ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • bt অধ্যায় ২৭ পৃষ্ঠা ২১১-২১৭
  • তিনি ‘পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দেন’

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • তিনি ‘পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দেন’
  • ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে ‘পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দেওয়া’!
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • “পৌল ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন এবং উৎসাহ লাভ করলেন” (প্রেরিত ২৮:১৪, ১৫)
  • “লোকেরা সমস্ত জায়গায় এই দলের বিরুদ্ধে কথা বলে থাকে” (প্রেরিত ২৮:১৬-২২)
  • ‘পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সাক্ষ্য দেওয়ার’ ক্ষেত্রে এক উত্তম উদাহরণ (প্রেরিত ২৮:২৩-২৯)
  • “তিনি . . . ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে প্রচার করতেন” (প্রেরিত ২৮:৩০, ৩১)
  • পৌল রোমে
    আমার বাইবেলের গল্পের বই
  • সাহসী হোন—যিহোবা আপনার সাহায্যকারী
    প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য সম্বন্ধে ঘোষণা করে (অধ্যয়ন)—২০২০
  • “আমি কারো রক্তের দায়ে দোষী নই”
    ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে ‘পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দেওয়া’!
  • উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সামনে সুসমাচারের পক্ষসমর্থন করা
    প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে (অধ্যয়ন)—২০১৬
আরও দেখুন
ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে ‘পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দেওয়া’!
bt অধ্যায় ২৭ পৃষ্ঠা ২১১-২১৭

অধ্যায় ২৭

তিনি ‘পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দেন’

পৌল রোমে বন্দি থাকা সত্ত্বেও প্রচার করে চলেন

প্রেরিত ২৮:১১-৩১ পদের উপর ভিত্তি করে

১. পৌল এবং তার সঙ্গীরা কার উপর আস্থা রেখেছিলেন এবং কেন?

সময়টা ছিল প্রায় ৫৯ খ্রিস্টাব্দ। এক বড়ো মালবাহী জাহাজ মাল্টা দ্বীপ থেকে ইতালি যাচ্ছে। এই জাহাজে পৌলকে বন্দি করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তাই একজন সৈন্য তাকে পাহারা দিচ্ছে। পৌলের সঙ্গে তার দুই বন্ধু লূক ও আরিষ্টার্খ আছেন। (প্রেরিত ২৭:২) এই জাহাজে করে হয়তো শস্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং এর সামনের দিকে গ্রিক দেবতা “জিউসের যমজ ছেলে” কাস্তর ও পোলেক্সের চিহ্ন রয়েছে। জাহাজের নাবিকেরা মনে করে, জিউসের ছেলেরা তাদের রক্ষা করবে। (প্রেরিত ২৮:১১) কিন্তু, পৌল এবং তার সঙ্গীদের যিহোবার উপর আস্থা রয়েছে। যিহোবা পৌলকে বলেছিলেন যে, পৌল রোমে সত্য সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেবেন এবং কৈসরের সামনে গিয়ে দাঁড়াবেন।—প্রেরিত ২৩:১১; ২৭:২৪.

২, ৩. (ক) পৌলের জাহাজ কোন পথ ধরে যাত্রা করেছিল? (খ) কে সবসময় পৌলের সঙ্গে ছিলেন?

২ পথে জাহাজটা সুরাকূষে পৌঁছে তিন দিন থাকে। সুরাকূষ হল সিসিলি দ্বীপের এক সুন্দর নগর এবং এথেন্স ও রোমের মতোই বিখ্যাত। জাহাজ সুরাকূষ থেকে রওনা দিয়ে ইতালির দক্ষিণে রীগিয়ে পৌঁছায়। এবার জাহাজ রীগিয় থেকে পূতিয়লী বন্দরে পৌঁছাবে, যেটা বর্তমানে নেপলস শহরের পাশে অবস্থিত। সেখানে পৌঁছাতে ৩২০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হবে অর্থাৎ প্রায় এক দিনের বেশি সময় লাগবে। কিন্তু, দক্ষিণা বাতাসের ফলে, জাহাজ এর পরের দিনই পূতিয়লী বন্দরে পৌঁছে যায়।—প্রেরিত ২৮:১২, ১৩.

৩ পৌল তার যাত্রার একদম শেষে এসে পৌঁছান। রোমে পৌঁছানোর পর তাকে সম্রাট নিরোর সামনে দাঁড় করানো হবে। যখন থেকে পৌল যাত্রা শুরু করেছেন, তখন থেকে “সমস্ত সান্ত্বনার ঈশ্বর” যিহোবা তার সঙ্গে রয়েছেন। (২ করি. ১:৩) এই অধ্যায়ে আমরা দেখব, যিহোবা ক্রমাগত পৌলের সঙ্গে রয়েছেন এবং পৌল উদ্যোগের সঙ্গে তার মিশনারি সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন।

“পৌল ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন এবং উৎসাহ লাভ করলেন” (প্রেরিত ২৮:১৪, ১৫)

৪, ৫. (ক) পূতিয়লীর ভাইয়েরা পৌল এবং তার সঙ্গীদের জন্য কী করেছিল এবং কেন পৌলকে এত স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছিল? (খ) খ্রিস্টানেরা জেলে উত্তম আচার-আচরণ বজায় রাখলে, কোন ভালো ফলাফল পাওয়া যায়?

৪ পূতিয়লীর কিছু খ্রিস্টান ভাই এসে পৌল এবং তার সঙ্গীদের সঙ্গে দেখা করে এবং ‘তাদের সঙ্গে সাত দিন থাকার জন্য অনুরোধ করে।’ (প্রেরিত ২৮:১৪) সেই খ্রিস্টান ভাইয়েরা তাদের প্রয়োজনীয় জিনিস জোগানোর ক্ষেত্রে কতই-না উত্তম এক উদাহরণ রেখেছিল! তাদের এই উদারতার কারণে তারা নিশ্চয়ই অনেক আশীর্বাদ পেয়েছিল। পৌল এবং তার সঙ্গীদের সঙ্গে মেলামেশা করার ফলে, ঈশ্বরের সেবা করার জন্য তাদের উদ্যোগ নিশ্চয়ই বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু, পৌল তো একজন বন্দি ছিলেন এবং সৈন্যদের পাহারায় ছিলেন, তা হলে কেন তাকে ভাই-বোনদের সঙ্গে থাকার অনুমতি দেওয়ার মাধ্যমে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছিল? এর কারণ হতে পারে, পৌল ভালো আচরণের মাধ্যমে রোমীয় সৈন্যদের মন জয় করে নিয়েছিলেন।

৫ বর্তমানেও যিহোবার সাক্ষিদের যখন জেলে বন্দি করা হয়, তখন তারা ভালো আচরণ দেখানোর মাধ্যমে আধিকারিকদের মন জয় করে নেয়। তাই, অনেক ক্ষেত্রে তাদের বেশ কিছু স্বাধীনতা দেওয়া হয়, যা অন্য বন্দিদের দেওয়া হয় না। রোমানিয়াতে এমনই কিছু হয়েছিল। একজন ব্যক্তি ডাকাতি করার অপরাধে ৭৫ বছর ধরে জেলে শাস্তি ভোগ করছিলেন। পরে তিনি বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেন এবং ধীরে ধীরে তার মনোভাব আর আচার-আচরণ পালটাতে শুরু করেন। জেলের আধিকারিকেরা যখন লক্ষ করেন, সেই ব্যক্তি অনেকটাই পালটে গিয়েছে, তখন তারা তাকে কিছু কাজের দায়িত্ব দিতে থাকেন। তারা তাকে এতটাই বিশ্বাস করতেন যে, তাকে একা একা শহর থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্য জেলের বাইরে পাঠিয়ে দিতেন। এটা দেখায় আমাদের উত্তম আচার-আচরণের কারণে ভালো ফলাফলের পাশাপাশি যিহোবারও গৌরব হয়।—১ পিতর ২:১২.

৬, ৭. কীভাবে রোমের ভাইয়েরা দেখিয়েছিল যে, তারা পৌলকে খুব ভালোবাসে?

৬ পূতিয়লী থেকে পৌল এবং তার সঙ্গীরা এক বিখ্যাত সড়ক পথ ধরে এগোতে থাকেন। এই সড়ক পথের নাম হল অপ্পিয়ের সড়ক, যা রোম পর্যন্ত গিয়েছে। এই সড়ক পথ লাভার বড়ো বড়ো সমতল পাথরের টুকরো দিয়ে তৈরি। তারা এই পথ ধরে প্রায় ৫০ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে প্রথমে কাপুয়া পৌঁছান। এই পথ দিয়ে যেতে যেতে ইতালির গ্রামাঞ্চলের খুব সুন্দর সুন্দর দৃশ্য দেখা যেত আর সেটার মাঝে মাঝে ভূমধ্যসাগরের দৃশ্য দেখা যেত। এই সড়ক পথ পন্টিন মার্শিস নামে এক জলাভূমির মধ্য দিয়ে গিয়েছে আর এই পথেই অপ্পিয়ের হাট ছিল। এখান থেকে রোম প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে ছিল। লূক লেখেন, রোমের ভাইয়েরা যখন ‘আমাদের বিষয়ে জানতে পারল,’ যে আমরা আসছি, তখন তারা আমাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য বেরিয়ে পড়ল। তাদের মধ্যে কেউ কেউ অপ্পিয়ের হাট পর্যন্ত এল আর বাকি ভাইয়েরা প্রায় ৫০ কিলোমিটার হেঁটে তিন-সরাই নামক একটা জায়গায় গিয়ে তাদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকল। পৌলের প্রতি ভালোবাসাই এই ভাইদের এত দূরে টেনে নিয়ে এসেছিল!—প্রেরিত ২৮:১৫.

৭ দীর্ঘ যাত্রা করার ফলে রোমের ভাইয়েরা ক্লান্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু, অপ্পিয়ের হাটে তাদের বিশ্রাম নেওয়ার মতো কোনো ভালো জায়গা ছিল না। রোমীয় কবি ও লেখক হোরেস এই হাটের বিষয়ে বলেন, “সেখানে এত বেশি নাবিক থাকত যে পা রাখারও জায়গা হত না এবং সরাইখানার মালিকেরা যাত্রীদের সঙ্গে খুবই খারাপ ব্যবহার করত।” তিনি এও বলেন, “সেখানকার জল খুবই নোংরা ছিল, যা থেকে পচা দুর্গন্ধ বের হত।” আর তিনি এমনকি সেখানকার খাবার খেতেও রাজি হননি! কিন্তু, এইরকম একটা জঘন্য জায়গায় রোমের ভাইয়েরা আনন্দের সঙ্গে পৌল এবং তার সঙ্গীদের জন্য অপেক্ষা করছিল। সেই ভাইয়েরা তাদের এই যাত্রার শেষ পর্যন্ত তাদের সঙ্গে থাকতে চায় এবং সাহায্য করতে চায়।

৮. ভাইদের ‘দেখতে পেয়েই’ কেন পৌল ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়েছিলেন?

৮ বিবরণ জানায়, “তাদের দেখতে পেয়ে পৌল ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন এবং উৎসাহ লাভ করলেন।” (প্রেরিত ২৮:১৫) হতে পারে, পৌল তাদের মধ্যে কিছু ভাইকে আগে থেকেই চিনতেন। তাই, তাদের দেখেই পৌল অনেক সাহস এবং উৎসাহ পান। কিন্তু, তাদের দেখে পৌল ঈশ্বরকে কেন ধন্যবাদ দিলেন? কারণ পৌল দেখতে পাচ্ছিলেন যে, এই ভাইয়েরা তাকে কত ভালোবাসে এবং তিনি জানতেন যে, এই প্রেম ঈশ্বরের পবিত্র শক্তির একটা গুণ। (গালা. ৫:২২) বর্তমানেও পবিত্র শক্তি খ্রিস্টানদের অনুপ্রাণিত করে, যেন তারা নিজের চেয়ে ভাই-বোনদের বিষয়ে চিন্তা করে এবং প্রয়োজনের সময় তাদের সাহায্য করে আর সান্ত্বনা দেয়।—১ থিষল. ৫:১১, ১৪.

৯. কীভাবে আমরা রোমের ভাইদের মতো হতে পারি?

৯ উদাহরণ স্বরূপ, পবিত্র শক্তি খ্রিস্টানদের অনুপ্রাণিত করে, যেন তারা সীমা অধ্যক্ষ, মিশনারি এবং অন্যান্য পূর্ণ সময়ের দাসদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর যত্ন নেয়। এদের মধ্যে অনেকেই যিহোবার সেবায় আরও বেশি করার জন্য অনেক বড়ো বড়ো ত্যাগস্বীকার করেছে। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘যখন সীমা অধ্যক্ষ এবং তার স্ত্রী আমার মণ্ডলীতে পরিদর্শন করতে আসেন, তখন আমি কি তাদের আতিথেয়তা দেখাতে পারি? আমি কি তাদের সঙ্গে প্রচারে যাওয়ার পরিকল্পনা করতে পারি?’ এমনটা করার মাধ্যমে আপনি অনেক আশীর্বাদ পাবেন। একটু চিন্তা করুন, রোম থেকে আসা সেই ভাইয়েরা কোন আশীর্বাদ লাভ করেছিল? পৌল এবং তার সঙ্গীরা নিশ্চয়ই এই ভাইদের অনেক ভালো ভালো অভিজ্ঞতার বিষয়ে জানিয়েছিলেন। এর ফলে সেই ভাইয়েরা অনেক আনন্দিত এবং উৎসাহিত হয়েছিল।—প্রেরিত ১৫:৩, ৪

“লোকেরা সমস্ত জায়গায় এই দলের বিরুদ্ধে কথা বলে থাকে” (প্রেরিত ২৮:১৬-২২)

১০. (ক) রোমে পৌলকে কোথায় এবং কীভাবে রাখা হয়েছিল? (খ) রোমে পৌঁছানোর পর তিনি কী করেছিলেন?

১০ পৌল এবং তার সঙ্গীরা অবশেষে রোমে পৌঁছান। “পৌলকে একা থাকার অনুমতি দেওয়া হল আর তাকে পাহারা দেওয়ার জন্য একজন সৈন্যকে রাখা হল।” (প্রেরিত ২৮:১৬) সাধারণত যখন কোনো ব্যক্তিকে গৃহবন্দি করা হয়, তখন সৈন্যের একটা হাতের সঙ্গে সেই বন্দির একটা হাত শিকল দিয়ে বাঁধা থাকে, যেন সেই বন্দি পালিয়ে যেতে না পারে। পৌলকেও ঠিক এভাবেই রাখা হয়। কিন্তু, এইরকম অবস্থাতেও পৌল ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে প্রচার করতে থাকেন। কোনো শিকলই তাকে সাক্ষ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দিতে পারবে না। এইজন্য রোমে পৌঁছানোর তিন দিন পর, তিনি যিহূদিয়ার বিশেষ ব্যক্তিদের ডেকে পাঠান। তিনি তাদের নিজের বিষয়ে কিছু বলেন এবং তারপর সাক্ষ্য দিতে শুরু করেন।

১১, ১২. পৌল রোমের যিহুদিদের কাছে কীভাবে কথা বলেছিলেন?

১১ পৌল বলেন, “ভাইয়েরা, যদিও আমি লোকদের বিরুদ্ধে কিংবা আমাদের পূর্বপুরুষদের রীতিনীতির বিরুদ্ধে কিছুই করিনি, তবুও আমাকে জেরুসালেমে বন্দি করা হয়েছে এবং রোমীয়দের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আর রোমীয়েরা আমাকে জেরা করার পর মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার মতো কোনো দোষ খুঁজে না পেয়ে আমাকে মুক্ত করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু, যিহুদিরা এই ব্যাপারে বিরোধিতা করায় আমি কৈসরের কাছে আপিল করতে বাধ্য হলাম। তবে, আমার নিজের জাতির লোকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার জন্য আমি তা করিনি।”—প্রেরিত ২৮:১৭-১৯.

১২ পৌল সেই যিহুদিদের “ভাইয়েরা” বলে সম্বোধন করার মাধ্যমে তাদের মন জয় করার চেষ্টা করেন এবং তাদের মনে পৌলের ব্যাপারে কোনো সন্দেহ থেকে থাকলে, তিনি তা দূর করার চেষ্টা করেন। (১ করি. ৯:২০) এ ছাড়া, পৌল স্পষ্টভাবে জানান যে, তিনি নিজের জাতির লোকদের বিরুদ্ধে অর্থাৎ সেই যিহুদিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার জন্য নয় বরং কৈসরের কাছে আপিল করার জন্য রোমে এসেছেন। কিন্তু, যিহুদিরা এই বিষয়ে কিছুই জানত না যে, পৌল কৈসরের কাছে আপিল করার জন্য এসেছেন। (প্রেরিত ২৮:২১) কেন এই খবরটা যিহূদিয়া প্রদেশ থেকে এখনও পর্যন্ত রোমের যিহুদিদের কাছে এসে পৌঁছায়নি? একটা বই বলে, “শীতের পর ইতালিতে আসা জাহাজগুলোর মধ্যে পৌলের জাহাজই হয়তো সবার প্রথমে সেখানে এসেছিল। এই কারণে জেরুসালেমের যিহুদি আধিকারিকদের পক্ষ থেকে রোমে তখনও পর্যন্ত কেউ পৌঁছায়নি। আর এই বিষয়ে কোনো চিঠিও আসেনি।”

১৩, ১৪. (ক) পৌল ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে কীভাবে কথা শুরু করেছিলেন? (খ) কীভাবে আমরাও পৌলের মতো একই পদ্ধতি কাজে লাগাতে পারি?

১৩ পৌল এখন সেই যিহুদিদের কাছে ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে কথা বলতে শুরু করেন। তাদের আগ্রহ বাড়ানোর জন্য পৌল বলেন, “এইজন্য আমি আপনাদের সঙ্গে দেখা করতে এবং কথা বলতে চেয়েছি, কারণ ইজরায়েল যে-প্রত্যাশা করছিল, সেই প্রত্যাশার জন্য আমাকে শিকল দিয়ে বাঁধা হয়েছে।” (প্রেরিত ২৮:২০) পৌল যে-প্রত্যাশার বিষয়ে উল্লেখ করেন, সেটা হল মশীহ এবং তাঁর রাজ্যের বিষয় আর খ্রিস্টানেরাও এই বার্তার বিষয়ে প্রচার করছিল। পৌলের কথা শুনে সেই যিহুদিদের মধ্যে বিশেষ ব্যক্তিরা বলেন, “আমরা আপনার কাছ থেকে আপনার বক্তব্য শুনতে চাই, কারণ আমরা জানি, লোকেরা সমস্ত জায়গায় এই দলের বিরুদ্ধে কথা বলে থাকে।”—প্রেরিত ২৮:২২.

১৪ পৌলের মতো আমরাও প্রচারে এমন বিষয় নিয়ে কথা শুরু করতে পারি কিংবা এমন প্রশ্ন করতে পারি, যেন লোকেরা চিন্তা করতে পরিচালিত হয় এবং তাদের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। এই বিষয়ে জীবন ও পরিচর্যা সভার জন্য অধ্যয়ন পুস্তিকা এবং শিক্ষা দেওয়ার ব্রোশার থেকে আপনি ভালো পরামর্শ পেতে পারেন। আপনি কি সেই পরামর্শগুলো কাজে লাগানোর জন্য প্রচেষ্টা করছেন?

‘পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সাক্ষ্য দেওয়ার’ ক্ষেত্রে এক উত্তম উদাহরণ (প্রেরিত ২৮:২৩-২৯)

১৫. পৌল যেভাবে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, সেখান থেকে আমরা কোন চারটে বিষয় শিখতে পারি?

১৫ এরপর, যিহুদিরা পৌলের সঙ্গে আবারও দেখা করার জন্য একটা দিন ঠিক করে। সেই দিন তারা ছাড়া আরও অনেকে সেই জায়গায় একত্রিত হয়, যেখানে পৌল থাকতেন। বিবরণ বলে, পৌল ‘সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দিয়ে বিষয়টা তাদের কাছে ব্যাখ্যা করলেন আর মোশির ব্যবস্থা এবং ভাববাদীদের গ্রন্থের উপর ভিত্তি করে দৃঢ় যুক্তিতর্ক তুলে ধরলেন, যেন তারা যিশুর উপর বিশ্বাস করতে পরিচালিত হয়।’ (প্রেরিত ২৮:২৩) পৌল যেভাবে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন সেখান থেকে আমরা চারটে বিষয় শিখতে পারি: (১) তিনি ঈশ্বরের রাজ্যের উপর বিশেষ জোর দিয়েছিলেন। (২) তিনি তার শ্রোতাদের যুক্তিতর্কের মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছিলেন। (৩) তিনি শাস্ত্র থেকে যুক্তি করেছিলেন। (৪) তিনি বিশ্রাম না নিয়ে “সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত” সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। সত্যিই, আমরা পৌলের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারি! পৌল যখন সেই যিহুদিদের কাছে পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, তখন সেটা কেমন ফলাফল নিয়ে এসেছিল? লূক বলেন, “কেউ কেউ তার কথায় বিশ্বাস করল,” আবার অন্যেরা বিশ্বাস করল না। এরপর, সেই যিহুদিদের মধ্যে মতের অমিল হওয়ায় তারা সেখান থেকে ‘চলে গেল।’—প্রেরিত ২৮:২৪, ২৫ক.

১৬-১৮. (ক) রোমের কিছু যিহুদিদের প্রতিক্রিয়া দেখে কেন পৌল অবাক হননি? (খ) লোকেরা যখন আমাদের বার্তার প্রতি সাড়া দেয় না, তখন আমাদের কেমন প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত?

১৬ লোকদের এইরকম প্রতিক্রিয়া দেখে পৌল একদমই অবাক হননি। তিনি জানতেন, বাইবেলে আগে থেকেই বলা ছিল যে, অনেকেই তার বার্তার প্রতি সাড়া দেবে না। এর আগেও তিনি এই ধরনের লোকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন। (প্রেরিত ১৩:৪২-৪৭; ১৮:৫, ৬; ১৯:৮, ৯) আর তাই, যখন কিছু লোক তার বার্তার প্রতি সাড়া না দিয়ে চলে যেতে থাকে, তখন পৌল বলেন, “পবিত্র শক্তি উপযুক্ত কারণেই ভাববাদী যিশাইয়ের মাধ্যমে আপনাদের পূর্বপুরুষদের এই কথা বলেছে, ‘এই লোকদের কাছে গিয়ে বলো: “তোমরা শুনবে ঠিকই কিন্তু কোনোভাবেই বুঝতে পারবে না, আর তাকাবে ঠিকই কিন্তু কোনোভাবেই দেখতে পারবে না। কারণ এই লোকদের হৃদয় অসাড় হয়ে পড়েছে।”’” (প্রেরিত ২৮:২৫খ-২৭) এটা খুবই দুঃখজনক যে, “এই লোকদের হৃদয় অসাড় হয়ে পড়েছে,” তাই তারা রাজ্যের বার্তার প্রতি সাড়া দিতে ব্যর্থ হয়েছে।—প্রেরিত ২৮:২৭.

১৭ যদিও যিহুদিরা ঈশ্বরের বার্তার প্রতি সাড়া দেয়নি, কিন্তু পৌল বলেন যে, ‘ন-যিহুদিরা তা অবশ্যই শুনবে।’ (প্রেরিত ২৮:২৮; গীত. ৬৭:২; যিশা. ১১:১০) পৌল এই কথাগুলো খুবই নিশ্চয়তার সঙ্গে বলেছিলেন কারণ তিনি নিজে ন-যিহুদিদের রাজ্যের বার্তার প্রতি সাড়া দিতে দেখেছিলেন।—প্রেরিত ১৩:৪৮; ১৪:২৭.

১৮ বর্তমানেও লোকেরা যখন রাজ্যের বার্তার প্রতি সাড়া দেয় না, তখন আমরা পৌলের মতো অবাক হই না এবং নিরুৎসাহিতও হই না। আমরা জানি যে, জীবনের দিকে নিয়ে যায় এমন রাস্তা দিয়ে খুব কম লোকেরাই চলবে। (মথি ৭:১৩, ১৪) কিন্তু, সৎ হৃদয়ের লোকেরা যখন যিহোবার উপাসনা করে, তখন আমরা অনেক আনন্দিত হই এবং হৃদয় থেকে তাদের স্বাগত জানাই।—লূক ১৫:৭.

“তিনি . . . ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে প্রচার করতেন” (প্রেরিত ২৮:৩০, ৩১)

১৯. পৌল গৃহবন্দি থাকা সত্ত্বেও কী করেছিলেন?

১৯ লূকের লেখা শেষ কথাগুলো সত্যিই আমাদের অনেক উৎসাহিত করে। তিনি বলেন, পৌল “সেখানে নিজের ভাড়া-করা বাড়িতে পুরো দু-বছর থাকলেন আর যারা তার কাছে আসত, তাদের সকলকে তিনি সদয়ভাবে অভ্যর্থনা জানাতেন, নির্দ্বিধায় তাদের কাছে ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে প্রচার করতেন এবং প্রভু যিশু খ্রিস্ট সম্বন্ধে তাদের শিক্ষা দিতেন, কেউ তাকে বাধা দিত না।” (প্রেরিত ২৮:৩০, ৩১) গৃহবন্দি থাকা সত্ত্বেও, পৌল অন্যদের প্রতি প্রকৃত প্রেম দেখিয়েছিলেন এবং তাদের জন্য চিন্তা করেছিলেন। আর সেইসঙ্গে বিশ্বাস ও উদ্যোগের সঙ্গে তিনি তাদের কাছে প্রচার করেছিলেন। সত্যিই, পৌল প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য।

২০, ২১. কিছু উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন, পৌল রোমে প্রচার করার ফলে কারা উপকৃত হয়েছিল?

২০ পৌল যে-লোকদের প্রেমের সঙ্গে স্বাগত জানিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে একজন ছিলেন ওনীষিম। তিনি কলসী থেকে পালিয়ে আসা একজন দাস ছিলেন। এই ওনীষিমকে পৌল খ্রিস্টান হতে সাহায্য করেছিলেন এবং শীঘ্রই তিনি পৌলের “বিশ্বস্ত ও প্রিয় ভাই” হয়ে উঠেছিলেন। পৌল ওনীষিমকে এতটাই ভালোবাসতে শুরু করেছিলেন যে, তিনি বলেন সে ‘আমার সন্তান’ এবং ‘আমি তার পিতা হয়েছি।’ (কল. ৪:৯; ফিলী. ১০-১২) ওনীষিমকে সাহায্য করে পৌল কতই-না আনন্দিত হয়েছিলেন!a

২১ পৌল উদ্যোগের সঙ্গে প্রচার করেছিলেন বলে আরও অনেকে উপকৃত হয়েছিল। তিনি ফিলিপীর খ্রিস্টানদের উদ্দেশে লিখেছিলেন, “আমার পরিস্থিতি আসলে সুসমাচার ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করেছে, কারণ প্রাইতোরিয়ার রক্ষী এবং অন্য সকলে জানতে পেরেছে যে, খ্রিস্টের জন্য আমাকে বন্দি করা হয়েছে। আমার এই বন্দিত্বের কারণে প্রভুর সেবা করে এমন অধিকাংশ ভাই আস্থা অর্জন করতে পেরেছে এবং নির্ভয়ে আরও বেশি করে ঈশ্বরের বাক্য প্রচার করতে পারছে।”—ফিলি. ১:১২-১৪.

২২. রোমে বন্দি থাকার সময় পৌল কী করেছিলেন?

২২ রোমে যদিও পৌলের ঘর থেকে বাইরে যাওয়ার স্বাধীনতা ছিল না, কিন্তু তিনি হাত পা গুটিয়ে বসে থাকেননি। তিনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ চিঠি লিখেছিলেন, যা বর্তমানে খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্রে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।b পৌলের চিঠি থেকে প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানেরা অনেক উপকৃত হয়েছে। এই চিঠিগুলো থেকে বর্তমানে আমরাও অনেক উপকৃত হই কারণ এতে দেওয়া ঈশ্বরের পরামর্শগুলো বর্তমানেও অনেক কার্যকরী।—২ তীম. ৩:১৬, ১৭.

রোম থেকে লেখা পৌলের প্রথম পাঁচটা চিঠি

৬০ থেকে ৬১ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে যখন পৌল প্রথম বার রোমে বন্দি ছিলেন, সেইসময় তিনি পাঁচটা চিঠি লিখেছিলেন। এর মধ্যে একটা চিঠি তিনি তার খ্রিস্টান ভাই ফিলীমনের নামে লিখেছিলেন। চিঠিতে পৌল ফিলীমনকে বলেন যে, তার দাস ওনীষিম যে তার কাছ থেকে পালিয়ে গিয়েছিল, সে এখন একজন খ্রিস্টান হয়েছে। সেইসময় ইতিমধ্যেই পৌল ওনীষিমের বাবার মতো হয়ে উঠেছিলেন। এখন তিনি ওনীষিমকে আবার ফিলীমনের কাছে ফেরত পাঠাচ্ছেন কিন্তু দাস হিসেবে নয়, যে তার জন্য “কোনো কাজের ছিল না;” কিন্তু একজন খ্রিস্টান ভাই হিসেবে।—ফিলী. ১০-১২, ১৬.

দ্বিতীয় চিঠিটা তিনি কলসীয়দের নামে লিখেছিলেন। সেই চিঠিতে পৌল বলেন, ওনীষিম “তোমাদের এলাকারই একজন” অর্থাৎ কলসীর। (কল. ৪:৯) পৌল ইফিষীয়দের নামেও একটা চিঠি লিখেছিলেন। ওনীষিম ও তুখিক এই তিনটে চিঠি পৌঁছে দেওয়ার সম্মান লাভ করেছিল।—ইফি. ৬:২১.

পৌল ফিলিপীয়দের নামেও একটা চিঠি লিখেছিলেন। যেখানে তিনি তাদের বলেন যে, তিনি “কারাগারে” বন্দি আছেন। তিনি ইপাফ্রদীতের কথাও উল্লেখ করেন, যিনি সেই চিঠিটা পৌঁছে দিয়েছিলেন। আসলে, ফিলিপী মণ্ডলী পৌলকে সাহায্য করার জন্য তাকে পাঠিয়েছিল। কিন্তু, ইপাফ্রদীত এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন যে, মারা যাওয়ার মত অবস্থায় ছিলেন। আর পরে যখন তিনি জানতে পারেন যে, ফিলিপীর ভাইয়েরা ‘তার অসুস্থতার কথা শুনেছে’, তখন তিনি আরও হতাশ হয়ে যান। সেইজন্য পৌল ফিলিপীর খ্রিস্টানদের উৎসাহিত করেছিলেন, তারা যেন “তার মতো ভাইদের” মূল্যবান হিসেবে দেখে।—ফিলি. ১:৭; ২:২৫-৩০.

পৌল যিহূদিয়ার সমস্ত ইব্রীয় খ্রিস্টানকেও একটা চিঠি লিখেছিলেন। যদিও ইব্রীয়দের নামে লেখা চিঠিতে কোথাও লেখকের নাম পাওয়া যায় না, কিন্তু প্রমাণ দেখায় যে, সেই চিঠিটা পৌলই লিখেছিলেন। এই চিঠিতে যেভাবে যুক্তি করা হয়েছে, সেটা পৌল ছাড়া আর কেউ করতে পারে না। এই চিঠিতে পৌল ইতালি থেকে শুভেচ্ছা পাঠান এবং তীমথিয়ের কথা উল্লেখ করেন, যিনি তার সঙ্গে রোমে ছিলেন।—ফিলি. ১:১; কল. ১:১; ফিলী. ১; ইব্রীয় ১৩:২৩, ২৪.

২৩, ২৪. পৌলের মতো বর্তমানে অনেক সাক্ষি কীভাবে বন্দিত্বে থাকা সত্ত্বেও নিজেদের আনন্দ বজায় রাখে?

২৩ অবশেষে, পৌলকে মুক্ত করা হয়। প্রেরিত বই আমাদের জানায় না যে, পৌল কবে মুক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু আমরা এটা জানতে পারি যে, তিনি প্রায় চার বছর বন্দি ছিলেন। দু’বছর কৈসরিয়ায় এবং দু’বছর রোমে।c (প্রেরিত ২৩:৩৫; ২৪:২৭) তবে, সেই সময়গুলোতে পৌল তার আনন্দ বজায় রেখেছিলেন এবং ঈশ্বরের সেবায় তিনি যা করতে পেরেছিলেন তা-ই করেছিলেন। বর্তমানেও যখন যিহোবার দাসদের তাদের বিশ্বাসের কারণে জেলে পাঠানো হয়েছে, তখন তারা তাদের আনন্দ বজায় রেখেছে এবং প্রচার করে গিয়েছে। স্পেনের ভাই অ্যাডলফোর উদাহরণ নিয়ে চিন্তা করুন। তিনি যেহেতু সেনাবাহিনীতে যোগ দেননি, তাই তাকে জেলে যেতে হয়। জেলের একজন আধিকারিক তাকে বলেন, “তুমি তো দারুণ একজন ব্যক্তি! আমরা তোমার উপর এত অত্যাচার করেছি, তোমার জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছি, তা-ও তুমি সবসময় হাসিমুখে থেকেছ এবং আমাদের সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলেছ।”

২৪ কিছুদিন পর জেলের আধিকারিকেরা অ্যাডলফোর উপর এতটাই বিশ্বাস করতে শুরু করে যে, তারা জেলের দরজা খুলে রাখত। জেলের পাহারাদারেরা বাইবেলের কথা শোনার জন্য তার কাছে যেত। একজন পাহারাদার তো বাইবেল পড়ার জন্য তার কামরার ভিতর পর্যন্ত যেত আর অ্যাডলফো খেয়াল রাখতেন যে, কেউ যেন তাকে দেখতে না পায়। এভাবে একজন বন্দি কিছু সময়ের জন্য “পাহারাদার” হিসেবে কাজ করত। আসুন, আমরা এইরকম বিশ্বস্ত সাক্ষিদের কাছ থেকে শিখে চলি, যেন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও “নির্ভয়ে আরও বেশি করে ঈশ্বরের বাক্য প্রচার করতে” পারি।

২৫, ২৬. (ক) যিশুর কোন কথাগুলো পৌল পূর্ণ হতে দেখেছিলেন? (খ) আমাদের দিনে সেই কথাগুলো কীভাবে পূর্ণ হচ্ছে?

২৫ প্রেরিত বই উদ্যোগী প্রচারকদের কাহিনি জানানোর পর এই দারুণ তথ্য দিয়ে শেষ হয়: পৌল গৃহবন্দি থাকার পরও যারা তার সঙ্গে দেখা করতে আসে, তিনি তাদের কাছে ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে প্রচার করেন। প্রেরিত বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে আমরা পড়েছি যে, যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন, “তোমাদের উপর পবিত্র শক্তি আসার পর তোমরা শক্তি লাভ করবে আর তোমরা জেরুসালেমে, সমস্ত যিহূদিয়া ও শমরিয়ায় এবং পৃথিবীর প্রান্ত পর্যন্ত আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দেবে।” (প্রেরিত ১:৮) এই কথাগুলো বলার পর, ৩০ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই রাজ্যের বার্তা “সমস্ত জগতে প্রচার করা” হয়েছিল।d (কল. ১:২৩) এটা এই বিষয়ের প্রমাণ দেয় যে, ঈশ্বরের পবিত্র শক্তি কতই-না জোরালোভাবে কাজ করে চলেছে!—সখ. ৪:৬.

২৬ বর্তমানে, অভিষিক্ত খ্রিস্টান এবং “আরও মেষ” দেশ ও দ্বীপ মিলিয়ে ২৪০টা জায়গায় “ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য” দিচ্ছে। প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের মতো তারাও পবিত্র শক্তির সাহায্যে এমনটা করতে পারছে। (যোহন ১০:১৬; প্রেরিত ২৮:২৩) আপনিও কি উদ্যোগের সঙ্গে এই কাজে অংশ নিচ্ছেন?

৬১ খ্রিস্টাব্দের পর পৌলের জীবন

এমনটা মনে হয়, ৬১ খ্রিস্টাব্দে পৌল সম্রাট নিরোর সামনে হাজির হয়েছিলেন এবং সম্রাট তাকে নির্দোষ ঘোষণা করে ছেড়ে দিয়েছিলেন। এরপর পৌল কী করেছিলেন সেই বিষয়ে আমরা বেশি কিছু জানি না। অনেক দিন ধরে তিনি স্পেনে যাওয়ার জন্য চিন্তা করছিলেন। এরকমটা মনে করা হয়, তিনি হয়তো এই সময়েই সেখানে গিয়েছিলেন। (রোমীয় ১৫:২৮) প্রায় ৯৫ খ্রিস্টাব্দে রোমের একজন লেখক ক্লেমেন্ট লেখেন যে, পৌল পশ্চিমের “একদম শেষ প্রান্ত পর্যন্ত” ভ্রমণ করেছেন। এর মানে তিনি হয়তো স্পেনে যাওয়ারও সুযোগ পেয়েছিলেন।

পৌল বন্দিত্ব থেকে ছাড়া পাওয়ার পর, তিনটে চিঠি লিখেছিলেন। এই চিঠিগুলো হল প্রথম ও দ্বিতীয় তীমথিয় আর তীত। এই চিঠিগুলো থেকে বোঝা যায়, পৌল ক্রীতী, ম্যাসিডোনিয়া, নীকপলি ও ত্রোয়াতেও গিয়েছিলেন। (১ তীম. ১:৩; ২ তীম. ৪:১৩; তীত ১:৫; ৩:১২) এরপর পৌলকে গ্রেপ্তার করা হয়। আমরা জানি না, তাকে গ্রিসের নীকপলি থেকে, না কি অন্য কোথাও থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তবে এটা স্পষ্ট যে, প্রায় ৬৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি আবারও রোমে বন্দি ছিলেন। এবার সম্রাট নিরো পৌলের প্রতি কোনো দয়া দেখাননি। কেন? রোমীয় ইতিহাসবিদ ট্যাসিটাস বলেন যে, ৬৪ খ্রিস্টাব্দে যখন রোম জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যায়, তখন সম্রাট নিরো এই মিথ্যা কথা ছড়িয়ে দেন যে, খ্রিস্টানেরা এই আগুন ধরিয়েছে। আর তিনি নিষ্ঠুরভাবে তাদের উপর তাড়না করতে শুরু করেন।

পৌল জানতেন যে, তিনি খুব শীঘ্রই মারা যাবেন আর তাই, তিনি তীমথিয়ের নামে লেখা তার দ্বিতীয় চিঠিতে তীমথিয় ও মার্ককে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আসার জন্য বলেন। লূক ও অনীষিফর পৌলকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য তাদের সঙ্গে গিয়েছিলেন। (২ তীম. ১:১৬, ১৭; ৪:৬-৯, ১১) তারা অনেক সাহসের পরিচয় দিয়েছিলেন কারণ সেইসময় যদি কেউ নিজেকে খ্রিস্টান বলে পরিচয় দিত, তা হলে তাকে গ্রেপ্তার করা হত এবং খুবই নিষ্ঠুরভাবে মেরে ফেলা হত। প্রায় ৬৫ খ্রিস্টাব্দে তীমথিয়ের নামে দ্বিতীয় চিঠিটা লেখার কিছুসময় পরই পৌলকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এইরকমটা মনে করা হয়, এর প্রায় তিন বছর পরই সম্রাট নিরো আত্মহত্যা করেছিলেন।

“সুসমাচার . . . সমস্ত জগতে প্রচার করা হয়েছে”

প্রায় ৬১ খ্রিস্টাব্দে পৌল যখন রোমে বন্দি ছিলেন, তখন তিনি লেখেন, “সুসমাচার . . . সমস্ত জগতে প্রচার করা হয়েছে।” (কল. ১:২৩) এই কথার মানে কী?

এখানে “সমস্ত জগতে” বলতে পৌল বুঝিয়েছিলেন, পৃথিবীর অনেক এলাকাতে সুসমাচার শোনানো হয়ে গিয়েছে। কিন্তু, এখনও বেশ কিছু এলাকায় প্রচার করা বাকি রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে মহান আলেকজান্ডার এশিয়ার এলাকাগুলো দখল করতে করতে ভারতের সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছে যান। জুলিয়াস সিজার খ্রিস্টপূর্ব ৫৫ সালে ব্রিটেনকে নিজের দখলে নিয়ে নেন এবং ক্লৌদিয় ৪৩ খ্রিস্টাব্দে সেই দ্বীপের দক্ষিণ অংশকে তার সাম্রাজ্য রোমের সঙ্গে যুক্ত করেন। পূর্ব এশিয়ার এলাকাগুলোও অনেক সুপরিচিত ছিল কারণ সেখান থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রেশম বা সিল্ক পাঠানো হত।

পৌলের সময়ে ব্রিটেন ও পূর্ব এশিয়ার এলাকাগুলোতে কি সুসমাচার প্রচার করা হয়েছিল? হয়তো না। প্রায় ৫৬ খ্রিস্টাব্দে পৌল বলেছিলেন যে, তিনি স্পেনে যেতে চান, যেখানে ‘প্রচার করা’ হয়নি। (রোমীয় ১৫:২০, ২৩, ২৪) ৬১ খ্রিস্টাব্দে যখন পৌল কলসীয়দের লেখেন যে, সুসমাচার সমস্ত জগতে প্রচার করা হয়ে গিয়েছে, তখনও পর্যন্ত তিনি স্পেনে যাননি। তবুও এটা বলা যায়, সেই সময়ের মধ্যে রাজ্যের বার্তা পৃথিবীর দূরদূরান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। ৩৩ খ্রিস্টাব্দের পঞ্চাশত্তমীর দিন যে-যিহুদিরা এবং ধর্মান্তরিত ব্যক্তিরা বাপ্তিস্ম নিয়েছিল, তাদের দেশে নিশ্চয়ই সুসমাচার পৌঁছে গিয়েছিল। সেইসঙ্গে যিশুর প্রেরিতেরা যে-দেশগুলোতে ভ্রমণ করেছিলেন, হয়তো সেখানেও প্রচার হয়ে গিয়েছিল।—প্রেরিত ২:১, ৮-১১, ৪১, ৪২.

a পৌল ওনীষিমকে নিজের কাছে রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি জানতেন, এমনটা করলে তিনি আসলে রোমীয় আইনের বিরুদ্ধে কাজ করবেন এবং তার খ্রিস্টীয় ভাই ফিলীমনের অধিকার ছিনিয়ে নেবেন, যিনি ওনীষিমের প্রভু বা মালিক ছিলেন। তাই, তিনি ওনীষিমকে ফিলীমনের কাছে ফেরত পাঠিয়ে দেন আর সেইসঙ্গে তার হাতে একটা চিঠিও পাঠান। সেই চিঠিতে পৌল ফিলীমনকে এই অনুরোধ করেন যেন ফিলীমন তার দাস ওনীষিমকে নিজের খ্রিস্টান ভাই হিসেবে প্রেমের সঙ্গে স্বাগত জানান।—ফিলী. ১৩-১৯.

b “রোম থেকে লেখা পৌলের প্রথম পাঁচটা চিঠি” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।

c “৬১ খ্রিস্টাব্দের পর পৌলের জীবন” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।

d “সুসমাচার . . . সমস্ত জগতে প্রচার করা হয়েছে” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৫)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার