ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w০০ ৬/১ পৃষ্ঠা ৯-১৪
  • আপনার ‘পরিত্রাণের আশাকে’ উজ্জ্বল রাখুন!

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • আপনার ‘পরিত্রাণের আশাকে’ উজ্জ্বল রাখুন!
  • ২০০০ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • পরিত্রাণ কী?
  • মুক্তির মূল্য—পরিত্রাণের ভিত্তি
  • পরিত্রাণ পেতে হলে কী করা দরকার?
  • ‘বিশ্বাসের পক্ষে প্রাণপণ যুদ্ধ কর’
  • অন্যদেরকে পরিত্রাণের আশা দেওয়া
  • “প্রত্যাশার পূর্ণতা” বজায় রাখুন
  • পরিত্রাণ—প্রকৃতপক্ষে এটি যা বোঝায়
    ১৯৯৭ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • এখন পরিত্রাণের দিবস!
    ১৯৯৮ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • পরিত্রাণের জন্য সাধারণ্যে ঘোষণা করুন
    ১৯৯৭ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • পরিত্রাণের কি কোন আশা আছে?
    ২০০১ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
২০০০ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w০০ ৬/১ পৃষ্ঠা ৯-১৪

আপনার ‘পরিত্রাণের আশাকে’ উজ্জ্বল রাখুন!

“পরিত্রাণের আশারূপ শিরস্ত্র মস্তকে দিই।”—১ থিষলনীকীয় ৫:৮.

১. ‘পরিত্রাণের আশা’ কীভাবে আমাদের ধৈর্য ধরতে সাহায্য করে?

কঠিন বিপদের মধ্যে একজন যদি জানে যে সে রক্ষা পাবে, তাহলে সেই আশা তাকে অটল থাকতে সাহায্য করে। জাহাজডুবি হলে একটা ছোট নৌকাকে আঁকড়ে ধরে একজন অনেকক্ষণ ভেসে থাকতে পারে, যদি সে জানে যে উদ্ধারকারী দল খুব কাছেই। এইরকমই, হাজার হাজার বছর ধরে ‘সদাপ্রভু নিস্তার করেন’ এই আশা বিশ্বাসী নারী-পুরুষদেরকে বিপদের মুখে শক্তি জুগিয়েছে আর এই আশা ছিল বলেই শত সমস্যার মধ্যেও তারা ভেঙে পড়েননি। (যাত্রাপুস্তক ১৪:১৩; গীতসংহিতা ৩:৮; রোমীয় ৫:৫; ৯:৩৩) প্রেরিত পৌল ‘পরিত্রাণের আশাকে’ একজন খ্রীষ্টানের ‘শিরস্ত্রাণের’ সঙ্গে তুলনা করেছেন। (১ থিষলনীকীয় ৫:৮; ইফিষীয় ৬:১৭) হ্যাঁ, আমরা যদি বিশ্বাস রাখি যে ঈশ্বর আমাদের রক্ষা করবেন, তাহলে কঠিন বিপদ, বিরোধিতা ও প্রলোভনের মধ্যেও আমরা বিচারবুদ্ধি হারিয়ে ফেলি না আর আমাদের চিন্তাশক্তি ঠিক মতো কাজ করে।

২. কোন্‌ কোন্‌ দিক দিয়ে ‘পরিত্রাণের আশা’ সত্য ধর্মের মূল বিষয়?

২ দি ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড বাইবেল এনসাইক্লোপিডিয়া বলে যে প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানদের আশেপাশে যে “পৌত্তলিক লোকেরা ছিল তাদের ভবিষ্যতের কোন আশা ছিল না।” (ইফিষীয় ২:১২; ১ থিষলনীকীয় ৪:১৩) কিন্তু ‘পরিত্রাণের আশা’ সত্য ধর্মের একটা মূল বিষয়। কীভাবে? প্রথমত, যিহোবার দাসেদের পরিত্রাণের সঙ্গে যিহোবার নিজের নাম জড়িত। গীতরচক আসফ প্রার্থনা করেছিলেন: “হে আমাদের ত্রাণেশ্বর, তোমার নামের গৌরবার্থে আমাদের সাহায্য কর, . . . আমাদিগকে উদ্ধার কর।” (গীতসংহিতা ৭৯:৯; যিহিষ্কেল ২০:৯) এছাড়াও, যিহোবার সঙ্গে এক সুন্দর সম্পর্ক রাখার জন্য তিনি যে আশীর্বাদ করবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছেন তাতে বিশ্বাস রাখা জরুরি। পৌল এই কথাকে এভাবে বলেছিলেন: “বিনা বিশ্বাসে প্রীতির পাত্র হওয়া কাহারও সাধ্য নয়; কারণ যে ব্যক্তি ঈশ্বরের নিকটে উপস্থিত হয়, তাহার ইহা বিশ্বাস করা আবশ্যক যে ঈশ্বর আছেন, এবং যাহারা তাঁহার অন্বেষণ করে, তিনি তাহাদের পুরস্কারদাতা।” (ইব্রীয় ১১:৬) এছাড়াও, পৌল বুঝিয়ে বলেছিলেন যে যীশুর পৃথিবীতে আসার পিছনে মূল কারণই ছিল অনুতপ্ত ব্যক্তিদের পরিত্রাণ দেওয়া। তিনি বলেছিলেন: “এই কথা বিশ্বসনীয় ও সর্ব্বতোভাবে গ্রহণের যোগ্য যে, খ্রীষ্ট যীশু পাপীদের পরিত্রাণ করিবার জন্য জগতে আসিয়াছেন।” (১ তীমথিয় ১:১৫) আর প্রেরিত পিতর পরিত্রাণকে ‘আমাদের বিশ্বাসের পরিণাম [অর্থাৎ শেষ ফল]’ বলেছেন। (১ পিতর ১:৯) তাই, এটা পরিষ্কার যে পরিত্রাণের আশা রাখা ঠিক। কিন্তু প্রশ্ন হল, পরিত্রাণ বলতে আসলে কী বোঝায়? আর পরিত্রাণ পেতে হলে একজনকে কী করতে হবে?

পরিত্রাণ কী?

৩. যিহোবার প্রাচীন কালের দাসেরা কোথা থেকে পরিত্রাণ পেয়েছিলেন?

৩ ইব্রীয় শাস্ত্রে “পরিত্রাণ” বলতে সাধারণত নির্যাতন অথবা নৃশংস, অকাল মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই বা উদ্ধার পাওয়াকে বোঝায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যিহোবাকে “রক্ষাকর্ত্তা” বলে ডেকে দায়ূদ বলেছিলেন: “মম শৈলরূপ ঈশ্বর, . . . মম আশ্রয়স্থান, মম ত্রাতা, উপদ্রব হইতে আমার ত্রাণকারী। আমি কীর্ত্তনীয় সদাপ্রভুকে ডাকিব, এইরূপে আমার শত্রুগণ হইতে ত্রাণ পাইব।” (২ শমূয়েল ২২:২-৪) রাজা দায়ূদ জানতেন যে যিহোবার বিশ্বস্ত দাসেরা যখন তাঁর কাছে সাহায্য চায় তখন তিনি তাদের প্রার্থনা শোনেন।—গীতসংহিতা ৩১:২২, ২৩; ১৪৫:১৯.

৪. খ্রীষ্ট আসার আগে যিহোবার দাসেরা ভবিষ্যতের বিষয়ে কী আশা করতেন?

৪ যীশু খ্রীষ্ট আসার আগে যিহোবার যে দাসেরা ছিলেন তারাও এক সুন্দর ভবিষ্যতের আশা করতেন। (ইয়োব ১৪:১৩-১৫; যিশাইয় ২৫:৮; দানিয়েল ১২:১৩) আসলে, ইব্রীয় শাস্ত্রে পরিত্রাণের বিষয়ে যে প্রতিজ্ঞাগুলো পাওয়া যায়, সেগুলোর বেশির ভাগই মহৎ পরিত্রাণ অর্থাৎ অনন্ত জীবনের আভাস দেয়। (যিশাইয় ৪৯:৬, ৮; প্রেরিত ১৩:৪৭; ২ করিন্থীয় ৬:২) যীশুর দিনেও অনেক যিহুদিরা অনন্ত জীবন পাওয়ার আশা করতেন কিন্তু যাঁর মাধ্যমে তাদের অনন্ত জীবন পাওয়ার আশা পূরণ হবে সেই যীশুকেই তারা অস্বীকার করেছিলেন। যীশু তাঁর সময়কার ধর্মীয় নেতাদের বলেছিলেন: “তোমরা শাস্ত্র অনুসন্ধান করিয়া থাক, কারণ তোমরা মনে করিয়া থাক যে, তাহাতেই তোমাদের অনন্ত জীবন রহিয়াছে; আর তাহাই আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দেয়।”—যোহন ৫:৩৯.

৫. পরিত্রাণ মানে কী?

৫ পরিত্রাণ বলতে আসলে কী বোঝায় ও এর সঙ্গে কী কী জড়িত, তা ঈশ্বর যীশুর মাধ্যমে জানিয়েছেন। পরিত্রাণ বলতে অনেক কিছু বোঝায়। পরিত্রাণ মানে পাপ, মিথ্যা ধর্মের দাসত্ব, শয়তানের শাসন, লোকভয় এবং মৃত্যুভয় থেকে মুক্ত হওয়া। (যোহন ১৭:১৬; রোমীয় ৮:২; কলসীয় ১:১৩; প্রকাশিত বাক্য ১৮:২, ৪) তাই, ঈশ্বরের বিশ্বস্ত দাসদের কাছে পরিত্রাণ মানে শুধু ঈশ্বরের পুত্রের মাধ্যমে নির্যাতন ও দুঃখকষ্ট থেকে মুক্তিই নয়, সেইসঙ্গে অনন্ত জীবন পাওয়ার সুযোগকেও বোঝায়। (যোহন ৬:৪০; ১৭:৩) যীশু শিখিয়েছিলেন যে ‘ক্ষুদ্র মেষপালের’ জন্য পরিত্রাণ মানে তারা স্বর্গে পুনরুত্থিত হবেন এবং খ্রীষ্টের সঙ্গে রাজ্য শাসন করবেন। (লূক ১২:৩২) আর বাকি মানুষদের জন্য পরিত্রাণ মানে তারা সিদ্ধ জীবন ফিরে পাবে এবং পাপ করার আগে এদন বাগানে ঈশ্বরের সঙ্গে আদম, হবার যে সুন্দর সম্পর্ক ছিল সেরকম সম্পর্ক উপভোগ করবে। (প্রেরিত ৩:২১; ইফিষীয় ১:১০) পরমদেশ পৃথিবীতে মানুষরা অনন্ত জীবন পাবে এটাই ছিল ঈশ্বরের আদি উদ্দেশ্য। (আদিপুস্তক ১:২৮; মার্ক ১০:৩০) কিন্তু, তা কী করে সম্ভব?

মুক্তির মূল্য—পরিত্রাণের ভিত্তি

৬, ৭. আমাদের পরিত্রাণ দিতে যীশু কী করেন?

৬ একমাত্র খ্রীষ্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের মাধ্যমেই অনন্ত পরিত্রাণ সম্ভব। কেন? কারণ বাইবেল জানায় যে আদম যখন পাপ করেছিল তখন সে নিজেকে ও তার বংশধরদের, যার মধ্যে আমরাও রয়েছি, আমাদেরকে পাপের দাসত্বে ‘বিক্রি’ করে দিয়েছিল। এই কারণে সেই দাসত্ব থেকে বের করে আনার জন্য মানবজাতির মুক্তির মূল্যের দরকার ছিল। (রোমীয় ৫:১৪, ১৫; ৭:১৪) মোশির ব্যবস্থায় যে পশু বলি দেওয়া হতো তা আভাস দিয়েছিল যে ঈশ্বর সারা পৃথিবীর মানুষদের পাপ থেকে মুক্ত করার জন্য মুক্তির মূল্যের ব্যবস্থা করবেন। (ইব্রীয় ১০:১-১০; ১ যোহন ২:২) আর যীশুর বলিদানই ওই ভবিষ্যদ্বাণীগুলোকে পূর্ণ করেছিল। কারণ যীশুর জন্মের আগে যিহোবার দূত ঘোষণা করেছিলেন: “তিনিই আপন প্রজাদিগকে তাহাদের পাপ হইতে ত্রাণ করিবেন।”—মথি ১:২১; ইব্রীয় ২:১০.

৭ যীশু অলৌকিকভাবে কুমারী মরিয়মের গর্ভে জন্ম নিয়েছিলেন আর তিনি ঈশ্বরের পুত্র ছিলেন বলে আদমের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে মৃত্যু পাননি। তাঁর কোন পাপ ছিল না এবং তিনি ঈশ্বরের প্রতি সম্পূর্ণ বিশ্বস্ত ছিলেন বলেই তাঁর জীবন দিয়ে তিনি মানুষকে পাপ ও মৃত্যুর দাসত্ব থেকে কিনে নিতে পেরেছিলেন। (যোহন ৮:৩৬; ১ করিন্থীয় ১৫:২২) সমস্ত মানুষের জন্য পাপের শাস্তি ছিল মৃত্যু, কিন্তু যীশুর জন্য নয়। তিনি পৃথিবীতে এসেছিলেন যাতে “অনেকের পরিবর্ত্তে আপন প্রাণ মুক্তির মূল্যরূপে দিতে” পারেন। (মথি ২০:২৮) মুক্তির মূল্য দেওয়ার পর যীশু পুনরুত্থিত হয়েছেন এবং এখন স্বর্গে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত আছেন, তাই তিনি সেই লোকেদের পরিত্রাণ দিতে অধিকার পেয়েছেন, যারা ঈশ্বর তাদের কাছ থেকে যা চান তা তাঁকে দেন।—প্রকাশিত বাক্য ১২:১০.

পরিত্রাণ পেতে হলে কী করা দরকার?

৮, ৯. (ক) পরিত্রাণ পাওয়ার বিষয়ে এক ধনী যুবকের প্রশ্নের উত্তরে যীশু কী বলেছিলেন? (খ) এই ঘটনা থেকে যীশু তাঁর শিষ্যদের কী শিখিয়েছিলেন?

৮ একবার একজন ধনী ইস্রায়েলীয় অধ্যক্ষ যীশুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “অনন্ত জীবনের অধিকারী হইবার জন্য আমি কি করিব?” (মার্ক ১০:১৭) তাঁর এই প্রশ্নে তখনকার যিহুদিদের এই মনোভাবটাই প্রকাশ পেয়েছিল যে ঈশ্বর শুধু কিছু ভাল কাজেই খুশি হন আর পরিত্রাণ পেতে হলে কিছু ভাল কাজ করাই যথেষ্ট। কিন্তু ওই ধরনের রীতিগত ভক্তি দেখানোয় নিজের স্বার্থও থাকত। তাই এইরকম ভাল কাজ পরিত্রাণের আশা দিতে পারেনি, কারণ কোন অসিদ্ধ মানুষই ঈশ্বরের মানদণ্ডে সমতা আনতে পারত না।

৯ ওই ব্যক্তির প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে যীশু তাকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন ঈশ্বরের আজ্ঞাগুলো তার মেনে চলা উচিত। আর সেই যুবক অধ্যক্ষ সঙ্গে সঙ্গে বলেছিলেন যে তিনি ছেলেবেলা থেকেই সেগুলো মেনে চলছেন। তার উত্তর শুনে তার প্রতি যীশুর ভালবাসা জন্মেছিল। তাই, যীশু তাকে বলেছিলেন: “এক বিষয়ে তোমার ত্রুটি আছে, যাও, তোমার যাহা কিছু আছে, বিক্রয় কর, আর দরিদ্রদিগকে দান কর, তাহাতে স্বর্গে ধন পাইবে; আর আইস, আমার পশ্চাদ্গামী হও।” কিন্তু ওই যুবক দুঃখিত হয়ে চলে গিয়েছিলেন “কারণ তাহার বিস্তর সম্পত্তি ছিল।” সে চলে যাওয়ার পর, যীশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন যে জগতের ধনদৌলতে খুব বেশি জড়িয়ে পড়লে তা পরিত্রাণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তিনি আরও বলেছিলেন যে কেউ নিজের চেষ্টায় পরিত্রাণ পেতে পারে না। তবে যীশু তাদের এই বলে সাহস জুগিয়েছিলেন: “ইহা মনুষ্যের অসাধ্য বটে, কিন্তু ঈশ্বরের অসাধ্য নয়, কারণ ঈশ্বরের সকলই সাধ্য।” (মার্ক ১০:১৮-২৭; লূক ১৮:১৮-২৩) কিন্তু কী করে পরিত্রাণ পাওয়া যায়?

১০. পরিত্রাণ পেতে হলে আমাদের কোন্‌ শর্তগুলো পূরণ করতে হবে?

১০ পরিত্রাণ ঈশ্বরের কাছ থেকে একটা উপহার কিন্তু তাই বলে এমনি এমনি পরিত্রাণ পাওয়া যায় না। (রোমীয় ৬:২৩) সেই উপহার পেতে হলে প্রত্যেককে কয়েকটা শর্ত পূরণ করতে হবে। যীশু বলেছিলেন: “ঈশ্বর জগৎকে এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার একজাত পুত্ত্রকে দান করিলেন, যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।” আর প্রেরিত যোহন এর সঙ্গে যোগ করেছিলেন: “যে কেহ পুত্ত্রে বিশ্বাস করে সে অনন্ত জীবন পাইয়াছে; কিন্তু যে কেহ পুত্ত্রকে অমান্য করে, সে জীবন দেখিতে পাইবে না।” (যোহন ৩:১৬, ৩৬) অতএব, এটা খুবই পরিষ্কার যে যারা অনন্ত পরিত্রাণ পেতে চান তাদের সকলের ঈশ্বরে বিশ্বাস করতে ও তাঁর বাধ্য হতে হবে আর ঈশ্বর তাদের কাছ থেকে তাই-ই চান। এছাড়াও তাদের প্রত্যেককে মুক্তির মূল্যে বিশ্বাস করতে হবে এবং যীশু যে পথে চলেছিলেন সেই পথে চলতে হবে।

১১. কী করলে অসিদ্ধ মানুষদেরও যিহোবা মেনে নেবেন?

১১ আমরা অসিদ্ধ বলে মাঝে মাঝে ঈশ্বরের বাধ্য হতে চাই না এবং চাইলেও পুরোপুরি বাধ্য হতে পারি না। তাই যিহোবা আমাদের পাপকে ঢাকার জন্য মুক্তির মূল্যের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু তবুও, ঈশ্বরের পথে চলার জন্য আমাদের সবসময় চেষ্টা করে যেতে হবে। ধনী যুবককে যীশু যেমন বলেছিলেন তেমনই আমাদেরও ঈশ্বরের আজ্ঞা মেনে চলা দরকার। ঈশ্বরের আজ্ঞা মেনে চললে ঈশ্বর শুধু আমাদের মেনেই নেবেন না কিন্তু আমরা আনন্দও পাব কারণ “তাঁহার আজ্ঞা সকল দুর্ব্বহ নয়” কিন্তু “মজ্জাস্বরূপ [সতেজতাদায়ক]।” (১ যোহন ৫:৩; হিতোপদেশ ৩:১, ৮) এতকিছু করার পরেও পরিত্রাণের আশাকে ধরে রাখা এত সহজ নয়।

‘বিশ্বাসের পক্ষে প্রাণপণ যুদ্ধ কর’

১২. পরিত্রাণের আশা কীভাবে একজন খ্রীষ্টানকে অনৈতিক প্রলোভনগুলোকে রোখার জন্য শক্তি জোগায়?

১২ শিষ্য যিহূদা প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানদের কাছে “সাধারণ পরিত্রাণের” বিষয়ে লিখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তখন মণ্ডলীর অবস্থা এত খারাপ ছিল যে তিনি তার ভাইদের এই পরামর্শ দিতে বাধ্য হয়েছিলেন, ‘বিশ্বাসের পক্ষে প্রাণপণ যুদ্ধ কর।’ হ্যাঁ, পরিত্রাণের জন্য শুধু বিশ্বাস করা, সত্য ধর্ম পালন করে চলা ও শুধু ভাল সময়ে ঈশ্বরের বাধ্য থাকাই যথেষ্ট নয়। যিহোবার প্রতি আমাদের অটল ভক্তি থাকা দরকার যাতে তা আমাদেরকে বিভিন্ন প্রলোভন ও অনৈতিক কাজগুলোকে রুখতে সাহায্য করে। কিন্তু, প্রথম শতাব্দীর অনেক খ্রীষ্টান যৌন অনৈতিকতায় জড়িয়ে পড়েছিল ও স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছিল, তারা কর্তৃপক্ষের বাধ্য হয়নি, তাদের মধ্যে দলভেদ দেখা গিয়েছিল এবং তারা সন্দেহ করেছিল আর এভাবেই তাদের মন ও নৈতিক মান একেবারেই কলুষিত হয়ে গিয়েছিল। এই প্রবণতাগুলোর সঙ্গে যুদ্ধ করতে সাহায্য করার জন্য যিহূদা তার খ্রীষ্টান ভাইবোনদেরকে বলেছিলেন তারা যেন তাদের মূল উদ্দেশ্যকে ভুলে না যায়। তিনি তাদেরকে বলেছিলেন: “প্রিয়তমেরা, তোমরা আপনাদের পরম পবিত্র বিশ্বাসের উপরে আপনাদিগকে গাঁথিয়া তুলিতে তুলিতে, পবিত্র আত্মাতে প্রার্থনা করিতে করিতে, ঈশ্বরের প্রেমে আপনাদিগকে রক্ষা কর, এবং অনন্ত জীবনের জন্য আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের দয়ার অপেক্ষায় থাক।” (যিহূদা ৩, ৪, ৮, ১৯-২১) পরিত্রাণের আশা তাদেরকে নৈতিক দিক দিয়ে শুদ্ধ থাকার জন্য যুদ্ধ করার মতো শক্তি জোগাতে পারত।

১৩. আমরা কীভাবে দেখাতে পারি যে আমরা ঈশ্বরের অনুগ্রহকে বৃথা গ্রহণ করিনি?

১৩ যিহোবা ঈশ্বর যাদেরকে পরিত্রাণ দেবেন তারা সবাই নৈতিক দিক দিয়ে শুদ্ধ থাকুক, তাই-ই যিহোবা চান। (১ করিন্থীয় ৬:৯, ১০) কিন্তু তাই বলে ঈশ্বরের নৈতিক মান ধরে রাখা বলতে বোঝায় না যে আমরা অন্যদের বিচার করব। ভবিষ্যতে কে কেমন ফল পাবে তা আমরা ঠিক করে দিতে পারি না আর সেই অধিকারও আমাদের নেই। একমাত্র ঈশ্বরই তা ঠিক করবেন, যেমন এথেন্সের গ্রিকদের কাছে পৌল বলেছিলেন: “তিনি একটী দিন স্থির করিয়াছেন, যে দিনে আপনার নিরূপিত ব্যক্তি দ্বারা ন্যায়ে জগৎসংসারের বিচার করিবেন।” আর ঈশ্বরের এই নিরূপিত ব্যক্তি হলেন যীশু খ্রীষ্ট। (প্রেরিত ১৭:৩১; যোহন ৫:২২) আমরা যদি যীশুর মুক্তির মূল্যে বিশ্বাস করে চলি, তাহলে আমাদের সামনে যে বিচার আসছে সেই বিষয়ে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। (ইব্রীয় ১০:৩৮, ৩৯) বরং জরুরি বিষয়টা হল, খারাপ চিন্তা ও আচরণে জড়িয়ে পড়ে আমরা যেন “ঈশ্বরের অনুগ্রহ [মুক্তির মূল্যের মাধ্যমে ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে সেটাকে] বৃথা গ্রহণ” না করি। (২ করিন্থীয় ৬:১) এছাড়াও পরিত্রাণ পেতে অন্যদের সাহায্য করে আমরা দেখাই যে আমরা ঈশ্বরের করুণাকে বৃথা যেতে দিই না। তাহলে কীভাবে আমরা অন্যদেরকে পরিত্রাণ পেতে সাহায্য করতে পারি?

অন্যদেরকে পরিত্রাণের আশা দেওয়া

১৪, ১৫. পরিত্রাণের সুসমাচার জানানোর দায়িত্ব যীশু কাদের দিয়েছিলেন?

১৪ ভাববাদী যোয়েলের কথাগুলো উদ্ধৃত করে পৌল লিখেছিলেন: “যে কেহ প্রভুর [যিহোবার] নামে ডাকে, সে পরিত্রাণ পাইবে।” তারপর তিনি আরও বলেছিলেন: “তবে তাহারা যাঁহাতে বিশ্বাস করে নাই, কেমন করিয়া তাঁহাকে ডাকিবে? আর যাঁহার কথা শুনে নাই, কেমন করিয়া তাঁহাতে বিশ্বাস করিবে? আর প্রচারক না থাকিলে কেমন করিয়া শুনিবে?” কয়েকটা পদ পরে পৌল বলেছিলেন যে বিশ্বাস নিয়ে কেউ জন্মায় না বরং ‘খ্রীষ্টের বাক্য শ্রবণ হইতে’ বিশ্বাস হয়।—রোমীয় ১০:১৩, ১৪, ১৭; যোয়েল ২:৩২.

১৫ মানুষের কাছে “খ্রীষ্টের বাক্য” কে নিয়ে যাবে? যীশু তাঁর শিষ্যদের সেই কাজ দিয়েছিলেন, যাদের আগে তিনি সেই “বাক্য” শিখিয়েছিলেন। (মথি ২৪:১৪; ২৮:১৯, ২০; যোহন ১৭:২০) আমরা যখন সুসমাচার প্রচার ও শিষ্য করি তখন প্রেরিত পৌল যে কথা লিখেছিলেন ঠিক সেই কাজই করি। এবার তিনি যিশাইয়ের কথা উদ্ধৃতি করে লিখেছিলেন: “যাহারা মঙ্গলের সুসমাচার প্রচার করে, তাহাদের চরণ কেমন শোভা পায়।” যদিও অনেকে আমাদের সুসমাচার শোনে না, তারপরও আমাদের চরণ যিহোবার কাছে “শোভা” পায়।—রোমীয় ১০:১৫; যিশাইয় ৫২:৭.

১৬, ১৭. আমাদের প্রচার কাজের দুটো উদ্দেশ্য কী?

১৬ সুসমাচার প্রচার করলে দুটো জরুরি উদ্দেশ্য পূর্ণ করা হয়। প্রথমত, সুসমাচার প্রচার করা হলে ঈশ্বরের নাম মহিমান্বিত হবে আর যারা পরিত্রাণ পেতে চায় তারা জানবে যে পরিত্রাণের জন্য তাদের কোথায় যেতে হবে। পৌল এটা বুঝতে পেরেছিলেন। তাই তিনি বলেছিলেন: “কেননা প্রভু [যিহোবা] আমাদিগকে এইরূপ আজ্ঞা দিয়াছেন, ‘আমি তোমাকে জাতিগণের দীপ্তিস্বরূপ করিয়াছি, যেন তুমি পৃথিবীর সীমা পর্য্যন্ত পরিত্রাণস্বরূপ হও।’” অতএব, খ্রীষ্টের শিষ্য হওয়ায় আমাদের প্রত্যেককে অবশ্যই সব লোকেদের কাছে পরিত্রাণের বার্তা নিয়ে যেতে হবে।—প্রেরিত ১৩:৪৭; যিশাইয় ৪৯:৬.

১৭ দ্বিতীয়ত, সুসমাচার প্রচার করেই ঈশ্বরের ন্যায্য বিচারের কথা জানানো হয়। এই বিচারের কথা বলতে গিয়ে যীশু বলেছিলেন: “যখন মনুষ্যপুত্ত্র সমুদয় দূত সঙ্গে করিয়া আপন প্রতাপে আসিবেন, তখন তিনি নিজ প্রতাপের সিংহাসনে বসিবেন। আর সমুদয় জাতি তাঁহার সম্মুখে একত্রীকৃত হইবে; পরে তিনি তাহাদের এক জন হইতে অন্য জনকে পৃথক্‌ করিবেন, যেমন পালরক্ষক ছাগ হইতে মেষ পৃথক্‌ করে।” কে মেষ ও কে ছাগ তা ঠিক করার ও আলাদা করার কাজ যদিও “যখন মনুষ্যপুত্ত্র . . . আপন প্রতাপে আসিবেন” তখন হবে, তবুও আজকে প্রচার কাজ খ্রীষ্টের আত্মিক ভাইদের চেনার সুযোগ করে দেয় ও এর ফলে লোকেরা নিজেদের পরিত্রাণের জন্য সেই অভিষিক্ত ভাইদের সঙ্গে কাজ করে তাদের সাহায্য করতে পারে।—মথি ২৫:৩১-৪৬.

“প্রত্যাশার পূর্ণতা” বজায় রাখুন

১৮. কীভাবে আমরা আমাদের ‘পরিত্রাণের আশাকে’ উজ্জ্বল রাখতে পারি?

১৮ নিয়মিত প্রচার করলে আমাদের পরিত্রাণের আশা উজ্জ্বল থাকে। পৌল লিখেছিলেন: “আমাদের বাসনা এই, যেন তোমাদের প্রত্যেক জন একই প্রকার যত্ন দেখায়, যাহাতে শেষ পর্য্যন্ত প্রত্যাশার পূর্ণতা থাকিবে।” (ইব্রীয় ৬:১১) তাই, আমরা সবাই যেন “পরিত্রাণের আশারূপ শিরস্ত্র মস্তকে দিই,” আর মনে রাখি যে “ঈশ্বর আমাদিগকে ক্রোধের জন্য নিযুক্ত করেন নাই, কিন্তু আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা পরিত্রাণ লাভের জন্য” করেছেন। (১ থিষলনীকীয় ৫:৮, ৯) আসুন আমরা পিতরের এই পরামর্শে কান দিই: “তোমরা আপন আপন মনের কটি বাঁধিয়া মিতাচারী হও, এবং . . . যে অনুগ্রহ তোমাদের নিকটে আনীত হইবে, তাহার অপেক্ষাতে সম্পূর্ণ প্রত্যাশা রাখ।” (১ পিতর ১:১৩) আর যারা তা করবে, তাদের ‘পরিত্রাণের আশা’ পুরোপুরি সত্যি হবে!

১৯. পরের প্রবন্ধে কী আলোচনা করা হয়েছে?

১৯ এই বিধিব্যবস্থার যে অল্পকাল বাকি আছে সেই সম্বন্ধে আমাদের মনোভাব কেমন? কীভাবে আমরা নিজেদের ও অন্যদের পরিত্রাণের জন্য এই সময়কে কাজে লাগাতে পারি? পরের প্রবন্ধে এই প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

আপনি কি বলতে পারেন?

• কেন আমাদের ‘পরিত্রাণের আশাকে’ উজ্জ্বল রাখা উচিত?

• পরিত্রাণ মানে কী?

• পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য আমাদের কী করা উচিত?

• প্রচার কাজের মাধ্যমে ঈশ্বরের কোন্‌ উদ্দেশ্যগুলো সম্পন্ন হয়?

[১০ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

পরিত্রাণ বলতে শুধু ধ্বংস থেকে রক্ষা পাওয়াই বোঝায় না

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৫)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার