ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w৯৫ ৩/১৫ পৃষ্ঠা ২৪-২৮
  • “ফরীশী ও সদ্দূকীদের তাড়ী হইতে সাবধান থাক”

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • “ফরীশী ও সদ্দূকীদের তাড়ী হইতে সাবধান থাক”
  • ১৯৯৫ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • ধর্মীয় অনৈক্য
  • ফরীশীরা
  • এরা ছিল নতুন ধর্মের প্রবর্তক
  • উচ্ছেদ সাধন
  • সদ্দূকীরা
  • যীশু এবং তাঁর অনুগামীদের নির্যাতনকারীগণ
  • সতর্ক থাকার প্রয়োজনীয়তা
  • পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল
    ২০০৫ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • “আমার কাছে শিক্ষা কর”
    ২০০১ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • যীশু তাঁর প্রতিরোধকারীদের ভর্ৎসনা করেন
    সর্বমহান পুরুষ যিনি কখনও জীবিত ছিলেন
  • যিশু বিশ্রামবারে সুস্থ করেন
    বাইবেল থেকে তুমি যা শিখতে পার
আরও দেখুন
১৯৯৫ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w৯৫ ৩/১৫ পৃষ্ঠা ২৪-২৮

“ফরীশী ও সদ্দূকীদের তাড়ী হইতে সাবধান থাক”

প্রায় উনবিংশ শতাব্দীরও বেশি আগে যখন যীশু এই কথাগুলি বলেছিলেন, তখন তিনি শুধু তাঁর শিষ্যদের ক্ষতিকারক ধর্মীয় শিক্ষা এবং অভ্যাসগুলির বিষয়ে সাবধান করে দিচ্ছিলেন। (মথি ১৬:৬, ১২) মার্ক ৮:১৫ পদের বিবরণ বিশেষভাবে নির্দিষ্ট করে বলে: “তোমরা ফরীশীদের তাড়ীর বিষয়ে ও হেরোদের তাড়ীর বিষয়ে সাবধান থাকিও।” হেরোদের কথা কেন উল্লেখ করা হয়েছিল? কারণ সদ্দূকীদের মধ্যে কিছু সংখ্যক ব্যক্তিরা ছিল হেরোদপন্থী, এক রাজনৈতিক দল।

এমন বিশেষ সতর্কবাণীর কেন প্রয়োজন ছিল? ফরীশী এবং সদ্দূকীরা, উভয়েই কি যীশুর ঘোর বিরোধী ছিল না? (মথি ১৬:২১; যোহন ১১:৪৫-৫০) হ্যাঁ, তারা ছিল। তৎসত্ত্বেও, তাদের মধ্যে কেউ কেউ পরবর্তীকালে খ্রীষ্টধর্ম গ্রহণ করবে এবং তারপরে খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর মধ্যে তাদের ধারণাগুলিকে আরোপ করার প্রয়াস চালাবে।—প্রেরিত ১৫:৫.

সেখানে আরও একটা বিপদ ছিল যে শিষ্যেরা নিজেরাই হয়ত এই ধর্মীয় নেতাদের অনুকরণ করতে শুরু করে দেবে, যাদের তত্ত্বাবধানে এরা বড় হয়ে উঠেছে। সময়ে সময়ে ধর্মীয় নেতাদের এমন পটভূমিকা থেকে আসাই তাদের যীশুর শিক্ষার মর্মার্থ বোঝার বাধাস্বরূপ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

কিন্তু কোন্‌ জিনিসটি ফরীশীবাদ ও সদ্দূকীবাদকে বিপজ্জনক করে তুলেছিল? যীশুর দিনে ধর্মীয় পরিস্থিতির দিকে তাকালেই তা আমরা কল্পনা করতে পারব।

ধর্মীয় অনৈক্য

সা.শ. প্রথম শতাব্দীর যিহূদী সম্প্রদায়ের বিষয়ে ইতিহাসবেত্তা ম্যাক্স রেডেন লিখেছিলেন: “এটা সত্য যে যিহূদী মণ্ডলীগুলি ছিল একটি অপরটির থেকে স্বাধীনচেতা, এমনকি তা করার প্রতি জোরও দেওয়া হত . . . প্রায়ই, যখন মন্দিরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হত এবং পবিত্র নগরের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হত, তখন সেই সময়ের শাসনব্যবস্থার সর্বোচ্য কর্তৃত্বপদে যারা ছিল, তাদের প্রতি তীব্র অবজ্ঞার মনোভাব পোষণ করা হত।”

অবশ্যই এক বেদনাদায়ক আধ্যাত্মিক পরিস্থিতি! কোন্‌ বিষয়গুলি এমন পরিস্থিতির জন্য দায়ী ছিল? প্যালেসটাইনে বসবাসকারী সকল যিহূদীরাই নয়। গ্রীক সংস্কৃতির প্রভাব, যেখানে পুরোহিতদের সমাজের নেতারূপে গণ্য করা হত না, যিহোবার পৌরহিত্যের ব্যবস্থাকে হেয় করা হত। (যাত্রাপুস্তক ২৮:২৯; ৪০:১২-১৫) আর সেইসঙ্গে শিক্ষিত অথচ সাধারন ব্যক্তিরা এবং অধ্যাপকদেরও উপেক্ষা করা যায় না।

ফরীশীরা

খুব সম্ভবত, ফরীশী অথবা পেরুশিম কথাটির অর্থ হল “স্বতন্ত্র জন”। ফরীশীরা নিজেদের মোশির অনুগামীরূপে বিবেচনা করত। তারা নিজেদের সংঘবদ্ধ সমাজ বা ভ্রাতৃসঙ্ঘ (ইব্রীয়, চাবুরা) তৈরি করেছিল। সেখানকার সদস্যরূপে গৃহীত হবার জন্য, এক ব্যক্তিকে তিনজন সদস্যের সম্মুখে প্রতিশ্রুতি দিতে হত যে সে লেবীয় বিশুদ্ধতা কঠোরভাবে পালন করবে, অ্যামহা-আরেটসদের (অশিক্ষিত জনতা) সাথে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করবে না এবং যথাযথভাবে দশমাংশ দান করবে। মার্ক ২:১৬ পদ ‘ফরীশীদের অধ্যাপকদের’ বিষয়ে বলে। ফরীশী সম্প্রদায়ের কিছু লোকেরা ছিল পেশাগত অধ্যাপক এবং শিক্ষক, আর বাকিরা ছিল যাজক সম্প্রদায়ভুক্ত।—মথি ২৩:১-৭.

ফরীশীরা সর্বত্র বিরাজমান এক ঈশ্বরে বিশ্বাস করত। তারা যুক্তি দেখাত যে যেহেতু “ঈশ্বর সর্বত্র বিরাজমান, সেইহেতু তাঁকে মন্দিরের ভিতরে ও বাইরে, উভয় স্থানেই উপাসনা করা যেতে পারে এবং তাঁকে শুধুমাত্র বলিদান ও মিনতি করার প্রয়োজন নেই। সেইজন্য তারা সমাজগৃহকে উপাসনা, অধ্যয়ন এবং প্রার্থনাগৃহ করতে উৎসাহ দেয় এবং মানুষের জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ ও কেন্দ্রস্থলরূপে উচ্চীকৃত করে, যা মন্দিরকে ছোট করে দেয়।”—এনসাইক্লোপিডিয়া যুডাইকা.

যিহোবার মন্দির সম্পর্কে ফরীশীদের উপলব্ধিবাধের অভাব ছিল। যীশুর কথা থেকে এই বিষয়টা বোঝা যেতে পারে: “হা অন্ধ পথ-দর্শকেরা, ধিক্‌ তোমাদিগকে! তোমরা বলিয়া থাক, কেহ মন্দিরের দিব্য করিলে তাহা কিছুই নয়, কিন্তু যে কেহ মন্দিরস্থ স্বর্নের দিব্য করিল, সে আবদ্ধ হইল। মূঢ়েরা ও অন্ধেরা, বল দেখি, কোন্‌টী শ্রেষ্ঠ? স্বর্ণ, না সেই মন্দির, যাহা স্বর্ণকে পবিত্র করিয়াছে? আরও বলিয়া থাক, কেহ যজ্ঞবেদির দিব্য করিলে তাহা কিছুই নয়, কিন্তু যে কেহ তার উপরিস্থ উপহারের দিব্য করিল, সে আবদ্ধ হইল। হা অন্ধেরা, বল দেখি, কোনটী শ্রেষ্ঠ? উপহার, না সেই যজ্ঞবেদি, যাহা উপহারকে পবিত্র করে? যে ব্যক্তি যজ্ঞবেদির দিব্য করে, সে ত বেদির ও তাহার উপরিস্থ সমস্তেরই দিব্য করে।”—মথি ২৩:১৬-২০.

কিভাবে ফরীশীরা তাদের যুক্তিকে এমন বিকৃত করতে শিক্ষা পেল? কোন্‌ বিষয়টিকে তারা উপেক্ষা করছিল? যীশু এর পরেই কী বলেছেন তা লক্ষ্য করুন। “আর যে মন্দিরের দিব্য করে, সে মন্দিরের, এবং যিনি তথায় বাস করেন, তাঁহারও দিব্য করে।” (মথি ২৩:২১) এই শাস্ত্রপদটির বিষয়ে পন্ডিত ই. পি. স্যান্ডারস্‌ লক্ষ্য করেন: “শুধুমাত্র পবিত্র ঈশ্বরকে উপাসনা করা হয় বলেই মন্দিরটি পবিত্র নয়, বরং ঈশ্বর সেখানে উপস্থিত থাকেন বলে।” (যিহূদীবাদ: অভ্যাস এবং বিশ্বাস, খৃ:পূ: ৬৩—৬৬ খৃষ্টাব্দ) কিন্তু যারা ভেবেছিল যে ঈশ্বর সর্বত্র বিরাজমান, তাদের কাছে যিহোবার এই বিশেষ উপস্থিতি অল্পই অর্থ রেখেছিল।

ফরীশীরা পূর্বনির্ধারণ এবং স্বাধীন ইচ্ছার সমন্বয়ে বিশ্বাস করত। আরেক কথায়, “সকল কিছুই পূর্বনির্ধারণ অনুসারে ঘটে, তথাপি স্বাধীনভাবে পছন্দ করার অধিকার দেওয়া হয়।” তৎসত্ত্বেও তারা বিশ্বাস করত যে আদম ও হবার পাপ ছিল পূর্বনির্ধারিত, আর এমনকি অল্প একটু আঙুল কেটে যাওয়াও হল পূর্বনির্ধারিত।

যীশু যখন এক উচ্চগৃহ ধসে পড়ে ১৮ জন ব্যক্তির মৃত্যুর বিষয়ে বলছিলেন, তখন তাঁর মনে হয়ত এইসব ভুল ধারনাগুলি ছিল। তিনি জ্ঞিসাসা করেন: “তোমরা কি তাহাদের [মৃত ব্যক্তিরা] বিষয়ে মনে করিতেছ যে, তাহারা যিরূশালেমনিবাসী অন্য সকল লোক অপেক্ষা অধিক অপরাধী ছিল?” (লূক ১৩:৪) অধিকাংশ দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে যা হয়ে থাকে, এক্ষেত্রেও “কাল ও দৈব” অনুসারে তা ঘটেছিল, ফরীশীদের শিক্ষা অনুসারে ভাগ্যের দোষে নয়। (উপদেশক ৯:১১) এইধরনের অনুমেয় জ্ঞানবানেরা কিভাবে শাস্ত্রীয় আদেশকে ব্যবহার করত?

এরা ছিল নতুন ধর্মের প্রবর্তক

ফরীশীরা মনে করত যে অত্যাধুনিক তথ্য অনুসারে রব্বিদের বংশানুক্রমে শাস্ত্রীয় আজ্ঞাগুলিকে ব্যাখ্যা করতে হবে। এইজন্য এনসাইক্লোপিড়িযা যুডাইকা জানায় যে তাদের “টোরার শিক্ষাগুলিকে অত্যাধুনিক তথ্য অনুসারে সামঞ্জস্যে আনতে অথবা নিজের ধারণাগুলিকে টোরা শাস্ত্রের মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে কোন অসুবিধা হয়নি।

বাৎসরিক প্রায়শ্চিত্ত করণের দিন সম্পর্কে বলা যায় যে সেই বিশেষ দিনেই তারা মহাযাজকের পাপ হরণ করার অধিকারকে হস্তান্তর করে নিত। (লেবীয় পুস্তক ১৬:৩০, ৩৩) নিস্তারপর্ব অনুষ্ঠানে তারা ভোজপর্ব সংক্রান্ত মেষশাবকের পরিবর্তে তাড়ীশূণ্য রুটী ও দ্রাক্ষারসের বিষয়ে যাত্রাপুস্তকের বিবরণ আবৃত্তি করার উপর বেশি গুরুত্ব আরোপ করত।

কালক্রমে, ফরীশীরা মন্দিরে প্রভাব বিস্তার করে। তারপর তারা আশুপক্ব ফলের উৎসব চলাকালীন শীলোর জলাধার হতে জল নিয়ে যাত্রা এবং জলদান করা অন্তর্ভুক্ত করে, উৎসবের শেষে গুল্মবৃক্ষাদির শাখা বেদীর উপরে নিক্ষেপ করাও অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং অশাস্ত্রীয়ভাবে প্রতিদিন ও নিয়মিত প্রার্থনা করার প্রথা প্রবর্তন করেছিল।

“বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ” ছিল “বিশ্রাম দিনের বিষয়ে ফরীশীদের নতুন প্রবর্তনগুলি,” জানায় দি যিউইশ এনসাইক্লোপিডিয়া। একজন স্ত্রী বিশ্রামদিনকে প্রদীপ জ্বালানোর দ্বারা অভ্যর্থনা জানাবে বলে আশা করা হত। যদি দেখা যেত যে কোন কাজের জন্য নীতিবিরুদ্ধভাবে পরিশ্রম করতে হবে, তখন ফরীশীরা তা বর্জন করত। তারা এমনকি চিকিৎসা নিয়ন্ত্রণে রাখত এবং সর্বোপরি বিশ্রামদিনে যীশু অলৌকিকভাবে যে সুস্থ করেছিলেন, তার প্রতিও অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল। (মথি ১২:৯-১৪; যোহন ৫:১-১৬) যাইহোক শাস্ত্রীয় নিয়মগুলিকে রক্ষা করার জন্য ধর্মীয় মতপ্রবর্তনকারীরা কেবলমাত্র নতুন প্রথা চালু করেই ক্ষান্ত হয়নি, কিন্তু সেগুলিকে তারা বেড়াজালের মধ্যে রাখার চেষ্টা করেছিল।

উচ্ছেদ সাধন

শাস্ত্রীয় নিয়মগুলিকে মুলতুবি বা সেগুলিকে উচ্ছেদ করার উদ্দেশ্য নিয়ে ফরীশীরা ক্ষমতা দাবি করেছিল। তাদের যুক্তিগুলি তালমুড ম্যাক্সিমের কথায় প্রতিফলিত হয়: “সমস্ত টোরা শাস্ত্রকে ভুলে যাওয়ার পরিবর্তে কোন একটিমাত্র বিশেষ নিয়মকে উচ্ছেদ করে দেওয়া ভাল।” উদাহরণস্বরূপ, পঞ্চাশত্তম বৎসরকে পবিত্র করার যে নিয়ম, তাকে বাতিল করে দেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল এটাই, যে তাদের প্রাপ্য পাওনা আর দাবি করতে পারবে না এবং সেই সময়কাল আসার আগে থেকেই কেউ আর গরীবদের ধার দেবে না।—লেবীয় পুস্তক ২৫ অধ্যায়.

অন্যান্য উদাহরণগুলির মধ্যে হল কোন নারীকে বিপথগামিনী বলে মনে করা হলে তার বিচার না করেই দোষী সাব্যস্ত করা এবং যে সব হত্যাকাণ্ডের কোন মীমাংসা হয়নি, তার সময় মেয়াদ তুলে দেওয়া। (গণনা পুস্তক ৫:১১-৩১; দ্বিতীয় বিবরণ২১: ১-৯) শুধুমাত্র তারা সময়ের অপেক্ষা করত যে কতক্ষণে তারা অভাবগ্রস্ত পিতামাতাকে দেখাশুনা করার শাস্ত্রীয় নিয়মগুলিকে উচ্ছেদ করবে।—যাত্রাপুস্তক ২০:১২; মথি ১৫:৩-৬.

যীশু সতর্ক করে বলেছিলেন: “তোমরা ফরীশীদের তাড়ী হইতে সাবধান থাক, তাহা কপটতা।” (লূক ১২:১) ফরীশীবাদ, সেইসঙ্গে তার অনৈশ্বরিক দৃষ্টিভঙ্গি কপটতা ছাড়া আর কিছুই নয়—যাকে কোনভাবেই খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীকে স্থান দেওয়া উচিত নয়। তৎসত্ত্বেও যিহূদীদের নিজস্ব লিখিত অভিধান অনুসারে সদ্দূকীদের তুলনায় ফরীশীরা ছিল অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন। আসুন এবারে অধিক সংরক্ষনশীল দলটির বিষয়ে বিবেচনা করা যাক।

সদ্দূকীরা

সদ্দূকী নামটি সম্ভবত নেওয়া হয়েছে সাদোক থেকে, যিনি ছিলেন শলোমনের দিনের মহাযাজক। (১ রাজাবলি ২:৩৫, পাদটীকা) সদ্দূকীরা অধিক সংরক্ষনশীল একটি দল তৈরি করেছিল যারা মন্দির এবং যাজকত্ব ব্যবস্থাকে প্রতিনিধিত্ব করত। ফরীশীরা যেমন জ্ঞানী ও সাধুতার ভান করে ক্ষমতা চাইত, তাদের মত না হয়ে সদ্দূকীরা বংশবৃত্তান্ত এবং পদমর্যাদা চাইত। সা.শ.  ৭০ সালে মন্দির ধ্বংসের দিন পর্যন্ত তারা ফরীশীদের নতুন প্রবর্তনগুলির বিরোধিতা করত।

পূর্বনির্ধারণকে প্রত্যাখ্যান করা ছাড়াও সদ্দূকীরা ঈশ্বরের বাক্যে লিখিত অন্য সকল শিক্ষাকে গ্রহণ করতে অস্বীকার করত, যদি না তা পেনট্যাটিউকে স্পস্ট ভাষায় লেখা থাকত। প্রকৃতপক্ষে এই সকল বিষয়ে “তর্ক বিতর্ক করাকে তারা কর্তব্য জ্ঞান” করত। (দি জিউইশ এনসাইক্লোপিডিয়া) এটা আমাদের সেই ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দেয় যখন তারা পুনরুত্থানকে কেন্দ্র করে যীশুকে প্রতিদ্বন্দিতায় ডাকে।

বিধবার সেই সাত স্বামীর দৃষ্টান্তকে কেন্দ্র করে সদ্দূকীরা প্রশ্ন তুলেছিল: “পুনরুত্থানে ঐ সাত জনের মধ্যে সে কাহার স্ত্রী হইবে?” অবশ্যই, ফরীশীদের দ্বারা উল্লেখিত এই বিধবাটির হয়ত ১৪ বা ২১টি স্বামীও থাকতে পারত। এইজন্য যীশু ব্যাখ্যা করে বলেন: “পুনরুত্থানে লোকে বিবাহ করে না, এবং বিবাহিতাও হয় না।”—মথি ২২:২৩-৩০.

সদ্দূকীরা যে মোশি ছাড়া অন্যান্য অনুপ্রাণিত লেখকদের প্রত্যাখ্যান করে, তা জেনেই যীশু বাইবেলের প্রথম পাঁচটি পুস্তক থেকে তাঁর বক্তব্য প্রমাণ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “মৃতদের বিষয়ে, তাহারা যে উত্থিত হয়, এই বিষয়ে মোশির গ্রন্থে ঝোপের বৃত্তান্তে ঈশ্বর তাঁহাকে কিরূপ বলিয়াছিলেন, তাহা কি তোমরা পাঠ কর নাই? তিনি বলিয়াছিলেন, “আমি অব্রাহামের ঈশ্বর ইস্‌হাকের ঈশ্বর ও যাকবের ঈশ্বর। তিনি মৃতদের ঈশ্বর নহেন, কিন্তু জীবিতদের।”—মার্ক ১২:২৬, ২৭.

যীশু এবং তাঁর অনুগামীদের নির্যাতনকারীগণ

অন্যান্য জাতির সাথে আদানপ্রদানের ক্ষেত্রে সদ্দূকীরা রাষ্ট্রশাসনপ্রণালীতে বিশ্বাস করত, মশীহের জন্য অপেক্ষা না করে—অবশ্য আদৌ যদি তাঁর আগমনে তাদের বিশ্বাস থাকতো। রোমের সাথে এক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়ে সদ্দূকীরা মন্দির পরিচালনা করত এবং তারা মনেপ্রাণে চাইত না যে কোন মশীহের আবির্ভাব হোক ও তাদের বিরক্ত করুক। তাদের পদমর্যাদায় যীশু ব্যাঘাত ঘটাবে জেনে তারা ফরীশীদের সাথে হাত মিলিয়ে যীশুকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করে।—মথি ২৬:৫৯-৬৬; যোহন ১১:৪৫-৫০.

রাজনৈতিক মনোভাবাপন্ন সদ্দূকীরা যুক্তিযুক্তভাবেই রোমীয় সাম্রাজ্যের প্রতি বশ্যতা দেখিয়ে উচ্চৈস্বরে ঘোষণা করে: “কৈসর ছাড়া আমাদের অন্য রাজা নাই।” (যোহন ১৯:৬, ১২-১৫) যীশুর মৃত্যু ও পুনরুত্থানের পর এই সদ্দূকীরাই খ্রীষ্টধর্মের প্রসারকে বন্ধ করতে নেতৃত্ব নেয়। (প্রেরিত ৪:১-২৩; ৫:১৭-৪২; ৯:১৪) সা.শ. ৭০ সালে মন্দির ধ্বংস হওয়ার পরে এই দলটির আর অস্তিত্ব ছিল না।

সতর্ক থাকার প্রয়োজনীয়তা

যীশুর এই সতর্কবাণী কতই না যথার্থ বলে প্রমাণিত হয়েছে! হ্যাঁ, আমাদের “ফরীশী ও সদ্দূকীদের তাড়ী হইতে সাবধান থাকা”-র প্রয়োজন। একজনের শুধুমাত্র যিহূদী জাতি এবং বর্তমানে খ্রীষ্টীয় জগতের খারাপ কাজকর্মগুলি ভালভাবে নিরীক্ষণ করার প্রয়োজন।

তুলনামূলকভাবে, এর সম্পূর্ণ বিপরীতে পৃথিবীব্যাপী যিহোবার সাক্ষীদের ৭৫,৫০০রও বেশি মণ্ডলীতে যোগ্য প্রাচীনেরা রয়েছেন যারা ‘আপনার বিষয়ে ও তাদের শিক্ষার বিষয়ে সাবধান থাকেন।’(১ তীমথিয় ৪:১৬) তারা সমগ্র বাইবেলকেই ঈশ্বরের বাক্য বলে গ্রহণ করে। (২ তীমথিয় ৩:১৬) নিজস্ব ধর্মমত তৈরি করে প্রসার করার পরিবর্তে তারা একতাবদ্ধভাবে একটি বাইবেলভিত্তিক সংগঠনের নির্দেশ অনুসারে কাজ করে, যে সংগঠন নির্দেশনার প্রধান বাহকরূপে এই পত্রিকাটিকে ব্যবহার করে থাকে।—মথি ২৪:৪৫-৪৭.

তার ফল? পৃথিবীব্যাপী লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিরা বাইবেলের বিষয়বস্তু হৃদয়ঙ্গম করতে পেরেছে, নিজেদের জীবনে তা পালন করেছে, অপরকে তা শেখাতে পেরেছে এবং তার ফলস্বরূপ আধ্যাত্মিকভাবে উচ্চীকৃত হয়েছে। এই কাজ কিভাবে সম্পাদিত হয়ে চলেছে, তা দেখার জন্য আপনার নিকটবর্তী যিহোবার সাক্ষীদের মণ্ডলীতে এসে অথবা এই পত্রিকার প্রকাশকদের লিখুন না কেন?

[২৬ পৃষ্ঠার বাক্স]

যীশু তাঁর শ্রোতাদের সহানুভূতিপূর্ণ বিবেচনা দেখাতেন

যীশু খ্রীষ্ট তাঁর শ্রোতাদের ধারণাগুলিকে বিবেচনা করে পরিষ্কারভাবে শিক্ষা দিতেন। উদাহরণস্বরূপ, ফরীশী নীকদীমের সঙ্গে “নূতন জন্মে”র বিষয়ে কথা বলার সময়ে যীশু তা করেছিলেন। নীকদীম প্রশ্ন করেছিল: “মনুষ্য বৃদ্ধ হইলে কেমন করিয়া তাহার জন্ম হইতে পারে? সে কি দ্বিতীয় বার মাতার গর্ব্ভে প্রবেশ করিয়া জন্মিতে পারে?” (যোহন ৩:১-৫) নীকদীম কেনই বা এত বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিল, যখন সে জানত যে ফরীশীরা বিশ্বাস করে যে যদি কাউকে যিহূদী ধর্মে রূপান্তরিত হতে হয় তাহলে তাকে নূতন জন্ম নিতে হবে এবং রব্বিদের ভাষণ অনুসারে “একজন শিশুর” ত্বকছেদে তার পূর্ণজন্ম হয়?

জন লাইটফুটের দ্বারা লিখিত এ কমেনটারী অন দা নিউ টেস্টামেন্ট ফ্রম টালমুড অ্যান্ড হেব্রাইকা নিম্নলিখিত অন্তদৃষ্টি দেয়: “একজন ইস্রায়েলীয়ের যোগ্যতা সম্পর্কে যিহূদীদের সাধারণ ধারণা . . . ফরীশীদের মনে দৃঢ়ভাবে গেঁথে গেছে” যা সে “সহজে তার কু-সংস্কারের জন্য ভুলতে পারবে না . . . . ‘অথচ ইস্রায়েলীয়দের . . . অধিকার রয়েছে মশীহ রাজ্যে প্রবেশ করার, তাহলে তোমরা কি এই কথাগুলির দ্বারা বোঝাতে চাইছো যে যদি কেউ ইস্রায়েলীয় হতে চায় তাহলে তাকে দ্বিতীয়বার মাতৃগর্ভে প্রবেশ করতে হবে?”—তুলনা করুন মথি ৩:৯.

ত্বকছেদকে নতুন জীবন বলে ধরে নিলেও নীকদীম কিন্তু একজন যিহুদীর কাছে এই পদ্ধতিকে অসম্ভব বলে মনে করত।

আর একটি ঘটনায় অনেকেই অসন্তুষ্ট হয় যখন যীশু ‘তাঁর মাংস ভক্ষণ ও রক্ত পান করা’র কথা উল্লেখ করেন। (যোহন ৬:৪৮-৫৫) যাইহোক, লাইটফুট দেখিয়ে দেন যে “ফরীশীদের রূপকভাবে খাওয়া-দাওয়া, পান করার বিষয়টা যিহূদীদের স্কুলের সবচেয়ে সাধারন ব্যাপার।” তিনি আরও উল্লেখ করেন তালমুড ‘মশীহকে ভক্ষণ’ করার বিষয়ে উল্লেখ আছে।

সুতরাং, ফরীশী ও সদ্দূকীদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রথম শতাব্দীর যিহূদীদের চিন্তাধারার উপর বেশ ভালই প্রভাব বিস্তার করেছিল। যাইহোক, যীশু কিন্তু সর্বসময়েই যথার্থভাবে তাঁর শ্রোতাদের জ্ঞানের পরিধি এবং অভিজ্ঞতার কথা বিবেচনা করতেন। বহুবিধ কারনের মধ্যে এটি ছিল একটি যা তাকে একজন মহান শিক্ষকে পরিণত করেছিল।

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৫)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার