অ্যাগোরা—প্রাচীন এথেন্সের প্রাণকেন্দ্র
এথেন্সের বুদ্ধিজীবী সমাজে কোলাহল লেগেই থাকত! গ্রীসের এই শহরের অ্যাগোরা অথবা বাজার থেকে সর্বদাই নতুন নতুন ধারণা প্রচারিত হত। কিন্তু, এই সময়ে এটি ছিল একেবারে অন্যরকম। সবেমাত্র এই শহরে এসে পৌঁছেছেন এমন একজন যিহূদী ব্যক্তিকে “বিজাতীয় দেবতাদের প্রচারক” বলে মনে হয়েছিল। তিনি “যাহাদের সঙ্গে দেখা হইত” তাদের কাছে অসাধারণ কথা প্রসঙ্গ করছিলেন। “এ বাচালটা কি বলিতে চায়?” গর্বিত ইপিকুরীয় ও গুরুগম্ভীর স্তোয়িকীয়রা জিজ্ঞাসা করেছিলেন। হ্যাঁ, এথেন্সের অ্যাগোরা ছিল সেই বিশিষ্ট স্থান যেখানে প্রকৃতই সূর্যের নিচে বিদ্যমান যে কোন বিষয়ের উপর খোলাখুলি তর্কবিতর্ক অনুষ্ঠিত হত। কিন্তু অপরিচিত দেবতাদের সম্বন্ধে কথা বলা—বাস্তবিকই সহ্যাতীত ছিল!—প্রেরিত ১৭:১৭, ১৮.
এটিই ছিল এথেন্সবাসীদের সন্দিগ্ধ প্রতিক্রিয়া যখন প্রেরিত পৌল প্রথমবারের মত এথেন্সের অ্যাগোরায় প্রচার করতে শুরু করেন। তিনি যীশু খ্রীষ্ট ও পুনরুত্থান সম্বন্ধে কথা বলছিলেন। কিন্তু এথেন্সের আপাত সংস্কার মুক্ত সংস্কৃতির কাছে অ্যাগোরায় এই নতুন ধারণাটির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার মধ্যে এমন অস্বাভাবিক বিষয়টি কী ছিল?
এথেন্সের সাধারণ চত্বর
যে বিষয়টি অদ্বিতীয় ছিল তা হল স্বয়ং অ্যাগোরা ও এথেন্সবাসীদের ধর্মীয় আর জনজীবনের প্রতি এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। অ্যাক্রোপলিসের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত এথেন্সের অ্যাগোরা ছিল প্রায় ২৫ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত সামান্য ঢালু এক স্থান। মনে হয় যে সা.কা.পূ. ষষ্ঠ শতাব্দীতে এথেনীয় কূটনীতিজ্ঞ ও আইন প্রণেতা সলোনের জীবনকালে এই জমিটি শহরের সাধারণ চত্বর হিসাবে আখ্যায়িত হয়েছিল। এথেন্সে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ফলে নাগরিক জীবনের উপর অত্যন্ত গুরুত্ব আরোপ করা হয় আর তাই পরবর্তী শতাব্দীর প্রাথমিক বছরগুলিতে এর নির্মাণ কাজ খুবই ত্বরান্বিত হয়েছিল। এটি অ্যাগোরাকে এক নতুন জীবন দান করেছিল আর যার ফলে এটি আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
গ্রীক শব্দ অ্যাগোরা যে মূল ক্রিয়াপদটি থেকে এসেছে তার অর্থ হল “একত্রিত, সম্মিলিত।” শহরের মুখ্য সমাবেশের স্থান হিসাবে অ্যাগোরাকে যেভাবে ব্যবহার করা হত তার সঙ্গে এটি মানানসই। অ্যাগোরা সামাজিক ও জন জীবনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল। এটি নাগরিক প্রশাসন ও বিচারের কেন্দ্রস্থল ছিল, ক্রয়বিক্রয় ও বাণিজ্যের মুখ্য স্থান ছিল, গ্রীক নাটকের রঙ্গমঞ্চ ছিল আর ছিল মল্লক্রীড়ার প্রদর্শনীস্থল ও বুদ্ধিজীবিদের আলোচনাসভার এক জনপ্রিয় জায়গা।
আপনি কি এথেন্সের অ্যাগোরার মন্দির, স্তম্ভ, খোদিত মূর্তি, স্মৃতিসৌধ এবং সাধারণের অট্টালিকাগুলির ভগ্নাবশেষ ঘুরে দেখতে চান? অ্যাগোরার অতীত ইতিহাসের পাতা উল্টানোর জন্য আসুন আমরা আজকের এই আধুনিক শহর জীবনের হইচই ও অতিশয় কর্মব্যস্ততাকে পিছনে ফেলে নুড়ি পাথরের পথে পা বাড়াই, যেখানে নীরব মার্বেল পাথরের ধংসাবশেষ, খোদাই করা পাথর এবং জংলি ঘাস ও বনলতায় ঢাকা ভাঙাচোরা প্রবেশদ্বার আছে।
মন্দির, তীর্থস্থান ও পৃষ্ঠপোষক দেবতারা
বিভিন্ন দেবতাদের উদ্দেশে উৎসর্গীকৃত অসংখ্য মন্দির, তীর্থস্থান ও উপাসনা গৃহ দেখে পরিদর্শনকারীরা মুগ্ধ হয়ে যান। এই সমস্ত কিছু অ্যাগোরাকে এক বৃহৎ উপাসনা কেন্দ্রে পরিণত করেছিল যার নাম অ্যাক্রোপলিসের পরে দ্বিতীয় স্থানে আসত। প্রাচীন এথেন্সের সুবর্ণযুগে ধর্ম জন-জীবনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনুপ্রবেশ করেছিল। তাই এটি বুঝিয়েছিল যে এই বিভিন্ন দেবতাদের যাদের সরকারি বিভাগ ও প্রশাসনিক কার্যের “পৃষ্ঠপোষক দেবতা” হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল, তাদের অ্যাগোরায় মন্দির ও উপাসনা স্থান দেওয়া হয়েছিল।
এই কাঠামোগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল হিফেস্তোসের মন্দির। এথেনা দেবী হিফেস্তোসের সঙ্গী ছিলেন। এই দেবী এবং দেবতা উভয়েই, এখানে শিল্পকলা ও হস্তশিল্পের পৃষ্ঠপোষক দেবতা হিসাবে উপাসিত হতেন। প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারের ফলে মন্দিরের আশপাশ থেকে পাওয়া ধাতুনির্মিত বস্তু ও মাটির পাত্র থেকে জানা যায় যে এটির সঙ্গে হিফেস্তোসের সম্পর্ক ছিল, যিনি ছিলেন গ্রীক শিল্পকলা ও আগুনের দেবতা। সম্ভবত সা.কা.পূ. সপ্তম শতাব্দীতে এই সুসংরক্ষিত মন্দিরটি সাধু জর্জের গ্রীক অর্থডক্স গির্জায় পরিবর্তিত হয়েছিল যদিও এটিকে আজকে এই উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয় না।
অবশ্যই অ্যাগোরার তার নিজের জন্য পৃষ্ঠপোষক দেবতার প্রয়োজন ছিল। তিনি ছিলেন বাগ্মিতায় তথাকথিত প্রেরণা দানকারী জিউস অ্যাগোরস, যার উদ্দেশ্যে মূল্যবান পেনটেলিক মার্বেলে খোদিত এক অলঙ্কৃত বেদি উৎসর্গ করা হয়েছিল। (প্রেরিত ১৪: ১১, ১২ পদের সাথে তুলনা করুন।) কাছেই দেবতাদের মাতার একটি বেদি ছিল যার দুই পাশে অসংখ্য বীরদের স্মৃতিসৌধ দর্শনীয়ভাবে সজ্জিত ছিল।
আর একটু দূরে আমরা এক ছোট আয়োনিক মন্দির দেখতে পাব। ভূগোলবিদ পোসেনিয়াস জানান যে এটি পিতা আপোলোর মন্দির। কেন? কারণ প্রাচীন গ্রীক রূপকথা অনুসারে, তিনি ছিলেন আয়োনের পিতা, আয়োনীয় জাতির প্রতিষ্ঠাতা আর এথেন্সবাসীরা হল এর এক অংশ।a এই অধিকারে, আপোলো রাষ্ট্রের প্রশাসন তন্ত্রের পৃষ্ঠপোষক দেবতা ছিলেন আর বিশেষভাবে শহরে বিদ্যমান বিভিন্ন ভ্রাতৃসংঘের সঙ্গে সম্পর্কযুক্তভাবে তাকে দেবতা হিসাবে মানা হত।
ঠিক উত্তর দিকে চুনাপাথরে তৈরি একটি ছোট মন্দির আমরা দেখতে পাই যেটি সা.কা.পূ. চতুর্থ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে নির্মিত হয়েছিল। যেখানে জিউস ও এথেনা ফেট্রিওসের উপাসনা করা হত যারা কুলীন ধার্মিক ভ্রাতৃসংঘের মুখ্য দেবতা ও দেবী ছিলেন। এর সদস্য হওয়ার জন্য এথেনীয় নাগরিকত্ব পাওয়া এক অবশ্যপূরণীয় শর্ত ছিল। রাস্তাটা পার হলেই আমরা বারটি দেবতার এক বেদির ভগ্নাবশেষ দেখতে পাই।
জিউস এলিউথেরিওসের কাছাকাছি অবস্থিত স্তোয়ায় গ্রীসের মুখ্য দেবতাকে আবার স্বাধীনতা ও মুক্তির দেবতা হিসাবে সম্মানিত করা হয়েছিল। এই স্তম্ভশ্রেণী অথবা স্তোয়া ছিল জনপ্রিয় প্রমোদভ্রমণের জায়গা ও সভাস্থান। কথিত আছে যে বিখ্যাত দার্শনিক সক্রেটিস এই স্তোয়ায় তার বন্ধুদের সঙ্গে মিলিত হতেন যেখানে তারা একসঙ্গে বসতে, গল্প করতে ও বেড়াতে পারতেন। এই স্তোয়াকে সাজানোর জন্য অনেক উৎসর্গ ও অর্পণ করা হয়েছিল, যেমন সেই সমস্ত যোদ্ধাদের বর্ম যারা এথেন্সের সুরক্ষার জন্য যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছিলেন, শহরকে শত্রুদের হাত থেকে উদ্ধার করায় অথবা এর স্বাধীনতাকে রক্ষা করায় সরাসরি জড়িত ছিলেন।
প্যানাথেনীয় রাস্তা
অ্যাগোরার মধ্যে দিয়ে তির্যকভাবে একটি চওড়া নুড়ি-কাঁকর বিছানো রাস্তা গিয়েছে যেটিকে প্যানাথেনীয় রাস্তা বলা হয়। এটির নাম ও বিশেষত্ব এথেন্সের জাতীয় উৎসব প্যানাথেনিয়া থেকে নেওয়া হয়েছে। এই উৎসবের সময় দেবী এথেনার ঘোমটা এই রাস্তা দিয়ে শোভাযাত্রা গৃহ থেকে (যেটি শহরের প্রবেশদ্বারের পাশে অবস্থিত) অ্যাক্রোপলিসে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এথেনা-দেবীর মন্দিরের ভাস্কর্য আমাদের শোভাযাত্রার ধুমধাম ও জাঁকজমকপূর্ণ উৎসব মনশ্চক্ষে দেখতে সাহায্য করবে, যেমন অশ্বারোহী সৈন্যবাহিনী, ধাবনরত রথ বলিদানের জন্য আনা গরু এবং ভেড়া, বলিদানে ব্যবহৃত জিনিসপত্র বহনকারী যুবক-যুবতীরা। এথেন্সের নাগরিক ও তাদের অতিথিরা এই শোভাযাত্রা দেখতেন যাদের সুবিধার জন্য স্থপতিরা অ্যাগোরার নকশা করার সময় প্রচুর ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, শোভাযাত্রা যাওয়ার রাস্তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্তম্ভগুলির সামনের চত্বর ও সিঁড়ি দক্ষতাপূর্ণভাবে সঠিক স্থানে বানানো হয়েছিল। এই অসংখ্য সিঁড়িগুলির বহির্ভাগ এমনভাবে খোদাই করা হয়েছিল যে অনেক দর্শনার্থী একসঙ্গে সেখানে যেতে পারতেন।
“প্রতিমাতে পরিপূর্ণ”
একইসঙ্গে এত মন্দির, মূর্তি এবং স্মৃতিসৌধ দেখার কারণে এটি আশ্চর্যের বিষয় নয় যে প্রেরিত পৌলের “অন্তরে তাঁহার আত্মা উত্তপ্ত হইয়া উঠিল।” (প্রেরিত ১৭:১৬) অ্যাগোরায় প্রবেশ করে পৌল যা দেখেছিলেন তা নিশ্চয়ই তাকে বিহ্বল করেছিল। হার্মিস দেবতার লিঙ্গমূর্তি এত অসংখ্য ছিল যে সেগুলি রাখার জন্য একটি সম্পূর্ণ বড় ভবনের প্রয়োজন হয়েছিল যেটি হার্মিসের স্তোয়া নামে পরিচিত ছিল। হার্মিসের অন্যান্য রঙিন প্রতিমাগুলির কাপড়ে সোয়াস্তিক চিহ্ন ছিল—যা জননক্ষমতা ও জীবনের প্রতীক। সেখানে যৌন প্রেমের দেবী ভেনাস জেনেট্রিক্সের একটি মূর্তি ছিল আর ছিল ডায়োনিসাসের এক মূর্তি যাতে অসংখ্য লিঙ্গসংক্রান্ত ক্রস ছিল। অ্যাগোরার “পবিত্রতাকে” চিহ্নিত করার জন্য একটি সীমানা নির্দেশক পাথর ছিল আর প্রবেশকারী সকলের বিধি অনুসারে শুদ্ধিকরণের জন্য “পবিত্র” জল ভর্তি একটি পাত্র ছিল।
এইধরনের এক গভীর ধর্মীয় পরিবেশের পরিপ্রেক্ষিতে, আমরা সহজেই বুঝতে পারি যে কেন পৌলের অবস্থা অত্যন্ত বিপদজনক ছিল। তাকে “বিজাতীয় দেবতাদের প্রচারক” বলে সন্দেহ করা হয়েছিল আর সেই সময়ের আইনের শর্তানুসারে ‘কোন ব্যক্তির কোন পৃথক বা কোন নতুন দেবতা থাকা উচিত ছিল না; কিংবা কেউ গোপনে অন্য কোন দেবতার উপাসনা করতে পারত না যতক্ষণ পর্যন্ত না তা সার্বজনীনভাবে করার জন্য স্বীকৃতি দেওয়া হত।’ তাই আশ্চর্যের বিষয় নয় যে পৌলকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আরেয়পাগে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।—প্রেরিত ১৭:১৮, ১৯.
প্রশাসন কেন্দ্র
এথেনীয় সরকারের মুখ্য কার্যালয়, থোলোস নামে এক গোলাকার অট্টালিকার মধ্যে ছিল। শহরের অনেক সভাপতি এই অট্টালিকায় রাত কাটাতেন যাতে করে দায়িত্বশীল আধিকারিকদের সর্বদা পাওয়া যায়। থোলোসে প্রমাণ ওজন ও পরিমাপের যন্ত্র রাখা হয়েছিল। প্রশাসনসংক্রান্ত বিভিন্ন বিভাগগুলি কাছাকাছিই অবস্থিত ছিল। পরিষদ ভবন থোলোসের উত্তর-পশ্চিম দিকে পাহাড় কেটে তৈরি করা চত্বরে অবস্থিত ছিল। ৫০০ জন নিয়ে গঠিত পরিষদের সদস্যরা বৈঠকগুলি করতেন যেখানে তারা কমিটির কাজ ও বিধানসভার জন্য আইন প্রণয়ন করতেন।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পৌরভবন ছিল রাজকীয় স্তোয়া। সেখানে এথেন্সের রাজকীয় আরকোন—যিনি শহরের তিনজন প্রধান শাসকের একজন ছিলেন তার আসন ছিল। সেখান থেকে তিনি ধর্মীয় ও আইন সম্বন্ধীয় অনেক শাসনসংক্রান্ত দায়িত্বগুলি পরিচালনা করতেন। খুব সম্ভবত যখন সক্রেটিসকে অধার্মিকতার দোষে অভিযুক্ত করা হয়েছিল তখন তাকে এখানে আসতে বলা হয়েছিল। এর সামনের অট্টালিকার দেওয়ালের উপর এথেন্সের পূর্বপুরুষদের নিয়ম খোদাই করা হয়েছিল। একই অট্টালিকার সামনে রাখা একটি পাথরের উপর দাঁড়িয়ে আরকোন বা মুখ্য শাসক প্রত্যেক বছর শপথবাক্য পাঠ করতেন।
অ্যাটলাসের স্তোয়া
অ্যাগোরার সবচেয়ে উত্তমভাবে সুরক্ষিত অট্টালিকাটি ছিল অ্যাটলাসের স্তোয়া। পরগামামের রাজা অ্যাটলাস (সা.কা.পূ. দ্বিতীয় শতাব্দী) যুবকাবস্থায় এথেন্সের বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেছিলেন, যেমন ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের অন্যান্য অনেক রাজ পরিবারের বংশধরেরাও করেছিলেন। সিংহাসনে বসার পর তিনি যে শহরে অধ্যয়ন করেছিলেন সেই শহরকে এই চমৎকার উপহার দিয়েছিলেন—অ্যাটলাসের স্তোয়া।
অ্যাটলাসের স্তোয়ার প্রধান কাজ ছিল বিধিবদ্ধ জীবনের বাইরে মেলামেশা ও আদান-প্রদানের জন্য ছাউনি ও মনোরম বেড়ানোর জায়গা প্রদান করা। এর মেঝে ও চত্বর এমন চমৎকার জায়গা ছিল যেখান থেকে শোভাযাত্রা দেখা যেত আর সঙ্গে সঙ্গে বেড়ানোর জায়গা হিসাবে এর জনপ্রিয়তা একে কেনাকাটার কেন্দ্র হিসাবেও সাফল্য এনে দিয়েছিল। সম্ভবত রাষ্ট্র দোকানগুলিকে বণিকদের কাছে ভাড়া দিয়েছিল ফলে এই অট্টালিকাটি রাজস্বের এক উৎস হিসাবে কাজ করেছিল।
এটিকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার পর বোঝা যায় যে অ্যাটলাসের স্তোয়া জ্যামিতিক নকশার এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এর সর্বাঙ্গীণ অনুপাত, নিচু ও উঁচু স্তম্ভগুলির ক্রমের মধ্যে বিন্যাসের মনোরম ভিন্নতা, আলো-আবছায়ার আকর্ষণীয় খেলা আর এর উপাদানের উৎকর্ষ ও সৌন্দর্য এই সমস্তকিছু এটিকে অতুলনীয় করে তুলেছে। বিভিন্ন উপায়ে একঘেয়েমিকে দূর করা হয়েছে, বিশেষকরে তিন রকমের স্তম্ভশীর্ষ ব্যবহার করে—ডোরিক, আয়োনিয়ন ও মিশরীয়।
সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকলাপের স্থান
এথেন্সে যে অট্টালিকাটি অনেক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চ হিসাবে ব্যবহৃত হত তা হল রঙ্গশালা। এটি রোমীয় সম্রাট আগস্তের জামাতা ভিপসানিয়াস আগ্রিপ্পার দেওয়া এক উপঢৌকন ছিল। এটির সম্মুখভাগ বহুবর্ণের মার্বেল দ্বারা বাঁধানো ছিল। প্রায় ১০০০ জনের বসার ব্যবস্থা সহ মিলনায়তনটির আয়তন ছিল প্রায় ২৫ মিটার আর মূলত অভ্যন্তরস্থ কোন অবলম্বন ছাড়া একটি ছাদ দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল। প্রাচীন জগতে পরিচিত ছাদ বানানোর কৌশলগুলির মধ্যে এটি ছিল এক সাহসী পরীক্ষা! কিন্তু, সম্ভবত যে সমস্ত মনোরঞ্জন বস্তু সেখানে উপস্থিত করা হত তার অধিকাংশই সত্য খ্রীষ্টানদের তাদের উচ্চ নৈতিক মানের পক্ষে আপত্তিকর ছিল।—ইফিষীয় ৫:৩-৫.
খুব সম্ভবত প্রাচীনকালের জ্ঞানলিপ্সু ব্যক্তিরা প্যানটানস এর গ্রন্থাগারটি পরিদর্শন করতেন। এর দেওয়ালগুলি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কক্ষে পূর্ণ ছিল যেখানে প্যাপিরাস ও পার্চমেন্টের হাতে লেখা পাণ্ডুলিপিগুলিকে মজুত রাখা হত। সারিবদ্ধ স্তম্ভের মাঝখান দিয়ে সমদূরত্বে স্থাপিত স্তম্ভশ্রেণীর একটি উঠোনে গ্রন্থাগারের প্রধান কক্ষটি পশ্চিমমুখী ছিল—যেটি শান্তভাবে হাঁটাচলা করা, পড়া ও ধ্যান করার জন্য এক মনোরম স্থান ছিল। একটি শিলালিপিতে গ্রন্থাগারের দুটি লিখিত নিয়ম দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। সেগুলি ছিল: “কোন পুস্তক নিয়ে যাওয়া যাবে না।” আর “[গ্রন্থাগার] একটা থেকে ছয়টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।”
আজকের অ্যাগোরা
সম্প্রতি, আমেরিকার স্কুল অফ ক্লাসিকাল স্টাডিস অ্যাগোরাকে প্রায় সম্পূর্ণভাবে খনন করেছে। অত্যুচ্চ অ্যাক্রোপলিসের ছায়ায় শান্তভাবে বিশ্রামরত অ্যাগোরা পর্যটকদের এক প্রিয় স্থানে পরিণত হয়েছে যারা প্রাচীন এথেন্সের ইতিহাসে এক সংক্ষিপ্ত নজর বুলাতে চান।
নিকটবর্তী পুরনো জিনিসের বাজার হল মনাস্তিরাকী—যেটি অ্যাগোরা ও অ্যাক্রোপলিস থেকে মাত্র কয়েক পা দূরে অবস্থিত—অপর এক আকর্ষণীয় জগৎ। এটি দর্শনার্থীদের গ্রীক লোককথা এবং মধ্য-পূর্ব প্রাচ্য জগতের বাজারের মত হালচাল এবং দর-দাম করার এক আশ্চর্যজনক অথচ সুন্দর দৃশ্যের ঝলক প্রদান করে। আর অবশ্যই দর্শনার্থীরা সেখানে যিহোবার সাক্ষীদেরও দেখবেন যারা আনন্দের সঙ্গে ঠিক সেই কাজই করে চলেছেন, যা ঠিক ১৯০০ বছর আগে প্রেরিত পৌল করেছিলেন—‘যাহাদের সঙ্গেই দেখা হয়’ প্রকাশ্যে তাদের কাছে রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করা।
[পাদটীকাগুলো]
a আয়োনিয়ান এই নামটি যবন থেকে আসে যিনি ছিলেন যেফতের পুত্র ও নোহের প্রপৌত্র।—আদিপুস্তক ১০:১, ২, ৪, ৫.
[২৮ পৃষ্ঠার বাক্স]
এথেন্সে বাণিজ্য
অ্যাগোরা এথেন্সের কেবল বৌদ্ধিক ও পৌর জীবনের কেন্দ্রবিন্দুই ছিল না কিন্তু শহরের অন্যতম প্রধান বাজারও ছিল। এথেন্স বাণিজ্যের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল যা এর মুদ্রার মূল্য ও এর আরকনদের সততার জন্য বিখ্যাত ছিল যারা এই বিষয়টি দেখার অধিকারী ছিলেন যে ব্যবসার সমস্ত লেনদেন সৎ ও পক্ষপাতশূন্যভাবে হচ্ছে।
এথেন্স মদ, জলপাই তেল, মধু, মার্বেল ও চিনামাটির জিনিস ও পরিষ্কৃত ধাতুর মত শিল্পসংক্রান্ত দ্রব্যাদি রপ্তানি করত। পরিবর্তে, এটি প্রধানত গম আমদানি করত। যেহেতু অ্যাটিকা (এথেন্সের চতুর্দিকের এলাকা) এর অধিবাসীদের খাদ্য যোগানোর মত পর্যাপ্ত খাদ্যসামগ্রী উৎপন্ন করত না তাই বাণিজ্যিক ক্রয়বিক্রয়ের মান কঠোর নিয়মানুবর্তী ছিল। পিরেসের বাজারে (এথেন্সের বন্দর) শহর ও সেনাবাহিনীর জন্য সর্বদা টাটকা খাবারের প্রচুর সরবরাহ রাখতে হত। আর ব্যবসায়ীরা চাহিদার সময়ে খুব চড়া দামে বিক্রি করার জন্য কিছু মজুত করতে পারতেন না।