আপনি শেষ পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে পারেন
“আইস, আমরাও . . . ধৈর্য্যপূর্ব্বক আমাদের সম্মুখস্থ ধাবনক্ষেত্রে দৌড়ি।”—ইব্রীয় ১২:১.
১, ২. ধৈর্য ধরা বলতে কী বোঝায়?
“ধৈর্য্যে তোমাদের প্রয়োজন আছে,” প্রথম শতাব্দীর ইব্রীয় খ্রীষ্টানদেরকে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন। (ইব্রীয় ১০:৩৬) এই গুণ যে কতটা জরুরি তা বোঝাতে গিয়ে প্রেরিত পিতরও খ্রীষ্টানদের পরামর্শ দিয়েছিলেন: “আপনাদের বিশ্বাসে . . . ধৈর্য্য যোগাও।” (২ পিতর ১:৫-৭) কিন্তু ধৈর্য আসলে কী?
২ একটা গ্রিক-ইংরেজি অভিধান যে গ্রিক ক্রিয়াপদকে “ধৈর্য ধরা” হিসেবে অনুবাদ করেছে তার মানে, “পালিয়ে না গিয়ে সেখানে থাকা . . . নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা, সহ্য করা।” আবার যে গ্রিক বিশেষ্যকে “ধৈর্য” অনুবাদ করা হয়েছে সেই বিষয়ে একটা বই বলে: “এটা হল সেই মনোবল, যা হাল ছেড়ে দেয় না বরং অনেক আশা নিয়ে সবকিছু সহ্য করে . . . এটা সেই গুণ যার সাহায্যে একজন প্রচণ্ড ঝড়ের মাঝেও নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। এটা সেই শক্তি যার সাহায্যে কঠিন পরীক্ষাও আনন্দের হয়ে ওঠে কারণ কষ্টকে পার করে এটা লক্ষ্যের দিকে দৃষ্টি রাখে।” তাই, ধৈর্য একজনকে বাধা ও কঠিন অবস্থার মুখে অটল থাকতে এবং আশা হারিয়ে না ফেলতে সাহায্য করে। এই গুণটা বিশেষ করে কাদের দরকার?
৩, ৪. (ক) কাদের ধৈর্যের দরকার? (খ) কেন আমাদের শেষ পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে হবে?
৩ সব খ্রীষ্টানেরাই আজকে এমন এক আধ্যাত্মিক দৌড় দৌড়াচ্ছেন যেখানে ধৈর্যের দরকার আছে। প্রায় সা.কা. ৬৫ সালে প্রেরিত পৌল তার সহকর্মী ও বিশ্বস্ত ভ্রমণ সঙ্গী তীমথিয়কে এই আশ্বাসজনক কথাগুলো বলেছিলেন: “আমি উত্তম যুদ্ধে প্রাণপণ করিয়াছি, নিরূপিত পথের শেষ পর্য্যন্ত দৌড়িয়াছি, বিশ্বাস রক্ষা করিয়াছি।” (২ তীমথিয় ৪:৭) “নিরূপিত পথের শেষ পর্য্যন্ত দৌড়িয়াছি” এই কথা বলার দ্বারা পৌল একজন খ্রীষ্টান হিসেবে তার জীবনকে এক দৌড়ের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন, যেখানে একটা নির্দিষ্ট পথ এবং এক সীমারেখা আছে। সেই সময়ে পৌল বিজয়ীভাবে দৌড়ের প্রায় শেষ সীমার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন এবং দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে পুরস্কার পাওয়ার আশা করছিলেন। তিনি আরও বলেছিলেন “এখন অবধি আমার নিমিত্ত ধার্ম্মিকতার মুকুট তোলা রহিয়াছে; প্রভু, সেই ধর্ম্মময় বিচারকর্ত্তা, সেই দিন আমাকে তাহা দিবেন।” (২ তীমথিয় ৪:৮) পৌল শেষ পর্যন্ত ধৈর্য ধরেছিলেন বলে নিশ্চিত ছিলেন যে তিনি পুরস্কার পাবেন। কিন্তু আমাদের বেলায় কী?
৪ যারা এই দৌড়ে সামিল হয়েছেন তাদেরকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য পৌল লিখেছিলেন: “আইস, আমরাও . . . ধৈর্য্যপূর্ব্বক আমাদের সম্মুখস্থ ধাবনক্ষেত্রে দৌড়ি।” (ইব্রীয় ১২:১) খ্রীষ্টান হিসেবে আমরা যখন যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে যিহোবা ঈশ্বরের কাছে নিজেদেরকে উৎসর্গ করি তখন আমরাও এই ধৈর্যের দৌড়ে সামিল হই। খ্রীষ্টের শিষ্য হয়ে চলার জন্য ভালভাবে দৌড় শুরু করা খুবই জরুরি কিন্তু যেটা আরও বেশি জরুরি তা হল আমরা যেন শেষ সীমা পর্যন্ত দৌড়াই। যীশু বলেছিলেন: “যে কেহ শেষ পর্য্যন্ত স্থির থাকিবে, সেই পরিত্রাণ পাইবে।” (মথি ২৪:১৩) যারা তাদের দৌড় সফলভাবে শেষ করেন তাদের জন্য অনন্ত জীবনের পুরস্কার অপেক্ষা করছে! তাই, আমাদের মনেও একটা লক্ষ্য আছে—আমাদের শেষ পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে হবে। সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে কী আমাদের সাহায্য করবে?
সঠিক পুষ্টি—অত্যন্ত জরুরি
৫, ৬. (ক) জীবন দৌড়ে ধৈর্য ধরার জন্য কীসে আমাদের মন দিতে হবে? (খ) কোন্ আধ্যাত্মিক ব্যবস্থাকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে এবং কেন?
৫ গ্রিসের করিন্থ শহরের কাছে প্রাচীনকালের বিখ্যাত ইস্থ্মিয়ান গেমসের জন্য একটা জায়গা ছিল। তাই পৌল ভাল করেই জানতেন যে করিন্থীয় ভাইরা সেখানকার বিভিন্ন খেলাধূলা ও প্রতিযোগিতার সঙ্গে পরিচিত ছিলেন। তাদের জানা বিষয়ের উদাহরণ টেনেই তিনি তাদেরকে জীবন দৌড়ের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, যে দৌড় তারা সবাই দৌড়াচ্ছিলেন: “তোমরা কি জান না যে, দৌড়ের স্থলে যাহারা দৌড়ে, তাহারা সকলে দৌড়ে, কিন্তু কেবল এক জন পুরস্কার পায়? তোমরা এরূপে দৌড়, যেন পুরস্কার পাও।” পৌল দৌড়ে টিকে থাকার ও শেষ সীমায় পৌঁছানোর জন্য তা চালিয়ে যাওয়ার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছিলেন। কিন্তু তা করে চলতে কী তাদেরকে সাহায্য করত? তিনি আরও বলেছিলেন, “যে কেহ মল্লযুদ্ধ করে, সে সর্ব্ববিষয়ে ইন্দ্রিয়দমন করে।” হ্যাঁ, প্রাচীনকালের প্রতিযোগীরা জয়ী হওয়ার জন্য কঠোর প্রশিক্ষণ নিতেন, খুব হিসেব মতো খাওয়া-দাওয়া করতেন এবং সব ব্যাপারে নিজেদেরকে নিয়মের মধ্যে রাখতেন।—১ করিন্থীয় ৯:২৪, ২৫.
৬ খ্রীষ্টানদের দৌড়ের বিষয়ে কী বলা যায়? “জীবন দৌড়ে যদি আপনি ধৈর্য ধরতে চান, আপনার আধ্যাত্মিক পুষ্টির দিকে নজর দেওয়া দরকার,” যিহোবার সাক্ষিদের মণ্ডলীর একজন প্রাচীন বলেন। “ধৈর্য্যের . . . ঈশ্বর,” যিহোবা আমাদের জন্য যে আধ্যাত্মিক খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন তা একবার ভেবে দেখুন। (রোমীয় ১৫:৫) আমাদের আধ্যাত্মিক পুষ্টির প্রধান উৎস হল তাঁর বাক্য, বাইবেল। আমাদের কি বাইবেল পড়ার জন্য একটা ভাল তালিকা থাকা উচিত নয়? এছাড়াও, “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস” এর মাধ্যমে যিহোবা সময়োপযোগী প্রহরীদুর্গ ও সচেতন থাক! পত্রিকা এবং অন্যান্য বাইবেল ভিত্তিক বইপত্রের ব্যবস্থা করেছেন। (মথি ২৪:৪৫) অধ্যবসায়ের সঙ্গে এগুলো পড়া আমাদের আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে শক্তিশালী করবে। হ্যাঁ, ব্যক্তিগত অধ্যয়নের জন্য আমাদের সময় করে নিতে হবে—‘সুযোগ কিনিয়া লইতে হইবে।’—ইফিষীয় ৫:১৬.
৭. (ক) খ্রীষ্টতত্ত্বের আদিম কথায় কেন আমাদের সন্তুষ্ট থাকা উচিত নয়? (খ) কীভাবে আমরা “সিদ্ধির চেষ্টায় অগ্রসর” হতে পারি?
৭ খ্রীষ্টের শিষ্য হয়ে থাকতে হলে আমাদের “আদিম কথা” পিছনে ফেলে “সিদ্ধির চেষ্টায় অগ্রসর” হতে হবে। (ইব্রীয় ৬:১) তাই আমাদের সত্যের “প্রশস্ততা, দীর্ঘতা, উচ্চতা ও গভীরতা” জানার জন্য আগ্রহ গড়ে তুলতে হবে এবং “কঠিন খাদ্য [যা] . . . সিদ্ধবয়স্কদেরই জন্য” তা থেকে পুষ্টি নিতে হবে। (ইফিষীয় ৩:১৮; ইব্রীয় ৫:১২-১৪) উদাহরণস্বরূপ, পৃথিবীতে যীশুর জীবনের চারটে নির্ভরযোগ্য বিবরণ অর্থাৎ মথি, মার্ক, লূক ও যোহনের সুসমাচারের কথাই ধরুন। সুসমাচারের এই বিবরণগুলো খুব মন দিয়ে অধ্যয়ন করে আমরা শুধু যীশু কোন্ কাজগুলো করেছিলেন বা তিনি কেমন ব্যক্তি ছিলেন তা-ই জানতে পারব না কিন্তু সেইসঙ্গে কোন্ অনুভূতি তাঁকে সেই কাজগুলো করতে প্রেরণা দিয়েছিল তাও বুঝতে পারব। আর তাহলেই আমরা “খ্রীষ্টের মন” পাব।—১ করিন্থীয় ২:১৬.
৮. জীবন দৌড়ে ধৈর্য ধরার জন্য খ্রীষ্টীয় সভাগুলো কীভাবে আমাদের সাহায্য করে?
৮ পৌল খ্রীষ্টান ভাইবোনদের পরামর্শ দিয়েছিলেন: “আইস, আমরা পরস্পর মনোযোগ করি, যেন প্রেম ও সৎক্রিয়ার সম্বন্ধে পরস্পরকে উদ্দীপিত করিয়া তুলিতে পারি; এবং আপনারা সমাজে সভাস্থ হওয়া পরিত্যাগ না করি—যেমন কাহারও কাহারও অভ্যাস—বরং পরস্পরকে চেতনা দিই; আর তোমরা সেই দিন যত অধিক সন্নিকট হইতে দেখিতেছ, ততই যেন অধিক এ বিষয়ে তৎপর হই।” (ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) খ্রীষ্টীয় সভাগুলো আমাদের কতই না উৎসাহ দেয়! আর সেইসব প্রেমময় ভাইবোনদের কাছাকাছি থাকা আমাদের কতই না স্বস্তি এনে দেয় যারা আমাদের ভালবাসেন ও শেষ পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে আমাদেরকে সাহায্য করতে চান! যিহোবার দেওয়া এই প্রেমপূর্ণ ব্যবস্থাকে আমরা কখনই হালকাভাবে নিতে চাই না। অধ্যবসায়ের সঙ্গে ব্যক্তিগত অধ্যয়ন করে এবং নিয়মিত সভায় এসে আসুন আমরা “বুদ্ধিতে পরিপক্ব” হই।—১ করিন্থীয় ১৪:২০.
আপনাকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য দর্শকেরা
৯, ১০. (ক) ধৈর্যের দৌড়ে কোন্ কোন্ দিক দিয়ে দর্শকরা উৎসাহ জোগাতে পারেন? (খ) ইব্রীয় ১২:১ পদে দেওয়া ‘আমাদেরকে বেষ্টিত করে আছে এমন বৃহৎ সাক্ষিমেঘ’ কী?
৯ একজন দৌড়বিদ যত ভালভাবেই প্রস্তুতি নিক না কেন, পথে এমন অনেক কিছুই ঘটতে পারে যাতে তিনি হোঁচট খেতে পারেন। “তোমরা সুন্দররূপে দৌড়িতেছিলে; কে তোমাদিগকে বাধা দিল যে, তোমরা সত্যের দ্বারা প্রবর্ত্তিত হও না?” পৌল জিজ্ঞাসা করেছিলেন। (গালাতীয় ৫:৭) এটা পরিষ্কার যে কিছু গালাতীয় খ্রীষ্টানেরা কুসংসর্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন, ফলে তাদের জীবন দৌড় থেকে তারা সরে পড়ছিলেন। আবার অন্যদিকে, অন্যদের সমর্থন ও উৎসাহ দৌড়ে টিকে থাকাকে সহজ করে দেয়। এটা অনেকটা কোন খেলায় দর্শকরা প্রতিযোগীদের ওপর যেমন প্রভাব ফেলেন ঠিক সেইরকম। উৎসাহী জনতা উত্তেজনাকে বাড়িয়ে তোলে যা প্রতিযোগীদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রেরণা দেয়। দর্শকদের উল্লাস যা প্রায়ই তারা আনন্দধ্বনি ও হাততালি দিয়ে প্রকাশ করে তা প্রতিযোগীদের অতিরিক্ত শক্তি জোগায়, যা দৌড় শেষ করার জন্য তাদের খুবই দরকার। সহানুভূতিশীল দর্শকেরা, যারা দৌড়াচ্ছেন তাদের ওপর সত্যিই ভাল প্রভাব ফেলতে পারেন।
১০ কিন্তু খ্রীষ্টানেরা যে জীবন দৌড়ে দৌড়াচ্ছেন সেখানে দর্শক কারা? ইব্রীয় ১১ অধ্যায়ে যিহোবার প্রাচীন বিশ্বস্ত সাক্ষিদের বিষয়ে বলার পর পৌল লিখেছিলেন: “অতএব এমন বৃহৎ সাক্ষিমেঘে বেষ্টিত হওয়াতে আইস, আমরাও . . . ধৈর্য্যপূর্ব্বক আমাদের সম্মুখস্থ ধাবনক্ষেত্রে দৌড়ি।” (ইব্রীয় ১২:১) মেঘের সঙ্গে তুলনা করার সময় পৌল মেঘের জন্য সেই গ্রিক শব্দ ব্যবহার করেননি যা নির্দিষ্ট আকার ও আকৃতির মেঘকে বোঝায়। এর বদলে তিনি সেই শব্দ ব্যবহার করেছিলেন, আভিধানিক ডব্লু. ই. ভাইনের মতে যা, “পুরো আকাশকে ছেয়ে থাকে এমন বিশাল আকৃতির মেঘ।” এটা পরিষ্কার যে পৌলের মনে সেই বৃহৎ সাক্ষিদের কথাই ছিল—যারা সংখ্যায় এতই বেশি যে ঠিক যেন তারা বিশালাকৃতি মেঘের মতো।
১১, ১২. (ক) ধৈর্যের সঙ্গে দৌড়ানোর সময় প্রাচীনকালের বিশ্বস্ত সাক্ষিরা কীভাবে আমাদের উৎসাহ দিতে পারেন? (খ) ‘বৃহৎ সাক্ষিমেঘেদের’ কাছ থেকে আমরা কীভাবে আরও বেশি উৎসাহ পেতে পারি?
১১ প্রাচীনকালের বিশ্বস্ত সাক্ষিরা কি সত্যিকার অর্থে আজকের দিনের দর্শক হতে পারেন? না হতে পারেন না। কারণ তারা মৃত্যুতে ঘুমিয়ে আছেন এবং পুনরুত্থানের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু তারা যখন জীবিত ছিলেন তখন তারা নিজেরা সফল দৌড়বিদ ছিলেন আর তাদের উদাহরণগুলো বাইবেলের পাতায় পাতায় জীবন্ত হয়ে আছে। আমরা যখন বাইবেল অধ্যয়ন করি তখন এই বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা আমাদের মনে জীবন্ত হয়ে ওঠেন এবং আমাদেরকে যেন তারা এই বলে উৎসাহ দেন যে আমাদের দৌড় শেষ করতেই হবে।—রোমীয় ১৫:৪.a
১২ উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, জগতের বিভিন্ন লোভনীয় সুযোগ যখন আমাদের প্রলুব্ধ করে, তখন মোশি কীভাবে মিশরের জাঁকজমককে অস্বীকার করেছিলেন সেই সম্বন্ধে আলোচনা করা কি আমাদেরকে আমাদের পথে অটল থাকতে সাহায্য করে না? আমাদের সামনে আসা কোন পরীক্ষাকে যদি কঠিন মনে হয়, সেই সময় অব্রাহাম তার পুত্র ইস্হাককে উৎসর্গ করার মুহূর্তে যে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছিলেন সে কথা ভাবা আমাদেরকে বিশ্বাসের দৌড়ে হাল ছেড়ে না দিতে সাহস জোগায়। এভাবে এই ‘বৃহৎ সাক্ষিমেঘ’ আমাদেরকে কতটুকু উৎসাহ দেবেন তা নির্ভর করে, আমরা কতটা পরিষ্কারভাবে আমাদের মনের চোখ দিয়ে তাদেরকে দেখি।
১৩. কোন্ উপায়ে আজকে আমাদের যিহোবার সাক্ষি ভাইবোনেরা আমাদেরকে জীবন দৌড়ে উৎসাহ দেন?
১৩ এছাড়াও আজকে আমাদের চারিদিকে অনেক অনেক যিহোবার সাক্ষি ভাইবোন আছেন। অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা এবং ‘বিস্তর লোকেদের’ স্ত্রী-পুরুষেরা বিশ্বাসের ক্ষেত্রে কত অপূর্ব উদাহরণই না রেখেছেন! (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯) এই পত্রিকা ও ওয়াচ টাওয়ার প্রকাশনার অন্যান্য সাহিত্য থেকে আমরা সময় সময় তাদের জীবন কাহিনী পড়তে পারি।b তাদের বিশ্বাসের কথা চিন্তা করে আমরা শেষ পর্যন্ত ধৈর্য ধরার জন্য উৎসাহ পাই। আর ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়রা যারা বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করছেন তাদের সমর্থন পাওয়া কতই না চমৎকার! হ্যাঁ, জীবন দৌড়ে আমাদেরকে উৎসাহ দেবার জন্য অনেক দর্শক আছেন।
বুদ্ধির সঙ্গে আপনার গতি ঠিক করুন
১৪, ১৫. (ক) আমাদের গতি বুদ্ধির সঙ্গে ঠিক করা কেন জরুরি? (খ) লক্ষ্য ঠিক করার সময় কেন আমাদের ভেবেচিন্তে তা করতে হবে?
১৪ ম্যারাথনের মতো দীর্ঘ দৌড় প্রতিযোগিতায় একজন দৌড়বিদকে তার গতি বুদ্ধির সঙ্গে ঠিক করতে হয়। “খুব জোরে শুরু করলে একজন ব্যর্থ হবেন,” নিউ ইয়র্ক রানার পত্রিকা বলে। “এর ফলে তাকে শেষ কয়েক মাইলের জন্য অনেক কষ্ট করতে হবে নতুবা দৌড় বন্ধ করে দিতে হবে।” একজন ম্যারাথন দৌড়বিদ পুরনো কথা মনে করে বলেন: “দৌড়ে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে আমি যখন একটা বক্তৃতায় যোগ দিয়েছিলাম সেখানকার শিক্ষক সাবধান করে দিয়ে বলেছিলেন: ‘যারা জোরে দৌড়াচ্ছে তাদের সঙ্গে কখনই পাল্লা দিতে যাবেন না। আপনার নিজস্ব গতিতে দৌড়াতে থাকুন। তা না হলে আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়বেন আর আপনাকে দৌড় বন্ধ করে দিতে হবে।’ এই পরামর্শ মেনে কাজ করা আমাকে দৌড় শেষ করতে সাহায্য করেছিল।”
১৫ জীবন দৌড়ে ঈশ্বরের দাসেদের প্রাণপণ করতে হবে। (লূক ১৩:২৪) কিন্তু শিষ্য যাকোব লিখেছিলেন: “যে জ্ঞান উপর হইতে আইসে, তাহা . . . ক্ষান্ত [যুক্তিযুক্ত]।” (যাকোব ৩:১৭) ভাল উদাহরণগুলো আমাদেরকে আরও বেশি কাজ করার জন্য উৎসাহ দেয় ঠিকই কিন্তু ভেবেচিন্তে যুক্তিযুক্ত কাজ করা আমাদেরকে নিজেদের ক্ষমতা ও পরিস্থিতির সঙ্গে মিল রেখে আমাদের সাধ্য মতো লক্ষ্য রাখতে সাহায্য করবে। বাইবেল আমাদের মনে করিয়ে দেয়: “প্রত্যেক জন নিজ নিজ কর্ম্মের পরীক্ষা করুক, তাহা হইলে সে কেবল আপনার কাছে শ্লাঘা করিবার হেতু পাইবে, অপরের কাছে নয়; কারণ প্রত্যেক জন নিজ নিজ ভার বহন করিবে।”—গালাতীয় ৬:৪, ৫.
১৬. গতি ঠিক করার সময় নম্রতা আমাদের কীভাবে সাহায্য করে?
১৬ মীখা ৬:৮ পদে আমাদেরকে ভাবিয়ে তোলার মতো প্রশ্ন করা হয়েছে: “নম্রভাবে তোমার ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন, ইহা ব্যতিরেকে সদাপ্রভু তোমার কাছে আর কিসের অনুসন্ধান করেন?” নম্রতা আমাদেরকে মনে রাখতে সাহায্য করে যে আমাদের মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে। খারাপ স্বাস্থ্য অথবা বার্ধক্য কি আমাদের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে যার ফলে ঈশ্বরের পরিচর্যায় আমরা আমাদের সাধ্য মতো করতে পারছি না? আসুন আমরা নিরুৎসাহিত না হই। আমাদের চেষ্টা ও ত্যাগকে যিহোবা দেখেন ও গ্রাহ্য করেন ‘আমাদের যাহা আছে, তদনুসারে আমাদের যাহা নাই, তদনুসারে নয়।’—২ করিন্থীয় ৮:১২; লূক ২১:১-৪.
পুরস্কারের প্রতি আপনার দৃষ্টি রাখুন
১৭, ১৮. কীসের প্রতি দৃষ্টি রাখা যীশুকে ধৈর্য ধরতে সাহায্য করেছিল?
১৭ করিন্থীয় খ্রীষ্টানদের জীবন দৌড়ে যে ধৈর্যের দরকার সেই বিষয়ে বলতে গিয়ে পৌল ইস্থ্মিয়ান গেমস্ এর আরেকটা দিকের কথা বলেছিলেন যে দিকে তাদের নজর দেওয়া দরকার ছিল। ওই খেলায় অংশগ্রহণকারীদের বিষয়ে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “তাহারা ক্ষয়ণীয় মুকুট পাইবার জন্য [দৌড়ায়], কিন্তু আমরা অক্ষয় মুকুট পাইবার জন্য করি। অতএব আমি এরূপে দৌড়িতেছি যে বিনালক্ষ্যে নয়; এরূপে মুষ্ঠিযুদ্ধ করিতেছি যে শূন্যে আঘাত করিতেছি না।” (১ করিন্থীয় ৯:২৫, ২৬) প্রাচীনকালের ওই খেলাগুলোতে বিজয়ীর পুরস্কার ছিল পাইন পাতা অথবা অন্য কোন গাছের পাতা দিয়ে কিংবা বুনো শুকনো সেলারি পাতা দিয়ে তৈরি একটা মুকুট অথবা মালা—সত্যিই সেটা ছিল এক “ক্ষয়ণীয় মুকুট।” কিন্তু, যারা শেষ পর্যন্ত ধৈর্য ধরেন সেই খ্রীষ্টানদের জন্য কী অপেক্ষা করছে?
১৮ আমাদের আদর্শ যীশু খ্রীষ্টের বিষয়ে বলে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “তিনিই আপনার সম্মুখস্থ আনন্দের নিমিত্ত ক্রুশ সহ্য করিলেন, অপমান তুচ্ছ করিলেন, এবং ঈশ্বরের সিংহাসনের দক্ষিণে উপবিষ্ট হইয়াছেন।” (ইব্রীয় ১২:২) যীশু তাঁর মানব জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ধৈর্য ধরেছিলেন কারণ তিনি যাতনা দণ্ডকে পার করে তাঁর পুরস্কারের প্রতি দৃষ্টি রেখেছিলেন, যার মধ্যে ছিল যিহোবার নামকে পবিত্র করতে পারার আনন্দ, মানব পরিবারকে মৃত্যু থেকে মুক্ত করা এবং বাধ্য মানুষদের পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্ত জীবন দিয়ে তাদের রাজা ও মহাযাজক হিসেবে শাসন করা।—মথি ৬:৯, ১০; ২০:২৮; ইব্রীয় ৭:২৩-২৬.
১৯. খ্রীষ্টের শিষ্য হয়ে চলার সময় আমাদের কীসের প্রতি দৃষ্টি রাখতে হবে?
১৯ খ্রীষ্টের শিষ্য হয়ে চলার সময় আমাদের সামনে যে আনন্দ রাখা আছে তার কথা একবার ভেবে দেখুন। যিহোবা আমাদেরকে ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করার এবং বাইবেলের জীবনদায়ী জ্ঞান অন্যদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার যে কাজ দিয়েছেন তা করে আমরা অনেক আনন্দ পাই। (মথি ২৮:১৯, ২০) সত্য ঈশ্বর সম্বন্ধে জানতে চান এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া এবং তাকে জীবন দৌড়ে সামিল হতে সাহায্য করা কতই না আনন্দের বিষয়! আর আমরা যাদের কাছে প্রচার করি তারা যেভাবেই সাড়া দিক না কেন, যিহোবার নামকে পবিত্র করে এমন এক কাজ করা সত্যিই একটা বিরাট সুযোগ। আমাদের এলাকার লোকেদের উদাসীনতা অথবা বিরোধিতা সত্ত্বেও আমরা যখন এই সমস্তকিছু সহ্য করে প্রচার করে যাই, তখন যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করে আমরা খুশি হই। (হিতোপদেশ ২৭:১১) আর তিনি যে বিরাট পুরস্কারের কথা প্রতিজ্ঞা করেছেন তা হল অনন্ত জীবন। এটা কতই না আনন্দের বিষয়! এই আশীর্বাদগুলোর প্রতি দৃষ্টি রেখে আমাদের দৌড় চালিয়ে যাওয়া দরকার।
শেষ যতই এগিয়ে আসছে
২০. শেষ যতই এগিয়ে আসছে, জীবন দৌড় কীভাবে আরও কঠিন হয়ে উঠতে পারে?
২০ জীবন দৌড়ে দৌড়ানোর সময় আমাদের প্রধান শত্রু, শয়তান দিয়াবলের সঙ্গে আমাদের প্রতিযোগিতা করতে হবে। শেষ যতই এগিয়ে আসছে সে আমাদেরকে আরও তীব্রভাবে বাধা দেওয়ার অথবা গতিকে ধীর করে দেওয়ার চেষ্টা করছে। (প্রকাশিত বাক্য ১২:১২, ১৭) আর যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, মহামারী এবং ‘শেষকালের’ অন্যান্য কষ্টগুলোর ভিতর দিয়ে বিশ্বস্ত, উৎসর্গীকৃত রাজ্যের ঘোষক হওয়া এত সহজ নয়। (দানিয়েল ১২:৪; মথি ২৪:৩-১৪; লূক ২১:১১; ২ তীমথিয় ৩:১-৫) এছাড়াও মাঝে মাঝে আমাদের হয়তো মনে হতে পারে যে আমরা যখন আশা করছিলাম, শেষ আসতে তার চেয়ে এখনও অনেক দেরি আছে, বিশেষ করে আমরা যদি বেশ কিছু বছর আগে থেকে দৌড়াতে শুরু করে থাকি। কিন্তু, ঈশ্বরের বাক্য আমাদের আশ্বাস দেয় যে শেষ আসবেই। যিহোবা বলেছেন যে তা দেরি করবে না। শেষ কাছেই।—হবক্কূক ২:৩; ২ পিতর ৩:৯, ১০.
২১. (ক) জীবন দৌড় চালিয়ে যাওয়ার সময় কী আমাদেরকে শক্তি সঞ্চয় করতে সাহায্য করবে? (খ) শেষ এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কোন্ সংকল্প নেওয়া উচিত?
২১ অতএব, জীবন দৌড়ে সফল হওয়ার জন্য আমাদের আধ্যাত্মিক পুষ্টি জোগাতে যিহোবা প্রেমের সঙ্গে যে ব্যবস্থা করেছেন তা থেকে শক্তি সঞ্চয় করতে হবে। এছাড়াও, খ্রীষ্টান ভাইবোনেরা যারা জীবনের জন্য দৌড়াচ্ছেন তাদের সঙ্গে নিয়মিত মেলামেশা করে আমাদের আরও উৎসাহিত হওয়া দরকার। এমনকি পথে যদি কঠিন তাড়না ও অপ্রত্যাশিত ঘটনাগুলো আমাদের দৌড়কে অনেক বেশি কঠিন করেও তোলে, তবুও আমরা শেষ পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে পারি কারণ যিহোবা “পরাক্রমের উৎকর্ষ” দান করেন। (২ করিন্থীয় ৪:৭) এটা জেনে আমাদের কতই না ভাল লাগে যে যিহোবা চান আমরা যেন আমাদের দৌড়ে জয়ী হই ও তা শেষ করি! তাই দৃঢ় সংকল্প নিয়ে “আইস, আমরাও . . . ধৈর্য্যপূর্ব্বক আমাদের সম্মুখস্থ ধাবনক্ষেত্রে দৌড়ি,” এই বিশ্বাস মনে রেখে যে “ক্লান্ত না হইলে যথাসময়ে শস্য পাইব।”—ইব্রীয় ১২:১; গালাতীয় ৬:৯.
[পাদটীকাগুলো]
a ইব্রীয় ১১:১–১২:৩ পদের ওপর মন্তব্যের জন্য ১৯৮৭ সালের ১৫ই জানুয়ারি প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকার ১০-২০ পৃষ্ঠা দেখুন।
b প্রহরীদুর্গ জুন ১, ১৯৯৮, ২৮-৩১ পৃষ্ঠা; সেপ্টেম্বর ১, ১৯৯৮, ২৪-৮ পৃষ্ঠা; ফেব্রুয়ারি ১, ১৯৯৯ সংখ্যার ২৫-৯ পৃষ্ঠায় কিছু এইরকম উৎসাহজনক উদাহরণ পাওয়া যাবে।
আপনার কি মনে আছে?
◻ কেন আমাদের শেষ পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে হবে?
◻ যিহোবার কোন্ ব্যবস্থাকে আমাদের অবহেলা করা উচিত নয়?
◻ আমাদের গতি বুদ্ধির সঙ্গে ঠিক করা কেন জরুরি?
◻ জীবন দৌড় চালিয়ে গেলে আমাদের সামনে কোন্ আনন্দ রয়েছে?
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
খ্রীষ্টীয় সভায় গিয়ে উৎসাহিত হোন