কে “রক্ষা পাইবে”?
“যে কেহ প্রভুর [“যিহোবার,” “NW”] নামে ডাকিবে, সেই পরিত্রাণ পাইবে।”—প্রেরিত ২:২১.
১. জগতের ইতিহাসে সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিন কেন এক সন্ধিক্ষণ ছিল?
সাধারণ কাল ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিন ছিল জগতের ইতিহাসে এক সন্ধিক্ষণ। কেন? কারণ সেই দিনে এক নতুন জাতি জন্ম নিয়েছিল। প্রথমে জাতিটি বড় ছিল না—যীশুর মাত্র ১২০ জন শিষ্য যিরূশালেমে উপরের একটি কুঠরীতে একত্রিত হয়েছিলেন। কিন্তু অতীতে বিদ্যমান অধিকাংশ জাতিগুলি বর্তমানে বিস্মৃত হলেও, উপরের কুঠরীতে জাত জাতিটি এখনও আমাদের সাথে রয়েছেন। এই ঘটনাটি আমাদের সকলের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ মানবজাতির সম্মুখে ঈশ্বরের সাক্ষী হওয়ার জন্য তারাই তাঁর দ্বারা মনোনীত জাতি।
২. কোন্ অলৌকিক ঘটনাগুলি নতুন জাতির জন্মকে চিহ্নিত করেছিল?
২ সেই নতুন জাতি যখন অস্তিত্বে আসতে শুরু করেন, তখন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলি ঘটেছিল যা যোয়েলের ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বাক্যগুলিকে পরিপূর্ণ করে। আমরা প্রেরিত ২:২-৪ পদে এই ঘটনাগুলি সম্বন্ধে পড়ি: “হঠাৎ আকাশ হইতে প্রচণ্ডবায়ুর বেগের শব্দবৎ একটা শব্দ আসিল, এবং যে গৃহে তাঁহারা বসিয়াছিলেন, সেই গৃহের সর্ব্বত্র ব্যাপ্ত হইল। আর অংশ অংশ হইয়া পড়িতেছে, এমন অনেক অগ্নিবৎ জিহ্বা তাঁহাদের দৃষ্টিগোচর হইল; এবং তাঁহাদের প্রত্যেক জনের উপরে বসিল। তাহাতে তাঁহারা সকলে পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হইলেন, এবং আত্মা তাঁহাদিগকে যেরূপ বক্তৃতা দান করিলেন, তদনুসারে অন্য অন্য ভাষায় কথা কহিতে লাগিলেন।” এভাবে সেই ১২০ জন বিশ্বস্ত পুরুষ ও নারী এক আত্মিক জাতিতে পরিণত হয়েছিলেন, তার প্রথম সদস্যেরা যাদের প্রেরিত পৌল পরবর্তী সময়ে ‘ঈশ্বরের ইস্রায়েল’ হিসাবে অভিহিত করেছিলেন।—গালাতীয় ৬:১৬.
৩. সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে যোয়েলের কোন্ ভবিষ্যদ্বাণীটি পরিপূর্ণ হয়েছিল?
৩ “প্রচণ্ড বায়ুর বেগের” অনুসন্ধান করতে জনতা একত্রিত হয়েছিলেন এবং প্রেরিত পিতর তাদের কাছে ব্যাখ্যা করেছিলেন যে যোয়েলের ভবিষ্যদ্বাণীগুলির মধ্যে একটি পরিপূর্ণ হয়েছে। কোন্ ভবিষ্যদ্বাণীটি? তিনি যা বলেছিলেন শুনুন: “শেষ কালে এইরূপ হইবে, ইহা ঈশ্বর বলিতেছেন, আমি মর্ত্ত্যমাত্রের উপরে আপন আত্মা সেচন করিব; তাহাতে তোমাদের পুত্ত্রগণ ও তোমাদের কন্যাগণ ভাববাণী বলিবে, আর তোমাদের যুবকেরা দর্শন পাইবে, আর তোমাদের প্রাচীনেরা স্বপ্ন দেখিবে। আবার আমার দাসদের উপরে এবং আমার দাসীদের উপরে সেই সময়ে আমি আমার আত্মা সেচন করিব, আর তাহারা ভাববাণী বলিবে। আমি উপরে আকাশে নানা অদ্ভুত লক্ষণ এবং নীচে পৃথিবীতে নানা চিহ্ন রক্ত, অগ্নি ও ধূম-বাষ্প দেখাইব। প্রভুর [“যিহোবার,” “NW”] সেই মহৎ ও প্রসিদ্ধ দিনের আগমনের পূর্ব্বে সূর্য্য অন্ধকার হইয়া যাইবে, চন্দ্র রক্ত হইয়া যাইবে, আর এইরূপ হইবে, যে কেহ প্রভুর [“যিহোবার,” “NW”] নামে ডাকিবে, সেই পরিত্রাণ পাইবে।” (প্রেরিত ২:১৭-২১) পিতর যে বাক্যগুলি উদ্ধৃত করেছিলেন তা যোয়েল ২:২৮-৩২ পদে পাওয়া যায় আর সেগুলির পরিপূর্ণতার অর্থ ছিল যে যিহূদী জাতির জন্য সময় ফুরিয়ে আসছিল। ‘যিহোবার সেই মহৎ ও প্রসিদ্ধ দিন,’ অবিশ্বস্ত ইস্রায়েলের জন্য বিচারের সময় সন্নিকট ছিল। কিন্তু কে পরিত্রাণ অথবা রক্ষা পাবে? আর এটি কিসের পূর্বাভাস দিয়েছিল?
ভবিষ্যদ্বাণীর দুটি পরিপূর্ণতা
৪, ৫. আসন্ন ঘটনাগুলির পরিপ্রেক্ষিতে, পিতর কী পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং সেই পরামর্শ কেন তার দিন ছাড়াও প্রযোজ্য ছিল?
৪ সা.কা. ৩৩ সালের পরবর্তী বছরগুলিতে ঈশ্বরের আত্মিক ইস্রায়েল সমৃদ্ধি লাভ করেছিল কিন্তু মাংসিক ইস্রায়েল নয়। সা.কা. ৬৬ সালে মাংসিক ইস্রায়েল রোমে যুদ্ধে রত ছিল। সা.কা. ৭০ সালে ইস্রায়েল প্রায় অস্তিত্বহীনতায় চলে গিয়েছিল এবং মন্দির সহ যিরূশালেম পুড়ে সম্পূর্ণভাবে ধূলিসাৎ হয়েছিল। সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে, পিতর আসন্ন দুঃখজনক ঘটনাগুলির পরিপ্রেক্ষিতে উত্তম পরামর্শ দিয়েছিলেন। আবার যোয়েলের কথা উদ্ধৃত করে তিনি বলেছিলেন: “যে কেহ যিহোবার নামে ডাকিবে, সেই পরিত্রাণ পাইবে।” প্রত্যেক যিহূদীকে যিহোবার নামে ডাকার জন্য ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। এটি পিতরের পরবর্তী নির্দেশনাগুলির প্রতি মনোযোগ দেওয়াকে অন্তর্ভুক্ত করেছিল: “মন ফিরাও, এবং তোমরা প্রত্যেক জন তোমাদের পাপমোচনের নিমিত্ত যীশু খ্রীষ্টের নামে বাপ্তাইজিত হও।” (প্রেরিত ২:৩৮) পিতরের শ্রোতাদের যীশুকে মশীহ হিসাবে গ্রহণ করতে হয়েছিল যাঁকে ইস্রায়েল জাতি প্রত্যাখ্যান করেছিল।
৫ যোয়েলের ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বাক্যগুলির প্রথম শতাব্দীর নম্র ব্যক্তিদের উপর এক বৃহৎ প্রভাব ছিল। কিন্তু বর্তমানে এগুলির বৃহত্তর প্রভাব রয়েছে কারণ বিংশ শতাব্দীর ঘটনাগুলি দেখায় যে যোয়েলের ভবিষ্যদ্বাণী দ্বিতীয়বার পরিপূর্ণ হয়েছে। কিভাবে, আসুন আমরা তা দেখি।
৬. ১৯১৪ সাল উপস্থিত হওয়ার সাথে সাথে ঈশ্বরের ইস্রায়েলের শনাক্তিকরণ কিভাবে স্পষ্ট হয়েছিল?
