ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w৯৭ ৭/১৫ পৃষ্ঠা ৮-১৩
  • এক কলুষতা-পূর্ণ জগতে সদ্‌গুণ রক্ষা করা

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • এক কলুষতা-পূর্ণ জগতে সদ্‌গুণ রক্ষা করা
  • ১৯৯৭ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • কলুষতা-পূর্ণ রোমীয় জগৎ
  • আজকের কলুষতা-পূর্ণ জগৎ
  • জগতের কলুষতাকে প্রত্যাখ্যান করা
  • আপনি কি সদ্‌গুণ অনুধাবন করছেন?
    ১৯৯৭ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • যেভাবে আমরা সদ্‌গুণ গড়ে তুলতে পারি
    ২০০১ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • বিয়ের আগে যৌন ক্রিয়াকলাপ বিয়ের আগে যৌন ক্রিয়াকলাপ
    ২০১৩ সচেতন থাক!
১৯৯৭ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w৯৭ ৭/১৫ পৃষ্ঠা ৮-১৩

এক কলুষতা-পূর্ণ জগতে সদ্‌গুণ রক্ষা করা

“তোমরা বচসা ও তর্কবিতর্ক বিনা সমস্ত কার্য্য কর, যেন তোমরা অনিন্দনীয় ও অমায়িক হও, এই কালের সেই কুটিল ও বিপথগামী লোকদের মধ্যে ঈশ্বরের নিষ্কলঙ্ক সন্তান হও।”—ফিলিপীয় ২:১৪, ১৫.

১, ২. কেন ঈশ্বর কনানীয়দের উপর সম্পূর্ণ ধ্বংস এনেছিলেন?

যিহোবার আজ্ঞা আপোশ করার কোন অবকাশ রাখে না। ইস্রায়েলীয়রা প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করার প্রায় মুখে ছিল, যখন ভাববাদী মোশি তাদের বলেছিলেন: “তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে তাহাদিগকে—হিত্তীয়, ইমোরীয়, কনানীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় ও যিবূষীয়দিগকে—নিঃশেষে বিনষ্ট করিবে।”—দ্বিতীয় বিবরণ ৭:২; ২০:১৭.

২ যেহেতু যিহোবা একজন করুণাময় ঈশ্বর, কেন তিনি কনানের অধিবাসীদের সম্পূর্ণ ধ্বংস দাবি করেছিলেন? (যাত্রাপুস্তক ৩৪:৬) একটি কারণ ছিল ‘পাছে কনানীয়রা আপন আপন দেবতাদের উদ্দেশে যে সকল ঘৃণার্হ কর্ম্ম করে, তদ্রূপ করিতে ইস্রায়েলীয়দের শিখায়, আর পাছে তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ কর।’ (দ্বিতীয় বিবরণ ২০:১৮) এছাড়াও মোশি বলেছিলেন: “সেই জাতিদের দুষ্টতা প্রযুক্তই সদাপ্রভু তাহাদিগকে তোমার সম্মুখে অধিকারচ্যুত করিবেন।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৯:৪) কনানীয়রা কলুষতার এক মূর্ত প্রতীক ছিল। যৌন লাম্পট্য ও প্রতিমাপূজা তাদের উপাসনার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল। (যাত্রাপুস্তক ২৩:২৪; ৩৪:১২, ১৩; গণনাপুস্তক ৩৩:৫২; দ্বিতীয় বিবরণ ৭:৫) অজাচার, পায়ুকাম এবং পশুগমন ছিল ‘কনান দেশের . . . আচরণ।’ (লেবীয় পুস্তক ১৮:৩-২৫) মিথ্যা দেবতাদের কাছে নিরাপরাধ শিশুদের নিষ্ঠুরভাবে উৎসর্গ করা হত। (দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:৯-১২) আশ্চর্যের বিষয় নয় যে যিহোবা এই জাতিগুলির অস্তিত্বকে, তাঁর লোকেদের শারীরিক, নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক কল্যাণের পক্ষে বিপদজ্জনক হিসাবে গণ্য করেছিলেন!—যাত্রাপুস্তক ৩৪:১৪-১৬.

৩. ইস্রায়েলীয়রা কনানে বাসকারীদের সম্বন্ধে ঈশ্বরের আদেশ পূর্ণভাবে পালন না করার ফল কী হয়েছিল?

৩ যেহেতু ঈশ্বরের আদেশ সম্পূর্ণভাবে পালন করা হয়নি সেই কারণে কনানের অনেক অধিবাসী ইস্রায়েলের প্রতিজ্ঞাত দেশ জয়ের পরও রক্ষা পেয়ে গিয়েছিল। (বিচারকর্ত্তৃগণ ১:১৯-২১) কালক্রমে, কনানীয়দের প্রতারণাপূর্ণ প্রভাব অনুভূত হয়েছিল আর এটি বলা গিয়েছিল: “তাঁহার [ঈশ্বরের] বিধি সকল ও তাহাদের পিতৃপুরুষদের সহিত কৃত তাঁহার নিয়ম, ও তাহাদের কাছে প্রদত্ত তাঁহার সাক্ষ্য সকল অগ্রাহ্য করিয়াছিল; আর অসার বস্তুর অনুগামী হইয়া আপনারাও অসার হইয়াছিল; এবং সদাপ্রভু যাহাদের মত কর্ম্ম করিতে নিষেধ করিয়াছিলেন, সেই চতুর্দ্দিক্‌স্থ জাতিগণের অনুগামী হইয়াছিল।” (২ রাজাবলি ১৭:১৫) হ্যাঁ, বহু বছর ধরে অনেক ইস্রায়েলীয়রা সেই কলুষতা অভ্যাস করেছিল যে কারণে ঈশ্বর কনানীয়দের লোপ করার আদেশ দিয়েছিলেন।—প্রতিমাপূজা, যৌন অনাচার আর এমনকি শিশু উৎসর্গ!—বিচারকর্ত্তৃগণ ১০:৬; ২ রাজাবলি ১৭:১৭; যিরমিয় ১৩:২৭.

৪, ৫. (ক) অবিশ্বস্ত ইস্রায়েল ও যিহূদার প্রতি কী ঘটেছিল? (খ) ফিলিপীয় ২:১৪, ১৫ পদে কী পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল এবং কোন্‌ প্রশ্নগুলি উত্থাপিত হয়ে থাকে?

৪ সুতরাং ভাববাদী হোশেয় ঘোষণা করেছিলেন: “হে ইস্রায়েল-সন্তানগণ, তোমরা সদাপ্রভুর বাক্য শুন; কেননা দেশনিবাসীদের সহিত সদাপ্রভুর বিবাদ আছে, কারণ দেশে সত্য নাই, দয়া নাই, ঈশ্বরীয় জ্ঞানও নাই। শপথ, মিথ্যাবাক্য, নরহত্যা, চুরি ও ব্যভিচার চলিতেছে, লোকেরা অত্যাচার করে, এবং রক্তপাতের উপরে রক্তপাত হয়। এই জন্য দেশ শোকাকুল হইবে, এবং মাঠের পশু ও আকাশের পক্ষিশুদ্ধ দেশনিবাসিগণ সকলে ম্লান হইবে, আর সমুদ্রের মৎস্যদেরও সংহার হইবে।” (হোশেয় ৪:১-৩) সা.কা.পূ. ৭৪০ সালে ইস্রায়েলের দূষিত উত্তরের রাজ্য অশূরীয়দের দ্বারা পরাভূত হয়েছিল। প্রায় এক শতাব্দী পরে অবিশ্বস্ত দক্ষিণের রাজ্য যিহূদাকে, বাবিলন জয় করেছিল।

৫ এই ঘটনাগুলি ব্যাখ্যা করে যে নিজেদের কলুষতার দ্বারা আচ্ছন্ন হতে দেওয়া কতটা বিপদজনক হতে পারে। ঈশ্বর অধার্মিকতা ঘৃণা করেন এবং তাঁর লোকেদের মধ্যে এটিকে তিনি সহ্য করবেন না। (১ পিতর ১:১৪-১৬) এটি সত্য যে আমরা “উপস্থিত মন্দ যুগ,”-এ বাস করছি, এমন একটি জগতে যা ক্রমবর্ধমানরূপে দূষিত হয়ে চলেছে। (গালাতীয় ১:৪; ২ তীমথিয় ৩:১৩) এমনকি সেই কারণে ঈশ্বরের বাক্য সমস্ত খ্রীষ্টানদের উদ্বুদ্ধ করে এমনভাবে কাজ করে চলতে যাতে করে তারা ‘অনিন্দনীয় ও অমায়িক হয়, এই কালের সেই কুটিল ও বিপথগামী লোকদের মধ্যে ঈশ্বরের নিষ্কলঙ্ক সন্তান হয়, যাহাদের মধ্যে [তারা] জগতে জ্যোতির্গণের ন্যায় প্রকাশ পাইতেছ।’ (ফিলিপীয় ২:১৪, ১৫) কিন্তু কিভাবে আমরা এক কলুষতা-পূর্ণ জগতে সদ্‌গুণ রক্ষা করতে পারি? সেটি করা কি প্রকৃতই সম্ভব?

কলুষতা-পূর্ণ রোমীয় জগৎ

৬. সদ্‌গুণ রক্ষা করার ক্ষেত্রে কেন প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানেরা প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হয়েছিল?

৬ প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানেরা সদ্‌গুণ রক্ষা করতে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হয়েছিলেন কারণ কলুষতা রোমীয় সমাজের সমস্ত দিকগুলিতে পরিব্যাপ্ত ছিল। রোমীয় দার্শনিক সেনেকা তার সমকালীন লোকেদের সম্বন্ধে বলেছিলেন: “মানুষেরা মন্দতার এক শক্তিশালী বিপক্ষতার মাঝে লড়াই করছে। প্রত্যেকদিন অন্যায় করার আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি পাচ্ছে, কিন্তু এটির প্রতি ভয় কমে যাচ্ছে।” তিনি রোমীয় সমাজকে “বন্য পশু সম্প্রদায়ের” সাথে তুলনা করেছিলেন। তাই এটি আশ্চর্যের বিষয় নয় যে মনোরঞ্জনের জন্য রোমীয়রা ধর্ষকামমূলক মল্লযুদ্ধ প্রতিযোগিতা ও কামুক নাট্যাভিনয়ের প্রদর্শনকে খুঁজে নিয়েছিল।

৭. পৌল কিভাবে সেই কলুষতাগুলির বিষয়ে বর্ণনা দিয়েছিলেন যা সা.কা. প্রথম শতাব্দীতে অনেকের মধ্যে সাধারণ বিষয় ছিল?

৭ এছাড়া প্রথম শতাব্দীর লোকেদের অধঃপতিত আচরণের বিষয়টিও হয়ত প্রেরিত পৌলের মনে ছিল যখন তিনি লিখেছিলেন: “ঈশ্বর তাহাদিগকে জঘন্য রিপুর বশে সমর্পণ করিয়াছেন; এমন কি, তাহাদের স্ত্রীলোকেরা স্বাভাবিক ব্যবহারের পরিবর্ত্তে স্বভাবের বিপরীত ব্যবহার করিয়াছে। আর পুরুষেরাও তদ্রূপ স্বাভাবিক স্ত্রীসঙ্গ ত্যাগ করিয়া পরস্পর কামানলে প্রজ্বলিত হইয়াছে, পুরুষ পুরুষে কুৎসিত ক্রিয়া সম্পন্ন করিয়াছে, এবং আপনাদিগেতে নিজ নিজ বিপথগমনের সমুচিত প্রতিফল পাইয়াছে।” (রোমীয় ১:২৬, ২৭) অশুদ্ধ মাংসিক আকাঙ্ক্ষা অনুসরণের প্রতি প্রবণ রোমীয় সমাজ কলুষতা দ্বারা প্লাবিত হয়েছিল।

৮. গ্রীক ও রোমীয় সমাজে কিভাবে শিশুরা প্রায়ই শোষিত হত?

৮ রোমীয়দের মধ্যে সমকামিতার প্রাদুর্ভাব কতখানি ছিল ইতিহাস সেই সম্বন্ধে কোন স্পষ্ট বিবরণ দেয় না। কিন্তু এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে, তারা তাদের গ্রীক পূর্বগামীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল যাদের মধ্যে এর অভ্যাস প্রচুরভাবে বিদ্যমান ছিল। ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের নামে তাদের নিজেদের পক্ষ-ছায়ার অধীনে নিয়ে এসে, অল্পবয়স্ক বালকদের দূষিত করা বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য প্রথাস্বরূপ ছিল, যেটি প্রায়ই অল্পবয়স্কদের নীতিভ্রষ্ট যৌন অচরণের প্রতি পরিচালিত করত। নিঃসন্দেহে এইধরনের কলুষতা ও শিশুদের প্রতি এই দুর্ব্যবহারের পিছনে ছিল শয়তান এবং তার মন্দ দূতেরা।—যোয়েল ৩:৩; যিহূদা ৬, ৭.

৯, ১০. (ক) কিভাবে ১ করিন্থীয় ৬:৯, ১০ পদ বিভিন্ন প্রকার কলুষতাকে নিন্দা করে? (খ) করিন্থীয় মণ্ডলীর কিছুজনের কিধরনের পটভূমি ছিল এবং তাদের ক্ষেত্রে কোন্‌ ধরনের পরিবর্তন ঘটেছিল?

৯ ঐশিক অনুপ্রেরণার অধীনে লেখার সময় পৌল করিন্থের খ্রীষ্টানদের বলেছিলেন: “অথবা তোমরা কি জান না যে, অধার্ম্মিকেরা ঈশ্বরের রাজ্যে অধিকার পাইবে না? ভ্রান্ত হইও না; যাহারা ব্যভিচারী কি প্রতিমাপূজক কি পারদারিক কি স্ত্রীবৎ আচারী কি পুঙ্গামী কি চোর কি লোভী কি মাতাল কি কটুভাষী কি পরধনগ্রাহী, তাহারা ঈশ্বরের রাজ্যে অধিকার পাইবে না। আর তোমরা কেহ কেহ সেই প্রকার লোক ছিলে; কিন্তু তোমরা প্রভু যীশু খ্রীষ্টের নামে ও আমাদের ঈশ্বরের আত্মায় আপনাদিগকে ধৌত করিয়াছ, পবিত্রীকৃত হইয়াছ, ধার্ম্মিক গণিত হইয়াছ।”—১ করিন্থীয় ৬:৯-১১.

১০ তাই পৌলের অনুপ্রাণিত পত্র ‘পারদারিকেরা’ “ঈশ্বরের রাজ্যে অধিকার পাইবে না” বলার দ্বারা যৌন অনৈতিকতাকে নিন্দা করেছিল। অসংখ্য কলুষতাকে তালিকাবদ্ধ করার পরে পৌল বলেছিলেন: “তোমরা কেহ কেহ সেই প্রকার লোক ছিলে; কিন্তু আপনাদিগকে ধৌত করিয়াছ।” ঈশ্বরের সাহায্যে অন্যায়কারীদের পক্ষে তাঁর দৃষ্টিতে বিশুদ্ধ হওয়া সম্ভব ছিল।

১১. কিভাবে প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানেরা তাদের দিনের মন্দ পরিবেশের মধ্যে দিয়ে অগ্রসর হয়েছিল?

১১ হ্যাঁ, প্রথম শতাব্দীতে খ্রীষ্টীয় সদ্‌গুণ এমনকি কলুষতা-পূর্ণ জগতেও সাফল্যলাভ করেছিল। বিশ্বাসীরা ‘মনের নূতনীকরণ দ্বারা স্বরূপান্তরিত হয়েছিল।’ (রোমীয় ১২:২) তারা তাদের “পূর্বকালীন আচরণ” পরিত্যাগ করেছিল এবং ‘আপন আপন মনের ভাবে যেন ক্রমশঃ নবীনীকৃত হয়েছিল।’ এইভাবে তারা জগতের কলুষতা থেকে পলায়ন করেছিল। আর ‘সেই নূতন মনুষ্যকে পরিধান করেছিল যাহা সত্যের ধার্ম্মিকতায় ও সাধুতায় ঈশ্বরের সাদৃশ্যে সৃষ্ট হইয়াছে।’—ইফিষীয় ৪:২২-২৪.

আজকের কলুষতা-পূর্ণ জগৎ

১২. ১৯১৪ সাল থেকে পৃথিবীব্যাপী কিধরনের পরিবর্তন এসেছে?

১২ আমাদের দিন সম্বন্ধে কী? যে জগতে আমরা বাস করছি তা যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক বেশি কলুষতা অধ্যুষিত। বিশেষ করে ১৯১৪ সাল থেকে পৃথিবীব্যাপী এক নৈতিক পতন অস্তিত্বমান রয়েছে। (২ তীমথিয় ৩:১-৫) সদ্‌গুণ, নৈতিকতা, সম্মান এবং নীতি সম্বন্ধে পরম্পরাগত ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করে অনেকে তাদের চিন্তাধারায় আত্মকেন্দ্রিক এবং “অসাড়” হয়ে পড়েছে। (ইফিষীয় ৪:১৯) সংবাদসপ্তাহ (ইংরাজি) পত্রিকা বলেছিল: “আমরা নৈতিক আপেক্ষিকবাদের এক যুগে বাস করি,” এটি আরও বলে যে, বিরাজমান নৈতিক পরিবেশ “সঠিক ও ভুলের সমস্ত ধারণাগুলিকে ব্যক্তিগত রুচি, আবেগগত পছন্দ অথবা সাংস্কৃতিক নির্বাচনের বিষয়বস্তুতে রূপান্তরিত করেছে।”

১৩. (ক) কিভাবে আজকের অধিকাংশ আমোদপ্রমোদ কলুষতাকে উন্নত করে? (খ) ব্যক্তিবিশেষের উপর অনুপযুক্ত আমোদপ্রমোদের কোন্‌ মন্দ প্রভাব থাকতে পারে?

১৩ প্রথম শতাব্দীর মত অধঃপতিত আমোদপ্রমোদ আজকের দিনেও সাধারণ। দূরদর্শন, বেতার, চলচ্চিত্র এবং ভিডিওগুলি যৌনতা কেন্দ্রিক বিষয়বস্তুর এক প্রবহমান যোগান সরবরাহ করে থাকে। কলুষতা এমনকি কম্পিউটার কার্যক্রমেও অনুপ্রবেশ করেছে। অশ্লীল বিষয়গুলি বর্তমান দিনের কম্পিউটার কার্যক্রমে বর্ধিতহারে প্রাপ্তিসাধ্য হয়ে পড়ছে আর এটি এখন বিভিন্ন বয়সের ব্যক্তিদের কাছেই সহজগম্য হয়েছে। এই সমস্ত কিছুর ফল কী? সংবাদপত্রের এক লেখক বলেন: “যখন রক্তপাত, দাঙ্গাহাঙ্গামা এবং নোংরা যৌনতা আমাদের জনপ্রিয় সংস্কৃতিকে সিক্ত করে তখন আমরা রক্তপাত, দাঙ্গাহাঙ্গামা ও নোংরা যৌনতার সাথে অভ্যস্থ হয়ে উঠি। আমরা এর আধিক্যে ক্লান্ত হয়ে পড়ি। যৌন লাম্পট্য আরও বেশি সহনীয় হয়ে ওঠে আর খুব কমই আমাদের অপদস্ত করে।—১ তীমথিয় ৪:১, ২ পদের সাথে তুলনা করুন।

১৪, ১৫. কী প্রমাণ আছে যে জগদ্ব্যাপী যৌন নৈতিকতার অবক্ষয় ঘটেছে?

১৪ দ্যা নিউ ইয়র্ক টাইমস এর বিবৃতিটি সম্বন্ধে বিবেচনা করুন: “২৫ বছর আগে যে বিষয়টি কলঙ্কপূর্ণ বলে বিবেচিত হত এখন তা এক গ্রহণযোগ্য জীবন বিন্যাসে পরিণত হয়েছে। ১৯৮০ থেকে ১৯৯১ সালের মধ্যে বিবাহ ছাড়াই একত্রে বাস করাকে বেছে নিয়েছে এমন দম্পতিদের সংখ্যা [যুক্তরাষ্ট্রে] ৮০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।” এটি কেবলমাত্র উত্তর আমেরিকার এক চিত্র নয়। এশিয়াউইক পত্রকাটি বিবৃতি দেয়: “[এশিয়ার] সমস্ত দেশগুলি জুড়ে এক সাংস্কৃতিক বিতর্ক প্রচণ্ড হয়ে উঠছে। বিষয়টি হচ্ছে যৌন স্বাধীনতা বনাম পরম্পরাগত মূল্যবোধ আর পরিবর্তনের জন্য চাপ দৃঢ়ভাবে বেড়ে চলেছে।” পরিসংখ্যান দেখায় অনেক দেশে ব্যাভিচার ও বিবাহপূর্ব যৌনতা বর্ধিত হারে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছে।

১৫ বাইবেল ভাববাণী করেছিল যে শয়তানের প্রভাবযুক্ত কার্যাবলি আমাদের দিনে চরম পর্যায়ে পৌঁছাবে। (প্রকাশিত বাক্য ১২:১২) অতএব এই বিষয়টিতে আমাদের আশ্চর্য হওয়া উচিত নয় যে কলুষতা আশঙ্কাপূর্ণভাবে বিদ্যমান। উদাহরণস্বরূপ, শিশুদের প্রতি যৌন শোষণ মহামারীর পর্যায়ে পৌঁছেছে।a রাষ্ট্রসংঘের শিশু তহবিল বিবৃতি দেয় যে প্রত্যেক বছর “বাণিজ্যিক যৌন শোষণ প্রকৃতই পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশের শিশুদের ক্ষতি করে চলেছে।” প্রত্যেক বছর “এইরকম বিবৃতি দেওয়া হয়ে থাকে যে জগদ্ব্যাপী দশ লক্ষেরও বেশি শিশুদের জোরপূর্বক শিশু বেশ্যাবৃত্তিতে বাধ্য করা হয়ে থাকে আর যৌন উদ্দেশ্যে বিক্রি ও শিশু অশ্লীল চিত্র উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে।” সমকামিতাও অত্যন্ত সাধারণ, যেটিকে কিছু রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতারা প্রায়ই এক “বিকল্প জীবনধারা” হিসাবে উন্নত করার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব নিচ্ছেন।”

জগতের কলুষতাকে প্রত্যাখ্যান করা

১৬. যৌন নৈতিকতা সম্পর্কে যিহোবার সাক্ষীরা কোন্‌ পদক্ষেপ নেয়?

১৬ যিহোবার সাক্ষীরা সেই ঐকতানে যোগ দেয় না যারা যৌন নৈতিকতা সম্বন্ধে প্রশ্রয়কারী মানদণ্ডকে সমর্থন করে। তীত ২:১১, ১২ পদ বলে: “ঈশ্বরের অনুগ্রহ প্রকাশিত হইয়াছে, তাহা সমুদয় মনুষ্যের জন্য পরিত্রাণ আনয়ন করে, তাহা আমাদিগকে শাসন করিতেছে, যেন আমরা ভক্তিহীনতা ও সাংসারিক অভিলাষ সকল অস্বীকার করিয়া সংযত, ধার্ম্মিক ও ভক্তিভাবে এই বর্ত্তমান যুগে জীবন যাপন করি।” হ্যাঁ, আমরা এইধরনের কলুষতাগুলি যেমন বিবাহপূর্ব যৌনতা, পারদারিকতা এবং সমকামিতামূলক কার্যের প্রতি প্রকৃতই এক ঘৃণা, বিতৃষ্ণা গড়ে তুলি।b (রোমীয় ১২:৯; ইফিষীয় ৫:৩-৫) পৌল এই পরামর্শটি দিয়েছিলেন: “যে কেহ প্রভুর নাম করে, সে অধার্ম্মিকতা হইতে দূরে থাকুক।”—২ তীমথিয় ২:১৯.

১৭. মদ্য জাতীয় পানীয়ের ব্যবহারকে সত্য খ্রীষ্টানেরা কোন্‌ দৃষ্টিতে দেখে থাকে?

১৭ সত্য খ্রীষ্টানেরা আপাতদৃষ্টিতে কম গুরুত্বপূর্ণ কলুষতাগুলি সম্বন্ধে জগতের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রত্যাখ্যান করে। উদাহরণস্বরূপ, আজকে অনেক লোকেরা মদ্য জাতীয় পানীয়ের অপব্যবহারকে কৌতুককর মনোরঞ্জন হিসাবে নিয়ে থাকে। কিন্তু যিহোবার লোকেরা ইফিষীয় ৫:১৮ পদের পরামর্শকে মেনে চলে: “আর দ্রাক্ষারসে মত্ত হইও না, তাহাতে নষ্টামি আছে; কিন্তু আত্মাতে পরিপূর্ণ হও।” যদি একজন খ্রীষ্টান পান করাকে বেছে নেনও, তবুও তিনি তা পরিমিতভাবে করবেন।—হিতোপদেশ ২৩:২৯-৩২.

১৮. পরিবারের সদস্যদের সাথে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে কিভাবে বাইবেলের নীতিগুলি যিহোবার সেবকদের পরিচালনা দেয়?

১৮ যিহোবার সেবক হিসাবে আমরা জগতের কিছু লোকেদের মধ্যে বিরাজমান এই দৃষ্টিভঙ্গিটিও প্রত্যাখ্যান করি যে নিজের সাথী এবং সন্তানদের উপর গর্জন বা চিৎকার করা অথবা আঘাতজনক কথা বলে তাদের তিরস্কার করা একটি গ্রহণযোগ্য আচরণ। সদ্‌গুণসম্পন্ন ধারা অনুধাবন করার স্থিরসংঙ্কল্প নিয়ে খ্রীষ্টীয় স্বামী ও স্ত্রীরা পৌলের পরামর্শ প্রয়োগ করার জন্য একসাথে কাজ করেন: “সর্ব্বপ্রকার কটুকাটব্য, রোষ, ক্রোধ, কলহ, নিন্দা এবং সর্ব্বপ্রকার হিংসেচ্ছা তোমাদের হইতে দূরীকৃত হউক। তোমরা পরস্পর মধুর স্বভাব ও করুণাচিত্ত হও, পরস্পর ক্ষমা কর, যেমন ঈশ্বরও খ্রীষ্টে তোমাদিগকে ক্ষমা করিয়াছেন।”—ইফিষীয় ৪:৩১, ৩২.

১৯. ব্যবসায়িক জগতে কলুষতা কতখানি প্রবল?

১৯ অসততা, প্রতারণা, মিথ্যা বলা, হীন ব্যবসায়ী কৌশল এবং চুরি করাও আজকে সাধারণ বিষয়। ব্যবসায়িক পত্রিকা সিএফও এর একটি প্রবন্ধ বিবৃতি দেয় যে: “৪,০০০ জন কর্মীর মধ্যে কৃত এক সমীক্ষা . . . দেখিয়েছিল যে উত্তরদাতাদের মধ্যে শতকরা ৩১ ভাগ গত বছরের ‘গুরুতর দুর্ব্যবহারের’ প্রত্যক্ষসাক্ষী ছিল।” এই দুর্ব্যবহারের অন্তর্ভুক্ত ছিল মিথ্যাচার, মিথ্যা নথি, যৌন হয়রানি এবং চুরি। যদি আমরা যিহোবার দৃষ্টিতে নৈতিকভাবে বিশুদ্ধ থাকতে চাই তাহলে আমরা অবশ্যই এইধরনের আচরণগুলি এড়িয়ে চলব এবং আমাদের অর্থের আদানপ্রদানের ক্ষেত্রে সৎ হব।—মীখা ৬:১০, ১১.

২০. “অর্থপ্রিয়” হওয়া থেকে কেন খ্রীষ্টানদের মুক্ত হওয়ার প্রয়োজন আছে?

২০ বিবেচনা করুন যে এক ব্যক্তির প্রতি কী ঘটেছিল, যে কল্পনা করেছিল যে যদি সে ঝুঁকিপূর্ণভাবে উল্লেখযোগ্য কিছু আর্থিক লাভ করতে পারে তাহলে সে ঈশ্বরের সেবায় আরও বেশি সময় দিতে পারবে। সে অন্যদের তাদের ভবিষ্যৎ লাভ সম্বন্ধে অতিরঞ্জিত করে বলে বিনিয়োগ পরিকল্পনায় অংশ নেওয়ার জন্য আকর্ষিত করেছিল। যখন এটি বাস্তবায়িত হয়নি, তখন সেই বৃহৎ পরিমাণ লোকসান পুরণ করার জন্য সে এতই বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল যে সে সেই অর্থ চুরি করেছিল যে অর্থের দায়িত্ব তাকে দেওয়া হয়েছিল। তার কার্যকলাপ ও অনুতাপহীন মনোভাবের জন্য খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী থেকে তাকে সমাজচ্যুত করা হয়। বস্তুতপক্ষে, বাইবেলের সাবধানবাণী কতই না সত্য যে: “যাহারা ধনী হইতে বাসনা করে, তাহারা পরীক্ষাতে ও ফাঁদে এবং নানাবিধ মূঢ় ও হানিকর অভিলাষে পতিত হয়, সে সকল মনুষ্যদিগকে সংহারে ও বিনাশে মগ্ন করে। কেননা ধনাসক্তি সকল মন্দের একটা মূল; তাহাতে রত হওয়াতে কতক লোক বিশ্বাস হইতে বিপথগামী হইয়াছে, এবং অনেক যাতনারূপ কন্টকে আপনারা আপনাদিগকে বিদ্ধ করিয়াছে।”—১ তীমথিয় ৬:৯, ১০.

২১. জগতের ক্ষমতাশালী লোকেদের মধ্যে কোন্‌ আচরণ সাধারণ কিন্তু খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত পদে রয়েছে তারা কিভাবে আচরণ করবে?

২১ জগতের ক্ষমতা ও প্রতিপত্তিসম্পন্ন লোকেদের প্রায়ই সদ্‌গুণের অভাব থাকে আর তারা সেই মৌলিক নীতির সত্যতাকে প্রদর্শন করে ‘ক্ষমতা কলুষিত করে।’ (উপদেশক ৮:৯) কিছু দেশে, ঘুষ নেওয়া ও অন্যান্য প্রকারের দুর্নীতি হল বিচারক, পুলিশকর্মী ও রাজনীতিবিদ্‌দের জীবনধারা। কিন্তু, যারা খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে নেতৃত্ব নেয় তারা অবশ্যই সদ্‌গুণসম্পন্ন হবে ও অন্যদের উপর প্রভুত্ব করবে না। (লূক ২২:২৫, ২৬) প্রাচীনেরা আর সেই সাথে পরিচারক দাসেরা “কুৎসিত লাভার্থে” সেবা করেন না। ব্যক্তিগত সমৃদ্ধির প্রত্যাশার দ্বারা তাদের বিচারকে বিকৃত বা প্রভাবিত করার সমস্ত রকম প্রচেষ্টা থেকে তারা অবশ্যই মুক্ত থাকবেন।—১ পিতর ৫:২; যাত্রাপুস্তক ২৩:৮; হিতোপদেশ ১৭:২৩; ১ তীমথিয় ৫:২১.

২২. পরবর্তী প্রবন্ধ কোন্‌ বিষয়ে আলোচনা করবে?

২২ অধিকাংশ ক্ষেত্রে বলা যেতে পারে, খ্রীষ্টানেরা আমাদের কলুষতা-পূর্ণ জগতে সদ্‌গুণ রক্ষা করার আধুনিক দিনের প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে সাফল্যের সাথে মোকাবিলা করছে। তবুও সদ্‌গুণ কেবলমাত্র মন্দতাকে এড়ানোর চেয়েও আরও বেশি কিছুকে জড়িত করে। পরবর্তী প্রবন্ধ আলোচনা করবে সদ্‌গুণ উৎপন্ন করতে প্রকৃতই কিসের প্রয়োজন।

[পাদটীকাগুলো]

a ১৯৯৩ সালের অক্টোবর ৮, সচেতন থাক! (ইংরাজি) পত্রিকায় “আপনার সন্তানকে সুরক্ষিত করুন!” নামক ধারাবাহিক প্রবন্ধটি দেখুন।

b যারা পূর্ববর্তী সময়ে সমকামিতামূলক কার্যকলাপের সাথে যুক্ত ছিল তারা তাদের আচরণে পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে ঠিক যেমন প্রথম শতাব্দীতে কিছুজন করেছিল। (১ করিন্থীয় ৬:১১) ১৯৯৫ সালের মার্চ ২২, সচেতন থাক! (ইংরাজি) পত্রিকার ২১-৩ পৃষ্ঠায় সাহায্যকারী তথ্য দেওয়া হয়েছিল।

পুনরালোচনার জন্য বিষয়গুলি

◻ যিহোবা কেন কনানীয়দের জন্য সম্পূর্ণ ধ্বংস আদেশ করেছিলেন?

◻ প্রথম শতাব্দীতে কোন্‌ কলুষতা সাধারণ ছিল এবং খ্রীষ্টানেরা কিভাবে এইধরনের এক পরিবেশের মধ্যে দিয়ে অগ্রসর হয়েছিল?

◻ কী প্রমাণ আছে যে ১৯১৪ সাল থেকে জগৎ এক নৈতিক অবক্ষয়ের সাক্ষী হয়েছে?

◻ কোন্‌ সাধারণ কলুষতা যিহোবার লোকেরা অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করবে?

[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানেরা সদ্‌গুণসম্পন্ন ছিল, এমনকি যদিও তারা কলুষতা-পূর্ণ জগতে বাস করত

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

কলুষতা এমনকি কম্পিউটার নেটওয়ার্কেও অনুপ্রবেশ করেছে যা অনেক যুবক ও অন্যান্যদের কাছে অশ্লীল বিষয়বস্তু সহজলভ্য করে তুলেছে

[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]

অন্যদের অসৎ কৌশলগুলি অনুকরণ না করে খ্রীষ্টানেরা অবশ্যই সদ্‌গুণ রক্ষা করবে

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৫)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার