ঈশতন্ত্রের সান্নিধ্যে থাকুন
“সদাপ্রভু আমাদের বিচারকর্ত্তা, সদাপ্রভু আমাদের ব্যবস্থাপক, সদাপ্রভু আমাদের রাজা।”—যিশাইয় ৩৩:২২.
১. কেন অধিকাংশ লোকেরা সরকার সম্বন্ধে ভেবে থাকেন?
সরকার এমন এক বিষয় যে সম্বন্ধে লোকেরা ভেবে থাকেন। ভাল সরকার শান্তি ও সমৃদ্ধি নিয়ে আসে। বাইবেল বলে: “রাজা ন্যায়বিচার দ্বারা দেশ সুস্থির করেন।” (হিতোপদেশ ২৯:৪) অপরদিকে, মন্দ সরকার অন্যায়, দুর্নীতি এবং দুর্দশা নিয়ে আসে। “দুষ্ট লোক কর্ত্তৃত্ব পাইলে প্রজারা আর্ত্তস্বর করে।” (হিতোপদেশ ২৯:২) ইতিহাসব্যাপী, মানুষেরা অনেক ধরনের সরকার নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন কিন্তু দুঃখের বিষয় যে সেগুলির শাসকদের অন্যায়ের কারণে প্রায়ই তারা ‘আর্ত্তস্বর করেছেন।’ (উপদেশক ৮:৯) কিন্তু, কোন ধরনের সরকার কি এর প্রজাদের জন্য স্থায়ী পরিতৃপ্তি আনার ক্ষেত্রে সফল হবে?
২. প্রাচীন ইস্রায়েলের সরকারকে কেন “ঈশতন্ত্র” বলা উপযুক্ত?
২ ইতিহাসবেত্তা যোসেফাস এক অদ্বিতীয় সরকারের বিষয়ে উল্লেখ করেন যখন তিনি লিখেছিলেন: “কিছু লোকেরা সর্বোচ্চ রাজনৈতিক ক্ষমতাকে রাজতন্ত্রের উপর, অন্যেরা নির্দিষ্ট শ্রেণীর লোকেদের দ্বারা গঠিত শাসনতন্ত্রের উপর, আর কিছুজন জনসাধারণের উপর সমর্পণ করেছেন। কিন্তু আমাদের আইনদাতা [মোশি] এই রাজনৈতিক সংগঠনগুলির কোনটি দ্বারাই প্রভাবিত হননি কিন্তু তিনি তার সংবিধানকে এমন কাঠামো প্রদান করেছিলেন যেটির জন্য—কেউ যদি কোন জোরালো অভিব্যক্তি ব্যবহার করেন—তবে হয়ত তাকে ‘ঈশতন্ত্র’ বলে আখ্যায়িত করা যেতে পারে, যেটির সমস্ত সার্বভৌমত্ব ও কর্তৃত্ব ঈশ্বরের হস্তে অর্পিত। (এগেইনস্ট অ্যাপিয়ন, ২য়, ১৬৪-৫) সংক্ষিপ্ত অক্সফোর্ড অভিধান (ইংরাজি) অনুসারে, ঈশতন্ত্রের অর্থ, “ঈশ্বরের দ্বারা গঠিত এক প্রকারের সরকার।” এই শব্দটি বাইবেলে নেই কিন্তু এটি যথার্থভাবে প্রাচীন ইস্রায়েলের সরকারকে বর্ণনা করে। ইস্রায়েলীয়দের যদিও একজন দৃশ্যত রাজা ছিল কিন্তু তাদের প্রকৃত শাসক ছিলেন যিহোবা। ইস্রায়েলীয় ভাববাদী যিশাইয় বলেছিলেন: “সদাপ্রভু আমাদের বিচারকর্ত্তা, সদাপ্রভু আমাদের ব্যবস্থাপক, সদাপ্রভু আমাদের রাজা।”—যিশাইয় ৩৩:২২.
প্রকৃত ঈশতন্ত্র কী?
৩, ৪. (ক) প্রকৃত ঈশতন্ত্র কী? (খ) খুব শীঘ্রই সমস্ত মানবজাতির জন্য ঈশতন্ত্র কোন্ আশীর্বাদগুলি আনবে?
৩ যোসেফাস যখন শব্দটিকে উদ্ভাবন করেছিলেন, তখন থেকে অনেক সম্প্রদায় ঈশতন্ত্র হিসাবে বর্ণিত হয়ে এসেছে। সেগুলির কয়েকটি অসহিষ্ণু, গোঁড়া এবং নিষ্ঠুর পীড়নকর হিসাবে আবির্ভূত হয়েছিল। সেগুলি কি প্রকৃত ঈশতন্ত্র ছিল? যোসেফাস যে অর্থে শব্দটিকে ব্যবহার করেছিলেন, সেই অর্থে ছিল না। সমস্যাটি হল এই যে “ঈশতন্ত্র” শব্দের অর্থটি প্রসারিত হয়েছে। ওয়ার্ল্ড বুক এনসাইক্লোপিডিয়া এটিকে এইভাবে সংজ্ঞায়িত করে, “এমন এক ধরনের সরকার যেখানে একজন যাজক অথবা যাজকগোষ্ঠী কর্তৃক রাষ্ট্র শাসিত হয় এবং যেখানে রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় বিষয়গুলির উপর যাজকবর্গের সদস্যদের কর্তৃত্ব রয়েছে।” কিন্তু প্রকৃত ঈশতন্ত্র যাজকদের নিয়ে গঠিত কোন সরকার নয়। প্রকৃতপক্ষে এটি ঈশ্বরের শাসন, নিখিলবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা যিহোবা ঈশ্বরের সরকার।
৪ খুব শীঘ্রই সমগ্র পৃথিবী ঈশতন্ত্রের অধীনে আসবে এবং কী এক আশীর্বাদই না তা হবে! “ঈশ্বর আপনি [মানবজাতির] সঙ্গে থাকিবেন, . . . আর তিনি তাহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না; কারণ প্রথম বিষয় সকল লুপ্ত হইল।” (প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪) অসিদ্ধ মানুষদের কোন যাজকীয় শাসনই এইধরনের সুখ আনতে পারেনি। একমাত্র ঈশ্বরের শাসনই পারে। তাই, সত্য খ্রীষ্টানেরা রাজনৈতিক কার্যকলাপের মাধ্যমে ঈশতন্ত্র নিয়ে আসার চেষ্টা করেন না। তারা ঈশ্বরের জন্য ধৈর্যপূর্বক অপেক্ষা করেন যে তিনি তাঁর নিজস্ব সময়ে এবং নিজস্ব পথে জগদ্ব্যাপী এক ঈশতন্ত্র স্থাপন করবেন।—দানিয়েল ২:৪৪.
৫. আজকে প্রকৃত ঈশতন্ত্র কোথায় সক্রিয় রয়েছে আর এই সম্বন্ধে কোন্ প্রশ্নগুলি উত্থাপিত হয়?
৫ কিন্তু এই সময়েও এক প্রকৃত ঈশতন্ত্র সক্রিয় রয়েছে। কোথায়? তাদের মাঝে যারা স্বেচ্ছায় ঈশ্বরের শাসনের বশীভূত হন এবং তাঁর ইচ্ছা পালন করার জন্য একত্রে কাজ করেন। এইধরনের বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা বিশ্বব্যাপী এক আধ্যাত্মিক “জাতি” হিসাবে এর আধ্যাত্মিক ‘দেশে’ একত্রিত হয়েছেন। তারা হলেন “ঈশ্বরের ইস্রায়েলের” অবশিষ্টাংশ এবং তাদের ৫৫ লক্ষেরও বেশি খ্রীষ্টীয় সহযোগী রয়েছেন। (যিশাইয় ৬৬:৮; গালাতীয় ৬:১৬) তারা “যুগপর্য্যায়ের রাজা” যিহোবা ঈশ্বরের দ্বারা সিংহাসনে অধিষ্ঠিত স্বর্গীয় রাজা যীশু খ্রীষ্টের প্রতি বশীভূত। (১ তীমথিয় ১:১৭; প্রকাশিত বাক্য ১১:১৫) কোন্ অর্থে এই সংগঠনটি ঈশতান্ত্রিক? এর সদস্যেরা জাগতিক সরকারের কর্তৃত্বকে কোন্ দৃষ্টিতে দেখেন? আর কিভাবে সেই মানুষেরা ঈশতন্ত্রের নীতি বজায় রাখেন যারা তাদের আধ্যাত্মিক জাতির মধ্যে কর্তৃত্ব করেন?
এক ঈশতান্ত্রিক সংগঠন
৬. একটি দৃশ্যত মানব সংগঠন কিভাবে ঈশ্বরের দ্বারা শাসিত হতে পারে?
৬ একটি মানব সংগঠন কিভাবে যিহোবার দ্বারা শাসিত হতে পারে যিনি অদৃশ্য স্বর্গে বাস করেন? (গীতসংহিতা ১০৩:১৯) এটি সম্ভব কারণ যারা এর সঙ্গে যুক্ত তারা অনুপ্রাণিত পরামর্শ অনুসরণ করেন: “তুমি সমস্ত চিত্তে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস কর; তোমার নিজ বিবেচনায় নির্ভর করিও না।” (হিতোপদেশ ২:৬; ৩:৫) তারা তাদের শাসন করার জন্য ঈশ্বরকে অনুমোদন করেন কারণ তারা “খ্রীষ্টের ব্যবস্থা” পালন করেন এবং তাদের প্রাত্যহিক জীবনে অনুপ্রাণিত বাইবেলের নীতিগুলি প্রয়োগ করেন। (গালাতীয় ৬:২; ১ করিন্থীয় ৯:২১; ২ তীমথিয় ৩:১৬. মথি ৫:২২, ২৮, ৩৯; ৬:২৪, ৩৩; ৭:১২, ২১ পদগুলি দেখুন।) এটি করার জন্য তাদের বাইবেলের ছাত্র হতে হবে। (গীতসংহিতা ১:১-৩) প্রাচীনকালের “ভদ্র” বিরয়াবাসীদের মত তারা মানুষদের অনুসরণ করেন না কিন্তু যে বিষয়গুলি শিখছেন বাইবেল থেকে নিয়মিত তার সত্যতা যাচাই করেন। (প্রেরিত ১৭:১০, ১১; গীতসংহিতা ১১৯:৩৩-৩৬) তারা গীতরচকের মত প্রার্থনা করেন: “উত্তম বিচার ও জ্ঞান আমাকে শিখাও, কেননা আমি তোমার আজ্ঞাসমূহে বিশ্বাস করিয়া আসিতেছি।”—গীতসংহিতা ১১৯:৬৬.
৭. ঈশতন্ত্রে তত্ত্বাবধানের ধারাটি কী?
৭ প্রতিটি সংগঠনেই এমন কিছু ব্যক্তি থাকেন যারা কর্তৃত্ব করেন অথবা নির্দেশনা প্রদান করেন। যিহোবার সাক্ষীরা এর ব্যতিক্রম নন এবং তারা প্রেরিত পৌলের দ্বারা উল্লেখিত কর্তৃত্বের কাঠামো অনুসরণ করেন: “প্রত্যেক পুরুষের মস্তকস্বরূপ খ্রীষ্ট, এবং স্ত্রীর মস্তকস্বরূপ পুরুষ, আর খ্রীষ্টের মস্তকস্বরূপ ঈশ্বর।” (১ করিন্থীয় ১১:৩) এর সঙ্গে সংগতি রেখে, কেবল যোগ্য পুরুষেরাই মণ্ডলীতে প্রাচীন হিসাবে সেবা করেন। আর যদিও যীশু—“প্রত্যেক পুরুষের মস্তকস্বরূপ”—স্বর্গে আছেন কিন্তু তাঁর অভিষিক্ত ভাইদের ‘অবশিষ্ট লোকেরা’ এখনও পৃথিবীতে রয়েছেন যাদের তাঁর সঙ্গে স্বর্গে শাসন করার আশা রয়েছে। (প্রকাশিত বাক্য ১২:১৭; ২০:৬) তারা যৌথ “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস” গঠন করেন। সেই ‘দাসের’ তত্ত্বাবধান মেনে নেওয়ার দ্বারা খ্রীষ্টানেরা যীশুর প্রতি এবং সেইসঙ্গে যীশুর মস্তক যিহোবার প্রতি তাদের বশ্যতা প্রদর্শন করেন। (মথি ২৪:৪৫-৪৭; ২৫:৪০) এইভাবে ঈশতন্ত্র সুবিন্যস্ত। “ঈশ্বর গোলযোগের ঈশ্বর নহেন, কিন্তু শান্তির।”—১ করিন্থীয় ১৪:৩৩.
৮. ঈশতন্ত্রের নীতিকে খ্রীষ্টীয় প্রাচীনেরা কিভাবে সমর্থন করেন?
৮ খ্রীষ্টীয় প্রাচীনেরা ঈশতন্ত্রের নীতিকে সমর্থন করেন কারণ তারা উপলব্ধি করেন যে তাদের সীমিত কর্তৃত্ব তারা যেভাবে ব্যবহার করেন তার জন্য তারা ঈশ্বরের নিকট নিকাশ দিতে বাধ্য। (ইব্রীয় ১৩:১৭) আর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তারা নিজেদের নয় বরং ঈশ্বরের প্রজ্ঞার উপর নির্ভর করেন। এই ক্ষেত্রে তারা যীশুর উদাহরণ অনুকরণ করেন। তিনি ছিলেন সর্বকালের সর্বাপেক্ষা জ্ঞানী ব্যক্তি। (মথি ১২:৪২) তাসত্ত্বেও, তিনি যিহূদীদের বলেছিলেন: “পুত্ত্র আপনা হইতে কিছুই করিতে পারেন না, কেবল পিতাকে যাহা করিতে দেখেন, তাহাই করেন।” (যোহন ৫:১৯) প্রাচীনদের রাজা দায়ূদের মত একই মনোভাব রয়েছে। তিনি ঈশতন্ত্রে এক দায়িত্বশীল কর্তৃত্ব অনুশীলন করেছিলেন। তথাপি তিনি নিজের নয় কিন্তু যিহোবার পথ অনুসরণ করতে চেয়েছিলেন। তিনি প্রার্থনা করেছিলেন: “সদাপ্রভু, তোমার পথ আমাকে শিখাও, সমান পথে আমাকে গমন করাও।”—গীতসংহিতা ২৭:১১.
৯. ঈশতন্ত্রে বিভিন্ন আশা এবং পরিচর্যার বিভিন্ন সুযোগ সম্বন্ধে, উৎসর্গীকৃত খ্রীষ্টানদের কোন্ ভারসাম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে?
৯ কেউ কেউ প্রশ্ন করেছেন, এটি কি ঠিক যে মণ্ডলীতে কেবল যোগ্য পুরুষেরাই কর্তৃত্ব করবেন অথবা কেবল কিছু খ্রীষ্টানদের স্বর্গীয় আশা আছে আর অন্যান্যদের আশা পার্থিব। (গীতসংহিতা ৩৭:২৯; ফিলিপীয় ৩:২০) কিন্তু উৎসর্গীকৃত খ্রীষ্টানেরা উপলব্ধি করেন যে এই ব্যবস্থাগুলি ঈশ্বরের বাক্যে উল্লেখ করা রয়েছে। এগুলি ঈশতান্ত্রিক। এই সম্বন্ধে সাধারণত তারাই প্রশ্ন করেন যারা বাইবেলের নীতিগুলি উপলব্ধি করেন না। এছাড়াও, খ্রীষ্টানেরা জানেন যে পরিত্রাণ পাওয়ার ক্ষেত্রে, নারী ও পুরুষ সকলে যিহোবার চোখে সমান। (গালাতীয় ৩:২৮) নিখিলবিশ্বের সার্বভৌম কর্তার উপাসক হওয়া, সত্য খ্রীষ্টানদের জন্য সম্ভাব্য সর্বোত্তম সুযোগ এবং যিহোবা তাদের জন্য যে ভূমিকাই নির্ধারণ করুন না কেন, তা পূর্ণ করতে তারা আনন্দিত। (গীতসংহিতা ৩১:২৩; ৮৪:১০; ১ করিন্থীয় ১২:১২, ১৩, ১৮) এছাড়াও, অনন্ত জীবন তা স্বর্গে বা পৃথিবীতে যেখানেই হোক না কেন, প্রকৃতই এক চমৎকার প্রত্যাশা।
১০. (ক) যোনাথন কোন্ উত্তম মনোভাব প্রদর্শন করেছিলেন? (খ) আজকে খ্রীষ্টানেরা কিভাবে যোনাথনের মত মনোভাব প্রদর্শন করেন?
১০ অতএব, যিহোবার সাক্ষীরা রাজা শৌলের ঈশ্বর-ভয়শীল পুত্র যোনাথনের মত। যোনাথন সম্ভবত এক চমৎকার রাজা হতেন। কিন্তু শৌলের অবিশ্বস্ততার কারণে, যিহোবা ইস্রায়েলের দ্বিতীয় রাজা হিসাবে দায়ূদকে মনোনীত করেছিলেন। এর ফলে যোনাথন কি বিরক্ত হয়েছিলেন? না। তিনি দায়ূদের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়েছিলেন এবং এমনকি শৌলের হাত থেকে তাকে রক্ষাও করেছিলেন। (১ শমূয়েল ১৮:১; ২০:১-৪২) অনুরূপভাবে, পার্থিব আশাসম্পন্ন ব্যক্তিরাও যাদের স্বর্গীয় আশা রয়েছে তাদের প্রতি ঈর্ষাপরায়ণ নন। আর মণ্ডলীতে যারা ঈশতান্ত্রিক কর্তৃত্বে রয়েছেন তাদের প্রতি সত্য খ্রীষ্টানেরা ঈর্ষাপরায়ণ নন। পরিবর্তে, তাদের আধ্যাত্মিক ভাইবোনদের জন্য তাদের কঠোর পরিশ্রমকে উপলব্ধি করে তারা “তাঁহাদিগকে প্রেমে অতিশয় সমাদর” করেন।—১ থিষলনীকীয় ৫:১২, ১৩.
জাগতিক শাসনের প্রতি ঈশতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি
১১. ঈশতান্ত্রিক শাসনের প্রতি বশ্যতা স্বীকারকারী খ্রীষ্টানেরা জাগতিক কর্তৃপক্ষদের কোন্ দৃষ্টিতে দেখেন?
১১ যিহোবার সাক্ষীরা যদি ঈশতন্ত্রের অর্থাৎ ঈশ্বরের শাসনের অধীনে থাকেন, তাহলে জাতীয় শাসকদের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন? যীশু বলেছিলেন যে তাঁর অনুসারীরা “জগতের নয়।” (যোহন ১৭:১৬) কিন্তু, খ্রীষ্টানেরা “কৈসরের” অর্থাৎ জাগতিক সরকারের প্রতি তাদের ঋণ স্বীকার করেন। যীশু বলেছিলেন যে তাদের “কৈসরের যাহা যাহা, কৈসরকে . . . আর ঈশ্বরের যাহা যাহা, ঈশ্বরকে” দিতে হবে। (মথি ২২:২১) বাইবেল অনুসারে, মানব সরকারগুলি “ঈশ্বরনিযুক্ত।” সমস্ত কর্তৃত্বের উৎস, যিহোবা সরকারগুলিকে থাকতে অনুমতি দেন এবং তিনি আশা করেন যে তারা তাদের শাসনাধীনের ব্যক্তিদের মঙ্গল করবেন। যখন তারা তা করেন তখন তারা “ঈশ্বরেরই পরিচারক।” খ্রীষ্টানেরা যে দেশে বাস করেন সেখানকার সরকারের প্রতি তারা “[তাদের] সংবেদেরও নিমিত্ত” বশীভূত হন। (রোমীয় ১৩:১-৭) অবশ্য, রাষ্ট্র যদি ঈশ্বরের আইনের বিপরীত কোন কিছু দাবি করে, তবে খ্রীষ্টানেরা “মনুষ্যদের অপেক্ষা বরং ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন” করবেন।—প্রেরিত ৫:২৯.
১২. খ্রীষ্টানেরা যখন কর্তৃপক্ষদের দ্বারা তাড়িত হন, তখন তারা কার উদাহরণ অনুসরণ করেন?
১২ সত্য খ্রীষ্টানেরা যদি সরকারি কর্তৃপক্ষদের দ্বারা তাড়িত হন, তবে সেই সম্বন্ধে কী বলা যায়? তখন তারা প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের উদাহরণ অনুসরণ করেন, যারা নির্মম তাড়নার সময় ভোগ করেছিলেন। (প্রেরিত ৮:১; ১৩:৫০) বিশ্বাসের এই পরীক্ষাগুলি অপ্রত্যাশিত ছিল না, কারণ যীশু সতর্ক করেছিলেন যে সেগুলি ঘটবে। (মথি ৫:১০-১২; মার্ক ৪:১৭) কিন্তু, ওই প্রাথমিক খ্রীষ্টানেরা তাদের তাড়নাকারীদের সমুচিত প্রতিফল দেননি; কিংবা চাপের মধ্যে তাদের বিশ্বাসও দুর্বল হয়ে পড়েনি। পরিবর্তে, তারা যীশুর উদাহরণ অনুকরণ করেছিলেন: “তিনি নিন্দিত হইলে প্রতিনিন্দা করিতেন না; দুঃখভোগ কালে তর্জ্জন করিতেন না, কিন্তু যিনি ন্যায় অনুসারে বিচার করেন, তাঁহার উপর ভার রাখিতেন।” (১ পিতর ২:২১-২৩) হ্যাঁ, শয়তানের প্ররোচনার বিপরীতে খ্রীষ্টীয় নীতি বিজয় লাভ করেছিল।—রোমীয় ১২:২১.
১৩. যিহোবার সাক্ষীদের বিরুদ্ধে তাড়না ও অপবাদমূলক প্রচারাভিযানের প্রতি তারা কিভাবে সাড়া দিয়েছেন?
১৩ আজকেও একই বিষয় সত্য। এই শতাব্দীতে যিহোবার সাক্ষীরা উৎপীড়ক শাসকদের দ্বারা তাড়না ভোগ করেছেন—ঠিক যেমন যীশু ভাববাণী করেছিলেন। (মথি ২৪:৯, ১৩) কিছু দেশে সেই লোকেরা এই অকৃত্রিম সাক্ষীদের সম্বন্ধে মিথ্যা রটান ও তাদের ভুলভাবে উপস্থিত করেন যারা তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে চাপ দিয়ে থাকেন। কিন্তু, এইধরনের “অখ্যাতি” সত্ত্বেও, সাক্ষীরা তাদের উত্তম আচরণের দ্বারা নিজেদের ঈশ্বরের পরিচারক হবার যোগ্যপাত্র হিসাবে দেখান। (২ করিন্থীয় ৬:৪, ৮) যখন সম্ভব হয়, তারা তাদের মামলাটি সরকারি আধিকারিক এবং দেশের আদালতে উপস্থাপন করেন, যেন তারা যে নির্দোষ তা প্রমাণ করা যায়। সুসমাচারের পক্ষসমর্থনের জন্য তাদের সম্মুখে যত উপায় খোলা থাকে, সেগুলির সমস্তই তারা ব্যবহার করেন। (ফিলিপীয় ১:৭) কিন্তু বৈধভাবে সমস্ত কিছু সম্পন্ন করার পর, তারা বিষয়গুলিকে যিহোবার হাতে ছেড়ে দেন। (গীতসংহিতা ৫:৮-১২; হিতোপদেশ ২০:২২) প্রয়োজনে, প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের মত ধার্মিকতার জন্য দুঃখভোগ করতে তারা ভীত নন।—১ পিতর ৩:১৪-১৭; ৪:১২-১৪, ১৬.
ঈশ্বরের গৌরবকে প্রথমে রাখুন
১৪, ১৫. (ক) ঈশতন্ত্রের নীতি সমর্থনকারী ব্যক্তিদের মুখ্য বিষয়টি কী? (খ) কোন্ উপলক্ষে শলোমন তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে তার পদের ক্ষেত্রে নম্রতার এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন?
১৪ যীশু যখন তাঁর অনুসারীদের প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন, প্রথমে যে বিষয়টি তিনি উল্লেখ করেছিলেন তা ছিল যিহোবার নামকে পবিত্র করা। (মথি ৬:৯) এর সঙ্গে সংগতি রেখে, যারা ঈশতন্ত্রের অধীনে বাস করেন তারা তাদের নিজেদের নয় বরং ঈশ্বরের গৌরব করার চেষ্টা করেন। (গীতসংহিতা ২৯:১, ২) বাইবেল বিবৃতি দেয় যে প্রথম শতাব্দীতে এই বিষয়টি কিছুজন যারা যীশুকে অনুসরণ করতে অস্বীকার করেছিলেন তাদের জন্য বিঘ্নস্বরূপ হয়েছিল, কারণ তারা “মনুষ্যদের কাছে গৌরব অধিক ভাল বাসিত,” অর্থাৎ তারা মানুষদের দ্বারা গৌরবান্বিত হওয়াকে পছন্দ করত। (যোহন ১২:৪২, ৪৩) বাস্তবিক পক্ষে, একজনের নিজ গৌরবের অগ্রে যিহোবাকে রাখার জন্য নম্রতার প্রয়োজন।
১৫ এই ক্ষেত্রে শলোমন এক উত্তম মনোভাব দেখিয়েছিলেন। শলোমনের নির্মিত চমৎকার মন্দিরটি উৎসর্গের সময় তার বাক্যগুলিকে, নবূখদ্নিৎসরের নির্মাণ কৃতিত্ব সংক্রান্ত বাক্যগুলির সঙ্গে তুলনা করুন। অত্যন্ত অহংকারীভাবে নবূখদ্নিৎসর গর্ব করেছিলেন: “এ কি সেই মহতী বাবিল নয়, যাহা আমি আপন বলের প্রভাবে ও আপন প্রতাপের মহিমার্থে রাজধানী করিবার জন্য নির্ম্মাণ করিয়াছি?” (দানিয়েল ৪:৩০) বিপরীতে শলোমন বিনয়ীভাবে তার সম্পাদিত কার্যকে এই বলে নিচু স্থানে রেখেছিলেন: “ঈশ্বর কি সত্য সত্যই পৃথিবীতে মনুষ্যের সহিত বাস করিবেন? দেখ, স্বর্গ ও স্বর্গের স্বর্গ তোমাকে ধারণ করিতে পারে না, তবে আমার নির্ম্মিত এই গৃহ কি পারিবে?” (২ বংশাবলি ৬:১৪, ১৫, ১৮; গীতসংহিতা ১২৭:১) শলোমন নিজেকে মহিমান্বিত করেননি। তিনি জানতেন যে তিনি যিহোবার একজন সামান্য প্রতিনিধি, তাই তিনি লিখেছিলেন: “অহঙ্কার আসিলে অপমানও আইসে; কিন্তু প্রজ্ঞাই নম্রদিগের সহচরী।”—হিতোপদেশ ১১:২.
১৬. প্রাচীনেরা নিজেদের গৌরবান্বিত না করে কিভাবে এক প্রকৃত আশীর্বাদ হিসাবে প্রমাণিত হয়েছেন?
১৬ অনুরূপভাবে, খ্রীষ্টীয় প্রাচীনেরা নিজেদের নয় বরং যিহোবাকে গৌরবান্বিত করেন। তারা পিতরের পরামর্শ অনুসরণ করেন: “যদি কেহ . . . পরিচর্য্যা করে, সে ঈশ্বর-দত্ত শক্তি অনুসারে করুক; যেন সর্ব্ববিষয়ে যীশু খ্রীষ্টের দ্বারা ঈশ্বর গৌরবান্বিত হন।” (১ পিতর ৪:১১) প্রেরিত পৌল ‘অধ্যক্ষপদকে’ খ্যাতির কোন গুরুত্বপূর্ণ পদ হিসাবে বর্ণনা করেননি কিন্তু “উত্তম কার্য্য” হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন। (১ তীমথিয় ৩:১) প্রাচীনেরা সেবা করার জন্য নিযুক্ত হয়েছেন, শাসন করার জন্য নয়। তারা ঈশ্বরের পালের শিক্ষক এবং পালক। (প্রেরিত ২০:২৮; যাকোব ৩:১) নম্র, আত্মত্যাগী প্রাচীনেরা মণ্ডলীর জন্য প্রকৃতই আশীর্বাদস্বরূপ। (১ পিতর ৫:২, ৩) “এই প্রকার লোকদিগকে সমাদর” করুন এবং যিহোবাকে ধন্যবাদ দিন যে তিনি এই “শেষ কালে” ঈশতন্ত্রকে উন্নীত করার জন্য অনেক যোগ্য প্রাচীনদের প্রদান করেছেন।—ফিলিপীয় ২:২৯; ২ তীমথিয় ৩:১.
“ঈশ্বরের অনুকারী হও”
১৭. যারা ঈশতন্ত্রের অধীনে রয়েছেন তারা কোন্ উপায়ে ঈশ্বরকে অনুকরণ করেন?
১৭ প্রেরিত পৌল আহ্বান জানিয়েছিলেন: “প্রিয় বৎসদের ন্যায় তোমরা ঈশ্বরের অনুকারী হও।” (ইফিষীয় ৫:১) যারা নিজেদের ঈশতন্ত্রের বশীভূত করেন তারা অসিদ্ধ মানুষ হিসাবে যতটুকু সম্ভব ঈশ্বরের মত হওয়ার চেষ্টা করে থাকেন। উদাহরণস্বরূপ, যিহোবার সম্বন্ধে বাইবেল বলে: “তিনি শৈল, তাঁহার কর্ম্ম সিদ্ধ, কেননা তাঁহার সমস্ত পথ ন্যায্য; তিনি বিশ্বাস্য ঈশ্বর, তাঁহাতে অন্যায় নাই; তিনিই ধর্ম্মময় ও সরল।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৩, ৪) এই ক্ষেত্রে ঈশ্বরকে অনুকরণ করার জন্য খ্রীষ্টানেরা বিশ্বস্ততা, ধার্মিকতা এবং এক ভারসাম্যপূর্ণ ন্যায্য বিচার রক্ষার চেষ্টা করেন। (মীখা ৬:৮; ১ থিষলনীকীয় ৩:৬; ১ যোহন ৩:৭) জগতে অনুমোদিত এমন অনেক বিষয় যেমন, অনৈতিকতা, অর্থলালসা এবং লোভ এই বিষয়গুলিকে তারা এড়িয়ে চলেন। (ইফিষীয় ৫:৫) যেহেতু যিহোবার সেবকেরা মানুষের নয় বরং ঐশিক মানদণ্ডগুলি মেনে চলেন তাই তাঁর সংগঠন হল ঈশতান্ত্রিক, শুচি এবং স্বাস্থ্যকর।
১৮. ঈশ্বরের সর্বোৎকৃষ্ট গুণটি কী এবং খ্রীষ্টানেরা কিভাবে এই গুণটিকে প্রতিফলিত করেন?
১৮ যিহোবা ঈশ্বরের সর্বোৎকৃষ্ট গুণটি হল প্রেম। “ঈশ্বর প্রেম,” প্রেরিত যোহন বলেন। (১ যোহন ৪:৮) যেহেতু ঈশতন্ত্র মানে ঈশ্বরের শাসন তাই এটির অর্থ প্রেমের শাসন। যীশু বলেছিলেন: “তোমরা যদি আপনাদের মধ্যে পরস্পর প্রেম রাখ, তবে তাহাতেই সকলে জানিবে যে, তোমরা আমার শিষ্য।” (যোহন ১৩:৩৫) ঈশতান্ত্রিক সংগঠন এই সংকটপূর্ণ শেষকালে উল্লেখযোগ্য প্রেম দেখিয়েছে। আফ্রিকায় সাম্প্রদায়িক বিলোপসাধনের সময়ে, তারা যে কোন উপজাতীয় গোত্রেরই হোক না কেন, যিহোবার সাক্ষীরা সকলের প্রতি প্রেম প্রদর্শন করেছিলেন। প্রাক্তন যুগোস্লাভিয়ায় যুদ্ধের সময়ে, অন্যান্য ধর্মীয় দলগুলি তথাকথিত সাম্প্রদায়িক বিলোপে অংশ নিলেও সকল অঞ্চলের যিহোবার সাক্ষীরা একে অপরকে সাহায্য করেছিলেন। ব্যক্তিগতভাবে যিহোবার সাক্ষীরা পৌলের পরামর্শ পালন করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন: “সর্ব্বপ্রকার কটুকাটব্য, রোষ, ক্রোধ, কলহ, নিন্দা এবং সর্ব্বপ্রকার হিংসেচ্ছা তোমাদের হইতে দূরীকৃত হউক। তোমরা পরস্পর মধুরস্বভাব ও করুণাচিত্ত হও, পরস্পর ক্ষমা কর, যেমন ঈশ্বরও খ্রীষ্টে তোমাদিগকে ক্ষমা করিয়াছেন।”—ইফিষীয় ৪:৩১, ৩২.
১৯. যারা নিজেদের ঈশতন্ত্রের বশীভূত করছেন তাদের জন্য এখন ও ভবিষ্যতে কোন্ আশীর্বাদগুলি রয়েছে?
১৯ যারা ঈশতন্ত্রের বশীভূত হন তারা প্রচুর আশীর্বাদ উপভোগ করেন। ঈশ্বর ও সহখ্রীষ্টান উভয়ের সঙ্গে তাদের শান্তি রয়েছে। (ইব্রীয় ১২:১৪; যাকোব ৩:১৭) তাদের জীবনের একটি উদ্দেশ্য রয়েছে। (উপদেশক ১২:১৩) তাদের আধ্যাত্মিক নিরাপত্তা এবং ভবিষ্যতের জন্য এক নিশ্চিত আশা রয়েছে। (গীতসংহিতা ৫৯:৯) বাস্তবিক পক্ষে, সমস্ত মানবজাতি যখন ঈশতান্ত্রিক শাসনাধীনে আসবে তখন তা কেমন হবে তার পূর্ব স্বাদ তারা উপভোগ করেন। আর বাইবেল বলে, “সে সকল আমার পবিত্র পর্ব্বতের কোন স্থানে হিংসা কিম্বা বিনাশ করিবে না; কারণ সমুদ্র যেমন জলে আচ্ছন্ন, তেমনি পৃথিবী সদাপ্রভু-বিষয়ক জ্ঞানে পরিপূর্ণ হইবে।” (যিশাইয় ১১:৯) কী এক গৌরবময় সময়ই না তা হবে! তাই এখনই ঈশতন্ত্রের সান্নিধ্যে থেকে আমরা সকলে যেন ভবিষ্যৎ পরমদেশে আমাদের স্থান করে নিই।
আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?
◻ প্রকৃত ঈশতন্ত্র কী এবং আজকে এটি কোথায় পাওয়া যায়?
◻ মানুষেরা কিভাবে তাদের জীবনে ঈশতান্ত্রিক শাসনের বশীভূত হন?
◻ ঈশতন্ত্রের অধীনে সমস্ত ব্যক্তিরা কোন্ উপায়ে নিজেদের চেয়ে ঈশ্বরের গৌরবকে অগ্রে রাখেন?
◻ কিছু ঈশ্বরীয় গুণাবলি কী যা ঈশতন্ত্রের সমর্থনকারী ব্যক্তিরা অনুকরণ করে থাকেন?
[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
শলোমন নিজেকে নয় কিন্তু ঈশ্বরকে গৌরব প্রদান করেছিলেন