ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w৯৮ ২/১৫ পৃষ্ঠা ২৩-২৭
  • আকর্ষণীশক্তি—মানুষের প্রশংসা করে অথবা ঈশ্বরের গৌরব করে?

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • আকর্ষণীশক্তি—মানুষের প্রশংসা করে অথবা ঈশ্বরের গৌরব করে?
  • ১৯৯৮ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • অনন্ত জীবন
  • পরিচর্যার সুযোগগুলি
  • বন্টন করে নেওয়ার জন্য আধ্যাত্মিক দানগুলি
  • ঈশ্বরের গৌরবকে পূর্ণ মাত্রায় প্রতিফলিত করা
  • যিহোবার আশীর্বাদ আমাদেরকে ধনবান করে
    ২০০১ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • ‘মনুষ্যদিগের নানা বরদের’ প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখানো
    ১৯৯৯ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • দানশীলতার মনোভাব কি আপনার আছে?
    ১৯৯৫ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • আপনি কি ‘ঈশ্বরের অনুগ্রহ-ধনের অধ্যক্ষ’?
    ২০০৯ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
আরও দেখুন
১৯৯৮ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w৯৮ ২/১৫ পৃষ্ঠা ২৩-২৭

আকর্ষণীশক্তি—মানুষের প্রশংসা করে অথবা ঈশ্বরের গৌরব করে?

একজন বিখ্যাত গ্রীক সেনাপ্রধান, জেনোফোন লিখেছিলেন, “একজন শাসকের তার প্রজাদের চেয়ে উৎকৃষ্টতর হওয়া উচিত, কেবল তাদের চেয়ে অধিক গুণসম্পন্ন হওয়ার ক্ষেত্রেই নয় কিন্তু, তাদের উপর তার এক ধরনের প্রবল প্রভাব বিস্তার করাও উচিত।” এইধরনের “প্রবল প্রভাব”-কে আজকে অনেকে হয়ত আকর্ষণীশক্তি বলে অভিহিত করতে পারেন।

অবশ্যই, সমস্ত মানব শাসকদের আকর্ষণীশক্তি নেই। কিন্তু যাদের এটি আছে তারা তাদের সহজাত ক্ষমতাকে, তাদের প্রতি অনুরক্ত হওয়ার জন্য লোকেদের অনুপ্রাণিত করতে ও নিজেদের লক্ষ্যগুলি অর্জনের জন্য তাদের নিপুণভাবে পরিচালনা করতে ব্যবহার করে থাকেন। সম্ভবত সাম্প্রতিক সময়ের সর্বাপেক্ষা কুখ্যাত উদাহরণ ছিলেন এডলফ হিটলার। “[১৯৩৩ সালে] অধিকাংশ জার্মানদের কাছে হিটলারের—এক প্রকৃত আকর্ষণীশক্তিসম্পন্ন নেতার অলৌকিক আভা ছিল—অথবা কিছু সময়ের জন্য তা ধারণ করেছিল,” উইলিয়াম এল. শিরের তার তৃতীয় জার্মান সাম্রাজ্যের উত্থান ও পতন (ইংরাজি) নামক বইতে লেখেন। “প্রচণ্ড আলোড়নপূর্ণ পরবর্তী বার বছর তাদের তাকে অন্ধের মত অনুসরণ করতে হয়েছিল, যেন তিনি এক ঐশিক বিধান লাভ করেছিলেন।”

ধর্মের ইতিহাসও প্রচুর আকর্ষণীশক্তিসম্পন্ন নেতাদের উপস্থিতিতে পূর্ণ যারা তাদের প্রতি অনুরক্ত হতে লোকেদের অনুপ্রাণিত করেছিলেন এবং তাদের অনুগামীদের প্রতি দুর্দশা নিয়ে এসেছিলেন। “সাবধান, কেউ যেন তোমাদের বিপথগামী না করে,” যীশু সতর্ক করেছিলেন, “কারণ অনেক লোকেরা আমার নাম ধরে আসবে, বলবে ‘আমিই খ্রীষ্ট,’ আর তারা অনেককে বিপথগামী করবে।” (মথি ২৪:৪, ৫, ফিলিপ্‌স) আকর্ষণীশক্তিসম্পন্ন ভাক্ত খ্রীষ্টরা কেবল প্রথম শতাব্দীতেই আবিভূর্ত হননি। ১৯৭০ এর দশকে, জিম জোনস্‌ নিজেকে “লোকেদের মন্দিরের মশীহ” হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন। তাকে “লোকেদের উপর এক অস্বাভাবিক ক্ষমতা” সহ “একজন আকর্ষণীশক্তিসম্পন্ন পাদ্রি” হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছিল আর ১৯৭৮ সালে ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা বৃহৎ গণআত্মহত্যাগুলির একটি করতে তিনি প্ররোচনা যুগিয়েছিলেন।a

সুতরাং এটি স্পষ্ট যে, আকর্ষণীশক্তি এক বিপদজনক দান হতে পারে। কিন্তু, বাইবেল এক ভিন্ন ধরনের দান বা দানগুলি সম্বন্ধে বলে, যা ঈশ্বর থেকে সকলের উপকারার্থে সকলের জন্য পাওয়া যায়। এই দানের জন্য গ্রীক শব্দটি হল খ্যারিস্‌মা এবং বাইবেলে এটি ১৭ বার দেখা যায়। একজন গ্রীক পণ্ডিত ব্যক্তি এটিকে এইভাবে সংজ্ঞায়িত করেন ‘এক উদার ও অযাচিত দান, এমন কিছু যা একজন ব্যক্তিকে দেওয়া হয়েছে, যা যোগ্যতাবলে অর্জন করা যায় না ও অযোগ্যতা সত্ত্বেও পাওয়া গিয়েছে, এমন কিছু যা ঈশ্বরের অনুগ্রহের দ্বারা আসে এবং যা মানুষের নিজ প্রচেষ্টা দ্বারা কখনও অর্জন বা অধিকার করা যায় না।’

সুতরাং শাস্ত্রীয় দৃষ্টিকোণ থেকে, খ্যারিস্‌মা হল একটি দান যা ঈশ্বরের অযাচিত দয়ার কারণে লাভ করা গিয়েছে। এই দানগুলির কয়েকটি কী যা ঈশ্বর দয়াপূর্বক আমাদের দিয়েছেন? আর আমরা কিভাবে তাঁর প্রশংসার্থে সেগুলি ব্যবহার করতে পারি? আসুন আমরা এই সদয় দানগুলির তিনটি বিবেচনা করি।

অনন্ত জীবন

নিঃসন্দেহে এই সমস্ত দানগুলির মধ্যে সর্বমহান দানটি হল অনন্ত জীবনের দান। পৌল রোমীয় মণ্ডলীকে লিখেছিলেন: “পাপের বেতন মৃত্যু; কিন্তু ঈশ্বরের অনুগ্রহ-দান [খ্যারিস্‌মা] আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টেতে অনন্ত জীবন।” (রোমীয় ৬:২৩) এটি উল্লেখযোগ্য যে, অনিচ্ছুকভাবে হলেও আমাদের পাপপূর্ণ প্রকৃতির কারণে আমরা “বেতন” (মৃত্যু) অর্জন করেছি। অপরপক্ষে, যে অনন্ত জীবন ঈশ্বর প্রাপ্তিসাধ্য করেন তা সম্পূর্ণরূপে অযাচিত যেটি আমরা নিজেদের যোগ্যতায় কখনও অর্জন করতে পারতাম না।

অনন্ত জীবনের দানকে মূল্যবান জ্ঞান করা ও তা বন্টন করা উচিত। যিহোবাকে জানতে, তাঁকে সেবা করতে এবং এইভাবে অনন্ত জীবনের দানের দ্বারা অনুগৃহীত হতে আমরা লোকেদের সাহায্য করতে পারি। প্রকাশিত বাক্য ২২:১৭ পদ বলে: “আত্মা ও কন্যা কহিতেছেন, আইস। যে শুনে, সেও বলুক, আইস। আর যে পিপাসিত, সে আইসুক; যে ইচ্ছা করে, সে বিনামূল্যেই জীবন-জল গ্রহণ করুক।”

আমরা কিভাবে অন্যদের এই জীবনদায়ক জলের প্রতি পরিচালিত করতে পারি? প্রধানত আমাদের পরিচর্যায় কার্যকারীভাবে বাইবেল ব্যবহার করার মাধ্যমে। এটি সত্য যে জগতের কিছু অংশে, লোকেরা খুব কমই আধ্যাত্মিক বিষয়গুলি পড়েন বা সেই বিষয়ে চিন্তা করে থাকেন; তৎসত্ত্বেও, সর্বদাই কারও না কারও “কর্ণ জাগরিত” করার সুযোগগুলি রয়েছে। (যিশাইয় ৫০:৪) এই ক্ষেত্রে, আমরা বাইবেলের অনুপ্রেরণা দানকারী শক্তিতে আস্থা রাখতে পারি, “কেননা ঈশ্বরের বাক্য জীবন্ত ও কার্য্যসাধক।” (ইব্রীয় ৪:১২) এটি বাইবেলের ব্যবহারিক প্রজ্ঞা, এর প্রদানকৃত সান্ত্বনা ও আশা অথবা জীবনের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে এর ব্যাখ্যা যাই হোক না কেন, ঈশ্বরের বাক্য হৃদয়কে স্পর্শ করতে এবং লোকেদের জীবনের পথে চালিত করতে পারে।—২ তীমথিয় ৩:১৬, ১৭.

এছাড়াও, বাইবেল ভিত্তিক সাহিত্যাদি আমাদের “আইস” বলতে সাহায্য করতে পারে। ভাববাদী যিশাইয় ভাববাণী করেছিলেন যে আধ্যাত্মিক অন্ধকারের এই সময়ে, তাঁর লোকেদের উপরে “সদাপ্রভু উদিত হইবেন।” (যিশাইয় ৬০:২) ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটির প্রকাশনাদি যিহোবার কাছ থেকে আসা এই আশীর্বাদকে প্রতিফলিত করে এবং প্রতি বছর এগুলি হাজার হাজার লোকেদের আধ্যাত্মিক জ্ঞানালোকের উৎস, যিহোবার প্রতি পরিচালিত করে। প্রকাশনাগুলিতে কোথাও ব্যক্তিবিশেষদের প্রাধান্য দেওয়া হয় না। এটির ভূমিকায় প্রহরীদুর্গ ব্যাখ্যা করে, “প্রহরীদুর্গের উদ্দেশ্য হল যিহোবা ঈশ্বরকে নিখিল বিশ্বের সার্বভৌম প্রভুরূপে মহিমান্বিত করা। . . . এটি ঈশ্বরের বর্তমান-রাজত্বকারী রাজা যীশু খ্রীষ্ট, যাঁর পাতিত রক্তই মানবজাতির জন্য অনন্ত জীবনের পথ উন্মুক্ত করে, তাঁর উপর বিশ্বাস রাখতে উৎসাহিত করে।”

একজন পূর্ণ সময়ের খ্রীষ্টীয় পরিচর্যাকারী, যার পরিচর্যায় অনেক বছরের উল্লেখযোগ্য সাফল্য রয়েছে, তিনি ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে লোকেদের সাহায্য করার ক্ষেত্রে প্রহরীদুর্গ এবং সচেতন থাক! (ইংরাজি) পত্রিকার মূল্য সম্বন্ধে মন্তব্য করেন: “আমার বাইবেল ছাত্রেরা যখন প্রহরীদুর্গ এবং সচেতন থাক! পড়তে ও উপভোগ করতে শুরু করেন, তখন তারা দ্রুত উন্নতি করে থাকেন। যিহোবাকে জানতে লোকেদের সাহায্য করার ক্ষেত্রে আমি পত্রিকাগুলিকে এক অমূল্য সহায়ক হিসাবে দেখে থাকি।”

পরিচর্যার সুযোগগুলি

তীমথি একজন খ্রীষ্টীয় শিষ্য ছিলেন যাকে আরেকটি দান দেওয়া হয়েছিল, যা বিশেষ মনোযোগ পাওয়ার যোগ্য। প্রেরিত পৌল তাকে বলেছিলেন: “তোমার অন্তরস্থ সেই অনুগ্রহ-দান [খ্যারিস্‌মা] অবহেলা করিও না, যাহা ভাববাণী দ্বারা প্রাচীনবর্গের হস্তার্পণ সহকারে তোমাকে দত্ত হইয়াছে।” (১ তীমথিয় ৪:১৪) এই দানটি কী ছিল? এটি একজন ভ্রমণ অধ্যক্ষ হিসাবে তীমথির নিযুক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করেছিল, এমন এক পরিচর্যার সুযোগ যেটির প্রতি তাকে দায়িত্বের সাথে মনোযোগ দিতে হয়েছিল। সেই একই পরিচ্ছেদে, পৌল তীমথিয়কে পরামর্শ দিয়েছিলেন: “তুমি পাঠ করিতে এবং প্রবোধ ও শিক্ষা দিতে নিবিষ্ট থাক। আপনার বিষয়ে ও তোমার শিক্ষার বিষয়ে সাবধান হও, এ সকলে স্থির থাক; কেননা তাহা করিলে তুমি আপনাকে ও যাহারা তোমার কথা শুনে, তাহাদিগকেও পরিত্রাণ করিবে।”—১ তীমথিয় ৪:১৩, ১৬.

আজকে প্রাচীনদেরও তাদের পরিচর্যার সুযোগগুলিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করা উচিত। পৌল যেমন উল্লেখ করেন, ‘তাদের শিক্ষার প্রতি মনোযোগ দেওয়া’ হল একটি উপায় যার দ্বারা তারা তা করতে পারেন। জাগতিক আকর্ষণীশক্তিসম্পন্ন নেতাদের অনুকরণ করার চেয়ে বরঞ্চ তারা নিজেদের প্রতি নয় কিন্তু ঈশ্বরের প্রতি মনোযোগ দেন। তাদের আদর্শ, যীশু একজন উল্লেখযোগ্য শিক্ষক ছিলেন, যাঁর নিঃসন্দেহে এক আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব ছিল কিন্তু তিনি নম্রভাবে তাঁর পিতাকে গৌরব প্রদান করেছিলেন। “আমার উপদেশ আমার নহে, কিন্তু যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তাঁহার,” তিনি ঘোষণা করেছিলেন।—যোহন ৫:৪১; ৭:১৬.

তাঁর শিক্ষার কর্তৃত্বরূপে ঈশ্বরের বাক্য ব্যবহার করার মাধ্যমে যীশু তাঁর স্বর্গীয় পিতাকে গৌরবান্বিত করেছিলেন। (মথি ১৯:৪-৬; ২২:৩১, ৩২, ৩৭-৪০) পৌল অনুরূপভাবে জোর দিয়েছিলেন যে অধ্যক্ষদের “শিক্ষানুরূপ বিশ্বসনীয় বাক্য ধরিয়া” রাখা প্রয়োজন। (তীত ১:৯) তাদের বক্তৃতাগুলি শাস্ত্রের উপর দৃঢ়রূপে ভিত্তি করে তৈরি করার মাধ্যমে, প্রাচীনেরা মূলত তাই বলবেন যেমন যীশু বলেছিলেন: “আমি তোমাদিগকে যে সকল কথা বলি, তাহা আপনা হইতে বলি না।”—যোহন ১৪:১০.

কিভাবে প্রাচীনেরা “বিশ্বসনীয় বাক্য ধরিয়া” রাখিতে পারেন? তাদের বক্তৃতা এবং সভার কার্যভারগুলি ঈশ্বরের বাক্য, বাইবেলের উপর কেন্দ্রীভূত করা এবং তারা যে শাস্ত্রপদগুলি ব্যবহার করেন তা ব্যাখ্যা ও সেগুলির উপর জোর দেওয়ার মাধ্যমে। নাটকীয় দৃষ্টান্ত বা কৌতূহলোদ্দীপক ছোট ঘটনাগুলি, বিশেষভাবে অতিরিক্ত মাত্রায় উল্লেখ করা হলে তা হয়ত শ্রোতাদের ঈশ্বরের বাক্য থেকে বিক্ষিপ্ত ও বক্তার নিজ সহজাত ক্ষমতার প্রতি আকৃষ্ট করতে পারে। অপরপক্ষে, বাইবেলের পদগুলিই হল প্রধান বিষয় যা শ্রোতাদের হৃদয়ে পৌঁছাবে ও তাদের অনুপ্রাণিত করবে। (গীতসংহিতা ১৯:৭-৯; ১১৯:৪০; লূক ২৪:৩২ পদগুলির সাথে তুলনা করুন।) এইধরনের বক্তৃতাগুলি মানুষের প্রতি কম আকর্ষণ করে এবং ঈশ্বরকে অধিক গৌরব প্রদান করে।

পরস্পরের কাছ থেকে শেখা হল আরেকটি উপায় যার দ্বারা প্রাচীনেরা আরও ফলপ্রসূ শিক্ষক হতে পারেন। পৌল যেমন তীমথিকে সাহায্য করেছিলেন, তেমনি একজন প্রাচীন অন্যজনকে সহায়তা করতে পারেন। “লৌহ লৌহকে সতেজ করে, তদ্রূপ মনুষ্য আপন মিত্রের মুখ সতেজ করে।” (হিতোপদেশ ২৭:১৭; ফিলিপীয় ২:৩) ধারণা ও পরামর্শগুলি একে অপরের সাথে বন্টন করে নেওয়ার দ্বারা প্রাচীনেরা উপকৃত হন। সম্প্রতি নিযুক্ত একজন প্রাচীন বলেছিলেন: “একজন অভিজ্ঞ প্রাচীন, কিভাবে তিনি একটি জনসাধারণের বক্তৃতা তৈরি করেন তা আমাকে দেখানোর জন্য সময় দিয়েছিলেন। তার প্রস্তুতিতে, তিনি অলংকারপূর্ণ প্রশ্ন, দৃষ্টান্ত, উদাহরণ বা ছোট অভিজ্ঞতাগুলি আর সেই সঙ্গে যত্নের সাথে গবেষণাকৃত শাস্ত্রীয় পদগুলি অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। একটি নীরস, একঘেয়েমি বক্তৃতা দেওয়া এড়ানোর জন্য বক্তৃতাগুলিতে কিভাবে বৈচিত্র্য আনা যায় তা আমি তার কাছ থেকে শিখেছি।”

আমরা প্রাচীন, পরিচারক দাস বা অগ্রগামী যাই হই না কেন, পরিচর্যার সুযোগগুলি উপভোগকারী আমাদের সকলের দানকে মূল্যবান জ্ঞান করা প্রয়োজন। তার মৃত্যুর অল্প কিছুদিন পূর্বে, পৌল তীমথিকে ‘ঈশ্বরের যে অনুগ্রহ-দান [খ্যারিস্‌মা] তাহাতে আছে, তাহা উদ্দীপিত করতে’ স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন, যা তীমথিয়ের ক্ষেত্রে আত্মার কিছু বিশেষ দানকে অন্তর্ভুক্ত করেছিল। (২ তীমথিয় ১:৬) ইস্রায়েলীয় গৃহগুলিতে, জ্বলন্ত কয়লাগুলি থাকত। আগুনের শিখা ও অধিক তাপ উৎপন্ন করতে এগুলিকে “উদ্দীপিত” করা সম্ভব ছিল। এইভাবে, যে আধ্যাত্মিক দান আমাদের দেওয়া হয়েছে তা আগুনের ন্যায় উদ্দীপিত করার দ্বারা, আমাদের কার্যভারে নিবিষ্ট হওয়ার জন্য হৃদয় ও শক্তি প্রয়োগ করতে আমরা উৎসাহিত হয়েছি।

বন্টন করে নেওয়ার জন্য আধ্যাত্মিক দানগুলি

রোমের ভাইদের প্রতি পৌলের প্রেম তাকে লিখতে অনুপ্রাণিত করেছিল: “আমি তোমাদিগকে দেখিবার আকাঙ্ক্ষা করিতেছি, যেন তোমাদিগকে এমন কোন আত্মিক বর [খ্যারিস্‌মা] প্রদান করি, যাহাতে তোমরা স্থিরীকৃত হও; অর্থাৎ যাহাতে তোমাদের ও আমার, উভয় পক্ষের, আন্তরিক বিশ্বাস দ্বারা তোমাদিগেতে আমি আপনিও সঙ্গে সঙ্গে আশ্বাস পাই।” (রোমীয় ১:১১, ১২) অন্যদের সাথে কথা বলার মাধ্যমে তাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করা সম্বন্ধীয় আমাদের সহজাত ক্ষমতাকে পৌল একটি আধ্যাত্মিক দান হিসাবে দেখেছিলেন। এইধরনের আধ্যাত্মিক দানগুলি বিনিময়ের ফলে, বিশ্বাস দৃঢ় হবে এবং পারস্পরিক উৎসাহ লাভ করা যাবে।

আর তা নিঃসন্দেহে প্রয়োজনীয়। এই মন্দ বিধিব্যবস্থা যেখানে আমরা বাস করছি, সেখানে আমরা প্রত্যেকে বিভিন্নভাবে চাপের সম্মুখীন হয়ে থাকি। কিন্তু, একে অপরকে নিয়মিতভাবে উৎসাহিত করলে তা আমাদের অটল থাকতে সাহায্য করতে পারে। বিনিময়—প্রদান ও গ্রহণ করা উভয়ই—আধ্যাত্মিক শক্তি বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি সত্য যে, আমাদের সকলের সময়ে সময়ে উৎসাহের প্রয়োজন হয় কিন্তু ঠিক একইভাবে আমরা একে অপরকে গড়ে তুলতেও পারি।

আমরা যদি হতাশাগ্রস্ত সহবিশ্বাসীদের প্রতি মনোযোগ দিতে তৎপর থাকি, তবে আমরা হয়ত “ঈশ্বর-দত্ত যে সান্ত্বনায় সান্ত্বনাপ্রাপ্ত হই, সেই সান্ত্বনা দ্বারা সমস্ত ক্লেশের পাত্রদিগকে সান্ত্বনা করিতে পারি।” (২ করিন্থীয় ১:৩-৫) সান্ত্বনার (প্যারাক্লেসিস) জন্য ব্যবহৃত গ্রীক শব্দটির আক্ষরিক অর্থ “নিজের দিকে আহ্বান করা।” প্রয়োজনের সময়ে, আমরা যদি আমাদের ভাইবোনেদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য তাদের পাশাপাশি থাকি, তবে নিঃসন্দেহে আমাদের প্রয়োজনের সময়ে আমরাও একইধরনের প্রেমপূর্ণ সমর্থন লাভ করব।—উপদেশক ৪:৯, ১০; প্রেরিত ৯:৩৬-৪১ পদের সাথে তুলনা করুন।

প্রাচীনদের প্রেমপূর্ণ পালনার্থে সাক্ষাৎগুলিও প্রচুর উপকার নিয়ে আসে। যদিও কখনও কখনও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর শাস্ত্রীয় পরামর্শ দেওয়ার জন্য সাক্ষাৎগুলি করা হয়ে থাকে, তবুও বেশিরভাগ পালনার্থে সাক্ষাৎ উৎসাহদানের জন্য করা হয় যা ‘হৃদয়ের আশ্বাসজনক।’ (কলসীয় ২:২) অধ্যক্ষগণ যখন এইধরনের বিশ্বাস দৃঢ়কারী পরিদর্শনগুলি করে থাকেন, তখন তারা প্রকৃতই এক আধ্যাত্মিক দান প্রদান করেন। পৌলের মত, তারা দান করার এই অদ্বিতীয় উপায়টিকে পুরস্কারজনক বলে দেখতে পাবেন এবং তারা তাদের ভাইদের জন্য “আকাঙ্ক্ষা” গড়ে তুলবেন।—রোমীয় ১:১১.

স্পেনের একজন প্রাচীনের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি সত্য হয়েছিল, যিনি নিম্নোক্ত অভিজ্ঞতাটি বর্ণনা করেন: “রিকার্ডো নামে ১১ বছরের একটি ছেলে, সভাগুলি ও সাধারণভাবে মণ্ডলীর প্রতি কম আগ্রহ প্রকাশ করছিল বলে মনে হয়েছিল। তাই আমি রিকার্ডোর বাবামার কাছে তাদের ছেলের সাথে দেখা করার অনুমতি চেয়েছিলাম ও সাথে সাথেই তারা রাজি হয়েছিলেন। তারা পাহাড়ের উপরে থাকতেন, যেখানে আমার ঘর থেকে গাড়ি চালিয়ে যেতে প্রায় এক ঘন্টা লাগত। তার প্রতি আমি যে আগ্রহ দেখিয়েছিলাম তা দেখে রিকার্ডো স্পষ্টতই আনন্দিত হয়েছিল ও সে অবিলম্বে সাড়া দিয়েছিল। শীঘ্রই সে একজন অবাপ্তাইজিত প্রকাশক ও মণ্ডলীর একজন প্রাণবন্ত সদস্য হয়েছিল। নিজেকে গুটিয়ে রাখার স্বভাব পরিবর্তন করে সে এক হাসিখুশি বন্ধুত্বপরায়ণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয়ে উঠেছিল। মণ্ডলীর বেশ কিছুজন জিজ্ঞাসা করেছিলেন: ‘রিকার্ডোর কী হয়েছে?’ তারা এই প্রথমবারের মত তাকে লক্ষ্য করছেন বলে মনে হয়েছিল। সেই গুরুত্বপূর্ণ পালনার্থে সাক্ষাৎটির কথা চিন্তা করলে, আমার মনে হয় আমি রিকার্ডোর চেয়ে আরও বেশি কিছু পেয়েছি। কিংডম হলে ঢোকার সময় তার মুখ হাস্যোজ্জ্বল থাকে এবং সে আমাকে সম্ভাষণ জানানোর জন্য ছুটে আসে। তার আধ্যাত্মিক অগ্রগতি দেখা এক আনন্দের বিষয় হয়ে এসেছে।”

নিঃসন্দেহে, এটির মত পালনার্থে সাক্ষাৎগুলি অত্যন্ত আশীর্বাদজনক। এইধরনের সাক্ষাৎগুলি যীশুর অনুরোধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ: “আমার মেষগণকে পালন কর।” (যোহন ২১:১৬) অবশ্য, এইধরনের আধ্যাত্মিক দানগুলি কেবল প্রাচীনেরাই প্রদান করেন না। মণ্ডলীর প্রত্যেকে প্রেম ও উত্তম কাজগুলির জন্য একে অপরকে উদ্দীপিত করতে পারেন। (ইব্রীয় ১০:২৩, ২৪) পাহাড়ে আরোহণ করার সময়ে আরোহণকারীরা যেমন পরস্পরের সাথে দড়ি দিয়ে যুক্ত থাকেন, তেমনি আমরা আধ্যাত্মিক বন্ধনের দ্বারা একত্রে যুক্ত। আমরা যা করি ও বলি তা অপরিহার্যভাবেই অন্যদের প্রভাবিত করে। একটি কটু মন্তব্য বা রূঢ় সমালোচনা, আমাদের যুক্ত করে রাখা বন্ধনকে দুর্বল করে দিতে পারে। (ইফিষীয় ৪:২৯; যাকোব ৩:৮) অপরপক্ষে, বাছাইকৃত উৎসাহের বাক্যগুলি এবং প্রেমপূর্ণ সহযোগিতা আমাদের ভাইদের তাদের সমস্যাগুলি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করতে পারে। এইভাবে আমরা স্থায়ী উচ্চমূল্যসম্পন্ন আধ্যাত্মিক দানগুলি বন্টন করে নেব।—হিতোপদেশ ১২:২৫.

ঈশ্বরের গৌরবকে পূর্ণ মাত্রায় প্রতিফলিত করা

এটি স্পষ্ট যে প্রত্যেক খ্রীষ্টানের কিছু পরিমাণ আকর্ষণীশক্তি রয়েছে। আমাদের অনন্ত জীবনের অমূল্য আশা প্রদান করা হয়েছে। আমাদের আধ্যাত্মিক দানগুলিও রয়েছে যা আমরা পরস্পরের সাথে বন্টন করে নিতে পারি। আর আমরা অন্যদের সঠিক লক্ষ্যগুলির প্রতি অনুপ্রাণিত বা পরিচালিত করতে পারি। কারও কারও পরিচর্যার সুযোগগুলির অতিরিক্ত দান রয়েছে। এই সমস্ত দানগুলি ঈশ্বরের অযাচিত দয়ার প্রমাণ। আর যে কোন দানই আমাদের থাকুক না কেন, যেহেতু তা আমরা ঈশ্বরের কাছ থেকে পেয়েছি, তাই নিশ্চিতভাবে গর্ব করার কোন কারণ আমাদের নেই।—১ করিন্থীয় ৪:৭.

খ্রীষ্টান হিসাবে, আমরা নিজেদের জিজ্ঞাসা করলে ভাল করব, ‘যে পরিমাণ আকর্ষণীশক্তি আমার মধ্যে রয়েছে, তা কি আমি “সমস্ত উত্তম দান এবং সমস্ত সিদ্ধ বর” দাতা যিহোবার গৌরব আনার জন্য ব্যবহার করব? (যাকোব ১:১৭) আমি কি যীশুকে অনুকরণ এবং আমার সহজাত ক্ষমতা ও পরিস্থিতি অনুসারে অন্যদের পরিচর্যা করব?’

প্রেরিত পিতর এই বিষয়ে আমাদের দায়িত্ব সম্বন্ধে সংক্ষেপে বলেছিলেন: “তোমরা যে যেমন অনুগ্রহদান [খ্যারিস্‌মা] পাইয়াছ, তদনুসারে ঈশ্বরের বহুবিধ অনুগ্রহ-ধনের উত্তম অধ্যক্ষের মত পরস্পর পরিচর্য্যা কর। যদি কেহ কথা বলে, সে এমন বলুক, যেন ঈশ্বরের বাণী বলিতেছে; যদি পরিচর্য্যা করে, সে ঈশ্বর-দত্ত শক্তি অনুসারে করুক; যেন সর্ব্ববিষয়ে যীশু খ্রীষ্টের দ্বারা ঈশ্বর গৌরবান্বিত হন।”—১ পিতর ৪:১০, ১১.

[পাদটীকাগুলো]

a জিম জোনস্‌ সহ সর্বমোট ৯১৩ জন লোক মারা গিয়েছিলেন।

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

Corbis-Bettmann

UPI/Corbis-Bettmann

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৫)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার