দরিদ্র অথচ ধনী—এটি কিভাবে হতে পারে?
বহু শতাব্দী পূর্বে এক জ্ঞানী ব্যক্তি প্রার্থনা করেছিলেন যে তিনি যেন দরিদ্র না হন। কেন এইধরনের অনুরোধ? কারণ তিনি আশঙ্কা করেছিলেন যে দারিদ্র হয়ত সেই মনোভাব ও কাজগুলিকে সক্রিয় করে তুলতে পারে যা ঈশ্বরের সাথে তার সম্পর্ককে আঘাতপ্রাপ্ত করবে। তার বাক্যগুলি থেকে এই বিষয়টি স্পষ্ট হয়: “আমার নিরূপিত খাদ্য আমাকে ভোজন করাও; . . . পাছে দরিদ্র হইলে চুরি করিয়া বসি, ও আমার ঈশ্বরের নাম অপব্যবহার করি।”—হিতোপদেশ ৩০:৮, ৯.
এর অর্থ কি এই যে একজন দরিদ্র ব্যক্তির পক্ষে বিশ্বস্ততার সাথে ঈশ্বরের সেবা করা অসম্ভব? কখনই নয়! ইতিহাসব্যাপী যিহোবা ঈশ্বরের অগণিত সেবকেরা, দরিদ্রতাজনিত কষ্ট সত্ত্বেও তাঁর প্রতি বিশ্বস্ততা বজায় রেখেছে। পরিবর্তে, যারা তাঁর উপর আস্থা রাখে যিহোবা তাদের ভালবাসেন ও তাদের প্রয়োজনের বস্তু যোগান।
প্রচীনকালের বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা
প্রেরিত পৌল নিজে অভাবের সময় ভোগ করেছিলেন। (২ করিন্থীয় ৬:৩, ৪) তিনি বিশ্বস্ত প্রাক্-খ্রীষ্টীয় সাক্ষীদের এক ‘বৃহৎ মেঘ’ সম্বন্ধেও বর্ণনা করেছিলেন যাদের মধ্যে কিছুজন “মেষের ও ছাগের চর্ম্ম পরিয়া বেড়াইতেন, . . . প্রান্তরে প্রান্তরে, পাহাড়ে পাহাড়ে, গুহায় গুহায় ও পৃথিবীর গহ্বরে গহ্বরে ভ্রমণ করিতেন।”—ইব্রীয় ১১:৩৭, ৩৮; ১২:১.
এই বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন ছিলেন ভাববাদী এলিয়। সাড়ে তিন বছরব্যাপী অনাবৃষ্টির সময় যিহোবা নিয়মিতভাবে তার জন্য খাদ্য সরবরাহ করেছিলেন। প্রথমে, ঈশ্বর কাকের দ্বারা ভাববাদীকে রুটি ও মাংস যুগিয়েছিলেন। (১ রাজাবলি ১৭:২-৬) পরবর্তী সময়ে, যিহোবা অলৌকিকভাবে ময়দা ও তেল যুগিয়েছিলেন যার থেকে এক বিধবা, এলিয়ের জন্য খাদ্য সরবরাহ করেছিল। (১ রাজাবলি ১৭:৮-১৬) খাদ্য খুবই সাধারণ বিষয় ছিল কিন্তু তা ভাববাদী, সেই স্ত্রী এবং তার পুত্রের জীবন রক্ষা করেছিল।
একইভাবে যিহোবা বিশ্বস্ত ভাববাদী যিরমিয়কে আর্থিক কষ্টের সময়ে সংরক্ষিত রেখেছিলেন। যিরমিয় যিরূশালেমে বাবিলনীয় অবরোধ থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন যখন লোকেদের ‘পরিমাণপূর্ব্বক ভাবনা সহকারে অন্ন ভোজন করিতে’ হয়েছিল। (যিহিষ্কেল ৪:১৬) পরিশেষে, শহরের দুর্ভিক্ষ এমন ভীষণ আকার নিয়েছিল যে কিছু স্ত্রীলোকেরা তাদের নিজেদের সন্তানদের মাংস ভক্ষণ করেছিল। (বিলাপ ২:২০) এমনকি যদিও তার নির্ভীক প্রচারের জন্য যিরমিয়কে রক্ষীদের প্রাঙ্গণে থাকতে হয়েছিল, যিহোবা লক্ষ্য রেখেছিলেন যে প্রতিদিন তাকে “একখানা রুটী” যোগান হয়েছিল “যে পর্য্যন্ত নগরের সমস্ত রুটী শেষ না হইল।”—যিরমিয় ৩৭:২১.
সুতরাং, এলিয়ের মত যিরমিয়েরও খাওয়ার জন্য সামান্যই কিছু ছিল। শাস্ত্র আমাদের বলে না যে যিরূশালেমের রুটি শেষ হয়ে যাওয়ার পর যিরমিয় কী খেয়েছিলেন অথবা কতবার খেয়েছিলেন। তবুও, আমরা জানি যে যিহোবা তাকে সংরক্ষিত রেখেছিলেন আর তাই তিনি ভয়ংকর দুর্ভিক্ষের সময়ে রক্ষা পেয়েছিলেন।
আজকে, পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেক অংশেই দারিদ্র বিরাজমান। রাষ্ট্রসংঘ অনুসারে, আফ্রিকায় দারিদ্রের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। ১৯৯৬ সালে ইউএন এর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি জানায় যে: “সমগ্র আফ্রিকাবাসীদের অর্ধেকই দারিদ্রগ্রস্ত।” ক্রমবর্ধমান কঠোর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সত্ত্বেও এক চিরবর্ধিত সংখ্যক আফ্রিকাবাসী জীবনে বাইবেলের নীতিগুলিকে প্রয়োগ করছে ও ঈশ্বরকে বিশ্বস্তভাবে সেবা করে চলেছে এই বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে যে তিনি তাদের সংরক্ষণ করবেন। আমাদের বিক্ষুব্ধ জগতের একটি অংশ থেকে পাওয়া কিছু উদাহরণ বিবেচনা করুন।
সততা বজায় রাখা
মাইকেলa যিনি নাইজেরিয়ায় বাস করেন, তিনি হলেন এক কৃষক যাকে ছয়টি সন্তান প্রতিপালন করতে হয়। তিনি বলেন “যখন পরিবার প্রতিপালন করার জন্য আপনার কোন অর্থ থাকে না সেই সময়ে সৎ থাকা কষ্টকর হয়। কিন্তু, যখনই আমি অসৎ হওয়ার জন্য প্রলোভিত হয়েছি, আমি নিজেকে ইফিষীয় ৪:২৮ পদটি স্মরণ করাই যেটি বলে: ‘চোর আর চুরি না করুক, বরং সহস্তে সদ্ব্যাপারে পরিশ্রম করুক, যেন দীনহীনকে দিবার জন্য তাহার হাতে কিছু থাকে।’ তাই যখন প্রলোভন আসে আমি নিজেকে জিজ্ঞাসা করি ‘আমি কি এই অর্থের জন্য কাজ করেছি?’”
মাইকেল আরও বলেন: ‘উদাহরণস্বরূপ, একদিন যখন আমি একাকী হাঁটছিলাম আমি দেখি একটি মোটরসাইকেলের পিছন থেকে একটি থলি পড়ে যায়। আমি সেই মোটরসাইকেল চালককে থামাতে পারিনি, তাই আমি থলিটি তুলি আর দেখি যে এটি টাকায় ভর্তি! থলিটির ভিতরের পরিচয়পত্র ব্যবহার করে আমি এটির মালিককে খুঁজে বের করি ও তাকে থলিটি ফিরিয়ে দিই।’
হতাশার সাথে সংগ্রাম করা
উত্তর আফ্রিকার একজন ব্যক্তি লক্ষ্য করেছিলেন যে: ‘দারিদ্র একটি গভীর গর্তে আবদ্ধ হয়ে পড়ার [মত], যেখান থেকে উপরের আলো এবং লোকেরা স্বচ্ছন্দে চারিদিকে চলাফেরা করছে তা দেখতে পাওয়া যায় কিন্তু সাহায্য চাওয়া অথবা বাইরে আসতে একটি মইয়ের জন্য চিৎকার করতে সক্ষম হওয়া যায় না।” তাই এটি আশ্চর্যের বিষয় নয় যে দারিদ্র প্রায়ই হতাশা ও নৈরাশ্যজনক অনুভূতি নিয়ে আসে! এমনকি ঈশ্বরের সেবকেরা হয়ত অন্যদের সম্পদ দেখে চিন্তা করতে শুরু করতে পারে যে এক বিশ্বস্ত জীবনের কোন মূল্য নেই। (গীতসংহিতা ৭৩:২-১৩ পদের সাথে তুলনা করুন।) এইধরনের অনুভূতিগুলিকে কিভাবে অতিক্রম করা যায়?
