-
আপনার কাজ কি অগ্নিকে প্রতিরোধ করতে পারবে?১৯৯৮ প্রহরীদুর্গ | নভেম্বর ১
-
-
যথার্থ বস্তু দিয়ে গাঁথা
৯. পৌল যদিও প্রাথমিকভাবে একজন ভিত্তিমূল স্থাপক ছিলেন, তবুও তার শিক্ষায় যারা সত্য গ্রহণ করেছিলেন তাদের সম্বন্ধে কোন্ চিন্তা তার ছিল?
৯ পৌল লিখেছিলেন: “কিন্তু এই ভিত্তিমূলের উপরে স্বর্ণ, রৌপ্য, বহুমূল্য প্রস্তর, কাষ্ঠ, খড়, নাড়া দিয়া যদি কেহ গাঁথে, তবে প্রত্যেক ব্যক্তির কর্ম্ম সপ্রকাশ হইবে। কারণ সেই দিন তাহা ব্যক্ত করিবে, কেননা সেই দিনের প্রকাশ অগ্নিতেই হয়; আর প্রত্যেকের কর্ম্ম যে কি প্রকার, সেই অগ্নিই তাহার পরীক্ষা করিবে।” (১ করিন্থীয় ৩:১২, ১৩) পৌল কী বোঝাতে চেয়েছিলেন? পটভূমিকাটি বিবেচনা করুন। পৌল মূলত একজন ভিত্তিমূল স্থাপক ছিলেন। তার মিশনারি যাত্রার সময় তিনি নগরে নগরে ভ্রমণ করতেন, খ্রীষ্টের বিষয়ে কখনও শোনেনি এমন অনেকের কাছে প্রচার করতেন। (রোমীয় ১৫:২০) তিনি যে সত্য শিক্ষা দিয়েছিলেন তা যখন লোকেরা গ্রহণ করেছিলেন তখন বিভিন্ন মণ্ডলী গঠিত হয়েছিল। পৌল এই বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতেন। (২ করিন্থীয় ১১:২৮, ২৯) কিন্তু, তার কাজ ছিল বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করা। তাই করিন্থে ভিত্তিমূল স্থাপন করার জন্য ১৮ মাস কাটানোর পর, অন্যান্য নগরে প্রচার করার জন্য তিনি সেই স্থান ত্যাগ করেছিলেন। তবুও, তিনি সেখানে যা সম্পন্ন করেছিলেন সেই কাজকে অন্যেরা কিভাবে অগ্রসর করেছিলেন সেই বিষয়ে তিনি অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন।—প্রেরিত ১৮:৮-১১; ১ করিন্থীয় ৩:৬.
১০, ১১. (ক) পৌল কিভাবে বিভিন্ন ধরনের নির্মাণ বস্তুর মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরেছিলেন? (খ) প্রাচীন করিন্থে আক্ষরিকভাবে কোন্ ধরনের গৃহগুলি দেখা যেত? (গ) কোন্ ধরনের গৃহ খুব সম্ভবত অগ্নির মধ্যেও টিকে থাকে এবং খ্রীষ্টান শিষ্য নির্মাতাদের জন্য তা কোন্ মূল শিক্ষা দেয়?
১০ পৌল করিন্থে যে ভিত্তিমূল স্থাপন করেছিলেন তার উপর যারা গঠন করছিলেন, মনে হয় যে তাদের কাজে ঘাটতি ছিল। সমস্যাটি প্রকাশ করার জন্য পৌল দুইধরনের নির্মাণ বস্তুর তুলনা করেন: একদিকে সোনা, রুপা এবং বহুমূল্য প্রস্তর; অন্যদিকে কাঠ, খড় এবং নাড়া। একটি গৃহ উত্তম, স্থায়ী, অগ্নি প্রতিরোধক বস্তু দ্বারা নির্মাণ করা যেতে পারে; অথবা একজন ব্যক্তি বাজে, অস্থায়ী এবং সহজে দাহ্য বস্তু দিয়েও তড়িঘড়ি করে নির্মাণ করতে পারেন। নিঃসন্দেহে, করিন্থের মতো বড় একটি শহরে এই দুই ধরনের গৃহই ছিল। সেখানে প্রকাণ্ড, মূল্যবান প্রস্তর ফলক দিয়ে তৈরি মনোরম মন্দির ছিল, সম্ভবত সেগুলির কিছু অংশ সোনা এবং রুপা দিয়ে বাঁধিয়ে তার শোভাবর্ধন অথবা সজ্জিত করা হয়েছিল।b এই স্থায়ী গৃহগুলিকে হয়ত পার্শ্ববর্তী কাঠের কাঠামো ও খড় দিয়ে ছাওয়া কুটির, অস্থায়ী বাসস্থান এবং বাজারের দোকানগুলির পাশে অত্যন্ত জাঁকাল মনে হতো।
-
-
আপনার কাজ কি অগ্নিকে প্রতিরোধ করতে পারবে?১৯৯৮ প্রহরীদুর্গ | নভেম্বর ১
-
-
১২. কোন্ কোন্ উপায়ে করিন্থের কিছু খ্রীষ্টানদের নির্মাণ কাজে অমনোযোগ ছিল?
১২ স্পষ্টত, পৌল অনুভব করেছিলেন যে করিন্থের কিছু খ্রীষ্টানদের গেঁথে তোলার কাজে ঘাটতি ছিল। সমস্যাটি কী ছিল? প্রসঙ্গটি যেমন দেখায় যে মণ্ডলীতে মতভেদ সৃষ্টি হয়েছিল এবং মণ্ডলীর ঐক্যে ফাঁটল ধরার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও মানুষের ব্যক্তিত্বকে উচ্চমূল্য দেওয়া হয়েছিল। কেউ কেউ বলছিলেন, “আমি পৌলের,” আবার অন্যেরা দৃঢ়ভাবে বলছিলেন, “আমি আপল্লোর।” আপাতদৃষ্টিতে কেউ কেউ তাদের নিজস্ব প্রজ্ঞাকে অত্যন্ত মূল্যবান গণ্য করেছিলেন। আশ্চর্যের বিষয় নয় যে এর ফল হয়েছিল মাংসিক চিন্তার এক পরিবেশ, আধ্যাত্মিক অপরিপক্বতা এবং প্রচণ্ড “ঈর্ষা ও বিবাদ।” (১ করিন্থীয় ১:১২; ৩:১-৪, ১৮) নিশ্চিতভাবেই, মণ্ডলী ও পরিচর্যায় দেওয়া শিক্ষায় এইধরনের মনোভাব প্রতিফলিত হয়েছিল। ফলস্বরূপ, তাদের শিষ্যকরণের কাজে অমনোযোগ দেখা গিয়েছিল, ঠিক যেন নিকৃষ্ট মানের বস্তু দিয়ে গৃহ নির্মাণ করা। এটি ‘অগ্নিতে’ রক্ষা পায়নি। পৌল কোন্ অগ্নির কথা বলছিলেন?
-
-
আপনার কাজ কি অগ্নিকে প্রতিরোধ করতে পারবে?১৯৯৮ প্রহরীদুর্গ | নভেম্বর ১
-
-
১৪. (ক) খ্রীষ্টান শিষ্য নির্মাতারা হয়ত কিভাবে “ক্ষতিগ্রস্ত” হতে পারেন, তথাপি কিভাবে তারা অগ্নির মধ্যে দিয়ে পরিত্রাণ অর্জন করতে পারেন? (খ) কিভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে পারি?
১৪ বাস্তবিকই অত্যন্ত গাম্ভীর্যপূর্ণ বাক্য! কাউকে শিষ্য হতে সাহায্য করার ক্ষেত্রে কঠোর পরিশ্রম তখনই অত্যন্ত বেদনাদায়ক হয়ে ওঠে, যখন দেখা যায় যে ওই ব্যক্তি প্রলোভন কিংবা তাড়নার কাছে বশ্যতা স্বীকার করে পরিশেষে সত্যের পথ পরিত্যাগ করেন। পৌলও তা স্বীকার করে বলেন যে এইধরনের অবস্থায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই। অভিজ্ঞতাটি হয়ত খুব বেদনাদায়ক হতে পারে যেমন এই বর্ণনানুযায়ী আমাদের পরিত্রাণ “অগ্নির মধ্য দিয়া উত্তীর্ণ” হওয়ার মতো—এমন একজন ব্যক্তির মতো যিনি অগ্নিতে সমস্তকিছু হারিয়েছেন কিন্তু তিনি নিজে কোনরকমে বেঁচে গিয়েছেন। আমাদের ক্ষেত্রে আমরা কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে পারি? টেকসই বস্তু দিয়ে গেঁথে তুলে! আমরা যদি আমাদের ছাত্রদের হৃদয়ে পৌঁছানোর মতো শিক্ষা দিয়ে থাকি, তাদের প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা, যিহোবার প্রতি ভয় এবং প্রকৃত বিশ্বাসের মতো মহামূল্যবান গুণাবলিকে মূল্যবান বলে মনে করার জন্য প্রেরণা দিই, তাহলে আমরা তাদের টেকসই, অগ্নি প্রতিরোধক বস্তু দিয়ে গেঁথে তুলছি। (গীতসংহিতা ১৯:৯, ১০; হিতোপদেশ ৩:১৩-১৫; ১ পিতর ১:৬, ৭) যারা এই গুণাবলি অর্জন করেন তারা ক্রমাগত ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে যাবেন; চিরকাল বেঁচে থাকার নিশ্চিত আশা সেখানেই নিহিত। (১ যোহন ২:১৭) কিন্তু কিভাবে আমরা পৌলের দৃষ্টান্তটিকে বাস্তবসম্মত উপায়ে প্রয়োগ করতে পারি? কয়েকটি উদাহরণ বিবেচনা করুন।
১৫. কোন্ কোন্ উপায়ে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে আমরা আমাদের বাইবেল ছাত্রদের ক্ষেত্রে অমনোযোগী নির্মাণ কাজ করছি না?
১৫ বাইবেল ছাত্রদের শিক্ষা দেওয়ার সময় আমাদের কখনও যিহোবা ঈশ্বরের চেয়ে মানুষদের উচ্চে অধিষ্ঠিত করা উচিত নয়। তাদের কাছে প্রজ্ঞার মূল উৎস হিসাবে আমাদের নিজেদের দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করানো আমাদের লক্ষ্য নয়। আমরা চাই তারা যেন নির্দেশনার জন্য যিহোবা, তাঁর বাক্য এবং তাঁর সংগঠনের উপর নির্ভর করেন। সেইজন্য, তাদের প্রশ্নের উত্তরে আমরা আমাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরি না। পরিবর্তে, আমরা তাদেরকে বাইবেল ও “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস” প্রদত্ত প্রকাশনাগুলি ব্যবহার করে উত্তর খুঁজে বের করতে শিক্ষা দিই। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) একই কারণে, আমরা আমাদের বাইবেল ছাত্রদের উপর কর্তৃত্ব না করার ক্ষেত্রে সতর্ক হই। অন্যেরা যখন তাদের প্রতি আগ্রহ দেখান তখন অসন্তুষ্ট হওয়ার পরিবর্তে, আমাদের ছাত্রদেরকে মণ্ডলীর যথাসম্ভব সকলের প্রতি তাদের প্রেম দেখাতে, তাদের সঙ্গে পরিচিত হতে ও তাদের প্রতি উপলব্ধি প্রকাশের ক্ষেত্রে ‘প্রশস্ত হওয়ার’ জন্য উৎসাহিত করা উচিত।—২ করিন্থীয় ৬:১২, ১৩.
১৬. কিভাবে প্রাচীনেরা অগ্নি প্রতিরোধক বস্তু দ্বারা গেঁথে তুলতে পারেন?
১৬ শিষ্যদের গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রাচীনেরাও এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মণ্ডলীতে শিক্ষাদানের সময় তারা অগ্নি প্রতিরোধক বস্তু দ্বারা গেঁথে তোলার চেষ্টা করেন। তাদের শিক্ষাদানের ক্ষমতা, অভিজ্ঞতা এবং ব্যক্তিত্বে হয়ত অনেক পার্থক্য থাকতে পারে কিন্তু এই বৈচিত্র্যকে তারা তাদের নিজেদের দিকে অনুসারীদের টেনে নেওয়ার উপায় হিসাবে ব্যবহার করেন না। (প্রেরিত ২০:২৯, ৩০ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।) করিন্থে কেন কেউ কেউ বলেছিলেন যে “আমি পৌলের” অথবা “আমি আপল্লোর” সেই বিষয়টি আমরা সঠিকভাবে জানি না। কিন্তু আমরা বেশ নিশ্চিত যে এইধরনের বিভক্তিকরণের চিন্তা এই বিশ্বস্ত প্রাচীনদের মধ্যে কেউই উন্নীত করেননি। পৌল এইধরনের তোষামোদে সাড়া দেননি; তিনি দৃঢ়ভাবে তাদের প্রতিরোধ করেছিলেন। (১ করিন্থীয় ৩:৫-৭) অনুরূপভাবে আজকে, প্রাচীনেরা স্মরণে রাখেন যে তারা “ঈশ্বরের . . . পাল”-কে পালন করেন। (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (১ পিতর ৫:২) তাতে কোন মানুষের অধিকার নেই। তাই যখন কোন ব্যক্তি, পাল কিংবা প্রাচীনগোষ্ঠীর উপর কর্তৃত্ব করার প্রবণতা দেখান প্রাচীনেরা সেই প্রবণতার বিরুদ্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ নেন। যতক্ষণ পর্যন্ত প্রাচীনেরা এক নম্র আকাঙ্ক্ষা নিয়ে মণ্ডলীর সেবা করার, মানুষের হৃদয়ে পৌঁছানোর এবং যিহোবাকে সর্বান্তঃকরণে সেবা করতে মেষদের সাহায্য করার লক্ষ্যে পরিচালিত হন, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা অগ্নি প্রতিরোধক বস্তু দ্বারা গেঁথে তুলছেন।
১৭. কিভাবে খ্রীষ্টান পিতামাতারা অগ্নি প্রতিরোধক বস্তু দ্বারা গেঁথে তোলার জন্য প্রচেষ্টা করতে পারেন?
১৭ এই বিষয়টির সঙ্গে খ্রীষ্টান পিতামাতারাও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাদের সন্তানেরা চিরকাল বেঁচে থাকবে তা দেখার জন্য তারা কত আকুল আকাঙ্ক্ষাই না করেন! সেই জন্য তারা তাদের সন্তানদের হৃদয়ে ঈশ্বরের বাক্যের নীতিকে “যত্নপূর্বক শিক্ষা” দেওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন। (দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৬, ৭) তারা চান যে তাদের সন্তানেরা সত্যকে কেবল কিছু আইন কিংবা তথ্যের পুনরাবৃত্তি হিসাবে নয়, বরং এক পরিপূর্ণ, পুরস্কারদায়ক এবং জীবনের সুখী পথ হিসাবে গ্রহণ করুক। (১ তীমথিয় ১:১১) প্রেমময় পিতামাতারা তাদের সন্তানদের খ্রীষ্টের বিশ্বস্ত শিষ্য হিসাবে গড়ে তুলতে অগ্নি প্রতিরোধক বস্তু ব্যবহার করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। তারা তাদের সন্তানদের জন্য ধৈর্যপূর্বক কাজ করেন, যিহোবা যা ঘৃণা করেন তা উপড়ে ফেলতে এবং তিনি যে গুণাবলি ভালবাসেন তা গড়ে তুলতে সাহায্য করেন।—গালাতীয় ৫:২২, ২৩.
-