ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w৯৭ ৬/১৫ পৃষ্ঠা ৯-১৩
  • বাইবেলের সময়ে যিরূশালেম প্রত্নতত্ত্ববিদ্যা কী প্রকাশ করে?

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • বাইবেলের সময়ে যিরূশালেম প্রত্নতত্ত্ববিদ্যা কী প্রকাশ করে?
  • ১৯৯৭ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • রাজা দায়ূদের যিরূশালেম
  • হিষ্কিয়ের সময় থেকে অবশিষ্টাংশ
  • প্রথম মন্দিরের সময়ের সমাধিক্ষেত্রগুলি
  • সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে যিরূশালেমের ধ্বংস
  • যীশুর দিনে যিরূশালেম
  • যিরূশালেম—“মহান্‌ রাজার নগরী”
    ১৯৯৮ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
১৯৯৭ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w৯৭ ৬/১৫ পৃষ্ঠা ৯-১৩

বাইবেলের সময়ে যিরূশালেম প্রত্নতত্ত্ববিদ্যা কী প্রকাশ করে?

আগ্রহজনক বৃহৎ প্রত্নতাত্ত্বিক কাজগুলি যিরূশালেমে ঘটেছে, বিশেষ করে ১৯৬৭ সাল থেকে। খোদিত স্থানের মধ্যে অনেকগুলিই এখন জনসাধারণের সামনে উন্মুক্ত করা হয়েছে, তাই আসুন আমরা এগুলির মধ্যে কয়েকটি পরিদর্শন করি এবং দেখি কিভাবে প্রত্নতত্ত্ববিদ্যা বাইবেলের ইতিহাসের সাথে সামঞ্জস্য রাখে।

রাজা দায়ূদের যিরূশালেম

যে এলাকাটিকে বাইবেল সিয়ন পর্বত বলে নির্দেশ করে, যার উপরে দায়ূদের প্রাচীন শহর নির্মিত হয়েছিল, তা আধুনিক যিরূশালেম মহানগরীর কাছে খুবই তাৎপর্যহীন বলে মনে হয়। ১৯৭৮-৮৫ সালের মধ্যে মৃত অধ্যাপক ইগল শিইলোর নেতৃত্বে দায়ূদ শহরের খনন কার্যগুলি পাহাড়ের পূর্বদিকে প্রস্তর-সিড়ির এক প্রকাণ্ড কাঠামো বা রক্ষাপ্রাচীর প্রকাশ করে।

অধ্যাপক শিইলো দাবি করেছিলেন যে এটি অবশ্যই ছাতের দেওয়ালের একটি প্রকাণ্ড আন্তঃকাঠামোর অবশিষ্টাংশ যার উপরে যিবূষীয়েরা (দায়ূদের জয় করার পূর্বের অধিবাসীরা) এক দৃঢ় দুর্গ নির্মাণ করেছিল। তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন যে এই ছাতের প্রাচীরের উপরে যে প্রস্তর-সিড়ির কাঠামোটি তিনি দেখেছিলেন তা যিবূষীয়দের দৃঢ় দুর্গের এলাকায় দায়ূদ দ্বারা নির্মিত নতুন সুরক্ষিত আশ্রয়ের অংশস্বরূপ ছিল। ২ শমূয়েল ৫:৯ পদে আমরা পড়ি: “দায়ূদ সেই দুর্গে বসতি করিয়া তাহার নাম দায়ূদ-নগর রাখিলেন; এবং দায়ূদ মিল্লো অবধি ভিতর পর্য্যন্ত চারিদিকে [প্রাচীর] গাঁথিলেন।”

এই কাঠামোর কাছেই ছিল শহরের প্রাচীন জল ব্যবস্থার প্রবেশপথ, যেগুলির কয়েকটি অংশ দায়ূদের সমকালীন বলে মনে হয়। যিরূশালেমের জল-প্রণালী ব্যবস্থা সম্বন্ধে বাইবেলের কিছু মন্তব্য কয়েকটি প্রশ্নের উত্থাপন করেছে। উদাহরণস্বরূপ, দায়ূদ তার লোকেদের বলেছিলেন যে “যে কেহ যিবূষীয়দিগকে আঘাত করে, সে জলপ্রণালীতে গিয়া” শত্রুকে “আঘাত করুক।” (২ শমূয়েল ৫:৮) দায়ূদের সেনাপতি যোয়াব তা করেছিলেন। “জলপ্রণালী” অভিব্যক্তিটির দ্বারা ঠিক কী বোঝান হয়েছে?

অন্যান্য প্রশ্নগুলি উত্থাপিত হয়েছিল বিখ্যাত শিলোহ প্রণালী সম্বন্ধে, সম্ভবত যেটি সা.কা.পূ. অষ্টম শতাব্দীতে রাজা হিষ্কিয়ের যন্ত্রশিল্পীরা খনন করেছিল এবং যার উল্লেখ ২ রাজাবলি ২০:২০ এবং ২ বংশাবলি ৩২:৩০ পদে করা হয়েছে। কিভাবে প্রণালী নির্মাণকারকদের দুটি দল, বিপরীত প্রান্ত থেকে খনন করতে করতে পরস্পরের সম্মুখীন হতে পেরেছিল? কেন তারা এক সর্পিল পথ বেছে নিয়েছিল, যা প্রণালীটিকে একটি সোজা প্রণালীর চেয়ে অত্যন্ত দীর্ঘ করে তুলেছিল? নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য তারা কিভাবে যথেষ্ট বাতাস পেয়েছিল, বিশেষ করে যেহেতু তারা সম্ভবত তেলে-জ্বলা প্রদীপগুলি ব্যবহার করত?

বাইবেল সম্বন্ধীয় প্রত্নতত্ত্ববিদ্যার পুনরালোচনা (ইংরাজি) নামক পত্রিকাটি এইধরনের প্রশ্নগুলির সম্ভাব্য উত্তর দিয়েছে। খনন বিষয়ক একজন ভূতাত্ত্বিক উপদেষ্টা ড্যান গিল এই কথা বলেছেন বলে উদ্ধৃতি করা হয়েছে: “দায়ূদ শহরের নিচে এক সুবিকশিত প্রাকৃতিক কার্স্ত প্রণালী রয়েছে। কার্স্ত হল একটি ভূবিদ্যাসংক্রান্ত নাম যা একটি অসমতল নিচু জায়গাকে, খাদ এবং খালগুলিকে বর্ণনা করে যা মাটির নিচের জল থেকে সৃষ্টি হয়েছে যখন এটি মাটির তলার পাথরের মধ্যে দিয়ে চুয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। . . . দায়ূদ শহরের নিচে ভূ-গর্ভস্থ জলকার্য সম্বন্ধে আমাদের ভূবিদ্যাসংক্রান্ত পরীক্ষা ইঙ্গিত করে যে সেগুলি অত্যাবশ্যকীয়ভাবে দক্ষ মানুষের দ্বারা গঠিত, প্রাকৃতিক (কার্স্তিক) ক্ষয়মান খাল ও ঘুলঘুলির সম্প্রসারণ যেগুলিকে স্বাভাবিক জল সরবরাহ ব্যবস্থার সাথে যুক্ত করা হয়।”

এটি হয়ত ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করতে পারে যে কিভাবে শিলোহ প্রণালীটিকে খনন করা হয়েছিল। এটি সম্ভবত পাহাড়ের তলায় অবস্থিত প্রাকৃতিক খালের সর্পিল গতিপথকে অনুসরণ করতে পারে। দুটি প্রান্তে কার্যরত দলগুলি হয়ত অস্তিত্বমান খাদগুলিকে পরিবর্তন করে একটি অস্থায়ী প্রণালী খনন করেছিল। এরপর গিহোনের অন্তর্নিহিত জলপ্রবাহ থেকে শিলোহের সরোবর পর্যন্ত জল প্রবাহের জন্য একটি ঢালু খাল খনন করা হয়েছিল, যেটি সম্ভবত শহরের প্রাচীরের ভিতরে অবস্থিত ছিল। এটি ছিল একটি প্রকৃত পূর্তবিদ্যার কাজ কারণ এটির দীর্ঘতা ৫৩৩ মিটার হওয়া সত্ত্বেও দুই প্রান্তের মধ্যে উচ্চতার পার্থক্য ছিল মাত্র ৩২ সেন্টিমিটার।

পণ্ডিতেরা দীর্ঘদিন যাবৎ উপলব্ধি করেছিল যে প্রাচীন শহরের জলের মূল উৎস ছিল গিহোনের অন্তর্নিহিত জলপ্রবাহ। এটি শহরের প্রাচীরের বাইরে অবস্থিত ছিল, কিন্তু যথেষ্ট কাছে ছিল যাতে করে একটি প্রণালী ও ১১ মিটার গভীর একটি খাদ খনন করা যেতে পারে যা সেখানকার বাসিন্দাদের সুরক্ষা প্রাচীরের বাইরে না গিয়েই জল আনার সুযোগ দিত। এটি ওয়ারেন খাদ বলে পরিচিত যেটি চালর্স ওয়ারেনের নাম অনুসারে, রাখা হয়েছিল যিনি ১৮৬৭ সালে প্রণালীটি আবিষ্কার করেছিলেন। কিন্তু কখন এই প্রণালী এবং খাদটি তৈরি করা হয়েছিল? সেগুলি কি দায়ূদের সময়ে অস্তিত্বে ছিল? এটি কি সেই জল-প্রণালী যা যোয়াবের দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছিল? ড্যান গিল উত্তর দেন: “ওয়ারেনের খাদটি প্রকৃতপক্ষে একটি প্রাকৃতিক খাদ ছিল কি না তা পরীক্ষা করে দেখতে আমরা এর প্রাচীর পৃষ্ঠ থেকে নেওয়া একটি চুনাযুক্ত টুকরোর ভূতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করেছিলাম। এটির মধ্যে এমন কিছুই ছিল না যা ইঙ্গিত করে যে সেই টুকরোটি ৪০,০০০ বছরেরও বেশি পুরনো: এটি স্পষ্ট প্রমাণ দিয়েছিল যে খাদটি কোন মানুষের দ্বারা খনন করা হয়নি।”

হিষ্কিয়ের সময় থেকে অবশিষ্টাংশ

যখন অশূর জাতি তার প্রতিটি পথে জয়লাভ করছিল সেই সময়ে রাজা হিষ্কিয় জীবিত ছিলেন। তার রাজত্বের ষষ্ঠ বছরে, অশূরীয়রা দ্বাদশ-বংশের রাজ্যের রাজধানী শমরীয় জয় করেছিল। আট বছর পরে (সা.কা.পূ. ৭৩২ সালে) অশূরীয়রা পুনরায় ফিরে আসে এবং যিহূদা ও যিরূশালেমকে ভীতসন্ত্রস্ত করে তোলে। দ্বিতীয় বংশাবলি ৩২:১-৮ পদ হিষ্কিয়ের প্রতিরক্ষা কৌশলকে বর্ণনা করে। এই সময়ের কোন দৃশ্যত প্রমাণ কি আছে?

হ্যাঁ, ১৯৬৯ সালে, অধ্যাপক ন্যমান অভিগাদ এই সময়ের অবশিষ্টাংশ আবিষ্কার করেছিলেন। খনন কার্যগুলি এক বৃহদায়তন প্রাচীরের একটি অংশকে প্রকাশ করেছিল, প্রথম অংশটি ৪০ মিটার লম্বা, ৭ মিটার চওড়া এবং অনুমান অনুসারে ৮ মিটার উচ্চ। প্রাচীরটি আংশিকভাবে দৃঢ় পাথরের উপর এবং অংশত সাম্প্রতিক নির্মিত গৃহগুলির উপর দণ্ডায়মান ছিল। কে প্রাচীরটি নির্মাণ করেছিল এবং কখন? প্রত্নতত্ত্ববিদ্যা সংক্রান্ত একটি পত্রিকা জানায়, “বাইবেলের দুটি পরিচ্ছদ অভিগাদকে প্রাচীরটির সঠিক তারিখ এবং উদ্দেশ্য জানতে সাহায্য করেছিল।” এই পরিচ্ছদগুলি এইভাবে পড়া হয়: “আর তিনি আপনাকে বলবান করিয়া সমস্ত ভগ্ন প্রাচীর গাঁথিয়া দুর্গসমান উচ্চ করিলেন; আবার তাহার বাহিরে আর এক প্রাচীর গাঁথিলেন।” (২ বংশাবলি ৩২:৫) ‘প্রাচীর দৃঢ় করণার্থে গৃহ সকল ভাঙ্গিয়া ফেলিলেন।’ (যিশাইয় ২২:১০) আজকে পরিদর্শকেরা সেই প্রাচীন শহরের যিহূদী আবাসে এই তথা-কথিত চওড়া প্রাচীরের অংশবিশেষ দেখতে পাবেন।

বিভিন্ন খনন কার্যগুলি এও প্রকাশ করে যে এই সময়ে পূর্বে যেরূপ ভাবা হয়েছিল যিরূশালেম তার চাইতেও বৃহৎ ছিল, সম্ভবত অশূরীয়দের দ্বারা এটি পরাজিত হওয়ার পর উত্তর অঞ্চলের রাজ্য থেকে শরণার্থীদের অনুপ্রবেশের দরুণ। অধ্যাপক শিলোহ অনুমান করেছিলেন যে যিবূষীয় শহরটি প্রায় ১৫ একর এলাকা জুড়ে ছিল। শলোমনের সময়ে এটি প্রায় ৪০ একর জুড়ে ছিল। এর ৩০০ বছর পর, রাজা হিষ্কিয়ের সময়ে, শহরের সুরক্ষিত এই এলাকাটি প্রায় ১৫০ একরে বৃদ্ধি পেয়েছিল।

প্রথম মন্দিরের সময়ের সমাধিক্ষেত্রগুলি

প্রথম মন্দিরের সময়ের সমাধিক্ষেত্রগুলি, যা সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে বাবিলনীয়দের দ্বারা যিরূশালেম ধ্বংসের পূর্বের, তথ্যের আর একটি উৎস হয়েছিল। হিন্নোম উপত্যকার ঢালু জমির উপরে যখন ১৯৭৯/৮০ সালে সারিবদ্ধ সমাধি গুহাগুলি খনন করা হয়েছিল তখন তা এক বিশাল আবিষ্কারের বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছিল। “যিরূশালেমে প্রত্নতত্ত্ববিদ্যা সংক্রান্ত গবেষণার সমগ্র ইতিহাসে, অত্যন্ত বিরল প্রথম মন্দিরের সংরক্ষিত ভাণ্ডারগুলির মধ্যে এটি ছিল একটি যেটি অভ্যন্তরে সমস্ত বস্তুসহ পাওয়া গিয়েছিল। এর মধ্যে এক হাজারেরও বেশি বস্তু ছিল,” প্রত্নতত্ত্ববিদ্‌ গেব্রিয়েল বার্কে বলেন। তিনি আরও বলেন: “ইস্রায়েলে এবং বিশেষ করে যিরূশালেমে কার্যরত প্রতিটি প্রত্নতত্ত্ববিদের সবচেয়ে প্রিয় স্বপ্ন হল লিখিত বিষয়বস্তু আবিষ্কার করা।” যে দুটি রৌপ্যের পাণ্ডুলিপি পাওয়া গিয়েছে, তার মধ্যে কী ছিল?

বার্কে ব্যাখ্যা করেন: “যখন আমি রৌপ্যের খোলা পুঁথিটি দেখি এবং সেটিকে বিবর্ধক কাচের তলায় রাখি, আমি দেখতে পাই যে বাইরের দিকটি সূক্ষ্মভাবে বৈশিষ্ট্যসূচক অক্ষর দ্বারা পূর্ণ ছিল, পাতলা এবং ভঙ্গুর রৌপ্য পাতের উপর একটি তীক্ষ্ম অস্ত্রের দ্বারা কিছু লেখা ছিল। . . . ঐশিক নামটি যা স্পষ্টভাবে খোদিত লিপিতে দেখা গিয়েছিল তা প্রাচীন ইব্রীয় লিপিতে লিখিত চারটি ইব্রীয় অক্ষর যাদ-হি-ভাউ-হি এর সমন্বয়ে গঠিত।” পরবর্তী একটি প্রকাশনায়, বার্কে আরও বলেন: “আমাদের কাছে আশ্চর্যের বিষয় হল যে উভয় রৌপ্য ফলক খোদিত হয়েছিল আশীর্বাদের বিধিতে যেটি প্রায়ই বাইবেলের যাজকীয় আশীর্বাদকে শনাক্ত করে।” (গণনাপুস্তক ৬:২৪-২৬) এটি ছিল প্রথমবার যখন যিরূশালেমে আবিষ্কৃত এক খোদিত লিপিতে যিহোবার নাম পাওয়া যায়।

পণ্ডিতেরা কিভাবে এই পাণ্ডুলিপির তারিখ নির্ধারণ করেছিলেন? প্রধানত প্রত্নতাত্ত্বিক বর্ণনা প্রসঙ্গের দ্বারা, যে সময়ের মধ্যে সেগুলি আবিষ্কৃত হয়েছিল। ৩০০-রও বেশি তারিখ দেওয়া মাটির পাত্র পাওয়া গিয়েছে সংরক্ষিত ভাণ্ডারের মধ্যে যা সা.কা.পূ. সপ্তম এবং ষষ্ঠ শতাব্দীর প্রতি ইঙ্গিত করে। যখন তারিখ সমন্বিত অন্যান্য খোদিত লিপির সাথে এই লিপিটি তুলনা করা হয়, তখন এটি একই সময়ের প্রতি ইঙ্গিত করে। পাণ্ডুলিপিগুলি যিরূশালেমে ইস্রায়েল যাদুঘরে প্রদর্শিত হয়েছে।

সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে যিরূশালেমের ধ্বংস

বাইবেল ২ রাজাবলি ২৫ অধ্যায়, ২ বংশাবলি ৩৬ অধ্যায় এবং যিরমিয় ৩৯ অধ্যায়ে সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে যিরূশালেমের ধ্বংস সম্বন্ধে বলে এবং জানায় যে নবুখদ্‌নিৎসরের সৈন্যবাহিনী শহরটিকে জ্বালিয়ে দিয়েছিল। সাম্প্রতিক খনন কার্যগুলি কি এই ঐতিহাসিক ঘটনাটির সত্যতা প্রমাণ করেছে? অধ্যাপক ইগাল শিলোর মতানুসারে, “[বাবিলনীয়দের ধ্বংস সম্বন্ধে] বাইবেলের প্রমাণ . . . সুস্পষ্ট প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ দ্বারা পরিপূরণ করা হয়; বিভিন্ন কাঠামোর সম্পূর্ণ ধ্বংস এবং আগুন যেটি গৃহগুলির কাঠের বিভিন্ন অংশগুলিকে গ্রাস করেছিল।” তিনি আরও মন্তব্য করেছিলেন: “যিরূশালেমের উপর চালিয়ে যাওয়া খনন কার্যগুলির প্রতিটি অংশে এই ধ্বংসের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছিল।”

পরিদর্শকেরা এই ধ্বংসের অবশিষ্ট অংশগুলি দেখতে পারেন যা ২,৫০০ বছরেরও বেশি আগে ঘটেছিল। ইস্রায়েলের দুর্গ, দগ্ধ গৃহ এবং বুলে হাউস হল জনসাধারণের জন্য সংরক্ষিত এবং উন্মুক্ত জনপ্রিয় প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলির নাম। প্রকাশিত প্রাচীন যিরূশালেম (ইংরাজি) নামক বইয়ে প্রত্নতত্ত্ববিদ্‌ জেন এম. ক্যাহিল এবং ডেভিড টারলার সারসংক্ষেপ করেন: “বাবিলনীয়দের দ্বারা ব্যাপক ধ্বংসটি প্রতীয়মান হয় কেবলমাত্র মাটি খুঁড়ে আবিষ্কৃত দগ্ধ গৃহ ও বুলে হাউসের কাঠামোগুলির ভিতর মোটা অবশিষ্ট স্তরগুলিতেই নয়, কিন্তু পূর্বাঞ্চলের আচ্ছাদিত ঢালু অংশে ধ্বংসপ্রাপ্ত গৃহগুলি থেকে পাওয়া গভীর পাথরকুচিতেও স্পষ্ট হয়। শহরটির ধ্বংস সম্বন্ধে বাইবেলের বর্ণনা . . . প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণের পরিপূরক।”

তাই, দায়ূদের সময় থেকে সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে এর ধ্বংসের সময় পর্যন্ত যিরূশালেম সম্বন্ধে বাইবেলের বর্ণনা বিভিন্নভাবে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কার্যগুলির দ্বারা বিগত ২৫ বছর ধরে সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু সা.কা. প্রথম শতাব্দীর যিরূশালেম সম্বন্ধে কী বলা যায়?

যীশুর দিনে যিরূশালেম

খনন কার্যগুলি, বাইবেল, প্রথম শতাব্দীর ইতিহাসবেত্তা যোসেফাস এবং অন্যান্য উৎসগুলি সা.কা. ৭০ সালে রোমীয়দের দ্বারা ধ্বংস হওয়ার পূর্বে যীশুর দিনের যিরূশালেমকে বর্ণনা করতে পণ্ডিতদের সাহায্য করে। যিরূশালেমে একটি বৃহৎ হোটেলের পিছনের দিকে প্রদর্শিত একটি নমুনা, নতুন খনন কার্যগুলি যা প্রকাশ করে সেই অনুসারে নিয়মিতভাবে আধুনিক করা হচ্ছে। এই শহরের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল পার্বত্য মন্দিরটি, যেটিকে হেরোদ শলোমনের সময়ের মন্দিরটির তুলনায় আকৃতিতে দ্বিগুণ করেছিলেন। প্রাচীন জগতে এটি ছিল মনুষ্য-নির্মিত সবচাইতে বৃহৎ মঞ্চ, যেটি প্রায় দৈর্ঘ্যে ৪৮০ মিটার এবং প্রস্থে ২৮০ মিটার ছিল। কয়েকটি নির্মাণ পাথরের ওজন ৫০ টন, এমনকি একটি ৪০০ টনের কাছাকাছি এবং একজন পণ্ডিতের মতানুসারে “প্রাচীন জগতের যে কোন স্থানে আকৃতির ক্ষেত্রে অদ্বিতীয় ছিল।”

কোন আশ্চর্যের বিষয় নয় যে কিছু লোকেরা হতবাক হয়েছিল যখন তারা যীশুকে বলতে শুনেছিল: “এই মন্দির ভাঙ্গিয়া ফেল, আমি তিন দিনের মধ্যে ইহা উঠাইব।” তারা মনে করেছিল যে তিনি বৃহৎ মন্দির অট্টালিকাকে বুঝিয়েছিলেন, যদিও তিনি “আপন দেহরূপ মন্দিরের বিষয়” বুঝিয়েছিলেন। তাই তারা বলেছিল: “এই মন্দির নির্ম্মাণ করিতে ছেচল্লিশ বৎসর লাগিয়াছে; তুমি কি তিন দিনের মধ্যে ইহা উঠাইবে?” (যোহন ২:১৯-২১) পার্বত্য মন্দিরের চতুর্দিকে খননের ফলস্বরূপ, পরিদর্শকেরা আজ প্রাচীরের অংশগুলি এবং যীশুর সময়ের স্থাপত্যশিল্পের অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলি দেখতে পারেন আর এমনকি সেই সিড়ি দিয়ে হাঁটতে পারেন, যেখান দিয়ে তিনি সম্ভবত মন্দিরের দক্ষিণ প্রান্তের দ্বারগুলি পর্যন্ত হেঁটেছিলেন।

পার্বত্য মন্দিরের পশ্চিমদিকের প্রাচীর থেকে বেশি দূরে নয়, প্রাচীন শহরের যিহূদী আবাসে সা.কা. প্রথম শতাব্দী থেকে দুটি খনন স্থানকে সুন্দরভাবে পুনরুদ্ধার করা হয়, যেগুলি দগ্ধ গৃহ এবং হেরোদের আবাস বলে পরিচিত। দগ্ধ গৃহটির আবিষ্কারের পর, প্রত্নতত্ত্ববিদ্‌ ন্যমান অভিগাদ লিখেছিলেন: “এখন এটি খুবই স্পষ্ট যে এই গৃহটি ৭০ খ্রীষ্টাব্দে, যিরূশালেম ধ্বংসের সময়ে রোমীয়দের দ্বারা পোড়ান হয়েছিল। শহরটির খনন কার্যের ইতিহাসে প্রথমবারের মত জলন্ত শহরের উজ্জ্বল ও স্পষ্ট প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ প্রকাশিত হয়।”—পৃষ্ঠা ১২-তে ছবিগুলি দেখুন।

এই আবিষ্কারগুলির কিছু যীশুর জীবনের কয়েকটি ঘটনার উপর আলোকপাত করে। গৃহগুলি শহরের উপরের দিকে অবস্থিত ছিল, যেখানে যিরূশালেমের সমৃদ্ধশালী লোকেরা বসবাস করত যার অন্তর্ভুক্ত ছিল মহাযাজকেরা। গৃহগুলির মধ্যে এক বৃহৎ সংখ্যক স্নানের আনুষ্ঠানিক স্নানাগারগুলি পাওয়া গিয়েছে। একজন পণ্ডিত মন্তব্য করেন: “বৃহৎ সংখ্যক স্নানাগারগুলি দ্বিতীয় মন্দিরের সময়ে শহরের উপর প্রান্তের বাসিন্দাদের দ্বারা অভ্যাসকৃত আনুষ্ঠানিকরূপে শুদ্ধ হওয়ার জন্য নিয়মগুলিকে কঠোরভাবে মেনে চলার বিষয়ের সাক্ষ্য দেয়। (এই নিয়মগুলি মিশ্‌নায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, যেটি মিকভে এর বিস্তারিত বিবরণ দেওয়ার জন্য দশটি অধ্যায় নিবেদন করে।)” ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান সম্বন্ধে ফরীশী এবং অধ্যাপকদের উদ্দেশ্যে যীশুর মন্তব্যগুলি উপলব্ধি করতে এই তথ্যটি আমাদের সাহায্য করে।—মথি ১৫:১-২০; মার্ক ৭:১-১৫.

আশ্চর্যজনকভাবে যিরূশালেমে এক বৃহৎ সংখ্যক পাথরের পাত্রও পাওয়া গিয়েছে। ন্যমান অভিগাদ জানান: “তাহলে কেন, এইগুলি হঠাৎ করে এবং যিরূশালেমে এত পরিমাণে গৃহগুলির মধ্যে দেখা গিয়েছিল? এর উত্তরটি আনুষ্ঠানিকভাবে শুদ্ধ হওয়া সম্বন্ধে যিহূদী নিয়ম হালাখাক এর মধ্যেই নিহিত আছে। মিশ্‌না আমাদের জানায় যে পাথরের পাত্রগুলি সেই বস্তুগুলির অন্তর্ভুক্ত যেগুলি অশুদ্ধ নয়। . . . পাথর কখনই ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান দ্বারা কলুষিত হতে পারে না।” এটি এই ব্যাখ্যার ইঙ্গিত দেয় যে, যে জলকে যীশু দ্রাক্ষারসে পরিণত করেছিলেন তা মাটির পাত্রের পরিবর্তে পাথরের পাত্রগুলিতে মজুত রাখা হয়েছিল কেন।—লেবীয়পুস্তক ১১:৩৩; যোহন ২:৬.

ইস্রায়েল যাদুঘর পরিদর্শন দুটি অস্বাভাবিক মৃতদের অস্থিসংরক্ষণার্থক সমাধিস্থান দেখাবে। বাইবেল সম্বন্ধীয় প্রত্নতত্ত্ববিদ্যার পুনরালোচনা ব্যাখ্যা করে: “মৃতদের অস্থিসংরক্ষণার্থক সমাধিস্থানগুলি প্রাথমিকভাবে সা.কা. ৭০ সালে রোমীয়দের দ্বারা যিরূশালেম ধ্বংস হওয়ার প্রায় একশো বছর আগে ব্যবহৃত হত। . . . মৃত ব্যক্তিকে সমাধি গুহার প্রাচীরের ভিতরে খোদিত একটি কোটরে রাখা হত; মাংস পচে যাওয়ার পর হাড়গুলি সংগ্রহ করা হত এবং তা মৃতদের অস্থিসংরক্ষণার্থক সমাধিস্থানে রাখা হত—যে পাত্রটি সাধারণত চুনাপাথরের দ্বারা সজ্জিত থাকত।” যে দুটিকে প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে তা ১৯৯০ সালে নভেম্বর মাসে একটি সমাধি গুহায় পাওয়া যায়। প্রত্নতত্ত্ববিদ্‌ জিভি গ্রীনহট জানান: “মৃতদের অস্থিসংরক্ষণার্থক দুটি সমাধিস্থানের উপরে উদ্ধৃত ‘কায়াফা’ শব্দটি এখানে প্রত্নতাত্ত্বিক প্রসঙ্গে প্রথমবার দেখা যায়। এটি সম্ভবত মহাযাজক কায়াফার পরিবারের নাম, যেটি নতুন নিয়মে . . . উল্লেখ করা হয়েছে। . . . এটি ছিল যিরূশালেমে তার বাড়ি যেখান থেকে যীশুকে রোমীয় প্রতিনিধি পন্তীয় পিলাতের কাছে সমর্পণ করা হয়েছিল।” মৃতদের অস্থিসংরক্ষণার্থক একটি সমাধিস্থানে প্রায় ৬০ বছর বয়স্ক একটি মানুষের হাড়গুলি রাখা হয়েছিল। পণ্ডিতেরা অনুমান করেন যে এইগুলি প্রকৃতপক্ষে কায়াফার হাড়। একজন পণ্ডিত আবিষ্কারগুলিকে যীশুর সময়ের প্রতি ইঙ্গিত করেন: “মৃতদের অস্থিসংরক্ষণার্থক অন্যান্য সমাধিস্থানের একটিতে একটি মুদ্রা পাওয়া গিয়েছিল যেটি হেরোদ আগ্রিপ্পার দ্বারা খোদিত হয়েছিল (সা.কা. ৩৭-৪৪ সালে)। দুইজন কায়াফার অস্থিসংরক্ষণার্থক সমাধিস্থান হয়ত শতাব্দীর একেবারে প্রারম্ভের হয়ে থাকবে।”

উলিয়াম জি. ডিভার, এরিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিকটপ্রাচ্য প্রত্নতত্ত্ববিদ্যার অধ্যাপক যিরূশালেম সম্বন্ধে মন্তব্য করেছিলেন: “এটি বলা অতিরঞ্জিত হবে না যে আমরা একত্রে বিগত ১৫০ বছরে যা শিখেছি তার চাইতে গত ১৫ বছরে এই মুখ্য স্থানের প্রত্নতত্ত্ববিদ্যা সংক্রান্ত ইতিহাস সম্বন্ধে অনেক বেশি কিছু শিখেছি।” সাম্প্রতিক দশকগুলিতে যিরূশালেমে বৃহৎ বৃহৎ প্রত্নতত্ত্ববিদ্যা সংক্রান্ত কার্যগুলির বেশির ভাগই সেই আবিষ্কারগুলিকে তুলে ধরে যা বাইবেলের ইতিহাসকে ব্যাখ্যা করে।

[৯ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

যিরূশালেমে, হোলিল্যান্ড হোটেলের মাটিতে অবস্থিত—দ্বিতীয় মন্দিরের সময়ে যিরূশালেম শহরটির প্রতিমূর্তি

[Pictures on page 10]

উপরে: যিরূশালেমের পার্বত্য মন্দিরের দক্ষিণপশ্চিম প্রান্ত

ডানদিকে: ওয়ারেন খাদের মধ্যে দিয়ে নেমে যাওয়া

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৫)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার