-
আপনার উন্নতি প্রকাশ করুন২০০৯ প্রহরীদুর্গ | ডিসেম্বর ১৫
-
-
৬ তীমথিয়কে পৌল লিখেছিলেন: “বাক্যে, আচার ব্যবহারে, প্রেমে, বিশ্বাসে, ও শুদ্ধতায় বিশ্বাসিগণের আদর্শ হও।” পৌল আরও বলেছিলেন: “এ সকল বিষয়ে চিন্তা কর, এ সকলে স্থিতি কর, যেন তোমার উন্নতি সকলের প্রত্যক্ষ হয়।” (১ তীম. ৪:১২, ১৫) তীমথিয়ের এই উন্নতির সঙ্গে কোনো কর্তৃত্বপূর্ণ পদ লাভ করা নয় কিন্তু তার আধ্যাত্মিক গুণাবলি জড়িত ছিল। প্রত্যেক খ্রিস্টানের এই ধরনের উন্নতি প্রকাশ করতে চাওয়া উচিত।
-
-
আপনার উন্নতি প্রকাশ করুন২০০৯ প্রহরীদুর্গ | ডিসেম্বর ১৫
-
-
কথা বলার সময় উদাহরণযোগ্য হোন
৮. আমাদের কথাবার্তা আমাদের উপাসনার ওপর কীরকম প্রভাব ফেলে?
৮ বিভিন্ন ক্ষেত্রের মধ্যে একটা যে-ক্ষেত্রে তীমথিয়কে উদাহরণ স্থাপন করতে হয়েছিল, সেটা হচ্ছে কথা বলার সময়। কীভাবে আমরা এই ক্ষেত্রটাতে আমাদের উন্নতি প্রকাশ করতে পারি? আমাদের কথাবার্তা আমাদের সম্বন্ধে অনেক কিছু প্রকাশ করে। যিশু সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছিলেন: “হৃদয় হইতে যাহা ছাপিয়া উঠে, মুখ তাহাই বলে।” (মথি ১২:৩৪) যিশুর সৎভাই যাকোবও স্বীকার করেছিলেন যে, আমাদের কথাবার্তা আমাদের উপাসনার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি লিখেছিলেন: “যে ব্যক্তি আপনাকে ধর্ম্মশীল বলিয়া মনে করে, আর আপন জিহ্বাকে বল্গা দ্বারা বশে না রাখে, কিন্তু নিজ হৃদয়কে ভুলায়, তাহার ধর্ম্ম” বা উপাসনা “অলীক।”—যাকোব ১:২৬.
৯. কোন কোন দিক দিয়ে আমাদের কথাবার্তা উদাহরণযোগ্য হওয়া উচিত?
৯ আমাদের কথাবার্তা মণ্ডলীর অন্যদের কাছে প্রকাশ করতে পারে যে, আমরা আধ্যাত্মিকভাবে কতখানি উন্নতি করেছি। তাই, মর্যাদাহানিকর, নেতিবাচক, সমালোচনামূলক বা আঘাতদায়ক কথাবার্তা বলার পরিবর্তে, পরিপক্ব খ্রিস্টানরা গেঁথে তোলার, সান্ত্বনা দেওয়ার ও উৎসাহিত করার প্রচেষ্টা করে। (হিতো. ১২:১৮; ইফি. ৪:২৯; ১ তীম. ৬:৩-৫, ২০) অন্যদের সঙ্গে আমাদের নৈতিক মান সম্বন্ধীয় বিশ্বাস নিয়ে কথা বলার ব্যাপারে আমাদের তৎপরতা এবং নির্দ্বিধায় ঈশ্বরের অতি উচ্চ মানগুলোর পক্ষসমর্থন করা, ঈশ্বরের প্রতি আমাদের ভক্তি প্রকাশ করতে পারে। (রোমীয় ১:১৫, ১৬) সৎহৃদয়ের ব্যক্তিরা নিশ্চিতভাবেই লক্ষ করবে যে, কীভাবে আমরা আমাদের কথা বলার দানকে ব্যবহার করি আর তারা হয়তো আমাদের উদাহরণ অনুসরণ করতে পারে।—ফিলি. ৪:৮, ৯.
আমাদের আচরণে ও শুদ্ধতায় উদাহরণযোগ্য হওয়া
১০. কেন নিষ্কপট বিশ্বাস আমাদের আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ?
১০ একজন খ্রিস্টানের পক্ষে এক উত্তম উদাহরণ হওয়ার জন্য শুধু গঠনমূলক কথাবার্তার চেয়েও আরও বেশি কিছুর প্রয়োজন। নিজে সঠিক বিষয়টা না করে কেবল অন্যদের তা করতে বলা একজনকে কপট ব্যক্তি করে তুলবে। পৌল ফরীশীদের কপটতার সঙ্গে ও তাদের কাজের ক্ষতিকর ফলাফল সম্বন্ধে ভালোভাবেই অবগত ছিলেন। একাধিক বার তিনি তীমথিয়কে এইরকম কৃত্রিমতা ও ভান করার বিরুদ্ধে সাবধান করেছিলেন। (১ তীম. ১:৫; ৪:১, ২) কিন্তু, তীমথিয় কপট ব্যক্তি ছিলেন না। তীমথিয়ের উদ্দেশে তার দ্বিতীয় চিঠিতে পৌল লিখেছিলেন: “তোমার অন্তরস্থ অকল্পিত [“নিষ্কপট,” NW] বিশ্বাসের কথা স্মরণ করিতেছি।” (২ তীম. ১:৫) তা সত্ত্বেও, তীমথিয়কে অন্যদের কাছে এই বিষয়টা প্রকাশ করতে হয়েছিল যে, তিনি হলেন একজন অকৃত্রিম খ্রিস্টান। আচরণের দিক দিয়ে তার উদাহরণযোগ্য হওয়া প্রয়োজন ছিল।
১১. ধন সম্বন্ধে পৌল তীমথিয়কে কী লিখেছিলেন?
১১ তীমথিয়ের উদ্দেশে তার দুটি চিঠিতে পৌল আচরণের বেশ কয়েকটা ক্ষেত্রের ওপর পরামর্শ জুগিয়েছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, তীমথিয়ের ধনের পিছনে ছোটাকে এড়িয়ে চলতে হতো। পৌল লিখেছিলেন: “ধনাসক্তি সকল মন্দের একটা মূল; তাহাতে রত হওয়াতে কতক লোক বিশ্বাস হইতে বিপথগামী হইয়াছে, এবং অনেক যাতনারূপ কন্টকে আপনারা আপনাদিগকে বিদ্ধ করিয়াছে।” (১ তীম. ৬:১০) ধনাসক্তি হচ্ছে আধ্যাত্মিকতার ঘাটতির এক লক্ষণ। এর বিপরীতে, যে-খ্রিস্টানরা ‘গ্রাসাচ্ছাদন পাইয়া’ অর্থাৎ এক সরল জীবনযাপন করে সন্তুষ্টি লাভ করে, তারা তাদের আধ্যাত্মিক উন্নতি প্রকাশ করে।—১ তীম. ৬:৬-৮; ফিলি. ৪:১১-১৩.
১২. আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে কীভাবে আমরা আমাদের উন্নতি প্রকাশ করতে পারি?
১২ তীমথিয়ের কাছে পৌল উল্লেখ করেছিলেন যে, খ্রিস্টান নারীদের জন্য “সলজ্জ ও সুবুদ্ধিভাবে পরিপাটী বেশে আপনাদিগকে ভূষিতা” করা কতখানি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। (১ তীম. ২:৯) যে-নারীরা তাদের পোশাক-আশাক ও সাজগোজ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এবং তাদের ব্যক্তিগত জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে সলজ্জতা বা শালীনতা ও সুবুদ্ধি প্রকাশ করে, তারা চমৎকার উদাহরণ স্থাপন করে। (১ তীম. ৩:১১) এই নীতি খ্রিস্টান পুরুষদের বেলায়ও প্রযোজ্য। পৌল অধ্যক্ষদের “মিতাচারী, আত্মসংযমী, পরিপাটী” হতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। (১ তীম. ৩:২) আমাদের রোজকার কাজকর্মে যখন আমরা এই গুণগুলো প্রদর্শন করব, তখন আমাদের উন্নতি সকলের কাছে প্রকাশ পাবে।
১৩. তীমথিয়ের মতো, কীভাবে আমরা শুদ্ধতার ক্ষেত্রে উদাহরণ হতে পারি?
১৩ শুদ্ধতার ক্ষেত্রেও তীমথিয়ের উদাহরণযোগ্য হওয়া প্রয়োজন ছিল। এই শব্দ ব্যবহার করে পৌল পরোক্ষভাবে আচরণের খুবই সুনির্দিষ্ট এক ক্ষেত্র, যৌন নৈতিকতার বিষয়ে উল্লেখ করছিলেন। বিশেষ করে, নারীদের সঙ্গে তীমথিয়ের আচরণ অনিন্দনীয় হওয়া প্রয়োজন ছিল। তার “প্রাচীনাদিগকে মাতার ন্যায়, যুবতীদিগকে সম্পূর্ণ শুদ্ধ ভাবে ভগিনীর ন্যায় জানিয়া” আচরণ করা প্রয়োজন ছিল। (১ তীম. ৪:১২; ৫:২) এমনকী যে-অনৈতিক কাজগুলো গোপন রয়েছে বলে মনে হয়, সেগুলো সম্বন্ধেও ঈশ্বর জানেন আর নিশ্চিতভাবে সহমানবদের কাছেও তা একসময় প্রকাশ হয়ে পড়বে। তবে এটাও ঠিক যে, একজন খ্রিস্টানের উত্তম কাজকে গুপ্ত রাখা যেতে পারে না। (১ তীম. ৫:২৪, ২৫) মণ্ডলীতে সকলেরই আচরণ ও শুদ্ধতার ক্ষেত্রে তাদের উন্নতি প্রকাশ করার সুযোগ রয়েছে।
প্রেম ও বিশ্বাস অপরিহার্য
১৪. শাস্ত্র কীভাবে পরস্পরের মধ্যে প্রেম রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়?
১৪ সত্য খ্রিস্ট ধর্মের এক প্রধান দিক হচ্ছে প্রেম। যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “তোমরা যদি আপনাদের মধ্যে পরস্পর প্রেম রাখ, তবে তাহাতেই সকলে জানিবে যে, তোমরা আমার শিষ্য।” (যোহন ১৩:৩৫) কীভাবে আমরা এইরকম প্রেম প্রকাশ করি? ঈশ্বরের বাক্য আমাদের “প্রেমে পরস্পর” ক্ষমাশীল হতে, ‘পরস্পর মধুরস্বভাব [“দয়ালু,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন] ও করুণচিত্ত হইতে, পরস্পর ক্ষমা করিতে’ এবং অতিথিসেবা করতে অনুরোধ করে। (ইফি. ৪:২, ৩২; ইব্রীয় ১৩:১, ২) “ভ্রাতৃপ্রেমে পরস্পর স্নেহশীল হও,” প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন।—রোমীয় ১২:১০.
১৫. কেন প্রেম সকলের জন্য, বিশেষ করে খ্রিস্টান অধ্যক্ষদের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ?
১৫ তীমথিয় যদি তার সহখ্রিস্টানদের সঙ্গে রূঢ় বা নির্দয় আচরণ করতেন, তাহলে একজন শিক্ষক ও অধ্যক্ষ হিসেবে তিনি যে-ভালো কাজগুলো সম্পাদন করছিলেন, তা নষ্ট হয়ে যেত। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ১৩:১-৩.) অন্যদিকে, তার ভাইদের প্রতি তীমথিয়ের অকৃত্রিম স্নেহের অভিব্যক্তি ও সেইসঙ্গে তাদের প্রতি আতিথেয়তা ও উত্তম কাজ নিশ্চিতভাবেই তার আধ্যাত্মিক উন্নতিকে তুলে ধরেছিল। তাই এটা উপযুক্ত যে, তীমথিয়ের উদ্দেশে লেখা তার চিঠিতে প্রেরিত পৌল প্রেমকে নির্দিষ্টভাবে একটা গুণ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন, যে-গুণের ক্ষেত্রে তীমথিয়ের উদাহরণযোগ্য হওয়া প্রয়োজন ছিল।
১৬. কেন তীমথিয়ের দৃঢ় বিশ্বাস প্রদর্শন করা প্রয়োজন ছিল?
১৬ ইফিষে থাকার সময়, তীমথিয়ের বিশ্বাস পরীক্ষিত হয়েছিল। সেখানে নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি, সেই মতবাদগুলো ছড়িয়ে দিচ্ছিল, যেগুলো খ্রিস্টীয় সত্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। অন্যেরা “গল্প” বা গবেষণাকৃত এমন ধারণাগুলো ছড়িয়ে দিচ্ছিল, যেগুলো মণ্ডলীর আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রে একটুও অবদান রাখেনি। (পড়ুন, ১ তীমথিয় ১:৩, ৪.) পৌল এইরকম ব্যক্তিদের এভাবে বর্ণনা করেছিলেন যে, তারা “গর্ব্বান্ধ, কিছুই জানে না, কিন্তু বিতণ্ডা ও বাগ্যুদ্ধের বিষয়ে রোগগ্রস্ত হইয়াছে।” (১ তীম. ৬:৩, ৪) এইরকম ক্ষতিকর ধারণাগুলো, যেগুলো মণ্ডলীতে অলক্ষিতে প্রবেশ করেছিল, তীমথিয় কি সেগুলো এমনকী বিবেচনা করে দেখার ঝুঁকি নিতে পারতেন? না, কারণ পৌল তীমথিয়কে ‘বিশ্বাসের উত্তম যুদ্ধে প্রাণপণ করিতে’ এবং “যাহা অযথারূপে বিদ্যা নামে আখ্যাত, তাহার ধর্ম্মবিরূপক নিঃসার শব্দাড়ম্বর ও বিরোধবাণী হইতে” সরে আসতে জোরালোভাবে পরামর্শ দিয়েছিলেন। (১ তীম. ৬:১২, ২০, ২১) এই ব্যাপারে কোনো সন্দেহই থাকতে পারে না যে, তীমথিয় পৌলের বিজ্ঞ পরামর্শ মেনে চলেছিলেন।—১ করি. ১০:১২.
১৭. আজকে আমাদের বিশ্বাস হয়তো কীভাবে পরীক্ষিত হতে পারে?
১৭ আগ্রহজনক বিষয় হল, তীমথিয়কে বলা হয়েছিল যে, “উত্তরকালে কতক লোক ভ্রান্তিজনক আত্মাদিগেতে ও ভূতগণের শিক্ষামালায় মন দিয়া বিশ্বাস হইতে সরিয়া পড়িবে।” (১ তীম. ৪:১) মণ্ডলীর সকলের, যার মধ্যে দায়িত্বপূর্ণ পদে সেবারত ব্যক্তিরাও রয়েছে, তাদের দৃঢ়, অটল বিশ্বাস দেখানোর ক্ষেত্রে তীমথিয়ের মতো হতে হবে। ধর্মভ্রষ্টতার বিরুদ্ধে এক দৃঢ় ও চূড়ান্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করার দ্বারা আমরা আমাদের উন্নতি প্রকাশ করতে পারি ও বিশ্বাসের এক উদাহরণ হতে পারি।
-