৬ প্রেরিতদের মৃত্যুর পর, ঈশ্বরের ইস্রায়েল মিথ্যা খ্রীষ্টতত্ত্বের শ্যামাঘাস দ্বারা ঢেকে গিয়েছিল। কিন্তু শেষকালের সূচনায় ১৯১৪ সালে, এই আত্মিক জাতির শনাক্তিকরণ আরেকবার স্পষ্ট হয়েছিল। এই সমস্ত কিছু গম ও শ্যামাঘাস সম্বন্ধীয় যীশুর দৃষ্টান্তের পরিপূর্ণতা ছিল। (মথি ১৩:২৪-৩০, ৩৬-৪৩) ১৯১৪ সাল যতই নিকটবর্তী হতে থাকে, অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা অবিশ্বস্ত খ্রীষ্টীয় জগৎ থেকে নিজেদের পৃথক, সাহসের সাথে তার মিথ্যা মতবাদগুলি প্রত্যাখ্যান এবং “জাতিগণের সময়” এর আসন্ন ধ্বংস প্রচার করা শুরু করেন। (লূক ২১:২৪) কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধ যা ১৯১৪ সালে ঘটেছিল, সেই বিচার্য বিষয়গুলি উত্থাপন করেছিল যার জন্য তারা প্রস্তুত ছিলেন না। প্রচণ্ড চাপের মধ্যে অনেকে মন্থর হয়ে পড়েছিলেন এবং কিছু ব্যক্তি আপোশ করেছিলেন। ১৯১৮ সালের মধ্যে তাদের প্রচার কাজ প্রায় সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
৭. (ক) সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনের অনুরূপ কোন্ ঘটনা ১৯১৯ সালে ঘটেছিল? (খ) ১৯১৯ সাল থেকে যিহোবার দাসেদের উপর ঈশ্বরের আত্মা সেচনের কোন্ প্রভাব ছিল?
৭ তবুও, তা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ১৯১৯ সাল থেকে আরম্ভ করে যিহোবা তাঁর আত্মা তাঁর লোকেদের উপর এমন এক উপায়ে সেচন করতে শুরু করেন, যা সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনটিকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিল। অবশ্য, ১৯১৯ সালে বিভিন্ন ভাষায় কথা বলা এবং প্রচণ্ড বায়ুর বেগ ছিল না। ১ করিন্থীয় ১৩:৮ পদে লিপিবদ্ধ পৌলের বাক্যগুলি থেকে আমরা বুঝতে পারি যে অলৌকিক কাজের সময়টি বহু পূর্বেই অতীত হয়েছে। তৎসত্ত্বেও, ১৯১৯ সালে ঈশ্বরের আত্মা স্পষ্টত প্রতীয়মান হয় যখন যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইওর সিডার পয়েন্টের এক সম্মেলনে বিশ্বস্ত খ্রীষ্টানেরা পুনরায় সতেজ হন এবং আবার রাজ্যের সুসমাচার প্রচারের কাজ শুরু করেন। ১৯২২ সালে তারা সিডার পয়েন্টে ফিরে যান এবং এই সনির্বন্ধ আবেদন, “রাজা এবং তাঁর রাজ্যকে ঘোষণা কর, ঘোষণা কর, ঘোষণা কর” দ্বারা উদ্দীপিত হন। প্রথম শতাব্দীতে যেমন ঘটেছিল, জগৎ ঈশ্বরের আত্মা সেচনের প্রভাবগুলি লক্ষ্য করতে বাধ্য হয়েছিল। প্রত্যেক উৎসর্গীকৃত খ্রীষ্টান—পুরুষ ও নারী, বৃদ্ধ ও যুবক—“ভাববাণী” বলতে শুরু করেছিলেন অর্থাৎ “ঈশ্বরের মহৎ মহৎ কর্ম্মের কথা” ঘোষণা করেছিলেন। (প্রেরিত ২:১১) পিতরের মত তারা নম্র ব্যক্তিদের পরামর্শ দিয়েছিলেন: “এই কালের কুটিল লোকদের হইতে আপনাদিগকে রক্ষা কর।” (প্রেরিত ২:৪০) সাড়া প্রদানকারী ব্যক্তিরা কিভাবে তা করেছিলেন? যোয়েল ২:৩২ পদে প্রাপ্ত যোয়েলের বাক্যগুলিতে মনোযোগ দানের মাধ্যমে: “যে কেহ সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” “NW“] নামে ডাকিবে, সেই রক্ষা পাইবে।”
৮. ১৯১৯ সাল থেকে ঈশ্বরের ইস্রায়েলের জন্য কিভাবে বিষয়গুলি অগ্রসর হয়েছে?
৮ প্রাথমিক সেই বছরগুলি থেকে ঈশ্বরের ইস্রায়েলের বিষয়গুলি ক্রমশ অগ্রসর হয়েছে। অভিষিক্তদের মুদ্রাঙ্কন স্পষ্টতই উত্তমভাবে অগ্রসর হয়েছিল এবং ১৯৩০ এর দশক থেকে পার্থিব আশা যুক্ত নম্র ব্যক্তিদের এক বিরাট জনতা দৃশ্যপটে আবির্ভূত হন। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৩, ৯) সকলে তৎপরতার মনোভাব অনুভব করেন কারণ যোয়েল ২:২৮, ২৯ পদের দ্বিতীয় পরিপূর্ণতা দেখায় যে আমরা যিহোবার মহত্তর ভয়ানক দিনের নিকটবর্তী, যখন বিশ্বব্যাপী ধর্মীয়, রাজনৈতিক এবং বাণিজ্যিক বিধিব্যবস্থা ধ্বংস হবে। তিনি আমাদের উদ্ধার করবেন এই পূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে ‘যিহোবার নামে ডাকার’ প্রতিটি কারণ আমাদের রয়েছে।
কিভাবে আমরা যিহোবার নামে ডাকি?
৯. যিহোবার নামে ডাকার সাথে জড়িত কিছু বিষয় কী?
৯ যিহোবার নামে ডাকার সাথে কী জড়িত? যোয়েল ২:২৮, ২৯ পদের প্রসঙ্গটি আমাদের এই প্রশ্নের উত্তর পেতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, যারা তাঁকে ডাকে তাদের সকলের বিনতি যিহোবা শোনেন না। যিহোবা আরেকজন ভাববাদী যিশাইয়ের মাধ্যমে ইস্রায়েলকে বলেছিলেন: “তোমরা অঞ্জলি প্রসারণ করিলে আমি তোমাদের হইতে আমার চক্ষু আচ্ছাদন করিব; যদ্যপি অনেক প্রার্থনা কর, তথাপি শুনিব না।” কেন যিহোবা তাঁর নিজ জাতির বিনতি শুনতে অগ্রাহ্য করেছিলেন? তিনি নিজেই ব্যাখ্যা করেন: “তোমাদের হস্ত রক্তে পরিপূর্ণ।” (যিশাইয় ১:১৫) যারা রক্তপাতের দোষে দোষী অথবা পাপ অভ্যাস করে যাচ্ছেন তাদের কারও প্রার্থনা যিহোবা শুনবেন না। এইজন্যই পঞ্চাশত্তমীর দিনে পিতর যিহূদীদের অনুতপ্ত হতে বলেছিলেন। যোয়েল ২:২৮, ২৯ পদের প্রসঙ্গে আমরা দেখি যে যোয়েলও অনুতাপের উপর জোর দেন। উদাহরণস্বরূপ, যোয়েল ২:১২, ১৩ পদে আমরা পড়ি: “কিন্তু, সদাপ্রভু বলেন, এখনও তোমরা সমস্ত অন্তঃকরণের সহিত, এবং উপবাস, রোদন ও বিলাপ সহকারে আমার কাছে ফিরিয়া আইস। আর আপন আপন বস্ত্র না ছিঁড়িয়া অন্তঃকরণ চির, এবং আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে ফিরিয়া আইস; কেননা তিনি কৃপাময় ও স্নেহশীল ক্রোধে ধীর ও দয়াতে মহান্।” ১৯১৯ সাল থেকে শুরু করে অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা এই বাক্যগুলির সাথে সংগতি রেখে কাজ করেছিলেন। তারা তাদের ব্যর্থতাগুলির জন্য অনুতপ্ত এবং আর কখনও আপোশ না করা অথবা মন্থর না হওয়ার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হয়েছিলেন। এটি ঈশ্বরের আত্মা সেচিত হওয়ার পথ খুলে দিয়েছিল। প্রত্যেক ব্যক্তি যারা যিহোবার নামে ডাকতে এবং তাদের বিনতি শোনা হোক তা চান, তাদের অবশ্যই একই ধারা অনুসরণ করতে হবে।
১০. (ক) প্রকৃত অনুতাপ কী? (খ) প্রকৃত অনুতাপে যিহোবা কিভাবে সাড়া দেন?
১০ মনে রাখবেন, প্রকৃত অনুতাপ কেবল “আমি দুঃখিত” বলার চেয়েও আরও বেশি কিছু বোঝায়। ইস্রায়েলীয়রা তাদের অনুভূতির তীব্রতা দেখানোর জন্য বহিঃস্থ বস্ত্র ছিঁড়ত। কিন্তু যিহোবা বলেন: “আপন আপন বস্ত্র না ছিঁড়িয়া অন্তঃকরণ চির।” প্রকৃত অনুতাপ হৃদয় থেকে, আমাদের সত্তার গভীর থেকে আসে। এটি অন্যায় থেকে আমাদের ফিরে আসাকে অন্তর্ভুক্ত করে যেমন আমরা যিশাইয় ৫৫:৭ পদে পড়ি: “দুষ্ট আপন পথ, অধার্ম্মিক আপন সংকল্প ত্যাগ করুক; এবং সে সদাপ্রভুর প্রতি ফিরিয়া আইসুক।” এটি পাপকে ঘৃণা করাকে অন্তর্ভুক্ত করে, ঠিক যেমন যীশু করেছিলেন। (ইব্রীয় ১:৯) অতএব, মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের ভিত্তিতে আমাদের পাপ ক্ষমা করার জন্য আমরা যিহোবাতে আস্থা রাখি কারণ যিহোবা হলেন “কৃপাময় ও স্নেহশীল ক্রোধে ধীর ও দয়াতে মহান্।” তিনি আমাদের উপাসনা, আমাদের আধ্যাত্মিক ভক্ষ্য-নৈবেদ্য এবং পেয়-নৈবেদ্য গ্রহণ করবেন। আমরা যখন তাঁর নামে ডাকব, তিনি শুনবেন।—যোয়েল ২:১৪.
১১. আমাদের জীবনে সত্য উপাসনার কোন্ স্থান হওয়া উচিত?
১১ পর্বতে দত্ত উপদেশে যীশু আমাদের মনে রাখার জন্য আরও কিছু বিষয় প্রদান করেছিলেন যখন তিনি বলেছিলেন: “কিন্তু, তোমরা প্রথমে তাঁহার রাজ্য ও তাঁহার ধার্ম্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা কর।” (মথি ৬:৩৩) আমাদের উপাসনাকে উদাসীনভাবে দেখা উচিত নয়, এমন কিছু যা আমরা আমাদের বিবেককে প্রবোধ দেওয়ার জন্য নামমাত্র করে থাকি। ঈশ্বরকে সেবা করা আমাদের জীবনে প্রথম স্থান পাওয়ার যোগ্য। তাই যোয়েলের মাধ্যমে যিহোবা বলে চলেন: “সিয়োনে তূরী বাজাও, . . . প্রজা লোকদিগকে একত্র কর, পবিত্র সমাজ নিরূপণ কর, প্রাচীনগণকে আহ্বান কর, বালকবালিকাদিগকে ও দুগ্ধপোষ্য শিশুদিগকে একত্র কর; বর আপন বাসরগৃহ হইতে, কন্যা আপন অন্তঃপুর হইতে নির্গত হউক।” (যোয়েল ২:১৫, ১৬) নববিবাহিতদের জন্য বিক্ষিপ্ত হওয়া স্বাভাবিক, যাদের কেবল পরস্পরের প্রতি মনোযোগ রয়েছে। কিন্তু এমনকি তাদের ক্ষেত্রেও, যিহোবাকে সেবা করা অবশ্যই প্রথম বিষয় হওয়া উচিত। কোন কিছুই আমাদের ঈশ্বরের সাথে একত্রিত হওয়ার, তাঁর নামে ডাকার অগ্রে আসতে পারে না।
১২. গত বছরের স্মরণার্থক সভার রিপোর্ট থেকে বৃদ্ধির কোন্ সম্ভাবনা দেখা যায়?
১২ এটি মনে রেখে, আসুন আমরা যিহোবার সাক্ষীদের ১৯৯৭ পরিচর্যা বছরের রিপোর্টে প্রকাশিত পরিসংখ্যান বিবেচনা করি। গত বছর রাজ্য প্রকাশকের সর্বোচ্চ শীর্ষ সংখ্যা ছিল ৫৫,৯৯,৯৩১ জন—প্রশংসাকারীদের সত্যই এক বিরাট জনতা! স্মরণার্থক সভায় উপস্থিতি ছিল ১,৪৩,২২,২২৬ জন—প্রকাশকদের সংখ্যার চেয়ে প্রায় ৮৫ লক্ষ বেশি। এই সংখ্যা, বৃদ্ধির এক চমৎকার সম্ভাবনা প্রদর্শন করে। ৮৫ লক্ষের মধ্যে অনেকেই আগ্রহী ব্যক্তি অথবা বাপ্তাইজিত পিতামাতার সন্তান হিসাবে যিহোবার সাক্ষীদের সাথে ইতিমধ্যেই বাইবেল অধ্যয়ন করছিলেন। এক বিরাট সংখ্যকেরা একেবারে প্রথমবারের মত এই সভাতে উপস্থিত হয়েছিলেন। তাদের এই উপস্থিতি, তাদেরকে আরও ভালভাবে জানার এবং আরও অগ্রগতি করতে সাহায্য করার জন্য যিহোবার সাক্ষীদের এক উত্তম সুযোগ দিয়েছিল। এছাড়া সেখানে এমন ব্যক্তিরাও ছিলেন যারা প্রতি বছর স্মরণার্থক সভায় যোগ দেন ও হয়ত অন্যান্য কয়েকটি সভায়ও উপস্থিত হন কিন্তু তারা আর কোন উন্নতি করেন না। তবুও, এই ব্যক্তিরা সভায় যোগদানের জন্য অবশ্যই সাদরে আমন্ত্রিত। কিন্তু আমরা তাদের যোয়েলের ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বাক্যগুলি সতর্কতার সাথে ধ্যান করতে এবং তারা যখন তাঁর নামে ডাকবেন তখন যে যিহোবা তাদের কথা শুনবেন তা নিশ্চিত করার জন্য আর কোন্ পদক্ষেপগুলি অবশ্যই নিতে হবে, সেই সম্বন্ধে বিবেচনা করার জন্য পরামর্শ দিই।
১৩. যদি আমরা ইতিমধ্যেই যিহোবার নামে ডাকছি, তাহলে অন্যদের প্রতি আমাদের কোন্ দায়িত্ব রয়েছে?
১৩ প্রেরিত পৌল ঈশ্বরের নামে ডাকার আরেকটি দিকের উপর জোর দিয়েছিলেন। রোমীয়দের প্রতি তার পত্রে, তিনি যোয়েলের ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বাক্যগুলি উদ্ধৃত করেছিলেন: “যে কেহ প্রভুর [“যিহোবার,” “NW”] নামে ডাকিবে সে পরিত্রাণ পাইবে।” তারপর তিনি যুক্তি দেখিয়েছিলেন: “তাহারা যাঁহাতে বিশ্বাস করে নাই, কেমন করিয়া তাঁহাকে ডাকিবে? আর যাঁহার কথা শুনে নাই, কেমন করিয়া তাঁহাতে বিশ্বাস করিবে? আর প্রচারক না থাকিলে কেমন করিয়া শুনিবে?” (রোমীয় ১০:১৩, ১৪) হ্যাঁ, এমন অনেকে যারা এখন পর্যন্ত যিহোবাকে জানেননি, তাদের যিহোবার নামে ডাকার জন্য সাহায্যের প্রয়োজন। যারা ইতিমধ্যেই যিহোবাকে জেনেছেন তাদের কেবল প্রচার করা নয়, বরং তাদের কাছে পৌঁছানোর এবং সেই সাহায্য প্রদান করার দায়িত্ব রয়েছে।
এক আত্মিক পরমদেশ
১৪, ১৫. যেহেতু যিহোবার লোকেরা তাঁর সন্তোষজনক উপায়ে তাঁর নামে ডাকেন, তাই কোন্ পরমদেশীয় আশীর্বাদগুলি তারা উপভোগ করেন?
১৪ অভিষিক্ত এবং অপর মেষ উভয়েই এভাবে বিষয়গুলিকে দেখেন এবং ফলস্বরূপ যিহোবা তাদের আশীর্বাদ করেন। “সদাপ্রভু আপন দেশের জন্য উদ্যোগী হইলেন, ও আপন প্রজাদের প্রতি দয়া করিলেন।” (যোয়েল ২:১৮) ১৯১৯ সালে, যিহোবা তাঁর লোকেদের জন্য উদ্যোগ ও করুণা দেখিয়েছিলেন, যখন তিনি তাদের পুনর্স্থাপন করেন এবং তাঁর আধ্যাত্মিক কাজকর্মের এক রাজ্যে তাদের নিয়ে আসেন। এটি প্রকৃতই এক আত্মিক পরমদেশ যা যোয়েলের এই বাক্যগুলিতে উত্তমভাবে বর্ণিত হয়েছে: “হে দেশ, ভয় করিও না, উল্লাসিত হও, আনন্দ কর, কেননা সদাপ্রভু মহৎ মহৎ কর্ম্ম করিয়াছেন। হে ক্ষেত্রের পশুগণ, ভয় করিও না, কেননা প্রান্তরস্থ চরাণীস্থান তৃণভূষিত হইতেছে, বৃক্ষ ফলবান্ হইতেছে, ডুমুরবৃক্ষ ও দ্রাক্ষালতা আপন আপন বল প্রদান করিতেছে। আর হে সিয়োন-সন্তানগণ, তোমরা উল্লাসিত হও, তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুতে আনন্দ কর, কেননা তিনি তোমাদিগকে যথাপরিমাণে অগ্রিম বৃষ্টি দিলেন, এবং প্রথমতঃ তোমাদের নিমিত্ত অগ্রিম ও উত্তর বর্ষার জল বর্ষাইলেন। এইরূপে খামার সকল শস্যে পরিপূর্ণ হইবে, দ্রাক্ষারস ও তৈলে কুণ্ড সকল উথলিয়া উঠিবে।”—যোয়েল ২:২১-২৪.
১৫ কী এক মনোরম বর্ণনা! ইস্রায়েলে জীবনধারণের তিনটি মৌলিক বিষয়—শস্য, জলপাই তেল এবং দ্রাক্ষারস আর সেই সাথে পর্যাপ্ত পশুপালের সরবরাহ। আমাদের দিনে এই ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বাক্যগুলি বাস্তবিকই এক আধ্যাত্মিক উপায়ে পরিপূর্ণ হয়। আমাদের প্রয়োজনীয় সমস্ত আধ্যাত্মিক খাদ্য যিহোবা সরবরাহ করে থাকেন। ঈশ্বর-দত্ত এই প্রাচুর্যে আমরা কি আনন্দিত নই? সত্যই মালাখি যেমন ভাববাণী করেছিলেন আমাদের ঈশ্বর ‘আকাশের দ্বার সকল মুক্ত করিয়া আমাদের প্রতি অপরিমেয় আশীর্বাদ বর্ষণ’ করেছেন।—মালাখি ৩:১০.
বিধিব্যবস্থার শেষ
১৬. (ক) আমাদের সময়ের জন্য যিহোবার আত্মা সেচনের কোন্ তাৎপর্য রয়েছে? (খ) ভবিষ্যতে কী রয়েছে?
১৬ ঈশ্বরের লোকেদের পরমদেশীয় অবস্থা সম্বন্ধে ভাববাণী করার পর, যিহোবার আত্মা সেচনের বিষয়ে যোয়েল ভবিষ্যদ্বাণী করেন। পঞ্চাশত্তমীর দিনে যখন পিতর এই ভবিষ্যদ্বাণীটি উদ্ধৃত করেছিলেন, তিনি বলেছিলেন যে এটি “শেষ কালে” পরিপূর্ণতার বিষয়। (প্রেরিত ২:১৭) তখন ঈশ্বরের আত্মা সেচনের অর্থ ছিল যে যিহূদী বিধিব্যবস্থার জন্য শেষ কাল শুরু হয়ে গিয়েছিল। বিংশ শতাব্দীতে ঈশ্বরের ইস্রায়েলের উপর ঈশ্বরের আত্মা সেচনের অর্থ আমরা জগদ্ব্যাপী বিধিব্যবস্থার শেষ কালে বাস করছি। এই পরিপ্রেক্ষিতে, ভবিষ্যতে কী রয়েছে? যোয়েলের ভবিষ্যদ্বাণী আমাদের বলে চলে: “আমি আকাশে ও পৃথিবীতে অদ্ভুত লক্ষণ দেখাইব,—রক্ত, অগ্নি ও ধূমস্তম্ভ দেখাইব। সদাপ্রভুর ঐ মহৎ ও ভয়ঙ্কর দিনের আগমনের পূর্ব্বে সূর্য্য অন্ধকার ও চন্দ্র রক্ত হইয়া যাইবে।”—যোয়েল ২:৩০, ৩১.
১৭, ১৮. (ক) যিরূশালেমের উপর যিহোবার কোন্ ভয়ানক দিন এসেছিল? (খ) যিহোবার ভবিষ্যৎ ভয়ানক দিনের নিশ্চয়তা আমাদের কী করতে পরিচালিত করে?
১৭ সা.কা. ৬৬ সালে এই ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বাক্যগুলি যিহূদিয়ায় বাস্তবায়িত হতে শুরু করেছিল যখন ঘটনাগুলি সা.কা. ৭০ সালে যিহোবার ভয়ানক দিনের পরিপূর্ণতার দিকে অদম্যভাবে পরিচালিত হচ্ছিল। যারা যিহোবার নাম মহিমান্বিত করছেন না সেই সময়ে তাদের মধ্যে থাকা কতই না আতঙ্কজনক! আজকে, সম্মুখস্থ ঘটনাগুলি ঠিক একইরকমের আতঙ্কজনক যখন সমস্ত জগৎ বিধিব্যবস্থা যিহোবার হাতে ধ্বংস হবে। তবুও, মুক্তি সম্ভব। ভবিষ্যদ্বাণীটি বলে চলে: “যে কেহ সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” “NW”] নামে ডাকিবে, সেই রক্ষা পাইবে; কারণ সদাপ্রভুর বাক্যানুসারে সিয়োন পর্ব্বতে ও যিরূশালেমে রক্ষাপ্রাপ্ত দল থাকিবে, এবং পলাতক সকলের মধ্যে এমন লোক থাকিবে, যাহাদিগকে সদাপ্রভু ডাকিবেন।” (যোয়েল ২:৩২) যিহোবার নাম জানায় যিহোবার সাক্ষীরা প্রকৃতই কৃতজ্ঞ আর তাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে যে যখন তারা তাঁর নামে ডাকবেন, তিনি তাদের রক্ষা করবেন।
১৮ কিন্তু, যিহোবার মহৎ ও প্রসিদ্ধ দিন যখন প্রচণ্ড ক্রোধে এই জগৎকে আঘাত করবে তখন কী হবে? এই বিষয়টি শেষ অধ্যয়ন প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে।
আপনি কি স্মরণ করতে পারেন?
◻ তাঁর লোকেদের উপর যিহোবা প্রথম কখন তাঁর আত্মা সেচন করেছিলেন?
◻ যিহোবার নামে ডাকার সাথে জড়িত কিছু বিষয় কী?
◻ যিহোবার মহৎ ও প্রসিদ্ধ দিন কখন মাংসিক ইস্রায়েলের উপর এসেছিল?
◻ আজকে যারা তাঁর নামে ডাকেন তাদের যিহোবা কিভাবে আশীর্বাদ করে থাকেন?
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে একটি নতুন জাতির জন্ম হয়েছিল
[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
এই শতাব্দীর প্রথম দিকে, যোয়েল ২:২৮, ২৯ পদের পরিপূর্ণতায় যিহোবা তাঁর লোকেদের উপর পুনরায় তাঁর আত্মা সেচন করেছিলেন
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিহোবার নামে ডাকার জন্য লোকেদের অবশ্যই সাহায্য করতে হবে