-
“তিনিই প্রথমে আমাদিগকে প্রেম করিয়াছেন”যিহোবার নিকটবর্তী হোন
-
-
সর্বমহৎ প্রেমের কাজ
৪. একজন রোমীয় সৈন্য কীভাবে দেখতে পেয়েছিলেন যে, যিশু কোনো সাধারণ মানুষ ছিলেন না এবং সেই সৈন্য কোন সিদ্ধান্তে এসেছিলেন?
৪ রোমীয় শতপতি যিনি যিশুর মৃত্যুদণ্ডের বিষয়টা তদারক করছিলেন, তিনি যিশুর মৃত্যুর আগে অন্ধকার এবং মৃত্যুর পরে তীব্র ভূমিকম্প হতে দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “সত্যই, ইনি ঈশ্বরের পুত্ত্র ছিলেন।” (মথি ২৭:৫৪) স্পষ্টতই, যিশু কোনো সাধারণ মানুষ ছিলেন না। সেই সৈনিক পরাৎপর ঈশ্বরের একজাত পুত্রের মৃত্যুদণ্ড দিতে সাহায্য করেছিলেন! এই পুত্র তাঁর পিতার কাছে কতটা প্রিয় ছিলেন?
৫. যিহোবা ও তাঁর পুত্র স্বর্গে একসঙ্গে যে সুদীর্ঘ সময় কাটিয়েছিলেন, তা কীভাবে উদাহরণের মাধ্যমে বর্ণনা করা যেতে পারে?
৫ বাইবেল যিশুকে “সমুদয় সৃষ্টির প্রথমজাত” বলে। (কলসীয় ১:১৫) ভেবে দেখুন—যিহোবার পুত্র ভৌত বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের পূর্বে অস্তিত্বে ছিলেন। তা হলে, পিতা ও পুত্র কতদিন একসঙ্গে ছিলেন? কিছু বিজ্ঞানী অনুমান করে যে, এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ১৩শ কোটি বছরের পুরনো। আপনি কি সেই পরিমাণ সময় কল্পনা করতে পারেন? বিজ্ঞানীদের দ্বারা গণিত বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের বয়স সম্বন্ধে ধারণা লাভ করতে লোকেদের সাহায্য করার জন্য, একটা প্ল্যানেটারিয়াম ১১০ মিটার লম্বা একটা কালানুক্রমিক রেখাচিত্র গঠন করে। দর্শনার্থীরা সেই রেখাচিত্রের ওপর হেঁটে যাওয়ার সময়, তাদের প্রতিটা পদক্ষেপ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের আয়ুর প্রায় সাড়ে সাত কোটি বছরকে প্রতিনিধিত্ব করে। কালানুক্রমিক রেখাচিত্রের শেষে, পুরো মানব ইতিহাসকে মানুষের একটা চুলের সমান পুরু একটা চিহ্নের দ্বারা তুলে ধরা হয়! এই অনুমান যদি সঠিকও হয়, তবুও সেই সম্পূর্ণ কালানুক্রমিক রেখা যিহোবার পুত্রের আয়ুকে তুলে ধরার মতো যথেষ্ট লম্বা নয়! সেই সুদীর্ঘ সময়ে তিনি কী কাজ করেছিলেন?
৬. (ক) যিহোবার পুত্র তাঁর মনুষ্যপূর্ব অস্তিত্বের সময় কোন কাজে ব্যস্ত ছিলেন? (খ) যিহোবা ও তাঁর পুত্রের মধ্যে কোন ধরনের বন্ধন বিদ্যমান?
৬ পুত্র আনন্দের সঙ্গে তাঁর পিতার “সুদক্ষ কর্মী” হিসেবে কাজ করেছিলেন। (হিতোপদেশ ৮:৩০, NW) বাইবেল বলে: “যাহা হইয়াছে, তাহার কিছুই [পুত্র] ব্যতিরেকে হয় নাই।” (যোহন ১:৩) অতএব, যিহোবা ও তাঁর পুত্র সমস্তকিছুকে অস্তিত্বে আনার জন্য একসঙ্গে কাজ করেছিলেন। তাদের কতই না রোমাঞ্চকর, আনন্দপূর্ণ সময় কেটেছিল! অনেকেই একমত হবেন যে, বাবা অথবা মা ও সন্তানের মধ্যে ভালবাসা অত্যন্ত দৃঢ় থাকে। আর ভালবাসা বা প্রেম হল “সিদ্ধির যোগবন্ধন।” (কলসীয় ৩:১৪) অতএব, আমাদের মধ্যে কে এত বিশাল সময় ধরে অস্তিত্বে থাকা বন্ধনের ক্ষমতা উপলব্ধি করতে পারে? এটা স্পষ্ট যে, যিহোবা ঈশ্বর ও তাঁর পুত্র প্রেমের সবচেয়ে দৃঢ়বন্ধনে একতাবদ্ধ ছিলেন।
৭. যিশু যখন বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন, তখন কীভাবে যিহোবা তাঁর পুত্র সম্বন্ধে তাঁর অনুভূতি প্রকাশ করেছিলেন?
৭ তা সত্ত্বেও, পিতা তাঁর পুত্রকে এক মানবশিশু হিসেবে পৃথিবীতে জন্ম নেওয়ার জন্য পাঠিয়েছিলেন। তা করার মানে ছিল যে, যিহোবাকে কয়েক দশকের জন্য স্বর্গে তাঁর প্রিয় পুত্রের অন্তরঙ্গ সাহচর্য ত্যাগ করতে হয়েছিল। গভীর আগ্রহ নিয়ে, তিনি স্বর্গ থেকে যিশুকে সিদ্ধ মানুষ হিসেবে বড় হতে দেখেছিলেন। প্রায় ৩০ বছর বয়সে, যিশু বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। যিহোবা তাঁর সম্বন্ধে কীরকম বোধ করেছিলেন, সেই বিষয়ে আমাদের অনুমান করার প্রয়োজন নেই। পিতা স্বর্গ থেকে নিজে বলেছিলেন: “ইনিই আমার প্রিয় পুত্ত্র, ইঁহাতেই আমি প্রীত।” (মথি ৩:১৭) তাঁর সম্বন্ধে যা ভবিষ্যদ্বাণী করা ছিল, তাঁর কাছ থেকে যা কিছু চাওয়া হয়েছিল, সেগুলোর সমস্তই যিশু বিশ্বস্তভাবে করেছিলেন, তা দেখে তাঁর পিতা নিশ্চয়ই অনেক খুশি হয়েছিলেন!—যোহন ৫:৩৬; ১৭:৪.
৮, ৯. (ক) সাধারণ কাল ৩৩ সালের ১৪ই নিশান যিশু কী ভোগ করেছিলেন এবং তাঁর স্বর্গীয় পিতা কীভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন? (খ) কেন যিহোবা তাঁর পুত্রকে কষ্টভোগ ও মৃত্যুবরণ করতে দিয়েছিলেন?
৮ সাধারণ কাল ৩৩ সালের ১৪ই নিশান যিহোবা কীরকম বোধ করেছিলেন? যিশুর সঙ্গে যখন বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছিল এবং রাতে এক দল লোক যখন তাঁকে গ্রেপ্তার করেছিল, তখন যিহোবার কেমন লেগেছিল? যিশুর বন্ধুরা যখন তাঁকে ফেলে চলে গিয়েছিল এবং অবৈধভাবে তাঁর বিচার করা হয়েছিল, তখনই বা কী? তাঁকে যখন ঠাট্টা করা হয়েছিল, থুথু দেওয়া হয়েছিল ও ঘুসি মারা হয়েছিল? তাঁকে যখন চাবুক মারা হয়েছিল, তাঁর পিঠ চিরে গিয়েছিল? তাঁকে যখন একটা কাঠের দণ্ডের ওপর হাতে ও পায়ে পেরেক মারা হয়েছিল এবং ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল আর লোকেরা তাঁকে তীব্র ভাষায় গালাগালি করছিল? তাঁর প্রিয় পুত্র যখন মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতর হয়ে তাঁর কাছে চিৎকার করেছিলেন, তখন পিতার কেমন লেগেছিল? যিশু যখন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন এবং সমস্ত সৃষ্টির শুরুর সময় থেকে এই প্রথমবারের মতো তাঁর প্রিয় পুত্র যখন অস্তিত্বহীন হয়ে যাচ্ছিলেন, তখন যিহোবার কেমন লেগেছিল?—মথি ২৬:১৪-১৬, ৪৬, ৪৭, ৫৬, ৫৯, ৬৭; ২৭:৩৮-৪৪, ৪৬; যোহন ১৯:১.
“ঈশ্বর . . . আপনার একজাত পুত্ত্রকে দান করিলেন”
৯ আমরা কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলি। যিহোবার যেহেতু অনুভূতি রয়েছে, তাই তিনি তাঁর পুত্রের মৃত্যুতে যে-কষ্ট পেয়েছিলেন, তা আমাদের ভাষায় প্রকাশ করার ক্ষমতা নেই। যা প্রকাশ করা যেতে পারে তা হল, এটা ঘটতে দেওয়ার পিছনে যিহোবার উদ্দেশ্য কী ছিল। পিতা কেন নিজেকে এইরকম অনুভূতির দিকে পরিচালিত করেছিলেন? যোহন ৩:১৬ পদে যিহোবা আমাদের কাছে অপূর্ব কিছু প্রকাশ করেছেন, যে-বাইবেল পদটি এত গুরুত্বপূর্ণ যে এটিকে ক্ষুদ্র সুসমাচার বলা হয়েছে। এটি বলে: “ঈশ্বর জগৎকে এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার একজাত পুত্ত্রকে দান করিলেন, যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।” অতএব যিহোবার উদ্দেশ্যটা ছিল প্রেম। যিহোবার দান—আমাদের জন্য কষ্টভোগ ও মৃত্যুবরণ করতে তাঁর পুত্রকে পাঠানো—ছিল সর্বমহৎ প্রেমের কাজ।
-
-
“তিনিই প্রথমে আমাদিগকে প্রেম করিয়াছেন”যিহোবার নিকটবর্তী হোন
-
-
১২ আগাপে সেইরকম প্রেমকে নির্দেশ করে, যা নীতির দ্বারা পরিচালিত হয়। অতএব এটা অন্য একজন ব্যক্তির প্রতি আবেগগত সাড়া দেওয়ার চেয়ে আরও বেশি কিছু। এর পরিধি আরও ব্যাপক, এর ভিত্তি আরও সুবিবেচনাপূর্ণ ও সুচিন্তিত। সবচেয়ে বড় কথা হল যে, আগাপে সম্পূর্ণভাবে নিঃস্বার্থপর। উদাহরণ হিসেবে, আবারও যোহন ৩:১৬ পদটা দেখুন। ‘জগৎ’ কী, যেটাকে ঈশ্বর এত ভালবেসেছিলেন যে, তাঁর একজাত পুত্রকে দান করেছিলেন? এটা মুক্তিযোগ্য মানবজাতির জগৎ। এটা এমন অনেক লোককে অন্তর্ভুক্ত করে, যারা পাপপূর্ণ জীবনযাপন করছে। যিহোবা কি এদের প্রত্যেককে তাঁর নিজের বন্ধু হিসেবে প্রেম করেন, যেভাবে তিনি বিশ্বস্ত অব্রাহামকে করেছিলেন? (যাকোব ২:২৩) না, কিন্তু যিহোবা প্রেমের সঙ্গে সকলের প্রতি মঙ্গলভাব দেখান, এমনকি এর জন্য তাঁকে অনেক মূল্য দিতে হলেও। তিনি চান যেন সকলে অনুতপ্ত হয় ও তাদের পথগুলো পরিবর্তন করে। (২ পিতর ৩:৯) অনেকে তা করে। এদেরকে তিনি আনন্দের সঙ্গে তাঁর বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেন।
-