পশ্চিম আফ্রিকায় বসবাসকারী এক ব্যক্তি, পিটার ১৯ বছর সরকারি কাজ করার পর অবসর গ্রহণ করেছিলেন। তিনি এখন মুখ্যত অল্পকিছু অবসরভাতার দ্বারা জীবন ধারণ করেন। পিটার বলেন, ‘যখন আমি নিরুৎসাহজনক সময় ভোগ করি, আমি বাইবেল এবং ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটির প্রকাশনাদিতে যা পড়েছি তা নিজেকে স্মরণ করাই। এই পুরাতন ব্যবস্থা প্রায় শেষ হওয়ার মুখে আর আমরা এক উত্তম ব্যবস্থার জন্য অপেক্ষা করছি।’
“এছাড়াও আমি ১ পিতর ৫:৯ পদ সম্বন্ধে চিন্তা করি যেটি বলে: ‘তোমরা বিশ্বাসে অটল থাকিয়া [শয়তানের] প্রতিরোধ কর; তোমরা জান, জগতে অবস্থিত তোমাদের ভ্রাতৃবর্গেও সেই প্রকার নানা দুঃখভোগ সম্পন্ন হইতেছে।’ সুতরাং আমিই শুধু একমাত্র ব্যক্তি নই যে অসুবিধাগুলি ভোগ করছে। এই অনুস্মারকগুলি আমাকে নিরুৎসাহ ও হতাশামূলক চিন্তাধারাগুলি অগ্রাহ্য করতে সাহায্য করে।”
পিটার আরও বলেন, “পৃথিবীতে থাকাকালীন যীশু অনেক অলৌকিক কাজ সম্পাদন করেছিলেন কিন্তু তিনি কাউকে বস্তুগতভাবে ধনী করেননি। তাহলে আমি কেন আমাকে সমৃদ্ধ করার জন্য তার কাছে প্রত্যাশা করব?”
প্রার্থনার শক্তি
নেচিবাচক চিন্তাগুলির সাথে সংগ্রাম করার জন্য প্রার্থনায় যিহোবা ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়া হচ্ছে আর একটি উপায়। ১৯৬০ সালে যখন মেরী একজন যিহোবার সাক্ষী হয়েছিলেন তখন তার পরিবার তাকে পরিত্যাগ করেছিল। অবিবাহিত অবস্থায় এবং এখন তার ৫০ বছর বয়সে তিনি দুর্বল এবং বস্তুগত সম্পদও তার খুবই কম আছে। তৎসত্ত্বেও খ্রীষ্টীয় পরিচর্যায় তিনি উদ্যোগী।
মেরী বলেন: ‘যখন আমি নিরুৎসাহিত বোধ করি, আমি প্রার্থনায় যিহোবার কাছে উপস্থিত হই। আমি জানি যে আর কেউ আমাকে, তিনি যতখানি পারেন তার চেয়ে বেশি সাহায্য করতে পারবে না। আমি শিখেছি যে আপনি যখন যিহোবার উপর আস্থা রাখবেন, তিনি আপনাকে সাহায্য করবেন। আমি গীতসংহিতা ৩৭:২৫ পদে পাওয়া রাজা দায়ূদের এই কথাগুলি সর্বদা মনে করি: ‘আমি যুবক ছিলাম, এখন বৃদ্ধ হইয়াছি, কিন্তু ধার্ম্মিককে পরিত্যক্ত দেখি নাই, তাহার বংশকে খাদ্য ভিক্ষা করিতে দেখি নাই।’
‘প্রহরীদুর্গ-এ বর্ণিত বয়স্ক আধ্যাত্মিক ভাই ও বোনেদের অভিজ্ঞতাগুলি থেকেও আমি উৎসাহ পেয়ে থাকি। যিহোবা ঈশ্বর তাদের সাহায্য করেছিলেন, সুতরাং আমি জানি যে তিনি আমাকেও ক্রমাগত সাহায্য করে যাবেন। তিনি আমার ফুফু [একটি বিশেষ ধরনের দানাশস্য] বিক্রির ক্ষুদ্র কাজকে আশীর্বাদ করেন আর আমি আমার প্রতিদিনের প্রয়োজন মেটাতে পারি। কোন কোন সময় যখন আমার কাছে একেবারেই কোন অর্থ থাকত না আর আমি ভাবতাম এখন কী করব, তখন যিহোবা কোন একজনকে পাঠাতেন যে আমাকে কোন উপহার দিত আর বলত, ‘বোন, এটি আপনি নিন।’ যিহোবা আমাকে কখনও নিরাশ করেননি।”
বাইবেল অধ্যয়নের মূল্য
যিহোবার সাক্ষীরা ঈশ্বরের বাক্য, বাইবেল অধ্যয়নকে মূল্য দিয়ে থাকে আর তাদের মধ্যে দরিদ্রেরা এইক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়। ষাট বছর বয়স্ক জন এক অগ্রগামী (পূর্ণ-সময়ের রাজ্য প্রচারক) ও মণ্ডলীতে একজন পরিচালক দাস হিসাবে সেবা করেন। তিনি একটি জীর্ণ দুইতলা বিশিষ্ট ঘরে আরও ১৩টি পরিবারের সাথে বাস করেন। এক তলায় বারান্দার একটি অংশ হল তার ঘর যেটি কাঠের পাতলা তক্তা দিয়ে পৃথক করা। ঘরটিতে দুটি পুরনো চেয়ার ও একটি টেবিল আছে যেটিতে বাইবেল অধ্যয়ন সহায়কগুলি রাশিকৃত করা আছে। তিনি একটি খড়ের মাদুরে ঘুমান।
জন রুটি বিক্রি করে একদিনে প্রায় এক মার্কিন ডলার উপার্জন করতেন কিন্তু যখন গমের আমদানি নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল তিনি তার জীবনোপায় হারিয়েছিলেন। তিনি বলেন: ‘কখনও কখনও আমি দেখেছি জীবন ভীষণ কঠিন কিন্তু আমি অগ্রগামীর কাজ চালিয়ে গিয়েছি। যিহোবাই আমাকে সংরক্ষিত রেখেছেন। আমি যে কাজই খুঁজে পেতে সমর্থ হয়েছি সেটিই করেছি আর যদিও মণ্ডলীর ভাইরা খুবই সাহায্যকারী, তবুও আমাকে সমর্থন বা প্রতিপালন করার জন্য কোন মানুষের উপর আমি কখনও সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল হই না। তারা আমাকে কাজ খুঁজে পেতে সাহায্য করে থাকে ও কখনও কখনও আমাকে উপহার হিসাবে অর্থ দিয়ে থাকে।’
‘আমি বাইবেল ও ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটির প্রকাশনাগুলি পড়ার জন্য সময় করে নিই। আমি খুব সকালে অধ্যয়ন করি যখন গৃহ শান্ত থাকে আর গভীর রাতে যখনই আমাদের বিদ্যুৎ থাকে আমি পড়ি। আমি জানি যে আমাকে আমার ব্যক্তিগত অধ্যয়ন বজায় রাখতে হবে।’
জীবনের জন্য সন্তানদের প্রশিক্ষণ দেওয়া
দানিয়েল একজন বিপত্নীক, যার ছয়টি সন্তান আছে। ১৯৮৫ সালে তিনি চাকুরি হারান যেটি তিনি গত ২৫ বছর ধরে করছিলেন কিন্তু তিনি একটি দোকানে কাজ পেয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিকভাবে পরিবারের জন্য জীবন খুবই কষ্টকর। এখন আমরা দিনে কেবলমাত্র একবার খেতে পাই। একবার আমরা তিনদিন না খেয়ে কাটিয়েছিলাম। বেঁচে থাকার জন্য আমাদের কেবলমাত্র জল খেয়ে কাটাতে হয়েছিল।’
দানিয়েল মণ্ডলীতে একজন প্রাচীন হিসাবে সেবা করেন। তিনি বলেন, “আমি কখনও খ্রীষ্টীয় সভাগুলিতে অনুপস্থিত থাকি না আর আমি ঐশিক কার্যভারে ব্যস্ত থাকি। কিংডম হলে যখনই কোন কাজ করার দরকার হয়, নিশ্চিতভাবে আমি সেখানে উপস্থিত থাকি। আর যখন খুব কঠিন সময় এসেছে আমি যীশুর উদ্দেশ্যে পিতরের বাক্যগুলি নিজেকে স্মরণ করাই যা যোহন ৬:৬৮ পদে লিপিবদ্ধ আছে: ‘প্রভু কাহার কাছে যাইব?’ যিহোবাকে সেবা করা বন্ধ করে আমি কোথায় যাব? রোমীয় ৮:৩৫-৩৯ পদে পৌলের কথাগুলিও আমাকে দৃঢ়সংকল্পে ভরে দেয় কারণ এগুলি দেখায় যে কিছুই আমাদের ঈশ্বর ও খ্রীষ্টের প্রেম থেকে পৃথক করতে পারবে না। এই মনোভাবটিই আমি আমার সন্তানদের মধ্যে অনুপ্রবেশ করিয়েছি। আমি অনবরত তাদের বলি যে আমরা কখনই যিহোবাকে পরিত্যাগ করব না।’ দানিয়েলের উদ্যোগ ও তার সাথে নিয়মিত পারিবারিক অধ্যয়ন তার সন্তানদের উপর এক ইতিবাচক প্রভাব এনেছে।
দান করার মনোভাব
কেউ হয়ত ভাবতে পারেন যে যারা চরম দারিদ্রের মধ্যে বাস করে তারা রাজ্যের আগ্রহকে বৃদ্ধির জন্য আর্থিকভাবে দান করার অবস্থায় থাকে না। কিন্তু তা নয়। (লূক ২১:১-৪ পদের সাথে তুলনা করুন।) ঘানার কিছু সাক্ষীরা যাদের প্রধান উপজীবিকা জীবনধারণার্থ কৃষিকাজ, তারা তাদের ভূমির কিছু অংশ ঈশ্বরের রাজ্যের আগ্রহের বৃদ্ধিতে ব্যবহৃত হওয়ার জন্য পৃথক করে রাখেন। যখন তাদের ভূমির সেই অংশের উৎপাদিত দ্রব্য বিক্রয় করা হয়, সেই অর্থ স্বতন্ত্রভাবে সেই উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয় যার অন্তর্ভুক্ত যিহোবার সাক্ষীদের স্থানীয় কিংডম হলে দান করা।
মধ্য আফ্রিকায় বসবাসকারী জোন একজন অগ্রগামী। পঙ্গু স্বামী ও আরও চারজন যারা তার উপর নির্ভর করে তাদের দেখাশোনা করার জন্য তিনি রুটি বিক্রি করেন। যখন যে মণ্ডলীতে তিনি যোগ দিতেন সেখানে কিংডম হলের জন্য বেঞ্চের প্রয়োজন হয় জোনের পরিবার তাদের ঘরে যে সঞ্চয় ছিল তার সমস্তটাই দান করার জন্য মনস্থ করেছিল। এরপর তাদের আর কিছুই ছিল না। কিন্তু পরের দিন, অপ্রত্যাশিতভাবে কেউ দীর্ঘদিনের ধার পরিশোধ করে, যে অর্থ পাওয়ার বিষয়ে তারা একেবারে আশা ছেড়েই দিয়েছিল!
জোন হাসিখুশি ও অর্থ সম্বন্ধে একেবারেই অযথা উদ্বিগ্ন নন। ‘প্রার্থনায় আমি আমার পরিস্থিতি যিহোবার কাছে ব্যাখ্যা করি আর তারপর আমি ক্ষেত্র পরিচর্যার জন্য বের হই। আমরা জানি যে এই বিধিব্যবস্থায় আমাদের জন্য উত্তম সময়ের আশা খুব কমই। তবুও, আমরা উপলব্ধি করি যে যিহোবা আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয় সরবরাহ করবেন।’
অধ্যবসায় দেখানো
যিহোবার সাক্ষীরা পরস্পরের প্রতি তাদের প্রেমের দ্বারা পরিচিত। (যোহন ১৩:৩৫) যাদের অর্থ আছে তারা তাদের সহখ্রীষ্টান যাদের অভাব রয়েছে তাদের সাহায্য করে। প্রায়ই এটি উপহার হিসাবে এসে থাকে আর কখনও কখনও চাকুরি প্রদানের মাধ্যমে।
কঙ্গোয় বসবাসকারী মার্ক কুষ্ঠরোগে ভুগছেন। এটি তার পা ও হাতের আঙ্গুলগুলিকে বিকৃত করে দিয়েছে। তাই হাঁটার জন্য তিনি ক্রাচের উপর নির্ভর করেন। যখন মার্ক যিহোবার সেবা করার জন্য মনস্থ করেছিলেন, তিনি তার জীবনে বড় পরিবর্তন নিয়ে আসতে শুরু করেন। খাদ্যের জন্য ভিক্ষা করার পরিবর্তে যেমন তিনি পূর্বে করতেন তিনি তার নিজের সংস্থান নিজেই করতে শুরু করেন। এছাড়াও তিনি ইঁট তৈরি করতেন যেটি তিনি বিক্রি করতেন।
তার শারীরিক অক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও মার্ক অধ্যবসায়ের সাথে কাজ করে চলতে থাকেন। কালক্রমে, তিনি একটি জমি ক্রয় করেন এবং একটি সুদৃশ্য গৃহ তৈরি করেন। আজ, মার্ক মণ্ডলীর একজন প্রাচীন হিসাবে সেবা করেন আর যে শহরে তিনি বাস করেন সেখানে তিনি এক সম্মানিত ব্যক্তি। এখন তিনি অন্যান্য অভাবীদের সাহায্য করেন।
অবশ্যই, অনেক জায়গায় কাজ খুঁজে পাওয়া প্রকৃতপক্ষেই অসম্ভব। মধ্য আফ্রিকায় ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটির এক শাখা দপ্তরে সেবারত একজন খ্রীষ্টীয় প্রাচীন লিখেছিলেন: “এখানে অনেক ভাইদের কাজ নেই। কিছুজন তাদের নিজেদের কাজ সৃষ্টি করার চেষ্টা করেন কিন্তু সেটিও কঠিন। অনেকে যুক্তি করেন যে যেহেতু তারা যাই করুক না কেন তাদের কষ্টভোগ করতেই হচ্ছে তাই এক অগ্রগামী পরিচারক হিসাবে তারা বস্তুগত সুযোগসুবিধা ত্যাগ করবেন। এটি করে অনেকে দেখেছেন যে তাদের স্বল্প উপার্জনের অথবা বিনা উপার্জনের একটি চাকুরি থাকলে যা হত তার তুলনায় তারা আরও প্রচুরভাবে আশীর্বাদপ্রাপ্ত হয়েছে।”
যিহোবা তাঁর লোকেদের সংরক্ষণ করেন
যীশু খ্রীষ্ট নিজের সম্বন্ধে বলেছিলেন: “শৃগালদের গর্ত্ত আছে, এবং আকাশের পক্ষিগণের বাসা আছে, কিন্তু মনুষ্যপুত্ত্রের মস্তক রাখিবার স্থান নাই।” (লূক ৯:৫৮) অনুরূপভাবে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “এখনকার এই দণ্ড পর্য্যন্ত আমরা ক্ষুধার্ত্ত, তৃষ্ণার্ত্ত ও বস্ত্রহীন রহিয়াছি, আর মুষ্ট্যাঘাতে আহত হইতেছি, ও অস্থির-বাস রহিয়াছি।”—১ করিন্থীয় ৪:১১.
যীশু এবং পৌল উভয়েই জীবনধারণের জন্য এক সীমাবদ্ধ আর্থিক সঙ্গতিকে বেছে নিয়েছিলেন যাতে করে তাঁরা পূর্ণরূপে তাঁদের পরিচর্যা সম্পন্ন করতে পারেন। বর্তমান দিনের অনেক খ্রীষ্টানেরা দরিদ্র কারণ তাদের কোন বিকল্প পছন্দ নেই। তৎসত্ত্বেও, তারা জীবনে বাইবেলের নীতি প্রয়োগ করে আর উদ্যোগের সাথে ঈশ্বরকে সেবার জন্য প্রচেষ্টা করে। তারা জানে যে যিহোবা তাদের ভীষণভাবে ভালবাসেন যেমন তারা যীশুর দেওয়া আশ্বাসবাণীর সত্যতা সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা করে: “কিন্তু তোমরা প্রথমে তাঁহার রাজ্য ও তাঁহার ধার্ম্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা কর, তাহা হইলে ঐ সকল দ্রব্যও তোমাদিগকে দেওয়া হইবে।” (মথি ৬:২৫-৩৩) এছাড়াও ঈশ্বরের এই দরিদ্র সেবকদের প্রমাণ আছে যে “সদাপ্রভুর আশীর্ব্বাদই—ধনবান করে।”—হিতোপদেশ ১০:২২.
[পাদটীকাগুলো]
a এই প্রবন্ধে বিকল্প নামগুলি ব্যবহৃত হয়েছে।
[৬ পৃষ্ঠার বাক্স]
কারা “বাক্যের কার্য্যকারী”?
১৯৯৪ সালের গ্যালপ সমীক্ষা অনুসারে ৯৬ শতাংশ আমেরিকাবাসী “এক ঈশ্বর অথবা এক সার্বজনীন আত্মায় বিশ্বাস করে।” এছাড়াও “পৃথিবীর অন্যান্য জাতিগুলির তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে জনসংখ্যা পিছু অনেক বেশি গির্জা রয়েছে,” যুক্তরাষ্ট্র সংবাদ ও বিশ্ব বিবৃতি (ইংরাজি) উল্লেখ করেছিল। এইধরনের শুভ উদ্দেশ্য প্রণোদিত অবস্থা থাকা সত্ত্বেও অভিজ্ঞ সমীক্ষক জর্জ গ্যালপ জুনিয়ার বলেন: “প্রকৃত সত্যটি হল অধিকাংশ আমেরিকাবাসী জানে না যে তারা কী বিশ্বাস করে অথবা কেন করে?”
পরিসংখ্যানও ইঙ্গিত করে যে, অনেক লোকেদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও তাদের কাজের মধ্যে এক বিস্তর ব্যবধান আছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ, “সমাজবিদেরা লক্ষ্য করেন যে সেই সমস্ত স্থানগুলিই দেশের সর্বোচ্চ অপরাধ প্রবণ এলাকায় পরিণত হয়েছে যেখানে ধর্মীয় বিশ্বাস ও অভ্যাসগুলি শক্তিশালী,” লেখক জেফরি সেলার বলেন।
এটি আশ্চর্যের বিষয় নয়। কেন? কারণ বহু পূর্বে, প্রথম শতাব্দীতে প্রেরিত পৌল সহখ্রীষ্টানদের, তাদের বিষয়ে সাবধান হওয়ার জন্য সতর্ক করেছিলেন যারা “স্বীকার করে যে, ঈশ্বরকে জানে, কিন্তু কার্য্যে তাঁহাকে অস্বীকার করে।” (তীত ১:১৬) অতিরিক্তভাবে, পৌল যুবক ব্যক্তি তীমথিকে বলেছিলেন যে ‘শেষকাল’ সেইধরনের লোকেদের দ্বারা চিহ্নিত হবে যারা “ভক্তির অবয়বধারী, কিন্তু তাহার শক্তি অস্বীকারকারী হইবে।”—২ তীমথিয় ৩:১, ৫.
কিন্তু, সত্য খ্রীষ্টানেরা যীশু খ্রীষ্টের এই আজ্ঞাটি অনুসরণ করার ক্ষেত্রে তাদের যথাসাধ্য করে যেটি বলে “তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর।” (মথি ২৮:১৯) আর এইভাবে তারা ‘বাক্যের কার্য্যকারী হয়, শ্রোতামাত্র নয়।’—যাকোব ১:২২.
[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
পৃথিবীর চতুর্দিকে লোকেরা বাইবেল অধ্যয়নকে মূল্য দিয়ে থাকে