‘আপনাকে ও যাহারা তোমার কথা শুনে তাহাদিগকে পরিত্রাণ কর’
“আপনার বিষয়ে ও তোমার শিক্ষার বিষয়ে সাবধান হও, . . . তাহা করিলে তুমি আপনাকে ও যাহারা তোমার কথা শুনে, তাহাদিগকেও পরিত্রাণ করিবে।”—১ তীমথিয় ৪:১৬.
১, ২. জীবন রক্ষা করার কাজ চালিয়ে যেতে কোন্ বিষয়টা সত্য খ্রীষ্টানদের প্রেরণা দেয়?
উত্তর থাইল্যান্ডের একটা অজ পাড়াগাঁয়, পাহাড়ি উপজাতি লোকেদের কাছে প্রচার করার জন্য এক যিহোবার সাক্ষি দম্পতি কিছুদিন আগে লাহু ভাষা শিখেছেন। এখন তারা গ্রামের লোকেদের কাছে লাহু ভাষায় ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করেন।
২ স্বামী বলেন, “এখানকার লোকেদের কাছে প্রচার করে আমরা যে কত খুশি হয়েছি ও আমাদের যে কত ভাল লেগেছে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। আমাদের মনে হয় যে আমরা ‘প্রত্যক জাতি ও বংশ ও ভাষার লোকেদের’ সুসমাচার জানিয়ে প্রকাশিত বাক্য ১৪:৬, ৭ পদের কথাগুলো পূর্ণ করতে পারছি। হাতে গোনা মাত্র কয়েকটা জায়গা বাকি আছে যেখানে এখনও সুসমাচার প্রচার করা হয়নি আর কোন সন্দেহ নেই যে এই গ্রামটাও সেগুলোর মধ্যে একটা। আমাদের এত বেশি বাইবেল স্টাডি আছে যে আমরা সেগুলোকে ঠিক মতো করাতেও পারি না।” অতএব, এটা পরিষ্কার যে এই দম্পতি শুধু নিজেদের নয় কিন্তু যারা তাদের কথা শুনতে চায় তাদেরকেও রক্ষা করতে চান। খ্রীষ্টান হিসেবে আমাদের সবার কি এইরকমই চাওয়া উচিত নয়?
“আপনার বিষয়ে . . . সাবধান হও”
৩. অন্যদেরকে পরিত্রাণের কথা জানানোর আগে আমাদের কী করা দরকার?
৩ প্রেরিত পৌল তীমথিয়কে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে “আপনার বিষয়ে ও তোমার শিক্ষার বিষয়ে সাবধান হও।” আর এই পরামর্শ সমস্ত খ্রীষ্টানদের জন্য কাজে আসে। (১ তীমথিয় ৪:১৬) সত্যিই অন্যদেরকে পরিত্রাণ পেতে সাহায্য করার আগে আমাদের প্রথমে নিজেদের বিষয়ে সাবধান হতে হবে। কীভাবে আমরা তা করতে পারি? একটা বিষয় হল, আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে যে আমরা কোন্ সময়ে বাস করছি। যীশু তাঁর শিষ্যদের কিছু চিহ্ন দিয়েছিলেন যা দেখে তারা জানতে পারবে যে ‘যুগান্ত’ কখন শুরু হবে। তবে যীশু এও বলেছিলেন যে শেষ ঠিক কখন আসবে সেই বিষয়ে আমরা কেউই কিছু জানতে পারব না। (মথি ২৪:৩, ৩৬) যীশুর এই কথাকে আমাদের কীভাবে নেওয়া উচিত?
৪. (ক) এই বিধিব্যবস্থা শেষ হওয়ার আগে আমাদের কেমন মনোভাব থাকা উচিত? (খ) আমরা কোন্ ধরনের মনোভাব রাখব না?
৪ আমরা প্রত্যেকে নিজেকে জিজ্ঞেস করতে পারি, ‘শেষ আসার আগে যতটুকু সময় বাকি আছে সেই সময়কে কি আমি নিজের ও যারা আমার কথা শোনে তাদের পরিত্রাণ করার জন্য কাজে লাগাচ্ছি? অথবা আমি কি এমন ভাবছি, “শেষ কবে আসবে তা আমরা জানি না আর তাই আমি এই বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাব না”?’ আমাদের মনোভাব যদি এরকম হয়, তাহলে তা খুবই বিপদজনক। এটা যীশুর পরামর্শের সঙ্গে একটুও মেলে না। তিনি বলেছিলেন: “তোমরাও প্রস্তুত থাক, কেননা যে দণ্ড তোমরা মনে করিবে না, সেই দণ্ডে মনুষ্যপুত্ত্র আসিবেন।” (মথি ২৪:৪৪) তাই, নিরাপত্তা বা সুখের জন্য জগতের দিকে তাকানোর কিংবা যিহোবার সেবায় উদ্যোগ কমিয়ে দেওয়ার সময় এখন নয়।—লূক ২১:৩৪-৩৬.
৫. যিহোবার প্রাচীন কালের দাসেরা কীরকম উদাহরণ রেখে গেছেন?
৫ খ্রীষ্টান হিসেবে বিশ্বস্ত থেকে ও ধৈর্য ধরে আমরা দেখাতে পারি যে আমরা নিজেদের বিষয়ে সাবধান হচ্ছি। তাদের মুক্তি যখনই আসুক না কেন ঈশ্বরের প্রাচীনকালের দাসেরা ধৈর্য ধরেছিলেন। তাই অব্রাহাম, নোহ, মোশি, রাহব এবং সারার সম্বন্ধে পৌল বলেছিলেন: “ইহাঁরা প্রতিজ্ঞাকলাপের ফল প্রাপ্ত হন নাই, কিন্তু দূর হইতে তাহা দেখিতে পাইয়া সাদর সম্ভাষণ করিয়াছিলেন, এবং আপনারা যে পৃথিবীতে বিদেশী ও প্রবাসী, ইহা স্বীকার করিয়াছিলেন।” তারা আরাম-আয়েশে গা ভাসিয়ে দেননি কিংবা তাদের চারিদিকের অনৈতিক চাপের মুখে হার মানেননি কিন্তু ‘প্রতিজ্ঞাকলাপের ফলের’ জন্য অপেক্ষা করেছিলেন।—ইব্রীয় ১১:১৩; ১২:১.
৬. পরিত্রাণের আশা প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানদের জীবনে কীরকম ছাপ ফেলেছিল?
৬ প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানরাও এই জগতে নিজেদেরকে “বিদেশী” বলে দেখেছিলেন। (১ পিতর ২:১১) সা.কা. ৭০ সালে যিরূশালেমের ধ্বংস থেকে রক্ষা পাওয়ার পরও সত্য খ্রীষ্টানেরা প্রচার করা বন্ধ করে দেননি অথবা জগতের পথে পা রাখেননি। তারা জানতেন যে যারা বিশ্বস্ত থাকবে তাদের জন্য আরও বড় পরিত্রাণ আসতে চলেছে। তাই সা.কা. ৯৮ সালে প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন: “জগৎ ও তাহার অভিলাষ বহিয়া যাইতেছে; কিন্তু যে ব্যক্তি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, সে অনন্তকালস্থায়ী।”—১ যোহন ২:১৭, ২৮.
৭. আজকের দিনে যিহোবার সাক্ষিরা কীভাবে ধৈর্য ধরেছেন?
৭ আজকে, যিহোবার সাক্ষিরা নৃশংস নির্যাতনের মধ্যেও প্রচার কাজ বন্ধ করেননি। তাদের এই ধৈর্য কি নিষ্ফল হয়েছে? কখনোই না কারণ যীশু আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন: “যে কেহ শেষ পর্য্যন্ত স্থির থাকিবে, সেই পরিত্রাণ পাইবে।” এই শেষ বলতে বর্তমান বিধিব্যবস্থার শেষ অথবা একজন ব্যক্তির জীবনের শেষকে বোঝাতে পারে। যিহোবার যে বিশ্বস্ত দাসেরা মারা গেছেন তাদেরকে যিহোবা স্মরণ করবেন ও পুনরুত্থিত করে পুরস্কার দেবেন।—মথি ২৪:১৩; ইব্রীয় ৬:১০.
৮. আমরা কীভাবে দেখাতে পারি যে অতীতের খ্রীষ্টানরা ধৈর্য ধরে কাজ করেছেন বলে আমরা কৃতজ্ঞ?
৮ এছাড়াও আমরা খুশি যে অতীতের বিশ্বস্ত খ্রীষ্টানেরা শুধু তাদের নিজেদের পরিত্রাণের জন্যই চিন্তিত ছিলেন না। আর আমরা খুবই কৃতজ্ঞ যে আজকে তাদের জন্যই আমরা ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে জানতে পেরেছি, কারণ তারা ধৈর্য ধরে যীশুর দেওয়া এই কাজ পালন করেছেন: “অতএব তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর . . . আমি তোমাদিগকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিয়াছি সে সমস্ত পালন করিতে তাহাদিগকে শিক্ষা দেও।” (মথি ২৮:১৯, ২০) আমাদের সামনে যতদিন সুযোগ আছে আমরা সেই লোকেদের কাছে সুসমাচার প্রচার করতে পারি, যারা এখনও এই বিষয়ে শোনেনি আর এভাবেই আমরা আমাদের কৃতজ্ঞতা দেখাতে পারি। কিন্তু, শুধু সুসমাচার প্রচার করাই যথেষ্ট নয় কারণ প্রচার করা শিষ্য তৈরির প্রথম ধাপ মাত্র।
‘আপনার শিক্ষার বিষয়ে সাবধান হও’
৯. প্রচারের এলাকা সম্বন্ধে ভাল মনোভাব কীভাবে বাইবেল স্টাডি শুরু করতে সাহায্য করে?
৯ শুধু প্রচার করলেই আমাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না, লোকেদেরকে আমাদের শেখাতেও হবে। কারণ যীশু আমাদেরকে তাঁর আজ্ঞা মেনে চলার বিষয়ে লোকেদের শেখাতে বলেছিলেন। এটা ঠিক যে কিছু কিছু জায়গায় লোকেরা যিহোবার সম্বন্ধে খুব একটা আগ্রহ দেখায় না। কিন্তু তাই বলে আমরা যদি এমন মনে করি যে এখানে প্রচার করে কোন লাভ নেই, তাহলে আমরা কোনদিনই বাইবেল স্টাডি শুরু করতে পারব না। কিছু ভাইবোনেরা একটা এলাকা সম্বন্ধে এইরকমই ভেবেছিলেন। কিন্তু, ইভেট নামের একজন অগ্রগামী বোন দেখেছিলেন যে যারা ওখানে বেড়াতে এসে প্রচার করেন তারা সেরকম মনে করেন না আর তারা ওখানে অনেক বাইবেল স্টাডিও খুঁজে পেয়েছেন। এটা দেখে ইভেটও তার মনোভাব বদলান এবং বাইবেল স্টাডি করতে চান এমন আগ্রহী লোকেদের তিনিও খুঁজে পান।
১০. বাইবেলের শিক্ষক হিসেবে আমাদের মূল কাজ কী?
১০ কিছু খ্রীষ্টানেরা আগ্রহী ব্যক্তিদের খুঁজে পান ঠিকই কিন্তু তাদের সঙ্গে বাইবেল স্টাডি শুরু করতে দোমনা করেন, কারণ তারা মনে করেন যে তারা স্টাডি করাতে পারবেন না। এটা ঠিক যে আমাদের সবার ক্ষমতা একরকম নয়। কিন্তু তাই বলে ঈশ্বরের বাক্যের শিক্ষক হওয়ার জন্য আমাদের অনেক বেশি পড়াশোনা জানতে হবে বা কথা বলায় অনেক পটু হতে হবে এমনও নয়। কারণ বাইবেলের সত্য খুবই শক্তিশালী আর যীশু বলেছিলেন যে মেষতুল্য ব্যক্তিরা প্রকৃত মেষপালকের রব শুনেই চিনতে পারবেন। অতএব, আমাদের মূল কাজ হল উত্তম মেষপালক যীশুর বার্তাকে যতটা পারা যায় স্পষ্ট ও সহজ করে লোকেদেরকে জানানো।—যোহন ১০:৪, ১৪.
১১. আপনি কীভাবে আরও ভাল করে বাইবেল ছাত্রদের শেখাতে পারেন?
১১ লোকেদের কাছে যীশুর বার্তা আপনি কীভাবে আরও ভাল করে জানাতে পারেন? প্রথমে, যে বিষয়টা নিয়ে আপনি কথা বলতে চান সেই সম্বন্ধে বাইবেল কী বলে তা নিজে ভাল করে জানুন। কাউকে কিছু শেখানোর আগে আপনাকে ভাল করে বিষয়টা বুঝতে হবে। এছাড়াও, স্টাডি করার সময় ছাত্রের সঙ্গে বন্ধুর মতো ব্যবহার করুন কিন্তু সেইসঙ্গে খেয়াল রাখবেন যে স্টাডির পরিবেশ যাতে একেবারে হালকা না হয়ে যায়। ছাত্র ও শিক্ষকের মধ্যে যদি সুন্দর সম্পর্ক থাকে এবং শিক্ষক যদি ছাত্রকে সম্মান দেখান ও তাকে সহযোগিতা করেন, তাহলে ছাত্ররা ও সেইসঙ্গে ছোটরাও তাড়াতাড়ি শিখে ফেলে।—হিতোপদেশ ১৬:২১.
১২. আপনি কীভাবে নিশ্চিত হতে পারেন যে আপনি ছাত্রদের যা শেখাচ্ছেন তা তারা ভাল করে বুঝতে পেরেছে?
১২ একজন শিক্ষক হয়ে আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না যে আপনি যা বলেছেন আপনার ছাত্রও তোতা পাখির মতো তাই বলে যাক। সে যা শিখছে তা তাকে বুঝতে সাহায্য করুন। আপনার কথা ছাত্র কতটুকু বুঝল তা, সে কতখানি পড়াশোনা করেছে, জগৎ সম্বন্ধে তার কতটুকু জ্ঞান আছে এবং সে কতখানি বাইবেল জানে তার ওপর নির্ভর করবে। তাই, আপনি নিজেকে জিজ্ঞেস করতে পারেন, ‘সে যে বই দিয়ে স্টাডি করে সেখানে যে বাইবেলের পদগুলো দেওয়া আছে, সেগুলো কেন দেওয়া হয়েছে তা কি সে জানে?’ মাঝে মাঝে আপনি তাকে এমন কিছু প্রশ্ন করতে পারেন যেগুলোর উত্তর শুধু হ্যাঁ বা না বললেই হবে না কিন্তু বুঝিয়ে বলার দরকার আছে। (লূক ৯:১৮-২০) আবার কিছু কিছু ছাত্রছাত্রী বাইবেল স্টাডি করানোর সময় শিক্ষককে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে সংকোচ করে। যদি এমন হয়, তাহলে তারা যা শিখছে তা আসলে পুরোপুরি বুঝতে পারছে না। তাই ছাত্রদের প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে বলুন এবং তারা যদি কিছু না বোঝে, তাহলে আপনাকে তা জানাতে বলুন।—মার্ক ৪:১০; ৯:৩২, ৩৩.
১৩. একজন ছাত্রকে শিক্ষক হয়ে উঠতে আপনি কীভাবে সাহায্য করতে পারেন?
১৩ কারও সঙ্গে বাইবেল স্টাডি করার পিছনে একটা বড় উদ্দেশ্য হল, তাকে একজন শিক্ষক হয়ে উঠতে সাহায্য করা। (গালাতীয় ৬:৬) তাই স্টাডির শেষে পুনরালোচনা করার সময় আপনি হয়তো তাকে বলতে পারেন, সে যা কিছু শিখেছে তা যেন নিজের ভাষায় এমনভাবে বুঝিয়ে বলে, যেমন এক নতুন ব্যক্তিকে বোঝাচ্ছে। পরে সে যখন প্রচার করার মতো যোগ্য হয়ে ওঠে, আপনি তাকে আপনার সঙ্গে প্রচারে বের হওয়ার জন্য বলতে পারেন। সে হয়তো আপনার সঙ্গে কাজ করতে স্বচ্ছন্দ বোধ করবে আর প্রচার করতে করতে সে অভিজ্ঞ হয়ে উঠবে এবং একসময় একাই প্রচার করতে পারবে।
ছাত্রকে যিহোবার বন্ধু হতে সাহায্য করুন
১৪. শিক্ষক হিসেবে আপনার মূল লক্ষ্য কী আর এই লক্ষ্যে আপনি কীভাবে সফল হতে পারেন?
১৪ প্রত্যেক খ্রীষ্টান শিক্ষকের মূল লক্ষ্য হল, ছাত্রকে যিহোবার বন্ধু হতে সাহায্য করা। কিন্তু, শুধু মুখের কথায়ই আপনি তা করতে পারবেন না, এর জন্য আপনাকে কাজ করে দেখাতে হবে। আপনি যা শেখান তা যদি নিজের কাজে দেখান, তাহলে তা ছাত্রের মনে গেঁথে যাবে। মুখে না বলে কোন কিছু করে দেখালে তা ছাত্রের ওপর আরও বেশি ছাপ ফেলে আর ছাত্রকে বিভিন্ন গুণ গড়ে তুলতে ও উদ্যোগী হতে সাহায্য করার সময় এটা খুব ভাল ফল নিয়ে আসে। সে যদি দেখে যে আপনার কথা ও কাজ বলে দেয় যিহোবার সঙ্গে আপনার সুন্দর সম্পর্ক রয়েছে, তাহলে সে নিজেও হয়তো যিহোবার সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইবে।
১৫. (ক)যিহোবাকে সেবা করার পিছনে ছাত্রের সঠিক মনোভাব থাকা কেন জরুরি? (খ) আধ্যাত্মিক উন্নতি করে চলতে আপনি কীভাবে ছাত্রকে সাহায্য করতে পারেন?
১৫ আপনি নিশ্চয়ই চান যে আপনার ছাত্র যিহোবাকে ভালবেসে সেবা করুক, শুধু এই ভয়ে নয় যে যিহোবাকে সেবা না করলে সে হর্মাগিদোনে ধ্বংস হয়ে যাবে। ছাত্রের মধ্যে সঠিক মনোভাব তৈরি করতে সাহায্য করে আপনি তাকে অগ্নি-প্রতিরোধক বস্তু দিয়ে গেঁথে তুলতে পারবেন আর এর ফলে সে বিশ্বাসের পরীক্ষা আসলেও টিকে থাকবে। (১ করিন্থীয় ৩:১০-১৫) কিন্তু তার উদ্দেশ্য যদি খারাপ হয়, যেমন সে যদি আপনার সঙ্গে বা অন্যদের সঙ্গে পাল্লা দিতে চায়, তাহলে সে খারাপ প্রভাবগুলোকে কখনোই রুখতে পারবে না কিংবা সঠিক কাজ করার জন্য যে সাহসের দরকার তাও পাবে না। মনে রাখবেন যে আপনি চিরকাল তার শিক্ষক থাকবেন না। তাই স্টাডি করানোর সময়, তাকে উৎসাহ দিন যে যিহোবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক করতে হলে তাকে রোজ বাইবেল পড়তে হবে ও তা নিয়ে ধ্যান করতে হবে। তা করলে স্টাডি শেষ হয়ে যাওয়ার পরও সে বাইবেল ও বাইবেলের বইপত্রিকা থেকে “নিরাময় বাক্য সমূহের আদর্শ”-কে মেনে চলতে পারবে।—২ তীমথিয় ১:১৩.
১৬. আপনি কীভাবে ছাত্রকে মন থেকে প্রার্থনা করতে শেখাতে পারেন?
১৬ এছাড়া আপনি ছাত্রকে মন থেকে প্রার্থনা করতে শিখিয়েও তাকে যিহোবার সঙ্গে কাছের সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারেন। কীভাবে আপনি তা শেখাতে পারেন? আপনি হয়তো তাকে যীশু প্রার্থনা করার যে নমুনা দেখিয়েছেন সেই বিষয়ে বলতে পারেন এবং বাইবেলে গীতসংহিতা বইয়ের প্রার্থনাগুলোর কথাও বলতে পারেন। (গীতসংহিতা ১৭, ৮৬, ১৪৩; মথি ৬:৯, ১০) শুধু তাই নয়, বাইবেল স্টাডি শুরু করার আগে ও স্টাডির শেষে আপনি যে প্রার্থনা করেন তা শুনেও ছাত্র বুঝতে পারবে যে যিহোবাকে আপনি কতখানি ভালবাসেন। তাই, আপনার প্রার্থনা শুনে যেন বোঝা যায় যে আপনি মন থেকে খোলাখুলিভাবে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেন আর তাতে যেন আধ্যাত্মিক ও অন্যান্য চাহিদাগুলোর মধ্যে ভারসাম্য থাকে।
ছেলেমেয়েদেরকে রক্ষা করার চেষ্টা করুন
১৭. কীভাবে বাবামারা তাদের ছেলেমেয়েদের পরিত্রাণের পথে থাকতে সাহায্য করতে পারেন?
১৭ আমরা নিশ্চয়ই আমাদের পরিবারের সদস্যদেরও রক্ষা করতে চাই। খ্রীষ্টান বাবামাদের অনেক ছেলেমেয়েরাই সত্যকে নিজের করে নিয়েছে এবং তারা “বিশ্বাসে অটল।” আবার এমন অনেক ছেলেমেয়েরাও আছে যাদের হৃদয়ে সত্য ভালভাবে পৌঁছায়নি। (১ পিতর ৫:৯; ইফিষীয় ৩:১৭; কলসীয় ২:৭) যে বাচ্চাদের হৃদয়ে সত্য ভালভাবে পৌঁছায়নি তারা বড় হয়ে সত্য ছেড়ে চলে যায়। আপনি যদি বাবা কিংবা মা হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার ছেলেমেয়েরা যাতে এমনটা না করে তার জন্য আপনি কী করতে পারেন? সবার আগে, আপনি আপনার পরিবারের মধ্যে এক সুন্দর পরিবেশ তৈরি করুন। পরিবারের সকলের মধ্যে যদি সুন্দর সম্পর্ক থাকে, তাহলে তারা কর্তৃপক্ষকে সম্মান দেখাতে, সঠিক নীতির মূল্য বুঝতে এবং অন্যদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে শিখবে। (ইব্রীয় ১২:৯) অতএব, পরিবারের লোকেদের একে অন্যের সঙ্গে কাছের সম্পর্কই বাচ্চাদেরকে যিহোবার সঙ্গে এক সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করে। (গীতসংহিতা ২২:১০) এরকম পরিবারগুলো একসঙ্গে মিলেমিশে কাজ করে—এমনকি এর জন্য বাবামাকে যদি সেই সময়টাও দিয়ে দিতে হয় যে সময়ে তারা হয়তো আরও কিছু টাকা রোজগার করতে পারতেন। এভাবে কাজে দেখিয়ে আপনার ছেলেমেয়েদেরকে জীবনে ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে পারেন। আপনাদের বাচ্চারা টাকাপয়সা নয় কিন্তু আপনাদের চায়। তারা চায় আপনারা তাদের সঙ্গে সময় কাটান, মিলেমিশে কাজ করেন ও তাদের ভালবাসেন। আপনারা কি আপনাদের বাচ্চাদের জন্য এগুলো করছেন?
১৮. কোন্ ধরনের প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে বাবামা তাদের ছেলেমেয়েদেরকে সাহায্য করতে পারেন?
১৮ খ্রীষ্টান বাবামায়েদের কখনও এমন ভাবা উচিত নয় যে তারা খ্রীষ্টান তাই তাদের ছেলেমেয়েরাও খ্রীষ্টানই হবে। ড্যানিয়েল নামে একজন খ্রীষ্টান প্রাচীন ও পাঁচ সন্তানের বাবা বলেন: “ছেলেমেয়েরা রোজ স্কুলে ও অন্যান্য জায়গায় যায়, সেখানে গিয়ে তারা এমন কিছু শেখে যা তাদের মনে নানা প্রশ্ন ও সন্দেহ জাগায়। ছেলেমেয়েদের মনের এই প্রশ্ন বা সন্দেহ দূর করার জন্য বাবামাকে সময় করে নিতে হবে। ছেলেমেয়েদের এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে সাহায্য করতে হবে, যেমন: ‘আমরা কি সত্যিই শেষ কালে বাস করছি? সত্য ধর্ম কি কেবল একটাই? কেন স্কুলের সবার সঙ্গে মেলামেশা করা উচিত নয়? বিয়ের আগে যৌন সম্পর্ক করা কি খারাপ?’ আপনারা নিশ্চিত থাকুন যে যিহোবা আপনাদেরকে আশীর্বাদ করবেন কারণ তিনিও আপনাদের ছেলেমেয়েদের মঙ্গল চান।
১৯. কেন বাবামারা বাচ্চাদের সঙ্গে স্টাডি করলে সবচেয়ে ভাল হয়?
১৯ কিছু বাবামা মনে করেন যে তারা বাচ্চাদের সঙ্গে বাইবেল স্টাডি করতে পারবেন না। কিন্তু, আপনার এমন মনে করা উচিত নয় কারণ আপনি ছাড়া আর কেউ আপনার বাচ্চাকে এত ভাল করে শেখাতে পারবে না। (ইফিষীয় ৬:৪) আপনার বাচ্চাদের সঙ্গে স্টাডি করলে আপনি বুঝতে পারবেন যে তাদের মনে কী আছে। তারা কি নিজের থেকে উত্তর দেয় নাকি মুখস্থ বলে? তারা যা শিখছে তা কি তারা সত্যিই বিশ্বাস করে? যিহোবা কি তাদের কাছে বাস্তব ব্যক্তি? আপনি যদি আপনার বাচ্চাদের স্টাডি করান তবেই আপনি এই প্রশ্নগুলো ও আরও অন্যান্য জরুরি প্রশ্নের উত্তর পেতে পারেন।—২ তীমথিয় ১:৫.
২০. বাবামারা পারিবারিক বাইবেল অধ্যয়নকে কীভাবে প্রাণবন্ত এবং উপকারী করে তুলতে পারেন?
২০ কী করে আপনি পারিবারিক বাইবেল স্টাডি চালিয়ে যেতে পারেন? যোসেফ একজন প্রাচীন যার এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। তিনি বলেন: “অন্যান্য বাইবেল স্টাডির মতো পরিবারের সঙ্গে বাইবেল স্টাডিও এমনভাবে করা উচিত, যাতে সবাই তা পছন্দ করে আর এই সময়ের জন্য অপেক্ষা করে থাকে। আমাদের স্টাডিতে সেই ভাবটা বজায় রাখার জন্য, আমরা কতক্ষণ স্টাডি করলাম তা নিয়ে এত বেশি মাথা ঘামাই না। আমরা কখনও এক ঘন্টা আবার কখনও মাত্র দশ মিনিট স্টাডি করি কিন্তু তবুও স্টাডি করা কখনও বাদ দিই না। আমার বাইবেলের গল্পের বইa থেকে বিভিন্ন গল্প আমরা অভিনয় করে দেখাই আর এই বিষয়টাই আমাদের স্টাডিকে এতটা প্রাণবন্ত করে তোলে আর ছেলেমেয়েরা এর জন্য অপেক্ষা করে থাকে। তাই আমরা কটা অনুচ্ছেদ শেষ করেছি তার চেয়ে বেশি জরুরি হল, সেই বিষয়টা আমাদের মনে কতখানি ছাপ ফেলেছে এবং আমরা কতটুকু বুঝতে পেরেছি।”
২১. বাবামারা তাদের ছেলেমেয়েদের কখন শিক্ষা দিতে পারেন?
২১ কিন্তু আপনার ছেলেমেয়েকে আপনি শুধু যে পারিবারিক বাইবেল স্টাডির সময়ই শিক্ষা দেবেন তা নয়। (দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৫-৭) প্রথম অনুচ্ছেদে থাইল্যান্ডের যে সাক্ষির কথা বলা হয়েছে, তিনি বলেন: “আমার স্পষ্ট মনে আছে যে বাবা আমাকে সাইকেলে চড়িয়ে আমাদের মণ্ডলীর অনেক দূরের দূরের এলাকায় প্রচারে নিয়ে যেতেন। বাবামার সুন্দর উদাহরণ এবং তাদের দেওয়া শিক্ষার জন্যই আমরা পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যাকে বেছে নিতে পেরেছি। আর তাদের শিক্ষাগুলো এখনও আমার মনে গেঁথে আছে। আমি এখনও দূরের দূরের জায়গাগুলোতে প্রচার করি!”
২২. ‘আপনার বিষয়ে ও আপনার শিক্ষার বিষয়ে সাবধানে হলে’ কোন্ ফল আসবে?
২২ শীঘ্রিই যীশু ঈশ্বরের নিরূপিত সময়ে এই বিধিব্যবস্থার ওপর বিচার করতে আসবেন। এই বিচার একদিন শেষ হয়ে যাবে কিন্তু যিহোবার বিশ্বস্ত দাসেরা অনন্ত পরিত্রাণের জন্য যিহোবাকে সেবা করেই যাবেন। আপনিও কি আপনার ছেলেমেয়ে ও আপনার বাইবেল ছাত্রদের নিয়ে সেই বিশ্বস্ত দাসদের সাথে যিহোবার সেবা করতে চান? তাহলে মনে রাখবেন: “আপনার বিষয়ে ও তোমার শিক্ষার বিষয়ে সাবধান হও, এ সকলে স্থির থাক; কেননা তাহা করিলে তুমি আপনাকে ও যাহারা তোমার কথা শুনে, তাহাদিগকেও পরিত্রাণ করিবে।”—১ তীমথিয় ৪:১৬.
[পাদটীকাগুলো]
a ওয়াচটাওয়ার বাইবেল আ্যন্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটি দ্বারা প্রকাশিত।
আপনি কি বলতে পারেন?
• ঈশ্বর কখন বিচার করবেন সেই সময়টা যেহেতু আমরা জানি না, তাই আমরা কেমন মনোভাব রাখব?
• কোন্ কোন্ উপায়ে আমরা ‘আপনাদের শিক্ষার বিষয়ে সাবধান’ হতে পারি?
• আপনি কীভাবে আপনার বাইবেল ছাত্রকে যিহোবার বন্ধু হয়ে উঠতে সাহায্য করতে পারেন?
• বাবামাদের কেন সময় করে নিয়ে তাদের বাচ্চাদের শিক্ষা দেওয়া উচিত?
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
ছাত্রের সঙ্গে বন্ধুর মতো ব্যবহার করলে তারা তাড়াতাড়ি শিখতে পারে
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
শলোমন দুজন বেশ্যার বিচার করছেন এই গল্পটা অভিনয় করে দেখানো হচ্ছে, যা পারিবারিক অধ্যয়নকে প্রাণবন্ত করে