ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w৯৯ ৯/১৫ পৃষ্ঠা ২১-২৬
  • আজকে যিহোবা আমাদের কাছ থেকে কী চান?

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • আজকে যিহোবা আমাদের কাছ থেকে কী চান?
  • ১৯৯৯ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • যিহোবা যা চান
  • প্রেমের গুরুত্ব
  • যেভাবে আমরা আমাদের ভালবাসার প্রমাণ দিতে পারি
  • যে কারণে এটাকে কঠিন মনে হতে পারে
  • হৃদয়ে প্রেমের এক ব্যবস্থা
    ২০০৫ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে প্রেম ও ন্যায়বিচার
    প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে (অধ্যয়ন)—২০১৯
  • ঈশ্বর যাদেরকে ভালবাসেন তাদের মাঝে কি আপনি আছেন?
    ২০০২ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • সেই ঈশ্বরকে ভালবাসুন, যিনি আপনাকে ভালবাসেন
    ২০০৬ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
আরও দেখুন
১৯৯৯ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w৯৯ ৯/১৫ পৃষ্ঠা ২১-২৬

আজকে যিহোবা আমাদের কাছ থেকে কী চান?

“মেঘ হইতে এই বাণী হইল, ‘ইনিই আমার প্রিয় পুত্ত্র, ইহাঁতেই আমি প্রীত, ইহাঁর কথা শুন।’”—মথি ১৭:৫.

১. ব্যবস্থার উদ্দেশ্য কখন পূর্ণ হয়েছিল?

যিহোবা ইস্রায়েল জাতিকে ব্যবস্থা দিয়েছিলেন, যার মধ্যে অনেক নিয়ম ছিল। এইগুলোর বিষয়ে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “সে সমস্তই খাদ্য, পেয় ও বিবিধ বাপ্তিস্ম সহযুক্ত, সে সকল কেবল মাংসের ধর্ম্মবিধিমাত্র, সংশোধনের সময় পর্য্যন্ত পালনীয়।” (ইব্রীয় ৯:১০) ব্যবস্থা যখন অল্প কিছু ইস্রায়েলীয়দের যীশুকে মশীহ বা খ্রীষ্ট বলে মেনে নিতে সাহায্য করেছিল, তখন এর উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। তাই পৌল বলেছিলেন: “খ্রীষ্টই ব্যবস্থার পরিণাম।”—রোমীয় ১০:৪; গালাতীয় ৩:১৯-২৫; ৪:৪, ৫.

২. কারা ব্যবস্থার অধীন ছিল এবং কখন তারা এর থেকে মুক্ত হয়েছিল?

২ এর মানে কি এই যে আজকে আমাদের ব্যবস্থা মেনে চলার দরকার নেই? আসলে, বেশির ভাগ মানুষই ব্যবস্থার অধীন ছিল না, যেমন গীতরচক বলেছিলেন: “[যিহোবা] জানান যাকোবকে আপন বাক্য, ইস্রায়েলকে আপন বিধি ও শাসনকলাপ। তিনি আর কোন জাতির পক্ষে এরূপ করেন নাই, তাঁহার শাসনকলাপ তাহারা জানে নাই।” (গীতসংহিতা ১৪৭:১৯, ২০) ঈশ্বর যখন যীশুর মুক্তির মূল্যের ওপর ভিত্তি করে এক নতুন নিয়ম শুরু করেছিলেন, তখন এমনকি ইস্রায়েল জাতির ওপরও আর ব্যবস্থা মেনে চলার বাধ্যবাধকতা ছিল না। (গালাতীয় ৩:১৩; ইফিষীয় ২:১৫; কলসীয় ২:১৩, ১৪, ১৬) যদি তাই হয়, তাহলে আজকে যারা যিহোবার সেবা করতে চায় তাদের কাছ থেকে তিনি কী চান?

যিহোবা যা চান

৩, ৪. (ক) আজকে যিহোবা মূলত আমাদের কাছ থেকে কী চান? (খ) কেন আমাদের যীশুর আদর্শ অনুসরণ করতে হবে?

৩ পৃথিবীতে যীশুর পরিচর্যার শেষ বছরে, তাঁর প্রেরিত পিতর, যাকোব ও যোহন তাঁর সঙ্গে এক উঁচু পর্বতে, সম্ভবত হর্ম্মোণ পর্বতের একটা চূড়ায় যান। সেখানে তারা একটা ভবিষ্যদ্বাণীমূলক দর্শন দেখেছিলেন। তারা যীশুকে মহিমান্বিত প্রতাপে দেখেছিলেন ও ঈশ্বরকে ঘোষণা করতে শুনেছিলেন: “ইনিই আমার প্রিয় পুত্ত্র, ইহাঁতেই আমি প্রীত, ইহাঁর কথা শুন।” (মথি ১৭:১-৫) মূলত এটাই যিহোবা আমাদের কাছ থেকে চান যে আমরা যেন তাঁর পুত্রের কথা শুনি এবং তাঁর আদর্শ অনুসরণ করি ও তাঁর শিক্ষা মেনে চলি। (মথি ১৬:২৪) তাই প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “খ্রীষ্টও তোমাদের নিমিত্ত দুঃখ ভোগ করিলেন, এ বিষয়ে তোমাদের জন্য এক আদর্শ রাখিয়া গিয়াছেন, যেন তোমরা তাঁহার পদচিহ্নের অনুগমন কর।”—১ পিতর ২:২১.

৪ কেন আমাদের যীশুর আদর্শ অনুসরণ করতে হবে? কারণ তাঁকে অনুকরণ করার মানে আমরা যিহোবা ঈশ্বরকে অনুকরণ করছি। যীশু পৃথিবীতে আসার আগে কোটি কোটি বছর ধরে স্বর্গে ছিলেন, ফলে খুব কাছ থেকে তিনি পিতাকে জানতেন। (হিতোপদেশ ৮:২২-৩১; যোহন ৮:২৩; ১৭:৫; কলসীয় ১:১৫-১৭) যীশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন তিনি নিখুঁতভাবে তাঁর পিতাকে প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “পিতা আমাকে যেমন শিক্ষা দিয়াছেন, তদনুসারে এই সকল কথা কহি।” আসলে, যীশু যিহোবাকে এতটাই নিখুঁতভাবে অনুকরণ করেছিলেন যে তিনি বলতে পেরেছিলেন: “যে আমাকে দেখিয়াছে, সে পিতাকে দেখিয়াছে।”—যোহন ৮:২৮; ১৪:৯.

৫. খ্রীষ্টানেরা কোন্‌ ব্যবস্থার অধীন এবং কখন এই ব্যবস্থা কার্যকর হয়েছিল?

৫ যীশুর কথা শোনার ও তাঁকে অনুকরণ করার মানে কী? এর মানে কি ব্যবস্থা মেনে চলা? পৌল লিখেছিলেন: ‘আমি ব্যবস্থার অধীন নই।’ তিনি এখানে ‘পুরাতন নিয়ম’ অর্থাৎ ইস্রায়েল জাতির সঙ্গে করা নিয়ম চুক্তির কথা বলছিলেন। পৌল এও বলেছিলেন যে তিনি “খ্রীষ্টের ব্যবস্থার অনুগত।” (১ করিন্থীয় ৯:২০, ২১; ২ করিন্থীয় ৩:১৪) পুরনো নিয়ম চুক্তি শেষ হয়ে, এক “নূতন নিয়ম” কার্যকর হয়েছিল যার সঙ্গে “খ্রীষ্টের ব্যবস্থা” ছিল আর যা আজকে যিহোবার সমস্ত দাসেরা মেনে চলতে বাধ্য।—লূক ২২:২০; গালাতীয় ৬:২; ইব্রীয় ৮:৭-১৩.

৬. ‘খ্রীষ্টের ব্যবস্থাকে’ কীভাবে বর্ণনা করা যেতে পারে এবং আমরা কীভাবে এটা পালন করি?

৬ যিহোবা ‘খ্রীষ্টের ব্যবস্থাকে’ লিখিত আকারে দেননি আর পুরনো নিয়ম চুক্তির মতো এটাকে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগও করা হয়নি। খ্রীষ্টের শিষ্যদের জন্য দেওয়া এই নতুন ব্যবস্থার মধ্যে কী করতে হবে আর কী করতে হবে না তার বিশদ তালিকা দেওয়া নেই। কিন্তু, যিহোবা তাঁর বাক্য বাইবেলের চারটে বিবরণে তাঁর পুত্রের জীবনী ও শিক্ষা বিস্তারিতভাবে লিখে রেখেছেন। এছাড়াও, ঈশ্বর যীশুর কয়েকজন প্রাথমিক শিষ্যদের বিভিন্ন বিষয়ে কিছু নির্দেশনা লিখে রাখতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন যেমন ব্যক্তিগত আচরণ, মণ্ডলীর বিষয় ও পারিবারিক জীবনে আমাদের ব্যবহার কেমন হবে। (১ করিন্থীয় ৬:১৮; ১৪:২৬-৩৫; ইফিষীয় ৫:২১-৩৩; ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) আমরা যখন যীশু খ্রীষ্টের আদর্শ অনুসরণ করি ও আমাদের জীবনে তাঁর শিক্ষা কাজে লাগাই এবং প্রথম শতাব্দীর বাইবেল লেখকদের অনুপ্রাণিত পরামর্শ শুনি, তখন আমরা “খ্রীষ্টের ব্যবস্থা” মেনে চলি। যিহোবা আজকে তাঁর দাসদের কাছ থেকে সেটাই চান।

প্রেমের গুরুত্ব

৭. যীশু তাঁর প্রেরিতদের সঙ্গে শেষ নিস্তারপর্বে কীভাবে তাঁর ব্যবস্থার সারমর্মের ওপর জোর দিয়েছিলেন?

৭ প্রেম যদি ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে, তবে তা খ্রীষ্টের ব্যবস্থার প্রাণ বা মূল বৈশিষ্ট্য। সা.কা. ৩৩ সালে যীশু তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে নিস্তারপর্ব পালন করার সময় এই বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছিলেন। সেই রাতে যীশু যা কিছু বলেছিলেন সেই সম্বন্ধে প্রেরিত যোহনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা থেকে দেখা যায় যে যীশু ২৮ বার প্রেমের বিষয়ে বলেছিলেন। এতে তাঁর প্রেরিতদের মনে তাঁর ব্যবস্থার সারমর্ম বা মূলনীতি একেবারে গেঁথে গিয়েছিল। তাই যোহন ওই বিশেষ সন্ধ্যার বর্ণনা শুরু করেছিলেন এই বলে: “নিস্তারপর্ব্বের পূর্ব্বে যীশু, এই জগৎ হইতে পিতার কাছে আপনার প্রস্থান করিবার সময় উপস্থিত জানিয়া, জগতে অবস্থিত আপনার নিজস্ব যে লোকদিগকে প্রেম করিতেন, তাহাদিগকে শেষ পর্য্যন্ত প্রেম করিলেন।”—যোহন ১৩:১.

৮. (ক) প্রেরিতদের মধ্যে যে ঝগড়া লেগেই ছিল তা কোন্‌ ঘটনা থেকে বোঝা যায়? (খ) কীভাবে যীশু তাঁর প্রেরিতদের নম্রতা শিখিয়েছিলেন?

৮ যীশু তাঁর প্রেরিতদের ভালবেসেছিলেন, যদিও তিনি জানতেন যে তাদের মধ্যে ক্ষমতা ও উচ্চপদ পাওয়ার প্রচণ্ড ইচ্ছা ছিল। যীশু তাদের বার বার বোঝানো সত্ত্বেও তাদের মনোভাব বদলায়নি। যিরূশালেমে আসার কয়েক মাস আগে তারা ‘কে শ্রেষ্ঠ, . . . এই বিষয়ে বাদানুবাদ করিয়াছিলেন।’ আর নিস্তারপর্ব পালনের জন্য শহরে আসার ঠিক আগেই তাদের মধ্যে আবারও উচ্চপদ নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়েছিল। (মার্ক ৯:৩৩-৩৭; ১০:৩৫-৪৫) আর তাদের এই মনোভাব যে তখনও ছিল তার প্রমাণ পাওয়া যায় যখন প্রেরিতেরা একসঙ্গে তাদের শেষ নিস্তারপর্ব পালন করার জন্য ওপরের কুঠরীতে ছিলেন। সেই সময়ও তাদের মধ্যে কেউই অন্যদের পা ধুয়ে দেওয়ার সুযোগ নেননি, যা ছিল সেই সময়ের অতিথি আপ্যায়নের রীতি। তাদেরকে নম্রতা শেখানোর জন্য যীশু নিজে তাদের পা ধুইয়ে দিয়েছিলেন।—যোহন ১৩:২-১৫; ১ তীমথিয় ৫:৯, ১০.

৯. শেষ নিস্তারপর্বের পর যে সমস্যা দেখা দিয়েছিল তা যীশু কীভাবে সামলেছিলেন?

৯ এই শিক্ষা দেওয়া সত্ত্বেও, নিস্তারপর্ব পালন ও যীশু তাঁর আসন্ন মৃত্যুর স্মরণার্থক শুরু করার পর কী হয়েছিল লক্ষ্য করুন। লূকের সুসমাচার বলে: “তাঁহাদের মধ্যে এই বিবাদও উৎপন্ন হইল যে তাঁহাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ বলিয়া গণ্য।” প্রেরিতদের ওপর রেগে না গিয়ে ও তাদের বকাঝকা না করে, যীশু দয়ার সঙ্গে তাদের বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে তাদের এই জগতের ক্ষমতা-লোভী শাসকদের থেকে আলাদা হতে হবে। (লূক ২২:২৪-২৭) এরপর তিনি এমন একটা আজ্ঞা দিয়েছিলেন যেটাকে খ্রীষ্টের ব্যবস্থার ভিত্তিপ্রস্তর বলা যেতে পারে, তিনি বলেছিলেন: “এক নূতন আজ্ঞা আমি তোমাদিগকে দিতেছি, তোমরা পরস্পর প্রেম কর; আমি যেমন তোমাদিগকে প্রেম করিয়াছি, তোমরাও তেমনি পরস্পর প্রেম কর।”—যোহন ১৩:৩৪.

১০. যীশু তাঁর শিষ্যদের কোন্‌ আজ্ঞা দিয়েছিলেন এবং এর মানে কী ছিল?

১০ ওই দিন সন্ধ্যাবেলাতেই যীশু স্পষ্ট করে দেখিয়েছিলেন যে খ্রীষ্টতুল্য প্রেম কতদূর পর্যন্ত হওয়া উচিত। তিনি বলেছিলেন: “আমার আজ্ঞা এই, তোমরা পরস্পর প্রেম কর, যেমন আমি তোমাদিগকে প্রেম করিয়াছি। কেহ যে আপন বন্ধুদের নিমিত্ত নিজ প্রাণ সমর্পণ করে, ইহা অপেক্ষা অধিক প্রেম কাহারও নাই।” (যোহন ১৫:১২, ১৩) যীশু কি এ কথা বলছিলেন যে তাঁর শিষ্যদের তাদের বিশ্বাসী ভাইবোনদের জন্য প্রয়োজনে মরতেও প্রস্তুত থাকা উচিত? ওই ঘটনার চাক্ষুস সাক্ষি যোহন তাই মনে করেছিলেন কারণ পরে তিনি লিখেছিলেন: “[যীশু খ্রীষ্ট] আমাদের নিমিত্তে আপন প্রাণ দিলেন, ইহাতে আমরা প্রেম জ্ঞাত হইয়াছি; এবং আমরাও ভ্রাতাদের নিমিত্ত আপন আপন প্রাণ দিতে বাধ্য।”—১ যোহন ৩:১৬.

১১. (ক) কীভাবে আমরা খ্রীষ্টের ব্যবস্থা পালন করি? (খ) যীশু কোন্‌ উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন?

১১ অতএব অন্যদের শুধু খ্রীষ্টের বিষয়ে শেখালেই আমরা খ্রীষ্টের ব্যবস্থা পালন করি না। আমাদের অবশ্যই যীশুর মতো করে জীবনযাপন করতে হবে ও যীশুর মতো ব্যবহার করতে হবে। এটা ঠিক যে যীশু তাঁর শিক্ষায় সুন্দর ও ভাল ভাল শব্দ ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু, তিনি তাঁর কাজের দ্বারাও এক আদর্শ রেখেছিলেন। যদিও যীশু স্বর্গে একজন শক্তিশালী আত্মিক প্রাণী ছিলেন, তবুও তিনি পৃথিবীতে তাঁর পিতার ইচ্ছা পালন করার ও আমাদের জন্য এক আদর্শ রাখার সুযোগকে গ্রহণ করেছিলেন। তিনি নম্র, দয়ালু এবং সহমর্মী ছিলেন, তিনি দুঃখী ও নিপীড়িত লোকেদের সাহায্য করেছিলেন। (মথি ১১:২৮-৩০; ২০:২৮; ফিলিপীয় ২:৫-৮; ১ যোহন ৩:৮) আর যীশু তাঁর শিষ্যদের একে অন্যকে প্রেম করতে বলেছিলেন, ঠিক যেভাবে তিনি তাদেরকে প্রেম করেছিলেন।

১২. কেন বলা যায় যে খ্রীষ্টের ব্যবস্থা যিহোবাকে প্রেম করার গুরুত্বকে কমিয়ে দেয় না?

১২ কিন্তু খ্রীষ্টের ব্যবস্থায় যিহোবাকে প্রেম করা অর্থাৎ ব্যবস্থার সবচেয়ে মহৎ আজ্ঞা কোন্‌ স্থানে রয়েছে? (মথি ২২:৩৭, ৩৮; গালাতীয় ৬:২) দ্বিতীয় স্থানে? একেবারেই না! যিহোবার জন্য প্রেম ও আমাদের খ্রীষ্টান ভাইবোনদের জন্য প্রেম একটা অপরটার সঙ্গে ওতপ্রতোভাবে জড়িত। যিহোবাকে প্রেম না করে একজন তার ভাইকে প্রেম করতে পারে না, কারণ প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন: “যদি কেহ বলে, আমি ঈশ্বরকে প্রেম করি, আর আপন ভ্রাতাকে ঘৃণা করে, সে মিথ্যাবাদী; কেননা যাহাকে দেখিয়াছে, আপনার সেই ভ্রাতাকে যে প্রেম না করে, সে যাঁহাকে দেখে নাই, সেই ঈশ্বরকে প্রেম করিতে পারে না।”—১ যোহন ৪:২০. ১ যোহন ৩:১৭, ১৮ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।

১৩. যীশুর নতুন আজ্ঞার প্রতি শিষ্যদের বাধ্য হওয়ার ফল কী হয়েছিল?

১৩ যীশু যখন তাঁর শিষ্যদেরকে ঠিক তাঁর মতো করে একে অন্যকে প্রেম করার নতুন আজ্ঞা দিয়েছিলেন, তখন তিনি এর ফল কী হবে তাও বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “তোমরা যদি আপনাদের মধ্যে পরস্পর প্রেম রাখ, তবে তাহাতেই সকলে জানিবে যে, তোমরা আমার শিষ্য।” (যোহন ১৩:৩৫) যীশুর মৃত্যুর একশ বছর পরে সেই সময়ের ইতিহাসবেত্তা টারটুলিয়ান বলেছিলেন, প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের মধ্যে এমনই গভীর ভ্রাতৃপ্রেম ছিল। টারটুলিয়ান ন-খ্রীষ্টানদের কথা উদ্ধৃত করেছিলেন যারা বলতেন: ‘দেখুন তারা একে অন্যকে কত ভালবাসেন আর একে অন্যের জন্য মরতেও প্রস্তুত।’ আমরা আমাদের নিজেদের জিজ্ঞেস করতে পারি: ‘আমি কি আমার খ্রীষ্টান ভাইবোনদের জন্য এতটা ভালবাসা দেখাই যা প্রমাণ করে যে আমি যীশুর একজন শিষ্য?’

যেভাবে আমরা আমাদের ভালবাসার প্রমাণ দিতে পারি

১৪, ১৫. খ্রীষ্টের ব্যবস্থা পালন করাকে কী কঠিন করে তুলতে পারে কিন্তু কী আমাদের তা পালন করতে সাহায্য করতে পারে?

১৪ যিহোবার দাসদের জন্য খ্রীষ্টের মতো প্রেম দেখানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আপনার কি সেই ভাইবোনদেরকে ভালবাসা কঠিন বলে মনে হয় যারা স্বার্থপরের মতো শুধু নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত থাকেন? যাইহোক, আমরা আগেই দেখেছি যে প্রেরিতেরাও ঝগড়া করেছিলেন ও তাদের নিজেদের স্বার্থ চেষ্টা করেছিলেন। (মথি ২০:২০-২৪) গালাতীয় মণ্ডলীতেও খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে একে অন্যের সঙ্গে ঝগড়া হতো। প্রতিবেশীকে ভালবাসাই ব্যবস্থা পূর্ণ করে তা বলার পর পৌল তাদের সতর্ক করেছিলেন: “কিন্তু তোমরা যদি পরস্পর দংশাদংশি ও গেলাগেলি কর, তবে দেখিও, যেন পরস্পরের দ্বারা কবলিত না হও।” ঈশ্বরের আত্মার ফলের সঙ্গে মাংসিক কাজের পার্থক্য দেখানোর পর পৌল আরও পরামর্শ দিয়েছিলেন: “আইস আমরা . . . অনর্থক দর্প না করি, পরস্পরকে জ্বালাতন না করি, পরস্পর হিংসাহিংসি না করি।” তারপর প্রেরিত অনুরোধ করেছিলেন: “তোমরা পরস্পর এক জন অন্যের ভার বহন কর; এই রূপে খ্রীষ্টের ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে পালন কর।”—গালাতীয় ৫:১৪–৬:২.

১৫ আমরা যেন খ্রীষ্টের ব্যবস্থা মেনে চলি তা চেয়ে কি যিহোবা আমাদের কাছ থেকে খুব বেশি কিছু চাচ্ছেন? এটা ঠিক যে সেই ভাইবোনদের দয়া দেখানো কঠিন বলে মনে হতে পারে যারা আমাদের কটু কথা বলে আমাদের মনে কষ্ট দিয়েছেন কিন্তু তবুও আমরা ‘প্রিয় বৎসদের ন্যায় ঈশ্বরের অনুকারী হতে আর প্রেমে চলতে’ বাধ্য। (ইফিষীয় ৫:১, ২) আমাদের সবসময়ই ঈশ্বরের আদর্শকে সামনে রাখতে হবে যিনি “আমাদের প্রতি তাঁহার নিজের প্রেম প্রদর্শন করিতেছেন; কারণ আমরা যখন পাপী ছিলাম, তখনও খ্রীষ্ট আমাদের নিমিত্ত প্রাণ দিলেন।” (রোমীয় ৫:৮) যারা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছেন তাদের বা অন্য কাউকে যখন আমরা সাহায্য করার জন্য এগিয়ে যাই, তখন আমরা এই পরিতৃপ্তি পেতে পারি যে আমরা ঈশ্বরের মতো কাজ করছি ও খ্রীষ্টের ব্যবস্থা মেনে চলছি।

১৬. ঈশ্বর ও খ্রীষ্টের জন্য আমাদের ভালবাসার প্রমাণ আমরা কীভাবে দিতে পারি?

১৬ আমাদের মনে রাখা উচিত যে আমরা কথায় নয় কাজের দ্বারাই আমাদের ভালবাসার প্রমাণ দিই। একবার যীশু ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার সঙ্গে জড়িত বিষয়গুলোর কথা ভেবে তা পালন করাকে কঠিন বলে মনে করেছিলেন। যীশু প্রার্থনা করেছিলেন, “পিতঃ, যদি তোমার অভিমত হয়, আমা হইতে এই পানপাত্র দূর কর।” কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই তিনি বলেছিলেন: “তথাপি আমার ইচ্ছা নয়, তোমারই ইচ্ছা সিদ্ধ হউক।” (লূক ২২:৪২) যীশুকে অনেক দুঃখ ভোগ করতে হয়েছিল কিন্তু তবুও তিনি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করেছিলেন। (ইব্রীয় ৫:৭, ৮) বাধ্য হওয়া হল আমাদের ভালবাসার আরেকটা প্রমাণ যা দেখায় যে আমরা ঈশ্বরের পথকেই সবচেয়ে ভাল পথ বলে মনে করি। বাইবেল বলে: “ঈশ্বরের প্রতি প্রেম এই, যেন আমরা তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করি।” (১ যোহন ৫:৩) আর যীশু তাঁর প্রেরিতদের বলেছিলেন: “তোমরা যদি আমাকে প্রেম কর, তবে আমার আজ্ঞা সকল পালন করিবে।”—যোহন ১৪:১৫.

১৭. যীশু তাঁর শিষ্যদের কোন্‌ বিশেষ আজ্ঞা দিয়েছিলেন এবং কীভাবে আমরা জানি যে এটা আমাদের দিনের জন্যও খাটে?

১৭ খ্রীষ্ট তাঁর শিষ্যদের একে অন্যকে প্রেম করার আদেশ দেওয়া ছাড়াও আর কোন্‌ বিশেষ আদেশ দিয়েছিলেন? তিনি তাদের প্রচার করার আদেশ দিয়েছিলেন, যে কাজের জন্য তিনি তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। পিতর বলেছিলেন: “তিনি আদেশ করিলেন, যেন আমরা লোকদের কাছে প্রচার করি ও সাক্ষ্য দিই।” (প্রেরিত ১০:৪২) যীশু স্পষ্টভাবে আদেশ দিয়েছিলেন: “অতএব তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর; পিতার ও পুত্ত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে তাহাদিগকে বাপ্তাইজ কর; আমি তোমাদিগকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিয়াছি, সে সমস্ত পালন করিতে তাহাদিগকে শিক্ষা দেও।” (মথি ২৮:১৯, ২০; প্রেরিত ১:৮) যীশু দেখিয়েছিলেন যে এই আদেশগুলো তাঁর ‘শেষকালের’ শিষ্যদের জন্যও, কারণ তিনি বলেছিলেন: “সর্ব্ব জাতির কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত রাজ্যের এই সুসমাচার সমুদয় জগতে প্রচার করা যাইবে; আর তখন শেষ উপস্থিত হইবে।” (দানিয়েল ১২:৪; মথি ২৪:১৪) অবশ্যই ঈশ্বরও চান যেন আমরা প্রচার করি। কিন্তু, কিছুজন হয়তো ভাবতে পারেন যে এই কাজ করতে বলে ঈশ্বর আমাদের কাছ থেকে খুব বেশি কিছু চাচ্ছেন। সত্যিই কি তাই?

যে কারণে এটাকে কঠিন মনে হতে পারে

১৮. যিহোবা যা চান তা পালন করতে গিয়ে যদি আমাদের দুঃখকষ্ট ভোগ করতেও হয়, তবুও আমাদের কী মনে রাখা উচিত?

১৮ আমরা আগেই দেখেছি যে যিহোবা ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে লোকেদের কাছ থেকে ভিন্ন ভিন্ন জিনিস চেয়েছেন। আর তাদেরকে যা করতে বলা হয়েছিল তা যেমন ভিন্ন ছিল, তেমনই তারা যে সব পরীক্ষা ভোগ করেছিলেন সেগুলোও আলাদা আলাদা রকমের ছিল। ঈশ্বরের প্রিয় পুত্র সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা ভোগ করেছিলেন আর শেষ পর্যন্ত তাঁকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছিল কারণ ঈশ্বর যা চেয়েছিলেন তিনি তা করেছিলেন। কিন্তু যিহোবা আমাদের কাছ থেকে যা চান তা করতে গিয়ে যদি আমাদের দুঃখকষ্ট ভোগ করতেও হয়, তখনও আমাদের মনে রাখা উচিত যে ঈশ্বর আমাদের পরীক্ষার জন্য দায়ী নন। (যোহন ১৫:১৮-২০; যাকোব ১:১৩-১৫) শয়তান বিদ্রোহ পাপ, দুঃখকষ্ট ও মৃত্যু নিয়ে এসেছে আর শয়তানই এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে যার ফলে যিহোবা তাঁর দাসদের কাছ থেকে যা চান তা করা প্রায়ই তাদের জন্য কঠিন হয়েছে।—ইয়োব ১:৬-১৯; ২:১-৮.

১৯. ঈশ্বর তাঁর পুত্রের মাধ্যমে আমাদের কাছ থেকে যা চেয়েছেন তা করা কেন একটা বড় সুযোগ?

১৯ এই শেষকালে যিহোবা তাঁর পুত্রের মাধ্যমে নির্দেশনা দিয়েছেন যে তাঁর দাসেরা সারা পৃথিবীতে এই কথা ঘোষণা করবে যে ঈশ্বরের রাজ্যই মানুষের সমস্ত দুঃখকষ্টের একমাত্র সমাধান। ঈশ্বরের এই সরকার পৃথিবীর সমস্ত সমস্যা দূর করবে যেমন অপরাধ, দারিদ্র, বার্ধক্য, অসুস্থতা, মৃত্যু। এছাড়াও এই রাজ্য পৃথিবীতে এক চমৎকার পরমদেশ নিয়ে আসবে, যেখানে এমনকি মৃতেরাও পুনরুত্থিত হবে। (মথি ৬:৯, ১০; লূক ২৩:৪৩; প্রেরিত ২৪:১৫; প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪) লোকেদেরকে এই সমস্ত বিষয়ের সুখবর শোনানো আমাদের জন্য কত বড় এক সুযোগ! তাহলে, এটা স্পষ্ট যে যিহোবা আমাদের কাছ থেকে যা চান তা খুব কঠিন নয়। আমরা যে বিরোধিতার মুখোমুখি হই তার জন্য শয়তান ও তার জগৎ দায়ী।

২০. দিয়াবলের তৈরি করা কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা আমরা কীভাবে করতে পারি?

২০ কীভাবে আমরা শয়তানের তৈরি করা এই কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা সফলভাবে করতে পারি? এই কথাগুলো মনে রেখে: “বৎস, জ্ঞানবান হও; আমার চিত্তকে আনন্দিত কর; তাহাতে যে আমাকে টিট্‌কারি দেয়, তাহাকে উত্তর দিতে পারিব।” (হিতোপদেশ ২৭:১১) যীশু যখন তাঁর পিতার ইচ্ছা পালন করার জন্য তাঁর নিরাপদ স্বর্গীয় জীবন ত্যাগ করে পৃথিবীতে এসেছিলেন তখন তিনি এমন উত্তর প্রস্তুত করেছিলেন যা যিহোবা শয়তানকে তার টিটকারির উত্তর হিসেবে দিতে পেরেছিলেন। (যিশাইয় ৫৩:১২; ইব্রীয় ১০:৭) মানুষ হয়ে যীশু তাঁর ওপর আসা প্রত্যেকটা পরীক্ষা সহ্য করেছিলেন, এমনকি যাতনাদণ্ডে মারাও গিয়েছিলেন। আমরা যদি তাঁকে আমাদের আদর্শ হিসেবে অনুকরণ করি, তবে আমরাও পরীক্ষার সময় কষ্ট সহ্য করতে এবং যিহোবা আমাদের কাছ থেকে যা চান তা করতে পারব।—ইব্রীয় ১২:১-৩.

২১. যিহোবা ও তাঁর পুত্র আমাদের যে প্রেম দেখিয়েছেন সে সম্বন্ধে আপনি কেমন বোধ করেন?

২১ ঈশ্বর ও তাঁর পুত্র আমাদের জন্য কত প্রেমই না দেখিয়েছেন! যীশুর বলিদানের জন্যই বাধ্য মানবজাতির পরমদেশে অনন্তকাল বেঁচে থাকার আশা আছে। তাই আসুন কোন কিছুই যাতে আমাদের আশাকে ম্লান করে দিতে না পারে আমরা সেদিকে নজর দিই। আসুন আমরা নিজেরা যীশু যা করেছিলেন সেটাকে পৌলের মতো করে অনুভব করি, যিনি বলেছিলেন: ‘ঈশ্বরের পুত্ত্র . . . আমাকে প্রেম করিলেন, এবং আমার নিমিত্তে আপনাকে প্রদান করিলেন।’ (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (গালাতীয় ২:২০) আর আমরা যেন আমাদের প্রেমময় ঈশ্বর যিহোবাকে অন্তর থেকে ধন্যবাদ জানাই, যিনি কখনই আমাদের কাছ থেকে খুব বেশি কিছু চান না।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

◻ আজকে যিহোবা আমাদের কাছ থেকে কী চান?

◻ তাঁর প্রেরিতদের সঙ্গে শেষ সন্ধ্যায় খ্রীষ্ট কীভাবে প্রেমের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছিলেন?

◻ কীভাবে আমরা প্রমাণ দিতে পারি যে আমরা ঈশ্বরকে ভালবাসি?

◻ যিহোবা আমাদের কাছ থেকে যা চান তা করা কেন একটা বিশেষ সুযোগ?

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

যীশু তাঁর প্রেরিতদের পা ধুইয়ে দিয়ে কোন্‌ শিক্ষা দিয়েছিলেন?

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

যে কোন বিরোধিতাই আসুক না কেন, সুসমাচার প্রচার করা এক আনন্দময় সুযোগ

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৫)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার