যরা নিজেদের বিশ্বাসের গুণগত মান নিয়ে চিন্তা করেন। প্রার্থনা ও বিশ্বাস সম্বন্ধে দৃষ্টান্ত বিশেষভাবে উপযুক্ত ছিল কারণ যিশুর শিষ্যরা সামনে যে-সমস্ত পরীক্ষার মুখোমুখি হবেন সেই বিষয়ে তিনি এর একটু আগেই বর্ণনা করেছিলেন।—লূক ১৭:২২-৩৭.
আগস্ট ১৩-১৯
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | লূক ১৯-২০
“দশ মুদ্রার দৃষ্টান্ত থেকে শিখুন”
যিশুই পথ, সত্য ও জীবন ২৩২ অনু. ২-৪, ইংরেজি
দশ মুদ্রা সম্বন্ধে তাঁর দৃষ্টান্ত
তিনি বলেন: “ভদ্রবংশীয় এক ব্যক্তি দূরদেশে গেলেন, অভিপ্রায় এই যে, আপনার জন্য রাজপদ লইয়া ফিরিয়া আসিবেন।” (লূক ১৯:১২) এই ধরনের এক যাত্রার জন্য সময় প্রয়োজন। স্পষ্টতই যিশু হলেন সেই “ভদ্রবংশীয় এক ব্যক্তি,” যিনি “দূরদেশে” অর্থাৎ স্বর্গে যাত্রা করেন, যেখানে তাঁর পিতা তাঁকে রাজপদ দান করবেন।
দৃষ্টান্তে, ‘ভদ্রবংশীয় ব্যক্তি’ যাত্রা করার আগে তার দশ জন দাসকে ডাকেন এবং প্রত্যেককে একটা করে রুপোর মুদ্রা দিয়ে বলেন: “আমি যে পর্য্যন্ত না আসি, ব্যবসায় কর।” (লূক ১৯:১৩) আসল রুপোর মুদ্রা খুব দামি। একজন খেতমজুর তিন মাসেরও বেশি সময় কাজ করে একটা রুপোর মুদ্রার সমান মজুরি লাভ করে।
শিষ্যরা হয়তো বুঝতে পারেন, তারা হলেন দৃষ্টান্তের দশ জন দাসের মতো কারণ যিশু ইতিমধ্যেই তাদের শস্যক্ষেত্রের মজুরের সঙ্গে তুলনা করেছেন। (মথি ৯:৩৫-৩৮) তিনি অবশ্য তাদের সত্যিকার অর্থেই শস্য কেটে আনতে বলেনি। এর পরিবর্তে, সেই অন্যান্য শিষ্যও এই শস্যের অন্তর্ভুক্ত, যারা ঈশ্বরের রাজ্যে স্থান লাভ করতে পারবে। শিষ্যরা রাজ্যের আরও উত্তরাধিকারী উৎপন্ন করার জন্য তাদের যাবতীয় সম্পদ ব্যবহার করে।
যিশুই পথ, সত্য ও জীবন ২৩২ অনু. ৭
দশ মুদ্রা সম্বন্ধে তাঁর দৃষ্টান্ত
শিষ্যরা যদি বুঝতে পারেন, তারা সেই দাসদের মতো, যারা আরও শিষ্য তৈরি করার জন্য তাদের সম্পদ পূর্ণরূপে ব্যবহার করে, তা হলে তারা এই বিষয়ে আশ্বস্ত হতে পারেন যে, যিশু খুশি হবেন। আর তারা এই নির্ভরতাও রাখতে পারেন, তিনি এই ধরনের অধ্যবসায়ের পুরস্কার দেবেন। অবশ্য, যিশুর সমস্ত দাসের জীবনের পরিস্থিতি একরকম নয় কিংবা তাদের একইরকম সুযোগ অথবা সামর্থ্য নেই। তা সত্ত্বেও যিশু, যিনি “রাজপদ” লাভ করেন, তিনি শিষ্য তৈরির কাজে তাদের অনুগত প্রচেষ্টার বিষয়টা স্বীকার করবেন ও সেই প্রচেষ্টার উপর আশীর্বাদ করবেন।—মথি ২৮:১৯, ২০.
যিশুই পথ, সত্য ও জীবন ২৩৩ অনু. ১
দশ মুদ্রা সম্বন্ধে তাঁর দৃষ্টান্ত
প্রভুর রাজ্যের সম্পদ বৃদ্ধি করার জন্য কাজ করতে ব্যর্থ হওয়ায় এই দাস পুরস্কার হারায়। প্রেরিতরা ঈশ্বরের রাজ্যে যিশুর সঙ্গে শাসন করার প্রত্যাশায় আছেন। তাই, শেষ দাস সম্বন্ধে তাঁর বলা কথা থেকে তারা সম্ভবত বুঝতে পারেন, তারা যদি অধ্যবসায়ী না হন, তা হলে তারা সেই রাজ্যে কোনো স্থান পাবেন না।
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
nwtsty স্টাডি নোট—লূক ১৯:৪৩
সূচালো খুঁটির বেষ্টনী: বা “বেড়া।” গ্রিক শব্দ খারাক্স খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র-এ শুধু এখানেই পাওয়া যায়। এটাকে “কোনো এলাকায় বেড়া দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত সূচালো লাঠি বা খুঁটি; দণ্ড” আর সেইসঙ্গে “সৈন্যদের ঘাঁটিতে ব্যবহৃত খুঁটি; বেড়া” হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। যিশুর কথাগুলো ৭০ খ্রিস্টাব্দে পরিপূর্ণ হয়েছিল, যখন টাইটাসের নির্দেশে রোমীয়রা যিরূশালেমের চারিদিকে একটা অবরোধ প্রাচীর বা বেড়া তৈরি করেছিল। টাইটাসের তিনটে উদ্দেশ্য ছিল—যিহুদিদের পলায়ন প্রতিরোধ করা, তাদের আত্মসমর্পণ করতে পরিচালিত করা এবং বশ্যতা স্বীকার করানোর জন্য অধিবাসীদের অনাহারে কষ্ট দেওয়া। যিরূশালেমের চারিদিকে এই বেষ্টনী নির্মাণ করার উপকরণ জোগানোর জন্য রোমীয় সেনাবাহিনী গ্রাম এলাকার গাছপালা কেটেছিল।
nwtsty স্টাডি নোট—লূক ২০:৩৮
কারণ তাঁর কাছে তারা সবাই জীবিত: বা “কারণ তাঁর দৃষ্টিকোণ থেকে তারা সবাই জীবিত।” বাইবেল প্রকাশ করে, যারা জীবিত কিন্তু ঈশ্বরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন, তারা তাঁর দৃষ্টিকোণ থেকে মৃত। (ইফি ২:১; ১তীম ৫:৬) একইভাবে, ঈশ্বরের যে-সমস্ত প্রিয় দাস মারা যায়, তারা যিহোবার দৃষ্টিকোণ থেকে এখনও জীবিত কারণ তাদের পুনরুত্থান করার বিষয়ে তাঁর উদ্দেশ্য অবশ্যই পরিপূর্ণ হবে।—রোমীয় ৪:১৬, ১৭.
আগস্ট ২০-২৬
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | লূক ২১-২২
“তোমাদের মুক্তি সন্নিকট”
ঈশ্বরের রাজ্য শাসন করছে! ২২৬ অনু. ৯, ইংরেজি
ঈশ্বরের রাজ্য এর শত্রুদের দূর করে দেয়
৯ আকাশে অদ্ভুত ঘটনা। যিশু ভবিষ্যদ্বাণী করেন: “সূর্য্য অন্ধকার হইবে, চন্দ্র জ্যোৎস্না দিবে না, আকাশ হইতে তারাগণের পতন হইবে।” নিশ্চিতভাবেই, আলোর সন্ধানে ধর্মীয় নেতাদের দিকে ফিরে তাকানো হবে না—তাদের আর সেভাবে শনাক্ত করা যাবে না। এ ছাড়া, যিশু কি আকাশে কোনো অতিপ্রাকৃতিক ঘটনা দেখা যাবে বলে উল্লেখ করছিলেন? হয়তো তিনি এটাও বলছিলেন। (যিশা ১৩:৯-১১; যোয়েল ২:১, ৩০, ৩১) লোকেরা যা দেখবে, তাতে তারা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে? তারা “উদ্বিগ্ন” হওয়ার কারণে “ক্লেশ” ভোগ করবে। (লূক ২১:২৫; সফ ১:১৭) হ্যাঁ, “ভয়ে, এবং . . . যাহা যাহা ঘটিবে তাহার আশঙ্কায়” ঈশ্বরের রাজ্যের শত্রুদের—‘রাজা’ থেকে শুরু করে ‘দাসদের’—“প্রাণ উড়িয়া যাইবে” এবং তারা নিজেদের আড়াল করার উপায় খুঁজে বেড়াবে। কিন্তু, তারা লুকানোর জন্য এমন কোনো স্থান খুঁজে পাবে না, যেটা আমাদের রাজার ক্রোধ থেকে তাদের বাঁচানোর জন্য যথেষ্ট সুরক্ষিত হবে।—লূক ২১:২৬; ২৩:৩০; প্রকা ৬:১৫-১৭.
প্রহরীদুর্গ ১৬.০১ ১০-১১ অনু. ১৭
‘ভ্রাতৃপ্রেমে স্থির থাকিতে’ দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হোন!
১৭ ‘সাহসী’ হোন। (পড়ুন, ইব্রীয় ১৩:৬.) যিহোবার প্রতি আস্থা আমাদেরকে কঠিন পরীক্ষা সহ্য করার জন্য সাহস প্রদান করে। এই সাহস আমাদের এক ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখতে সাহায্য করে। আর আমরা যখন ইতিবাচক হই, তখন আমরা আমাদের ভাই-বোনদের উৎসাহিত করার ও তাদের সান্ত্বনা প্রদান করার মাধ্যমে ভ্রাতৃপ্রেম দেখাই। (১ থিষল. ৫:১৪, ১৫) এমনকী মহাক্লেশের সময়েও, আমাদের মুক্তি যে সন্নিকট, তা জেনে আমরা সাহসী হতে পারব।—লূক ২১:২৫-২৮.
প্রহরীদুর্গ ১৫ ৭/১৫ ১৭-১৮ অনু. ১৩
“তোমাদের মুক্তি সন্নিকট”!
১৩ ছাগেরা যখন বুঝতে পারবে তাদের ধ্বংস করা হবে, তখন তারা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে? তারা “বিলাপ করিবে।” (মথি ২৪:৩০) কিন্তু, অভিষিক্ত ব্যক্তিরা ও যারা তাদের সমর্থন করে, তারা কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে? তারা সেটাই করবে, যা যিশু করতে বলেছিলেন: “এ সকল ঘটনা আরম্ভ হইলে তোমরা ঊর্দ্ধ্বদৃষ্টি করিও, মাথা তুলিও, কেননা তোমাদের মুক্তি সন্নিকট।”—লূক ২১:২৮.
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
nwtsty স্টাডি নোট—লূক ২১:৩৩
আকাশ ও পৃথিবীর লোপ হবে: অন্যান্য শাস্ত্রপদ প্রকাশ করে, আকাশ ও পৃথিবী চিরকাল থাকবে। (আদি ৯:১৬; গীত ১০৪:৫; উপ ১:৪) তাই, এখানে উল্লেখিত যিশুর কথাগুলো অতিরঞ্জন হিসেবে বোঝা যেতে পারে অর্থাৎ এমনকী যদি সেই অসম্ভব ঘটনা ঘটে এবং আকাশ ও পৃথিবী লোপ হয়, তবুও যিশুর বাক্য পরিপূর্ণ হবে। (তুলনা করুন, মথি ৫:১৮) কিন্তু, এখানে উল্লেখিত আকাশ ও পৃথিবী শব্দগুলো উপযুক্তভাবেই সেই রূপক আকাশ ও পৃথিবীকে বোঝাতে পারে, যেগুলোকে প্রকা ২১:১ পদে “প্রথম আকাশ ও প্রথম পৃথিবী” বলা হয়েছে।
আমার বাক্য কখনোই লোপ হবে না: বা “আমার বাক্য নিশ্চিতভাবেই লোপ হবে না।” এখানে গ্রিক ক্রিয়া পদের সঙ্গে দু-বার নেতিবাচক শব্দ ব্যবহার করা, কোনো ধারণা জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করাকে প্রকাশ করে আর এটা স্পষ্টতই যিশুর বাক্যের স্থায়িত্বের উপর জোর দেয়।
প্রহরীদুর্গ ১৪ ১০/১৫ ১৬-১৭ অনু. ১৫-১৬
তোমরা “যাজকদের এক রাজ্য” হবে
১৫ প্রভুর সান্ধ্যভোজ প্রতিষ্ঠা করার পর, যিশু তাঁর বিশ্বস্ত শিষ্যদের সঙ্গে একটা চুক্তি করেছিলেন, যেটাকে রাজ্য চুক্তি বলা হয়। (পড়ুন, লূক ২২:২৮-৩০.) এই চুক্তির মধ্যে, অন্যান্য চুক্তির মতো যিহোবা জড়িত নন। এর পরিবর্তে, এটা হচ্ছে যিশু ও অভিষিক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে এক ব্যক্তিগত চুক্তি। যিশু যখন বলেছিলেন: “আমার পিতা যেমন আমার জন্য নিরূপণ করিয়াছেন [‘আমার সঙ্গে এক চুক্তি করেছেন,’ NW],” তখন তিনি হয়তো সেই চুক্তি সম্বন্ধে উল্লেখ করছিলেন, যে-চুক্তির মাধ্যমে যিহোবা তাঁকে “মল্কীষেদকের রীতি অনুসারে অনন্তকালীন যাজক” করেছেন।—ইব্রীয় ৫:৫, ৬.
১৬ যিশুর সমস্ত পরীক্ষার সময়, ১১ জন বিশ্বস্ত প্রেরিত তাঁর প্রতি অনুগত ছিল। রাজ্য চুক্তি এই নিশ্চয়তা দিয়েছিল যে, সেই প্রেরিতরা স্বর্গে সিংহাসনে বসবে এবং যিশুর সঙ্গে রাজা হিসেবে শাসন করবে ও যাজক হিসেবে সেবা করবে। তবে, সেই ১১ জন ব্যক্তিই শুধু এই বিশেষ সুযোগ লাভ করবে না। যিশু একটা দর্শনের মাধ্যমে প্রেরিত যোহনের সামনে আবির্ভূত হয়েছিলেন এবং এই কথা বলেছিলেন: “যে জয় করে, তাহাকে আমার সহিত আমার সিংহাসনে বসিতে দিব, যেমন আমি আপনি জয় করিয়াছি, এবং আমার পিতার সহিত তাঁহার সিংহাসনে বসিয়াছি।” (প্রকা. ৩:২১) তাই, ১,৪৪,০০০ জন অভিষিক্ত খ্রিস্টানের সঙ্গে রাজ্য চুক্তি করা হয়েছে। (প্রকা. ৫:৯, ১০; ৭:৪) এই চুক্তি হচ্ছে এক বৈধ ভিত্তি, যাতে অভিষিক্ত ব্যক্তিরা স্বর্গে যিশুর সঙ্গে শাসন করতে পারে। বিষয়টা এমন, যেন এক কনেকে একজন রাজার সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। সেই দু-জনের যখন বিয়ে হয়, তখন কনের পক্ষে রাজার সঙ্গে শাসন করা সম্ভবপর হয়। আসলে, বাইবেলে অভিষিক্ত খ্রিস্টানদেরকে খ্রিস্টের ‘কন্যা’ বা কনে হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যে-“সতী কন্যা” খ্রিস্টের সঙ্গে বিয়ে করার জন্য বাগ্দত্তা।—প্রকা. ১৯:৭, ৮; ২১:৯; ২ করি. ১১:২.
আগস্ট ২৭–সেপ্টেম্বর ২
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | লূক ২৩-২৪
“অন্যদের ক্ষমা করার জন্য প্রস্তুত থাকুন”
যিহোবার নিকটবর্তী হোন ২৯৭ অনু. ১৬
‘খ্রীষ্টের প্রেম জানিতে সমর্থ হওয়া’
১৬ যিশু আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ উপায়ে তাঁর পিতার প্রেমকে নিখুঁতভাবে প্রতিফলিত করেছিলেন—তিনি “ক্ষমা করার জন্য তৈরি” ছিলেন। (গীতসংহিতা ৮৬:৫, NW) এমনকী তিনি যখন যাতনাদণ্ডে ছিলেন, তখনও ক্ষমা করার এই ইচ্ছা স্পষ্ট দেখা গিয়েছিল। এক লজ্জাজনক মৃত্যু ভোগ করতে বাধ্য হয়ে, হাতে ও পায়ে পেরেক বিদ্ধ অবস্থায় যিশু কী বলেছিলেন? তিনি কি যিহোবাকে ঘাতকদের শাস্তি দেওয়ার জন্য বলেছিলেন? এর ঠিক বিপরীতটা হয়েছিল, যিশুর শেষ কথাগুলোর মধ্যে একটা ছিল: “পিতঃ ইহাদিগকে ক্ষমা কর, কেননা ইহারা কি করিতেছে, তাহা জানে না।”—লূক ২৩:৩৪.
সজাগ হোন! ২/০৮ ১১ অনু. ৫-৬, ইংরেজি
ঈশ্বর কি গুরুতর পাপগুলো ক্ষমা করেন?
যিহোবা শুধু পাপ নয় কিন্তু সেইসঙ্গে পাপীর মনোভাবও লক্ষ করেন। (যিশাইয় ১:১৬-১৯) যিশুর দু-পাশে বিদ্ধ হওয়া দু-জন অপরাধীর কথা একটু চিন্তা করুন। স্পষ্টতই তারা উভয়ে গুরুতর অপরাধ করেছিল কারণ তাদের মধ্যে একজন স্বীকার করেছিলেন: “আমরা ন্যায়সঙ্গত দণ্ড পাইতেছি; কারণ যাহা যাহা করিয়াছি, তাহারই সমুচিত ফল পাইতেছি; কিন্তু ইনি [যিশু] অপকার্য্য কিছুই করেন নাই।” সেই অপরাধীর কথাগুলো ইঙ্গিত দেয়, তিনি যিশু সম্বন্ধে কিছু জানতেন। আর সেই জ্ঞান সম্ভবত তার মনোভাবে এক ইতিবাচক পরিবর্তন করতে সাহায্য করেছিল। তার পরের কথা থেকে সেটাই বোঝা যায় আর এই বার তিনি যিশুর কাছে বিনতি করেন: “আপনি যখন আপন রাজ্যে আসিবেন, তখন আমাকে স্মরণ করিবেন।” সেই আন্তরিক অনুরোধের প্রতি খ্রিস্ট কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? “আমি তোমাকে সত্য বলিতেছি, অদ্যই তুমি পরমদেশে আমার সঙ্গে উপস্থিত হইবে।”—লূক ২৩:৪১-৪৩.
বিষয়টা ভেবে দেখুন: মানুষ হিসেবে যিশুর শেষ কথাগুলোর মধ্যে এমন একজন ব্যক্তির প্রতি করুণার অভিব্যক্তি ছিল, যে-ব্যক্তি স্বীকার করেছেন, তিনি মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য। সেটা কতই-না উৎসাহজনক! তাই আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, যিশু খ্রিস্ট ও তাঁর পিতা যিহোবা দু-জনেই সেইসমস্ত ব্যক্তির প্রতি সমবেদনা দেখাবেন, যারা প্রকৃত অনুতাপ প্রকাশ করে, তা তারা অতীতে যা-ই করুক না কেন।—রোমীয় ৪:৭.
যিহোবার নিকটবর্তী হোন ২৯৭-২৯৮ অনু. ১৭-১৮
‘খ্রীষ্টের প্রেম জানিতে সমর্থ হওয়া’
১৭ প্রেরিত পিতরের সঙ্গে যিশুর আচরণ থেকে সম্ভবত তাঁর ক্ষমার আরও মর্মস্পর্শী উদাহরণ দেখা যেতে পারে। কোনো সন্দেহ নেই যে, পিতর যিশুকে খুবই ভালোবাসতেন। ১৪ই নিশান, যিশুর জীবনের শেষ রাতে পিতর তাঁকে বলেছিলেন: “প্রভু, আপনার সঙ্গে আমি কারাগারে যাইতে এবং মরিতেও প্রস্তুত আছি।” তবুও, মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরে, পিতর এমনকী যিশুকে চেনেন বলে তিন বার অস্বীকার করেছিলেন! পিতর যখন তৃতীয় বার অস্বীকার করেন, তখন কী হয়েছিল সেই বিষয়ে বাইবেল আমাদের বলে: “প্রভু মুখ ফিরাইয়া পিতরের দিকে দৃষ্টিপাত করিলেন।” তার পাপ কতটা গুরুতর সেটা বুঝে মর্মাহত হয়ে পিতর “বাহিরে গিয়া অত্যন্ত রোদন” করেছিলেন। সেই দিনই পরে যিশু যখন মারা গিয়েছিলেন, তখন প্রেরিত হয়তো মনে মনে চিন্তা করেছিলেন, ‘আমার প্রভু কি আমাকে ক্ষমা করেছেন?’—লূক ২২:৩৩, ৬১, ৬২.
১৮ উত্তরের জন্য পিতরকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়নি। যিশু ১৬ই নিশান সকালে পুনরুত্থিত হয়েছিলেন এবং স্পষ্টতই সেদিনই তিনি ব্যক্তিগতভাবে পিতরের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। (লূক ২৪:৩৪; ১ করিন্থীয় ১৫:৪-৮) যিশু কেন সেই প্রেরিতের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিয়েছিলেন, যিনি দৃঢ়ভাবে তাঁকে অস্বীকার করেছিলেন? যিশু হয়তো অনুতপ্ত পিতরকে আশ্বস্ত করতে চেয়েছিলেন যে, তার প্রভু এখনও তাকে ভালোবাসেন ও মূল্যবান মনে করেন। কিন্তু, যিশু পিতরকে শুধু পুনরায় আশ্বাস দেওয়ার চেয়েও বেশি কিছু করেছিলেন।
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
nwtsty স্টাডি নোট—লূক ২৩:৩১
গাছ যখন সরস থাকে . . . তবে শুকিয়ে গেলে: যিশু স্পষ্টতই যিহুদি জাতির বিষয়ে বলছিলেন। এটা এমন এক মৃতপ্রায় গাছের মতো ছিল, যেটাতে তখনও কিছুটা রস অবশিষ্ট ছিল, কারণ সেখানে যিশু ও সেইসঙ্গে তাঁর উপর বিশ্বাসস্থাপন করেছেন এমন কিছু যিহুদি উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু, শীঘ্রই যিশুকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে এবং বিশ্বস্ত যিহুদিরা পবিত্র আত্মার দ্বারা অভিষিক্ত হয়ে আত্মিক ইস্রায়েলের অংশ হবেন। (রোমীয় ২:২৮, ২৯; গালা ৬:১৬) সেই সময়ে, আক্ষরিক ইস্রায়েল জাতি আধ্যাত্মিকভাবে মারা যাবে, যেটাকে শুকিয়ে যাওয়া গাছের সঙ্গে তুলনা করা যায়।—মথি ২১:৪৩.
nwtsty মিডিয়া
গোড়ালির হাড়ে বিদ্ধ পেরেক
এটা হল লোহার পেরেকবিদ্ধ মানুষের গোড়ালির হাড়ের অবিকল প্রতিকৃতির একটা ছবি। লোহার পেরেকটা ১১.৫ সেন্টিমিটার (৪.৫ ইঞ্চি) লম্বা। (সভার জন্য অধ্যয়ন পুস্তিকা ১৭.১২ পৃষ্ঠা ৫ দেখুন।) ১৯৬৮ সালে যিরূশালেমের উত্তরাংশে খনন কাজ করার সময় রোমীয় সভ্যতার সময়কার আসল শিল্পকর্মটা পাওয়া গিয়েছিল। এটা একটা প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ যে, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার সময় একজন ব্যক্তিকে কাঠের দণ্ডে বিদ্ধ করার জন্য সম্ভবত পেরেক ব্যবহার করা হতো। যিশু খ্রিস্টকে দণ্ডে বিদ্ধ করার জন্য রোমীয় সৈন্যরা হয়তো এইরকম পেরেক ব্যবহার করেছিল। শিল্পকর্মটা একটা পাথরের বাক্সে পাওয়া গিয়েছে, যেটাকে অস্থি-আধার (অসুয়ারি) বলা হতো। এই ধরনের বাক্সে একজন মৃত ব্যক্তির মাংস পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর তার শুকনো হাড়গুলো রাখা হতো। এটা ইঙ্গিত দেয়, কোনো ব্যক্তিকে দণ্ডে বিদ্ধ করে হত্যা করার পর তাকে কবর দেওয়া যেত।