প্রকৃত শান্তির অন্বেষণ করুন ও তার অনুধাবন করুন!
“‘যে ব্যক্তি জীবন ভালবাসিতে চায়, ও মঙ্গলের দিন দেখিতে চায়, . . . সে মন্দ হইতে ফিরুক ও সদাচরণ করুক, শান্তির চেষ্টা করুক, ও তাহার অনুধাবন করুক।’”—১ পিতর ৩:১০, ১১.
১. যিশাইয়ের কোন্ বিখ্যাত বাক্যগুলি অবশ্যই নিশ্চিতরূপে সফল হবে?
“তাহারা আপন আপন খড়্গ ভাঙ্গিয়া লাঙ্গলের ফাল গড়িবে, ও আপন আপন বড়শা ভাঙ্গিয়া কাস্তা গড়িবে; এক জাতি অন্য জাতির বিপরীতে আর খড়্গ তুলিবে না, তাহারা আর যুদ্ধ শিখিবে না।” (যিশাইয় ২:৪) এমনকি যদিও এই বিখ্যাত পদটি নিউ ইয়র্ক শহরে রাষ্ট্রসংঘের বিশ্ব প্রধান কার্যালয়ের কাছে প্রদর্শিত হয়ে থাকে, তবুও সেই বিশ্ব সংগঠন কোন ক্রমেই তা সম্পাদন করতে পারেনি। কিন্তু, যিহোবা ঈশ্বরের অব্যর্থ বাক্যের অংশ হিসাবে সেই ঘোষণা ফলহীন হবে না।—যিশাইয় ৫৫:১০, ১১.
২. যিশাইয় ২:২, ৩ পদ অনুসারে “শেষকালে” অবশ্যই কী “ঘটবে”?
২ যিশাইয় ২:৪ পদের বাক্যগুলি প্রকৃতপক্ষে এক চমৎকার ভবিষ্যদ্বাণীর অংশ, প্রকৃত শান্তি সম্বন্ধীয় এক ভবিষ্যদ্বাণী—এবং এটি ঠিক আমাদের সময়েই পরিপূর্ণতা লাভ করে চলেছে। যুদ্ধ এবং যুদ্ধের অস্ত্রগুলি আর থাকবে না, এই রোমাঞ্চকর প্রত্যাশাগুলি ঘোষণা করার পূর্বে ভবিষ্যদ্বাণীটি বলে: “শেষকালে এইরূপ ঘটিবে; সদাপ্রভুর গৃহের পর্ব্বত পর্ব্বতগণের মস্তকরূপে স্থাপিত হইবে, উপপর্ব্বতগণ হইতে উচ্চীকৃত হইবে; এবং সমস্ত জাতি তাহার দিকে স্রোতের ন্যায় প্রবাহিত হইবে। আর অনেক দেশের লোক যাইবে, বলিবে, চল, আমরা সদাপ্রভুর পর্ব্বতে, যাকোবের ঈশ্বরের গৃহে গিয়া উঠি; তিনি আমাদিগকে আপন পথের বিষয়ে শিক্ষা দিবেন, আর আমরা তাঁহার মার্গে গমন করিব; কারণ সিয়োন হইতে ব্যবস্থা ও যিরূশালেম হইতে সদাপ্রভুর বাক্য নির্গত হইবে।”—যিশাইয় ২:২, ৩.
লোকেরা শান্তিপ্রিয় হতে পারে
৩. একজন যুদ্ধপ্রিয় ব্যক্তি কিভাবে শান্তিপ্রিয় ব্যক্তিতে পরিবর্তিত হতে পারেন?
৩ লক্ষ্য করুন যে লোকেরা শান্তিপূর্ণ পথ অনুধাবন করার পূর্বে, তাদের অবশ্যই যিহোবার পথে নির্দেশিত হতে হবে। যিহোবার শিক্ষার প্রতি অনুগত সাড়া প্রদান, একজন ব্যক্তির চিন্তা এবং কাজ করার পথকে পরিবর্তিত করতে পারে, যাতে করে একজন যিনি যুদ্ধপ্রিয় ছিলেন শান্তিপূর্ণ ব্যক্তিতে পরিণত হন। কিভাবে এই রূপান্তর সম্পন্ন হয়ে থাকে? রোমীয় ১২:২ পদ বলে: “এই যুগের অনুরূপ হইও না, কিন্তু মনের নূতনীকরণ দ্বারা স্বরূপান্তরিত হও; যেন তোমরা পরীক্ষা করিয়া জানিতে পার, ঈশ্বরের ইচ্ছা কি, যাহা উত্তম ও প্রীতিজনক ও সিদ্ধ।” আমরা আমাদের মনকে রূপান্তরিত করি অথবা ঈশ্বরের বাক্যের নীতি এবং আদেশগুলি দ্বারা পরিপূর্ণ করে এটিকে ভিন্ন পথে পরিচালিত করি। নিয়মিত বাইবেল অধ্যয়ন আমাদের এই পরিবর্তন করতে সাহায্য করে এবং আমাদের নিজেদের এটি প্রমাণ করে দেখাতে সমর্থ করে যে আমাদের জন্য যিহোবার ইচ্ছা কী যেন আমরা অবশ্যই কোন্ পথে চলব, তা স্পষ্টভাবে দেখতে পেতে পারি।—গীতসংহিতা ১১৯:১০৫.
৪. কিভাবে একজন শান্তিপ্রিয় নতুন মনুষ্যকে পরিধান করেন?
৪ বাইবেলের সত্য, শুধু আমাদের চিন্তা করার প্রণালীকেই নয়, কিন্তু আমাদের কাজ এবং ব্যক্তিত্বকেও রূপান্তরিত করে। এটি আমাদের প্রেরিত পৌলের পরামর্শ পালন করতে সাহায্য করে: “তোমরা পূর্ব্বকালীন আচরণ সম্বন্ধে সেই পুরাতন মনুষ্যকে ত্যাগ কর, যাহা প্রতারণার বিবিধ অভিলাষ মতে ভ্রষ্ট হইয়া পড়িতেছে; আপন আপন মনের ভাবে যেন ক্রমশঃ নবীনীকৃত হও, এবং নূতন মনুষ্যকে পরিধান কর, যাহা সত্যের ধার্ম্মিকতায় ও সাধুতায় ঈশ্বরের সাদৃশ্যে সৃষ্ট হইয়াছে।” (ইফিষীয় ৪:২২-২৪) যে শক্তি মনকে কর্মপ্রেরণা দেয়, তা আভ্যন্তরীণ। যখন যিহোবা ও তাঁর ব্যবস্থার প্রতি আমাদের প্রেম বৃদ্ধি পায় তখন এটি রূপান্তরিত ও শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং এটি আমাদের আধ্যাত্মিক ও শান্তিপ্রিয় লোকে পরিণত করে।
৫. শিষ্যদের যীশুর প্রদত্ত “নূতন আজ্ঞা” কিভাবে তাদের মাঝে শান্তি রাখতে সাহায্য করে?
৫ এই রূপান্তরের প্রয়োজনীয়তা, যীশু তাঁর শেষ মুহূর্তগুলিতে শিষ্যদের সাথে থাকার সময়ে তাদের যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন, তা থেকে দেখা যায়: “এক নূতন আজ্ঞা আমি তোমাদিগকে দিতেছি, তোমরা পরস্পর প্রেম কর; আমি যেমন তোমাদিগকে প্রেম করিয়াছি, তোমরাও তেমনি পরস্পর প্রেম কর। তোমরা যদি আপনাদের মধ্যে পরস্পর প্রেম রাখ, তবে তাহাতেই সকলে জানিবে যে, তোমরা আমার শিষ্য।” (যোহন ১৩:৩৪, ৩৫) এই খ্রীষ্ট তুল্য, নিঃস্বার্থ প্রেম শিষ্যদের সম্পূর্ণ একতায় আবদ্ধ করে। (কলসীয় ৩:১৪) কেবলমাত্র যারা এই “নূতন আজ্ঞা” গ্রহণ করতে এবং সেই অনুসারে জীবনধারণ করতে ইচ্ছুক, তারাই সেই শান্তি উপভোগ করবে যা ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছেন। বর্তমানে এইরূপ লোকেরা কি রয়েছে যারা তা করছে?
৬. জগতের লোকেদের বিপরীতে, যিহোবার সাক্ষীরা কেন শান্তি উপভোগ করে?
৬ যিহোবার সাক্ষীরা তাদের বিশ্বব্যাপী ভ্রাতৃসমাজের প্রতি প্রেম দেখানোর জন্য প্রচেষ্টা করে। যদিও তারা জগতের সমস্ত জাতি থেকে এসেছে, তারা জগতের বিতর্কমূলক বিষয়ে জড়িত হয় না, এমনকি তখনও যখন তারা চরম রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় চাপের মুখোমুখি হয়। ঐক্যবদ্ধ লোক হিসাবে, তারা যিহোবার দ্বারা শিক্ষাপ্রাপ্ত হয় এবং শান্তি উপভোগ করে। (যিশাইয় ৫৪:১৩) তারা রাজনৈতিক সংঘর্ষে নিরপেক্ষ থাকে এবং তারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে না। কেউ কেউ যারা পূর্বে হিংস্র ছিল, সেই জীবন-শৈলীকে পরিত্যাগ করেছে। খ্রীষ্ট যীশুর উদাহরণ অনুকরণ করে তারা শান্তিপ্রিয় খ্রীষ্টানে পরিণত হয়েছে। আর তারা সর্বান্তঃকরণে পিতরের উপদেশ অনুসরণ করে: “‘যে ব্যক্তি জীবন ভালবাসিতে চায়, ও মঙ্গলের দিন দেখিতে চায়, সে মন্দ হইতে আপন জিহ্বাকে, ছলনাবাক্য হইতে আপন ওষ্ঠকে নিবৃত্ত করুক। সে মন্দ হইতে ফিরুক ও সদাচরণ করুক, শান্তির চেষ্টা করুক, ও তাহার অনুধাবন করুক।’”—১ পিতর ৩:১০, ১১; ইফিষীয় ৪:৩.
যারা শান্তির অনুধাবন করছে
৭, ৮. সেই লোকেদের উদাহরণগুলি দিন যারা যুদ্ধ পরিত্যাগ করেছিল এবং প্রকৃত শান্তির অন্বেষণকারীতে পরিণত হয়েছে। (আপনি হয়ত জানেন এইরূপ অন্যান্য অভিজ্ঞতাগুলিও বলুন।)
৭ উদাহরণস্বরূপ, রামি ওভেড একটি বিশিষ্ট সন্ত্রাস বিরোধী সৈন্যদলের প্রাক্তন আধিকারিক সম্বন্ধে চিন্তা করুন। তিনি তার শত্রুদের হত্যা করার জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। তিনি ঐকান্তিকভাবে তাঁর ইস্রায়েলীয় জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করতেন, যে দিনটি পর্যন্ত না তিনি আবিষ্কার করেছিলেন যে রব্বিরা চাননি, যে মহিলাকে তিনি ভালবাসতেন তাকে বিবাহ করেন, শুধুমাত্র সে একজন এশীয় অর্থাৎ পরজাতীয় ছিল বলে। তিনি বাইবেলে সত্য খুঁজতে আরম্ভ করেছিলেন। তারপর তিনি যিহোবার সাক্ষীদের সান্নিধ্যে আসেন। সাক্ষীদের সাথে তার বাইবেল অধ্যয়ন তাকে প্রণোদিত করেছিল যে তিনি আর গোঁড়া জাতীয়তাবাদী থাকতে পারেন না। খ্রীষ্টীয় প্রেমের অর্থ যুদ্ধ ও অস্ত্রগুলিকে পরিত্যাগ করা এবং প্রতিটি বর্ণের লোকেদের প্রেম করতে শেখা। তিনি কতই না চমৎকৃত হয়েছিলেন, যখন তিনি শুরুতে “আমার ভাই রামি” এই শব্দগুলি সহ একটি দয়াপূর্ণ চিঠি পেয়েছিলেন! সেটির মধ্যে এত অস্বাভাবিক কী ছিল? এটির লেখক ছিলেন একজন পলেষ্টীয় সাক্ষী। রামি বলেছিলেন, “আমি ভেবেছিলাম এটি অবিশ্বাস্য, যেহেতু পলেষ্টীয়রা ছিল আমার শত্রু, আর এখানে তাদেরই একজন আমাকে ‘আমার ভাই’ বলে সম্বোধন করছেন।” রামি এবং তার স্ত্রী এখন ঈশ্বরের পথে প্রকৃত শান্তি অনুধাবন করছেন।
৮ আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে জর্জ রিউটারের, যিনি জার্মান সেনাবাহিনীতে কাজ করতেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যেটিকে রাশিয়া আক্রমণ করেছিল। শীঘ্রই জগৎকে শাসন করার জন্য হিটলারের আড়ম্বরপূর্ণ পরিকল্পনায় তার মোহভঙ্গ হয়। যুদ্ধ থেকে ফিরে আসার পর, যিহোবার সাক্ষীদের সাথে তিনি বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করেন। তিনি লিখেছিলেন: “অবশেষে, বিষয়গুলি আমার কাছে পরিষ্কার হতে শুরু করেছিল। আমি উপলব্ধি করেছিলাম যে এই সমস্ত রক্তপাতের জন্য ঈশ্বর দোষী ছিলেন না . . . আমি শিখেছিলাম যে বাধ্য মানবজাতির জন্য অনন্তকালের আশীর্বাদগুলিসহ পৃথিবীব্যাপী একটি পরমদেশ স্থাপন করা তাঁর উদ্দেশ্য ছিল। . . . হিটলার তার ‘হাজার বছরের সাম্রাজ্য’ সম্বন্ধে গর্বিত হয়েছিলেন, কিন্তু তিনি মাত্র ১২ [বছর] শাসন করেছিলেন—আর কী এক ভয়ঙ্কর পরিণতিসহ! হিটলার নয় বরঞ্চ তিনি হলেন খ্রীষ্ট, যিনি পৃথিবীর উপরে হাজার বছরের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারেন ও তা করবেন।” জর্জ এখন প্রায় ৫০ বছর যাবৎ পূর্ণ-সময় পরিচর্যায় রত থেকে প্রকৃত শান্তির একজন দূত হিসাবে সেবা করছেন।
৯. নাৎসী জার্মানীতে যিহোবার সাক্ষীদের অভিজ্ঞতাগুলি কিভাবে প্রমাণ করে যে, তারা সাহসী অথচ শান্তিপ্রিয়?
৯ জার্মানীতে নাৎসী শাসনের সময় যিহোবার সাক্ষীদের বিশ্বস্ততা এবং নিরপেক্ষতা, ঈশ্বরের প্রতি তাদের প্রেমের এবং শান্তির এক ক্রমাগত সাক্ষ্য হয়ে এসেছে এমনকি এখনও, ৫০ বছরের বেশি সময় পরেও। ওয়াশিংটন ডি.সি.-তে ইউনাইটেড স্টেটস্ হলোকাস্ট মেমোরিয়াল মিউসিয়াম দ্বারা প্রকাশিত একটি পুস্তিকা জানায়: “যিহোবার সাক্ষীরা নাৎসী শাসনের অধীনে অকথ্য অত্যাচার সহ্য করেছিল। . . . কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে অত্যাচার, দুর্ব্যবহার, এবং কখনও কখনও মৃত্যুদণ্ডের মুখেও অধিকাংশ ব্যক্তিরা [তাদের ধর্ম অস্বীকার করার ক্ষেত্রে] প্রত্যাখ্যান করতে যে সাহস প্রদর্শন করেছিল, তা তাদের অনেক সমসাময়িকদের কাছ থেকে সম্মান এনেছিল।” তারপর এটি আরও বলে: “ক্যাম্প থেকে মুক্ত হওয়ার পর যিহোবার সাক্ষীরা রক্ষাপ্রাপ্তদের মাঝে বিচরণ করে ও ধর্মান্তরিত করে তাদের কাজ চালিয়ে যায়।”
আরও বৃহত্তর এক পরিবর্তন
১০. (ক) প্রকৃত শান্তি আসতে কোন্ বৃহৎ পরিবর্তনের প্রয়োজন? (খ) দানিয়েলের পুস্তকে তা কিভাবে চিত্রিত হয়েছে?
১০ এর অর্থ কি এই যে, যিহোবার সাক্ষীরা বিশ্বাস করে যে খ্রীষ্টীয় নিরপেক্ষতা সম্বন্ধে এক বিশ্বাসের প্রতি জনগণকে ধর্মান্তরিত করার দ্বারা, তারা সমস্ত পৃথিবীতে শান্তি আনতে পারবে? না! কারণ পৃথিবীতে শান্তি পুনঃস্থাপিত করার জন্য অবশ্যই আরও বৃহত্তর এক পরিবর্তনের প্রয়োজন। সেটি কী? বিভেদ সৃষ্টিকারী, পীড়নকর এবং হিংস্র মানব শাসনকে ঈশ্বরের রাজ্যের শাসন দ্বারা অবশ্যই অপসারিত করতে হবে যার জন্য যীশু তাঁর শিষ্যদের প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন। (মথি ৬:৯, ১০) কিন্তু তা কিভাবে ঘটবে? এক ঐশিক অনুপ্রাণিত স্বপ্নে, ভাববাদী দানিয়েল জেনেছিলেন যে শেষকালে, ‘বিনা মনুষ্যের হস্তে খনিত’ এক প্রকাণ্ড প্রস্তরের মত ঈশ্বরের রাজ্য, পৃথিবীর উপর মানবজাতির রাজনৈতিক কর্তৃত্বের প্রতিনিধিত্বকারী দৈত্যাকৃতি প্রতিমাকে চূর্ণবিচূর্ণ করবে। তারপর তিনি ঘোষণা করেছিলেন: “সেই রাজগণের সময়ে স্বর্গের ঈশ্বর এক রাজ্য স্থাপন করিবেন, তাহা কখনও বিনষ্ট হইবে না, এবং সেই রাজত্ব অন্য জাতির হস্তে সমর্পিত হইবে না; তাহা ঐ সকল রাজ্য চূর্ণ ও বিনষ্ট করিয়া আপনি চিরস্থায়ী হইবে।”—দানিয়েল ২:৩১-৪৪.
১১. শান্তি নিয়ে আসার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তন যিহোবা কিসের মাধ্যমে করবেন?
১১ জগতের দৃশ্যপটে এই আমূল পরিবর্তন ঘটবে কেন? কারণ যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছেন যে, যারা এটিকে দূষিত ও নাশ করছে তাদের থেকে তিনি পৃথিবীকে পরিষ্কৃত করবেন। (প্রকাশিত বাক্য ১১:১৮) শয়তান ও তার দুষ্ট জগতের বিরুদ্ধে যিহোবার ধার্মিক যুদ্ধের সময়ে এই রূপান্তর ঘটবে। প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৪, ১৬ পদে আমরা পড়ি: “তাহারা [যা হল, অশুচি অনুপ্রাণিত অভিব্যক্তিগুলি] ভূতদের আত্মা [“মন্দ দূতেদের দ্বারা অনুপ্রাণিত অভিব্যক্তিগুলি,” NW], নানা চিহ্ন-কার্য্য করে; তাহারা জগৎ সমুদয়ের রাজাদের [রাজনৈতিক শাসকদের] নিকটে গিয়া, সর্ব্বশক্তিমান্ ঈশ্বরের সেই মহাদিনের যুদ্ধার্থে তাহাদিগকে একত্র করে। পরে উহারা, ইব্রীয় ভাষায় যাহাকে হর্মাগিদোন বলে, সেই স্থানে তাহাদিগকে একত্র করিল।”
১২. হর্মাগিদোন কী প্রকারের হবে?
১২ হর্মাগিদোন কী প্রকারের হবে? এটি এক পারমাণবিক রহস্যোদ্ঘাটন অথবা মানুষদের দ্বারা প্ররোচিত কোন বিপর্যয় হবে না। না, এটি হল মানুষের সমস্ত যুদ্ধকে শেষ করার এবং যারা এইধরনের যুদ্ধকে প্ররোচিত করে, তাদের ধ্বংস করার জন্য ঈশ্বরের যুদ্ধ। যারা শান্তি ভালবাসে, তাদের জন্য প্রকৃত শান্তি আনতে এটি ঈশ্বরের যুদ্ধ। হ্যাঁ, যিহোবার উদ্দেশ্য অনুসারে হর্মাগিদোন আসছে। এটি বিলম্ব করবে না। তাঁর ভাববাদী হবক্কূক লিখতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন: “এই দর্শন এখনও নিরূপিত কালের নিমিত্ত, ও তাহা পরিনামের আকাঙ্ক্ষা করিতেছে, আর মিথ্যা হইবে না; তাহার বিলম্ব হইলেও তাহার অপেক্ষা কর, কেননা তাহা অবশ্য উপস্থিত হইবে, যথাকালে বিলম্ব করিবে না।” (হবক্কূক ২:৩) আমাদের মানবীয় অনুভূতিতে হয়ত মনে হতে পারে এটি বিলম্ব হচ্ছে, কিন্তু যিহোবা তাঁর কার্যতালিকা রক্ষা করবেন। যিহোবার পূর্ব নিরূপিত নির্দিষ্ট সময়েই হর্মাগিদোন আঘাত করবে।
১৩. প্রকৃত অপরাধী, শয়তান দিয়াবলের সাথে ঈশ্বর কিরূপ আচরণ করবেন?
১৩ এই নিষ্পত্তিমূলক পদক্ষেপ প্রকৃত শান্তির পথকে পরিষ্কার করবে! কিন্তু প্রকৃত শান্তি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠার জন্য অবশ্যই আরও কিছু করতে হবে—বিভক্ততা, ঘৃণা এবং বিবাদের কারণে যে রয়েছে তাকে অপসারিত করা। আর এটি ঠিক তাই যে সম্বন্ধে বাইবেল ভাবিষ্যদ্বাণী করে পরবর্তীকালে ঘটবে বলে—যুদ্ধের উদ্দীপক এবং মিথ্যাবাদীর পিতা শয়তানকে অগাধলোকে ফেলা হবে। প্রেরিত যোহন এক ভবিষ্যদ্বাণীমূলক দর্শনে এই ঘটনাটি দেখেছিলেন, যা প্রকাশিত বাক্য ২০:১-৩ পদে লিপিবদ্ধ করা আছে: “আমি স্বর্গ হইতে এক দূতকে নামিয়া আসিতে দেখিলাম, তাঁহার হস্তে অগাধলোকের চাবি এবং বড় এক শৃঙ্খল ছিল। তিনি সেই নাগকে ধরিলেন; এ সেই পুরাতন সর্প, এ দিয়াবল [অপবাদক] এবং শয়তান [বিপক্ষ]; তিনি তাহাকে সহস্র বৎসর বদ্ধ রাখিলেন, আর তাহাকে অগাধলোকের মধ্যে ফেলিয়া দিয়া সেই স্থানের মুখ বদ্ধ করিয়া মুদ্রাঙ্কিত করিলেন; যেন ঐ সহস্র বৎসর সম্পূর্ণ না হইলে সে জাতিবৃন্দকে আর ভ্রান্ত করিতে না পারে।”
১৪. শয়তানের বিরুদ্ধে যিহোবার বিজয়ী কার্য কিভাবে বর্ণনা করা যেতে পারে?
১৪ এটি কোন স্বপ্ন নয়; এটি ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা—আর বাইবেল বলে: “মিথ্যাকথা বলা ঈশ্বরের অসাধ্য।” (ইব্রীয় ৬:১৮) এইজন্যই যিহোবা তাঁর ভাববাদী যিরমিয়ের মাধ্যমে বলতে পেরেছিলেন: “আমি সদাপ্রভু পৃথিবীতে দয়া, বিচার ও ধার্ম্মিকতার অনুষ্ঠান করি, কারণ ঐ সকলে আমি প্রীত, ইহা সদাপ্রভু কহেন।” (যিরমিয় ৯:২৪) যিহোবা ন্যায় ও ধার্মিকতা সহকারে কার্য করেন এবং তিনি পৃথিবীতে যে শান্তি আনবেন, তাতে আনন্দ করেন।
শান্তিরাজের দ্বারা শাসন
১৫, ১৬. (ক) রাজা হিসাবে শাসন করার জন্য যিহোবা কাকে মনোনীত করেছেন? (খ) সেই কর্তৃত্বকে কিভাবে বর্ণনা করা হয়েছে এবং কারা এতে অংশ নেবে?
১৫ তাঁর রাজ্য ব্যবস্থার অধীনে যারা বাস করছে, তাদের সকলের জন্য যে প্রকৃত শান্তি আসবে, তা নিশ্চিত করার জন্য যিহোবা প্রকৃত শান্তিরাজ যীশু খ্রীষ্টকে শাসনভার প্রদান করেছেন, যেমন যিশাইয় ৯:৬, ৭ পদে ভাববাণী করা হয়েছিল: “একটী বালক আমাদের জন্য জন্মিয়াছেন, একটী পুত্ত্র আমাদিগকে দত্ত হইয়াছে; আর তাঁহারই স্কন্ধের উপরে কর্ত্তৃত্বভার থাকিবে, এবং তাঁহার নাম হইবে—‘আশ্চর্য্য মন্ত্রী, বিক্রমশালী ঈশ্বর, সনাতন পিতা, শান্তিরাজ’। . . . কর্ত্তৃত্ববৃদ্ধির ও শান্তির সীমা থাকিবে না, . . . বাহিনীগণের সদাপ্রভুর উদ্যোগ ইহা সম্পন্ন করিবে।” গীতরচকও মশীহের শান্তিপূর্ণ শাসন সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণীমূলকভাবে লিখেছিলেন: “তাঁহার সময়ে ধার্ম্মিক লোক প্রফুল্ল হইবে, চন্দ্রের স্থিতিকাল পর্য্যন্ত প্রচুর শান্তি হইবে।”—গীতসংহিতা ৭২:৭.
১৬ তদুপরি, আত্মায় অভিষিক্ত খ্রীষ্টের ১,৪৪,০০০ জন ভাইয়েরা স্বর্গে তাঁর সাথে শাসন করবেন। এরা হলেন খ্রীষ্টের সহদায়াদ, যাদের সম্বন্ধে পৌল লিখেছিলেন: “আর শান্তির ঈশ্বর ত্বরায় শয়তানকে তোমাদের পদতলে দলিত করিবেন। আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের অনুগ্রহ তোমাদের সহবর্ত্তী হউক।” (রোমীয় ১৬:২০) হ্যাঁ, এরা স্বর্গ থেকে যুদ্ধবাদী, শয়তান দিয়াবলের উপরে খ্রীষ্টের বিজয়ে অংশ নেবে!
১৭. প্রকৃত শান্তির উত্তরাধিকারী হওয়ার জন্য আমাদের অবশ্যই কী করতে হবে?
১৭ অতএব, এখন প্রশ্ন হল প্রকৃত শান্তির উত্তরাধিকারী হওয়ার জন্য অবশ্যই আপনাকে কী করতে হবে? প্রকৃত শান্তি একমাত্র ঈশ্বরের পথে আসতে পারে এবং এটি অর্জন করার জন্য আপনাকে অবশ্যই ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে হবে। আপনাকে অবশ্যই শান্তিরাজকে গ্রহণ করতে হবে এবং তাঁর প্রতি ফিরতে হবে। এর অর্থ হল যে, আপনাকে অবশ্যই পাপপূর্ণ মানবজাতির উদ্ধারকর্তা এবং মুক্তিদাতা হিসাবে তাঁর ভূমিকায়, খ্রীষ্টকে গ্রহণ করতে হবে। যীশু নিজে এই বিখ্যাত বাক্যগুলি বলেছিলেন: “ঈশ্বর জগৎকে এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার একজাত পুত্ত্রকে দান করিলেন, যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।” (যোহন ৩:১৬) আপনি কি প্রকৃত শান্তি এবং পরিত্রাণ নিয়ে আসার জন্য ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসাবে খ্রীষ্ট যীশুতে বিশ্বাস অনুশীলন করতে ইচ্ছুক? স্বর্গের নীচে আর অন্য কোন নাম নেই যা শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে এবং তার নিশ্চয়তা দিতে পারে। (ফিলিপীয় ২:৮-১১) কেন? কারণ যীশু হলেন ঈশ্বরের মনোনীত ব্যক্তি। তিনি হলেন শান্তির সর্বমহান বার্তাবাহক যিনি পৃথিবীতে পদার্পণ করেছিলেন। আপনি কি যীশুর কথা শুনবেন এবং তাঁর উদাহরণ অনুসরণ করবেন?
১৮. যোহন ১৭:৩ পদে লিপিবদ্ধ যীশুর বাক্যগুলিতে সাড়া দিতে আমাদের কী করা উচিত?
১৮ যীশু বলেছিলেন, “আর ইহাই অনন্ত জীবন যে, তাহারা তোমাকে, একমাত্র সত্যময় ঈশ্বরকে, এবং তুমি যাঁহাকে পাঠাইয়াছ, তাঁহাকে, যীশু খ্রীষ্টকে, জানিতে পায়।” (যোহন ১৭:৩) কিংডম হলে যিহোবার সাক্ষীদের সভাগুলিতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে যথার্থ জ্ঞান নেওয়ার জন্য এখনই হল উপযুক্ত সময়। আপনার জ্ঞান এবং আপনার আশাকে অন্যদের সাথে বন্টন করে নেওয়ার জন্য এই শিক্ষামূলক সভাগুলি আপনাকে প্রণোদিত করবে। আপনিও ঈশ্বরের শান্তির এক দূত হতে পারেন। নতুন আন্তর্জাতিক সংস্করণ (ইংরাজি) অনুসারে যেমন যিশাইয় ২৬:৩ পদে বলা হয়: “যার মন সুস্থির তুমি তাকে সম্পূর্ণ শান্তিতে রাখবে, কারণ সে তোমার উপরে আস্থা রাখে,” আপনি যিহোবা ঈশ্বরের উপরে আস্থা রাখার দ্বারা এখনই শান্তি উপভোগ করতে পারেন। কার উপর আপনার আস্থা রাখা উচিত? “তোমরা চিরকাল সদাপ্রভুতে নির্ভর [“আস্থা রাখ,” NW] রাখ; কেননা সদাপ্রভু যিহোবাতেই যুগসমূহের শৈল।”—যিশাইয় ২৬:৪.
১৯, ২০. বর্তমানে যারা শান্তির অন্বেষণ এবং তার অনুধাবন করে তাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে?
১৯ ঈশ্বরের শান্তিপূর্ণ নতুন জগতে অনন্ত জীবনের জন্য এখনই আপনার পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪ পদে ঈশ্বরের বাক্য আমাদের আশ্বাস দেয়: “দেখ, মনুষ্যদের সহিত ঈশ্বরের আবাস; তিনি তাহাদের সহিত বাস করিবেন, এবং তাহারা তাঁহার প্রজা হইবে; এবং ঈশ্বর আপনি তাহাদের সঙ্গে থাকিবেন, ও তাহাদের ঈশ্বর হইবেন। আর তিনি তাহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না; কারণ প্রথম বিষয় সকল লুপ্ত হইল।” এটি কি সেই শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ নয় যার জন্য আপনি আকূলভাবে আকাঙ্ক্ষী?
২০ তাহলে, ঈশ্বর কী প্রতিজ্ঞা করেছেন স্মরণ করুন। “মৃদুশীলেরা দেশের [“পৃথিবীর,” NW] অধিকারী হইবে, এবং শান্তির বাহুল্যে আমোদ করিবে। সিদ্ধকে অবধারণ কর, সরলকে নিরীক্ষণ কর; শান্তিপ্রিয় ব্যক্তির শেষ ফল আছে।” (গীতসংহিতা ৩৭:১১, ৩৭) যখন সেই সুখময় দিন আসে, আমরা যেন কৃতজ্ঞতার সাথে বলি, “অবশেষে প্রকৃত শান্তি! প্রকৃত শান্তির উৎস, যিহোবা ঈশ্বরকে ধন্যবাদ!”
আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?
◻ একজনকে চিন্তা ও কার্যে পরিবর্তন আনতে কী সাহায্য করতে পারে?
◻ যিহোবার সাক্ষীরা কিভাবে ব্যক্তিগত ও সমষ্ঠিগতভাবে প্রকৃত শান্তির জন্য তাদের প্রেম প্রদর্শন করেছে?
◻ যারা ঘৃণা এবং যুদ্ধকে উন্নীত করে, তাদের সকলের সাথে যিহোবা কিরূপ আচরণ করবেন?
◻ শান্তিরাজের দ্বারা শাসন মানবজাতির জন্য কী করবে?
[Pictures on page 14]
যিশাইয়ের বাক্যগুলি রাষ্ট্রসংঘ দ্বারা নয়, কিন্তু যারা যিহোবার শিক্ষায় সাড়া দেয় তাদের দ্বারা পরিপূর্ণ হয়েছে
[Pictures on page 15]
এই দুই ব্যক্তিশান্তি অনুধাবন করার জন্য পরিবর্তন করেছিলেন
রামি ওভেড
জর্জ রিউটার
[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
শান্তিরাজের শাসনের অধীনে প্রকৃত শান্তি বিরাজ করবে