সত্য উপাসকদের এক বিস্তর লোক—কোথা থেকে তারা আসল?
“দেখ, প্রত্যেক জাতির ও বংশের ও প্রজাবৃন্দের ও ভাষার বিস্তর লোক, . . . সিংহাসনের সম্মুখে ও মেষশাবকের সম্মুখে দাঁড়াইয়া আছে।”—প্রকাশিত বাক্য ৭:৯.
১. প্রকাশিত বাক্যের ভাববাণীমূলক দর্শনগুলি আজকে আমাদের জন্য কেন এত আগ্রহের বিষয়?
খ্রীষ্টাব্দ প্রথম শতাব্দীর শেষের দিকে, প্রেরিত যোহন যিহোবার উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে কিছু অভূতপূর্ব ঘটনার দর্শন করেন। এই দর্শনে তিনি যা দেখেছিলেন তার মধ্যে কয়েকটি এখনই পরিপূর্ণতা লাভ করছে। আর বাদবাকি বিষয়গুলি অদূর ভবিষ্যতে পরিপূর্ণতা লাভ করবে। সমগ্র সৃষ্টির সামনে নাটকীয়ভাবে তাঁর নামকে মহিমান্বিত করার জন্য যিহোবার যে মহান উদ্দেশ্য আছে, এই বিষয়গুলি তারই কেন্দ্রীভূত। (যিহিষ্কেল ৩৮:২৩; প্রকাশিত বাক্য ৪:১১; ৫:১৩) তাছাড়াও, এর সাথে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে আমাদের প্রত্যেকের জীবনের প্রত্যাশা। কিভাবে?
২. (ক) প্রেরিত যোহন তার চতুর্থ দর্শনে কী দেখেন? (খ) এই দর্শন সম্বন্ধে কোন্ প্রশ্নগুলি আমরা এখন বিবেচনা করব?
২ প্রকাশিত বাক্যের ধারাবাহিক দর্শনগুলির মধ্যে চতুর্থ দর্শনটিতে, যোহন কিছু দূতেদের দেখেন যারা ধ্বংসাত্মক বায়ুকে ধরে রাখে যতক্ষণ না “আমাদের ঈশ্বরের দাসগণকে” তাদের ললাটে মুদ্রাঙ্কিত না করা হয়। এরপর তিনি সবচেয়ে রোমাঞ্চকর একটি ঘটনা লক্ষ্য করেন—“প্রত্যেক জাতির ও বংশের ও প্রজাবৃন্দের ও ভাষার বিস্তর লোক, তাহা গণনা করিতে সমর্থ কেহ ছিল না,” তারা একতাবদ্ধভাবে যিহোবার উপাসনা করছে এবং তাঁর পুত্রের প্রতি সম্মান দেখাচ্ছে। যোহনকে জানানো হয় যে, এরাই সেই লোক যারা মহাক্লেশ পার হয়ে এসেছে। (প্রকাশিত বাক্য ৭:১-১৭) কারা সেই ব্যক্তি যারা “আমাদের ঈশ্বরের দাসগণ” হিসাবে বর্ণিত হয়েছে? এবং কারা মহাক্লেশ থেকে পরিত্রাণপ্রাপ্ত “বিস্তর লোক”-দের অন্তর্ভুক্ত হবে? আপনি কি তাদের মধ্যে একজন হবেন?
“আমাদের ঈশ্বরের দাসগণ” কারা?
৩. (ক) যোহন ১০:১-১৫ পদে, কিভাবে যীশু তাঁর অনুগামীদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের দৃষ্টান্ত দেন? (খ) তাঁর আত্মত্যাগমূলক মৃত্যুর দ্বারা যীশু তাঁর মেষেদের জন্য কী সম্ভবপর করেছেন?
৩ তাঁর মৃত্যুর প্রায় চার মাস আগে যীশু নিজেকে “উত্তম মেষপালক” এবং তাঁর অনুগামীদের “মেষ” বলে সম্বোধন করেন যাদের জন্য তিনি তাঁর জীবন দেবেন। বিশেষ করে তিনি সেই মেষেদের কথা উল্লেখ করেন যাদের তিনি এক রূপক মেষ খোঁয়াড়ে খুঁজে পান এবং যারা তাঁর মাধ্যমে এক বিশেষ যত্ন উপভোগ করে। (যোহন ১০:১-৫)a প্রেমের সাথে, যীশু তাঁর মেষেদের জন্য নিজের প্রাণ উৎসর্গ করেন, মুক্তির এক মূল্য দেন যা পাপ ও মৃত্যুর থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তাদের প্রয়োজন ছিল।
৪. যীশু এখানে যা বলেছেন তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে কাদের প্রথম মেষ হিসাবে সংগ্রহ করা হয়?
৪ এটি করার আগে, কিন্তু, যীশু এক উত্তম মেষপালক হিসাবে ব্যক্তিগতভাবে তাঁর শিষ্যদের সংগ্রহ করেন। এদের প্রথম দলের সাথে তিনি পরিচিত হন যোহন বাপ্তাইজকের দ্বারা যিনি যীশুর দেওয়া দৃষ্টান্তে এক “দ্বাররক্ষী” ছিলেন। যীশু সেই সব ব্যক্তিদের খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন যারা ‘অব্রাহামের বংশের’ অংশীদার হওয়ার যে সুযোগ তার প্রতি সাড়া দেবে। (আদিপুস্তক ২২:১৮; গালাতীয় ৩:১৬, ২৯) তিনি তাদের হৃদয়ে স্বর্গীয় রাজ্যের প্রতি উপলব্ধিবোধ গড়ে তুলেছিলেন এবং এই নিশ্চয়তা দেন যে তাঁর স্বর্গীয় পিতার ঘরে তিনি তাদের জন্য স্থান প্রস্তুত করতে যাচ্ছেন। (মথি ১৩:৪৪-৪৬; যোহন ১৪:২, ৩) যথার্থরূপে তিনি বলেন: “আর যোহন বাপ্তাইজকের কাল হইতে এখন পর্য্যন্ত স্বর্গ-রাজ্য বলে আক্রান্ত হইতেছে, এবং আক্রমীরা সবলে তাহা অধিকার করিতেছে।” (মথি ১১:১২) যে সব ব্যক্তিরা সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য তাঁর অনুগামী হয়, তারাই সেই মেষখোঁয়াড়ের অন্তর্ভুক্ত হিসাবে প্রমাণিত হয় যার সম্বন্ধে যীশু উল্লেখ করেছিলেন।
৫. (ক) প্রকাশিত বাক্য ৭:৩-৮ পদে উল্লেখিত “আমাদের ঈশ্বরের দাসগণ” কারা? (খ) কী দেখায় যে আত্মিক ইস্রায়েলের সাথে উপাসনায় আরও অনেকে যোগ দেবে?
৫ প্রকাশিত বাক্য ৭:৩-৮, পদ অনুসারে যারা সাফল্যের সাথে সেই স্বর্গীয় লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হচ্ছে তাদেরও “আমাদের ঈশ্বরের দাসগণ” বলে উল্লেখ করা হয়েছে। (১ পিতর ২:৯, ১৬ পদ দেখুন।) সেখানে যে ১,৪৪,০০০ এর কথা বলা হয়েছে তারা কি কেবল মাত্র সাধারণ যিহূদী? যীশুর দেওয়া দৃষ্টান্তে যে রূপক মেষখোঁয়াড়, তার অন্তর্ভুক্ত যারা তারা কি শুধু যিহূদী? অবশ্যই না; তারা ঈশ্বরের আত্মিক ইস্রায়েলের সদস্য, প্রত্যেকে অব্রাহামের আত্মিক বংশের অন্তর্ভুক্ত হয়ে খ্রীষ্টের সহযোগী হিসাবে পরিচিত। (গালাতীয় ৩:২৮, ২৯; ৬:১৬; প্রকাশিত বাক্য ১৪:১, ৩) অবশ্যই, পরিশেষে এমন একটা সময় আসবে যখন এই নির্দিষ্ট সংখ্যাটি পূর্ণ হবে। তার পর? ঠিক যেমন বাইবেল ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল, অন্যান্যরা—অর্থাৎ বিস্তর লোক—আত্মিক ইস্রায়েলের সাথে যুক্ত হয়ে যিহোবার উপাসনা করবে।—সখরিয় ৮:২৩.
“অপর মেষ”—তারা কি পরজাতীয় খ্রীষ্টান?
৬. যোহন ১০:১৬ পদ কোন্ ঘটনার প্রতি দৃষ্টি আরোপ করায়?
৬ যোহন ১০:৭-১৫, পদে একটি মেষখোঁয়াড়ের কথা উল্লেখ করার পর, যীশু আরেকটি দলকে এর মধ্যে নিয়ে আসেন এবং বলেন: “আমার আরও মেষ আছে, সে সকল এ খোঁয়াড়ের নয়; তাহাদিগকেও আমার আনিতে হইবে, এবং তাহারা আমার রব শুনিবে, তাহাতে এক পাল, ও এক পালক হইবে।” (যোহন ১০:১৬) কারা সেই “আরও মেষ”?
৭, ৮. (ক) অপর মেষেরা যে পরজাতীয় খ্রীষ্টান এই ধারণা কেন ভুল ভিত্তির উপর গঠিত? (খ) পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে কোন্ তথ্য আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে অপর মেষেরা কারা?
৭ খ্রীষ্টজগতের মন্তব্যকারীরা সাধারণত এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে থাকে যে এই অপর মেষেরা হল পরজাতীয় খ্রীষ্টান এবং এর আগে সেই মেষখোঁয়াড়ের অন্তর্ভুক্ত যাদের কথা বলা হয়েছিল তারা হল যিহূদী, যারা নিয়ম চুক্তির অধীনে ছিল, আর এই দুই দলই স্বর্গে যাবে। কিন্তু যিহূদী মেষখোঁয়াড়, যাদের কাছে সুরক্ষিত প্রাচীর হিসাবে নিয়ম চুক্তি ছিল, সেখানে যীশু কোন বহিরাগত ব্যক্তি হিসাবে আসেননি যে সেখানকার প্রবেশদ্বার খুলে দেওয়ার জন্য তাঁর দ্বাররক্ষীর প্রয়োজন হবে। তিনি যিহূদী হিসাবেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন আর সেই বংশ অনুসারে তিনি নিয়ম চুক্তির অধীনে পড়েন। (গালাতীয় ৪:৪) এছাড়াও, যারা অপর মেষকে পরজাতীয় খ্রীষ্টান হিসাবে স্বর্গীয় জীবনের দ্বারা পুরস্কৃত হবে বলে মনে করে, তারা ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক বিবেচনা করতে ব্যর্থ হচ্ছে। যিহোবা যখন প্রথম মানব দম্পতিকে সৃষ্টি করেন এবং তাদের এদনোদ্যানে রাখেন, তখন তিনি স্পষ্টভাবে জানান যে তাঁর উদ্দেশ্য হল যে পৃথিবী যেন পরিপূর্ণ হয়, এর সমস্ত অংশ যেন পরমদেশে পরিণত হয় এবং এর মানব তত্ত্বাবধায়করা যেন অনন্ত জীবন উপভোগ করতে পারে—একটি শর্তে যে তারা তাদের সৃষ্টিকর্তার সম্মান করবে ও তাঁর বাধ্য হবে।—আদিপুস্তক ১:২৬-২৮; ২:১৫-১৭; যিশাইয় ৪৫:১৮.
৮ যখন আদম পাপ করে, তখন যিহোবার উদ্দেশ্য কিন্তু ব্যাহত হয়নি। প্রেমের সাথে ঈশ্বর আদমের সন্তানদের জন্য একটি ব্যবস্থা গ্রহণ করেন যাতে করে তারা তা উপভোগ করার সুযোগ পেতে পারে যা আদম উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছিল। যিহোবা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে তিনি একজন পরিত্রাতা, অর্থাৎ একটি বংশ উৎপন্ন করবেন যার মাধ্যমে সমগ্র জাতি আশীর্বাদপ্রাপ্ত হবে। (আদিপুস্তক ৩:১৫; ২২:১৮) সেই প্রতিজ্ঞার অর্থ এই ছিল না যে পৃথিবীর সব ভাল লোকেদের স্বর্গে নিয়ে যাওয়া হবে। যীশু তাঁর অনুগামীদের প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন: “তোমার রাজ্য আইসুক, তোমার ইচ্ছা সিদ্ধ হউক, যেমন স্বর্গে তেমনি পৃথিবীতেও হউক।” (মথি ৬:৯, ১০) বেশি দিন হয়নি, যোহন ১০:১-১৬ পদে লিপিবদ্ধ দৃষ্টান্তের কথা উল্লেখ করার পরেই যীশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন যে কেবল মাত্র “ক্ষুদ্র মেষপাল”-কেই তাঁর পিতা স্বর্গীয় রাজ্য দিতে সম্মত হয়েছেন। (লূক ১২:৩২, ৩৩) অতএব যখন আমরা যীশুর দৃষ্টান্তের কথা পড়ি যেখানে তিনি নিজেকে উত্তম মেষপালক বলেছেন, যিনি তাঁর মেষেদের জন্য নিজের প্রাণ উৎসর্গ করেন, তখন এটা ভুল হবে যদি এই দৃশ্য থেকে সেই বিরাট অংশকে বাদ দেওয়া হয় যাদের যীশু তাঁর প্রেমের তত্ত্বাবধানে আনেন এবং যারা তাঁর স্বর্গীয় রাজ্যের পার্থিব প্রজা হবে।—যোহন ৩:১৬.
৯. ১৮৮৪ সালের শুরুতে, বাইবেলের ছাত্রেরা অপর মেষের পরিচয় সম্বন্ধে কী বুঝেছিল?
৯ প্রায় ১৮৮৪ সালে প্রহরীদুর্গ (ইংরাজি) সেই সব লোকেদের অপর মেষ হিসাবে চিহ্নিত করেছিল যাদের এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার সুযোগ দেওয়া হবে এমন এক পরিস্থিতিতে যা ঈশ্বরের আদি উদ্দেশ্যকে পরিপূর্ণ করবে। সেই প্রাথমিক বাইবেল ছাত্রেরা বুঝতে পেরেছিল যে এই অপর মেষের অন্তর্ভুক্ত হল এমন কিছু লোক যারা যীশুর পার্থিব পরিচর্যার আগে বেঁচে ছিল ও যাদের মৃত্যুও হয় সেই সময়। কিন্তু, এর মধ্যে কিছু গভীর তথ্য ছিল যা তারা সঠিকভাবে বুঝতে পারেনি; উদাহরণস্বরূপ তারা ভেবেছিল যে সমস্ত অভিষিক্তরা তাদের স্বর্গীয় পুরস্কার পাওয়ার পর অপর মেষদের সংগ্রহ করার কাজ শুরু হবে। তথাপি, এই বিষয়টি তারা অবশ্যই উপলব্ধি করতে পেরেছিল যে কেবল মাত্র পরজাতীয় খ্রীষ্টানেরাই অপর মেষের অন্তর্ভুক্ত নয়। অপর মেষের অংশ হওয়ার সুযোগ যিহূদী ও পরজাতীয় উভয়ের কাছে এবং সমস্ত দেশ ও জাতির লোকেদের কাছে খোলা রয়েছে।—তুলনা করুন প্রেরিত ১০:৩৪, ৩৫.
১০. আমরা যদি চাই তাদের অন্তর্ভুক্ত হতে যাদের যীশু অপর মেষ হিসাবে গণ্য করেন, তাহলে আমাদের ক্ষেত্রে কোন্ বিষয়টি সত্য হওয়া উচিত?
১০ যীশুর দেওয়া বর্ণনার সাথে সামঞ্জস্য রাখতে হলে, অপর মেষের অন্তর্ভুক্ত লোকেদের অবশ্যই, বংশ অথবা জাতিগত পটভূমিকা ব্যতিরেকে, যীশু খ্রীষ্টকে উত্তম মেষপালক হিসাবে স্বীকার করতে হবে। এর সাথে কী জড়িয়ে আছে? তারা অবশ্যই পরিচালিত হওয়ার জন্য নম্রতা ও ইচ্ছামূলক গুণ প্রতিফলিত করবে, যা মেষেদের এক অন্যতম বৈশিষ্ট্য। (গীতসংহিতা ৩৭:১১) ঠিক ক্ষুদ্র মেষপালদের মতো তাদেরও সেই রকম লোক হতে হবে যারা “তাঁহার [উত্তম মেষপালকের] রব জানে” এবং অন্যেরা যারা তাদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে তাদের দ্বারা তারা নিজেদের কখনও পরিচালিত হতে দেবে না। (যোহন ১০:৪; ২ যোহন ৯, ১০) তাঁর মেষেদের জন্য যীশু নিজের প্রাণ দেওয়ার দ্বারা যা করেছেন তার গুরুত্বকে অবশ্যই তাদের উপলব্ধি করতে হবে এবং সেই ব্যবস্থার উপরে সম্পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। (প্রেরিত ৪:১২) তাদের অবশ্যই উত্তম মেষ পালকের রব “শুনতে” হবে যখন তিনি তাদের যিহোবার উদ্দেশ্যে পবিত্র সেবা করতে, রাজ্যকে প্রথম স্থান দিতে, জগৎ থেকে আলাদা থাকতে এবং পরস্পরের প্রতি আত্মত্যাগমূলক প্রেম প্রদর্শন করতে উদ্দীপ্ত করেন। (মথি ৪:১০; ৬:৩১-৩৩; যোহন ১৫:১২, ১৩, ১৯) যীশু যাদের অপর মেষ হিসাবে গণ্য করেন আপনি কি সেই বর্ণনা অনুসারে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারছেন? আপনি কি তা চান? যারা প্রকৃতপক্ষে যীশুর অপর মেষ হয় তারা কতই না এক দুর্লভ সম্পর্কের অধিকারী হতে পারে!
রাজ্যের কর্তৃত্বের প্রতি সম্মান
১১. (ক) তাঁর উপস্থিতির চিহ্ন সম্বন্ধে বলতে গিয়ে যীশু মেষ ও ছাগ সম্বন্ধে কী বলেন? (খ) যীশুর ভাইরা কারা যাদের কথা তিনি উল্লেখ করেন?
১১ পূর্বোক্ত দৃষ্টান্ত দেওয়ার বেশ কিছু মাস পর, যীশু আবার যিরূশালেমে আসেন। জৈতুন পর্বতের উপরে বসে মন্দিরের স্থানটি লক্ষ্য করার সময়, তিনি তাঁর শিষ্যদেরকে ‘তাঁর উপস্থিতির এবং যুগান্তের চিহ্ন’ সম্বন্ধে পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য দেন। (মথি ২৪:৩) তিনি আবার মেষেদের সংগ্রহ করার কথা বলেন। অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে, তিনি এও বলেন: “আর যখন মনুষ্যপুত্র সমুদয় দূত সঙ্গে করিয়া আপন প্রতাপে আসিবেন, তখন তিনি নিজ প্রতাপের সিংহাসনে বসিবেন। আর সমুদয় জাতি তাঁহার সম্মুখে একত্রীকৃত হইবে; পরে তিনি তাহাদের একজন হইতে অন্যজনকে পৃথক্ করিবেন, যেমন পালরক্ষক ছাগ হইতে মেষ পৃথক্ করে; আর তিনি মেষদিগকে আপনার দক্ষিণদিকে ও ছাগদিগকে বামদিকে রাখিবেন।” এই উপমাটিতে, যীশু দেখান যে যাদের উপর রাজা দৃষ্টি দেবেন তারা তাঁর “ভ্রাতৃগণের” প্রতি যে ধরনের আচরণ দেখাবে তার ভিত্তিতে বিচারিত হবে। (মথি ২৫:৩১-৪৬) এই ভাইরা কারা? এরা হল আত্মায়-জাত খ্রীষ্টান অতএব “ঈশ্বরের পুত্র”। যীশু হলেন ঈশ্বরের প্রথমজাত পুত্র। তাই তারা হল খ্রীষ্টের ভাই। তারা হল “আমাদের ঈশ্বরের দাসগণ” যাদের কথা প্রকাশিত বাক্য ৭:৩, পদে উল্লেখ করা হয়েছে, যাদের সমগ্র মানবজাতির থেকে বেছে নেওয়া হয়েছে খ্রীষ্টের সাথে তাঁর স্বর্গীয় রাজ্যের অংশীদার হতে।—রোমীয় ৮:১৪-১৭.
১২. খ্রীষ্টের ভাইদের প্রতি লোকেরা যে ধরণের আচরণ করে তা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
১২ অন্যান্য মানুষেরা যেভাবে এই রাজ্যের উত্তরাধিকারীদের সাথে ব্যবহার করে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যীশু খ্রীষ্ট এবং যিহোবা ঈশ্বর যেভাবে তাদের দেখেন আপনিও কি তাদের সেইভাবে দেখেন? (মথি ২৪:৪৫-৪৭; ২ থিষলনীকীয় ২:১৩) এই অভিষিক্তদের প্রতি একজন ব্যক্তির মনোভাব প্রতিফলিত করে যীশু খ্রীষ্ট ও তাঁর পিতার, মহাবিশ্বের সার্বভৌমত্বের প্রতি তার মনোভাব কেমন।—মথি ১০:৪০; ২৫:৩৪-৪৬.
১৩. ১৮৮৪ সালে বাইবেল ছাত্রেরা মেষ ও ছাগ সম্বন্ধীয় দৃষ্টান্তটি কতদূর বুঝতে পেরেছিল?
১৩ আগস্ট ১৮৮৪, সালের প্রহরীদুর্গ (ইংরাজি) সংস্করণ সঠিকভাবে বলেছিল যে এই দৃষ্টান্তে উল্লেখিত “মেষ” হল সেই ব্যক্তিবিশেষেরা যারা পৃথিবীতে সিদ্ধ জীবনের সম্ভাবনাকে তাদের সামনে স্থিরভাবে ধরে রাখবে। এটাও বোঝা গিয়েছিল যে এই দৃষ্টান্তটির প্রয়োগ ঘটবে যখন খ্রীষ্ট তাঁর মহিমান্বিত স্বর্গীয় সিংহাসন থেকে রাজত্ব করবেন। তবুও, সেই সময় তারা পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারেনি যে কখন তিনি পৃথকীকরণ কাজ শুরু করবেন যা সেই দৃষ্টান্তে বর্ণিত হয়েছে অথবা কতদিন ধরে এই কাজ চলবে।
১৪. ১৯২৩ সালের সম্মেলন কিভাবে বাইবেল ছাত্রদের উপলব্ধি করতে সাহায্য করেছে যে যীশুর ভাববাণীমূলক দৃষ্টান্ত কবে পরিপূর্ণতা লাভ করবে?
১৪ যাইহোক, ১৯২৩ সালে, একটি সম্মেলনের বক্তৃতায়, জে. এফ. রাদারফোর্ড তৎকালীন ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটির সভাপতি স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করে দেন মেষ ও ছাগের যে দৃষ্টান্তটি তার পরিপূর্ণতার সময়কাল সম্বন্ধে। কেন? অংশত, এর কারণ হল যে দৃষ্টান্তটি দেখায় যে রাজার ভাইরা—অন্ততপক্ষে কয়েকজন—তখনও পৃথিবীতে থাকবে। মানুষদের মধ্যে, কেবল মাত্র আত্মায়-জাত তাঁর অনুগামীদেরই প্রকৃতপক্ষে তাঁর ভাই হিসাবে সম্বোধন করা যেতে পারে। (ইব্রীয় ২:১০-১২) এরা সমগ্র হাজার বছর শাসনের সময় পৃথিবীতে থাকবে না যাতে করে যীশুর বর্ণনা অনুসারে লোকেরা তাদের প্রতি উত্তম ব্যবহার করার সুযোগ পেতে পারে।—প্রকাশিত বাক্য ২০:৬.
১৫. (ক) আর কোন্ ঘটনাবলী বাইবেল ছাত্রদের সাহায্য করেছে সঠিকভাবে যীশুর দেওয়া দৃষ্টান্তে মেষেদের পরিচয় শনাক্ত করতে? (খ) রাজ্যের প্রতি তাদের উপলব্ধিবোধকে মেষেরা কিভাবে প্রদর্শন করেছে?
১৫ ১৯২৩, সালের সেই বক্তৃতায়, তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হয়েছিল যাদের মেষ ও ছাগ সম্বন্ধীয় প্রভুর বর্ণনার সাথে মিল থাকবে, কিন্তু এই দৃষ্টান্তটির সম্পূর্ণ নিহিতার্থ স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করার আগে অন্যান্য বিষয়গুলি বোঝার বিশেষ প্রয়োজন ছিল। পরবর্তী বছরগুলিতে, যিহোবা এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিকে ক্রমান্বয়িকভাবে তাঁর দাসেদের দৃষ্টির গোচরে এনেছেন। এর ফলে স্পষ্টভাবে, ১৯২৭ সালে, বোঝা গিয়েছিল যে “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস” হল পৃথিবীতে আত্মায়-অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের সমগ্র গোষ্ঠী; এছাড়াও ১৯৩২ সালে উপলব্ধি করা হয়েছিল যে যিহোনাদব যেমন যেহূর সহবর্তী ছিলেন ঠিক তেমনি যিহোবার অভিষিক্ত দাসেদের সাথে নির্ভীক ও নিবিড়ভাবে সহভাগিতার প্রয়োজন আছে। (মথি ২৪:৪৫; ২ রাজাবলি ১০:১৫) সেই সময় প্রকাশিত বাক্য ২২:১৭ পদের ভিত্তিতে, এই মেষতুল্য ব্যক্তিদের নির্দিষ্টভাবে উৎসাহ দেওয়া হয় অপরের কাছে রাজ্যের সংবাদ নিয়ে যেতে। মশীহ রাজ্যের প্রতি উপলব্ধিবোধ তাদের উদ্দীপিত করবে শুধুমাত্র প্রভুর অভিষিক্তদের প্রতি মানবিক দয়াই প্রদর্শন করতে নয় কিন্তু খ্রীষ্টের মাধ্যমে যিহোবার কাছে নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ করতে এবং তাঁর অভিষিক্তদের সাথে নিবিড়ভাবে মিশতে আর তারা যে কাজ করছে সেই কাজে উদ্যোগের সাথে অংশ নিতে। আপনি কি তা করছেন? যারা তা করছে, তাদের উদ্দেশ্যে রাজা বলবেন: “আইস, আমার পিতার আশীর্ব্বাদ-পাত্রেরা, জগতের পত্তনাবধি যে রাজ্য তোমাদের জন্য প্রস্তুত করা গিয়াছে, তাহার অধিকারী হও।” তাদের সামনে আছে রাজ্যের পার্থিব অঞ্চলে সিদ্ধ অনন্ত জীবনের এক মহান আশা।—মথি ২৫:৩৪, ৪৬.
“বিস্তর লোক”—তারা কোথায় যাচ্ছে?
১৬. (ক) প্রকাশিত বাক্য ৭:৯ পদে উল্লেখিত বিস্তর লোক অথবা বিস্তর লোকেদের পরিচয় সম্বন্ধে কোন্ ভুল ধারণা প্রাথমিক বাইবেল ছাত্রদের ছিল? (খ) কখন ও কিসের ভিত্তিতে তাদের এই ধারণাকে সংশোধন করা হয়?
১৬ কিছু সময় যাবৎ যিহোবার দাসেরা বিশ্বাস করত যে বিশাল জনতা (অথবা, বিস্তর লোক) যাদের কথা প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১০ পদে বলা হয়েছে তারা যোহন ১০:১৬ পদে উল্লেখিত অপর মেষ এবং মথি ২৫:৩৩ পদে বর্ণিত মেষেদের থেকে আলাদা। কারণ বাইবেল বলে যে তারা “সিংহাসনের সম্মুখে. . . দাঁড়াইয়া আছে,” এটা ভাবা হয়েছিল যে তারা স্বর্গে থাকবে, সিংহাসনে নয়, অর্থাৎ খ্রীষ্টের সাথে সহ দায়াদ হিসাবে তারা শাসন করবে না, কিন্তু সিংহাসনের সামনে তাদের এক গৌণ স্থান থাকবে। তারা এমন এক শ্রেনীর খ্রীষ্টান যাদের অপেক্ষাকৃতভাবে কম বিশ্বস্ত হিসাবে গণ্য করা হত, যারা প্রকৃত আত্মত্যাগমূলক মনোভাব দেখায়নি। ১৯৩৫ সালে এই দৃষ্টিভঙ্গির সংশোধন করা হয়।b মথি ২৫:৩১, ৩২ পদের পরিপ্রেক্ষিতে প্রকাশিত বাক্য ৭:৯ পদের পরীক্ষা, স্পষ্ট করে দেয় যে সেই লোকেরা এই পৃথিবীতে “সিংহাসনের সম্মুখে” দাঁড়াতে পারে। এছাড়া এও উল্লেখ করা হয় যে বিশ্বস্ততার ক্ষেত্রে ঈশ্বরের কোন দুইধরনের মান নেই। যাদের কাছে তাঁর অনুমোদন রয়েছে তাদের সকলকেই তাঁর প্রতি বিশ্বস্ততা বজায় রাখতে হবে।—মথি ২২:৩৭, ৩৮; লূক ১৬:১০.
১৭, ১৮. (ক) ১৯৩৫ সাল থেকে পৃথিবীতে যাদের অনন্তকাল বেঁচে থাকার আশা রয়েছে তাদের সংখ্যা কেন বৃদ্ধি পেয়েছে? (খ) এই বিস্তর লোক কোন্ গুরুত্বপূর্ণ কাজে উদ্যোগের সাথে অংশ নিচ্ছে?
১৭ অনেক বছর ধরে যিহোবার লোকেরা পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বলে আসছে। যেহেতু ১৯২০-র দশকে যা ঘটবে বলে তারা আশা করেছিল, সেই পরিপ্রেক্ষিতে তারা ঘোষণা করে “লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি যারা এখন জীবিত আছে তারা কখনও মরবে না” কিন্তু সেই সময় লক্ষ লক্ষ লোক জীবন সম্বন্ধীয় ঈশ্বরের ব্যবস্থাকে আলিঙ্গন করেনি। অধিকাংশ যারা সত্যকে গ্রহণ করেছিল, পবিত্র আত্মা তাদের মধ্যে স্বর্গীয় জীবনের আশা রোপণ করে। কিন্তু, বিশেষ করে ১৯৩৫ সালের পরে এক লক্ষ্যণীয় পরিবর্তন ঘটতে আরম্ভ করে। এটা নয় যে প্রহরীদুর্গ পৃথিবীতে অনন্ত জীবনের আশাকে উপেক্ষা করেছিল। কয়েক দশক ধরে যিহোবার দাসেরা এ সম্বন্ধে কথা বলে এসেছে এবং সেই সব ব্যক্তিদের খোঁজ করেছে যাদের বাইবেলে দেওয়া বর্ণনার সাথে মিল রয়েছে। কিন্তু যিহোবার নিরূপিত সময় ও তাঁর তত্ত্বাবধানে এরা নিজেরাই প্রকাশ পায়।
১৮ প্রাপ্ত রেকর্ড দেখায় যে অনেক বছর ধরে স্মরণার্থক সভায় উপস্থিতিদের মধ্যে অধিকাংশই সেই প্রতীক গ্রহণ করে এসেছে। কিন্তু ১৯৩৫ সালের পর থেকে ২৫ বছরের মধ্যে খ্রীষ্টের মৃত্যুর বার্ষিক স্মরণার্থক সভায় উপস্থিতির সংখ্যা, প্রতীক গ্রহণকারীদের সংখ্যার তুলনায় একশ গুণ বেশি বেড়ে দাঁড়ায়। এরা কারা? বিস্তর লোকেদের সম্ভাব্য সদস্যরা। স্পষ্টতই, তাদের সংগ্রহ করার ও আসন্ন মহাক্লেশ থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য তাদের প্রস্তুত করার যে যিহোবার নির্ধারিত সময় তা এসে গেছে। যেমন ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল তারা “প্রত্যেক জাতির ও বংশের ও প্রজাবৃন্দের ও ভাষার” থেকে এসেছে। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯) তারা উদ্যোগের সাথে সেই কাজে অংশ গ্রহণ করছে যার সম্বন্ধে যীশু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যখন তিনি বলেন: “আর সর্ব্ব জাতির কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত রাজ্যের এই সুসমাচার সমুদয় জগতে প্রচার করা যাইবে; আর তখন শেষ উপস্থিত হইবে।”—মথি ২৪:১৪.
[পাদটীকাগুলো]
a মে ১৫ ১৯৪৬ এবং জুলাই ১৫, ১৯৮০-র প্রহরীদুর্গ (ইংরাজি) দেখুন।
b প্রহরীদুর্গ, (ইংরাজি) আগস্ট ১ ও ১৫, ১৯৩৫.
আপনার মন্তব্য কী?
◻ প্রকাশিত বাক্য ৭ অধ্যায়ের দর্শনটি কেন বিশেষ আগ্রহের বিষয়?
◻ যোহন ১০:১৬ পদে উল্লেখিত অপর মেষ কেন শুধু মাত্র পরজাতীয় খ্রীষ্টানদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়?
◻ অপর মেষ সম্বন্ধে বাইবেলের বর্ণনার সাথে যাদের মিল থাকবে তাদের ক্ষেত্রে কোন্ বিষয়টি সত্য হওয়া উচিত?
◻ মেষ ও ছাগ সম্বন্ধীয় দৃষ্টান্তটি কিভাবে রাজ্যের কর্তৃত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে?
◻ কী ইঙ্গিত করে যে কখন যিহোবার সময় এসেছিল প্রকাশিত বাক্য ৭:৯ পদে উল্লেখিত বিস্তর লোককে একত্রিত করার?