ইপাফ্রদীত—ফিলিপীয়দের প্রেরিত
“তোমরা তাঁহাকে প্রভুতে সম্পূর্ণ আনন্দ সহকারে গ্রহণ করিও, এবং এই প্রকার লোকদিগকে সমাদর করিও,” পৌল ফিলিপীয়দের উদ্দেশ্যে লিখেছিলেন। কোন সন্দেহ নেই যে আমরাও খুশি হব যদি আমাদের সম্বন্ধে এইধরনের প্রশংসাসূচক মন্তব্য কোন খ্রীষ্টীয় অধ্যক্ষ করেন। (ফিলিপীয় ২:২৯) কিন্তু পৌল কার সম্বন্ধে কথা বলছিলেন? আর সেই ব্যক্তিটি, কী এমন করেছিলেন যার জন্য এইধরনের আন্তরিক প্রশংসা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন?
প্রথম প্রশ্নটির উত্তর হল ইপাফ্রদীত। দ্বিতীয় প্রশ্নটির উত্তর পাওয়ার জন্য আসুন আমরা সেই পরিস্থিতিটি বিবেচনা করে দেখি যা পৌলকে এই কথাগুলি লিখতে প্রণোদিত করেছিল।
প্রায় সা.শ. ৫৮ সালে, ফিলিপীয়রা শুনেছিল যে পৌলকে মন্দিরের বাইরে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং যিরূশালেমে দুষ্ট জনতার দ্বারা প্রহার করা হয়েছে, কর্তৃপক্ষদের দ্বারা গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তারপর কারারুদ্ধ করার পর যখন কর্তৃপক্ষেরা তাকে আটকে রাখা সম্বন্ধে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি, তখন তাকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রোমে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। (প্রেরিত ২১:২৭-৩৩; ২৪:২৭; ২৭:১) তার মঙ্গল সম্বন্ধে চিন্তা করে, তারা অবশ্যই নিজেদের জিজ্ঞাসা করেছে যে তারা তার জন্য কী করতে পারে। বস্তুগত দিক দিয়ে তারা ছিল দরিদ্র এবং পৌলের থেকে তারা অনেক দূরে ছিল, সুতরাং যে সাহায্য তারা করতে পারত তা ছিল সীমিত। তবুও, যে আন্তরিক অনুভূতি অতীতে ফিলিপীয়দের প্রণোদিত করেছিল তার পরিচর্যায় সাহায্য করতে তখনও তা তাদের প্রণোদিত করেছিল; এমনকি তার চেয়েও বেশি, যেহেতু তিনি এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ছিলেন।—২ করিন্থীয় ৮:১-৪; ফিলিপীয় ৪:১৬.
ফিলিপীয়েরা অবশ্যই বিবেচনা করেছে তাদের মধ্যে কেউ উপহার নিয়ে পৌলকে পরিদর্শন করতে পারে কি না এবং তার কোন প্রয়োজনে সাহায্য করতে পারে কি না। কিন্তু এটি ছিল এক দীর্ঘ এবং ক্লান্তিকর যাত্রা এবং তাকে সাহায্য করা হয়ত বিপদজনকও ছিল! ইওকিম গনিলকা বলেন: “কোন বন্দীকে সাক্ষাৎ করার জন্য সাহসের প্রয়োজন ছিল আর তা আরও বেশি প্রয়োজন ছিল সেই ব্যক্তির ক্ষেত্রে যার ‘অপরাধ’ এর ব্যাখ্যা সম্পূর্ণরূপে বিভ্রান্তিকর ছিল।” লেখক ব্রায়ন রেপস্কি বলেন: “কারারুদ্ধ ব্যক্তির সাথে বেশি সহজভাবে ঘনিষ্ঠ মেলামেশা অথবা তার প্রতি কিংবা তার মনোভাবের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া ছিল একটি বাড়তি বিপদ। . . . দুর্ঘটনাবশতঃ কোন কথা বা কাজ হয়ত কেবলমাত্র বন্দীকেই নয়, কিন্তু তা পরিদর্শনকারীকেও মৃত্যুতে পরিচালিত করত।” তাই ফিলিপীয়রা কাকে পাঠাতে পারতো?
আমরা হয়ত ভালভাবেই কল্পনা করতে পারি যে এইধরনের এক যাত্রা উদ্বিগ্ন ও অনিশ্চয়তা জাগাতে পারত, কিন্তু ইপাফ্রদীত (কলসীয়ের ইপাফ্রাসের সাথে বিভ্রান্ত হবেন না) এই কঠিন কাজ পালন করতে ইচ্ছুক ছিলেন। তার নাম দিয়ে বিবেচনা করলে, যেটি অ্যাফ্রদিতের সমগাত্রীয়, বোঝা যায় তিনি হয়ত পরজাতীয় থেকে খ্রীষ্টধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন—প্রেম ও উর্বরতার গ্রীক দেবীর কাছে উৎসর্গীকৃত পিতামাতার ছেলে ছিলেন। তাদের উদারতার জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাতে গিয়ে পৌল যখন ফিলিপীয়দের উদ্দেশ্যে লিখেছিলেন, তিনি উপযুক্তভাবে ইপাফ্রদীতকে “তোমাদের প্রেরিত ও আমার প্রয়োজনীয় উপকারার্থক সেবক” বলে বর্ণনা করতে পেরেছিলেন।—ফিলিপীয় ২:২৫.
ইপাফ্রদীত সম্বন্ধে বাইবেল যা বলে তার থেকে আমরা বুঝতে পারি যে পৌলের এবং তার নিজের মণ্ডলীর জন্য এই সেবায় নিজেকে ব্যবহার করার জন্য তার প্রশংসনীয় ইচ্ছুক মনোভাব থাকা সত্ত্বেও, ইপাফ্রদীতেরও আমাদের মত একই ধরনের সমস্যাগুলি ছিল। আসুন আমরা তার উদাহরণটি বিবেচনা করি।
“আমার প্রয়োজনীয় উপকারার্থক সেবক”
আমরা বিস্তারিতভাবে জানি না, কিন্তু আমরা কল্পনা করে নিতে পারি যে তার যাত্রা পথে ক্লান্ত হয়ে ইপাফ্রদীত রোমে পৌঁছেছিলেন। তিনি সম্ভবত রোমের একটি রাস্তা ভিয়ো ইগনোটিয়ো যেটি মেসিডোনিয়া অতিক্রম করে গেছে সেটি ধরে যাত্রা করেছিলেন। তিনি হয়ত অ্যাড্রিয়াটিক অতিক্রম করেছিলেন ইতালির পেনিনসুলার “পাদপীঠ” এবং তারপর আপ্পিয়ানের পথ ধরে রোমে যান। এটি ছিল এক ক্লান্তিকর যাত্রা (এক বারের পথ ১,২০০ কিলোমিটার) যা সম্ভবত এক মাসেরও বেশি সময় নিয়েছিল।—২৯ পৃষ্ঠায় বাক্স দেখুন।
কিধরনের মনোভাব নিয়ে ইপাফ্রদীত যাত্রা করেছিলেন? পৌলের উদ্দেশ্য ‘উপকারার্থক সেবা’ অর্থাৎ লিইটুরগিয়া নিবেদন করতে তাকে পাঠান হয়েছিল। (ফিলিপীয় ২:৩০) এই গ্রীক শব্দটি মূলতঃ কোন নাগরিকের দ্বারা স্বেচ্ছায় রাষ্ট্রের পক্ষে কাজ করার প্রতি ইঙ্গিত করে। পরে, এটি বুঝিয়েছিল সেই ধরনের সেবা যা নাগরিকদের কাছ থেকে যারা এটি সম্পাদন করার জন্য বিশেষভাবে যোগ্য, বাধ্যতামূলকভাবে রাষ্ট্র দাবি করেছিল। গ্রীক শাস্ত্রে এই শব্দটির ব্যবহার সম্বন্ধে, একজন পণ্ডিত বলেন: “খ্রীষ্টান হল এমন এক ব্যক্তি যে ঈশ্বরের জন্য এবং মানুষের জন্য কাজ করে, প্রথমত, সে তার সম্পূর্ণ হৃদয় দিয়ে করতে ইচ্ছুক সেই কারণে, দ্বিতীয়ত, সে তা করতে বাধ্য কারণ খ্রীষ্টের প্রেম তাকে তা করতে বাধ্য করে।” হ্যাঁ, কী এক সর্বোৎকৃষ্ট মনোভাবই না ইপাফ্রদীত দেখিয়েছিলেন!
‘তিনি প্রাণপণ করেছিলেন’
জুয়াখেলার ভাষা থেকে নেওয়া একটি শব্দ ব্যবহার করে পৌল বলেছিলেন যে ইপাফ্রদীত “প্রাণপণ [প্যারাবোলিউসামিনোস] করেছিলেন,” অথবা আক্ষরিকভাবে, খ্রীষ্টের সেবার জন্য তার জীবন নিয়ে “জুয়া খেলেছিলেন।” (ফিলিপীয় ২:৩০) আমাদের চিন্তা করার প্রয়োজন নেই যে ইপাফ্রদীত মূর্খের মত কোন কাজ করেছিলেন; বরঞ্চ, চিন্তা করা প্রয়োজন যে তার পবিত্র সেবা পরিপূর্ণ করার সাথে এক বিশেষ ঝুঁকি জড়িত ছিল। রুক্ষ আবহাওয়ার সময়ে তিনি কি সম্ভবত তার কাজ থেকে অব্যাহতি পাবার চেষ্টা করেছিলেন? যাত্রা পথে কোন সময়ে অসুস্থ হয়ে পড়ার পর তিনি কি তা সম্পূর্ণ করার চেষ্টায় অধ্যবসায়ী হয়েছিলেন? যে কোন ভাবেই হোক, ইপাফ্রদীত “পীড়ায় মৃতকল্প হইয়াছিলেন।” সম্ভবত তাকে পৌলের সেবা করার জন্য তার সাথে আরও সময় থাকার ছিল, সুতরাং আপাতদৃষ্টিতে প্রেরিত তার প্রত্যাশিত সময়ের পূর্বেই ফিরে যাওয়ার বিষয়টিকে সমর্থন করতে চেয়েছিলেন।—ফিলিপীয় ২:২৭.
তৎসত্ত্বেও, ইপাফ্রদীত ছিলেন একজন সাহসী ব্যক্তি যিনি যাদের প্রয়োজন তাদের জন্য সাহায্য আনতে নিঃস্বার্থপরভাবে নিজেকে উন্মোচন করতেও ইচ্ছুক ছিলেন।
আমরা হয়ত নিজেদেরকে জিজ্ঞাসা করতে পারি, ‘আমার যে সমস্ত ভাইয়েরা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে তাদের সাহায্য করতে আমি কতদূর পর্যন্ত প্রাণপণ করতে পারি?’ এইধরনের ইচ্ছুক আত্মা খ্রীষ্টানদের জন্য ঐচ্ছিক নয়। যীশু বলেছিলেন: “এক নূতন আজ্ঞা আমি তোমাদিগকে দিতেছি, তোমরা পরস্পর প্রেম কর; আমি যেমন তোমাদিগকে প্রেম করিয়াছি, তোমরাও তেমনি পরস্পর প্রেম কর।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (যোহন ১৩:৩৪) “মৃতকল্প” হয়ে ইপাফ্রদীত তার সেবা কার্য চালিয়ে গিয়েছিলেন। তাহলে, ইপাফ্রদীত সেই ব্যক্তির মত এক উদাহরণস্বরূপ ছিলেন যার “মানসিক ভাব” ছিল যেটি থাকার জন্য পৌল ফিলিপীয়দের উৎসাহিত করেছিলেন। (ফিলিপীয় ২:৫, ৮, ৩০, কিংডম ইন্টারলিনিয়ার) আমরা কি ততদূর পর্যন্ত যেতে প্রস্তুত আছি?
তবুও, ইপাফ্রদীত হতাশ হয়েছিলেন। কেন?
তার হতাশা
ইপাফ্রদীতের পরিস্থিতিতে নিজেকে কল্পনা করুন। পৌল বিবৃতি দিয়েছিলেন: “তিনি তোমাদের সকলকে দেখিবার জন্য আকাঙ্ক্ষী ছিলেন, এবং তোমরা তাঁহার পীড়ার সংবাদ শুনিয়াছ বলিয়া তিনি ব্যাকুল হইয়াছিলেন।” (ফিলিপীয় ২:২৬) ইপাফ্রদীত জানতেন যে তার মণ্ডলীর ভাইয়েরা অবগত ছিল যে তিনি অসুস্থ ছিলেন এবং যতটা তারা আশা করেছিল ততটা তিনি পৌলকে সাহায্য করতে সমর্থ হবেন না। বস্তুতপক্ষে, এটি মনে হতে পারে যে ইপাফ্রদীত পৌলের জন্য আরও বেশি উদ্বেগ সৃষ্টি করেছিলেন। পৌলের সঙ্গী, চিকিৎসক লূককে কি ইপাফ্রদীতের যত্ন নেওয়ার জন্য অন্যান্য বিষয়গুলিকে উপেক্ষা করতে হয়েছিল?—ফিলিপীয় ২:২৭, ২৮; কলসীয় ৪:১৪.
সম্ভবত পরিণামস্বরূপ, ইপাফ্রদীত হতাশ হয়ে পড়েন। সম্ভবত তিনি চিন্তা করেছিলেন যে তার মণ্ডলীর ভাইয়েরা তাকে অযোগ্য বলে বিবেচনা করছিল। হয়ত তিনি দোষী অনুভব করছিলেন এবং তার বিশ্বস্ততা সম্বন্ধে তাদের পুনরায় আশ্বস্ত করতে তাদের দেখতে “আকাঙ্ক্ষী” ছিলেন। ইপাফ্রদীতের অবস্থাকে বর্ণনা করতে পৌল একটি কঠিন গ্রীক শব্দ, এডিমোনিও, “হতাশ হওয়া” ব্যবহার করেছিলেন। পণ্ডিত জে. বি. লাইটফুটের কথা অনুসারে, এই শব্দটি ইঙ্গিত করতে পারে “বিভ্রান্ত, অস্থির, অর্ধ-বিক্ষিপ্ত অবস্থা, যেটি শারীরিক বিকৃতি অথবা মানসিক চাপ, যেমন দুঃখ, লজ্জা, হতাশা ইত্যাদির ফলে উৎপন্ন হয়।” গ্রীক শাস্ত্রে এই শব্দের কেবলমাত্র অন্য আর একটি ব্যবহার বর্ণনা করে গেৎশিমানী বাগানে যীশুর মর্মান্তিক যন্ত্রণাকে।—মথি ২৬:৩৭.
পৌল এই উপসংহারে এসেছিলেন যে সবচেয়ে উত্তম বিষয় হবে, তাদের প্রেরিতের অপ্রত্যাশিত ফিরে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে, এমন একটি পত্র দিয়ে ইপাফ্রদীতকে ফিলিপীয়দের কাছে ফেরত পাঠান। “ইপাফ্রদীতকে তোমাদের নিকটে পাঠাইয়া দেওয়া আমার আবশ্যক বোধ হইল,” এই বলে পৌল তার ফিরে যাওয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন আর এইভাবে ইপাফ্রদীত যে ব্যর্থ হয়েছেন সেই বিষয়ে যে কোন সম্ভাব্য সন্দেহ দূরীভূত করেন। (ফিলিপীয় ২:২৫) অন্যদিকে, তার কাজ সম্পন্ন করতে ইপাফ্রদীত প্রায় তার জীবন হারাতে বসেছিলেন! পৌল আন্তরিকভাবে তাদের সুপারিশ করেছিলেন যে “তাঁহাকে প্রভুতে সম্পূর্ণ আনন্দ সহকারে গ্রহণ করিও, এবং এই প্রকার লোকদিগকে সমাদর করিও; কেননা খ্রীষ্টের কার্য্যের নিমিত্তে তিনি মৃত্যুমুখে উপস্থিত হইয়াছিলেন, ফলতঃ আমার সেবায় তোমাদের ত্রুটি পূরণার্থে প্রাণপণ করিয়াছিলেন।”—ফিলিপীয় ২:২৯, ৩০.
“এই প্রকার লোকদিগকে সমাদর করিও”
যে সমস্ত পুরুষ ও নারীদের ইপাফ্রদীতের মত একই মানসিকতা রয়েছে তাদের সত্যই উপলব্ধি করা উচিত। সেবার জন্য তারা নিজেদের উৎসর্গ করে। সেই সকল ব্যক্তিদের বিষয় চিন্তা করুন যারা সেবা করার জন্য ঘর থেকে বহু দূরে মিশনারী হিসাবে, ভ্রমণ অধ্যক্ষ হিসাবে অথবা ওয়াচ টাওয়ার সমিতির শাখা অফিসের কোন একটিতে নিজেদের উৎসর্গ করেছে। যদি বয়স অথবা অক্ষম স্বাস্থ্য কিছুজনকে এখন তা করা থেকে বিরত করে যা তারা এক সময়ে করেছিল, তবুও তাদের বিশ্বস্ত সেবার বছরগুলির জন্য তারা শ্রদ্ধার যোগ্য এবং তাদের উচ্চমূল্য দেওয়া প্রয়োজন।
তৎসত্ত্বেও, দুর্বল স্বাস্থ্য হয়ত হতাশা অথবা দোষ অনুভব করার উৎস হতে পারে। একজন আরও বেশি কিছু করতে চায়। কতই না হতাশাজনক! যে কেউ নিজেদের এই পরিস্থিতির মধ্যে খুঁজে পায় সে ইপাফ্রদীতের থেকে শিক্ষালাভ করতে পারে। সর্বোপরি, তিনি যে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন সেটি কি তার নিজের কোন দোষ ছিল? অবশ্যই নয়! (আদিপুস্তক ৩:১৭-১৯; রোমীয় ৫:১২) ইপাফ্রদীত চেয়েছিলেন ঈশ্বরের ও তার ভাইয়েদের সেবা করতে, কিন্তু অসুস্থতা তাকে সীমিত করেছিল।
তার অক্ষমতার জন্য পৌল ইপাফ্রদীতকে ভর্ৎসনা করেননি, বরং ফিলিপীয়দের বলেছিলেন তার কাছাকাছি থাকতে। একইভাবে, আমাদের উচিত আমাদের ভাইয়েদের সান্ত্বনা দেওয়া যখন তারা হতাশাজনক অবস্থায় থাকে। সাধারণভাবে আমরা তাদের সেবার বিশ্বস্ত উদাহরণের জন্য তাদের প্রশংসা করতে পারি। বস্তুত, পৌল ইপাফ্রদীতের প্রশংসা করেছিলেন, তার সম্বন্ধে খুব ভাল ভাল কথা বলেছিলেন, অবশ্যই তা তাকে সান্ত্বনা দিয়েছিল, তার হতাশার উপশম করেছিল। আমরাও নিশ্চিত হতে পারি যে ‘ঈশ্বর অন্যায়কারী নহেন; আমাদের কার্য্য, এবং আমরা পবিত্রগণের যে পরিচর্য্যা করিয়াছি ও করিতেছি, তদ্দ্বারা তাঁহার নামের প্রতি প্রদর্শিত আমাদের প্রেম, এই সকল তিনি ভুলিয়া যাইবেন না।’—ইব্রীয় ৬:১০.
[২৯ পৃষ্ঠার বাক্স]
যাত্রাপথের অস্বাচ্ছন্দ্যগুলি
আজকের দিনে ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ দুটি শহরের মধ্যে যাত্রা করা, ইপাফ্রদীত যা করেছিলেন, সেইরূপ করার জন্য হয়ত বৃহৎ প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয় না। যাত্রাটি হয়ত জেট বিমানে এক অথবা দুই ঘন্টায় স্বাচ্ছন্দ্যে শেষ করা যেতে পারে। কিন্তু প্রথম শতাব্দীতে এইধরনের যাত্রা করা সম্পূর্ণরূপে এক ভিন্ন অবস্থা ছিল। তখনকার দিনে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার অর্থ ছিল অস্বাচ্ছন্দ্য। একজন পদব্রজে ভ্রমণকারী দিনে ৩০ থেকে ৩৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে পারত, যখন নিজেকে প্রতিকূল আবহাওয়া এবং বিভিন্ন বিপদ যার অন্তর্ভুক্ত ছিল ‘দস্যু-সংকট,’ তার মাঝে তাকে পড়তে হত।—২ করিন্থীয় ১১:২৬.
সারারাত্রিব্যাপী বিরাম এবং ব্যবস্থাদির সরবরাহ সম্বন্ধে বা কী?
ইতিহাসবেত্তা মিচিলানগিলো ক্যাগিয়ানো ডি এজিভিডো উল্লেখ করেন যে রোমের রাস্তাগুলিতে, “ম্যানসনিস্, দোকান, আস্তাবল ও তাদের কর্মচারীদের জন্য বাসস্থানসহ পুরাদস্তুর হোটেলগুলি ছিল; দুটি ম্যানসনিস্ এর মধ্যে আনুক্রমিক কিছু সংখ্যক মিউটেসনস্ অথবা অল্পক্ষণের জন্য থাকার জায়গা থাকত, যেখানে একজন ব্যক্তি তার ঘোড়া অথবা গাড়ি বদলাতে পারত এবং প্রয়োজনীয় দ্রব্য পেতে পারত।” এই রেস্তরাঁগুলির খুবই খারাপ নাম ছিল কারণ সেখানে প্রায়ই সমাজের নিম্ন শ্রেণীর লোকেরা আসত। ভ্রমণকারীদের কাছ থেকে লুণ্ঠন করা ছাড়াও, সরাইখানার মালিকেরা প্রায়ই বেশ্যাদের উপার্জনের দ্বারা তাদের আয়ের অভাব পূরণ করত। ল্যাটিন বিদ্রূপাত্মক কবি জুভেনাল মন্তব্য করেছিলেন যে, যে কেউ যারা নিজেরা এইধরনের কোন রেস্তরাঁয় থাকতে বাধ্য হত, তারা হয়ত নিজেদের “এক দুর্বৃত্তের পাশের বিছানায় শোওয়া প্রমোদতরীর মালিকদের, চোরদের ও পলাতক দাসেদের সঙ্গে থাকা, জল্লাদ এবং কফিন প্রস্তুতকারকদের মাঝে খুঁজে পেত” . . . “একই কাপ প্রত্যেকে ব্যবহার করত; কারও নিজের জন্য বিছানা কিংবা টেবিল থাকত না।” অন্যান্য প্রাচীন লেখকেরা খেদ প্রকাশ করেছেন দূষিত পানীয় জল এবং খারাপ ঘরগুলির জন্য, যেগুলি জনারণ্য, নোংরা, সেঁতসেঁতে এবং মাছি দ্বারা পরিব্যাপ্ত থাকত।
[২৭ পৃষ্ঠার মানচিত্র/চিত্র]
রোম
[চিত্র]
রোমীয়দের সময়ে এক ভ্রমণকারী
[সৌজন্যে]
Map: Mountain High Maps® Copyright © 1995 Digital Wisdom, Inc.; Traveler: Da originale del Museo della Civilta Romana, Roma