ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w০০ ১১/১৫ পৃষ্ঠা ১০-১৫
  • খ্রীষ্টানেরা সেবা করে আনন্দ পান

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • খ্রীষ্টানেরা সেবা করে আনন্দ পান
  • ২০০০ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • যীশুর জনসেবা
  • খ্রীষ্টানরাও জনসেবা করেন
  • পবিত্র সেবা করুন
  • আমরা কোথায় পবিত্র সেবা করি?
  • যে পবিত্র সেবা যিহোবা গ্রহণ করেন না
  • পবিত্র বিষয়গুলোকে কি আপনি যিহোবার মতো করে দেখেন?
    ২০০৬ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • এক বিস্তর লোক পবিত্র পরিচর্যা করছে
    ১৯৯৫ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • অপর মেষ এবং নতুন চুক্তি
    ১৯৯৮ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • পবিত্র পরিচর্যার সুযোগগুলিকে অত্যধিক মূল্যবান গণ্য করা
    ১৯৯৮ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
২০০০ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w০০ ১১/১৫ পৃষ্ঠা ১০-১৫

খ্রীষ্টানেরা সেবা করে আনন্দ পান

“গ্রহণ করা অপেক্ষা বরং দান করা ধন্য হইবার বিষয়।”—প্রেরিত ২০:৩৫.

১. আজকে কোন্‌ ভুল মনোভাব রয়েছে আর তা কেন ক্ষতিকর?

উনিশশ সালের শেষ দশকগুলোতে “আমিত্ব” শব্দটা প্রায়ই শোনা যেত। “আমিত্ব” শব্দটার মানে হল “আমিই প্রথম” আর এটা স্বার্থপর মনোভাব, লোভ এবং অন্যদের জন্য চিন্তা না করা বোঝায়। আমরা নিশ্চিত যে, এই ২০০০ সালেও আমিত্ব মনোভাব রয়েছে। এইরকম প্রশ্ন আপনি কত বার শুনেছেন, “এটা করে আমি কী পাব?” বা “এতে আমার কী লাভ?” স্বার্থপর মনোভাব কখনও সুখ এনে দেয় না। এই মনোভাব যীশুর বলা নীতির একেবারে উলটো। তিনি বলেছিলেন: “গ্রহণ করা অপেক্ষা বরং দান করা ধন্য হইবার বিষয়।”—প্রেরিত ২০:৩৫.

২. কোন্‌ উদাহরণ থেকে বোঝা যায় যে, দিয়ে আনন্দ পাওয়া যায়?

২ সত্যিই কি পাওয়ার চেয়ে দিয়ে বেশি আনন্দ পাওয়া যায়? হ্যাঁ যায়। যিহোবা ঈশ্বরের কথা চিন্তা করুন। তাঁর কাছে “জীবনের উনুই আছে।” (গীতসংহিতা ৩৬:৯) আমাদের জীবনকে হাসি-আনন্দে ভরে দেওয়ার জন্য তিনি আমাদের সবকিছু জোগান। তাঁর কাছ থেকেই “সমস্ত উত্তম দান এবং সমস্ত সিদ্ধ বর . . . আইসে।” (যাকোব ১:১৭) ‘ধন্য [সুখী] ঈশ্বর’ যিহোবা সবসময় আমাদেরকে দিয়েই চলেছেন। (১ তীমথিয় ১:১১) তাঁর সৃষ্টি মানুষকে তিনি ভালবাসেন আর তাদেরকে তিনি অকাতরে দেন। (যোহন ৩:১৬) এই বিষয়ে একটা পরিবারের কথা চিন্তা করুন। আপনি যদি একজন বাবা অথবা মা হন, তাহলে আপনি জানেন যে বাচ্চাদের মানুষ করতে গিয়ে কত ত্যাগস্বীকার করতে হয়, তাদেরকে কত কিছু দিতে হয়। আর অনেক বছর পর্যন্ত আপনার বাচ্চা হয়তো বোঝেই না যে, তার জন্য আপনি কত কত ত্যাগস্বীকার করেছেন। সে হয়তো মনে করে, বাবামা ত্যাগস্বীকার করবে এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু তবুও আপনি যখন দেখেন যে, আপনার নিঃস্বার্থ ত্যাগস্বীকারের জন্যই আপনার বাচ্চা বড় হচ্ছে ও উন্নতি করছে তখন আপনার মন খুশিতে ভরে যায়। কেন? কারণ আপনি তাকে ভালবাসেন।

৩. যিহোবা ও খ্রীষ্টান ভাইবোনদের সেবা করা কেন আনন্দের?

৩ একইভাবে সত্য ধর্মের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল, এই ধর্মের লোকেরা ভালবেসে অন্যকে দিয়ে থাকেন। যেহেতু যিহোবা এবং আমাদের খ্রীষ্টান ভাইবোনদেরকে আমরা ভালবাসি, তাই নিজেদেরকে তাদের জন্য বিলিয়ে দিয়ে আমরা খুশি হই। (মথি ২২:৩৭-৩৯) যারা নিজেদের স্বার্থের জন্য যিহোবার উপাসনা করে তারা কোন আনন্দ খুঁজে পায় না। কিন্তু, যারা নিঃস্বার্থভাবে সেবা করেন এবং কোন কিছু পাওয়ার আশা না করে কেবল দিয়েই যান তারা অনেক আনন্দ পান। আমাদের উপাসনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বাইবেলের কিছু শব্দ আলোচনা করেই বোঝা যায় যে, এই কথা সত্য। এই প্রবন্ধে এবং এর পরের প্রবন্ধে আমরা মূলত তিনটে শব্দ নিয়ে আলোচনা করব।

যীশুর জনসেবা

৪. খ্রীষ্টীয়জগতে “জনসেবার” বৈশিষ্ট্য কী?

৪ মূল গ্রিক ভাষায় উপাসনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত একটা গুরুত্বপূর্ণ শব্দ হল লিটোরিয়া, যেটাকে নতুন জগৎ অনুবাদ (ইংরেজি) বাইবেলে “জনসেবা” বলে অনুবাদ করা হয়েছে। খ্রীষ্টীয়জগৎ লিটোরিয়া শব্দটা থেকে “লিটারজি”a শব্দটা ব্যবহার করে। কিন্তু, খ্রীষ্টীয়জগতে সাধারণ লোকেদের জন্য যে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানগুলো করা হয় সেগুলোকে জনসেবা বলা যায় না আর সাধারণ লোকেরা এগুলো থেকে সত্যিকারের কোন উপকারও পায় না।

৫, ৬. (ক) ইস্রায়েলে কোন্‌ ধরনের জনসেবা করা হতো আর এর থেকে কী কী উপকার পাওয়া যেত? (খ) ইস্রায়েলের ওই জনসেবার জায়গায় কোন্‌ বড় আয়োজন করা হয় ও কেন?

৫ প্রেরিত পৌল ইস্রায়েলের যাজকদের কথা বলতে গিয়ে একটা গ্রিক শব্দ ব্যবহার করেছিলেন, যা লিটোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তিনি বলেছিলেন: “প্রত্যেক যাজক দিন দিন [জন] সেবা [লিটোরিয়ার একটা পদ্ধতি] করিবার এবং একরূপ নানা যজ্ঞ পুনঃপুনঃ উৎসর্গ করিবার জন্য দাঁড়ায়।” (ইব্রীয় ১০:১১) লেবীয় যাজকরা ইস্রায়েলে জনসেবা করতেন, যা খুবই মূল্যবান ছিল। তারা ঈশ্বরের আইন শেখাতেন ও লোকেদের পাপ ঢাকার জন্য বলি উৎসর্গ করতেন। (২ বংশাবলি ১৫:৩; মালাখি ২:৭) যাজকরা এবং লোকেরা যখন যিহোবার আইন মেনে চলতেন তখন ওই জাতির আনন্দ করার অনেক কারণ ছিল।—দ্বিতীয় বিবরণ ১৬:১৫.

৬ মোশির ব্যবস্থায় জনসেবা করা ইস্রায়েলীয় যাজকদের জন্য এক বিরাট সুযোগ ছিল কিন্তু ইস্রায়েলের অবিশ্বস্ততার জন্য যিহোবা যখন তাদেরকে অগ্রাহ্য করেছিলেন, তখন তাদের সেবার আর কোন মূল্যই ছিল না। (মথি ২১:৪৩) যিহোবা এর চেয়েও আরও বড় জনসেবার আয়োজন করেছিলেন, যা মহান মহাযাজক যীশু করেছিলেন। তাঁর সম্বন্ধে আমরা পড়ি: “তিনি ‘অনন্তকাল’ থাকেন, তাই তাঁহার যাজকত্ব অপরিবর্ত্তনীয়। এই জন্য, যাহারা তাঁহা দিয়া ঈশ্বরের নিকটে উপস্থিত হয়, তাহাদিগকে তিনি সম্পূর্ণরূপে পরিত্রাণ করিতে পারেন, কারণ তাহাদের নিমিত্ত অনুরোধ করণার্থে তিনি সতত জীবিত আছেন।”—ইব্রীয় ৭:২৪, ২৫.

৭. যীশুর জনসেবা কেন অতুলনীয় উপকার নিয়ে আসে?

৭ যীশু চিরকালের জন্য যাজক হিসেবে সেবা করে যাবেন, তাঁর পরে আর কেউই যাজক হবে না। তাই, একমাত্র তিনিই লোকেদের সম্পূর্ণরূপে রক্ষা করতে পারেন। মানুষের বানানো কোন মন্দিরে তিনি ওই অতুলনীয় জনসেবা করেন না বরং তিনি এক রূপক মন্দিরে অর্থাৎ উপাসনার জন্য যিহোবার মহৎ আয়োজন, যা সা.কা. ২৯ সালে কার্যকর হয়েছে তাতে সেবা করেন। যীশু এখন সেই মন্দিরের অতি পবিত্র স্থান অর্থাৎ স্বর্গে সেবা করছেন। তিনি “পবিত্র স্থানের, এবং যে তাম্বু মনুষ্যকর্ত্তৃক নয়, কিন্তু প্রভুকর্ত্তৃক [যিহোবা কর্তৃক] স্থাপিত হইয়াছে, সেই প্রকৃত তাম্বুর সেবক [লিটোরস্‌]।” (ইব্রীয় ৮:২; ৯:১১, ১২) যীশুর পদমর্যাদা যত উঁচুই হোক না কেন, তারপরেও তিনি একজন “সেবক।” তিনি তাঁর উঁচু পদকে নেওয়ার জন্য নয় কিন্তু দেওয়ার জন্য কাজে লাগান। আর তা করেই তিনি আনন্দ পান। এটা তাঁর “সম্মুখস্থ আনন্দের” অংশ আর সেই আনন্দই তাঁকে মৃত্যু পর্যন্ত বিশ্বস্ত থাকতে সাহায্য করেছিল।—ইব্রীয় ১২:২.

৮. ব্যবস্থা চুক্তিকে সরিয়ে দিতে যীশু কীভাবে জনসেবা করেছিলেন?

৮ যীশুর জনসেবার আরেকটা দিক রয়েছে। এই বিষয়ে পৌল লিখেছিলেন: “[যীশু] সেই পরিমাণে উৎকৃষ্টতর সেবকত্ব পাইয়াছেন, যে পরিমাণে তিনি এমন এক শ্রেষ্ঠ নিয়মের মধ্যস্থ হইয়াছেন, যাহা শ্রেষ্ঠ প্রতিজ্ঞাকলাপের উপরে স্থাপিত হইয়াছে।” (ইব্রীয় ৮:৬) মোশি সেই চুক্তির মধ্যস্থতা করেছিলেন, যেটার মাধ্যমে যিহোবার সঙ্গে ইস্রায়েল জাতির সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। (যাত্রাপুস্তক ১৯:৪, ৫) যীশু এক নতুন চুক্তির মধ্যস্থতা করেছিলেন, যে চুক্তির মাধ্যমে অনেক জাতির মধ্যে থেকে আত্মায় অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের নিয়ে এক নতুন জাতি অর্থাৎ ‘ঈশ্বরের ইস্রায়েলের’ জন্ম হয়েছে। (গালাতীয় ৬:১৬; ইব্রীয় ৮:৮, ১৩; প্রকাশিত বাক্য ৫:৯, ১০) কত চমৎকার এক জনসেবা! সেবক যীশুর বিষয়ে জেনে আমরা কত খুশিই না হই, যাঁর মাধ্যমে আমরা যিহোবাকে সঠিকভাবে উপাসনা করতে পারি!—যোহন ১৪:৬.

খ্রীষ্টানরাও জনসেবা করেন

৯, ১০. খ্রীষ্টানরা কোন্‌ ধরনের জনসেবা করেন?

৯ কোন মানুষই যীশুর মতো এত মহৎ জনসেবা করেন না। তবে, অভিষিক্ত খ্রীষ্টানরা যখন স্বর্গে তাদের পুরস্কার পাবেন তখন তারা যীশুর পাশে থাকবেন এবং তাঁর সঙ্গে রাজা ও যাজক হিসেবে জনসেবা করবেন। (প্রকাশিত বাক্য ২০:৬; ২২:১-৫) কিন্তু, পৃথিবীতেও খ্রীষ্টানরা জনসেবা করেন এবং তা করে তারা প্রচুর আনন্দও পান। যেমন, প্যালেস্টাইনে যখন দুর্ভিক্ষ হয়েছিল তখন যিহূদিয়ার যিহুদি খ্রীষ্টান ভাইবোনদের সাহায্য করার জন্য প্রেরিত পৌল ইউরোপের ভাইদের থেকে দান নিয়ে এসেছিলেন। সেটা ছিল একধরনের জনসেবা। (রোমীয় ১৫:২৭; ২ করিন্থীয় ৯:১২) আজকেও খ্রীষ্টানরা এইধরনের সেবা করে আনন্দ পান। তাদের ভাইয়েরা যখন দুঃখকষ্টে থাকেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হন অথবা অন্যান্য বিপদের মুখে পড়েন তখন দেরি না করে তারা তাদেরকে সবরকমের সাহায্য করেন।—হিতোপদেশ ১৪:২১.

১০ পৌল আরেক ধরনের জনসেবার কথা বলেছিলেন যখন তিনি লিখেছিলেন: “তোমাদের বিশ্বাসের যজ্ঞে ও সেবায় যদি আমি পেয় নৈবেদ্যরূপে সেচিতও হই, তথাপি আনন্দ করিতেছি, আর তোমাদের সকলের সঙ্গে আনন্দ করিতেছি।” (ফিলিপীয় ২:১৭) ফিলিপীয়দের জন্য পৌল যে কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন, তা ছিল একধরনের জনসেবা আর তা তিনি ভালবাসা দেখিয়ে ও মনপ্রাণ দিয়ে করেছিলেন। আজকে আমাদের সময়েও বিশেষ করে অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের নিয়ে গঠিত “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস” উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত খাদ্য জুগিয়ে একইরকম জনসেবা করেন। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) এছাড়াও, তাদেরকে “পবিত্র যাজকবর্গ” করা হয়েছে ‘যেন যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা ঈশ্বরের গ্রাহ্য আত্মিক বলি উৎসর্গ করিতে পারেন’ এবং ‘তাঁহারই গুণকীর্ত্তন করিতে পারেন, যিনি [তাহাদিগকে] অন্ধকার হইতে আপনার আশ্চর্য্য জ্যোতির মধ্যে আহ্বান করিয়াছেন।’ (১ পিতর ২:৫, ৯) এই সুযোগগুলো পেয়ে পৌলের মতো তারাও আনন্দ করেন, এমনকি এই দায়িত্বগুলোকে পালন করার জন্য যদি নিজেদেরকে ‘সেচিতও করতে হয়।’ আর তাদের “অপর মেষ” সঙ্গীরা তাদের সঙ্গে যোগ দেন এবং যিহোবা ও তাঁর উদ্দেশ্যগুলোর বিষয়ে লোকেদেরকে জানিয়ে তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করেন।b (যোহন ১০:১৬, NW; মথি ২৪:১৪) সেটা কত মহান ও আনন্দপূর্ণ জনসেবা!—গীতসংহিতা ১০৭:২১, ২২.

পবিত্র সেবা করুন

১১. ভাববাদীনি হান্না কীভাবে সমস্ত খ্রীষ্টানদের জন্য এক ভাল উদাহরণ?

১১ আমাদের উপাসনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আরেকটা গ্রিক শব্দ হল লেট্রিয়া, যেটাকে নতুন জগৎ অনুবাদ-এ “পবিত্র সেবা” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে। পবিত্র সেবার সঙ্গে উপাসনার বিভিন্ন পদ্ধতির সম্পর্ক রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ৮৪ বছর বয়স্কা বিধবা ও ভাববাদীনি হান্নার কথা বলা যায়। তার বিষয়ে বলা আছে যে তিনি “ধর্ম্মধাম হইতে প্রস্থান না করিয়া উপবাস ও প্রার্থনা সহকারে রাত দিন উপাসনা [পবিত্র সেবা, যা লেট্রিয়া-র সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত একটা গ্রিক শব্দ] করিতেন।” (লূক ২:৩৬, ৩৭) হান্না রাতদিন যিহোবার উপাসনা করতেন। নারী-পুরুষ, যুবক-বৃদ্ধ নির্বিশেষে আমাদের সবার জন্য তিনি এক ভাল উদাহরণ। হান্না যেমন উদ্যোগ নিয়ে যিহোবার কাছে প্রার্থনা ও নিয়মিত মন্দিরে গিয়ে উপাসনা করতেন, তেমনই আমাদের পবিত্র সেবা করা মানে প্রার্থনা করা ও সভায় যাওয়া বোঝায়।—রোমীয় ১২:১২; ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫.

১২. আমাদের পবিত্র সেবার একটা প্রধান দিক কী আর তা কীভাবে একধরনের জনসেবা?

১২ প্রেরিত পৌল আমাদের পবিত্র সেবার একটা প্রধান দিক তুলে ধরেছিলেন যখন তিনি লিখেছিলেন: “ঈশ্বর, যাঁহার আরাধনা [পবিত্র সেবা] আমি আপন আত্মাতে তাঁহার পুত্ত্রের সুসমাচারে করিয়া থাকি, তিনি আমার সাক্ষী যে, আমি নিরন্তর তোমাদের নাম উল্লেখ করিয়া থাকি।” (রোমীয় ১:৯) হ্যাঁ, যারা শোনে তাদের কাছে সুসমাচার প্রচার করে আমরা শুধু জনসেবাই করছি না কিন্তু এটা যিহোবাকে উপাসনা করারও একটা অংশ। লোকেরা আমাদের কথা শুনুক বা না শুনুক, প্রচার করে আমরা যিহোবাকে পবিত্র সেবা দিচ্ছি। আমাদের প্রেমময় স্বর্গীয় পিতার অপূর্ব গুণগুলো ও ভাল উদ্দেশ্যগুলো অন্যদের জানিয়ে আমরা প্রচুর আনন্দ পাই।—গীতসংহিতা ৭১:২৩.

আমরা কোথায় পবিত্র সেবা করি?

১৩. যিহোবার আত্মিক মন্দিরের ভেতরের প্রাঙ্গণে যারা পবিত্র সেবা করেন তাদের কোন্‌ আশা রয়েছে আর তাদের সঙ্গে কারা আনন্দ করেন?

১৩ অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের পৌল লিখেছিলেন: “অকম্পনীয় রাজ্য পাইবার অধিকারী হওয়াতে, আইস, আমরা সেই অনুগ্রহ অবলম্বন করি, যদ্দ্বারা ভক্তি ও ভয় সহকারে ঈশ্বরের প্রীতিজনক আরাধনা [পবিত্র সেবা] করিতে পারি।” (ইব্রীয় ১২:২৮)) অভিষিক্ত খ্রীষ্টানরা রাজ্য পাবেনই পাবেন এই আশা করেন বলে ঈশ্বরের উপাসনা করার সময় তাদের বিশ্বাস অটল থাকে। একমাত্র তারাই যিহোবার আত্মিক মন্দিরের পবিত্র কক্ষে এবং ভেতরের প্রাঙ্গণে গিয়ে তাঁকে পবিত্র সেবা দিতে পারেন এবং তারা অতি পবিত্র স্থান অর্থাৎ স্বর্গে গিয়ে যীশুর সঙ্গে সেবা করার জন্য অধীরভাবে অপেক্ষা করে আছেন। অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের এই অপূর্ব আশা আছে বলে তাদের অপর মেষ সঙ্গীরা তাদের সঙ্গে আনন্দ করেন।—ইব্রীয় ৬:১৯, ২০; ১০:১৯-২২.

১৪. যীশুর জনসেবা থেকে বিরাট জনতা কীভাবে উপকার পান?

১৪ অপর মেষদের কথা কী বলা যায়? প্রেরিত যোহনের দর্শন অনুযায়ী শেষ কালে এক বিরাট জনতাকে দেখা গেছে আর তারা “মেষশাবকের রক্তে আপন আপন বস্ত্র ধৌত করিয়াছে, ও শুক্লবর্ণ করিয়াছে।” (প্রকাশিত বাক্য ৭:১৪) এর মানে, অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের মতো তারাও যীশুর জনসেবা অর্থাৎ মানুষের জন্য তিনি যে তাঁর নিজের সিদ্ধ জীবন বলি দিয়েছেন, তাতে বিশ্বাস করে চলেন। অপর মেষরাও যীশুর জনসেবা থেকে উপকার পান ও এভাবেই তারা ‘[যিহোবার] নিয়ম দৃঢ় করিয়া রাখেন।’ (যিশাইয় ৫৬:৬) না, তারা নতুন চুক্তির অংশী নন কিন্তু তারা এটাকে দৃঢ়ভাবে রাখেন, অর্থাৎ এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আইনগুলোকে তারা মেনে চলেন এবং এটার মাধ্যমে যে ব্যবস্থাগুলো করা হয়েছে সেগুলোকে তারা সমর্থন করেন। তারা ঈশ্বরের ইস্রায়েলের সঙ্গে সঙ্গে থাকেন, একই আধ্যাত্মিক মেজ থেকে খাবার খান এবং এর সদস্যদের সঙ্গে সকলের সামনে ঈশ্বরের প্রশংসা করেন ও তাঁকে খুশি করে এমন আত্মিক বলি উৎসর্গ করেন।—ইব্রীয় ১৩:১৫.

১৫. বিরাট জনতা কোথায় ঈশ্বরকে সেবা করেন এবং এই আশীর্বাদ লাভ করে তারা কেমন বোধ করেন?

১৫ এইজন্যই বিরাট জনতাকে দেখা যায়, তারা “সিংহাসনের সম্মুখে ও মেষ শাবকের সম্মুখে দাঁড়াইয়া আছে; তাহারা শুক্লবস্ত্র পরিহিত।” এছাড়াও “ইহারা ঈশ্বরের সিংহাসনের সম্মুখে আছে; এবং তাহারা দিবারাত্র তাঁহার মন্দিরে তাঁহার আরাধনা [পবিত্র সেবা] করে, আর যিনি সিংহাসনে বসিয়া আছেন, তিনি ইহাদের উপরে আপন তাম্বু বিস্তার করিবেন।” (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১৫) ইস্রায়েল দেশে, ধর্মান্তরিত ব্যক্তিরা শলোমনের মন্দিরের বাইরের প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে উপাসনা করতেন। একইভাবে, বিরাট জনতা যিহোবার আত্মিক মন্দিরের বাইরের প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে তাঁকে উপাসনা করেন। আর সেখানে দাঁড়িয়ে উপাসনা করেই তারা খুশি। (গীতসংহিতা ১২২:১) এমনকি তাদের অভিষিক্ত সঙ্গীদের শেষ জন স্বর্গে চলে গেলেও যিহোবার লোক হিসেবে তারা তাঁকে পবিত্র সেবা করেই যাবেন।—প্রকাশিত বাক্য ২১:৩.

যে পবিত্র সেবা যিহোবা গ্রহণ করেন না

১৬. পবিত্র সেবা সম্বন্ধে কী কী বিষয়ে সাবধান করা হয়েছে?

১৬ প্রাচীন ইস্রায়েলে যিহোবার ব্যবস্থার সঙ্গে মিল রেখে তাঁকে সেবা করতে হতো। (যাত্রাপুস্তক ৩০:৯; লেবীয় পুস্তক ১০:১, ২) একইভাবে আজকে আমরা যদি চাই যে যিহোবা আমাদের পবিত্র সেবা গ্রহণ করুন, তাহলে আমাদেরও কিছু করা দরকার। আর এইজন্যই প্রেরিত পৌল কলসীর খ্রীষ্টানদের লিখেছিলেন: “আমরাও, . . . তোমাদের নিমিত্তে প্রার্থনা ও বিনতি করিতে ক্ষান্ত হই নাই, যেন তোমরা সমস্ত আত্মিক জ্ঞানে ও বুদ্ধিতে তাঁহার ইচ্ছার তত্ত্বজ্ঞানে পূর্ণ হও, আর তদ্দ্বারা প্রভুর যোগ্যরূপে সর্ব্বতোভাবে প্রীতিজনক আচরণ কর, সমস্ত সৎকর্ম্মে ফলবান্‌ ও ঈশ্বরের তত্ত্বজ্ঞানে বর্দ্ধিষ্ণু হও।” (কলসীয় ১:৯, ১০) ঈশ্বরকে উপাসনা করার সঠিক পদ্ধতি কোন্‌টা, তা নির্ধারণ করা আমাদের দায়িত্ব নয়। বাইবেলের সঠিক জ্ঞান, আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো বোঝা এবং ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা খুবই জরুরি। তা না হলে পরিণতি খুবই মারাত্মক হতে পারে।

১৭. (ক) মোশির দিনে পবিত্র সেবা কীভাবে কলুষিত হয়ে পড়েছিল? (খ) আজকে কীভাবে পবিত্র সেবা বিকৃত হতে পারে?

১৭ মোশির সময়ের ইস্রায়েলীয়দের কথা মনে করে দেখুন। এই বিষয়ে আমরা পড়ি: “ঈশ্বর বিমুখ হইলেন, তাঁহাদিগকে আকাশের বাহিনী পূজা করিবার জন্য সমর্পণ করিলেন।” (প্রেরিত ৭:৪২) যিহোবা তাদের জন্য যে পরাক্রম কাজগুলো করেছিলেন ওই সময়ের ইস্রায়েলীয়রা তা দেখেছিল। তারপরেও তারা অন্য দেবতাদের উপাসনা করেছিল কারণ তারা ভেবেছিল, এতে তাদের উপকার হবে। তারা বিশ্বস্ত ছিল না কিন্তু আমরা যদি চাই যে ঈশ্বর আমাদের পবিত্র সেবা পেয়ে খুশি হন, তাহলে বিশ্বস্ততা খুবই জরুরি। (গীতসংহিতা ১৮:২৫) এটা ঠিক যে আজকে খুব অল্প খ্রীষ্টানরাই যিহোবার উপাসনা থেকে সরে গিয়ে আকাশের তারা বা সোনার বাছুরকে পুজো করে। তবে, আজকে অন্য ধরনের প্রতিমাপূজা রয়েছে। যীশু ‘ধনের’ সেবা করার বিরুদ্ধে সাবধান করে দিয়েছিলেন এবং প্রেরিত পৌল লোভকে প্রতিমাপূজা বলেছিলেন। (মথি ৬:২৪; কলসীয় ৩:৫) শয়তান নিজেকে ঈশ্বর বলে তুলে ধরে। (২ করিন্থীয় ৪:৪) এইরকম প্রতিমাপূজা দিন দিন বেড়ে চলেছে আর এগুলোই হল শয়তানের ফাঁদ। উদাহরণ হিসেবে এমন একজনের কথা চিন্তা করুন, যে যীশুকে মানে বলে দাবি করে অথচ তার জীবনের আসল লক্ষ্য হল ধনী হওয়া অথবা সে তার নিজের ওপর ও নিজের ধারণার ওপর সবচেয়ে বেশি আস্থা রাখে। কেউ যদি এরকম করে, তাহলে সে আসলে কাকে সেবা করছে? যিশাইয়ের দিনের ওই যিহুদিরা, যারা যিহোবার নামে শপথ করেছিল ঠিকই কিন্তু বড় বড় কাজগুলোর জন্য ইতর দেবতাদের কৃতিত্ব দিয়েছিল, তাদের চেয়ে সে কি কোন দিক দিয়ে আলাদা?—যিশাইয় ৪৮:১, ৫.

১৮. আগে কীভাবে পবিত্র সেবা ভুলভাবে করা হয়েছিল এবং আজকে তা কীভাবে করা হচ্ছে?

১৮ যীশুও সাবধান করে দিয়েছিলেন: “সময় আসিতেছে, যখন যে কেহ তোমাদিগকে বধ করে, সে মনে করিবে, আমি ঈশ্বরের উদ্দেশে উপাসনা-বলি উৎসর্গ [পবিত্র সেবা] করিলাম।” (যোহন ১৬:২) কোন সন্দেহ নেই যে, শৌল যিনি পরে প্রেরিত পৌল হয়েছিলেন তিনি যখন ‘স্তিফানের হত্যার অনুমোদন করিতেছিলেন’ এবং “প্রভুর শিষ্যদের বিরুদ্ধে ভয়প্রদর্শন ও হত্যার নিশ্বাস টানিতেছিলেন” তখন মনে করেছিলেন যে, তিনি ঈশ্বরের সেবাই করছিলেন। (প্রেরিত ৭:৬০; ৯:১) আজকে যারা কোন জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার চেষ্টা করে বা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় যোগ দেয় তাদের মধ্যে কেউ কেউ ঈশ্বরের উপাসনা করে বলে দাবি করে। হ্যাঁ, আজকে এমন অনেক লোকেরা আছে যারা ঈশ্বরকে উপাসনা করে বলে দাবি করে কিন্তু তারা আসলে জাতীয়তাবাদ, উপজাতিবাদ, ধনসম্পত্তি, নিজেকে অথবা অন্য কোন দেবতাদের উপাসনা করছে।

১৯. (ক) আমাদের পবিত্র সেবাকে আমরা কোন্‌ চোখে দেখি? (খ) কোন্‌ ধরনের পবিত্র সেবা আনন্দ নিয়ে আসবে?

১৯ যীশু বলেছিলেন: “তোমার ঈশ্বর প্রভুকেই [যিহোবাকেই] প্রণাম করিবে, কেবল তাঁহারই আরাধনা [পবিত্র সেবা] করিবে।” (মথি ৪:১০, ১১) যীশু এই কথাগুলো শয়তানের উদ্দেশে বলছিলেন কিন্তু এতে আমাদের সবার মন দেওয়া কতই না জরুরি! নিখিল বিশ্বের সার্বভৌম প্রভুকে পবিত্র সেবা দেওয়াই হল সবচেয়ে বড় ও চমৎকার সুযোগ। আর আমাদের উপাসনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত জনসেবা সম্বন্ধেই বা কী বলা যায়? আমাদের আশেপাশের লোকেদের জন্য কাজ করা খুবই আনন্দের আর তা করে আমরা আনন্দ পাই। (গীতসংহিতা ৪১:১, ২; ৫৯:১৬) কিন্তু, এইধরনের সেবা একমাত্র তখনই প্রকৃত আনন্দ নিয়ে আসে যদি তা মন থেকে ও সঠিক পদ্ধতিতে করা হয়। কারা সত্যি সত্যি ঈশ্বরকে সঠিকভাবে উপাসনা করছেন? কাদের পবিত্র সেবা যিহোবা গ্রহণ করেন? আমরা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারব যদি আমাদের উপাসনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বাইবেলের তৃতীয় শব্দটা নিয়ে আমরা আলোচনা করি। পরের প্রবন্ধে এই বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

[পাদটীকাগুলো]

a খ্রীষ্টীয়জগতে সাধারণ লোকেদের জন্য ধর্মীয় আচারগুলোর মধ্যে রয়েছে উপাসনাসংক্রান্ত অনুষ্ঠানাদি বা নির্দিষ্ট রেওয়াজ যেমন, রোমান ক্যাথলিক গির্জার কমুনিয়ন গ্রহণ।

b প্রেরিত ১৩:২ পদে যেমন বলা হয়েছে যে আন্তিয়খিয়ার ভাববাদী ও শিক্ষকরা যিহোবার “সেবা” (লিটোরিয়া-র সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত একটা গ্রিক শব্দ অনুবাদ করা হয়েছে) করছিলেন। সম্ভবত এই সেবা বলতে লোকেদের কাছে প্রচার করাও বুঝিয়েছিল।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• কোন্‌ মহান জনসেবা যীশু করেছিলেন?

• খ্রীষ্টানরা কীভাবে জনসেবা করেন?

• খ্রীষ্টানদের পবিত্র সেবা বলতে কী বোঝায় আর তা কোথায় করা হয়?

• আমরা যদি পবিত্র সেবা দিয়ে ঈশ্বরকে খুশি করতে চাই, তাহলে আমাদের কী করতে হবে?

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

বাবামায়েরা দিয়ে অনেক আনন্দ পান

[১২, ১৩ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

খ্রীষ্টানরা যখন অন্যদের সাহায্য করেন ও সুসমাচার প্রচার করেন তখন তারা জনসেবা করেন

[১৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমাদের সেবা ঈশ্বর গ্রহণ করছেন কি না, তা জানার জন্য সঠিক জ্ঞান ও বোঝার ক্ষমতা দরকার

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৫)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার