ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w০৫ ৯/১ পৃষ্ঠা ১৮-২২
  • আমরা আমাদের ঈশ্বর যিহোবার নামে চলব

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • আমরা আমাদের ঈশ্বর যিহোবার নামে চলব
  • ২০০৫ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • দৌরাত্ম্য আবারও মানবজাতিকে জর্জরিত করে
  • আমরা যিহোবার সতর্কবাণীগুলোতে মনোযোগ দিই
  • অশান্ত সময়ে ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করে চলুন
  • ‘আমরা সরিয়া পড়িবার লোক নহি’
  • তিনি “ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন করিতেন”
    তাদের বিশ্বাস অনুকরণ করুন
  • নোহের বিশ্বাস জগৎকে দোষী করে
    ২০০১ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • জেগে থাকা আমাদের জন্য এখন আরও বেশি জরুরি
    ২০০৩ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • তিনি ‘আর সাত জনের সহিত রক্ষা’ পেয়েছিলেন
    ২০১৩ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
আরও দেখুন
২০০৫ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w০৫ ৯/১ পৃষ্ঠা ১৮-২২

আমরা আমাদের ঈশ্বর যিহোবার নামে চলব

“আমরা যুগে যুগে চিরকাল আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] নামে চলিব।”—মীখা ৪:৫.

১. নৈতিকতার ক্ষেত্রে নোহের দিনের পরিস্থিতি কেমন ছিল এবং নোহ কীভাবে আলাদা ছিলেন?

বাইবেলে উল্লেখিত প্রথম ব্যক্তি, যিনি ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করেছিলেন, তিনি হলেন হনোক। দ্বিতীয় জন ছিলেন নোহ। বিবরণ আমাদের বলে: “নোহ তৎকালিক লোকদের মধ্যে ধার্ম্মিক ও সিদ্ধ লোক ছিলেন। নোহ ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন করিতেন।” (আদিপুস্তক ৬:৯) নোহের সময়ের মধ্যে, সমগ্র মানবজাতি বিশুদ্ধ উপাসনা থেকে সরে গিয়েছিল। মন্দ পরিস্থিতি অবিশ্বস্ত দূতেদের দ্বারা মন্দতর হয়ে পড়েছিল, যারা মহিলাদের সঙ্গে অস্বাভাবিক যৌন মিলন করেছিল আর এর ফলে নেফিলিম অর্থাৎ “মহাবীরগণ” বা সেকালের “প্রসিদ্ধ বীর” নামে তাদের বংশধর উৎপন্ন করেছিল। তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, পৃথিবী দৌরাত্ম্যে পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল! (আদিপুস্তক ৬:২, ৪, ১১) তা সত্ত্বেও, নোহ নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করেছিলেন এবং তিনি “ধার্ম্মিকতার প্রচারক” ছিলেন। (২ পিতর ২:৫) জীবন রক্ষার জন্য ঈশ্বর যখন তাকে একটা জাহাজ তৈরি করার আদেশ দিয়েছিলেন, তখন নোহ বাধ্য হয়ে “সেইরূপ করিলেন, ঈশ্বরের আজ্ঞানুসারেই সকল কর্ম্ম করিলেন।” (আদিপুস্তক ৬:২২) সত্যিই, নোহ ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করেছিলেন।

২, ৩. আজকে আমাদের জন্য নোহ কোন উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছেন?

২ পৌল বিশ্বস্ত সাক্ষিদের তালিকায় নোহের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন, যখন তিনি লিখেছিলেন: “বিশ্বাসে নোহ, যাহা যাহা তখন দেখা যাইতেছিল না, এমন বিষয়ে আদেশ পাইয়া ভক্তিযুক্ত ভয়ে আবিষ্ট হইয়া আপন পরিবারের ত্রাণার্থে এক জাহাজ নির্ম্মাণ করিলেন, এবং তদ্দ্বারা জগৎকে দোষী করিলেন ও আপনি বিশ্বাসানুরূপ ধার্ম্মিকতার অধিকারী হইলেন।” (ইব্রীয় ১১:৭) কী এক চমৎকার উদাহরণ! যিহোবার বাক্য সফল হবেই এই বিষয়ে নোহের এতটাই আস্থা ছিল যে, তিনি ঈশ্বরের আজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ করার জন্য সময়, শক্তি ও সম্পদ ব্যয় করেছিলেন। একইভাবে, আজকে অনেকে এই জগতের সুযোগসুবিধাগুলোকে প্রত্যাখ্যান করে এবং যিহোবার আজ্ঞাগুলোর বাধ্য থাকতে তাদের সময়, শক্তি ও সম্পদ ব্যয় করে থাকে। তাদের বিশ্বাস উল্লেখযোগ্য এবং এটা তাদের ও সেইসঙ্গে অন্যদের জন্য পরিত্রাণ নিয়ে আসবে।—লূক ১৬:৯; ১ তীমথিয় ৪:১৬.

৩ নোহ এবং তার পরিবারের জন্য বিশ্বাস দেখিয়ে চলা নিশ্চয়ই নোহের প্রপিতামহ হনোকের মতোই কঠিন ছিল, যার কথা আগের প্রবন্ধে আলোচনা করা হয়েছে। হনোকের মতো নোহের দিনেও সত্য উপাসকদের সংখ্যা কম ছিল—মাত্র আট জন ব্যক্তি বিশ্বস্ত বলে প্রমাণিত হয়েছিল এবং জলপ্লাবন থেকে রক্ষা পেয়েছিল। নোহ এক দৌরাত্ম্যপূর্ণ এবং অনৈতিক জগতে ধার্মিকতা সম্বন্ধে প্রচার করেছিলেন। এ ছাড়া, তিনি এবং তার পরিবার বিশ্বব্যাপী জলপ্লাবনের প্রস্তুতিস্বরূপ কাঠের একটা বিশাল জাহাজ তৈরি করেছিলেন, যদিও এইরকম জলপ্লাবন এর আগে কেউ কখনো দেখেনি। যারা সেটা দেখেছিল, তাদের কাছে নিশ্চয়ই বিষয়টাকে অনেক অদ্ভুত বলে মনে হয়েছিল।

৪. নোহের সমসাময়িক লোকেদের কোন ভুল সম্বন্ধে যিশু তুলে ধরেছিলেন?

৪ আগ্রহের বিষয় যে, যিশু যখন নোহের দিনের বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন, তখন তিনি দৌরাত্ম্য, মিথ্যা ধর্ম অথবা অনৈতিকতার বিষয়ে বলেননি—যদিও সেগুলো অত্যন্ত গুরুতর ছিল। যিশু যে-ভুলের বিষয়ে তুলে ধরেছিলেন সেটা হল, সতর্কবাণী দেওয়া সত্ত্বেও লোকেরা তাতে মনোযোগ দিতে প্রত্যাখ্যান করেছিল। তিনি বলেছিলেন যে, “জাহাজে নোহের প্রবেশ দিন পর্য্যন্ত, লোকে . . . ভোজন ও পান করিত, বিবাহ করিত ও বিবাহিতা হইত।” ভোজন, পান, বিবাহ করা এবং বিবাহিত হওয়া—এতে ভুল কী ছিল? তারা তো “স্বাভাবিক” জীবনযাপনই করছিল! কিন্তু, এক জলপ্লাবন আসতে চলেছিল এবং নোহ ধার্মিকতার বিষয়ে প্রচার করছিলেন। তার কথা এবং আচরণ তাদের কাছে এক সতর্কবাণীর মতো হওয়া উচিত ছিল। তা সত্ত্বেও, তারা “বুঝিতে পারিল [“মনোযোগ দিল,” NW] না, যাবৎ না বন্যা আসিয়া সকলকে ভাসাইয়া লইয়া গেল।”—মথি ২৪:৩৮, ৩৯.

৫. নোহ এবং তার পরিবারের কোন গুণাবলির প্রয়োজন ছিল?

৫ সেই সময়ের দিকে তাকিয়ে আমরা নোহের জীবনধারায় প্রজ্ঞা দেখতে পাই। কিন্তু, জলপ্লাবনের আগে অন্য সকলের চেয়ে আলাদা হওয়ার জন্য সাহসের প্রয়োজন ছিল। একটা বিশাল জাহাজ তৈরি করতে এবং সেটা সমস্ত ধরনের পশুপাখি দিয়ে পূর্ণ করার জন্য নোহ এবং তার পরিবারের দৃঢ়প্রত্যয়ের প্রয়োজন ছিল। সেই অল্প কয়েক জন বিশ্বস্ত লোকের মধ্যে কেউ কেউ কি মাঝেমধ্যে সহজেই অন্যদের চোখে পড়া কিছুটা এড়াতে চেয়েছিল এবং শুধুমাত্র “স্বাভাবিক” জীবনযাপন করার ইচ্ছা পোষণ করেছিল? এমনকি এইরকম চিন্তা যদি ক্ষণিকের জন্য তাদের মনে এসেও থাকে, তবুও তারা তাদের নীতিনিষ্ঠাকে দুর্বল হতে দেয়নি। মোটামুটি অনেক বছর—এই বিধিব্যবস্থায় আমাদের সহ্য করতে হবে এমন যেকারো চেয়ে বেশি সময়—পরে নোহের বিশ্বাস তাকে জলপ্লাবন থেকে রক্ষা করার দিকে পরিচালিত করেছিল। কিন্তু, যিহোবা সেইসমস্ত লোকের ওপর বিচার নিয়ে এসেছিলেন, যারা “স্বাভাবিক” জীবনযাপন করছিল এবং তারা যে-সময়ে বাস করছিল, সেই সময়ের তাৎপর্যে মনোযোগ দেয়নি।

দৌরাত্ম্য আবারও মানবজাতিকে জর্জরিত করে

৬. জলপ্লাবনের পর, কোন পরিস্থিতি তখনও বিদ্যমান ছিল?

৬ জলপ্লাবনের জল কমে আসার পর মানবজাতির এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল। কিন্তু, মানুষেরা তখনও অসিদ্ধ ছিল আর “বাল্যকাল অবধি মনুষ্যের মনস্কল্পনা” ক্রমাগত “দুষ্ট” ছিল। (আদিপুস্তক ৮:২১) তা ছাড়া, মন্দ দূতেরা যদিও আর মানবদেহ ধারণ করতে পারত না কিন্তু তখনও তারা খুবই সক্রিয় ছিল। ভক্তিহীন মানবজাতির জগৎ শীঘ্রই দেখিয়েছিল যে, এটা ‘পাপাত্মার মধ্যে শুইয়া রহিয়াছিল’ এবং ঠিক আজকের দিনের মতো, সত্য উপাসকদের “দিয়াবলের নানাবিধ চাতুরীর” বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছিল।—১ যোহন ৫:১৯; ইফিষীয় ৬:১১, ১২.

৭. জলপ্লাবনের পরবর্তী সময়ে কীভাবে দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পেয়েছিল?

৭ অন্ততপক্ষে, নিম্রোদের সময় থেকে জলপ্লাবনের পরবর্তী সময়কার পৃথিবী আবারও মানুষের দৌরাত্ম্য দিয়ে ভরে গিয়েছিল। জনসংখ্যার বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তিবিদ্যার উন্নতির কারণে সেই দৌরাত্ম্য দিনের পর দিন আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রাচীনকালে, তলোয়ার, বড়শা, তীর-ধনুক ও রথ ছিল। কিন্তু, অতি সাম্প্রতিক সময়ে বন্দুক ও কামান এসেছে, এরপর বিংশ শতাব্দীর রাইফেল ও জটিল আগ্নেয়াস্ত্র আবির্ভূত হয়েছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ বিমান, ট্যাংক, সাবমেরিন এবং বিষাক্ত গ্যাসের মতো আরও ভয়ানক অস্ত্রশস্ত্রের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। সেই যুদ্ধে এই অস্ত্রশস্ত্র লক্ষ লক্ষ লোকের জীবন কেড়ে নিয়েছিল। সেটা কি অপ্রত্যাশিত ছিল? না।

৮. প্রকাশিত বাক্য ৬:১-৪ পদ কীভাবে পরিপূর্ণ হয়ে আসছে?

৮ উনিশশো চোদ্দো সালে ঈশ্বরের স্বর্গীয় রাজ্যের রাজা হিসেবে যিশু সিংহাসনে উপবিষ্ট হন এবং ‘প্রভুর দিন’ শুরু হয়। (প্রকাশিত বাক্য ১:১০) প্রকাশিত বাক্য বইয়ে বর্ণিত একটা দর্শনে যিশুকে সাদা ঘোড়ায় আরোহিত বিজয়ী রাজা হিসেবে এগিয়ে চলতে দেখা যায়। অন্যান্য অশ্বারোহীরা তাঁর পিছন পিছন আসছে, প্রত্যেক জন মানবজাতির ওপর আসা আলাদা আলাদা মারীকে চিত্রিত করে। তাদের মধ্যে একজন লোহিত বর্ণের ঘোড়ার ওপর অধিষ্ঠিত এবং তাকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল যেন সে “পৃথিবী হইতে শান্তি অপহরণ করে, আর যেন মনুষ্যেরা পরস্পরকে বধ করে; এবং একখান বৃহৎ খড়গ তাহাকে দত্ত হইল।” (প্রকাশিত বাক্য ৬:১-৪) সেই ঘোড়া ও এর আরোহী যুদ্ধকে চিত্রিত করে এবং সেই বৃহৎ খড়্গ শক্তিশালী অস্ত্রশস্ত্রসহ আধুনিক যুদ্ধের নজিরবিহীন ধ্বংসাত্মক প্রভাবকে প্রতিনিধিত্ব করে। আজকে এই অস্ত্রশস্ত্রের অন্তর্ভুক্ত পারমাণবিক বোমাগুলো, যেগুলোর প্রত্যেকটা লক্ষ লক্ষ লোকের জীবন ধ্বংস করতে পারে; সেই রকেটগুলো, যেগুলো হাজার হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যে এই বোমাগুলোকে পৌঁছে দিতে পারে; আর সেইসঙ্গে ব্যাপক হারে ধ্বংসের জন্য জটিল রাসায়নিক ও জৈব অস্ত্রসস্ত্র।

আমরা যিহোবার সতর্কবাণীগুলোতে মনোযোগ দিই

৯. আজকের জগৎকে কীভাবে জলপ্লাবনের আগে বিদ্যমান জগতের সঙ্গে তুলনা করা যায়?

৯ নোহের দিনে, নেফিলিমদের সহায়তায় দুষ্ট মানুষের চরম দৌরাত্ম্যের কারণে যিহোবা মানবজাতিকে ধ্বংস করেছিলেন। আজকের দিন সম্বন্ধে কী বলা যায়? আজকে পৃথিবী কি সেই সময়ের দৌরাত্ম্যের চেয়ে কোনো অংশে কম? কখনোই না! এ ছাড়া, ঠিক নোহের দিনের মতো আজকেও লোকেরা রোজকার কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থেকে এক “স্বাভাবিক” জীবনযাপন করার চেষ্টা করছে এবং প্রচারিত সতর্কবাণীগুলোতে মনোযোগ দিতে প্রত্যাখ্যান করছে। (লূক ১৭:২৬, ২৭) তা হলে, এই বিষয়ে সন্দেহ করার কোনো কারণ কি রয়েছে যে, যিহোবা আবারও মানবজাতিকে ধ্বংস করবেন? না।

১০. (ক) বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীতে বার বার কোন সতর্কবাণী দেওয়া হয়েছে? (খ) আজকে একমাত্র বিজ্ঞ পথ কী?

১০ জলপ্লাবনের শত শত বছর আগে, আমাদের দিনে অবশ্যম্ভাবী ধ্বংস সম্বন্ধে হনোক ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। (যিহূদা ১৪, ১৫) যিশুও আসন্ন “মহাক্লেশ” সম্বন্ধে বলেছিলেন। (মথি ২৪:২১) অন্যান্য ভাববাদীও সেই সময় সম্বন্ধে সতর্ক করে দিয়েছিল। (যিহিষ্কেল ৩৮:১৮-২৩; দানিয়েল ১২:১; যোয়েল ২:৩১, ৩২) আর প্রকাশিত বাক্য পুস্তকে আমরা সেই চূড়ান্ত ধ্বংস সম্বন্ধে এক সুস্পষ্ট বর্ণনা পড়ি। (প্রকাশিত বাক্য ১৯:১১-২১) আলাদা আলাদাভাবে আমরা ধার্মিকতার সক্রিয় প্রচারক হিসেবে হনোক ও নোহকে অনুকরণ করি। আমরা যিহোবার সতর্কবাণীগুলোতে মনোযোগ দিই এবং আমাদের প্রতিবেশীদেরও ঠিক একই বিষয় করার জন্য প্রেমের সঙ্গে সাহায্য করি। তাই, নোহের মতো আমরা ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করি। বস্তুতপক্ষে, যেকেউ জীবন চায়, তার জন্য ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করে চলা অতি গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন আমরা যে-চাপগুলোর মুখোমুখি হচ্ছি, সেগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে কীভাবে আমরা তা করতে পারি? ঈশ্বরের উদ্দেশ্য অনুযায়ী কাজ করার জন্য আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করতে হবে।—ইব্রীয় ১১:৬.

অশান্ত সময়ে ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করে চলুন

১১. কোন উপায়ে আমরা প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের অনুকরণ করি?

১১ প্রথম শতাব্দীতে, অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের ‘সেই পথাবলম্বীর’ সদস্য বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। (প্রেরিত ৯:২) তাদের সমগ্র জীবনধারা যিহোবা ও যিশু খ্রিস্টে বিশ্বাসের ওপর কেন্দ্রীভূত ছিল। তারা সেই পথে চলেছিল, যে-পথে তাদের প্রভু চলেছিলেন। আজকে, বিশ্বস্ত খ্রিস্টানরাও একই বিষয় করে থাকে।

১২. যিশু এক জনতাকে অলৌকিকভাবে খাওয়ানোর পর কী ঘটেছিল?

১২ যিশুর পরিচর্যার সময়ে সংঘটিত একটা ঘটনায় বিশ্বাসের গুরুত্ব সম্বন্ধে দেখা যায়। একবার যিশু প্রায় ৫,০০০ জন পুরুষের এক জনতাকে অলৌকিকভাবে খাইয়েছিলেন। লোকেরা চমৎকৃত এবং আনন্দিত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, পরবর্তী সময়ে কী ঘটেছিল, তা লক্ষ করুন। আমরা পড়ি: “সেই লোকেরা তাঁহার কৃত চিহ্ন-কার্য্য দেখিয়া বলিতে লাগিল, উনি সত্যি সেই ভাববাদী, যিনি জগতে আসিতেছেন। তখন যীশু বুঝিতে পারিলেন যে, তাহারা আসিয়া রাজা করিবার জন্য তাঁহাকে ধরিতে উদ্যত হইয়াছে, তাই আবার নিজে একাকী পর্ব্বতে চলিয়া গেলেন।” (যোহন ৬:১০-১৫) সেই রাতে তিনি আরেক জায়গায় চলে গিয়েছিলেন। যিশুর রাজা হতে প্রত্যাখ্যান করা সম্ভবত অনেককে হতাশ করেছিল। শত হলেও, তিনি দেখিয়েছিলেন যে তিনি রাজা হওয়ার মতো যথেষ্ট বিজ্ঞ ছিলেন এবং লোকেদের শারীরিক চাহিদাগুলো পূরণ করার ক্ষমতা তাঁর ছিল। কিন্তু, তাঁর রাজা হিসেবে শাসন করার জন্য এটা তখনও যিহোবার সময় ছিল না। তা ছাড়া, যিশুর রাজ্য হওয়ার কথা ছিল স্বর্গীয়, পার্থিব নয়।

১৩, ১৪. অনেকে কোন মনোভাব দেখিয়েছিল এবং কীভাবে তাদের বিশ্বাস পরীক্ষিত হয়েছিল?

১৩ তা সত্ত্বেও, জনতা যিশুকে অনুসরণ করেই চলেছিল এবং যোহন যেমনটা বলেন, তাঁকে “সমুদ্রের পারে” খুঁজে পেয়েছিল। তাঁকে রাজা করার বিষয়ে তাদের প্রচেষ্টাকে তিনি পরিহার করার পরও কেন তারা তাঁকে অনুসরণ করেছিল? অনেকে এক মাংসিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছিল, মোশির দিনে প্রান্তরে যিহোবা যে-বস্তুগত বিষয়গুলো জুগিয়েছিলেন, সেগুলোর বিষয়ে তারা জোর দিয়ে বলেছিল। তারা পরোক্ষভাবে বলতে চেয়েছিল যে, যিশুর উচিত ক্রমাগত তাদের জন্য বস্তুগত বিষয়গুলো জোগানো। যিশু তাদের ভুল উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে তাদেরকে আধ্যাত্মিক সত্যগুলো শেখাতে শুরু করেছিলেন, যেগুলো তাদের চিন্তাভাবনাকে সমন্বয় করার ব্যাপারে সাহায্য করতে পারে। (যোহন ৬:১৭, ২৪, ২৫, ৩০, ৩১, ৩৫-৪০) উত্তরে, কেউ কেউ তাঁর বিরুদ্ধে বচসা করেছিল, বিশেষভাবে যখন তিনি সেই দৃষ্টান্তটা দিয়েছিলেন: “সত্য, সত্য, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তোমরা যদি মনুষ্যপুত্ত্রের মাংস ভোজন ও তাঁহার রক্ত পান না কর, তোমাদিগেতে জীবন নাই। যে আমার মাংস ভোজন ও আমার রক্ত পান করে, সে অনন্ত জীবন পাইয়াছে, এবং আমি তাহাকে শেষ দিনে উঠাইব।”—যোহন ৬:৫৩, ৫৪.

১৪ যিশুর দৃষ্টান্তগুলো প্রায়ই লোকেদের এটা দেখাতে প্রেরণা দিয়েছিল যে, তারা সত্যিই ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করতে চায় কি না। এই দৃষ্টান্তটা এর ব্যতিক্রম ছিল না। এটা জোরালো প্রতিক্রিয়ার উদ্রেক করেছিল। আমরা পড়ি: “তাঁহার শিষ্যদের মধ্যে অনেকে এ কথা শুনিয়া বলিল, এ কঠিন কথা, কে ইহা শুনিতে পারে?” যিশু ব্যাখ্যা করে চলেছিলেন যে, তাদের তাঁর কথাগুলোর আধ্যাত্মিক অর্থ খোঁজা উচিত। তিনি বলেছিলেন: “আত্মাই জীবনদায়ক, মাংস কিছু উপকারী নয়; আমি তোমাদিগকে যে সকল কথা বলিয়াছি, তাহা আত্মা ও জীবন।” তা সত্ত্বেও, অনেক লোক শোনেনি আর সেই বিবরণ বর্ণনা করে: “ইহাতে তাঁহার অনেক শিষ্য পিছাইয়া পড়িল, তাঁহার সঙ্গে আর যাতায়াত করিল না।”—যোহন ৬:৬০, ৬৩, ৬৬.

১৫. যিশুর কয়েক জন অনুসারীর কোন সঠিক মনোভাব ছিল?

১৫ কিন্তু, যিশুর সব শিষ্যই সেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। এটা স্বীকার করতেই হয় যে, অনুগত শিষ্যরা যিশু যা বলেছিলেন, তা পুরোপুরিভাবে বুঝতে পারেনি। তা সত্ত্বেও, যিশুর ওপর তাদের আস্থা খুবই দৃঢ় ছিল। সেই অনুগত শিষ্যদের মধ্যে পিতর নামে একজন সেই সকলের অনুভূতি প্রকাশ করেছিলেন, যারা তাঁর সঙ্গে রয়ে গিয়েছিল যখন তিনি বলেছিলেন: “প্রভু কাহার কাছে যাইব? আপনার নিকটে অনন্ত জীবনের কথা আছে।” (যোহন ৬:৬৮) কী এক চমৎকার মনোভাব এবং কত উত্তম এক উদাহরণ!

১৬. কীভাবে আমরা পরীক্ষিত হতে পারি এবং আমাদের কোন সঠিক মনোভাব গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করা উচিত?

১৬ যিশুর প্রাথমিক শিষ্যদের মতো আজকে আমরাও পরীক্ষিত হতে পারি। আমরা হয়তো এইরকম মনে করে হতাশ হয়ে যেতে পারি যে, যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলো ব্যক্তিগতভাবে আমরা যত তাড়াতাড়ি চাই, তত তাড়াতাড়ি পূর্ণ হচ্ছে না। আমরা হয়তো মনে করতে পারি যে, আমাদের বাইবেলভিত্তিক প্রকাশনাগুলোতে শাস্ত্রের ব্যাখ্যাগুলো বোঝা কঠিন। কোনো সহবিশ্বাসীর আচরণ হয়তো আমাদের হতাশ করতে পারে। এগুলো অথবা এইরকম কারণগুলোর জন্য ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করা বন্ধ করে দেওয়া কি সঠিক হবে? অবশ্যই না! যে-শিষ্যরা যিশুকে পরিত্যাগ করেছিল, তারা মাংসিক চিন্তাধারা প্রকাশ করেছিল। আমাদের অবশ্যই একই বিষয় করা এড়িয়ে চলতে হবে।

‘আমরা সরিয়া পড়িবার লোক নহি’

১৭. ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করার জন্য আমরা কীভাবে সাহায্য লাভ করতে পারি?

১৭ প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “প্রত্যেক শাস্ত্র-লিপি ঈশ্বর-নিশ্বসিত।” (২ তীমথিয় ৩:১৬, পাদটীকা) বাইবেলের পাতায় পাতায় যিহোবা আমাদের স্পষ্টভাবে বলেন: “এই পথ, . . . এই পথেই চল।” (যিশাইয় ৩০:২১) ঈশ্বরের বাক্যের বাধ্য হওয়া আমাদের ‘ভাল করিয়া দেখিতে’ সাহায্য করে যে, ‘আমরা কিরূপে চলিতেছি।’ (ইফিষীয় ৫:১৫) বাইবেল অধ্যয়ন করা এবং আমরা যা শিখি, তা নিয়ে ধ্যান করা আমাদের ‘সত্যে চলিতে’ সাহায্য করে। (৩ যোহন ৩) বাস্তবিকই, যিশু যেমন বলেছিলেন, ‘আত্মা জীবনদায়ক, মাংস কিছু উপকারী নয়।’ আমাদের পদক্ষেপকে পরিচালিত করার একমাত্র নির্ভরযোগ্য নির্দেশনা হচ্ছে আধ্যাত্মিক নির্দেশনা, যা যিহোবার বাক্য, তাঁর আত্মা এবং তাঁর সংগঠনের মাধ্যমে আসে।

১৮. (ক) কেউ কেউ বোকার মতো কোন কাজ করে? (খ) আমরা কোন ধরনের বিশ্বাস গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করি?

১৮ আজকে, যারা মাংসিক চিন্তাভাবনা বা অপূর্ণ প্রত্যাশাগুলোর কারণে অসন্তুষ্ট হয়ে পড়ে, তারা প্রায়ই এই জগতে যা কিছু রয়েছে, সেগুলো থেকে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করে। তৎপরতার মনোভাব হারিয়ে তারা ‘জাগিয়া থাকিবার’ কোনো প্রয়োজন বুঝতে পারে না আর তারা রাজ্যের বিষয়গুলোকে প্রথমে রাখার পরিবর্তে, স্বার্থপর লক্ষ্যগুলোর পিছনে ছোটাকে বেছে নেয়। (মথি ২৪:৪২) সেই পথে চলা সবচেয়ে বোকামির কাজ। প্রেরিত পৌলের কথাগুলো লক্ষ করুন: “আমরা বিনাশের জন্য সরিয়া পড়িবার লোক নহি, বরং প্রাণের রক্ষার জন্য বিশ্বাসের লোক।” (ইব্রীয় ১০:৩৯) হনোক এবং নোহের মতো, আমরা অশান্ত সময়ে বাস করছি কিন্তু তাদের মতো আমাদেরও ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করার বিশেষ সুযোগ রয়েছে। তা করলে, আমাদের নিশ্চিত প্রত্যাশা রয়েছে যে, আমরা যিহোবার উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ হতে, দুষ্টতার ধ্বংস হতে এবং এক ধার্মিক নতুন জগৎ আসতে দেখব। কী চমৎকার এক প্রত্যাশা!

১৯. সত্য উপাসকদের পথ সম্বন্ধে মীখা কীভাবে বর্ণনা করেন?

১৯ অনুপ্রাণিত ভাববাদী মীখা জগতের জাতিগুলোর বিষয়ে বলেন যে, তারা ‘প্রত্যেকে আপন আপন দেবের নামে’ চলবে। এরপর তিনি নিজের ও অন্যান্য বিশ্বস্ত উপাসকের বিষয়ে বলেছিলেন: “আমরা যুগে যুগে চিরকাল আমাদের ঈশ্বর যিহোবার নামে চলিব।” (মীখা ৪:৫) আপনার দৃঢ়সংকল্প যদি মীখার মতোই হয়, তা হলে সময় যত অশান্তই হোক না কেন, যিহোবার নিকবর্তী থাকুন। (যাকোব ৪:৮) আমাদের প্রত্যেকের আন্তরিক আকাঙ্ক্ষা যেন এই হয় যে, আমরা এখন ও যুগে যুগে এমনকি চিরকাল আমাদের ঈশ্বর যিহোবার সঙ্গে গমনাগমন করব!

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• নোহের দিনের সঙ্গে আমাদের দিনের কোন কোন মিল রয়েছে?

• নোহ এবং তার পরিবার কোন পথ অনুসরণ করেছিল এবং আমরা কীভাবে তাদের বিশ্বাসকে অনুকরণ করতে পারি?

• যিশুর কিছু অনুসারী কোন ভুল দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছিল?

• সত্য খ্রিস্টানরা কী করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ?

[২০ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

ঠিক নোহের দিনের মতো আজকেও লোকেরা তাদের রোজকার কাজকর্মে ডুবে রয়েছে

[২১ পৃষ্ঠার চিত্র]

রাজ্যের প্রচারক হিসেবে ‘আমরা সরিয়া পড়িবার লোক নহি’

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৫)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার