ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • bt অধ্যায় ৩ পৃষ্ঠা ২০-২৭
  • “পবিত্র শক্তিতে পূর্ণ হলেন”

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • “পবিত্র শক্তিতে পূর্ণ হলেন”
  • ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে ‘পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দেওয়া’!
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • “তারা সকলে একই জায়গায় একসঙ্গে ছিলেন” (প্রেরিত ২:১-৪)
  • ‘প্রত্যেকে নিজ নিজ ভাষায় কথা বলতে শোনে’ (প্রেরিত ২:৫-১৩)
  • ‘পিতর উঠে দাঁড়ান’ (প্রেরিত ২:১৪-৩৭)
  • “তোমরা প্রত্যেকে . . . বাপ্তিস্ম নাও” (প্রেরিত ২:৩৮-৪৭)
  • খ্রিস্টধর্ম প্রথম শতাব্দীর যিহুদিদের মধ্যে প্রসারিত হয়
    ২০০৫ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল
    ২০০৩ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • “সর্ব্ব ভাষাবাদী” লোকেরা সুসমাচার শোনে
    ২০০৫ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • কার নামে ও কীসের নামে বাপ্তাইজিত?
    ২০১০ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
আরও দেখুন
ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে ‘পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দেওয়া’!
bt অধ্যায় ৩ পৃষ্ঠা ২০-২৭

অধ্যায় ৩

“পবিত্র শক্তিতে পূর্ণ হলেন”

পঞ্চাশত্তমীর দিনে শিষ্যদের উপর পবিত্র শক্তি বর্ষণ করা হলে যা ঘটে

প্রেরিত ২:১-৪৭ পদের উপর ভিত্তি করে

১. পঞ্চাশত্তমীর উৎসবের দিন জেরুসালেমের পরিবেশ কেমন ছিল তা বর্ণনা করুন?

জেরুসালেমের রাস্তা আনন্দ ও উত্তেজনায় পরিপূর্ণ। জায়গায় জায়গায় লোকদের ভিড় জমা হয়েছে আর তারা আনন্দ উৎসব করছে।a মন্দিরের বেদি থেকে ধোঁয়া উঠছে, লেবীয়দের গান দূরদূরান্ত পর্যন্ত শোনা যাচ্ছে। তারা হলেল (গীতসংহিতা ১১৩ থেকে ১১৮) নামে এক প্রশংসা গীত গাইছে আর সম্ভবত একজন লেবি প্রথম স্তবকটা গাইছেন এবং বাকি লেবীয়েরা পুরো কোরাসটা গাইছে। দূরদূরান্তের দেশ থেকেও লোকেরা জেরুসালেম এসেছেন। যেমন, এলম, মেসোপটেমিয়া, কাপ্পাদকিয়া, পন্ত, মিশর ও রোম।b কিন্তু কেন? কারণ আজ পঞ্চাশত্তমীর উৎসব যেটাকে ‘অগ্রিমাংসের দিবসও’ বলা হয়ে থাকে। (গণনা. ২৮:২৬) এই বার্ষিক উৎসবটা যব কাটার শেষে এবং গম কাটার শুরুর সময়ে উদ্‌যাপন করা হয়।

একটা ম্যাপ যা দেখায়, ৩৩ খ্রিস্টাব্দের পঞ্চাশত্তমীর দিন যারা সুসমাচার শুনেছিল, তারা কোন কোন দেশ থেকে এসেছিল। ১. অঞ্চল: লুবিয়া, মিশর, ইথিওপিয়া, বিথুনিয়া, পন্ত, কাপ্পাদকিয়া, যিহূদিয়া, মেসোপটেমিয়া, ব্যাবিলনিয়া, এলম, মাদীয় ও পার্থীয়। ২. নগর: রোম, আলেক্‌সান্দ্রীয়, মোফ, আন্তিয়খিয়া (সুরিয়ার অন্তর্গত), জেরুসালেম, ও ব্যাবিলন। ৩. জলাশয়: ভূমধ্যসাগর, কৃষ্ণ সাগর, লোহিত সাগর, কাস্পিয়ান সাগর ও পারস্য উপসাগর।

জেরুসালেম —যিহুদিদের উপাসনা করার এক বিশেষ জায়গা

প্রেরিত বইয়ের শুরুর অধ্যায়গুলোতে যে-ঘটনাগুলো লেখা রয়েছে, তার বেশিরভাগই জেরুসালেমে ঘটেছিল। এই নগরটা যিহূদা দেশের মাঝামাঝি পাহাড়ি এলাকায় ভূমধ্যসাগর থেকে প্রায় ৫৫ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ১০৭০ সালে, রাজা দায়ূদ সিয়োন পর্বতের উপর একটা দুর্গ জয় করেন আর সময়ের সাথে সাথে সেই পর্বতের আশেপাশের এলাকায় লোকেরা বসবাস করতে শুরু করে। এভাবে যে-নগর তৈরি হয়েছিল, তা পরবর্তী সময়ে জেরুসালেম নামে প্রাচীন ইজরায়েলের রাজধানীতে পরিণত হয়।

সিয়োন পর্বতের কাছেই মোরিয়া পর্বত রয়েছে। প্রাচীন যিহুদি ইতিহাস অনুসারে, অব্রাহাম এই মোরিয়া পর্বতেই ইস্‌হাককে বলি দিতে নিয়ে এসেছিলেন। এই ঘটনাটা প্রেরিত বইয়ে লেখা ঘটনাগুলোর প্রায় ১,৯০০ বছর আগে ঘটেছিল। শলোমন যখন মোরিয়া পর্বতে প্রথম মন্দির তৈরি করেছিলেন, তখন থেকেই মোরিয়া পর্বত জেরুসালেম নগরের একটা অংশ হয়ে উঠেছিল। পরবর্তী সময়ে, এই চমৎকার মন্দিরটা যিহুদিদের জীবনে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল এবং তাদের উপাসনার এক গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হয়ে উঠেছিল।

যিহোবার এই মন্দিরে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা থেকে যিহুদিরা আসত। এখানে তারা ঈশ্বরের উদ্দেশে বলি উৎসর্গ করত, তাঁকে উপাসনা করত এবং বছরের আলাদা আলাদা সময়ে যে-উৎসবগুলো হত, সেগুলো পালন করত। এভাবে তারা ঈশ্বরের এই আজ্ঞার প্রতি বাধ্যতা দেখাত: “প্রত্যেক পুরুষ যেন বছরে তিন বার তোমার ঈশ্বর যিহোবার সামনে উপস্থিত হয়। . . . তাদের সেই জায়গায় উপস্থিত হতে হবে, যেটা ঈশ্বর বেছে নেবেন।” (দ্বিতীয়. ১৬:১৬, NW) মহাসভা অর্থাৎ যিহুদিদের সবচেয়ে বড়ো আদালত এই জেরুসালেমেই ছিল, যেটা পুরো দেশের প্রশাসনকে দেখাশোনা করত।

২. তেত্রিশ খ্রিস্টাব্দের পঞ্চাশত্তমীর দিন কোন আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছিল?

২ তেত্রিশ খ্রিস্টাব্দের বসন্তের এক মনোরম সকালে প্রায় ন-টার দিকে এমন একটা ঘটনা ঘটে, যে-ঘটনার বিষয়ে আজও লোকেরা কথা বলে থাকে। যিশুর প্রায় ১২০ জন শিষ্য একটা ঘরে একত্রিত হয় আর “হঠাৎ আকাশ থেকে প্রচণ্ড জোরে বাতাস বয়ে যাওয়ার মত একটা শব্দ হল” আর পুরো ঘরে তা শোনা গেল। (প্রেরিত ২:২) এরপর এমন এক অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটে যা আগে কখনো ঘটেনি। শিষ্যেরা সেই ঘরের মধ্যে আগুনের ছোটো ছোটো শিখা দেখতে পায়, যা দেখতে জিভের মত ছিল এবং সেগুলো প্রত্যেকের উপর আলাদা আলাদাভাবে গিয়ে বসল।c আর তখন প্রত্যেক শিষ্য ‘পবিত্র শক্তিতে পূর্ণ হল’ এবং প্রত্যেকে ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় কথা বলতে শুরু করল। ঘর থেকে বাইরে আসার পর, শিষ্যেরা জেরুসালেমে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের সঙ্গে তাদের ভাষায় কথা বলতে শুরু করে। সেই বিদেশিরা এটা দেখে আশ্চর্য হয়ে যায় যে, কীভাবে এই লোকেরা যিহুদি হওয়া সত্ত্বেও আমাদের ভাষায় কথা বলছে। বিদেশ থেকে আসা প্রত্যেকে শিষ্যদের মুখে তাদের “নিজ নিজ ভাষায়” কথা শুনতে পায়।—প্রেরিত ২:১-৬.

৩. (ক) কেন আমরা বলতে পারি, ৩৩ খ্রিস্টাব্দের পঞ্চাশত্তমীর দিনে সত্য উপাসনার ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল? (খ) পিতর বক্তৃতা দেওয়ার মাধ্যমে কীভাবে ‘স্বর্গরাজ্যের চাবিগুলোর’ মধ্যে থেকে প্রথম চাবিটা ব্যবহার করেছিলেন?

৩ আমরা যে-ঘটনার বিবরণ সম্বন্ধে পড়লাম, এই বিবরণ সত্য উপাসনার ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এর কারণ এই ঘটনার মাধ্যমে আত্মিক ইজরায়েল অর্থাৎ অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের নিয়ে মণ্ডলী গঠিত হয়েছিল। (গালা. ৬:১৬) তবে সেই দিন আরও কিছু ঘটেছিল। পিতর জনতার সঙ্গে কথা বলার সময় তিনটে ‘স্বর্গরাজ্যের চাবির’ মধ্যে প্রথম চাবিটা ব্যবহার করেন। প্রত্যেকটা চাবি আলাদা আলাদা দলের লোকদের জন্য কিছু বিশেষ সুযোগের দ্বার খুলে দিত। (মথি ১৬:১৮, ১৯) পিতর কীভাবে পঞ্চাশত্তমীর দিন প্রথম চাবিটা ব্যবহার করেছিলেন? পিতর যিহুদি এবং ধর্মান্তরিত ব্যক্তিদের সামনে যে-বক্তৃতা দিয়েছিলেন, তা সেই ব্যক্তিদের সামনে সুসমাচার গ্রহণ করার এবং পবিত্র শক্তির মাধ্যমে অভিষিক্ত হওয়ার সুযোগকে খুলে দিয়েছিল। এভাবে তারা আত্মিক ইজরায়েলের অংশ হওয়ার এবং পরবর্তী সময়ে মশীহ রাজ্যের রাজা ও যাজক হিসেবে রাজত্ব করার সুযোগ লাভ করত। (প্রকা. ৫:৯, ১০) সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সুযোগ শমরীয়দের এবং তারপর ন-যিহুদিদের দেওয়া হত। ৩৩ খ্রিস্টাব্দের পঞ্চাশত্তমীর দিনের ঘটনা থেকে বর্তমানে খ্রিস্টানেরা কী শিখতে পারে?d

“তারা সকলে একই জায়গায় একসঙ্গে ছিলেন” (প্রেরিত ২:১-৪)

৪. কীভাবে বর্তমানে খ্রিস্টীয় মণ্ডলী ৩৩ খ্রিস্টাব্দে গঠিত হওয়া মণ্ডলীরই অংশ?

৪ খ্রিস্টীয় মণ্ডলী ১২০ জন শিষ্যকে নিয়ে গঠিত হয়েছিল, যারা উপরের একটা ঘরে “সকলে একই জায়গায় একসঙ্গে ছিলেন” আর যাদের পবিত্র শক্তির মাধ্যমে অভিষিক্ত করা হয়েছিল। (প্রেরিত ২:১) তবে, সেই দিন শেষ হওয়ার আগেই সেই মণ্ডলীতে বাপ্তাইজিত ব্যক্তিদের সংখ্যা বেড়ে কয়েক হাজার হয়ে গিয়েছিল। আর এটা ছিল এমন এক সংগঠনের শুরু, যা বর্তমান দিনে আমাদের সময়ে দিনরাত বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। বর্তমানে, এই খ্রিস্টীয় মণ্ডলী সেই সমস্ত পুরুষ ও নারীদের নিয়ে গঠিত, যাদের ঈশ্বরের প্রতি গভীর সম্মান ও ভালোবাসা রয়েছে। আর এরা হল সেই ব্যক্তি, যারা ঈশ্বরের “রাজ্যের সুসমাচার” প্রচার করে, যাতে শেষ আসার আগে ‘সমস্ত জাতির’ কাছে তারা “সুসমাচার জানাতে পারে।”—মথি ২৪:১৪.

৫. প্রথম শতাব্দীতে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে একত্রিত হয়ে, কোন আশীর্বাদ লাভ করা গিয়েছিল আর বর্তমানেও কোন আশীর্বাদ লাভ করা যায়?

৫ খ্রিস্টীয় মণ্ডলী সারা পৃথিবীতে প্রচার করার পাশাপাশি যিহোবার সঙ্গে ভাই-বোনদের সম্পর্ক শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। প্রথমে এই মণ্ডলী অভিষিক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল এবং পরে এই মণ্ডলীতে “আরও মেষ” যুক্ত হয়েছে। (যোহন ১০:১৬) প্রেরিত পৌল রোমীয়দের উদ্দেশে লেখা চিঠিতে সেখানকার খ্রিস্টান ভাই-বোনদের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলেন কারণ তারা একে অন্যকে সাহায্য করার জন্য সবসময় প্রস্তুত ছিল। তিনি লিখেছিলেন, “আমি তোমাদের দেখার জন্য উৎসুক হয়ে আছি, যেন তোমাদের শক্তিশালী করার জন্য ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া কোনো দান দিতে পারি; অথবা অন্য কথায় বললে, আমরা যেন উভয়েরই অর্থাৎ তোমাদের ও আমার বিশ্বাস দ্বারা পরস্পরকে উৎসাহিত করতে পারি।”—রোমীয় ১:১১, ১২.

রোম—এক বড়ো সাম্রাজ্যের রাজধানী

প্রেরিত বইতে বলা ঘটনাগুলো সেই সময়ে ঘটেছিল, যখন রোম পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বড়ো এবং রাজনৈতিক দিক থেকেও সবচেয়ে শক্তিশালী নগর ছিল। রোম এমন এক বড়ো সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল, যার অধীনে ব্রিটেন থেকে শুরু করে উত্তর আফ্রিকা এবং অ্যাটলান্টিক মহাসাগর থেকে শুরু করে পারস্য উপসাগর পর্যন্ত ছিল।

রোমে বিভিন্ন সংস্কৃতি, জাতি ও ভাষার লোকেরা থাকত এবং তাদের মধ্যে কুসংস্কার ছেয়ে ছিল। রোমের রাস্তাঘাট খুবই ভালো ছিল আর তাই, পর্যটক ও ব্যবসায়ীরা যেকোনো জায়গা থেকে রোমে আসতে পারত। রোম থেকে কিছু দূরে অস্ট্রিয়া বন্দর ছিল। বড়ো বড়ো বন্দর থেকে অনেক জাহাজ এই অস্ট্রিয়া বন্দরে আসত আর রোমের জন্য খাবার এবং অন্যান্য বিলাসবহুল সামগ্রী নিয়ে আসত।

প্রথম শতাব্দীতে রোমের জনসংখ্যা দশ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। সম্ভবত এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি ক্রীতদাস ছিল, এদের মধ্যে কিছু ক্রীতদাস অপরাধী ছিল আর কিছু বাচ্চা ছিল, যাদের বাবা-মায়েরা তাদের ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দিয়েছিল কিংবা তাদেরকে একা ছেড়ে দিয়েছিল। কিছু ক্রীতদাসকে আবার রোমীয় সেনাবাহিনী যুদ্ধের পর বিভিন্ন জায়গা থেকে বন্দি করে নিয়ে এসেছিল। এদের মধ্যে কিছু লোক যিহুদি ছিল, যাদের খ্রিস্টপূর্ব ৬৩ সালে রোমীয় রাজ্যপাল পম্পি যখন জেরুসালেম জয় করেছিলেন, তখন রোমে আনা হয়েছিল।

রোমে স্বাধীন নাগরিকের মধ্যে বেশিরভাগই খুব দরিদ্র ছিল। তারা বাধ্য হয়ে বড়ো একটা বিল্ডিং-এ একসঙ্গে অনেক লোক বাস করত আর বেঁচে থাকার জন্য সরকারি ভাতার উপর নির্ভর করত। অপর দিকে, রোমীয় সম্রাট নিজের রাজধানী রোমকে সুন্দরভাবে সাজানোর জন্য সমস্ত টাকা খরচ করে ফেলতেন। তিনি রোমে এত বড়ো বড়ো অট্টালিকা এবং বিলাসবহুল বিষয়গুলো তৈরি করেছিলেন, যা আগে কখনো হয়নি যেমন, থিয়েটার, বড়ো বড়ো স্টেডিয়াম এবং রথ চালানোর জায়গা। এখানে নাচ ও গানের মতো বিভিন্ন অনুষ্ঠান হত, যোদ্ধাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হত আর এই সমস্ত মনোরঞ্জন সাধারণ লোকদের বিনামূল্যে দেখানো হত।

৬, ৭. কীভাবে বর্তমানে খ্রিস্টীয় মণ্ডলী যিশুর আজ্ঞার প্রতি বাধ্যতা দেখিয়ে সমস্ত জাতির লোকদের কাছে প্রচার করে যাচ্ছে?

৬ বর্তমানে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর সেই একই উদ্দেশ্য রয়েছে, যা প্রথম শতাব্দীর মণ্ডলীর ছিল। এই মণ্ডলী যিশুর দেওয়া প্রচার কাজের সেই দায়িত্ব সম্পন্ন করে থাকে, যা তিনি তাঁর শিষ্যদের দিয়েছিলেন। এই কাজে যদিও অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে, কিন্তু এই কাজ করার মাধ্যমে অনেক আনন্দ পাওয়া যায়। যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন, “সমস্ত জাতির লোকদের শিষ্য করো এবং পিতার ও পুত্রের ও পবিত্র শক্তির নামে তাদের বাপ্তিস্ম দাও আর আমি তোমাদের যা যা আদেশ দিয়েছি, সেই সমস্ত কিছু পালন করতে তাদের শিক্ষা দাও।”—মথি ২৮:১৯, ২০.

৭ বর্তমানে যিহোবার সাক্ষিদের মণ্ডলী হল সেই ব্যবস্থা, যেটার মাধ্যমে এই প্রচার কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে। আলাদা আলাদা ভাষায় এত ব্যক্তিদের কাছে রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করা সত্যিই একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা। কিন্তু তারপরও যিহোবার সাক্ষিরা ১,০০০রেরও বেশি ভাষায় বাইবেল ভিত্তিক প্রকাশনা ছাপিয়ে থাকে। আপনি যদি ক্রমাগত মণ্ডলীর সভাগুলোতে যোগ দিয়ে থাকেন আর প্রচার কাজ এবং শিষ্য তৈরির কাজে অংশ নিয়ে থাকেন, তা হলে এটা আপনার জন্য এক বিরাট আনন্দের বিষয়। আপনি পৃথিবীতে থাকা সেই সমস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন যাদের যিহোবার নাম সম্বন্ধে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সাক্ষ্য দেওয়ার এক বিশেষ সুযোগ রয়েছে!

৮. মণ্ডলীতে থাকা প্রত্যেক ব্যক্তি কোন আশীর্বাদ লাভ করেছে?

৮ খ্রিস্টীয় মণ্ডলী আরও একটা উদ্দেশ্য সম্পন্ন করে থাকে। পৃথিবীব্যাপী ভ্রাতৃসমাজের মাধ্যমে যিহোবা আমাদের শক্তিশালী করেন, যাতে আমরা আনন্দের সঙ্গে এই কঠিন সময়ে ধৈর্য ধরতে পারি। পৌল ইব্রীয়দের উদ্দেশে চিঠিতে লিখেছিলেন, “এসো, আমরা একে অন্যের প্রতি মনোযোগ দিই, যাতে প্রেম দেখানোর এবং উত্তম কাজ করার ব্যাপারে পরস্পরকে উদ্দীপিত করতে পারি আর সেইসঙ্গে সভায় একত্রে মিলিত হওয়া বাদ না দিই, যেমনটা কারো কারো অভ্যাস, বরং একে অন্যকে উৎসাহিত করি; আর ঈশ্বরের দিন যেহেতু এগিয়ে আসছে, তাই এসো, আমরা এই বিষয়গুলো আরও বেশি করে চলি।” (ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) খ্রিস্টীয় মণ্ডলী যিহোবার কাছ থেকে এক ব্যবস্থা যেটার মাধ্যমে আমরা অন্যদের উৎসাহিত করি এবং নিজেরাও উৎসাহিত হই। তাই ভাই-বোনদের সঙ্গে থাকুন, যারা যিহোবাকে ভালোবাসে। খ্রিস্টীয় সভায় তাদের সঙ্গে একত্রে মিলিত হওয়া কখনো বাদ দেবেন না!

‘প্রত্যেকে নিজ নিজ ভাষায় কথা বলতে শোনে’ (প্রেরিত ২:৫-১৩)

যিশুর শিষ্যেরা এক ব্যস্ত রাস্তায় যিহুদি এবং ধর্মান্তরিত ব্যক্তিদের কাছে প্রচার করছে।

“আমরা তো নিজেদের ভাষায় ঈশ্বরের মহৎ মহৎ কাজের বিষয়ে এদের কথা বলতে শুনছি।”—প্রেরিত ২:১১.

৯, ১০. ভিন্ন ভাষায় কথা বলে থাকে এমন লোকদের কাছে প্রচার করার জন্য কিছু খ্রিস্টান কোন প্রচেষ্টা করেছে?

৯ কল্পনা করুন, ৩৩ খ্রিস্টাব্দের পঞ্চাশত্তমীর দিন যিহুদি এবং ধর্মান্তরিত ব্যক্তিরা কতটা আনন্দিত ছিল! সেখানে আসা বেশিরভাগ ব্যক্তিই হয়তো তাদের মাতৃভাষা ছাড়াও গ্রিক কিংবা ইব্রীয় ভাষায় কথা বলছিল, যা সবাই বুঝতে পারত। কিন্তু, এখন তারা ‘প্রত্যেকে নিজ নিজ ভাষায় শিষ্যদের কথা বলতে শুনছে।’ (প্রেরিত ২:৬) নিশ্চিতভাবে, সেই ব্যক্তিরা যখন নিজেদের ভাষায় সুসমাচার শোনে, তখন তা তাদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। বর্তমানে, খ্রিস্টানেরা অলৌকিকভাবে ভিন্ন ভাষায় কথা বলার কোনো দক্ষতা অথবা দান লাভ করে না। কিন্তু, অনেক খ্রিস্টান আলাদা আলাদা জাতির লোকদের কাছে রাজ্যের সুসমাচার পৌঁছে দেওয়ার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে। কীভাবে? কেউ কেউ একটা নতুন ভাষা শিখেছে, যাতে সেই ভাষার মণ্ডলীতে গিয়ে অথবা বিদেশে গিয়ে সেবা করতে পারে। এই খ্রিস্টানেরা লক্ষ করেছে, লোকদের কাছে তাদের মাতৃভাষায় সুসমাচার প্রচার করলে, লোকেরা তাদের এই প্রচেষ্টা দেখে প্রশংসা না করে থাকতে পারে না।

১০ ক্রিস্টিন নামে একজন বোনের উদাহরণ লক্ষ করুন। তিনি এবং তার সঙ্গে আরও সাত জন সাক্ষি গুজরাটি ভাষা শেখার জন্য একটা কোর্স করেন। ক্রিস্টিন তার সহকর্মী একজন গুজরাটি মহিলাকে তার ভাষায় নমস্কার জানালে তিনি অবাক হয়ে যান। তিনি জানতে চান, ক্রিস্টিন কেন গুজরাটির মতো একটা কঠিন ভাষা শেখার জন্য এত পরিশ্রম করছেন। এরপর ক্রিস্টিন তার কাছে ভালোভাবে প্রচার করেন। তিনি ক্রিস্টিনকে বলেন, “আপনি যে-বিষয়টা আমাকে জানাচ্ছেন, সেটা নিশ্চয়ই একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।”

১১. ভিন্ন ভাষায় কথা বলে এমন ব্যক্তিদের রাজ্যের সুসমাচার জানানোর জন্য কীভাবে আমরা প্রস্তুত থাকতে পারি?

১১ এটা ঠিক যে, আমাদের প্রত্যেকের পক্ষে একটা নতুন ভাষা শেখা সম্ভব নয়। কিন্তু তারপরও, ভিন্ন ভাষায় কথা বলে এমন ব্যক্তিদের কাছে রাজ্যের সুসমাচার জানানোর জন্য আমরা প্রস্তুত থাকতে পারি। কীভাবে? একটা উপায় হল, JW ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যাপ ব্যবহার করার মাধ্যমে। আপনার এলাকায় লোকেরা যে-ভাষায় বেশি কথা বলে আপনি JW ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যাপ ব্যবহার করে, কীভাবে সেই লোকদের সম্ভাষণ জানানো যায়, তা শিখতে পারেন। যেমন, তাদের ভাষায় এমন কিছু কথা শিখতে পারেন, যেগুলো তাদেরকে আপনার কথা শোনার জন্য আগ্রহী করে তুলতে পারে। এরপর হয়তো jw.org থেকে তাদের ভাষায় কিছু ভিডিও এবং প্রকাশনা দেখাতে পারেন। প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টান ভাই-বোনেরা যখন দেখেছিল বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিরা “প্রত্যেকে নিজ নিজ ভাষায়” সুসমাচার শুনে অবাক হয়ে যাচ্ছে, তখন তারা অনেক আনন্দিত হয়েছিল। একইভাবে, আপনিও পরিচর্যায় এই ধরনের হাতিয়ারগুলো ব্যবহার করার মাধ্যমে সেই আনন্দ পেতে পারেন।

মেসোপটেমিয়া ও মিশরের যিহুদিরা

দ্যা হিস্ট্রী অভ্‌ দ্যা জুইশ পীপল ইন দ্যা এজ অভ্‌ জিশাস ক্রাইস্ট, (১৭৫ বি.সি.-এ.ডি. ১৩৫) বই বলে, “মেসোপটেমিয়া, মাদীয় ও ব্যাবিলনে [ইজরায়েলের] দশ বংশের এবং যিহূদা রাজ্যের অনেক লোক বাস করত, যাদের এক সময় অশূরীয় ও ব্যাবিলনীয়েরা বন্দি করে এখানে নিয়ে এসেছিল।” ইষ্রা ২:৬৪ পদ অনুযায়ী, ৪২,৩৬০ জন ইজরায়েলীয় তাদের স্ত্রী এবং সন্তানদের নিয়ে ব্যাবিলনের বন্দিত্ব থেকে জেরুসালেমে ফিরে এসেছিল আর এটা খ্রিস্টপূর্ব ৫৩৭ সালের ঘটনা। ফ্লেভিয়াস জোসিফাস বলেন, প্রথম শতাব্দীতে “ব্যাবিলনের আশেপাশে” হাজার হাজার যিহুদি বাস করত। তৃতীয় ও পঞ্চম শতাব্দীতে এই ইজরায়েলীয় সম্প্রদায়ের লোকেরা একটা বই লিখেছিল, যেটাকে ব্যাবিলনীয় তালমুদ (এটা যিহুদি ধর্মগুরুরা লিখেছিল) বলা হয়।

কিছু নথি থেকে এটা প্রমাণ পাওয়া যায়, খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ষষ্ঠ শতাব্দীতে কিছু যিহুদি মিশরের বিভিন্ন স্থানে বসবাস করত। সেই সময়ে ভাববাদী যিরমিয় মিশরের বিভিন্ন স্থানে বসবাসরত যিহুদিদের উদ্দেশে একটা বার্তা পাঠান, যার মধ্যে মোফ ছিল। (যির. ৪৪:১) গ্রিক সংস্কৃতি যখন সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিল, সেই সময়ে সম্ভবত এক বিরাট সংখ্যক যিহুদি মিশরে গিয়ে থাকতে শুরু করেছিল। জোসিফাস বলেন, আলেক্‌সান্দ্রীয়া নগরে যারা প্রথমে থাকতে শুরু করেছিল, তাদের মধ্যে যিহুদিরাও ছিল আর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একটা বড়ো এলাকা তাদের দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। প্রথম শতাব্দীর যিহুদি লেখক ফাইলো এটা দাবি করেন, পুরো মিশরে তার লক্ষ লক্ষ যিহুদি ভাইয়েরা ছিল, যারা “লিবিয়া থেকে শুরু করে ইথিওপিয়ার সীমানা পর্যন্ত” ছড়িয়ে ছিল।

‘পিতর উঠে দাঁড়ান’ (প্রেরিত ২:১৪-৩৭)

১২. কীভাবে যোয়েলের ভবিষ্যদ্‌বাণী ৩৩ খ্রিস্টাব্দের পঞ্চাশত্তমীর দিনে ঘটা আশ্চর্য ঘটনার ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ হয়েছিল? (খ) কেন এটা আশা করা হয়েছিল, প্রথম শতাব্দীতে যোয়েলের ভবিষ্যদ্‌বাণী পরিপূর্ণ হবে?

১২ পঞ্চাশত্তমীর দিন আলাদা আলাদা জায়গা থেকে আসা সেই বিরাট জনতার সামনে কথা বলার জন্য ‘পিতর উঠে দাঁড়ান।’ (প্রেরিত ২:১৪) তিনি সেই ব্যক্তিদের বুঝতে সাহায্য করেন, এই শিষ্যেরা যে-ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় কথা বলছে, এই দক্ষতা অথবা দান তারা ঈশ্বরের কাছ থেকে লাভ করেছে। আর এটা যোয়েল ভাববাদীর করা ভবিষ্যদ্‌বাণী পরিপূর্ণ করছে, যা বলে: “আমি মর্ত্ত্যমাত্রের উপরে আমার আত্মা সেচন করিব।” (যোয়েল ২:২৮) যিশু স্বর্গে যাওয়ার আগে তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন, “আমি পিতার কাছে চাইব আর তিনি তোমাদের আরেকজন সাহায্যকারী দেবেন।” তিনি এও বলেছিলেন, সেই সাহায্যকারী হল “পবিত্র শক্তি।”—যোহন ১৪:১৬, ১৭.

১৩, ১৪. কীভাবে পিতর শ্রোতাদের হৃদয়ে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছিলেন আর কীভাবে আমরা সেই পদ্ধতি অনুকরণ করতে পারি?

১৩ পিতর তার বক্তৃতা শেষ করার আগে জনতার উদ্দেশে সরাসরি বলেছিলেন, “ইজরায়েলের সমস্ত লোক, তোমরা এই কথা জেনে রাখ, তোমরা যাঁকে দণ্ডে বিদ্ধ করে মেরে ফেলেছিলে, ঈশ্বর সেই যিশুকেই প্রভু ও খ্রিস্ট করেছেন।” (প্রেরিত ২:৩৬) পিতরের বক্তৃতা যারা শুনেছিল, তাদের মধ্যে বেশিরভাগ ব্যক্তিই যিশুকে যাতনা দণ্ডে হত্যা করার সময় সেখানে উপস্থিত ছিল না। সেইজন্য তারা সরাসরি যিশুর মৃত্যুর জন্য দায়ী ছিল না। কিন্তু, তারা সেই জাতির লোক ছিল, যারা যিশুকে হত্যা করেছিল। তাই, এক অর্থে তারাও যিশুর মৃত্যুর জন্য দায়ী ছিল। কিন্তু লক্ষ করুন, পিতর তবুও তার যিহুদি ভাইদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে কথা বলেছিলেন এবং তাদের হৃদয়ে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছিলেন। পিতরের উদ্দেশ্য ছিল না তাদের দোষী সাব্যস্ত করা বরং তিনি তাদের উৎসাহিত করতে চেয়েছিলেন, যেন তারা অনুতপ্ত হয়। পিতরের কথা শুনে কি লোকেরা রেগে গিয়েছিল? না। এর পরিবর্তে, লোকদের “হৃদয় যেন বিদ্ধ” হয়েছিল আর তারা জিজ্ঞেস করল, “আমাদের কী করা উচিত?” পিতর যেভাবে প্রেম ও সম্মান দেখিয়ে কথা বলেছিলেন, হয়তো সেই কারণেই তার কথাগুলো অনেকের হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছিল আর তারা অনুতপ্ত হয়েছিল।—প্রেরিত ২:৩৭.

১৪ প্রেরিত পিতর যে-পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন, আমরাও সেই পদ্ধতি অনুকরণ করে লোকদের হৃদয়ে পৌঁছাতে পারি। প্রচারে যখন কোনো গৃহকর্তা বাইবেলের শিক্ষার বিপরীতে কোনো কথা বলেন, তখন তার সঙ্গে আমাদের তর্ক করা উচিত নয়। এর পরিবর্তে, আমাদের এমন বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলা উচিত যে-বিষয়ে তিনি হয়তো আমাদের সঙ্গে একমত হবেন। গৃহকর্তা পছন্দ করে এমন বিষয় নিয়ে যদি আমরা কথাবার্তা শুরু করি, তা হলে আমরা ঈশ্বরের বাক্য ব্যবহার করে, তাদের সঙ্গে হয়তো এমনভাবে যুক্তি করতে পারব, যা তাদের দুঃখ দেবে না। প্রায়ই এমনটা দেখা গিয়েছে, আমরা যদি শুরুতেই লোকদের সঙ্গে এমন বিষয় নিয়ে কথা বলি, যে-বিষয়ে তারা হয়তো আমাদের সঙ্গে একমত হবে এবং তারপর তাদের বাইবেলের সত্য সম্বন্ধে জানাই, তখন সঠিক মনোভাবের ব্যক্তিরা আমাদের বার্তা গ্রহণ করে।

পন্তে খ্রিস্টানেরা

এশিয়া মাইনরের উত্তর দিকে একটা এলাকার নাম হল পন্ত। ৩৩ খ্রিস্টাব্দের পঞ্চাশত্তমীর দিনে পিতরের বক্তৃতা শোনার জন্য যারা এসেছিল, তাদের মধ্যে পন্তের যিহুদিরাও ছিল। (প্রেরিত ২:৯) এই যিহুদিরা যখন পন্তে ফিরে যায়, সম্ভবত তখন তারা অন্যদেরও সুসমাচার জানিয়েছিল। তার কারণ হল, পিতর তার প্রথম চিঠিটা পন্তে এবং অন্যান্য জায়গায় “ছড়িয়ে-ছিটিয়ে” থাকা খ্রিস্টানদের উদ্দেশে লিখেছিলেন।g (১ পিতর ১:১) পিতরের চিঠি থেকে বোঝা যায়, পন্তের খ্রিস্টানেরা তাদের বিশ্বাসের জন্য ‘বিভিন্ন পরীক্ষার কারণে দুঃখ ভোগ’ করেছিল। (১ পিতর ১:৬) যার মধ্যে হয়তো বিরোধিতা ও তাড়না ছিল।

রোমীয় সাম্রাজ্যের বিথুনিয়া ও পন্থের রাজ্যপাল প্লিনি দ্যা ইয়ংগার এবং সম্রাট ট্র্যাজেন একে অন্যকে যে-চিঠি লিখেছিলেন, সেখান থেকে বোঝা যায়, পন্তের খ্রিস্টানদের আরও অনেক পরীক্ষা সহ্য করতে হয়েছিল। প্রায় ১১২ খ্রিস্টাব্দে প্লিনি সম্রাট ট্র্যাজেনকে চিঠিতে লিখেছিলেন, খ্রিস্টধর্ম এক “ছোঁয়াচে রোগের” মতো যা পুরুষ কিংবা মহিলা, ধনী কিংবা গরিব, বৃদ্ধ কিংবা যুবক, সমস্ত লোকের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। তিনি এটাও লিখেছিলেন, যাদের উপর খ্রিস্টান হওয়ার অভিযোগ রয়েছে, তাদের সামনে তিনি খ্রিস্টধর্ম ত্যাগ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। যারা সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেনি, তাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আর যারা মশীহ সম্বন্ধে যারা নিন্দা করেছিল কিংবা অন্যান্য দেবতা এবং ট্র্যাজেনের মূর্তির সামনে প্রার্থনা করেছিল, তাদের তিনি ছেড়ে দিয়েছিলেন। প্লিনি তার চিঠিতে আরও উল্লেখ করেছিলেন, যারা প্রকৃত খ্রিস্টান তাদের দিয়ে এই কাজ করানো অসম্ভব।

g যে-গ্রিক শব্দের অনুবাদ “ছড়িয়ে-ছিটিয়ে” করা হয়েছে, সেটা প্যালেস্টাইনের বাইরের এলাকায় থাকা যিহুদি সম্প্রদায়ের জন্য ব্যবহার করা হত। এখান থেকে বোঝা যায়, পন্থে প্রথম যারা খ্রিস্টান হয়েছিল, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই যিহুদি সম্প্রদায়ের ছিল।

“তোমরা প্রত্যেকে . . . বাপ্তিস্ম নাও” (প্রেরিত ২:৩৮-৪৭)

১৫. পিতর তার বক্তৃতায় কী বলেছিলেন আর তার ফলাফল কী হয়েছিল? (খ) ৩৩ খ্রিস্টাব্দের পঞ্চাশত্তমীর দিন যে-হাজার হাজার লোক সুসমাচার শুনেছিল, তারা কেন সেই দিন বাপ্তিস্ম নেওয়ার জন্য যোগ্য ছিল?

১৫ তেত্রিশ খ্রিস্টাব্দের পঞ্চাশত্তমীর সেই রোমাঞ্চকর দিনে যিহুদি এবং ধর্মান্তরিত ব্যক্তিরা সঠিক কাজ করার জন্য প্রস্তুত ছিল। তাদের উদ্দেশে পিতর বলেছিলেন, ‘অনুতপ্ত হও এবং বাপ্তিস্ম নাও।’ (প্রেরিত ২:৩৮) এর ফলাফল কী হয়েছিল? প্রায় ৩,০০০ জন বাপ্তিস্ম নিয়েছিল। তারা হয়তো জেরুসালেমে কিংবা এর পাশাপাশি কোনো জলাশয়ে বাপ্তিস্ম নিয়েছিল। তারা কি চিন্তাভাবনা না করেই আবেগের বশে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল? এই ঘটনা কি আমাদের এই শিক্ষা দেয় যে, বাইবেল ছাত্রদের এবং খ্রিস্টান বাবা-মায়ের সন্তানদের তাড়াহুড়ো করে বাপ্তিস্ম নেওয়া উচিত, যদিও তারা হয়তো এটার জন্য প্রস্তুত নয়? কখনোই না। মনে রাখবেন, ৩৩ খ্রিস্টাব্দের পঞ্চাশত্তমীর দিন যে-যিহুদি এবং ধর্মান্তরিত ব্যক্তিরা বাপ্তিস্ম নিয়েছিল, তারা ঈশ্বরের বাক্য ভালোভাবে অধ্যয়ন করেছিল আর তারা প্রথম থেকেই যিহোবার কাছে উৎসর্গীকৃত এক জাতির অংশ ছিল। শুধু তাই নয়, তারা উদ্যোগের সঙ্গে ঈশ্বরের সেবা করত। তাই, তারা বার্ষিক উৎসব উদ্‌যাপন করার জন্য এক দীর্ঘ পথ যাত্রা করে জেরুসালেমে আসত। এরপর তারা যখন জানতে পারে, যিশু খ্রিস্ট ঈশ্বরের উদ্দেশ্য সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে কোন ভূমিকা পালন করেছেন, তখন তারা সেই গুরুত্বপূর্ণ সত্য বিশ্বাস করে এবং ঈশ্বরকে সেবা করা চালিয়ে যায়। কিন্তু, এখন তারা বাপ্তিস্ম নিয়ে খ্রিস্টের শিষ্য হিসেবে ঈশ্বরের সেবা করবে।e

ধর্মান্তরিত ব্যক্তি কারা?

৩৩ খ্রিস্টাব্দের পঞ্চাশত্তমীর দিন, যারা পিতরের বক্তৃতা শুনেছিল, তাদের মধ্যে “যিহুদিরা এবং ধর্মান্তরিত ব্যক্তিরা” ছিল।—প্রেরিত ২:১০.

ধর্মান্তরিত ব্যক্তিরা ন-যিহুদি ছিল, যারা তাদের ধর্ম পরিত্যাগ করে যিহুদি ধর্ম গ্রহণ করেছিল যেমন, নিকলায়। তিনি “আন্তিয়খিয়ার একজন ধর্মান্তরিত ব্যক্তি ছিলেন।” তিনি সেই যোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে একজন ছিলেন, যাদের খাবার পরিবেশন করার এবং “প্রয়োজনীয় বিষয়টা” দেখাশোনা করার কাজে নিযুক্ত করা হয়েছিল। (প্রেরিত ৬:৩-৫) ধর্মান্তরিত ব্যক্তিদের সমস্ত ক্ষেত্রে যিহুদি বলে মনে করা হত কারণ তারা ইজরায়েলীয়দের ঈশ্বরকে নিজেদের ঈশ্বর বলে মেনে নিয়েছিল, যিহুদিদের নিয়ম মেনে চলছিল এবং অন্যান্য দেবতাদের পরিত্যাগ করেছিল। সেইসঙ্গে তারা (পুরুষেরা) ত্বকচ্ছেদ করিয়েছিল এবং ইজরায়েল জাতির অংশ হয়ে উঠেছিল।

খ্রিস্টপূর্ব ৫৩৭ সালে যিহুদিরা ব্যাবিলনের বন্দিত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার পর, তাদের মধ্যে বেশিরভাগ লোক নিজেদের দেশ ইজরায়েলে ফিরে আসার পরিবর্তে অন্যান্য দূরবর্তী জায়গায় বাস করতে শুরু করেছিল, তবে সেখানেও তারা যিহুদি ধর্মই মেনে চলত। তাই, ভূমধ্যসাগরের পূর্ব দিকে এবং এর আশেপাশের এলাকার লোকেরা যিহুদি ধর্ম সম্বন্ধে জানতে পেরেছিল। প্রাচীন সময়ের লেখক হোরেস ও সেনেকা বলেছিলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় থাকা লোকেরা যিহুদিদের এবং তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসকে পছন্দ করতে শুরু করেছিল। এরপর তারা যিহুদি ধর্ম গ্রহণ করে, ধর্মান্তরিত ব্যক্তি হয়ে উঠেছিল।

১৬. প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানেরা কীভাবে আত্মত্যাগের মনোভাব দেখিয়েছিল?

১৬ এতে কোন সন্দেহ নেই, যারা বাপ্তিস্ম নিয়েছিল তাদের উপর যিহোবার আশীর্বাদ ছিল। বিবরণ জানায়, “যে-ব্যক্তিরা যিশুর অনুসারী হয়েছিল, তারা সবাই একত্রিত হতো এবং একে অন্যের সঙ্গে সব কিছু ভাগ করে নিত। আর তারা নিজেদের বিষয়সম্পত্তি বিক্রি করে যে-টাকাপয়সা পেত, সেখান থেকে প্রত্যেককে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী দিত।”f (প্রেরিত ২:৪৪, ৪৫) নিশ্চিতভাবে, প্রত্যেক সত্য খ্রিস্টান এভাবেই প্রেম এবং আত্মত্যাগের মনোভাব দেখাতে চাইবে।

১৭. বাপ্তিস্ম নেওয়ার জন্য যোগ্য হতে গেলে একজন ব্যক্তিকে কোন পদক্ষেপগুলো নিতে হবে?

১৭ একজন ব্যক্তি যদি ঈশ্বরের কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করতে চান এবং বাপ্তিস্ম নিতে চান, তা হলে তাকে অবশ্যই বাইবেলে বলা কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমে, তাকে ঈশ্বরের বাক্য থেকে জ্ঞান নিতে হবে। (যোহন ১৭:৩) এরপর তাকে বিশ্বাস দেখাতে হবে, তার অতীতের জীবনধারার জন্য অনুতপ্ত হতে হবে এবং তিনি যে-পাপগুলো করেছেন, সেগুলোর জন্য তিনি যে সত্যিই দুঃখিত, তা প্রকাশ করতে হবে। (প্রেরিত ৩:১৯) তারপর নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে অথবা ভুল পথ থেকে সরে আসতে হবে এবং ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করতে হবে। (রোমীয় ১২:২; ইফি. ৪:২৩, ২৪) এই পদক্ষেপগুলো নেওয়ার পর সেই ব্যক্তির উচিত ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনার মাধ্যমে নিজের জীবন উৎসর্গ করা এবং তারপর বাপ্তিস্ম নেওয়া।—মথি ১৬:২৪; ১ পিতর ৩:২১.

১৮. খ্রিস্টের বাপ্তাইজিত শিষ্যেরা কোন সম্মান লাভ করেছে?

১৮ আপনি কি আপনার জীবন ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করে বাপ্তিস্ম নিয়েছেন এবং যিশু খ্রিস্টের একজন শিষ্য হয়েছেন? যদি হয়ে থাকেন, তা হলে এই সুযোগের জন্য কৃতজ্ঞ হোন কারণ আপনাকে এক বিশেষ সম্মান দেওয়া হয়েছে। প্রথম শতাব্দীর সেই শিষ্যদের মতো, যারা পবিত্র শক্তিতে পূর্ণ হয়েছিল, যিহোবা আপনাকেও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সুসমাচার প্রচার করার ক্ষেত্রে এবং তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন।

a “জেরুসালেম—যিহুদিদের উপাসনা করার এক বিশেষ জায়গা” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।

b “রোম—এক বড়ো সাম্রাজ্যের রাজধানী;” “মেসোপটেমিয়া এবং মিশরের যিহুদিরা” এবং “পন্তে খ্রিস্টানেরা” শিরোনামের বাক্সগুলো দেখুন।

c “জিভের” আকারে শিখাগুলো সত্যিকারের শিখা ছিল না বরং “শিখার মতো” দেখতে কিছু ছিল। এর থেকে বোঝা যায়, শিষ্যদের মাথায় আগুনের শিখার মতো দেখতে কিছু চকচক করছিল।

d “ধর্মান্তরিত ব্যক্তি কারা?” বাক্সটা দেখুন।

e ৭ আগস্ট ১৯৯৩ সালে ইউক্রেনে বাপ্তিস্মের ক্ষেত্রে এমনই কিছু ঘটেছিল। সেখানকার কিভ শহরে যিহোবার সাক্ষিদের এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ৭,৪০২ জন ব্যক্তি বাপ্তিস্ম নিয়েছিল। সেখানে বাপ্তিস্ম দেওয়ার জন্য ছ-টা অস্থায়ী পুল তৈরি করা হয়েছিল এবং বাপ্তিস্ম সম্পন্ন করতে দু-ঘণ্টা পনেরো মিনিট সময় লেগেছিল।

f এই ব্যবস্থা কিছু সময়ের জন্য করা হয়েছিল যাতে সেই ভাই-বোনদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জোগানো যায়, যারা তাদের নতুন বিশ্বাসের বিষয়ে আরও শেখার জন্য অন্যান্য দেশ থেকে জেরুসালেমে এসে থেকে গিয়েছিল। যে-খ্রিস্টানেরা দান করেছিল তারা স্বেচ্ছায় খুশি হয়ে তা করেছিল। তবে, এটা কোনো সাম্যবাদী ব্যবস্থা ছিল না যে, সব কিছু সমানভাবে ভাগ করে নিতে হবে বরং খ্রিস্টানেরা স্বেচ্ছায় দান করেছিল।—প্রেরিত ৫:১-৪.

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৫)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার