প্রেম অনুচিত ঈর্ষাকে জয় করে
“প্রেম . . . ঈর্ষা করে না।”—১ করিন্থীয় ১৩:৪.
১, ২. (ক) যীশু তাঁর শিষ্যদের প্রেম সম্বন্ধে কী বলেছিলেন? (খ) একই সাথে প্রেমপূর্ণ এবং ঈর্ষান্বিত কি হওয়া সম্ভব এবং আপনি কেন এইভাবে এর উত্তর দেবেন?
প্রেম হল সত্য খ্রীষ্টতত্ত্বের এক শনাক্তিকরণ চিহ্ন। “তোমরা যদি আপনাদের মধ্যে পরস্পর প্রেম রাখ, তবে তাহাতেই সকলে জানিবে যে, তোমরা আমার শিষ্য,” যীশু খ্রীষ্ট বলেছিলেন। (যোহন ১৩:৩৫) কিভাবে প্রেম খ্রীষ্টীয় সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে তা ব্যাখ্যা করতে প্রেরিত পৌল অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে, তিনি লিখেছিলেন: “প্রেম . . . ঈর্ষা করে না।”—১ করিন্থীয় ১৩:৪.
২ যখন পৌল ওই কথাগুলি লিখেছিলেন, তখন তিনি অনুচিত ঈর্ষার প্রতি ইঙ্গিত করছিলেন। তা না হলে, তিনি সেই একই মণ্ডলীকে এই কথা বলতে পারতেন না: “ঈশ্বরীয় অন্তর্জ্বালায় [“ঈর্ষায়,” NW] তোমাদের জন্য আমার অন্তর্জ্বালা হইতেছে।” (২ করিন্থীয় ১১:২) তার মধ্যে ‘ঈশ্বরীয় ঈর্ষা’ জেগে উঠেছিল কারণ কিছু ব্যক্তি মণ্ডলীকে দূষিত করছিল। এটি পৌলকে করিন্থীয় মণ্ডলীর প্রতি দ্বিতীয় অনুপ্রাণিত পত্রটি লিখতে প্ররোচিত করেছিল যার মধ্যে অনেক প্রেমপূর্ণ উপদেশ রয়েছে।—২ করিন্থীয় ১১:৩-৫.
খ্রীষ্টানদের মধ্যে ঈর্ষা
৩. করিন্থের খ্রীষ্টানদের মধ্যে ঈর্ষা সম্বন্ধীয় সমস্যা কিভাবে গড়ে ওঠে?
৩ করিন্থীয়দের প্রতি তার প্রথম পত্রে, পৌলকে একটি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল যা নতুন খ্রীষ্টানদের একে অপরের সাথে মানিয়ে চলতে বাধা দিচ্ছিল। তারা বিশেষ কয়েকজন ব্যক্তিকে উচ্চে তুলে ধরছিল, যারা নিজেরা “এক জনের পক্ষে অন্য জনের বিপক্ষে গর্ব্ব,” করছিল। এর ফলে মণ্ডলীতে বিভেদ সৃষ্টি হয় যার দরুন বিভিন্ন ব্যক্তিরা বলতে থাকে: “আমি পৌলের,” “আর আমি আপল্লোর,” “আর আমি কৈফার।” (১ করিন্থীয় ১:১২; ৪:৬) পবিত্র আত্মার পরিচালনায়, প্রেরিত পৌল এই সমস্যার মূলে যেতে পেরেছিলেন। করিন্থীয়ের লোকেরা মাংসিক ব্যক্তিদের মত কাজ করছিল, “আত্মিক লোকদের” মত নয়। তাই পৌল লিখেছিলেন: “এখনও তোমরা মাংসিক রহিয়াছ; বাস্তবিক যখন তোমাদের মধ্যে ঈর্ষা ও বিবাদ রহিয়াছে, তখন তোমরা কি মাংসিক নও, এবং মানুষের রীতিক্রমে কি চলিতেছ না?”—১ করিন্থীয় ৩:১-৩.
৪. তার ভাইয়েদের একে অপরকে একই দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার জন্য পৌল কী উদাহরণ ব্যবহার করেছিলেন এবং এর থেকে আমরা কী শিক্ষালাভ করতে পারি?
৪ মণ্ডলীতে বিভিন্ন ব্যক্তিদের যে প্রতিভা এবং ক্ষমতা রয়েছে তা উপলব্ধি করতে পৌল করিন্থীয়দের সাহায্য করেছিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন: “কে তোমাকে বিশিষ্ট করে? আর যাহা না পাইয়াছ, এমনই বা তোমার কি আছে? আর যখন পাইয়াছ; তখন পাও নাই, এরূপ শ্লাঘা কেন করিতেছ?” (১ করিন্থীয় ৪:৭) প্রথম করিন্থীয় ১২ অধ্যায়ে, পৌল ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, যারা মণ্ডলীর অংশ ছিল তারা দেহের বিভিন্ন অংশের মত ছিল, যেমন হাত, চোখ এবং কান। তিনি দেখিয়েছিলেন যে ঈশ্বর দেহের অঙ্গকে এমনভাবে তৈরি করেছেন যে যাতে করে একে অপরকে যত্ন করতে পারে। পৌল এও লিখেছিলেন: “এক অঙ্গ গৌরব প্রাপ্ত হইলে তাহার সহিত সকল অঙ্গই আনন্দ করে।” (১ করিন্থীয় ১২:২৬) আজকে ঈশ্বরের সকল দাসেদের একে অপরের সাথে সম্পর্কের বিষয়ে এই নীতিটি পালন করা উচিত। ঈশ্বরের সেবায় এক ব্যক্তির কার্যভার এবং তার দ্বারা সম্পাদিত কাজগুলির প্রতি ঈর্ষান্বিত না হয়ে আমাদের উচিত তার সাথে আনন্দ করা।
৫. যাকোব ৪:৫ পদে কী প্রকাশিত হয়েছে এবং শাস্ত্র কিভাবে এই কথাগুলির সত্যতা তুলে ধরে?
৫ সত্যই, বলার থেকে এটা করা কষ্টকর। বাইবেল লেখক যাকোব আমাদের মনে করিয়ে দেন যে, “হিংসা করার প্রবণতা” প্রত্যেক পাপপূর্ণ মানুষের মধ্যে রয়েছে। (যাকোব ৪:৫, NW) প্রথম মানবের মৃত্যু ঘটেছিল কারণ কয়িন অনুচিত ঈর্ষার প্রতি বশ্যতাস্বীকার করেছিল বলে। পলেষ্টীয়রা ইস্হাকের বৃদ্ধিরত সমৃদ্ধির প্রতি হিংসাবশত তাকে নির্যাতন করেছিল। রাহেল শিশু জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা পাওয়ার জন্য তার বোনের প্রতি ঈর্ষান্বিত ছিল। যাকোবের পুত্রেরা তাদের ছোট ভাইয়ের প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শনের জন্য ঈর্ষান্বিত ছিল। মরিয়ম তার নইস্রায়েলীয় ভ্রাতৃবধূর প্রতি ঈর্ষান্বিত ছিল। কোরহ, দাথন ও অবীরাম হিংসার বশে মোশি এবং হারোণের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছিল। রাজা শৌল, দায়ূদের যুদ্ধ জয়ের সাফল্যের জন্য ঈর্ষান্বিত হয়েছিলেন। নিঃসন্দেহে যীশুর শিষ্যদের মধ্যে বারে বারে তর্ক, যে তাদের মধ্যে কে বড় তার কারণও ঈর্ষা ছিল। প্রকৃতপক্ষে কোন অসিদ্ধ মানুষ নেই যে সম্পূর্ণরূপে পাপপূর্ণ “হিংসা করার প্রবণতা” থেকে মুক্ত।—আদিপুস্তক ৪:৪-৮; ২৬:১৪; ৩০:১; ৩৭:১১; গণনাপুস্তক ১২:১, ২; ১৬:১-৩; গীতসংহিতা ১০৬:১৬; ১ শমূয়েল ১৮:৭-৯; মথি ২০:২১, ২৪; মার্ক ৯:৩৩, ৩৪; লূক ২২:২৪.
মণ্ডলীতে
৬. প্রাচীনেরা কিভাবে হিংসা করার প্রবণতাকে নিয়ন্ত্রিত করেন?
৬ সকল খ্রীষ্টানদের হিংসা এবং অনুচিত ঈর্ষার বিরুদ্ধে সাবধান হওয়া উচিত। এর অন্তর্ভুক্ত প্রাচীনদের গোষ্ঠী যাদের নিযুক্ত করা হয়েছে ঈশ্বরের লোকেদের মণ্ডলীকে দেখাশোনা করতে। যদি একজন প্রাচীন নম্র হন তাহলে তিনি উচ্চাকাঙ্ক্ষার সাথে অন্যান্যদের সামনে বড় হতে চাইবেন না। অপরপক্ষে, যদি একজন প্রাচীনের সংগঠিত করার অথবা জনসাধারণের বক্তা হিসাবে বিশেষ ক্ষমতা থাকে, অন্যেরা এর উপর আনন্দিত হবে, এই মনোভাব নিয়ে যে তা মণ্ডলীর প্রতি এক আশীর্বাদস্বরূপ। (রোমীয় ১২:১৫, ১৬) একজন ভাই হয়ত উত্তম অগ্রগতি করছেন ও প্রমাণ দিচ্ছেন তিনি তার জীবনে ঈশ্বরের আত্মার ফল উৎপাদন করছেন। তার যোগ্যতা বিচারের ক্ষেত্রে, প্রাচীনেরা যেন ছোটখাট ত্রুটিকে বড় হিসাবে না দেখেন যাতে করে তাদের পরিচারক দাস অথবা প্রাচীন হিসাবে সুপারিশ না করা ন্যায্য বলে মনে করেন। তা প্রেম এবং যুক্তিবাদিতার অভাব দেখাবে।
৭. যখন কোন খ্রীষ্টান ঈশ্বতান্ত্রিক কার্যভার পান তখন কী সমস্যা গড়ে উঠতে পারে?
৭ যদি কেউ ঈশ্বতান্ত্রিক কার্যভার অথবা কোন আধ্যাত্মিক আশীর্বাদ লাভ করে, মণ্ডলীতে অন্যান্যদের হিংসার বিরুদ্ধে সাবধান থাকার প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ, একজন দক্ষ বোনকে হয়ত অপরের অপেক্ষায় অনেকবার খ্রীষ্টীয় সভাগুলিতে নমুনা পেশ করতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তা হয়ত কিছু বোনদের মধ্যে ঈর্ষা গড়ে তোলার কারণ হতে পারে। সম্ভবত এই একইধরনের সমস্যা ফিলিপীয় মণ্ডলীতে ইবদিয়া এবং সুন্তুখীর মধ্যে ছিল। বর্তমান-দিনের এইধরনের বোনেদের প্রাচীনদের কাছ থেকে হয়ত সদাশয়ের সাথে উৎসাহের প্রয়োজন হতে পারে যাতে করে তারা নম্র হন ‘প্রভুতে একই বিষয় ভাবেন।’—ফিলিপীয় ২:২, ৩; ৪:২, ৩.
৮. ঈর্ষা কোন্ পাপপূর্ণ কাজগুলিতে পরিচালনা করতে পারে?
৮ একজন ব্যক্তি যিনি হয়ত এখন মণ্ডলীতে অনেক সুযোগের দ্বারা আশীর্বাদপ্রাপ্ত হয়েছেন, তার বিষয়ে কোন বিগত ভুল হয়ত একজন খ্রীষ্টান জেনে থাকতে পারেন। (যাকোব ৩:২) ঈর্ষাবশত, অন্যদের কাছে তা বলতে তিনি প্রলুব্ধ হতে পারেন এবং মণ্ডলীতে তার কার্যভারের বিষয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন। এটা প্রেমের বিপরীত হবে, যা “পাপরাশি আচ্ছাদন করে।” (১ পিতর ৪:৮) ঈর্ষান্বিত কথাবার্তা মণ্ডলীর শান্তিকে বিনষ্ট করতে পারে। “তোমাদের হৃদয়ে যদি তিক্ত ঈর্ষা ও প্রতিযোগিতা রাখ,” শিষ্য যাকোব সাবধান করেছিলেন, “তবে সত্যের বিরুদ্ধে শ্লাঘা করিও না ও মিথ্যা কহিও না। সেই জ্ঞান এমন নয়, যাহা উপর হইতে নামিয়া আইসে, বরং তাহা পার্থিব, প্রাণিক, পৈশাচিক।”—যাকোব ৩:১৪, ১৫.
আপনার পরিবারের মধ্যে
৯. কিভাবে বিবাহিত সাথীরা তাদের ঈর্ষার অনুভূতিগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন?
৯ অনুচিত ঈর্ষার দরুন অনেক বিবাহ ভেঙ্গে যায়। বিবাহিত সাথীর প্রতি অবিশ্বস্ততা দেখানো প্রেমপূর্ণ নয়। (১ করিন্থীয় ১৩:৭) অপরপক্ষে, একজন সাথী ঈর্ষার অনুভূতিগুলির প্রতি লক্ষ্য নাও করতে পারে যা হয়ত অন্য সাথীর মধ্যে গড়ে উঠতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, স্বামী হয়ত অন্য কোন বিপরীত লিঙ্গের সদস্যের প্রতি মনোযোগ দিচ্ছেন বলে একজন স্ত্রী হয়ত ঈর্ষান্বিত হতে পারে। অথবা স্ত্রী হয়ত দুঃস্থ আত্মীয়ের যত্ন নিতে বেশি সময় ব্যয় করছে, তার ফলে স্বামী হয়ত ঈর্ষান্বিত হতে পারেন। এই সব অনুভূতির ফলে বিব্রত হয়ে, বিবাহিত সাথীরা হয়ত চুপ করে থাকতে পারেন এবং হতাশাবোধ দেখাতে পারেন যা হয়ত সমস্যাটিকে আরও জটিল করে দিতে পারে। পরিবর্তে, ঈর্ষান্বিত বিবাহিত সাথীর ভাববিনিময়ের এবং তার অনুভূতিগুলি ব্যক্ত করা সম্বন্ধে সৎ হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। কালক্রমে, অন্য সাথীর বোধসাধ্যতা দেখানো এবং তিনি যে তাকে ভালবাসেন তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া প্রয়োজন। (ইফিষীয় ৫:২৮, ২৯) যে সব পরিস্থিতি এর জন্ম দেয় তা কমানোর জন্য দুইপক্ষের ঈর্ষার অনুভূতিকে এড়াতে হবে। কয়েকসময় খ্রীষ্টীয় অধ্যক্ষকে হয়ত তার স্ত্রীকে বুঝাতে সাহায্য করা উচিত যে, তিনি বিপরীত লিঙ্গের সদস্যদের প্রতি সীমিত এবং যথার্থ মনোযোগ দেওয়া, ঈশ্বরের পালের পালক হিসাবে তার দায়িত্বকে পরিপূর্ণ করছেন। (যিশাইয় ৩২:২) অবশ্যই, একজন প্রাচীন যেন সাবধান থাকেন যাতে করে তিনি কখনও ঈর্ষা জাগানোর যথার্থ কারণ না দেন। এর জন্য প্রয়োজন ভারসাম্যতা, তার নিজের বিবাহ সম্পর্ককে দৃঢ় করতে সময় ব্যয় করতে নিশ্চিত হওয়া।—১ তীমথিয় ৩:৫; ৫:১, ২.
১০. কিভাবে পিতামাতারা ছেলেমেয়েদের মধ্যে ঈর্ষার অনুভূতিগুলির সাথে মোকাবিলা করতে সাহায্য করতে পারেন?
১০ পিতামাতারাও যেন তাদের ছেলেমেয়েদের অনুচিত ঈর্ষার বিষয়টি বুঝতে সাহায্য করেন। ছেলেমেয়েরা বেশির ভাগ ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়ে যা লড়াইয়ে পরিণত হয়। প্রায়ই তার কারণ হল ঈর্ষা। যেহেতু প্রত্যেকটি বাচ্চা হল অদ্বিতীয়, তাই সব ছেলেমেয়ের সাথে এক ব্যবহার করা যেতে পারে না। আরও, বাচ্চাদের এটা জানা প্রয়োজন যে, তাদের প্রত্যেকের বিভিন্ন গুণাবলি এবং দুর্বলতাগুলি আছে। যদি কোন বাচ্চাকে অন্যদের মত একই রকম করতে উৎসাহিত করা হয়, তাহলে তা হয়ত একজনের মধ্যে হিংসা এবং অন্যদের মধ্যে গর্ব নিয়ে আসতে পারে। তাই, পিতামাতাদের তাদের বাচ্চাদের শিক্ষা দেওয়া উচিত যাতে করে তারা তাদের উন্নতিকে পরিমাপ করতে পারেন ঈশ্বরের বাক্যে পাওয়া উদাহরণগুলি বিবেচনা করে, একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতার দ্বারা নয়। বাইবেল বলে: “অনর্থক দর্প না করি, পরস্পরকে জ্বালাতন না করি, পরস্পর হিংসাহিংসি না করি।” পরিবর্তে, “প্রত্যেক জন নিজ নিজ কর্ম্মের পরীক্ষা করুক, তাহা হইলে সে কেবল আপনার কাছে শ্লাঘা করিবার হেতু পাইবে, অপরের কাছে নয়।” (গালাতীয় ৫:২৬; ৬:৪) আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, খ্রীষ্টীয় পিতামাতাদের তাদের ছেলেমেয়েদের নিয়মিত বাইবেল অধ্যয়নের দ্বারা ঈশ্বরের বাক্যে পাওয়া ভাল এবং মন্দ উদাহরণগুলি তুলে ধরার দ্বারা সাহায্য করা প্রয়োজন।—২ তীমথিয় ৩:১৫.
ঈর্ষা দমন করার উদাহরণগুলি
১১. ঈর্ষাকে মোকাবিলা করার বিষয়ে কিভাবে মোশি এক উত্তম উদাহরণ ছিলেন?
১১ এই জগতের ক্ষমতা-লিপ্সু নেতাদের বিপরীতে, “ভূমণ্ডলস্থ মনুষ্যদের মধ্যে সকল অপেক্ষা মোশি লোকটী অতিশয় মৃদুশীল ছিলেন।” (গণনাপুস্তক ১২:৩) ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে যখন মোশির পক্ষে একা নেতৃত্ব নেওয়া বোঝাস্বরূপ হয়ে দাঁড়িয়েছিল, যিহোবা তাঁর আত্মাকে অন্যান্য ৭০ জন ইস্রায়েলীয়দের উপর কার্যকারী করান যার ফলে তারা মোশিকে সাহায্য করতে পেরেছিলেন। এদের মধ্যে যখন দুইজন ভাববাদীর ন্যায় কাজ করতে শুরু করেছিলেন, যিহোশূয় মনে করেছিলেন যে, তা মোশির নেতৃত্বকে অনুচিতভাবে খর্ব করছিল। যিহোশূয় এই লোকেদের দমন করতে চাইছিলেন, কিন্তু মোশি নম্রতার সাথে যুক্তি করেন: “তুমি কি আমার পক্ষে ঈর্ষা করিতেছ? সদাপ্রভুর যাবতীয় প্রজা ভাববাদী হউক, ও সদাপ্রভু তাহাদের উপরে আপন আত্মা অধিষ্ঠান করাউন।” (গণনাপুস্তক ১১:২৯) হ্যাঁ, মোশি খুশি হয়েছিলেন যখন অন্যান্যেরা পরিচর্যার সুযোগগুলি পেয়েছিলেন। তিনি ঈর্ষার সাথে নিজের জন্য মহিমা চাননি।
১২. যোনাথনকে ঈর্ষার অনুভূতি এড়াতে কী সাহায্য করেছিল?
১২ কিভাবে প্রেম অনুচিত ঈর্ষার অনুভূতিকে জয় করে তার উদাহরণ আমরা ইস্রায়েলীয় রাজা, শৌলের পুত্র যোনাথনের কাছ থেকে পাই। তার পিতার সিংহাসন উত্তরাধিকার সূত্রে যোনাথনের পাওয়া উচিত ছিল, কিন্তু যিহোবা যিশয়ের পুত্র দায়ূদকে পরবর্তী রাজা মনোনীত করেছিলেন। অনেকে যারা যোনাথনের স্থানে থাকত তারা দায়ূদেকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে মনে করে ঈর্ষান্বিত বোধ করত। কিন্তু, দায়ূদের প্রতি যোনাথনের প্রেম কখনও এই মনোভাবটির অধীনে বশীভূত হতে সাহায্য করেনি। যোনাথনের মৃত্যু শুনে, তাই দায়ূদ বলতে পেরেছিলেন: “হা, ভ্রাতা যোনাথন! তোমার জন্য আমি ব্যাকুল। তুমি আমার কাছে অতিশয় মনোহর ছিলে; তোমার ভালবাসা আমার পক্ষে চমৎকার ছিল, রমণীগণের ভালবাসা অপেক্ষাও অধিক ছিল!”—২ শমূয়েল ১:২৬.
সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উদাহরণগুলি
১৩. ঈর্ষা সম্বন্ধে সবচেয়ে উত্তম উদাহরণ কে এবং কেন?
১৩ যিহোবা ঈশ্বর হলেন সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ যাঁর এমনকি সঠিক ঈর্ষার উপরেও অধিকার রয়েছে। তিনি এইধরনের অনুভূতিগুলিকে সঠিক নিয়ন্ত্রণে রাখেন। ঐশিক ঈর্ষার যে কোন শক্তিশালী প্রদর্শন সবসময় ঈশ্বরের প্রেম, ন্যায়বিচার এবং প্রজ্ঞার সাথে সামঞ্জস্য রাখে।—যিশাইয় ৪২:১৩, ১৪.
১৪. শয়তানের বিপরীতে যীশু কোন্ উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন?
১৪ দ্বিতীয় সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ যিনি ঈর্ষাকে দমন করেছিলেন তিনি হলেন ঈশ্বরের প্রিয় পুত্র, যীশু খ্রীষ্ট। “ঈশ্বরের স্বরূপবিশিষ্ট থাকিতে তিনি,” অর্থাৎ যীশু “ঈশ্বরের সহিত সমান থাকা ধরিয়া লইবার বিষয় জ্ঞান করিলেন না।” (ফিলিপীয় ২:৬) উচ্চাকাঙ্ক্ষী দূত যে শয়তান দিয়াবল হয় তার থেকে এটি কতই না ভিন্ন পথ ছিল! “বাবিল-রাজের” মত শয়তান নিজেকে যিহোবার বিরুদ্ধে এক প্রতিদ্বন্দ্বী ঈশ্বর হিসাবে তুলে ধরে ঈর্ষার সাথে ‘পরাৎপরের তুল্য হওয়ার’ ইচ্ছা প্রকাশ করে। (যিশাইয় ১৪:৪, ১৪; ২ করিন্থীয় ৪:৪) শয়তান এমনকি যীশুকে “ভূমিষ্ঠ হইয়া . . . প্রণাম” করানোর চেষ্টা করেছিল। (মথি ৪:৯) কিন্তু কোন কিছু যিহোবার সার্বভৌমত্বের প্রতি বশীভূত হওয়ার নম্র পথ থেকে তাঁকে টলাতে পারেনি। শয়তানের বিপরীতে, যীশু “আপনাকে শূন্য করিলেন, দাসের রূপ ধারণ করিলেন, মনুষ্যদের সাদৃশ্যে জন্মিলেন। এবং আকার প্রকারে মনুষ্যবৎ প্রত্যক্ষ হইয়া আপনাকে অবনত করিলেন; মৃত্যু পর্য্যন্ত, এমন কি, ক্রুশীয় [“যাতনাদণ্ডে,” NW] মৃত্যু পর্য্যন্ত আজ্ঞাবহ হইলেন।” তাঁর পিতার শাসনের যথার্থতা যীশু তুলে ধরেছিলেন এবং সম্পূর্ণরূপে দিয়াবলের গর্ব এবং ঈর্ষার পথকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। যীশুর বিশ্বস্ততার দরুন, “ঈশ্বর তাঁহাকে অতিশয় উচ্চপদান্বিতও করিলেন, এবং তাঁহাকে সেই নাম দান করিলেন, যাহা সমুদয় নাম অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ; যেন যীশুর নামে স্বর্গ মর্ত্ত্য পাতালনিবাসীদের ‘সমুদয় জানু পাতিত হয়, এবং সমুদয় জিহ্বা যেন স্বীকার করে’ যে, যীশু খ্রীষ্টই প্রভু, এইরূপে পিতা ঈশ্বর যেন মহিমান্বিত হন।”—ফিলিপীয় ২:৭-১১.
আপনার ঈর্ষাকে দমন করা
১৫. ঈর্ষার অনুভূতিগুলিকে রুখতে কেন আমরা সাবধান হব?
১৫ ঈশ্বর এবং খ্রীষ্টের বিপরীত খ্রীষ্টানেরা হল অসিদ্ধ। পাপপূর্ণ হওয়ার দরুন অনেকসময় তারা হয়ত পাপপূর্ণ ঈর্ষার দ্বারা প্ররোচিত হতে পারে। তাই ঈর্ষার দ্বারা প্ররোচিত হয়ে অন্য সহবিশ্বাসীর ছোটখাটো ত্রুটি এবং সম্ভাব্য ভুলের জন্য সমালোচনা করার পরিবর্তে, এটি গুরুত্বপূর্ণ হবে যদি আমরা এই অনুপ্রাণিত কথাগুলির উপর ধ্যান করি: “অতি ধার্ম্মিক হইও না, ও আপনাকে অতিশয় জ্ঞানবান দেখাইও না; কেন আপনাকে নষ্ট করিবে?”—উপদেশক ৭:১৬.
১৬. এই পত্রিকার পূর্ব এক সংখ্যাতে ঈর্ষা সম্বন্ধে কী উপদেশ দেওয়া হয়েছিল?
১৬ ঈর্ষার বিষয়ে বলতে গিয়ে, মার্চ ১৫, ১৯৯১ সালের দ্যা ওয়াচ টাওয়ার সাবধান করে দিয়েছিল: “প্রভুর উদ্দেশ্যে আমাদের যদিও অত্যন্ত উদ্যমী এবং অত্যন্ত ঈর্ষান্বিত হতে হবে, তবুও তা যেন কোন ব্যক্তিগত বিষয় না হয়; এবং এই বিষয়ে চিন্তা করা উচিত যে আমরা ‘পরাধিকারচর্চ্চক’ কি না। এছাড়াও, আমাদের চিন্তা করা উচিত যে, সেটি প্রাচীনদের জন্য বিবেচনার সঠিক বিষয় কি না এবং আমাদের প্রাচীনদের কাছে যাওয়া কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায় কি না। আমাদের সকলের প্রভুর উদ্দেশ্যের জন্য এবং কাজের জন্য অনেকখানি ঈর্ষা থাকা উচিত, কিন্তু সাবধান হোন তা যেন তিক্ততার রূপ ধারণ না করে . . . অন্য কথায় বলতে গেলে, আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে যে তা অপরের প্রতি ঈর্ষা নয়, বরং তার পক্ষে, তার আগ্রহে এবং তার হিতের জন্য ঈর্ষা।”—১ পিতর ৪:১৫.
১৭. কিভাবে আমরা ঈর্ষার পাপপূর্ণ কাজগুলিকে এড়াতে পারি?
১৭ আমরা খ্রীষ্টান হিসাবে কিভাবে গর্ব, ঈর্ষা এবং হিংসা এড়াতে পারি? এর সমাধান হল নিজেদের জীবনে ঈশ্বরের পবিত্র আত্মাকে অবিরাম গতিতে প্রবাহিত হতে দেওয়া। উদাহরণস্বরূপ, আমাদের ঈশ্বরের আত্মার জন্য এবং তার ফল প্রদর্শন করার জন্য প্রার্থনা করা উচিত। (লূক ১১:৩) আমাদের খ্রীষ্টীয় সভায় যোগদান করতে হবে যা প্রার্থনার মাধ্যমে শুরু হয় এবং যাতে ঈশ্বরের আত্মার আশীর্বাদ রয়েছে। এছাড়াও, আমাদের বাইবেল অধ্যয়ন করতে হবে, যা ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত। (২ তীমথিয় ৩:১৬) আর আমাদের রাজ্য-প্রচার কাজে অংশ নিতে হবে যা যিহোবার পবিত্র আত্মার শক্তিতে সম্পাদিত হচ্ছে। (প্রেরিত ১:৮) সহখ্রীষ্টানেরা যারা হয়ত কোন রকম খারাপ অভিজ্ঞতা দ্বারা ভগ্ন হয়ে পড়েছে তাদের সাহায্য করা হল আরেকটি পথ যার দ্বারা ঈশ্বরের আত্মার ভাল প্রভাবের প্রতি বশীভূত হওয়া প্রমাণ করে। (যিশাইয় ৫৭:১৫; ১ যোহন ৩:১৫-১৭) উদ্যমতার সাথে এই খ্রীষ্টীয় দায়িত্বগুলি পরিপূর্ণ করা আমাদের ঈর্ষার পাপপূর্ণ অভ্যাসগুলি থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করবে, কারণ ঈশ্বরের বাক্য বলে: “তোমরা আত্মার বশে চল, তাহা হইলে মাংসের অভিলাষ পূর্ণ করিবে না।”—গালাতীয় ৫:১৬.
১৮. অনুচিত ঈর্ষার অনুভূতির সঙ্গে কেন আমাদের চিরদিন লড়াই করতে হবে না?
১৮ ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার ফলের তালিকার প্রথমে প্রেম উল্লেখ করা হয়েছে। (গালাতীয় ৫:২২, ২৩) প্রেম প্রদর্শন করা আমাদের এখন পাপপূর্ণ প্রবণতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে। কিন্তু ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে কী বলা যেতে পারে? লক্ষ লক্ষ যিহোবার দাসেদের আসন্ন পার্থিব পরমদেশে জীবনের আশা রয়েছে, যেখানে তারা সিদ্ধতায় পৌঁছানোর আশা করতে পারে। সেই নতুন জগতে প্রেম জয়লাভ করবে এবং কেউ অনুচিত ঈর্ষার অনুভূতিগুলির বশবর্তী হবে না, কারণ “সৃষ্টি নিজেও ক্ষয়ের দাসত্ব হইতে মুক্ত হইয়া ঈশ্বরের সন্তানগণের প্রতাপের স্বাধীনতা পাইবে।”—রোমীয় ৮:২১.
ধ্যান করার বিষয়গুলি
◻ ঈর্ষাকে কমানোর জন্য পৌল কোন উদাহরণ ব্যবহার করেছিলেন?
◻ কিভাবে ঈর্ষা মণ্ডলীর শান্তিকে নষ্ট করতে পারে?
◻ কিভাবে পিতামাতারা তাদের ছেলেমেয়েদের ঈর্ষার সাথে মোকাবিলা করতে শিক্ষা দিতে পারেন?
◻ কিভাবে আমরা ঈর্ষার পাপপূর্ণ কাজগুলিকে এড়াতে পারি?
[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
মণ্ডলীর শান্তিকে ঈর্ষার দ্বারা নষ্ট হতে দেবেন না
[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
পিতামাতারা তাদের ছেলেমেয়েদের ঈর্ষার অনুভূতিগুলিকে মোকাবিলা করতে শিক্ষা দিতে পারেন