যিহোবার প্রেমময় পারিবারিক ব্যবস্থা
“এই জন্য, স্বর্গস্থ ও পৃথিবীস্থ সমস্ত পিতৃকুল যাঁহা হইতে নাম পাইয়াছে, সেই পিতার কাছে আমি জানু পাতিতেছি।”—ইফিষীয় ৩:১৪, ১৫.
১, ২. (ক) কী উদ্দেশ্যে যিহোবা পরিবার সৃষ্টি করেন? (খ) যিহোবার ব্যবস্থায় পরিবারের কী অংশ গ্রহণ করা উচিৎ?
যিহোবা পরিবার সৃষ্টি করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি সাহচর্য্য, সহায়তা, অথবা অন্তরঙ্গতার মত মানুষের চাহিদাকে পরিতৃপ্ত করার থেকেও আরও বেশী কিছু করেন। (আদিপুস্তক ২:১৮) পরিবারের মাধ্যমেই পৃথিবীকে পূর্ণ করার ঈশ্বরের মহিমাময় উদ্দেশ্যটি পরিপূর্ণ হওয়ার ছিল। তিনি প্রথম বিবাহিত দম্পতীকে বলেন: “তোমরা প্রজাবন্ত ও বহুবংশ হও, এবং পৃথিবী পরিপূর্ণ ও বশীভূত কর।” (আদিপুস্তক ১:২৮) আদম ও হবা এবং তাদের বংশধরদের যে বহু সংখ্যক সন্তানসন্ততি জন্মাবে, তাদের জন্য পরিবারে প্রাণবন্ত ও গঠনমূলক পরিবেশ উপকারজনক হবে।
২ কিন্তু প্রথম দম্পতী অবাধ্যতার পথ বেছে নেয়—যা তাদের ও তাদের সন্তানদের জন্য বিনাশকারী প্রতিফল আনে। (রোমীয় ৫:১২) তাই আজকের পারিবারিক জীবন, ঈশ্বর যা চেয়েছিলেন তার এক বিকৃতি। তবুও, খ্রীষ্টীয় সমাজের প্রাথমিক একক হিসাবে কাজ করে, যিহোবার ব্যবস্থায় এখনও পরিবারের এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান আছে। আমাদের মাঝে বহু অবিবাহিত খ্রীষ্টীয়েরা যে উত্তম কাজ করছেন তার প্রতি কোন উপলব্ধি না দেখিয়ে এটি বলা হচ্ছে না। কিন্তু, সমষ্টিগতরূপে খ্রীষ্টীয় সংগঠনের আত্মিক স্বাস্থ্যের জন্য পরিবারও যে বৃহৎ প্রতিদান দেয়, সেটি আমরা উপলব্ধি করি। দৃঢ় পরিবার দৃঢ় মণ্ডলীর সৃষ্টি করে। তাহলে, বর্তমান চাপের সম্মুখীন হয়ে আপনার পরিবার কিরূপে সাফল্যলাভ করতে পারে? এর উত্তর পেতে হলে, পারিবারিক ব্যবস্থা সম্বন্ধে বাইবেল কী বলে আসুন আমরা পরীক্ষা করি।
বাইবেলের কালে পরিবার
৩. কুলপতি পরিবারে স্বামী ও স্ত্রী কী ভূমিকা গ্রহণ করতেন?
৩ আদম ও হবা উভয়েই ঈশ্বরের মস্তক ব্যবস্থার অবজ্ঞাভরে প্রত্যাখ্যান করে। কিন্তু বিশ্বাসের পুরুষগণ, যেমন নোহ, অব্রাহাম, ইসাহাক, যাকোব ও ইয়োব পরিবারের মস্তক হিসাবে ন্যায়সম্মতরূপে তাদের স্থান গ্রহণ করেন। (ইব্রীয় ৭:৪) কুলপতি পরিবার ছিল এক ছোট সরকারের মত, পরিবারের পিতা ধর্ম্মীয় নেতা, নির্দেশক এবং বিচারকের ভূমিকা গ্রহণ করতেন। (আদিপুস্তক ৮:২০; ১৮:১৯) স্ত্রীয়েদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল, দাসরূপে সেবা নয় কিন্তু গৃহস্থালীর সহব্যবস্থাপক হিসাবে কাজ করত।
৪. মোশির নিয়মে কিরূপে পারিবারিক জীবনে পরিবর্তন আসে, কিন্তু পিতামাতারা তখনও কী ভূমিকা গ্রহণ করে চলেন?
৪ সা.শ.পূ. ১৫১৩ সালে ইস্রায়েল যখন জাতিতে পরিণত হয়, তখন পরিবারের নিয়ম মোশির মাধ্যমে দত্ত জাতীয় নিয়মের সাপেক্ষ নিয়ম হয়। (যাত্রাপুস্তক ২৪:৩-৮) আর তখন এমনকি জীবন-মৃত্যু সম্বন্ধীয় বিষয়ও, নিয়োজিত বিচারককে নির্ণয় করার অধিকার দেওয়া হয়। (যাত্রাপুস্তক ১৮:১৩-২৬) লেবীয় যাজকেরা বলিদান বিষয়ক দায়িত্ব গ্রহণ করে। (লেবীয় পুস্তক ১:২-৫) যাইহোক, কিন্তু তবুও পিতা এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেন। মোশি পিতাদের প্রেরণা দেন: “এই যে সকল কথা আমি অদ্য তোমাকে আজ্ঞা করি, তাহা তোমার হৃদয়ে থাকুক। আর তোমরা প্রত্যেকে আপন আপন সন্তানগণকে এ সকল যত্নপূর্ব্বক শিক্ষা দিবে, এবং গৃহে বসিবার কিম্বা পথে চলিবার সময়ে এবং শয়ন কিম্বা গাত্রোত্থান কালে ঐ সমস্তের কথোপকথন করিবে।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৬, ৭) মাতাদেরও যথেষ্ট প্রভাব ছিল। হিতোপদেশ ১:৮ পদ যুবক-যুবতীদের আদেশ দেয়: “বৎস, তুমি তোমার পিতার উপদেশ শুন, তোমার মাতার ব্যবস্থা ছাড়িও না।” হ্যাঁ স্বামীর অধিকারের ব্যবস্থার মধ্যে, ইব্রীয় স্ত্রীয়েরা পরিবারের নিয়ম সৃষ্টি করতে—ও বলবৎ করতে—পারত। এমনকি সে বৃদ্ধা হয়ে গেলেও তার সন্তানদের তাকে সম্মান করতে হত।—হিতোপদেশ ২৩:২২.
৫. পারিবারিক ব্যবস্থায় সন্তানদের স্থান কিভাবে মোশির নিয়ম ব্যাখ্যা করে?
৫ সন্তানদের স্থানও ঈশ্বরের নিয়ম স্পষ্টরূপে ব্যাখ্যা করেছে। দ্বিতীয় বিবরণ ৫:১৬ পদ বলে: “তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে তোমার পিতাকে ও তোমার মাতাকে সমাদর করিও; যেন তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে যে দেশ দেন, সেই দেশে তোমার দীর্ঘ পরমায়ু হয় ও তুমি মঙ্গল প্রাপ্ত হও।” পিতামাতার প্রতি অসম্মান করা মোশির নিয়মে এক সবচেয়ে গুরুতর অপরাধ। (যাত্রাপুস্তক ২১:১৫, ১৭) “যে কেহ আপন পিতাকে কিম্বা মাতাকে শাপ দেয়,” নিয়ম বলে যে, “তাহার প্রাণদন্ড অবশ্য হইবে।” (লেবীয় পুস্তক ২০:৯) পিতামাতার প্রতি বিরোধিতা করা হল ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার সমান।
খ্রীষ্টীয় স্বামীর ভূমিকা
৬, ৭. ইফিষীয় ৫:২৩-২৯ পদের পৌলের বাক্যগুলি, তার প্রথম শতাব্দীর পাঠকদের কাছে বৈপ্লবিক বলে মনে হয়েছিল কেন?
৬ পারিবারিক ব্যবস্থাপনায়, বিশেষ করে স্বামীর ভূমিকার প্রতি খ্রীষ্টধর্ম আলোকপাত করে। খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী ব্যতিরেকে প্রথম শতাব্দীতে, স্ত্রীদের প্রতি স্বামীদের কঠোর ও অত্যাচারী ব্যবহার করা এক সাধারণ ব্যাপার ছিল। স্ত্রীদের প্রাথমিক অধিকারগুলি এবং মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করা হত। দ্যা এক্সপোসিটরস্ বাইবেল বলে: “এক সুশিক্ষিত গ্রীক সন্তান জন্মদানের জন্য স্ত্রীকে গ্রহণ করত। স্ত্রীয়ের প্রাপ্য অধিকার তার যৌন কামনাকে বাধা দিতে পারত না। বিবাহ চুক্তিতে প্রেম বলে কোন বিষয় ছিল না। . . . দাসীর কোন অধিকার ছিল না। তার দেহ মনিবের ইচ্ছানুযায়ী ব্যবহারের অধিকারে ছিল।”
৭ সেই রকম পরিস্থিতিতে পৌল ইফিষীয় ৫:২৩-২৯ পদের বাক্যগুলি লেখেন: “স্বামী স্ত্রীর মস্তক, যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীর মস্তক; তিনি আবার দেহের ত্রাণকর্ত্তা। . . . স্বামীরা, তোমরা আপন আপন স্ত্রীকে সেইরূপ প্রেম কর, যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীকে প্রেম করিলেন, আর তাহার নিমিত্ত আপনাকে প্রদান করিলেন . . . এইরূপে স্বামীরাও আপন আপন স্ত্রীকে আপন আপন দেহ বলিয়া প্রেম করিতে বাধ্য। আপন স্ত্রীকে যে প্রেম করে, সে আপনাকেই প্রেম করে। কেহ ত কখনও নিজ মাংসের প্রতি দ্বেষ করে নাই, বরং সকলে তাহার ভরণ পোষণ ও লালন পালন করে।” এই বাক্যগুলি প্রথম শতাব্দীর পাঠকদের নিকটে বৈপ্লবিক ছিল। দ্যা এক্সপোসিটরস্ বাইবেল বলে: “সেই সময়ের অনৈতিকতার সঙ্গে তুলনা করলে খ্রীষ্টীয় ধর্মে, বিবাহ সম্বন্ধে খ্রীষ্টীয় দৃষ্টিকোণ ছাড়া আর কোন কিছুই এত অভিনব এবং কঠোর রূপে প্রকাশিত হয়নি। . . . [এটি] মানবজাতির জন্য এক নতুন যুগের পত্তন করে।”
৮, ৯. স্ত্রীদের প্রতি কী অপ্রীতিকর মনোভাব পুরুষদের মধ্যে চলিত আছে, এবং খ্রীষ্টীয় পুরুষদের সেইরূপ দৃষ্টিকোণ প্রত্যাখ্যান করা গুরুত্বপূর্ণ কেন?
৮ বর্তমান দিনে স্বামীদের জন্য বাইবেলের পরামর্শ কিছু কম বৈপ্লবিক নয়। নারী স্বাধীনতা সম্পর্কে এত কথাবার্তা হলেও, বহু পুরুষ নারীকে যৌন কামনা চরিতার্থ করার এক উপায় হিসাবে দেখে। স্ত্রীয়েরা তাদের উপরে আসলে কর্তৃত্ব, দমন, বা অত্যাচার করাকে পছন্দ করে, এই অবাস্তব কাহিনীর উপর বিশ্বাস করে বহু স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের উপর শারীরিক ও মানসিকরূপে অত্যাচার করে। একজন খ্রীষ্টীয় পুরুষ জাগতিক চিন্তাধারার মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে স্ত্রীয়ের সাথে অপব্যবহার করলে তা কতই না লজ্জাজনক হবে! “আমার স্বামী এক পরিচারক দাস ছিলেন এবং জনসাধারন্যে বক্তৃতা দিতেন,” এক খ্রীষ্টীয় স্ত্রী বলেন। তবুও তিনি প্রকাশ করেন, “আমি স্ত্রী-প্রহারের শিকার ছিলাম।” স্পষ্টত সেই প্রকৃতির ব্যবহার ঈশ্বরের ব্যবস্থার বাইরে। এই ব্যক্তিটি ছিল এক দুর্লভ ব্যতিক্রম; সে যদি ঈশ্বরের অনুমোদন পেতে চায় তাহলে তার ক্রোধকে দমন করতে তার সাহায্যের প্রয়োজন।—গালাতীয় ৫:১৯-২১.
৯ স্বামীরা ঈশ্বরের দ্বারা আজ্ঞাপ্রাপ্ত হয়েছে যে, তাদের নিজেদের দেহের মত স্ত্রীদের প্রেম করতে হবে। তা করা প্রত্যাখ্যান করা হবে ঈশ্বরের ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা এবং তা ঈশ্বরের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষতি সাধন করতে পারে। প্রেরিত পিতরের বাক্যগুলি স্পষ্ট: “হে স্বামিগণ, স্ত্রীলোক অপেক্ষাকৃত দুর্ব্বল পাত্র বলিয়া তাহাদের সহিত জ্ঞানপূর্ব্বক বাস কর, . . . যেন তোমাদের প্রার্থনা রুদ্ধ না হয়।” (১ পিতর ৩:৭) স্বামী তার স্ত্রীয়ের সাথে কঠোর ব্যবহার করলে স্ত্রীয়ের আত্মিকতা এবং সন্তানদের আত্মিকতার উপর বিনাশরূপ প্রভাব পড়ে।
১০ কোন উপায়গুলিতে স্বামীরা খ্রীষ্টরূপ মস্তকের ব্যবহার করতে পারেন?
১০ স্বামীগণ, আপনারা যদি খ্রীষ্টরূপ রীতিতে আপনার মস্তকের ব্যবহার করেন তাহলে আপনার পরিবার সমৃদ্ধিলাভ করবে। খ্রীষ্ট কখনই কঠোর বা অপব্যবহারকারী ছিলেন না। বিপরীতে তিনি বলতে পেরেছিলেন: “আমার কাছে শিক্ষা কর, কেননা আমি মৃদুশীল ও নম্রচিত্ত; তাহাতে তোমরা আপন আপন প্রাণের বিশ্রাম পাইবে।” (মথি ১১:২৯) আপনার সম্বন্ধে কি আপনার পরিবার সেইরকম বলতে পারে? খ্রীষ্ট শিষ্যদের সাথে বন্ধুর মত ব্যবহার করেন এবং তাদের প্রতি বিশ্বাস রাখেন। (যোহন ১৫:১৫) আপনি কি আপনার স্ত্রীকে সেইরূপ মর্যাদা দেন? “গুণবতী ভার্য্যা” সম্বন্ধে বাইবেল বলে: “তাঁহার স্বামীর হৃদয় তাঁহাতে নির্ভর করে।” (হিতোপদেশ ৩১:১০, ১১) এর অর্থ হল তাকে কিছুটা স্বাধীনতা ও অধিকার দেওয়া, তাকে অযৌক্তিক বাধ্যবাধকতার মধ্যে বদ্ধ করা নয়। তাছাড়া, অনুভূতি ও অভিমত প্রকাশ করতে যীশু তাঁর শিষ্যদের উৎসাহ দেন। (মথি ৯:২৮; ১৬:১৩-১৫) আপনি কি আপনার স্ত্রীয়ের সঙ্গে সেইরূপ ব্যবহার করেন? অথবা আন্তরিকতার সাথে মতভেদ প্রকাশ করাকে, আপনি আপনার অধিকারকে চ্যালেঞ্জ করা বলে মনে করেন? আপনার স্ত্রীয়ের অনুভূতিগুলি তুচ্ছ না করে, বরং সেইগুলির প্রতি মনোযোগ দিয়ে আপনি আসলে আপনার মস্তকের অধিকারের প্রতি তার সম্মান বৃদ্ধি করেন।
১১. (ক) পিতারা কিরূপে তাদের সন্তানদের আত্মিক প্রয়োজনীয়তার প্রতি যত্ন নেন? (খ) প্রাচীনদের ও পরিচারক দাসদের পরিবারের যত্ন নিতে উত্তম উদাহরণ স্থাপন করা কেন জরুরী?
১১ আপনি যদি পিতা হন, তাহলে সন্তানদের আত্মিক, মানসিক, এবং শারীরিকরূপে যত্ন নিতে আপনার নেতৃত্ব নেওয়া দরকার। এর অর্থ হল পরিবারে একটি উত্তম আত্মিক কার্যক্রম বজায় রাখা: ক্ষেত্রের পরিচর্য্যায় পরিবারের সঙ্গে কাজ করা, গৃহ বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করা, দৈনিক শাস্ত্র পাঠ আলোচনা করা। আগ্রহজনকরূপে, বাইবেল প্রদর্শন করে যে এক প্রাচীন অথবা পরিচারক দাসকে এমন হতে হবে যে “আপন ঘরের শাসন উত্তমরূপে করে।” পুরুষেরা যারা এই পদাধিকারে সেবা করছেন তাদের উদাহরণযোগ্য পরিবারের মস্তক হওয়া দরকার। তাদের যদিও মণ্ডলীর গুরু দায়িত্বভার থাকে, কিন্তু তাদের নিজেদের পরিবারকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিৎ। পৌল তার কারণ দেখান: “যদি কেহ ঘর শাসন করিতে না জানে, সে কেমন করিয়া ঈশ্বরের মণ্ডলীর শাসন করিবে?”—১ তীমথিয় ৩:৪, ৫, ১২.
সহযোগীতাকারী খ্রীষ্টীয় স্ত্রীগণ
১২. খ্রীষ্টীয় ব্যবস্থায় স্ত্রী কোন্ ভূমিকা পালন করেন?
১২ আপনি কি এক খ্রীষ্টীয় স্ত্রী? তাহলে পারিবারিক ব্যবস্থায় আপনাকেও এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিতে হবে। খ্রীষ্টীয় স্ত্রীদের প্রেরণা দেওয়া হয়েছে তারা যেন “পতিপ্রিয়া, সন্তানপ্রিয়া, সংযতা, সতী, গৃহকার্য্যে ব্যাপৃতা, সুশীলা, ও আপন স্বামীর বশীভূতা হয়।” (তীত ২:৪, ৫) আপনার পরিবারের জন্য একটি পরিষ্কার ও মনোরম গৃহ বজায় রেখে আপনি এক উদাহরণযোগ্য গৃহিণী হওয়ার প্রচেষ্টা করতে পারেন। গৃহস্থালীর কাজ অনেক সময় ক্লান্তিকর হতে পারে, কিন্তু তা কখনও হীন বা নগণ্য নয়। স্ত্রীরূপে আপনি “গৃহে কর্ত্তৃত্ব” করেন এবং আপনি হয়ত এই ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় স্বাধীনতাটি উপভোগ করেন। (১ তীমথিয় ৫:১৪) উদাহরণস্বরূপ, “গুণবতী ভার্য্যা” গৃহস্থালীর বস্তু সকল কেনে, জমি বেচাকেনার লেনদেন করে এবং এমনকি ছোট ব্যবসা চালিয়ে পরিবারের আয় বৃদ্ধি করে। তাই কোন আশ্চর্য্যের বিষয় নয় যে কেন সে তার স্বামীর প্রশংসা পায়! (হিতোপদেশ, ৩১ অধ্যায়) স্বাভাবিক, তার মস্তকরূপে স্বামী যে নির্দেশগুলি দিয়ে থাকেন তার উপর নির্ভর করে সেই আগ্রহগুলি গ্রহণ করা হয়।
১৩. (ক) কিছু স্ত্রীয়ের কাছে বশীভূত হওয়া কেন অসুবিধাজনক? (খ) খ্রীষ্টীয় স্ত্রীদের স্বামীদের প্রতি বশীভূত হওয়া কেন লাভজনক?
১৩ কিন্তু অনেক সময় স্বামীর প্রতি বশীভূত হওয়া খুব একটা সহজ হয় না। সকল পুরুষ যে সম্মান পাওয়ার যোগ্য এবং পায় তা নয়। আর্থিক ব্যাপারে লেনদেন করতে, পরিকল্পনা অথবা সংগঠন করতে আপনি হয়ত ভালই দক্ষ হতে পারেন। আপনার হয়ত চাকরী আছে এবং আপনি পরিবারের আয়ে বেশ কিছুটা অংশ দিয়ে থাকেন। অথবা আপনি হয়ত পূর্বে কোন উপায়ে পুরুষের কর্তৃত্বের অধীনে কষ্ট পেয়েছেন এবং এখন পুরুষের বশীভূত হতে আপনার অসুবিধা হচ্ছে। কিন্তু যাইহোক, স্বামীর প্রতি আপনার “গভীর সম্মান” অথবা “ভয়” প্রদর্শন করা হল, ঈশ্বরের মস্তকের অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। (ইফিষীয় ৫:৩৩, কিংডম ইন্টারলিনিয়ার; ১ করিন্থীয় ১১:৩) আপনার পরিবারের সফলতার জন্য বশ্যতা স্বীকার গুরুত্বপূর্ণ; তা আপনার বিবাহকে অযথা চাপ ও দুঃখকষ্টের মধ্যে জর্জরিত হওয়া এড়াতে সাহায্য করতে পারে।
১৪. স্বামীর কোন সিদ্ধান্তে স্ত্রীয়ের অমত থাকলে তখন সে কী করতে পারে?
১৪ এর অর্থ কী এই যে, যখন আপনি দেখেন যে আপনার স্বামী যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে তা পরিবারের মঙ্গলের বিপরীত হতে পারে, তখন কি আপনি নির্বাক থাকবেন? অবশ্য না। অব্রাহামের স্ত্রী সারা চুপ করে থাকেননি যখন তিনি তার পুত্র ইসাহাকের অমঙ্গলের আশঙ্কা উপলব্ধি করেন। (আদিপুস্তক ২১:৮-১০) অনুরূপে, আপনিও সময়ে সময়ে আপনার মনোভাব প্রকাশ করতে বাধ্য বলে মনে করতে পারেন। যদি তা সম্মানের সাথে “উপযুক্ত সময় কথিত” হয় তাহলে ঈশ্বরনিষ্ঠ খ্রীষ্টীয় ব্যক্তি শুনবেন। (হিতোপদেশ ২৫:১১) কিন্তু আপনার প্রস্তাব যদি না শোনা হয় এবং কোন বাইবেল নীতিকে গুরুতররূপে অমান্য না করা হয়, তখন আপনার স্বামীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাওয়াটা কী আত্মপরাজয় নয়? স্মরণে রাখুন, “স্ত্রীলোকদের বিজ্ঞতা তাহাদের গৃহ গাঁথে; কিন্তু অজ্ঞানতা স্বহস্তে তাহা ভাঙ্গিয়া ফেলে।” (হিতোপদেশ ১৪:১) গৃহ গঠন করার একটি উপায় হল আপনার স্বামীর মস্তকের অধিকারের সাথে সহযোগিতা করা, তার সফলতায় প্রশংসা করে তার ভুল ত্রুটিগুলির জন্য বিচলিত না হওয়া।
১৫. সন্তানদের শাসন ও শিক্ষা দিতে এক স্ত্রী কিভাবে অংশ নিতে পারে?
১৫ গৃহ গঠন করার অপর একটি উপায় হল সন্তানদের শাসন ও শিক্ষাতে অংশ গ্রহণ করা। যেমন, পরিবারে বাইবেল অধ্যয়নকে নিয়মিত ও গঠনমূলক করার জন্য আপনার অংশটি আপনি করতে পারেন। সুযোগ পেলেই সন্তানদের কাছে ঈশ্বরের সত্যটি প্রদান করার ক্ষেত্রে আপনার “হস্ত নিবৃত্ত” হতে দেবেন না—যখন আপনি তাদের সাথে ভ্রমণ করেন বা শুধু বাজার করতে যান। (উপদেশক ১১:৬) সভাতে তাদের মন্তব্য এবং ঐশিক পরিচর্য্যা বিদ্যালয়েতে তাদের অংশগুলি প্রস্তুত করতে সাহায্য করুন। তাদের সঙ্গীসাথী সম্পর্কে লক্ষ্য রাখুন। (১ করিন্থীয় ১৫:৩৩) ঈশ্বরীয় মান ও শাসনের ক্ষেত্রে, সন্তানদের জানিয়ে দিন যে আপনি ও আপনার স্বামী এই ব্যাপারে একত্র। স্বামীর ও আপনার মাঝে সঙ্ঘর্ষ এনে সন্তানদের নিজেদের ইচ্ছা চরিতার্থ করতে অনুমতি দেবেন না।
১৬. (ক) একক অভিভাবক ও যারা অবিশ্বাসীর সঙ্গে বিবাহিত তাদের উৎসাহিত করতে কোন্ বাইবেলের উদাহরণ আছে? (খ) সেই প্রকৃতির ব্যক্তিদের জন্য মণ্ডলীতে অন্যেরা কিভাবে সহায়ক হতে পারে?
১৬ আপনি যদি একক অভিভাবক হন বা আপনার অবিশ্বাসী সাথী থাকে, তাহলে আপনাকেই আত্মিকতা সম্পর্কীয় বিষয়ে নেতৃত্ব নিতে হবে। তা হয়ত কঠিন এবং অনেক সময় নিরুৎসাহজনকও হতে পারে। কিন্তু হাল ছেড়ে দেবেন না। তীমথিয়ের মা উনীকী, অবিশ্বাসী ব্যক্তির সঙ্গে বিবাহিত হলেও, তাকে “শিশুকাল” থেকে পবিত্র শাস্ত্র শিক্ষা দিতে সফল হয়েছিলেন। (২ তীমথিয় ১:৫; ৩:১৫) এবং অনেকেই আমাদের মাঝেও অনুরূপ সফলতা উপভোগ করছেন। যদি এই ক্ষেত্রে আপনার কোন সহায়তার দরকার হয় তাহলে সে বিষয় আপনি প্রাচীনদের জানাতে পারেন। সভাগুলিতে আসতে এবং ক্ষেত্রের পরিচর্য্যায় বের হওয়ার জন্য আপনাকে সাহায্য করতে তারা হয়ত কারুকে ব্যবস্থা করতে পারে। আমোদপ্রমোদের জন্য বাইরে যাওয়ার সময় বা সম্মিলিত হওয়ার সময় আপনার পরিবারকেও যোগ করার জন্য তারা হয়ত অপরকে উৎসাহ দিতে পারে। অথবা একটি পারিবারিক অধ্যয়ন আরম্ভ করার জন্য একজন অভিজ্ঞ প্রকাশককে আপনাকে সাহায্য করার জন্য বলতে পারেন।
উপলব্ধিমূলক সন্তানেরা
১৭. (ক) পারিবারিক মঙ্গলসাধনের জন্য যুবক-যুবতীরা কিভাবে সাহায্য করতে পারে? (খ) এই ক্ষেত্রে যীশু কী উদাহরণ স্থাপন করেন?
১৭ খ্রীষ্টীয় যুবক-যুবতীরা পরিবারের মঙ্গলসাধনে অবদান করতে পারে ইফিষীয় ৬:১-৩ পদের পরামর্শ অনুসরণ করে: “সন্তানেরা তোমরা প্রভুতে পিতামাতার আজ্ঞাবহ হও, কেননা তাহা ন্যায্য। “তোমার পিতাকে ও তোমার মাতাকে সমাদর করিও,”—এ ত প্রতিজ্ঞাসহযুক্ত প্রথম আজ্ঞা—‘যেন তোমার মঙ্গল হয়, এবং তুমি দেশে দীর্ঘায়ু হও।’” তোমাদের পিতামাতাদের সঙ্গে সহযোগিতা করে তোমরা যিহোবার প্রতি সম্মান প্রদর্শন কর। যীশু খ্রীষ্ট সিদ্ধ ছিলেন, এবং সহজেই এই যুক্তি করতে পারতেন যে তাঁর অসিদ্ধ পিতামাতার বশীভূত হওয়া তার মর্যাদার বাইরে। কিন্তু, তিনি “তাহাদের বশীভূত থাকিলেন। . . . যীশু জ্ঞানে ও বয়সে এবং ঈশ্বরের ও মনুষ্যের নিকটে অনুগ্রহে বৃদ্ধি পাইতে থাকিলেন।”—লূক ২:৫১, ৫২.
১৮, ১৯. (ক) পিতামাতাকে সমাদর করার অর্থ কী? (খ) কিভাবে গৃহ তৃপ্তির আবাস হতে পারে?
১৮ তোমরাও কি তোমাদের পিতামাতাদের অনুরূপ সমাদর করবে না? এখানে “সমাদর” শব্দটির অর্থ হল উপযুক্তরূপে নিয়োজিত অধিকারকে স্বীকার করা। (তুলনা করুন ১ পিতর ২:১৭.) যদি কোন অভিভাবক অবিশ্বাসী থাকে অথবা উত্তম উদাহরণ স্থাপন করতে অযোগ্য হয়, তবুও বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এইরূপ সমাদর প্রদর্শন যথাযথ। যদি তোমাদের পিতামাতারা উদাহরণযোগ্য খ্রীষ্টীয় হন তাহলে তোমাদের আরও অধিক সমাদর করা দরকার। স্মরণে রাখ, তোমাদের পিতামাতারা যে শাসন এবং নির্দেশ দেয় তা তোমাদের অন্যায়রূপে বদ্ধ করে রাখার উদ্দেশ্যে নয়। বরং সেগুলি তোমাদের রক্ষা করার জন্য যাতে তোমরা “জীবন” পাও।—হিতোপদেশ ৭:১, ২.
১৯ সেইজন্য, পরিবার কতই না প্রেমপূর্ণ ব্যবস্থা! পারিবারিক জীবনে স্বামী, স্ত্রী এবং সন্তানেরা সকলে যখন ঈশ্বরের নিয়ম পালন করে, গৃহ হয় তখন এক আশ্রয়স্থল, এক তৃপ্তির স্থান। তাহলেও সন্তানদের সাথে ভাববিনিময় ও শিক্ষা দেওয়া সম্পর্কে সমস্যা আসতে পারে। কিভাবে এই সমস্যাগুলির কিছু কিছুর সমাধান করা যায় তা আমাদের পরবর্তী প্রবন্ধে আলোচিত হবে। (w92 10⁄15)
আপনার কী স্মরণে আছে?
▫ বাইবেলের সময়ের ঈশ্বর-ভীরু স্বামী, স্ত্রী ও সন্তানেরা কী উদাহরণ স্থাপন করেন?
▫ স্বামীর ভূমিকা সম্বন্ধে খ্রীষ্টীয় ধর্ম কী আলোকপাত করে?
▫ খ্রীষ্টীয় পরিবারে স্ত্রীর কোন্ অংশ গ্রহণ করা উচিৎ?
▫ পরিবারের মঙ্গলসাধনের জন্য কিভাবে খ্রীষ্টীয় যুবক-যুবতীরা সহায়তা করতে পারে?
[Pictures on page 20]
“সেই সময়ের অনৈতিকতার সঙ্গে তুলনা করলে খ্রীষ্টীয় ধর্মে, বিবাহ সম্বন্ধে খ্রীষ্টীয় দৃষ্টিকোণ ছাড়া আর কোন কিছুই এত অভিনব এবং কঠোর রূপে প্রকাশিত হয়নি। . . . [এটি] মানবজাতির জন্য এক নতুন যুগের পত্তন করে”
[Pictures on page 21]
খ্রীষ্টীয় স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের মনোভাব প্রকাশ করতে উৎসাহ দেয়, এবং সেইগুলি তারা উপলব্ধি করে