‘মনুষ্যদিগের নানা বরদের’ প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখানো
“যাঁহারা তোমাদের মধ্যে পরিশ্রম করেন . . . তাঁহাদিগকে চিনিয়া লও, আর তাঁহাদের কর্ম্ম প্রযুক্ত তাঁহাদিগকে প্রেমে অতিশয় সমাদর কর।”—১ থিষলনীকীয় ৫:১২, ১৩.
১. প্রেরিত ২০:৩৫ পদ অনুযায়ী দানের কোন্ ক্ষমতা আছে? বুঝিয়ে বলুন।
“গ্রহণ করা অপেক্ষা বরং দান করা ধন্য হইবার বিষয়।” (প্রেরিত ২০:৩৫) যীশুর এই কথাগুলো যে খুবই সত্যি তার প্রমাণ আপনি শেষ কবে নাগাদ পেয়েছেন তা কি আপনি মনে করতে পারেন? হয়ত এটা কোন উপহার ছিল যা আপনি আপনার প্রিয়জনকে দিয়েছিলেন। আপনি এটা খুব সাবধানে বেছেছিলেন কারণ আপনি চেয়েছিলেন যে এটা এমন হওয়া চাই যা আপনার প্রিয়জন খুবই পছন্দ করবেন। প্রিয়জনের মুখের হাসি আপনাকে কতই না আনন্দ দেয়! ভাল উদ্দেশ্য নিয়ে কোন কিছু দেওয়া ভালবাসাকে প্রকাশ করে আর এভাবে ভালবাসা প্রকাশ করে আমরা সুখী হই।
২, ৩. (ক) কেন বলা যেতে পারে যে কেউই যিহোবার চেয়ে বেশি সুখী নন এবং ‘মনুষ্যদিগের নানা বরের’ ব্যবস্থা কীভাবে তাঁর মনকে আনন্দিত করে? (খ) ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া দানকে আমরা কী করতে চাইব না?
২ তাহলে, যিহোবার চেয়ে বেশি সুখী আর কে হতে পারে যিনি “সমস্ত উত্তম দান” দেন? (যাকোব ১:১৭; ১ তীমথিয় ১:১১) তাঁর সব দানের পিছনেই ভালবাসা আছে। (১ যোহন ৪:৮) আর এটা বিশেষ করে সেই দানের জন্য সত্যি যা ঈশ্বর খ্রীষ্টের মাধ্যমে মণ্ডলীকে দিয়েছেন—‘মনুষ্যদিগের নানা বর।’ (ইফিষীয় ৪:৮) পালকে দেখাশোনা করার জন্য প্রাচীনদের ব্যবস্থা তাঁর লোকেদের জন্য ঈশ্বরের গভীর ভালবাসাকে প্রকাশ করে। এই ব্যক্তিদের সতর্কতার সঙ্গে বেছে নেওয়া হয়েছে, যাদের অবশ্যই শাস্ত্রে দেওয়া যোগ্যতাগুলো থাকা দরকার। (১ তীমথিয় ৩:১-৭; তীত ১:৫-৯) তারা জানেন যে তাদের “পালের প্রতি মমতা” দেখাতে হবে কারণ তখনই মেষেরা এই প্রেমময় পালকদের জন্য কৃতজ্ঞ হওয়ার কারণ খুঁজে পাবে। (প্রেরিত ২০:২৯; গীতসংহিতা ১০০:৩) যিহোবা যখন দেখেন যে তাঁর মেষদের হৃদয় এইরকম কৃতজ্ঞতায় ভরা তখন তাঁর মনও আনন্দে ভরে ওঠে!—হিতোপদেশ ২৭:১১.
৩ আমরা নিশ্চয়ই ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া দানকে ছোট করে দেখতে চাইব না; বা যে দানগুলো তিনি দিয়েছেন সেগুলোকে অবহেলাও করব না। তাই আমাদের সামনে দুটো প্রশ্ন ওঠে: প্রাচীনেরা মণ্ডলীতে তাদের কাজকে কীভাবে দেখবেন? আর পালের বাকি মেষেরা কীভাবে দেখাতে পারেন যে তারা ‘মনুষ্যদের নানা বরদের’ প্রতি কৃতজ্ঞ?
‘আমরা তোমাদের সহকারী’
৪, ৫. (ক) পৌল মণ্ডলীকে কীসের সঙ্গে তুলনা করেন এবং কেন এটা একটা উপযুক্ত উদাহরণ? (খ) আমাদের কীভাবে একে অন্যকে দেখা ও একে অন্যের সঙ্গে ব্যবহার করা উচিত সেই সম্বন্ধে পৌলের উদাহরণ কী দেখায়?
৪ যিহোবা ‘মনুষ্যদিগের নানা বরদের’ মণ্ডলীতে কিছুটা কর্তৃত্ব দিয়েছেন। অবশ্যই প্রাচীনেরা তাদের কর্তৃত্বকে অপব্যবহার করতে চান না কিন্তু তারা জানেন যে অসিদ্ধ মানুষ হওয়ায় তা করে ফেলা খুবই সহজ। তাহলে পালের বাকি সদস্যদের মধ্যে তারা নিজেদের কী চোখে দেখবেন? প্রেরিত পৌল যে উদাহরণ দিয়েছিলেন সেটা দেখুন। ‘মনুষ্যদিগকে নানা বর’ কেন দেওয়া হয়েছে তা বলার পর পৌল লিখেছিলেন: “প্রেমে সত্যনিষ্ঠ হইয়া সর্ব্ববিষয়ে তাঁহার উদ্দেশে বৃদ্ধি পাই, যিনি মস্তক, তিনি খ্রীষ্ট, তাঁহা হইতে সমস্ত দেহ, প্রত্যেক সন্ধি যে উপকার যোগায়, তদ্দ্বারা যথাযথ সংলগ্ন ও সংযুক্ত হইয়া প্রত্যেক ভাগের স্ব স্ব পরিমাণানুযায়ী কার্য্য অনুসারে দেহের বৃদ্ধি সাধন করিতেছে, আপনাকেই প্রেমে গাঁথিয়া তুলিবার জন্য করিতেছে।” (ইফিষীয় ৪:১৫, ১৬) অতএব, পৌল প্রাচীন ও অন্য সদস্যদের নিয়ে তৈরি পুরো মণ্ডলীকে মানুষের দেহের সঙ্গে তুলনা করেন। কেন এই উদাহরণটা উপযুক্ত?
৫ মানুষের দেহ বিভিন্ন অঙ্গ নিয়ে গঠিত কিন্তু এর শুধু একটা মাথা থাকে। দেহের কোন অঙ্গই অপ্রয়োজনীয় নয়—না একটা মাংসপেশী, না একটা স্নায়ু, না একটা শিরা। প্রত্যেক অঙ্গই মূল্যবান আর এগুলো প্রত্যেকটাই দেহের স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্যে অবদান রাখে। একইভাবে, মণ্ডলীও বিভিন্ন সদস্যদের নিয়ে গড়ে ওঠে আর সকলেই—ছেলে, বুড়ো, সবল বা দুর্বল যেই হোন না কেন—মণ্ডলীর আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্য এবং সৌন্দর্যে অবদান রাখতে পারেন। (১ করিন্থীয় ১২:১৪-২৬) কারও এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই যে তিনি নিতান্তই তুচ্ছ। অন্যদিকে, কারও নিজেকে শ্রেষ্ঠও ভাবা উচিত নয় কারণ আমরা সবাই—পালক ও মেষেরা—দেহের অংশ এবং শুধু একজন মস্তক যিনি হলেন খ্রীষ্ট। এভাবে পৌল প্রেম, যত্ন এবং শ্রদ্ধার এক অপূর্ব ছবি একেঁছেন যা আমাদের প্রত্যেকের একে অন্যের জন্য থাকা উচিত। প্রাচীনেরা যদি এটা মনে রাখেন, তাহলে নম্র হয়ে ও ভারসাম্য বজায় রেখে মণ্ডলীতে কাজ করে চলা তাদের জন্য সহজ হবে।
৬. একজন প্রেরিত হওয়া সত্ত্বেও পৌল কীভাবে নম্র মনোভাব দেখিয়েছিলেন?
৬ এই ‘মনুষ্যদিগের নানা বরেরা’ তাদের খ্রীষ্টান ভাইবোনদের জীবন বা বিশ্বাসকে নিজেদের খুশি মতো চালাতে চেষ্টা করেন না। পৌল একজন প্রেরিত হওয়া সত্ত্বেও নম্রভাবে করিন্থীয়দের বলেছিলেন: “আমরা যে তোমাদের বিশ্বাসের উপরে প্রভুত্ব করি, এমন নয়, বরং তোমাদের আনন্দের সহকারী হই; কারণ বিশ্বাসেই তোমরা দাঁড়াইয়া আছ।” (২ করিন্থীয় ১:২৪) পৌল তার ভাইদের বিশ্বাস এবং জীবনকে নিজের খুশি মতো চালাতে চাননি। আসলে, তিনি তা করাকে দরকার মনে করেননি কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন যে যারা যিহোবার সংগঠনে ছিলেন তারা প্রকৃতই বিশ্বস্ত পুরুষ ও নারী কেননা তারা সঠিক কাজ করতে চেয়েছিলেন। অতএব, তার নিজের এবং তার ভ্রমণ সঙ্গী তীমথিয়ের কথা বলতে গিয়ে পৌল আসলে বলতে চেয়েছিলেন: ‘তোমাদের সঙ্গে আনন্দিত মনে ঈশ্বরের সেবা করা আমাদের কাজ।’ (২ করিন্থীয় ১:১) কতই না নম্র মনোভাব!
৭. নম্র প্রাচীনেরা মণ্ডলীতে তাদের কাজ সম্বন্ধে কী জানেন এবং তাদের খ্রীষ্টান ভাইবোনদের জন্য তাদের কোন্ বিশ্বাস আছে?
৭ আজকে ‘মনুষ্যদিগের নানা বরদেরও’ একই দায়িত্ব রয়েছে। তারা ‘আমাদের আনন্দের সহকারী।’ নম্র প্রাচীনেরা বোঝেন যে অন্যেরা ঈশ্বরের সেবা কতটুকু করতে পারল তা বিচার করার দায়িত্ব তাদের নয়। তারা জানেন, যদিও তারা অন্যদেরকে তাদের প্রচার কাজ বাড়ানোর জন্য বা উন্নতি করার জন্য উৎসাহ দিতে পারেন কিন্তু ঈশ্বরকে সেবা করার ইচ্ছা একজনের মন থেকে আসে। (২ করিন্থীয় ৯:৭ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।) তারা এই ব্যাপারে নিশ্চিত যে যিহোবার সেবায় তাদের ভাইবোনেরা যদি আনন্দ খুঁজে পান, তাহলে তারা তাদের যথাসাধ্য করবেন। তাই তারা অন্তর থেকে তাদের ভাইদের সাহায্য করতে চান যাতে তারা “সানন্দে সদাপ্রভুর সেবা” করেন।—গীতসংহিতা ১০০:২.
আনন্দিত মনে সেবা করার জন্য সবাইকে সাহায্য করা
৮. প্রাচীনেরা তাদের ভাইদের আনন্দিত মনে যিহোবাকে সেবা করার জন্য কোন্ কোন্ উপায়ে সাহায্য করতে পারেন?
৮ প্রাচীনেরা, আপনারা কীভাবে আপনাদের ভাইদের আনন্দিত মনে সেবা করার জন্য সাহায্য করতে পারেন? আপনি উদাহরণ স্থাপন করে উৎসাহ দিতে পারেন। (১ পিতর ৫:৩) প্রচার কাজে আপনার উদ্যোগ এবং আনন্দ দেখান আর অন্যেরা হয়তো তখন আপনার উদাহরণ অনুকরণ করার জন্য উৎসাহ পাবেন। অন্যদের আন্তরিক প্রচেষ্টার জন্য প্রশংসা করুন। (ইফিষীয় ৪:২৯) আন্তরিক প্রশংসা অন্যদের ভাবতে সাহায্য করে যে তারাও কিছু করতে পারেন ও তাদেরকেও দরকার আছে। এটা মেষদেরকে ঈশ্বরের সেবায় তাদের সবটুকু দিতে উৎসাহ দেয়। অনর্থক তুলনা করা এড়িয়ে চলুন। (গালাতীয় ৬:৪) এইরকম তুলনা উন্নতি করার জন্য অন্যদের কোন উৎসাহ তো দেয়ই না বরং মন ভেঙে দেয়। এছাড়াও যিহোবার মেষদের পরিস্থিতি একেক জনের একেক রকম এবং তাদের ক্ষমতাও একরকম নয়। পৌলের মতো, আপনার ভাইদের প্রতি বিশ্বাস দেখান। প্রেম “সকলই বিশ্বাস করে” আর তাই আমরা এটা বিশ্বাস করলে ভাল করব যে আমাদের ভাইরা ঈশ্বরকে ভালবাসেন এবং তাঁকে খুশি করতে চান। (১ করিন্থীয় ১৩:৭) আপনি যখন ‘অন্যকে সমাদর করেন’ তখন আপনি তাদের ভিতরের সবচেয়ে ভাল বিষয়টা দেখেন। (রোমীয় ১২:১০) নিশ্চিত থাকুন যে মেষেরা যখন উৎসাহিত ও সতেজ হন তখন তাদের বেশিরভাগই ঈশ্বরের সেবায় তারা যতখানি করতে পারেন তার সবটুকু করেন আর তারা তা করে আনন্দ পান।—মথি ১১:২৮-৩০.
৯. সহ প্রাচীনদের প্রতি কোন্ দৃষ্টিভঙ্গি প্রত্যেক প্রাচীনকে আনন্দিত মনে সেবা করতে সাহায্য করবে?
৯ আপনি যদি নম্রভাবে নিজেকে “সহকারী” হিসেবে দেখেন, তাহলে তা আপনাকে আনন্দিত মনে সেবা করতে এবং আপনার প্রাচীনেরা যে নানা বর তা উপলব্ধি করতে সাহায্য করবে। প্রত্যেক প্রাচীনের নিজস্ব মেধা এবং ক্ষমতা রয়েছে যা তিনি মণ্ডলীর ভালর জন্য কাজে লাগাতে পারেন। (১ পিতর ৪:১০) একজনের হয়তো ভাল শিক্ষা দেওয়ার ক্ষমতা থাকতে পারে। আরেকজন হয়তো সাংগঠনিক কাজে খুবই দক্ষ। আবার অন্যজন হয়তো এতই আন্তরিক ও দয়ালু যে সবাই বিনা দ্বিধায় সাহায্যের জন্য তার কাছে যেতে পারেন। আসল কথা হল সব প্রাচীনেরই সব ক্ষমতা একই মাত্রায় থাকে না। কিন্তু কোন বিশেষ ক্ষমতা থাকা, যেমন শেখানোর ক্ষমতা কি একজন প্রাচীনকে অন্যের চেয়ে শ্রেষ্ঠ করে? অবশ্যই নয়! (১ করিন্থীয় ৪:৭) অন্যদিকে, যদি কারও কোন বিশেষ ক্ষমতা থাকে, তবে তার জন্য মনে মনে ঈর্ষা বোধ করা ঠিক নয় বা যখন একজন প্রাচীনকে তার ক্ষমতার জন্য প্রশংসা করা হয় তখন নিজেকে অযোগ্য মনে করারও কোন দরকার নেই। মনে রাখুন, আপনার নিজেরও কিছু গুণ রয়েছে যা যিহোবা আপনার মধ্যে দেখেছেন। আর তিনি আপনাকে সেই গুণগুলো বাড়াতে এবং আপনার ভাইদের উপকারে কাজে লাগাতে সাহায্য করতে পারেন।—ফিলিপীয় ৪:১৩.
‘আজ্ঞাগ্রাহী ও বশীভূত হও’
১০. ‘মনুষ্যদিগের নানা বরদের’ প্রতি কেন আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উপযুক্ত?
১০ আমরা যখন কোন উপহার পাই তখন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা খুবই দরকার। কলসীয় ৩:১৫ পদ বলে, “কৃতজ্ঞ হও।” তাহলে যিহোবা আমাদের যে দামি উপহার দিয়েছেন, অর্থাৎ ‘মনুষ্যদিগের নানা বরদের’ দিয়েছেন সেই বিষয়ে কী বলা যায়? অবশ্যই আমরা প্রথমে উদার দাতা যিহোবাকে ধন্যবাদ দিই। কিন্তু ‘মনুষ্যদিগের নানা বরদের’ আমরা কোন্ চোখে দেখি? আমরা কীভাবে দেখাতে পারি যে আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ?
১১. (ক) কীভাবে আমরা ‘মনুষ্যদিগের নানা বরদের’ প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি? (খ) “আজ্ঞাগ্রাহী এবং বশীভূত হও” এই কথার অর্থ কী?
১১ ‘মনুষ্যদিগের নানা বরেরা’ বাইবেল থেকে যে পরামর্শ দেন এবং সিদ্ধান্ত নেন তা নির্দ্বিধায় মেনে নিয়ে আমরা তাদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা দেখাতে পারি। বাইবেল আমাদের উপদেশ দেয়: “তোমরা তোমাদের নেতাদিগের আজ্ঞাগ্রাহী ও বশীভূত হও, কারণ নিকাশ দিতে হইবে বলিয়া তাঁহারা তোমাদের প্রাণের নিমিত্ত প্রহরি-কার্য্য করিতেছেন, যেন তাঁহারা আনন্দপূর্ব্বক সেই কার্য্য করেন, আর্ত্তস্বরপূর্ব্বক না করেন; কেননা ইহা তোমাদের পক্ষে মঙ্গলজনক নয়।” (ইব্রীয় ১৩:১৭) মন দিয়ে লক্ষ্য করুন যে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন আমাদের শুধু তাদের “আজ্ঞাগ্রাহী” নয় কিন্তু ‘বশীভূতও’ হতে হবে। “বশীভূত হও” শব্দের জন্য যে গ্রিক শব্দ রয়েছে তার আক্ষরিক অর্থ “বশ্যতা স্বীকার করুন।” “আজ্ঞাগ্রাহী” এবং “বশীভূত হও” এই কথাগুলোর ওপর মন্তব্য করতে গিয়ে বাইবেল পণ্ডিত আর. সি. এইচ ল্যানস্কি বলেন: “একজন তখনই আজ্ঞাগ্রাহী হন যখন তাকে যা করতে বলা হচ্ছে তার সঙ্গে তিনি একমত হন আর এটা তিনি করেন কারণ তা করা ঠিক ও উপকারী; একজন তখন বশ্যতা স্বীকার করেন . . . যখন তিনি কোন একটা বিষয়ে একমত নন।” যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের নির্দেশনা যখন আমরা বুঝি এবং তার সঙ্গে একমত হই তখন আপনা থেকেই বাধ্যতা চলে আসে। কিন্তু কোন একটা নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ যদি আমরা না বুঝি তাহলে কী?
১২. কেন আমাদের বশীভূত হওয়া বা বশ্যতা স্বীকার করা উচিত এমনকি যখন আমরা কোন একটা নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তের কারণ পুরোপুরি বুঝি না?
১২ এটাই হচ্ছে সেই জায়গা যেখানে আমাদের বশীভূত হওয়া কিংবা বশ্যতা স্বীকার করা উচিত। কেন? একটা কারণ হল আমাদের আস্থা থাকা দরকার যে আধ্যাত্মিকভাবে যোগ্য এই ব্যক্তিরা অন্তর থেকে আমাদের ভাল চান। তাছাড়া, তারা ভাল করে জানেন যে তাদেরকে যিহোবার কাছে নিকাশ দিতে হবে কারণ তিনি মেষদের দেখাশোনা করার দায়িত্ব তাদের দিয়েছেন। (যাকোব ৩:১) আর সঙ্গে সঙ্গে আমাদের এটা মনে রাখা উচিত যে আমরা সব গোপন বিষয়গুলো জানি না যেগুলোর কথা মাথায় রেখেই তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।—হিতোপদেশ ১৮:১৩.
১৩. প্রাচীনেরা যখন বিচারসংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো নেন তখন কী আমাদেরকে সেগুলোর বশীভূত হতে সাহায্য করতে পারে?
১৩ যখন বিচারসংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয় তখন বশীভূত হওয়ার বিষয়ে কী বলা যায়? স্বীকার করতেই হবে যে এইরকম সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া সহজ নয়, বিশেষ করে যখন আমাদের কোন প্রিয়জনকে অর্থাৎ কোন আত্মীয় বা কোন ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে সমাজচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এখানেও ‘মনুষ্যদিগের নানা বরদের’ রায়ের প্রতি বশ্যতা স্বীকার করা ভাল। কারণ তারা আমাদের চেয়ে আরও বেশি নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করতে পারেন আর তারা হয়তো আসল ঘটনাগুলো আরও ভালভাবে জানেন। প্রায়ই এইরকম সিদ্ধান্ত নিতে এই ভাইদেরও খুবই কষ্ট হয়; তারা বোঝেন যে “সদাপ্রভুর জন্য বিচার” করা এক গুরু দায়িত্ব। (২ বংশাবলি ১৯:৬) তারা দয়ালু হতে চেষ্টা করেন কেননা তারা ভালভাবেই জানেন যে ঈশ্বর “ক্ষমাবান্।” (গীতসংহিতা ৮৬:৫) কিন্তু তাদের মণ্ডলীকেও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে আর বাইবেল নির্দেশ দেয় যেন তারা একগুঁয়ে অপরাধীদের সমাজচ্যুত করেন। (১ করিন্থীয় ৫:১১-১৩) অনেক সময় দেখা যায় অপরাধী নিজে সিদ্ধান্তকে মেনে নেন। হতে পারে যে তার ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জন্য তার এই শাস্তির দরকার ছিল। আমরা যারা তার প্রিয়জন, আমরা যদি সেই সিদ্ধান্তের বশীভূত হই, তাহলে আমরা তাকে সেই সিদ্ধান্ত থেকে উপকৃত হতে সাহায্য করছি।—ইব্রীয় ১২:১১.
“তাঁহাদিগকে . . . অতিশয় সমাদর কর”
১৪, ১৫. (ক) ১ থিষলনীকীয় ৫:১২, ১৩ পদ অনুযায়ী কেন প্রাচীনেরা আমাদের সমাদর পাওয়ার যোগ্য? (খ) কেন বলা যেতে পারে যে প্রাচীনেরা ‘আমাদের মধ্যে পরিশ্রম করেন’?
১৪ ‘মনুষ্যদিগের নানা বরদের’ সমাদর করেও আমরা তাদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি। থিষলনীকীয় মণ্ডলীকে লেখার সময় পৌল এর সদস্যদের পরামর্শ দিয়েছিলেন: “যাঁহারা তোমাদের মধ্যে পরিশ্রম করেন ও প্রভুতে তোমাদের উপরে নিযুক্ত আছেন, এবং তোমাদিগকে চেতনা দেন, তাঁহাদিগকে চিনিয়া লও, আর তাঁহাদের কর্ম্ম প্রযুক্ত তাঁহাদিগকে প্রেমে অতিশয় সমাদর কর।” (১ থিষলনীকীয় ৫:১২, ১৩) “পরিশ্রম”—এটা কি নিবেদিতপ্রাণ প্রাচীনদের বোঝায় না যারা আমাদের ভালর জন্য নিজেদেরকে নিঃস্বার্থভাবে বিলিয়ে দেন? এই প্রিয় ভাইয়েরা যে গুরু দায়িত্ব বয়ে চলেন তার কথা শুধু একবার ভেবে দেখুন।
১৫ এদের বেশিরভাগই বিবাহিত, ফলে তাদের পরিবারের ভরণপোষণের জন্য চাকরি করতেই হয়। (১ তীমথিয় ৫:৮) যদি কোন প্রাচীনের ছেলেমেয়ে থাকে, তবে সেই বাবাকে তার ছেলেমেয়েদেরও সময় ও মনোযোগ দিতে হয়। তাকে হয়তো তাদের স্কুলের পড়াশোনা দেখিয়ে দিতে হতে পারে সেইসঙ্গে তাদেরকে আনন্দ দেওয়ার জন্য কিছুসময় আমোদপ্রমোদের পিছনেও কাটাতে হয়। (উপদেশক ৩:১, ৪) সবচেয়ে জরুরি বিষয় হল যে তিনি তার পরিবারের আধ্যাত্মিক চাহিদাও পূরণ করেন, ঘরে পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত বাইবেল অধ্যয়ন করেন, তাদের সঙ্গে প্রচারে যান এবং তাদেরকে খ্রীষ্টীয় সভাগুলোতেও নিয়ে যান। (দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৪-৭; ইফিষীয় ৬:৪) তাই আমরা যেন ভুলে না যাই যে আমাদের মতো এই দায়িত্বগুলো ছাড়াও প্রাচীনদের আরও কিছু অতিরিক্ত দায়িত্ব রয়েছে: সভার বক্তৃতার জন্য তৈরি হওয়া, পালকের কাজ করার জন্য মণ্ডলীর সদস্যদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করা, মণ্ডলীর আধ্যাত্মিক মঙ্গলের কথা চিন্তা করা এবং দরকার হলে বিচারসংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখাশোনা করা। কয়েকজন আবার সীমা অধিবেশন, জেলা সম্মেলন, কিংডম হল নির্মাণ এবং হসপিটাল লায়েসন কমিটির সঙ্গে যুক্ত অতিরিক্ত দায়িত্বগুলো পালন করেন। সত্যিই এই ভাইয়েরা “পরিশ্রম করেন”!
১৬. কোন্ কোন্ উপায়ে আমরা প্রাচীনদের প্রতি সমাদর দেখাতে পারি তা বর্ণনা করুন।
১৬ আমরা কীভাবে তাদের সমাদর দেখাতে পারি? বাইবেলের একটা প্রবাদ বলে: “যথাকালে কথিত বাক্য কেমন উত্তম।” (হিতোপদেশ ১৫:২৩; ২৫:১১) তাদের কৃতজ্ঞতা দেখিয়ে ও উৎসাহমূলক কথা বলে আমরা তাদের দেখাতে পারি যে আমরা তাদের কাজকে হালকা করে দেখি না। এছাড়াও, তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত আশা করাও আমাদের উচিত নয়। আবার সাহায্যের জন্য তাদের কাছে যেতে আমাদের কোনরকম দ্বিধা করাও উচিত নয়। কখনও কখনও ‘আমাদের অন্তরে চিত্ত বড়ই ব্যথিত হয়’ আর তখন আমাদের ঈশ্বরের বাক্য “শিক্ষাদানে নিপুণ” ব্যক্তিদের কাছ থেকে শাস্ত্রীয় উৎসাহ, নির্দেশনা বা পরামর্শ দরকার। (গীতসংহিতা ৫৫:৪; ১ তীমথিয় ৩:২) একই সময়ে, আমাদের বোঝা দরকার যে একজন প্রাচীন শুধু আমাদের জন্যই অনেক সময় দেবেন তা আশা করা ঠিক নয় কারণ তার নিজের পরিবার রয়েছে বা মণ্ডলীর অন্যান্য সদস্য রয়েছেন যাদেরকে তিনি অবহেলা করতে পারেন না। এই কঠোর পরিশ্রমী ভাইদের জন্য “সহানুভূতি” থাকলে আমরা তাদের কাছ থেকে অযৌক্তিক কিছু চাইব না। (১ পিতর ৩:৮, NW) তার চেয়ে বরং আসুন আমাদের জন্য তারা যতটুকু সময় এবং মনোযোগ দিতে পারেন তার জন্যই আমরা কৃতজ্ঞ থাকি।—ফিলিপীয় ৪:৫.
১৭, ১৮. যাদের স্বামীরা প্রাচীন সেইসব স্ত্রীরা কোন্ ত্যাগস্বীকারগুলো করে থাকেন এবং কীভাবে আমরা দেখাতে পারি যে আমরা এই বিশ্বস্ত বোনদের ত্যাগস্বীকারকে হালকা করে দেখি না?
১৭ প্রাচীনদের স্ত্রীদের বিষয়ে কী বলা যায়? তারাও কি আমাদের সমাদরের যোগ্য নন? কারণ তারাও মণ্ডলীর কাজে তাদের স্বামীদের সঙ্গে অংশ নেন। এরজন্য তাদের প্রায়ই ত্যাগস্বীকার করতে হয়। কখনও কখনও, প্রাচীনদের মণ্ডলীর কাজে সারা বিকাল, সন্ধ্যা কেটে যায় যা হয়ত তারা তাদের পরিবারের সঙ্গে কাটাতে পারতেন। অনেক মণ্ডলীতে বিশ্বস্ত খ্রীষ্টান নারীরা স্বেচ্ছায় এইরকমের ত্যাগস্বীকার করেন যাতে তাদের স্বামীরা যিহোবার মেষদের দেখাশোনা করতে পারেন।—২ করিন্থীয় ১২:১৫ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।
১৮ আমরা কীভাবে দেখাতে পারি যে আমরা এই বিশ্বস্ত খ্রীষ্টান বোনেদের অবহেলার চোখে দেখি না? অবশ্যই তাদের স্বামীদের কাছ থেকে অযৌক্তিক কিছু দাবি না করে। আর সেইসঙ্গে আসুন কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সামান্য ভাষার যে শক্তি তার কথাও যেন আমরা ভুলে না যাই। হিতোপদেশ ১৬:২৪ পদ বলে: “মনোহর বাক্য মৌচাকের ন্যায়; তাহা প্রাণের পক্ষে মধুর, অস্থির পক্ষে স্বাস্থ্যকর।” একটা অভিজ্ঞতা দেখুন। একদিন সভার পর, এক বিবাহিত দম্পতি একজন প্রাচীনের কাছে গিয়ে তাদের কিশোর বয়সী ছেলের সঙ্গে কথা বলার জন্য অনুরোধ জানান। প্রাচীন যখন সেই দম্পতির সঙ্গে কথা বলছিলেন, তার স্ত্রী ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করেন। পরে, সেই মা প্রাচীনের স্ত্রীর কাছে গিয়ে বলেন: “আমার পরিবারকে সাহায্য করার জন্য আপনার স্বামী যে সময় দিয়েছেন তার জন্য আমি আপনাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।” কৃতজ্ঞতা প্রকাশের এই সামান্য অথচ মিষ্টি কথাগুলো নিশ্চয়ই ওই প্রাচীনের স্ত্রীর মনকে ছুঁয়ে গিয়েছিল।
১৯. (ক) প্রাচীনেরা দলগতভাবে বিশ্বস্ততার সঙ্গে কোন্ উদ্দেশ্যগুলো পূর্ণ করছেন? (খ) আমাদের সবার কী করার জন্য স্থির করা উচিত?
১৯ মেষদের দেখাশোনা করার জন্য প্রাচীনদের ব্যবস্থা যিহোবার ‘উত্তম দানের’ মধ্যে একটা। (যাকোব ১:১৭) না, এই ব্যক্তিরা সিদ্ধ নন; আমাদের সবার মতো তারাও ভুল করেন। (১ রাজাবলি ৮:৪৬) কিন্তু সারা পৃথিবীর মণ্ডলীগুলোতে প্রাচীনেরা দলগতভাবে বিশ্বস্তার সঙ্গে সেই উদ্দেশ্যগুলো পূর্ণ করছেন যা যিহোবা চান যে তারা করুন—যেমন, পুনর্বিন্যাস করা, গেঁথে তোলা, একতাবদ্ধ করা এবং পালকে রক্ষা করা। প্রত্যেক প্রাচীন যেন যিহোবার মেষকে কোমলভাবে যত্ন নেওয়ার জন্য স্থিরসংকল্প হন আর তা করে তিনি নিজে ভাইদের জন্য দান বা আশীর্বাদের বিষয় হয়ে ওঠেন। আর আসুন আমরা সবাই স্থির করি যে ‘মনুষ্যদিগের নানা বরদের’ বাধ্য এবং বশীভূত হয়ে আর তাদের কঠোর পরিশ্রমের জন্য সমাদর দেখিয়ে আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখাব। আমরা কতই না কৃতজ্ঞ হতে পারি যে যিহোবা প্রেমের সঙ্গে সেইসব ব্যক্তিদের যুগিয়েছেন যারা সত্যিই তাঁর মেষদের বলেন: ‘ঈশ্বরকে আনন্দিত মনে সেবা করার জন্য আপনাদের সাহায্য করাই আমাদের কাজ’!
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
◻ কেন মণ্ডলীকে একটা দেহের সঙ্গে তুলনা করা ঠিক?
◻ কীভাবে প্রাচীনেরা তাদের ভাইদের আনন্দিত মনে যিহোবাকে সেবা করার জন্য সাহায্য করতে পারেন?
◻ যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন কেন আমরা শুধু তাদের বাধ্যই হব না কিন্তু বশীভূতও হব?
◻ কোন্ কোন্ উপায়ে আমরা প্রাচীনদের সমাদর দেখাতে পারি?
[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
প্রাচীনেরা, অন্যদের আন্তরিক প্রচেষ্টার জন্য প্রশংসা করুন
[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
প্রাচীনেরা প্রচারে নিজেদের উদ্যোগী উদাহরণের দ্বারা পরিবারের সদস্য এবং অন্যদের আনন্দিত মনে সেবা করার জন্য সাহায্য করতে পারেন
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
আমরা আমাদের কঠোর পরিশ্রমী প্রাচীনদের প্রতি কৃতজ্ঞ!