-
ঈশ্বরের জ্ঞানের বিরুদ্ধে ওঠা প্রতিটা যুক্তি খণ্ডন করুন!প্রহরীদুর্গ (অধ্যয়ন)—২০১৯ | জুন
-
-
“আপন আপন মনের ভাবে . . . নবীনীকৃত হও”
৭. কীভাবে আমরা নিজেদের ভিতরের ব্যক্তিত্বকে পরিবর্তন করতে পারি?
৭ আমাদের পক্ষে কি নিজেদের ভিতরের ব্যক্তিত্বকে পরিবর্তন করা সম্ভব? ঈশ্বরের বাক্য উত্তর দেয়: তোমরা “আপন আপন মনের ভাবে যেন ক্রমশঃ নবীনীকৃত হও, এবং সেই নূতন মনুষ্যকে” বা ব্যক্তিত্বকে “পরিধান কর, যাহা সত্যের ধার্ম্মিকতায় ও সাধুতায় ঈশ্বরের সাদৃশ্যে সৃষ্ট হইয়াছে।” (ইফি. ৪:২৩, ২৪) হ্যাঁ, আমাদের ভিতরের ব্যক্তিত্বকে পরিবর্তন করা সম্ভব। তবে এমনটা করা সহজ নয়। আমাদের কেবল মন্দ আকাঙ্ক্ষা প্রতিরোধ করা এবং মন্দ কাজ করা বন্ধ করার চেয়ে আরও বেশি কিছু করতে হবে। আমাদের ‘মনের ভাবকে’ পরিবর্তন করতে হবে। এর অন্তর্ভুক্ত হল আমাদের আকাঙ্ক্ষা, আমাদের চিন্তাভাবনা ও আমাদের মনোভাবকে পরিবর্তন করা। আর এর জন্য ক্রমাগত প্রচেষ্টার প্রয়োজন রয়েছে।
৮-৯. কীভাবে একজন ভাইয়ের উদাহরণ আমাদের ভিতরের ব্যক্তিত্বকে পরিবর্তন করার প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরে?
৮ আসুন, আমরা একজন ভাইয়ের উদাহরণ বিবেচনা করি, যিনি অতীতে একজন দৌরাত্ম্যপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন। তিনি মদ খাওয়া ও মারামারি করা বন্ধ করে দেওয়ার পর বাপ্তিস্ম নেওয়ার জন্য যোগ্য হয়ে ওঠেন। এটা তার এলাকার লোকেদের কাছে এক উত্তম সাক্ষ্য বহন করে। কিন্তু, বাপ্তিস্মের অল্প কিছু দিন পরই একটা সন্ধ্যায় তিনি অপ্রত্যাশিত এক পরীক্ষার মুখোমুখি হন। একজন মাতাল তার বাড়িতে আসেন এবং মারামারি করার জন্য তাকে চ্যালেঞ্জ করেন। শুরুতে ভাই নিজের মারামারি করার আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিরোধ করেন। কিন্তু, পরিশেষে সেই ব্যক্তি যখন যিহোবার নামে খারাপ কথা বলেন, তখন ভাইয়ের ধৈর্যের বাঁধ ছাড়িয়ে যায়। তিনি বাইরে যান এবং সেই ব্যক্তিকে বেধড়ক মারেন। সমস্যাটা কোথায় ছিল? যদিও বাইবেল অধ্যয়ন তাকে মারামারি করার আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিরোধ করতে সাহায্য করেছিল কিন্তু তিনি তখনও নিজের মনের ভাব পরিবর্তন করতে পারেননি। অন্যভাবে বললে, তিনি তখনও তার ভিতরের ব্যক্তিত্বকে পরিবর্তন করতে পারেননি।
৯ তবে, এই ভাই পরিবর্তিত হওয়া বন্ধ করে দেননি। (হিতো. ২৪:১৬) প্রাচীনদের সাহায্যে তিনি ক্রমাগত উন্নতি করে চলেন। একসময়ে তিনি প্রাচীন হিসেবে সেবা করার যোগ্য হয়ে ওঠেন। তারপর, এক সন্ধ্যায় কিংডম হলের বাইরে তিনি প্রায় একই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হন, যেটার মুখোমুখি তিনি কয়েক বছর আগে হয়েছিলেন। একজন মাতাল অন্য একজন প্রাচীনকে প্রায় মারতে যাচ্ছিলেন। আমাদের সেই ভাই কী করেন? তিনি শান্ত ও নম্রভাবে সেই মাতালের সঙ্গে কথা বলেন, তাকে শান্ত হতে সাহায্য করেন আর এমনকী তাকে বাড়ি পৌঁছাতে সাহায্য করেন। কেন আমাদের ভাই এই বারে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখান? আমাদের ভাই নিজের মনের ভাব পরিবর্তন করেছেন। তিনি সত্যিই একজন শান্তিপূর্ণ ও নম্র ব্যক্তি হয়ে ওঠেন। আর এটা যিহোবার প্রশংসা নিয়ে আসে!
১০. আমাদের ভিতরের ব্যক্তিত্বকে পরিবর্তন করার জন্য আমাদের অবশ্যই কী করতে হবে?
১০ এই পরিবর্তনগুলো রাতারাতি হয় না অথবা আপনা-আপনি হয় না। আমাদের হয়তো অনেক বছর ধরে কঠোর প্রচেষ্টা করতে হয়। (২ পিতর ১:৫) এই পরিবর্তনগুলো দীর্ঘ সময় ধরে যিহোবার সেবা করলেই ঘটে না। আমাদের ভিতরের ব্যক্তিত্বকে পরিবর্তন করার জন্য আমাদের যথাসাধ্য করতে হবে। বেশ কয়েকটা প্রাথমিক পদক্ষেপ নেওয়া আমাদের এই পরিবর্তন করার জন্য সাহায্য করবে। আসুন, আমরা সেগুলোর কয়েকটা নিয়ে পরীক্ষা করি।
যেভাবে আমাদের মনের ভাব পরিবর্তন করা যায়
১১. কীভাবে প্রার্থনা আমাদের মনের ভাব পরিবর্তন করতে সাহায্য করে?
১১ প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হল প্রার্থনা করা। আমাদের গীতরচকের মতো প্রার্থনা করতে হবে: “হে ঈশ্বর, আমাতে বিশুদ্ধ অন্তঃকরণ সৃষ্টি কর, আমার অন্তরে সুস্থির আত্মাকে নূতন করিয়া দেও।” (গীত. ৫১:১০) আমাদের যে মনের ভাব পরিবর্তন করার প্রয়োজন রয়েছে, আমাদের অবশ্যই সেটা স্বীকার করতে হবে এবং যিহোবার কাছে সাহায্য চাইতে হবে। কীভাবে আমরা নিশ্চিত হতে পারি, যিহোবা আমাদের পরিবর্তন করতে সাহায্য করবেন? যিহিষ্কেলের দিনে যিহোবা কঠিন হৃদয়ের ইস্রায়েলীয়দের প্রতি যা করার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, সেখান থেকে আমরা উৎসাহ পেতে পারি: “আমি তাহাদিগকে একই হৃদয় দান করিব, ও তোমাদের অন্তরে এক নূতন আত্মা স্থাপন করিব; আর . . . তাহাদিগকে মাংসময় হৃদয় দিব,” যে-হৃদয় ঈশ্বরের নির্দেশনা অনুসরণ করতে ইচ্ছুক হবে। (যিহি. ১১:১৯) যিহোবা সেই ইস্রায়েলীয়দের পরিবর্তন করার জন্য সাহায্য করতে ইচ্ছুক ছিলেন এবং তিনি আমাদেরও সাহায্য করতে ইচ্ছুক।
১২-১৩. (ক) গীতসংহিতা ১১৯:৫৯ পদ অনুযায়ী কী নিয়ে আমাদের ধ্যান করতে হবে? (খ) আপনার নিজেকে কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা উচিত?
১২ দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হল ধ্যান করা। আমরা যখন প্রতিদিন সতর্কতার সঙ্গে ঈশ্বরের বাক্য পড়ি, তখন আমাদের ধ্যান করার জন্য অর্থাৎ গভীরভাবে চিন্তা করার জন্য সময় করে নিতে হবে, যাতে আমরা সেই চিন্তাভাবনা ও অনুভূতিগুলো শনাক্ত করতে পারি, যেগুলো আমাদের পরিবর্তন করতে হবে। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১১৯:৫৯; ইব্রীয় ৪:১২; যাকোব ১:২৫) আমাদের অবশ্যই জগতের ধারণার দ্বারা প্রভাবিত হওয়া যেকোনো চিন্তাভাবনা ও অনুভূতিকে শনাক্ত করতে হবে। আমাদের সততার সঙ্গে নিজেদের দুর্বলতাগুলো স্বীকার করতে হবে আর তারপর সেই দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করতে হবে।
১৩ উদাহরণ স্বরূপ, নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘আমার হৃদয়ে কি বিন্দুমাত্র “মাৎসর্য্য” বা হিংসা রয়েছে?’ (১ পিতর ২:১) ‘আমি কি আমার পটভূমি, শিক্ষাগত যোগ্যতা অথবা আর্থিক অবস্থানের কারণে অন্যদের চেয়ে নিজেকে বড়ো বলে মনে করি?’ (হিতো. ১৬:৫) ‘আমি কি সেই ব্যক্তিদের নীচু চোখে দেখি, যাদের আমার মতো সামাজিক পদমর্যাদা নেই অথবা যারা ভিন্ন পটভূমি থেকে এসেছে?’ (যাকোব ২:২-৪) ‘আমি কি শয়তানের জগতের দ্বারা প্রস্তাবিত বিষয়গুলোর প্রতি আকৃষ্ট হই?’ (১ যোহন ২:১৫-১৭) ‘আমি কি অনৈতিক ও দৌরাত্ম্যপূর্ণ আমোদপ্রমোদের প্রতি আকৃষ্ট হই?’ (গীত. ৯৭:১০; ১০১:৩; আমোষ ৫:১৫) আপনি যখন এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবেন, তখন আপনি হয়তো এটা বুঝতে পারবেন যে, কোথায় আপনাকে উন্নতি করতে হবে। আমরা যখন দৃঢ়ভাবে গেঁথে থাকা এই ধরনের চিন্তাভাবনা অথবা অনুভূতি পরিবর্তন করায় সফল হব, তখন আমরা আমাদের স্বর্গীয় পিতাকে খুশি করব।—গীত. ১৯:১৪.
১৪. কেন উত্তম বন্ধুবান্ধব বাছাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ?
১৪ তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হল উত্তম বন্ধুবান্ধব বাছাই করা। আমরা এটা উপলব্ধি করি অথবা না-ই করি, আমরা যাদের সঙ্গে মেলামেশা করি, তাদের দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হই। (হিতো. ১৩:২০) কাজের জায়গায় অথবা স্কুলে আমরা সম্ভবত এমন ব্যক্তিদের মধ্যে থাকি, যারা ঈশ্বরের অনুমোদিত চিন্তাভাবনা গড়ে তোলার জন্য আমাদের উৎসাহিত করবে না। তবে, আমরা আমাদের খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে উত্তম বন্ধুবান্ধব খুঁজে পেতে পারি। সেখানে আমরা “প্রেম ও সৎক্রিয়া” দেখানোর জন্য অনুপ্রাণিত অথবা উৎসাহিত হই।—ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫.
-